রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

রোমান্স রসায়ন

চিত্রকলাজীবনযাত্রারোমান্স রসায়ন

সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে?

করেছে Sabiha Zaman নভেম্বর ৭, ২০২১
সুরাইয়া নাজনীন: করেই কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় না অবার কোনো সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সময় দিতে হয়। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙতে সময় লাগে না। মাত্র কয়েক মুহূর্তেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য মানুষের কিছু অভ্যাসই দায়ী হতে পারে-
# আত্মবিশ্বাস না থাকলে সঙ্গীর কাছে বিশ্বস্ত হওয়া সম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষের সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখতে চান না।
# বার বার দোষারোপ করতে থাকেন অনেকে। কারও কোনো ভুল পেলেই তার দোষারোপ করা ঠিক নয়।
# গোঁড়ামি, অসহিষ্ণুতা ও অহংবোধ থাকার কারণে বিষিয়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। ‘আমিই সঠিক’- এ ভাবনা সম্পর্ক নষ্টের অন্যতম কারণ।
# সম্পর্ক দুজন মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠে। গুরুত্ব না পেলে সঙ্গী কষ্ট পেতে পারেন। সবসময় নিজেকে প্রাধান্য দিলে
# কোনো মানুষ নিজের সমালোচনা শুনতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এমন অনেকেই রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত ভালোবাসার মানুষের সমালোচনা করতে থাকেন। পান থেকে চুন খসলেই সঙ্গীর ভুল ধরতে গেলে সম্পর্কে সৃষ্টি হয় তিক্ততা।
May be an image of one or more people and text
ছবি: ইন্টারনেট
০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দিবস সবিশেষবিশেষ রচনারোমান্স রসায়ন

দুনিয়াকাঁপানো অমর প্রেমকাহিনি

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

যুগ যুগ ধরে প্রেম-ভালোবাসা ছিল, আছে। কিছু প্রেম ইতিহাসের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লিপিবদ্ধ। আবার কিছু প্রেম হারিয়ে গেছে অমানিশায়। যাদের প্রেমের অমর গল্প যুগ যুগ ধরে চলমান, নিশ্চয়ই সেসব গল্পের মাহাত্ম্য অবিচল। সেসবের আছে বিচার, আছে বিশ্লেষণ, আছে উদাহরণ। অনেকে জীবন দিয়েছে, কেউবা বনবাসী হয়েছে। সে জন্যই তো ভালোবাসার জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা দিবস। যাদের প্রেমের গল্প অমর হয়েছে, তাদের নিয়ে এই সংখ্যার আয়োজনÑ

রানি ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্ট 

হাজার বছরের পুরোনো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাদের হাজার হাজার প্রেমকাহিনির ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেমকাহিনি অুুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তার চাচা কিং উইলিয়ামের মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তার ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তারা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তারা একে অপরকে প্রচÐ ভালোবাসতেন। তাদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর পর স্বামীর শোকে রানি পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তার এই বিরহ শোক জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে। জীবননাশের হামলাও হয় ভিক্টোরিয়ার ওপর। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে রানি পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং পার্লামেন্টে যোগ দেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। তার শাসনামলেই ব্রিটেন সুপারপাওয়ার হিসেবে দুনিয়ায় আবিভর্‚ত হয়।

লাইলি ও মজনু 

প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র, লাইলী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লাইলি এবং মজনু একে অপরের প্রেমে পড়ে। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লাইলির বাবা মজনুকে আহত করলে লায়লাও আহত হতো, এমনি ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ মজনু মরু প্রান্তরে নির্বাসনে যায়। মজনুর প্রকৃত নাম ছিল কায়েস। বিরহকাতর খ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলিকে পাওয়ার জন্য মজনুকে প্রেরণা দেয়। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লাইলির বাবা মজনুর সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেন না। লাইলিকে তার বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর, যদিও লাইলি মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচÐ দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলিও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা,’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট 

রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেমকাহিনি। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রæতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরে পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রæতার জেরে এবং ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম!

সেলিম ও আনারকলি :

মোগল সম্রাট   আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়ে রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্যসুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে সম্রাট পুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয় এবং নিজ সন্তানের মৃত্যুদনন্ড করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চায়। তখন সেলিমের চোখের সামনে প্রিয়তমা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়।

 

শাহজাহান ও মমতাজ 

১৬১২ সালে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহানের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোগল সা¤্রাজ্য পরিচালনা করেন। স¤্রাট শাহজাহান তার ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ সালে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সা¤্রাজ্য হারিয়ে বন্দিজীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্যসুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে ‘তাজমল’ গড়ে উঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তার ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ‘তাজমহল!’

নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন 

২৬ বছর বয়সী মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তারা দুজনেই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। ফলে তাদের ভালোবাসা কখনো ¤øান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ান খুব চাইতেন জোসেফাইনের গর্ভে যেন তার সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেফাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালোবাসা থাকা সত্তে¡ও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।

ত্রিস্তান অ্যান্ড ইসলদে
ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাÐুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালোবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। একসময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হৃদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। একপর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তার স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো। তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবেন না। ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান। তার শোকে ভগ্নহৃদয় নিয়ে ইসলদেও কিছুদিন পর তারই রাজ্যে মারা যান।

অরফিয়াস এবং ইফরিডাইস 

এটি প্রাচীন গ্রিসের এক অন্ধ প্রেমের কাহিনি। অরফিয়াস সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের প্রেমে পড়েন। একপর্যায়ে বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভ‚মি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর। কিন্তু ইউরিডাইসের প্রেমে সাড়া না পেয়ে তার ক্ষতি করতে উদ্যত হন। পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাতে গিয়ে ইউরিডাইস এক সাপের গর্তে পড়লে সাপ তার পায়ে বিষাক্ত ছোবল হানে। শোকে কাতর অরফিয়াসের হৃদয় বিদীর্ণ করা হাহাকার শুনে পরি আর দেবতাদের চোখেও জল আসে। দেবতাদের পরামর্শে অরফিয়াস পাতালপুরীতে প্রবেশ করেন। পাতালপুরীতে তার গান শুনে হেডসের মন গলে যায়। মুগ্ধ হয়ে হেডস ইউরিডাইসকে অরফিয়াসের সঙ্গে পৃথিবীতে পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু সে জন্য একটা বিশেষ শর্ত দেন। শর্তটি হলো অরফিয়াসকে ইউরিডাইসের সামনে থেকে হেঁটে যেতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে না পৌঁছাবে, ততক্ষণ অরফিয়াস পেছনে ফিরতে পারবে না। কিন্তু উৎকণ্ঠিত অরফিয়াস হেডসের সেই শর্তের কথা ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে ইউরিডাইসকে দেখতে পেছনে ফেরেন। আর তখনই অরফিয়াসের জীবন থেকে চিরদিনের মতো অদৃশ্য হয়ে যান প্রিয়তমা ইউরিডাইস। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সংগীত ও মিউজিক অনেক বড় ভ‚মিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনি থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।

রামোস অ্যান্ড থিইবি 

অত্যন্ত আবেগী আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেমকাহিনি। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাদের প্রেম দ্বারা প্রভুর থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে স্বর্গেও তারা একসঙ্গে থাকবে! সুপুরুষ রামোস ছিল ব্যাবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবির বাল্যকালের বন্ধু। তারা প্রতিবেশী হওয়ায় একই সঙ্গে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাদের পরিবার এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেয় না। তাই তারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরিগাছের নিচে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবি গোপনীয়তা রক্ষার্থে মুখে একটা কাপড় পরে রামোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুধার্ত সিংহ থিইবির সামনে হাজির হলে ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার সময় তার মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ধরে নেয় যে সিংহ তার থিইবিকে ভক্ষণ করেছে। তাই সেও তার ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবি এসে মৃত রামোসকে দেখতে পেয়ে সেই একই ছুরি দিয়েই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।

মেরি এবং পিয়েরে কুরি

রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনি। অথচ দুনিয়াকাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনি স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ রকম একটি জুটি হলো মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পৌরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনি। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাদের প্রেমকাহিনি। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, এরা ছিল একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চের অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সুন্দরবনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর র‌্যাডিয়াম। পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরি কুরি পৃথিবীর একমাত্র নারী, যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন।

লেখা : সুরাইয়া নাজনীন

ছবি : সংগৃহীত2

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইরোমান্সরোমান্স রসায়ন

হানিমুনের সেরা দশ গন্তব্য

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২১

আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা অনেক। সাগর, পাহাড়, স্থাপত্য সব রকম পর্যটন আকর্ষণই আছে বাংলাদেশে। বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য হানিমুনে ঘুরে আসতে পারো এ রকমই জনপ্রিয় দশটি ভ্রমণ গন্তব্য তুলে ধরা হলো এখানে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। টেকনাফ থেকে ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এই দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এ দ্বীপের আকর্ষণ সৈকতজুড়ে সারি সারি নারকেলগাছ, বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথর, দিগন্তজুড়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনমাতানো সৌন্দর্য। ছোট্ট এই দ্বীপে বৈচিত্র্যে ঠাসা। উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পূর্ব থেকে পশ্চিম, সব জায়গাতেই সৌন্দর্যের পসরা। যেমন উত্তরের সৈকতে জোয়ার-ভাটায় জেলেদের মাছ ধরা, পশ্চিমের সৈকতে সারি সারি নারকেলবাগান। পূর্ব আর দক্ষিণ পাশের সৈকতজুড়ে মৃত প্রবালের সঙ্গে নীলসমুদ্র। এত নীল পানির সমুদ্র বাংলাদেশের আর কোথাও নেই।

নারিকেল জিঞ্জিরা 
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এ দ্বীপটির অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এ দ্বীপের বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারকেলগাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি পর্যটক আকর্ষণের মূল উপাদান। সেন্ট মার্টিনের আরেক আকর্ষণ ছেঁড়া দ্বীপ। মূল দ্বীপের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত। একসময় মূল দ্বীপ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন প্রায় মিলে গেছে। তবে জোয়ারের সময় এখনো এর সংযোগস্থল ডুবে যায়। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালু আছে বেশ কিছু সমুদ্রগামী জাহাজ।

কক্সবাজার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভও। ভ্রমণে তাই কক্সবাজার এখন আরও বেশি উপভোগ্য। কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রসৈকত। শহর থেকে শুরু করে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ পর্যন্ত এখানে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর সৈকত আছে। কক্সবাজার শহরের লাবণী ও সুগন্ধা সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভে আছে হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর, হাজামপাড়া আর টেকনাফ। এর একেকটি সৈকত যেন বৈচিত্র্যের ভান্ডার।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানা রামুতে আছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। আর চকরিয়ার ডুলাহাজারায় আছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কুতুবদিয়া চ্যানেল
কুতুবদিয়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে এই কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল  ভূখণ্ড  বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটি। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে যেতে হলে চকরিয়ার মগনামা ঘাট থেকে পাড়ি দিতে হয় এই চ্যানেল। শীত মৌসুমে এ চ্যানেল বেশ শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। জায়গাটিতে ঘুরতে যাওয়ার আসল সময় তাই শীতকাল।

কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে আছে নানান পর্যটন আকর্ষণ। নির্জন সমুদ্রসৈকত, একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাচীন বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজারসহ দেখার মতো অনেক কিছুই আছে এ দ্বীপে। চকরিয়ার মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় দ্বীপে। এখানকার সমুদ্রসৈকত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বেশির ভাগ এলাকাই বেশ নির্জন। সৈকতের তীরে অনেক জায়গাতেই আছে ঝাউগাছের বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও কুতুবদিয়ায়। এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের আলী আকবরের ডেল এলাকায়।

আর দ্বীপের উত্তর প্রান্তে আছে কুতুবদিয়ার প্রাচীন বাতিঘর। সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। পুরোনো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনো কখনো জেগে উঠতে দেখা যায়।
দ্বীপের মাঝামাঝি ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরিফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবীর জন্মস্থান এটি। জনশ্রুতি আছে, দ্বীপটির নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই। বর্তমানে কুতুব শরিফ দরবারের দায়িত্বে আছেন তারই পুত্র শাহজাদা শেখ ফরিদ। এ ছাড়া কুতুবদিয়ার সর্বত্রই লবণ চাষ হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে।


বান্দরবান
তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান। এখানে রয়েছে বেড়ানোর মতো সুন্দর সব জায়গা। বান্দরবান শহরের এক পাশেই আছে বোমাং রাজার বাড়ি। বোমাং রাজার উত্তরসূরিরা এখন বসবাস করেন এ বাড়িতে। আর বান্দরবান শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান চন্দ্রঘোনা সড়কের পুল পাড়ায় জাদির পাহাড়ে আছে স্বর্ণমন্দির। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের এ মন্দিরের নাম বুদ্ধধাতু জাদি। শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। প্রকৃতির কোলে এখানে আছে ঝুলন্ত সেতু, চিড়িয়াখানা আর হ্রদ। শহরের কাছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম নীলাচল। শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় এ পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় এক হাজার ফুট। এখানে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহরসহ দূরদূরান্তের অনেক জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত। এখানে আছে একটি ঝরনা। শৈলপ্রপাতের পাশেই স্থানীয় আদিবাসীদের ভ্রাম্যমাণ বাজারটি দেখার মতো। তাদের তৈরি চাদর আর পাহাড়ি ফলমূল পাওয়া যায় এ বাজারে। এখানে আরও আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বম সম্প্রদায়ের একটি গ্রামও।

শৈলপ্রপাত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। এ পথে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে চারপাশের দৃশ্য ছবির মতো।

রাঙামাটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা রাঙামাটি। এখানকার জেলা শহরে আছে উপজাতীয় জাদুঘর। জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে এ জাদুঘরের জুড়ি নেই। এর কাছেই বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবনবিহার। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের নানান আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি।
রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীরে খুব ব্যস্ত দুটি জায়গা রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার। দুটি বাজারেই মূলত আদিবাসীদের আনাগোনা বেশি। তবলছড়ি ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ছাড়াও এর ভেতরে আছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু।
রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকায় চড়ে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। বাজারের আগেই বাঁ দিকের পাহাড়ে আছে শুভলং ঝরনা। তবে শীতে এ ঝরনায় পানি থাকে না। শুভলং যেতে পথে কাপ্তাই হ্রদের মাঝের ছোট দ্বীপজুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং। এখানকার রেস্তোরাঁয় মেলে হরেক পদের পাহাড়ি খাবার।

রাঙামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটি হলো সাজেক। জায়গাটির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও যাতায়াত সুবিধা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে। সেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্যগুলোর একটি সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গাটির অবস্থান। সাজেকের পাহাড়চ‚ড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দৃষ্টিগোচর হয় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে।

খাগড়াছড়ি
পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা খাগড়াছড়ি। এখানেও ভ্রমণের অনেক জায়গা রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এই জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ১২২ কিলোমিটার। চারদিকে পাহাড়ের মাঝে অনেকটা সমতলে এই শহর।
খাগড়াছড়ির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের জায়গা হলো আলুটিলা পাহাড়। জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে এই পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চ‚ড়ায় দাঁড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। আলুটিলা পাহাড়ের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো এর নিচের গুহাপথ। পাহাড়ের নিচে গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা।

আলুটিলা পাহাড় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রিসাং ঝরনাটিও বেশ সুন্দর। আর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নুনছড়ির পাহাড়চ‚ড়ায় দেবতার পুকুরও মনোরম জায়গা।


সুন্দরবন
প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারই বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বেঙ্গল টাইগারের বাস ছাড়াও এ বনে আছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুইসাপ, ভোঁদড়, ডলফিন, লোনাপানির কুমিরসহ আরও অনেক বন্য প্রাণী। সুন্দরবনের প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, হেঁতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।
মোংলার কাছাকাছি করমজল আর হারবাড়িয়া ছাড়াও সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, কোকিলমনি, মান্দারবাড়িয়া, পুটনি দ্বীপ ইত্যাদি। এর মধ্যে কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া এবং পুটনি দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবনে ভ্রমণে এখন অনেক পেশাদার ভ্রমণ সংস্থা এখন প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে।

শ্রীমঙ্গল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। আর এ জেলার শ্রীমঙ্গলেই সবচেয়ে বেশি চা-বাগান। জীববৈচিত্র্যে ভরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও শ্রীমঙ্গলের পাশেই। শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু সুন্দর চা-বাগান আছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় চারদিকে চোখে পড়বে শুধুই চা-বাগান আর চা-বাগান। পছন্দসই যেকোনো বাগানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারো। শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্টও। তাই চা-বাগান বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও বেড়াতে পারো বাইক্কা বিল। এ বিল অতিথি পাখির অন্যতম অভয়াশ্রম। শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী থলই এলাকায় আছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। আর কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকও শ্রীমঙ্গল থেকে খুবই কাছের একটি দর্শনীয় স্থান।

 

 

 

বাগেরহাট

প্রাচীন মসজিদের একটি শহর বাগেরহাট। বেশ কিছু প্রাচীন মসজিদ এখানকার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহান আলীর এসব প্রাচীন স্থাপনা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। খানজাহান আলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি ষাটগম্বুজ মসজিদ। ঐতিহাসিকদের মতে, এই ষাটগম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দেরও কিছু আগে।
বাগেরহাট শহরের মাঝে হজরত খানজাহানের (র.) সমাধিসৌধ, মসজিদ আর প্রাচীন দিঘি। এ ছাড়া এই দিঘির তীরে জিন্দাপীর মসজিদ আর নয়গম্বুজ মসজিদ নামে আরও দুটি মসজিদ আছে। হজরত খানজাহান আলীর (র.) সমাধিসৌধ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ষাটগম্বুজ মসজিদ। এটি বাগেরহাটের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। বিশাল এই মসজিদ ইটের তৈরি। ষাটগম্বুজ নাম হলেও মসজিদটিতে ৮১টি গম্বুজ আছে। তবে মসজিদের ভেতরের ষাটটি স্তম্ভ থাকার কারণে এর নাম হতে পারে ষাটগম্বুজ। স্তম্ভগুলো কালো পাথরের তৈরি।
এ ছাড়া বাগেরহাটের অন্য প্রাচীন মসজিদগুলো হলো ষাটগম্বুজের পাশেই সিংড়া মসজিদ, রণবিজয়পুর গ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একগম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রণবিজয়পুর মসজিদ। চুনাখোলা গ্রামের চুনাখোলা মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

কুয়াকাটা
বাংলাদেশের দক্ষিণে কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগরকন্যা। একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়ার কারণে এ জায়গাটি বেশি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এখানকার সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে নারকেলগাছের বাগান। তবে এর অনেকটাই সাগরে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সমুদ্র তীরের এই নারকেল বাগান।
এ সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলেপল্লি। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। শীত মৌসুমে এ পল্লির জেলেরা ব্যস্ত থাকেন শুঁটকি তৈরির কাজে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। এর নাম ফাতরার বন। সুন্দরবনের অংশ হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্য  প্রাণী নেই সেখানে।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতীর খাল। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতীর জঙ্গল। এখান থেকে আরও সামনে গেলে ছোট্ট একটি দ্বীপে আছে লাখ লাখ লাল কাঁকড়া। দ্বীপটি ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত।

লেখা – রোদসী ডেস্ক

ছবি – সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনরোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসার সম্পর্ক

করেছে Sabiha Zaman জানুয়ারী ২১, ২০২১

চার অক্ষরের একটি মিষ্টি শব্দ ‘ভালোবাসা’। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক ব্যাপার। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে ভালোবাসা। ভালোবাসা ছাড়া প্রাণিজগতের বেঁচে থাকার কথা চিন্তাই করা যায় না।

ব্যক্তিগত অনুভূতি

‘ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী/ ভালোবাসা হলো নিঃশ্বাস এ দেহের/ নিঃশ্বাস বিনা মানুষ কখনো বাঁচে কি…’ কিশোর কুমারের বিখ্যাত এ গানটিই বলে দেয় ব্যক্তিজীবনে ভালোবাসার প্রয়োজন কতটুকু। ভালোবাসার সংজ্ঞাটি বিতর্ক, অনুমান এবং অন্তর্দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাধারণভাবে ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। কারও প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতি ক্ষেত্রে কারও উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত।

প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ভালোবাসাকে নিয়ে রচিত হয়েছে হাজার হাজার গান, কবিতা ও গল্প। এই ভালোবাসা সামনে রেখে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে পালিত হয় ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার সম্পর্ক পৃথিবীতে ছিল, আছে এবং থাকবেও অনন্তকাল।

ভালোবাসা এবং ভালো লাগা

ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- নিষ্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি। অনেকেই ভালোবাসার মতো একটি সর্বজনীন ধারণাকে আবেগপ্রবণ ভালোবাসা, কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসা কিংবা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ভালোজন এসব ভাগে ভাগ করার পক্ষপাতী নন। তবে এসব ভালোবাসাকে শারীরিক আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা যেতে পারে। ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারও সঙ্গে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এ ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। ‘ভালোবাসা’ এবং ‘ভালো লাগা’ শব্দ দুটি একই রকম মনে হলেও অনেকটা গোলমেলে বা বিভ্রান্তিকর। ভালো লাগা ছাড়া ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা ছাড়া প্রেম হয় না কিন্তু প্রেম না হলেও ভালোবাসা হতে পারে। ভালো লাগাটা প্রাথমিক পর্যায়, প্রেমের পর্যায়টা চূড়ান্ত। অন্যভাবে বলা যায়, ভালোবাসার ব্যাপারটা হলো কারণ, আর প্রেমটা ফল।

ভালোবাসার জৈবিক ভিত্তি

প্রেম বিশেষজ্ঞ হেলেন ফিশার প্রেম বা ভালোবাসার অভিজ্ঞতাকে তিনটি আংশিক ওভারল্যাপিং পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। কামনা, আকর্ষণ এবং সংযুক্তি। কামনা হলো যৌন বাসনার প্রাথমিক ধাপ যা টেস্টোস্টাইন এবং অ্যাস্ট্রোজেনের মতো রাসায়নিক পদার্থ বেশি মাত্রায় ত্যাগ করে। এর প্রভাব কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত পর্যন্ত হয়। আকর্ষণ আরও স্বতন্ত্র এবং রোমান্টিক হয় একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর জন্য, যার মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র লালসা বিকশিত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন তার মস্তিষ্ক নিয়মিত নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন এবং সেরোটোনিন রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে। এর ফলে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, হার্টের কম্পন বৃদ্ধি পায়, ক্ষুধা এবং ঘুম হ্রাস পায় এবং উত্তেজনা বেড়ে যায়। এই পর্যায় সাধারণত দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত  স্থায়ী হয়। যেহেতু কামনা এবং আকর্ষণের পর্যায়গুলোকে অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য একটি তৃতীয় পর্যায় প্রয়োজন।

আর তা হলো সংযুক্তি। সংযুক্তি হলো একধরনের বন্ধন, যার কারণে সম্পর্ক অনেক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত দীর্ঘ¯ স্থায়ী হতে পারে। সংযুক্তি সাধারণভাবে বিবাহ বা শিশু জন্মদান করার মতো অঙ্গীকারগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পছন্দের বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়ার কারণেও সম্পর্ক দীর্ঘ¯স্থায়ী হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের চেয়ে দীর্ঘ স্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক অক্সিটসিন এবং ভাসপ্রেসিন নির্গত হয়। প্রোস্টেট অণুটি স্নায়ু বৃদ্ধিকারক ফ্যাক্টর (এনজিএফ) নামে পরিচিত। যখন কেউ প্রথম প্রেমে পড়ে তখন এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে, কিন্তু এক বছর পর তা আবার পূর্ববর্তী স্তরে ফিরে আসে।

ভালোবাসাকে প্রকাশ করো
ভালোবাসা হলো এক অর্থে দুই স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে শান্তিপূর্ণ  সহাবস্থান। ভালোবাসা কোনোভাবেই মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে নেই। এর ফলে তুমি একসময় তোমার মনের মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারো। ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সবাই ভালোবাসে, সবাই প্রেমে পড়ে। কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গি সবার একরকম হয় না। ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে তুমি সহজেই কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারো।

ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে প্রথম উপায় হলো ভয় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা প্রকাশ করা। মনের মানুষটি কী পছন্দ করে, তা শিগগিরই খুঁজে বের করো। সেটা কোনো জিনিস হতে পারে, কোনো বিষয় হতে পারে, এমনকি খাবারও হতে পারে। পছন্দের জিনিসটি উপস্থাপন করে কিংবা উপহার দিয়ে তোমার ভালোবাসাকে প্রকাশ করো এবং বুঝিয়ে দাও তোমার ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই। মানুষের ভালোবাসা প্রকাশ করার অন্যতম উপায় উপহার। মনের মানুষটির কাছে এই উপহার তোমার অনুভূতিকে বারবার প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।

ভালোবাসার মানুষটিকে প্রতিটি কাজে উৎসাহ দাও, যাতে সে সাহস পায়। সব বিষয়ে তোমার উৎসাহ পেলে সে তোমার কাছে অন্য রকম স্বস্তি অনুভব করবে। আর তোমার ভালোবাসাও তার কাছে ধরা পড়বে। মনের মানুষটির চাহিদা অনুযায়ী কিছু একটা করার চেষ্টা করো, এতে তোমার ভালোবাসাটা প্রকাশ পাবে।

মনের মানুষটির কাছে নিজেকে প্রকাশ করো। সত্যিকারের তোমাকে যখন সে খুঁজে পাবে, তখন তোমার ভালোবাসাও সে অনুভব করতে পারবে। মনে রাখবে, মানুষ তখনই নিজেকে একজন মানুষের কাছে পুরোপুরি প্রকাশ করে, যখন সে তাকে সত্যি ভালোবাসে। সামনাসামনি কথা বলার অনুভূতিটাই অন্য রকম। তাই একবারের জন্য হলেও তাকে সামনাসামনি বলার চেষ্টা করো তুমি তাকে ভালোবাসো।

ভালোবাসার আলিঙ্গনে হৃদরোগ নিরাময়

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের ব্যাপারে এক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়েছিল ২০০৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্বিদ্যালয়ের ড. ক্যারেল গ্রেন কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে গবেষণা করে জানিয়েছিলেন, প্রেম বা ভালোবাসার আলিঙ্গন হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা শতগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদযন্ত্রের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে আসে। ভালোবাসার আলিঙ্গন নারী-পুরুষ উভয়ের  হৃদযন্ত্রের   জন্যই নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে। আর এ প্রক্রিয়া পুরুষের চেয়ে নারীর হৃদয়ের জন্য বেশি কার্যকর। গবেষণার শুরুতে ৩৮ নারী ও পুরুষকে বেছে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে অর্ধেক হচ্ছে দম্পতি এবং অর্ধেক অবিবাহিত। পরে নারী ও পুরুষদের আলাদা করে রক্তচাপ ও স্নায়বিক অবস্থার রেকর্ড নেওয়া হয়। পরে দম্পতিদের একটি রুমে রেখে সুখকর কোনো রোমান্টিক মুহূর্ত চিন্তা করে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। গবেষকেরা দেখেছেন, এ অবস্থায় আলিঙ্গনের ফলে তাদের রক্তচাপ কমে গেছে এবং অক্সিটসিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়েছে।

হৃদযন্ত্রের  সুস্থ ও সবল রাখতে অক্সিটসিন হরমোন অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেশি। ড. ক্যারেল গ্রেনের সঙ্গে একই মতামত পোষণ করেন ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. গ্রিফিথ। তিনি বলেন, ভালোবাসা বা প্রেমের আলিঙ্গন মানবদেহের কার্ডিও প্রোটেকটিভ ব্যবহার অত্যন্ত দৃঢ় করে।

সম্পর্কটাকে ঠিক রাখো

‘সম্পর্ক’ ও ‘ভালোবাসা’ শব্দ দুটি একসঙ্গে জড়িত। ভালোবাসে সবাই। কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে কজন? ভারসাম্যপূর্ণ রোমান্টিক জীবন গড়ে তোলা ও সম্পর্ক গভীরতর করা কঠিন কিছু নয়। অনেক সময় সামান্য ভুল-বোঝাবুঝির কারণে সহজেই ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। ভালোবাসার সম্পর্ককে ঠিক রাখার জন্য কিংবা ধরে রাখার জন্য তোমাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।

নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকো এবং খুব কাছের বন্ধু হিসেবে ওকে সবকিছু জানতে দাও। দেখবে সেও তার নিজের দুর্বলতাগুলো তোমার কাছে তুলে ধরছে। এতে সম্পর্ক গাঢ় হবে। জীবনে নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত থাকে। সেই সংকটের মুহূর্তে দৃঢ়তা নিয়ে তোমার সঙ্গীর পাশে দাঁড়াও। তোমার সরলতা তোমার সঙ্গীকে আরও কাছে টানবে। তুমি যা, তা তোমার বন্ধুকে জানতে দাও। নিজের মতো করে তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে গড়ে তোলার চেষ্টা করো না। এতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, প্রত্যেক মানুষেরই থাকে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব। তুমি যদি সব সময় তোমাদের সম্পর্ক নিয়ে দুর্ভাবনায় থাকো তা তোমার সঙ্গীকে দূরে সরিয়ে দেবে। কাজেই কোনো কিছু না বুঝে কিংবা না জেনে ভালোবাসার মানুষটিকে সন্দেহ করা কোনোভাবেই উচিত নয়।

ভালোবাসার সম্পর্ক যেমন গভীর, তেমনি ঠুনকো। সামান্য সন্দেহ কিংবা সামান্য কোনো কারণে ভালোবাসার সম্পর্কটা যেন ফাটল না ধরে, সে ব্যাপারে অবশ্যই তোমাকে সচেতন থাকতে হবে। খুব ভালো করে জানতে হবে, বুঝতে হবে তোমার কাছের মানুষটিকেÑ তবেই না তোমাদের দুজনের ভালোবাসার সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হবে।

লেখা :  প্রদীপ সাহা

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রারোদসীর পছন্দরোমান্স রসায়নসমস্যা

দাম্পত্যজীবন হারিয়ে গেছে?

করেছে Sabiha Zaman জুন ৭, ২০২০

নতুন শিশুর আগমনে একটি পরিবারে বয়ে যায় আনন্দের ধারা। তাকে নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। সকাল থেকে রাত সে কী খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন গোসল করবে এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকে নতুন মা। নিজের যত্নের কথা বেমালুম ভুলে বসে। তার ওপর শিশুর কোনো অসুখ হলে তো কথাই নেই। সারা রাত সন্তানের মাথার পাশেই কেটে যায় মা-বাবার। নতুন নতুন বাবা-মা হওয়ার পর তাই অনেক দম্পতির ভেতরে দূরত্ব তৈরি হয়।

সন্তানের যত্ন-আত্তি করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চলে আসে স্থবিরতা। নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হওয়াটা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার একসঙ্গে সময় কাটানোও হয়ে ওঠে না। যার ফলে দুজনের বোঝাপড়ার ভেতরেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। নতুন শিশুকে লালন-পালন করার মধ্যেই নিজেদের জন্য সময় বের করে নিতে হয়। বা”চা হওয়ার পর দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিক রাখার কিছু টিপস দেখে নিতে পারো এখানে।

 

স্বামীর সহযোগিতা
দাম্পত্যজীবন কখনো একার চেষ্টায় সুন্দর হয় না। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের চেষ্টায় একটি দাম্পত্যজীবন হতে পারে অনাবিল আনন্দের। দুজনেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। নয়তো শুধু ঝামেলাই বাড়ে। বাচ্চা হওয়ার পর একজন নারীর জীবন হুট করে বদলে যায়, অনেক বড় এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পথ চলতে হয় তার। কোনো মা যদি শুধু গৃহিণীও হয়ে থাকে, তবু তার সময় হয় না নিজের দিকে একটু তাকানোর। বাচ্চার বাবা সেটা না বুঝলে তৈরি হয় মনকষাকষি। স্বামী সারা দিন বাইরে কাজ করে এসে যদি মনে করে তার স্ত্রী সারা দিন ঘরেই ছিল, তাই তার কোনো পরিশ্রম হয়নি তাহলে তা নতুন মায়ের প্রতি অন্যায় আচরণ হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে, একটি শিশুর পরিচর্যা আসলে একা করাটাও অনেক কঠিন। এসব ক্ষেত্রে তাই স্বামীর সহযোগিতা খুব বেশি আশা করে নারীরা। বা”চা হওয়ার পর এমনিতেই অনেকের মন খারাপ থাকে শরীরের পরিবর্তন আর জীবনযাপনের পরিবর্তনের কারণে। সে সময় স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া যে কোনো সহযোগিতা মায়েদের জন্য টনিকের মতো কাজ করে। আর স্বামী সহযোগিতা না করলে নতুন মায়ের মন খারাপ হয়ে যায়। আর সে থেকেই দাম্পত্যজীবনে ছেদ ঘটে। বাচ্চা হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু নারী-পুরুষের ভেতরকার সম্পর্ক থাকে না। তাদের মাঝখানে থাকে একজন শিশু, যার ভালো-মন্দের দায়িত্ব তার মা-বাবার ওপর নির্ভর করছে।

 

একজন মা যদি দেখে তার বাচ্চার বাবার তার দিকে বা নতুন শিশুর দিকে তেমন মনোযোগ নেই, তাহলে সেটার প্রভাব স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপরেও পড়বে। বাচ্চার কিছু ছোট ছোট কাজ এ সময় বাবা করে দিলে মায়ের যেমন একটু বাড়তি সময় মেলে, তেমনি মায়ের ভালোও লাগে এই ভেবে যে তার স্বামী তাদের কেয়ার করে। আমাদের দেশের অনেক নতুন বাবা এ ব্যাপারটা বুঝতে পারে না যে, নতুন শিশুর সঙ্গে তার দাম্পত্য সম্পর্কও জড়িয়ে আছে।

অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে স্ত্রীকেও দোষারোপ করে কেউ কেউ। এমনটি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং বাচ্চার বাবা এ ব্যাপারটি না বুঝলে নিজে অথবা বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ কারও মাধ্যমে তাকে তার নতুন দায়িত্বগুলো বোঝাতে হবে। মায়ের শরীর-মন ভালো না থাকলে সে যেমন বা”চাকে সুন্দর শৈশব উপহার দিতে পারবে না, তেমনি দাম্পত্য সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হবে। তাই এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলে সুন্দর দাম্পত্য নিশ্চিত করতে হবে।

 

মেনে নেওয়ার মানসিকতা
কিছু ব্যাপার আছে প্রাকৃতিক। যা চাইলেই মানুষ এড়াতে পারে না। বাচ্চা হওয়ার পর নারী শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে। এ নিয়ে অনেকে এত মন খারাপ করে বা লজ্জা পায়। স্বামীর সঙ্গে ঠিক মতো মিশতে পারে না। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মা হওয়ার মতো একটি বড়  পরিবর্তনের কারণে অনেক কিছুই আর আগের মতো থাকবে না, এটা মেনে নিতে হবে। যেমন আগের মতো চাইলেই স্বামী-স্ত্রী কোনো ঝামেলা ছাড়াই একসঙ্গে সময় কাটাতে পারবে না। এ সময় সবার আগে শিশুকেই গুরুত্ব দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করানো এবং বাচ্চার যত্নের কারণে রাত জেগে অনেক নারী এ সময় শারীরিকভাবে মিলিত হতে অনাগ্রহ বোধ করে। অবসাদ থাকে তখন দেহজুড়ে।

 

এতে অস্থির হওয়া যাওয়ার কিছু নেই। আবার সবকিছু আগের মতোই হয়ে যাবে। এ বিষয়গুলো মেনে নেওয়ার পাশাপাশি হাল ছেড়ে দিলেও কিন্তু চলবে না। নিজের  যত্ন নেওয়ার চেষ্টা রাখতে হবে নিজের মাঝে। সব সময় যদি ভাবতে থাকো আমার দাম্পত্য সম্পর্ক বুঝি হারিয়েই যাচ্ছে, তাহলে কিন্তু এই ভাবনাটাই তোমাকে চালিত করতে থাকবে। এ সময়টা অল্প কিছুদিনের। ধৈর্য ধরে দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।

‘নিজের’ জন্য আলাদা সময়
দাম্পত্য জীবনে সুখ পেতে চাইলে নিজের দিকেই আগে মনোযোগ দিতে হবে। স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানোর আগে নিজের সঙ্গে কিছু সময় কাটানো নিয়ে ভাবো। নিজের শারীরিক বা মানসিক উন্নতির জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় ইয়োগা করা। পারলে ইয়োগা ক্লাসে যোগ দাও। এতে আত্মবিশ্বাস, মনোযোগ, মানসিক স্থবিরতা লাভ করতে পারবে। আর সেই সঙ্গে ফিরে পেতে পারবে আগের শরীর। সাঁতারও অবসাদ কাটাতে খুব সাহায্য করবে। ঘর থেকে বেরোতে এ সময় অনেক ক্লান্তি কাজ করে। সে ক্ষেত্রে পাল্টে ফেলো পোশাকের ডিজাইন। এমন কোনো পোশাক নির্বাচন করো, যা খুব সহজেই চট করে পরে বাইরে চলে যাওয়া যায়। সকালের দিকে এমন কোনো কিছুতে সময় দিতে চাইলে স্বামীর সাহায্য চাও, যেন সে সময়টা বা”চার দেখাশোনা করতে পারে।

‘নিজেদের’ জন্য আলাদা কিছু সময়
বা”চা হওয়ার পর পরিকল্পনা ছাড়া দাম্পত্য সম্পর্কের উন্নতি সম্ভব নয়। নিজেদের জন্য আলাদা করে সময় বের করতে চাইলে সেটার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সপ্তাহের এক দিন স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য আগেই সময় ঠিক করে রাখো। হতে পারে সেটা ছুটির দিনের আগের রাত। কারণ, তাতে পরদিন সকালে একটু দেরিতে ঘুম ভাঙলেও সমস্যা নেই। রাতের খাবারের পর একসঙ্গে কোনো মুভি দেখতে পারো অথবা স্রেফ গল্প করেই কাটাতে পারো সময়। সব সময় যে বাচ্চাকে নিয়েই কথা বলতে হবে, তা কিন্তু নয়। এ সময়টা শুধু নিজেদের ব্যাপারে কথা বলো বা যা ভালো লাগে। মোট কথা, মনের জানালাটা খুলে দাও সঙ্গীর সামনে। মা হলেও তুমি একজন ব্যক্তি। তোমার অনুভূতি, তোমার দৃষ্টিভঙ্গি তোমার আবেগ যা তোমার দাম্পত্য জীবনের সুরে মিশে গেছে সেগুলো প্রকাশ করো। দাম্পত্য জীবন নতুন করে ট্র্যাকে আসতে সময় লাগবে না!

 

শারীরিক সম্পর্ক
বাচ্চা হওয়ার পর শিশুর যত্ন এবং তার উপস্থিতি কারণে অনেক দম্পতিই শারীরিক মিলন থেকে বিরত থাকে। আবার অনেক নারী শারীরিকভাবে চাহিদাও কম বোধ করতে পারে, যেহেতু ক্লান্তি কাজ করে শরীরে। তবে সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শারীরিক মিলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিশুকে নিয়ে যে বিছানায় ঘুমানো হয়, শারীরিক মিলনের সময় সে বিছানা ব্যবহার না করাই ভালো। এতে অস্বস্তির ব্যাপারটা থাকবে না। আবার শিশুকে একা ঘরে রেখে পাশের ঘরে গেলেও মায়ের মনোযোগ শিশুর ঘরের দিকেই থাকবে। এ জন্য একটা এক্সট্রা ম্যাট্রেস ব্যবহার করতে পারো ফ্লোরে। যেন প্রয়োজনের সময় সেটা ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত বা স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও জরুরি। দুধ, ডিম বা মাংসজাত প্রোটিন এ সময় নারীর শারীরিক চাহিদা তৈরিতে সাহায্য করে।

লেখা : সোনিয়া জামান

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কর্মক্ষেত্রদেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়ন

প্রেমের বিয়ে ভালোবাসা কি হারিয়ে যায়?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২৭, ২০২০

প্রেম- খুব ছোট্ট একটি শব্দ। একটি দ্বৈত সম্পর্ক। দুজন মানুষের পূর্ণ অংশগ্রহণের সম্পর্ক। প্রেম সুন্দর, প্রেম পবিত্র। কিন্তু প্রেমের সম্পূর্ণটাই আনন্দদায়ক নয়। প্রেমে ব্যর্থতার গল্প হয়তো সাফল্যের গল্পের চেয়ে অনেক বেশি শোনা যায়। আবার বিয়ের পরে প্রেম হারিয়ে যায়, এমনটাও খুব সাধারণ।

জীবনের বিভিন্ন ব্যস্ততার ভিড়ে প্রেম হারিয়ে গেলেও আমাদের মধ্যে অনেকেই সেটাকে স্বাভাবিক মনে করে নিয়ে চলতে থাকি। কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করি না যে বিয়ের পরেও প্রেম সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের পরে প্রেম বেড়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। শুধু একটু চেষ্টার প্রয়োজন।

বিয়ে মানে নতুন করে শুরু করা

কৈশোরে যখন প্রেমের প্রথম ছোঁয়া লাগে মনে, তখন সবকিছুই সুন্দর মনে হয়। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল-ঠিক এর বিচার-বিবেচনাও করতে পারে না। পরিবার থেকে বাধা এলেও মনে হয় মনের মানুষটা সঙ্গে থাকলে সব বাধাই পেরোনো সম্ভব। তারুণ্যে পা দিয়ে প্রেম, গল্পের বই ও সিনেমা থেকে বেরিয়ে এসে একটু একটু করে বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু সেই সঙ্গে বিয়ে নিয়েও চলতে থাকে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও স্বপ্নের জাল বোনা।

সেই সময় মনে হয় যেন কোনোভাবেই এই প্রেম হারাতে পারে না। বরং বিয়ে করতে পারা মানেই প্রেমের সফলতা। কিন্তু সবাইকে বরাবরই ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিয়েই প্রেমের সঠিক রূপটি চিনতে মানুষকে সাহায্য করে। না, সেটা সব সময়ই নেতিবাচক হয় না। বরং, এমন অনেক স্বামী-স্ত্রী রয়েছে যারা প্রেম করে বিয়ে করলেও বিয়ের পরই সঙ্গীকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে, যেটা সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করে তোলে।

যা করতে হবে

সাইকোলজি টুডে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের কারণেই দুজন নারী-পুরুষ একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আফসোস এই যে এই আকর্ষণ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফুরিয়েও যায়। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী ‘এটাই স্বাভাবিক’-  এ রকম মনে করে চলতে থাকে।

আর সাধারণ মতামত দাঁড়ায়, বিয়ে মানেই ঝামেলা, বিয়ে মানেই অসুখী জীবনের শুরু। কিন্তু তা-ও বিয়ে করা বন্ধ হচ্ছে না। একই সঙ্গে ডিভোর্সও বন্ধ হচ্ছে না। অর্থাৎ যারা বিয়ের পরে প্রেমের হারিয়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে আপস করে চলতে পারে না, তারা এই বিচ্ছেদের রাস্তাটি বেছে নেয়। অথচ এতটা নেতিবাচক না হয়ে, ভিন্ন কিছু চেষ্টা করাই যায়। সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে হয়।

ইমোশনাল ফিটনেস এক্সপার্ট ড. বার্টন গোল্ডস্মিথ বলেন, ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, শুধু প্রাথমিক আকর্ষণটা মিইয়ে যায়। আর এই মিইয়ে যাওয়া আকর্ষণকে ফিরিয়ে আনার জন্য বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কের আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

কিন্তু সেটিও সঠিক সমাধানের পথ নয়। এটা ঠিক যে একটা সম্পর্কে শরীর ও মন দুই-ই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। একটিকে বাদ দিলে অন্যটি অর্থহীন। তাই দুটিকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু হারিয়ে বা মিইয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে ফিরিয়ে আনার জন্য শারীরিক সম্পর্ক কোনো সমাধান নয়। বরং নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জীবনে বৈচিত্র্য আনা উচিত।

সঙ্গীকে সঠিকভাবে জানতে পারা এবং বুঝতে পারা খুবই জরুরি। আর অবশ্যই উভয়ের মতামত ও রুচিকে একই রকমভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা মানেই নতুন নতুন রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া বা শপিং করা নয়। বরং এমন কিছু করা যাতে দুজনেই একান্তভাবে একজন আরেকজনকে সময় দিতে পারে। হতে পারে সপ্তাহের কোনো একদিন দুজনে মিলে একসঙ্গে রান্না করা কিংবা নতুন কোথাও বেড়াতে যাওয়া।

মনে রাখবে, দুজনে মিলে একসঙ্গে নতুন কোনো অভিজ্ঞতা অর্জন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলার সবচেয়ে উপযোগী উপায়। কিন্তু এই ধরনের যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় দুজনের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। একজনের ভালো লাগে বলেই সেটা আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আবার অন্যের কোনো রকম অসুবিধা হয়, এমন কিছুও করা যাবে না।

আমরা বিয়েকে দোষ না দিয়ে বা ‘সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায়’- এ রকম কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি নিজেদের মধ্যকার ভুল-বোঝাবুঝি দূর করার চেষ্টা করি, তাহলেই বেশির ভাগ সমস্যা শেষ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মতামত বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা খারাপ লাগা এই অনুভূতিগুলো সরাসরি প্রকাশ করলে সমস্যা হওয়ার আগেই সেটাকে এড়ানো যায়।

যা করা যাবে না

আজকের যুগে প্রায় সব পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরি করে। সে ক্ষেত্রে ব্যস্ততা ও স্ট্রেস দুজনেরই সমান। সুতরাং কখনোই সঙ্গীর কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না, বা সঙ্গীর ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করা যাবে না। ব্যস্ততায় সকালের নাশতা প্রায়ই হয় না। তাই দিন শেষে চেষ্টা করো যেন একসঙ্গে রাতের খাবারটা খাওয়া যায়। আর অবশ্যই এ সময় মুঠোফোনটি বন্ধ রাখো।

সন্তানের দায়িত্বটিও ভাগাভাগি করে নিতে হবে যেন সে উপেক্ষিত বোধ না করে, আবার স্বামী বা স্ত্রী কোনো একজনের ওপর চাপ না পড়ে। সন্তান দুজনেরই আর তাকে সময়ও তাই দুজনেরই দিতে হবে। বাবা-মা উভয়েরই প্রয়োজন একটি সন্তানের সুষ্ঠুভাবে বড় হয়ে ওঠার জন্য।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল-বোঝাবুঝির শুরুটা প্রায়ই তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কারণে ঘটে থাকে। সেটা হতে পারে প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মী বা আত্মীয়-পরিজন। একটা কথা মনে রাখবে, দিন শেষে তোমরা দুজনই নিজেদের সবচেয়ে কাছের মানুষ। বিশ্বাস যে কোনো সম্পর্কে যেমন সবচেয়ে জরুরি, তেমনি সবচেয়ে সংবেদনশীলও। সেই সঙ্গে অযথা অন্য কারও সঙ্গে নিজের সঙ্গীর তুলনা করে তাকে খাটো করে দেখানো যাবে না। যে কোনো সমস্যাতেই চেষ্টা করো বাড়িতে নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে।

বাইরের মানুষের সামনে কখনই সঙ্গীকে ছোট করা যাবে না। তর্ক-বিতর্ক খুব স্বাভাবিক, কিন্তু চেঁচামেচি করে অযথা নিজেকে ছোট করার কোনো মানে হয় না। বরং ধীরস্থিরভাবে যুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা অনেক সময়ই সেই বন্ধুটির সাহায্য চাই যে আমাদের বিয়ের আগের প্রেমের সময়টাতে আমাদের খুব কাছে ছিল। এটাও সব সময় ঠিক নয়। মনে রেখো, সেই বন্ধুটি কিন্তু বিয়ের পরে তোমাদের মাঝে গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কটাকে বুঝবে না।

সম্পর্ক যেমন দুজন মানুষ একসঙ্গে শুরু করে, ঠিক তেমনিভাবেই একসঙ্গে থেকেই পুরোনো প্রেমকে বছরের পর বছর নতুন রূপে জিইয়ে রাখতে পারে। সঙ্গীর প্রতি যত্নবান হওয়াটাই এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জরুরি। তবে কোনোভাবেই ‘মানিয়ে নেওয়া’টা যেন একজনের দায়িত্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানসিকভাবে একজনের পরাধীন বোধ করতে শুরু করার মাধ্যমেই সম্পর্কের অবনতির শুরু হয়। ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, মানুষ নিজের ভুলের কারণেই তা হারিয়ে ফেলে।

লেখা : সোহেলী তাহমিনা 
ছবি: সংগ্রহীত 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, তারপর?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২৩, ২০২০

মানুষের একটি বিশ্বাস রয়েছে যে সবচেয়ে কাছের বন্ধুরা একে অপরের প্রেমে পড়লে তারা সেরা জুটি হয়, আবার অনেকেই পরামর্শ দেন যে সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক না জড়ানোই ভালো। কী যে ভালো আর কী মন্দ সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবু বলার চেষ্টা।

একবার যদি ভালোবাসা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ভালোবাসার পাশাপাশি বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, প্রেমের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পরিচিতজনকে (বন্ধু) অন্যের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। এই পরিচিতজনকে প্রেমের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলে সম্পর্ক ভালো হয়।

নিরাপত্তাবোধ থেকে কাছে আসা

যে কোনো সমর্থন, সমর্পণে যার কাছে যাওয়া যায়, সেই তো বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই যদি একসঙ্গে বড় হয় দুজন, তাহলে বোঝাপড়াটা অনেক মজবুত থাকে। সে ক্ষেত্রে নতুন একটা সম্পর্কের শুরুতে দুজনেই মানসিকভাবে যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করে।

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম না হলে যার কাছে গেলেই সব শান্তি হতো তখন তার কাছে গেলেই কষ্ট পাওয়ার ভয়ে সম্পর্ক পরিণত হয় এড়িয়ে যাওয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বন্ধু তার সেরা বন্ধুর কাছে প্রেমের আহ্বান আশা করে না সে ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের মতো ব্যাপার ঘটে থাকে। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হলে পুরো প্রেম পর্বটাই থাকে জমজমাট। সাধারণত পড়াশোনা চলাকালীন সময়টার অনিশ্চয়তা, চতুর্মুখী চাপের সময়টায় বন্ধুত্বের পাশাপাশি প্রেমের এই অনুভূতিটুকু পারস্পরিক প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

আর যদি প্রেমটাই না হয়

সহজ, স্বাভাবিক বন্ধুত্বে নেমে আসা কঠিন হয়ে যায়। বন্ধুত্বে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যায়। এটুকু মনে রাখা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যাখ্যা গভীরভাবে চমৎকার,

বন্ধুত্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হইয়া ভালোবাসায় উপনীত হইতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা নামিয়া অবশেষে বন্ধুত্বে আসিয়া ঠেকিতে পারে না। একবার যাহাকে ভালোবাসিয়াছি, হয় তাহাকে ভালোবাসিব নয় ভালোবাসিব না; কিন্তু একবার যাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়াছে, ক্রমে তাহার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হইতে আটক নাই।

সুতরাং একজন আরেকজনকে প্রপোজ করার আগে, আকার-ইঙ্গিত সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে প্রপোজ করা উচিত। যদি পজিটিভ মনে না হয়, তবে বন্ধু হয়েই থাক না।

ভালো-মন্দে

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম অতঃপর বিয়েতে গড়ালে নতুন করে নিজেকে চেনানোর ব্যাপারগুলো থাকে না। একজন আরেক জনের পছন্দ, অভ্যাস, অন্যভস্ততা, রুচির ব্যাপারগুলো পরিচিত থাকায় নতুন করে আর মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় না।

কতটুকু সফল

টানাপোড়েন এ সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই ক্লাসে একই বিষয়ে পড়াশোনা করে একই পেশায় ক্যারিয়ার গঠন বা একই সঙ্গে উচ্চতর পড়াশোনায় যারা আছে তাদের জীবন সম্পর্কে জানা যায় বিয়ের আগে বেশির ভাগেরই বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের পর সম্পর্ক বিয়েতে গড়িয়েছে।

স্বস্তিদায়ক হয় এই সম্পর্কগুলো? যদিও ‘The secret of a happy marriage remains secret’। তারপরও বিপরীত গল্প তৈরি হয়। খুব আবেগপ্রবণ ভালোবাসাই যে সফল দাম্পত্য জীবন নিশ্চিত করে, ব্যাপারটি তা হয়ে ওঠে না।

শুধু ভালোবাসার অভাব নয় বিয়ের পর বন্ধুত্বের অভাবই অসুখী দাম্পত্য জীবনের একটি কারণ হতে পারে। তাই বিবাহিত জীবন স্বস্তিদায়ক ভালোবাসার চেয়েও অন্যান্য যে কটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ‘বন্ধুত্ব’ তার মাঝে একটি।

এমনটিও ঘটে থাকে, এমন জুটি রয়েছে কখনোই বন্ধু ছিল না বা দীর্ঘদিনের পরিচিতও নয়, তারা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়েছে স্বল্প সাক্ষাতেই, প্রথমেই বন্ধুত্বে পরিণত হয় না এই সম্পর্ক। জানাশোনা বাড়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে এই আকর্ষণ বাড়তে থাকে, ভালোবাসার বন্ধনটাও মজবুত হয়, তারপর তারা আবিষ্কার করে যে তারা একে অপরের ভালো বন্ধুও। এই আবিষ্কার একসঙ্গে চলার জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সহজতর করে তোলে।

আসলেই কি রোমান্স কমে যায়?

অনেকেই ভাবে, বন্ধু যদি জীবনসঙ্গী হয় তাহলে রোমান্স একটু কমে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটাও বলা যায় যে একটা সম্পর্কের সফলতা কেবল রোমান্সের ওপরই নির্ভর করে না। একটি সফল সম্পর্কের আরও অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলো সম্পর্ককে সুন্দর ও আনন্দের করে তুলতে সর্বোপরি এ কথাই সবচেয়ে বড় সত্য যে সঙ্গী একই সঙ্গে কখনো বন্ধু, কখনো জীবনসঙ্গী, কখনো ভালোবাসার মানুষ। সবচেয়ে বেশি মনোযোগ, সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়ার আশা সে-ই করতে পারে।

আরবি ভাষার বিশ্বখ্যাত কবি, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী কাহলিল জিবরান ‘যা তোমার সর্বোৎকৃষ্ট’ তাই বন্ধুকে দিতে বলেছেন। আর জীবনসঙ্গী যদি হয় বন্ধু তবে তুমিই তার জন্য বড় উপহার। আর সেও তোমার জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট কেউ।

 

লেখা: তাসনুভা রাইসা 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রারোমান্সরোমান্স রসায়ন

সঙ্গী সিরিয়াস নয়

করেছে Sabiha Zaman এপ্রিল ২৩, ২০২০

সম্পর্ক থাকা আর প্রেমে পড়ার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। প্রেমে পড়ার সময়গুলো যতটা পেলব, একটা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেই তেমন নয়। প্রেমে পড়লেই যে সম্পর্কে তা পরিণতি পাবে, তারও কোনো মানে নেই। আবার প্রেম চলতে চলতে হঠাৎ ছন্দপতন হলে অনেক সময়ই যোগাযোগ কমে, দেখা-সাক্ষাৎও তলানিতে এসে ঠেকে। এতেও সব সময় বোঝা যায় না আদৌ সম্পর্কটা আর আছে কি না। তবে সম্পর্ক নিয়ে সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত।

অনেক সময় দেখা যায়, এক পক্ষ মনে করে যে সম্পর্কে রয়েছে, কিন্তু অন্য পক্ষের ব্যবহার বুঝিয়ে দেয় প্রেম-প্রেম ব্যাপার থাকলেও সেটা আদতে সম্পর্ক নয়। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু একজনের স্পষ্ট করে জানানোর অভাবে সম্পর্ক যদি ঝুলে থাকে, তাহলে তা মোটেই সুখের হয় না। তোমাকেও কি এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে? কয়েকটি লক্ষণ খতিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে সঙ্গী ঠিক কী চাইছে। দেখে নাও সঙ্গীর মনোভাব জানার কৌশল।
ঝুলিয়ে রাখার মানসিকতা থাকলে সঙ্গী কখনো তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে তোমার পরিচয় করাবে না। কারণ, তোমার সঙ্গী এই সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান, এমনকি এটা আদৌ সম্পর্ক কি না, তা নিয়েও তিনি ধন্দে আছে।

এরা নিজেদের খুবই স্বাধীনচেতা ও ভবঘুরে হিসেবে দেখাতে চায়। যারা ঝুলিয়ে রাখতে পছন্দ করে সম্পর্ক, তারা কখনোই কোনো কমিটমেন্টের প্রসঙ্গে সোজাসাপ্টা উত্তর দেয় না। নানাভাবে এ ধরনের প্রশ্ন উদাসীন হয়ে এড়িয়ে যায়। মনোবিদদের মতে, তারা জেনেবুঝেই সবটা করে। কিন্তু এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে তারা দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়।
সম্পর্ক থাকলে পরস্পরের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে নিশ্চয়ই থাকবে। লক্ষ করে দেখবে, তারা নিজেদের সুবিধামতো ছাড়া তোমার সঙ্গে কখনোই দেখা করবে না।
এদের তুমি প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে খুব কমই পাবে। তারা এই সম্পর্কটায় অসম্পূর্ণভাবে জুড়ে থাকছে, কারণ তোমাকে হয় একটা বিকল্প হিসেবে সে ভেবে রাখছে, অথবা সন্দিহান রয়েছে বলেই এমন ব্যবহার করছে। সম্পর্কে ঝুলিয়ে রাখার অন্যতম লক্ষণ হলো, তারা কখনোই তোমার মেসেজ বা ফোনের উত্তর একবারে দেবে না। তোমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবে।

তারা নিজের মর্জি অনুযায়ী তোমার সঙ্গে কথা বলবে। নিজের মেজাজ ভালো হলে তোমার সঙ্গে এত গদগদ হয়ে কথা বলবে যে তুমি ভাববে এই তো আমার স্বপ্নের মানুষ। কিন্তু আবার দেখবে দু-তিন দিন তার কোনো পাত্তা নেই। অর্থাৎ বুঝবে ব্যাপারটা মোটেই সিরিয়াস সম্পর্ক নয়।

লেখা : রোদসী ডেস্ক

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

প্রেম কি কেবলি শরীরের চাহিদা?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২২, ২০২০

পড়াশোনা, তারপর চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছু পিছু দৌড়। কেউ নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। শেষে বিয়েটাই পিছিয়ে যায়। কেউ বিয়ে করেন ২০ থেকে ৩০-এর কোঠায় আবার কেউ দ্বিধায় পড়েন। কিন্তু মন, দিন শেষে নির্ভরতা খোঁজে, ভালোবাসা খোঁজে। প্রেমের সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রেম কখনো কখনো গড়ায় লিভ টুগেদার পর্যন্ত। কথায় আছে, একটা মিথ্যা কথা ঢাকতে হাজারটা মিথ্যা বলতে হয়। লিভ টুগেদার এমন একটা বিষয়, দুজন মানুষকে ঠেলে দেয় অনিশ্চয়তা আর ভীত অবস্থার দিকে। তবু তো থেমে থাকছে না এই মোহময় হাতছানি, এই রক্তরাগ এই সর্বনাশ!

সায়েম (ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ার পাশাপাশি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পার্টটাইম চাকরি করছে। ক্লাসফ্রেন্ড রত্নার সঙ্গে তিন বছর প্রেম করার পর তারা রাজধানীতে একটি ছোট্ট বাসায় বসবাস শুরু করে। এরপর সন্তান ধারণ করে রত্না। তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। শেষে অ্যাবরশন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বন্যা (ছদ্মনাম) একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করে। প্রেম হয় স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে। বিয়ে করার কথা ছিল দুজনের। সেই আশ্বাস থেকে বন্যা রনকের সঙ্গে ট্যুরে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরে রনকের আচরণ পুরোপুরি পাল্টে যায়। এরপর বন্যার মনে বাসা বাঁধে অন্য আতঙ্ক। নিজ থেকে চাকরিটা ছেড়ে দেয় বন্যা।

মিলনের নিকটাত্মীয় সামিয়া (ছদ্মনাম)। সামিয়া মফস্বল ছেড়ে রাজধানীতে আসে কোচিং করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। শহরে আসার পর নিয়মিত যোগাযোগ হয় মিলনের সঙ্গে। তারপর প্রেম। মিলন একদিন বলে একটি অ্যাডাল্ট সম্পর্কে যা যা হয়, এই সম্পর্কেও তাই তাই হবে। পরিণতি কত ভয়ংকর হবে বুঝতে পারে সামিয়া। কিন্তু মিলনকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ সে খুঁজে পায় না। ধ্যানে-জ্ঞানে মিলন। মিলনের উপস্থিতি মানে সামিয়ার ভালো লাগা। ছাত্রী হোস্টেলে থাকত সামিয়া। সন্ধ্যার পর হোস্টেল থেকে বের হওয়া নিষেধ। বাইরে থাকলে রাত আটটার পর হোস্টেলে প্রবেশ করার নিষেধ।

কোচিং শেষ করে মিলনের সঙ্গে দেখা করত সামিয়া। ফিরে আসত রাত আটটার আগেই। এক রাতে ফেরা হলো না তার। হোস্টেলে ফোন করে জানিয়ে দিল জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি গেছে। এই কথার সত্যতা প্রমাণ দেওয়ার জন্য টানা তিন দিন হোস্টেলে ফেরেনি সামিয়া। মিলনের সঙ্গে তার বাসায় ছিল। তিন দিন পর হোস্টেলে ফেরে সামিয়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পড়ালেখায় আগ্রহ হারায়। বিষণ্নতা-হতাশা গ্রাস করতে থাকে সামিয়াকে।

বিয়ে করতে আগ্রহী ছিল না মিথিলা (ছদ্মনাম)। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। বিয়েভীতি ছিল। ভয় ছিল চাকরি হারানোরও। যদি চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। যদি পরিবারের দায়িত্ব নিতে না পারে; সে ভয়ও ছিল মিথিলার। বাবা-মাকে রাখতে চেয়েছিল নিজের কাছে। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। একসময় বিয়ে করতে রাজি হয় মিথিলা। কিন্তু বয়সের দোহাই দিয়ে বিয়ে ভেঙে যেতে থাকে। দিন শেষে সে যে ঘরে ফিরে যায়, সে ঘরে একা।

একাকিত্ব গ্রাস করছিল মিথিলাকে। নিজের ভালো থাকা-মন্দ থাকার গল্প যার সঙ্গে শেয়ার করত, একদিন তার সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিথিলার। কিন্তু সে বিবাহিত। ঘর বাঁধতে হলে আরেকজনের ঘর ভাঙতে হবে। নীরব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে মিথিলার সঙ্গে ঘর বাঁধতে রাজিও হয়। কিন্তু নীরবের স্ত্রী একদিন হাজির হয় মিথিলার অফিসে। মিথিলার বসের কাছে বিচার দেয়। ক্ষমা চাইতে হয় মিথিলাকে।

সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, লিভ টুগেদার সম্পর্কে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই সম্পর্কের জের ধরে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এই প্রযুক্তি প্রসারের যুগে আমাদের হাতের মুঠোই ফোন। হাই রেজল্যুশন ক্যামেরাযুক্ত ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। অনেক সময় হাতে থাকা এই ক্যামেরাটি রোমান্টিক মুহূর্তবন্দী করার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গোপনীয়তার সীমা অতিক্রম করে সেই রোমান্টিক মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও যখন ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়, তখন সামাজিকভাবে হেয় হয় ভিকটিম ও তার পরিবার।

একটি প্রশ্ন

আমরা কি শুধু নিজের জন্য নিজে? তা তো নয়। আমাদের সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে মিশে থাকে পরিবারের সামাজিক মর্যাদা। তাই বিয়ের সম্পর্ক যে মানুষটির সঙ্গে নেই, যে মানুষটি সামাজিক ও আইনিভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দায়বদ্ধ নয়; তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়ার আগে যেন প্রিয় মানুষগুলোর মর্যাদার কথা ভুলে না যাই।

কী হচ্ছে

  • বিয়েবহির্ভূত লিভ টুগেদার
  • দূরে ট্যুর
  • ভ্রণ হত্যা
  • হত্যাকাণ্ড
  • সাইবার ক্রাইম
  • নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

কেন হচ্ছে এমন

  • পরিবার থেকে দূরে থাকা
  • অর্থনৈতিক মুক্তি
  • দেরিতে বিয়ে

লেখা: রোদসী ডেস্ক 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়বিশেষ রচনারোদসীর পছন্দরোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসি বলো বারবার

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ৮, ২০২০

ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞান যুগে যুগে ভালোবাসার অসামান্য ব্যাখ্যা দিয়েছে। যুগে যুগে, কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী। গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ।

ভালোবাসার শব্দচ্ছেদ

উইকিপিডিয়ায় ভালোবাসাকে বলা হয়েছে, ‘মনের গভীর থেকে উত্থিত শক্তিশালী ইতিবাচক আবেগ, মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারও সঙ্গে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না।’

মারিয়াম ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে ব্যক্তি, বস্তু বা কোনো ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি আত্মসমপর্ণ, তীব্র শরীরী আকর্ষণ এবং গভীর বন্ধন।’  আরবান ডিকশনারিতে সত্যিকার ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে ‘মোহ, একাকিত্ব, হতাশা আবার কখনো বিষণ্নতা।’ কেমব্রিজ ডিকশনারিতে ভালোবাসাকে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তির বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেমময় ভাব ও শরীরী আকর্ষণ অথবা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি শক্তিশালী অনুভূতি।’

ভালোবাসার বিজ্ঞান ও দর্শন

গ্রিক দার্শনিকেরা ভালোবাসাকে চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন, আত্মীয়তার জন্য ভালোবাসা (স্বজনপ্রীতি), বন্ধুত্বের জন্য ভালোবাসা (বন্ধুত্বপূর্ণ), বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা (প্রেমময়) এবং ঈশ্বরের জন্য ভালোবাসা (স্বর্গীয়)। অন্যদিকে যেখানে অপরের কল্যাণ নিহিত, তাই অ্যারিস্টোটলের কাছে ভালোবাসা। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের কাছে ভালোবাসা নিরঙ্কুশ, তিনি ভালোবাসাকে স্বজনকেন্দ্রিকতার ঘোর বিরোধিতা করেছেন। জীববিজ্ঞানী জেরেমি গ্রিফিথের মতে, ভালোবাসা হচ্ছে নিঃশর্ত নিঃস্বার্থতা। অন্যদিকে প্রতিটি ধর্মেই মানুষ, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে, যা স্বর্গীয় ও নিঃস্বার্থ।

প্রাচীন রোমানদের কাছে আবেগ মানেই প্রেম বা যৌনতা। চৈনিক সংস্কৃতিতে কনফুসিয়াসের মতে, ভালোবাসা হচ্ছে ‘কর্ম ও দায়িত্ব’। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বেদ মোতাবেক ভালোবাসার আদি ব্যাখ্যা ‘কাম’, যা শুধুমাত্র যৌনতা নয়, পার্থিব যেকোনো ইচ্ছাকেই বোঝায়। পারসি সংস্কৃতিতে ‘ইশক’ শব্দটি পাওয়া যায়, যা বন্ধু, পরিবার, স্বামী-স্ত্রী এবং স্রষ্টার প্রতি ঐশ্বরিক ভালোবাসাকে বোঝায়।

আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশার ভালোবাসাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন- কামনা, আকর্ষণ ও সংযুক্তি। ফিশারের মতে, প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক এই তিনটি ধরনের যে কোনো একটি দিয়ে শুরু হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। আবার একই সঙ্গে তিনটি ধরনই উপস্থিত থাকতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম মেকানিকসে ‘স্ট্রিং তত্ত্ব’ নামে একটি সূত্র আছে। এই সূত্রটির মাধ্যমে বিশ্বের সবকিছুকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

‘স্ট্রিং’ হলো এমন একটি অদৃশ্য জিনিসের নাম, যা দ্বারা বিশ্বের সবকিছু গঠিত হয়। অর্থাৎ আলো, বাতাস, শব্দ, তরঙ্গ, বস্তু সবকিছুই এই অতি ক্ষুদ্র ‘স্ট্রিং’ নামক একক দ্বারা গঠিত। ভালোবাসাকেও এই স্ট্রিং দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। ‘স্ট্রিং তত্ত্ব’ অনুযায়ী ভালোবাসারও একটি স্বতন্ত্র স্ট্রিং সত্তা রয়েছে।

পোল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানী বাউমান বর্তমান ভালোবাসাকে ‘তরল ভালোবাসা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, শার্টের বুকপকেটে যেমন খুব বেশি দরকারি কোনো কিছু থাকে না এবং তা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই সেটা পূরণ করা যায়, ভালোবাসা তেমনই। প্রথম দেখায় ভালোবাসার একটি বিশেষ আবেদন রয়েছে। এটি অহরহই ঘটতে দেখা যায়।

মানুষ বলে এটি সব সময়ই ঘটে। অনেকের কাছেই এটি হৃদয়ের গভীর থেকে উত্থিত কোনো এক স্বর্গীয় অনুভূতি, এক পলকেই যেখানে আটকে পড়ে প্রেমিক মন। কিন্তু এই আবেগ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার ব্যক্তিত্ব, নীতি কিংবা আদর্শ নয়, শারীরিক বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি তীব্র অনুভূতি থেকে সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞান বলে, প্রথম দেখায় যে আবেগ বা প্রেমভাব অনুভূত হয় তা প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা নয়। এটি গভীর আকর্ষণ যা সম্পর্কের সম্ভাবনা তৈরি করে।

ভালোবাসার মনোবিজ্ঞান

প্রেম হলো ভালোবাসার উত্তেজনাপূর্ণ আবেগ বা অনুভূতি। মনোবিজ্ঞানী চার্লস লিন্ডহোমের মতে, ‘প্রেম হলো একটি প্রবল আকর্ষণ, যা কোনো যৌন আবেদনময় দৃষ্টিকোণ হতে কাউকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপর ব্যক্তির প্রতি একই সঙ্গে শক্তিশালী মানসিক এবং যৌন আকর্ষণ কাজ করে, দাম্পত্যের ক্ষেত্রে যৌন আকর্ষণের তুলনায় ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভূতি অধিক গুরুত্বের অধিকারী হয়।’ দার্শনিক বার্নার্ডশ প্রেমকে দেখেছেন ধ্বংসকারী উপাদান হিসেবে। তার মতে, ‘প্রেম হলো সিগারেটের মতো যার শুরু আগুন দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে।’

মার্কিন মনোবিজ্ঞানী রবার্ট জেফ্রি স্টার্নবার্গ ‘ভালোবাসার ত্রিভুজ তত্ত্বে’ বলেছেন, ভালোবাসা মূলত গভীরতা, যৌনতা ও প্রতিশ্রুতির সমন্বয়। ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বে সব প্রেমের উৎস হচ্ছে যৌনতা। নর-নারীর মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও বিজ্ঞান ভালোবাসার নানা দিক দেখিয়েছে। ভালোবাসার আরেক প্রকাশ ফিলিয়া হলো ‘স্নেহের সম্পর্ক’ বা ‘বন্ধুত্ব’।

অ্যারিস্টোটল ফিলিয়া বলতে নবীন প্রেমিক, আজীবন বন্ধু, পাশাপাশি শহর, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চুক্তি, পিতা-মাতা ও সন্তান, নাবিক ও সৈনিক সহকর্মী, একই ধর্মের অনুসারী, একই সম্প্রদায়ের সদস্য এবং একজন মুচি ও তার খদ্দেরের সম্পর্ককে বুঝিয়েছেন।

ভালোবাসার সবচেয়ে শুদ্ধতম প্রকার হলো প্লেটোনিক বা বায়বীয় ভালোবাসা, যেখানে কামনা-বাসনার কোনো স্থান নেই। প্লেটোর প্লেটোনিজম মতবাদে এই ভালোবাসায় প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রবেশ করবে কিন্তু এখানে শরীর নামক বস্তুটি থাকবে অনুপস্থিত। এ ভালোবাসা কামগন্ধহীন।

কোনো চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রেমকে মনে হয় স্বর্গসুখ। কিন্তু সুখের অপর পিঠই যে জরা, ব্যাধি, মৃত্যু। তাই ভালোবেসে রোগাক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। এই রোগ মূলত ভালোবাসার সঙ্গে জড়িত মানসিক বেদনা। ইবনে সিনা বিষণ্নতাকে এই মানসিক পীড়ার প্রথম লক্ষণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

ভালোবাসা, প্রেম ও যৌনতা

১৯ শতক থেকেই মুক্ত ভালোবাসা বা ফ্রি লাভ শব্দটি একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এটি বিয়ে ও সন্তানের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। ‘উন্মুক্ত যৌনতা’ শব্দটি ‘মুক্ত ভালোবাসার’ ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের তত্ত্বমতে শরীরের উপস্থিতি ছাড়া ভালোবাসার অস্তিত্ব অকল্পনীয় ও সব প্রেমের উৎস শরীরী আকর্ষণ। সফ্লোকিসের অমর সৃষ্টি ইডিপাস রেক্স থেকে ফ্রয়েড সৃষ্টি করেন তার মতবাদ ইডিপাস কমপ্লেক্স। যেখানে মাতার প্রতি পুত্রের আসক্তি ও পিতার প্রতি পুত্রের ঈর্ষাবোধ দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে গ্রিসের পৌরাণিক লোককাহিনি, যেখানে ইলেকট্রা নামে একজন নারী তার এক ভাইয়ের সঙ্গে মিলে নিজের মাকে হত্যা করে পিতাকে বিয়ে করেছিল, এটাকে কেন্দ্র করে ফ্রয়েড দাঁড় করান ইলেকট্রা কমপ্লেক্স। এখানে ফ্রয়েড দেখিয়েছেন কন্যাসন্তানের পিতার প্রতি থাকা একধরনের অবচেতন যৌনকামনা। কালের প্রবাহে এই থিওরি বিতর্কিত এবং এর বিপক্ষে শক্ত যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু সত্যের সন্ধান করতে গিয়ে ইডিপাসের করুণ পরিণতি সমালোচক ভিন্ন পাঠকদেরও হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। মাতাকে বিয়ে করে তার গর্ভেই বংশ উৎপাদন করা ইডিপাসের আর্তনাদ পাঠক অনুভব করেছে তীব্র বেদনার সঙ্গে।

ইডিপাসের বলা, ‘No one should be called happy until he died happily’ উক্তিটি আমাদের জীবনের করুণ রসের সন্ধান দেয়। কারণ, ফ্রয়েড যৌনতাকে আশ্রয় করে তত্ত্ব বানিয়েছিলেন, মস্তিষ্ককেই বাদ দিয়ে, মনকে বুঝতে চেষ্টা করে গেছেন ফ্রয়েড। তথাপি এখনো এই মতবাদের প্রভাব কম নয়, এখনো অনেকের কাছে প্রেম মানেই শরীর বা যৌনতা।

ইতিহাসে ভালোবাসা

ব্রিটিশ সম্রাট অষ্টম হেনরি ভালোবাসার প্রতি আত্মসমর্পণ করে বলেছিলেন, ‘হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে তোমার কাছে মিনতি করছি, তোমার মন আর আমাদের মধ্যকার ভালোবাসার সবটুকু আমাকে জানতে দিও।’ কোনো এক অসীম ক্ষমতার বলে সাহিত্য, শিল্প, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই বিস্তার। মিসরীয় রানি ক্লিওপেট্রা আর তার সেনাপতি অ্যান্টনিওর প্রেমের বন্ধনে মিসর পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। গ্রিক প্রেমিকা পেনেলোপ ১০৮ রাজাকে প্রত্যাখ্যান করে ২০ বছর অপেক্ষা করেন প্রেমিক অডিসিয়াসের জন্য, যেখানে ভালোবাসার অপর নাম অপেক্ষা।

রানি ভিক্টোরিয়া স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। অন্যদিকে মেরি ও তার স্বামী পিয়েরে কুরির প্রেম ছিল মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই। অনিন্দ্যসুন্দরী নর্তকী আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন মোগল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম। প্রেমের জন্য লড়াই করেন পিতার বিরুদ্ধে, পরাজিত হওয়ার পর সেলিমের চোখের সামনে জীবন্ত কবর দেওয়া হয় আনারকলিকে।

সাহিত্যে ভালোবাসা

স্বর্গে গিয়েও ভালোবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতিগাঁথা লিখে গিয়েছেন মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী। লাইলি-মজনু অধরা প্রেমের এক বিয়োগান্ত গাথা। সত্য ঘটনাকে ঘিরে তৈরি কাব্য দান্তের অমর কীর্তি ‘ডিভাইন কমেডি’র দুই কিংবদন্তি চরিত্র পাওলো এবং ফ্রান্সেসকা। স্বামী জিয়ানসিয়োতোর ভাই পাওলোকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ হয়ে পড়লে ফ্রান্সেসকা ও পাওলোকে হত্যা করা হয়।

ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনির প্রেমের সত্য কাহিনি নিয়ে নাটক লেখেন বিখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্্সপিয়ার। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়া এই যুগলের বন্ধন মিসরকে ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল। কিন্তু রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর ভুয়া খবর শুনে বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেন অ্যান্টনিও।

অন্যদিকে অ্যান্টনির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ক্লিওপেট্রাও আত্মহত্যা করেন। রোমিও-জুলিয়েট উইলিয়াম শেক্্সপিয়ার রচিত আরেকটি ট্র্যাজেডি রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান। সারা দুনিয়ায় যুগে যুগে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে প্রাণ দেওয়া এই প্রেমিক যুগল ভালোবাসার আরেক প্রতিশব্দ। ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাণ্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা এটি। মামি ইসলদের প্রেমে পড়া ত্রিস্তান ভগ্ন হৃদয় নিয়েই মারা যান।

অন্যদিকে পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি ও ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও নেপোলিয়নের উত্তরাধিকারের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারায় জেসেফাইনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। সাহিত্যজগতে মার্গারেট মিচেলের বিখ্যাত উপন্যাস ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ একটি অমর সৃষ্টি স্কারলেট ও’হারা ও রেট বাটলার। তিনি এখানে স্কারলেট ও’হারা এবং রেট বাটলারের ধারাবাহিক প্রেমের এবং ঘৃণার সম্পর্কের একটি নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। উগ্র দ্বৈত অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে শুধু কামুকতা সৃষ্টি করেছে, কিন্তু কোনো স্থায়িত্ব সৃষ্টি করেনি।

ভালোবাসার অমর উপাখ্যান

গ্রিক পুরাণমতে, দেবী আফ্রোদিতি ভালোবাসা, সৌন্দর্য এবং যৌন পরমানন্দর দেবী। রোমানদের কাছে আফ্রোদিতি ভেনাস নামে পরিচিত এবং সেখানে তিনি প্রেম ও সুন্দরের দেবী। গ্রিক মিথলজিতে সাইপ্রাসের রাজা পিগম্যালিয়ন নিজের হাতে গড়া নারী মূর্তির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে দেবী ভেনাসের মন্দিরে মূর্তিটিকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করলেন। প্রেমের দেবী ভেনাস মঞ্জুর করলেন তার প্রার্থনা। ভালোবাসার শক্তিতে পাথরে ফিরে এলো প্রাণ। এই নারী মূর্তির নাম দেওয়া হয়েছিল গ্যালাতিয়া।

গ্রিক পুরাণের হেক্টর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মনুষ্যত্বের প্রতি ভালোবাসার কারণে দাঁড়িয়ে ছিলেন দানবের মুখোমুখি। রাজা মেনেলাসের স্ত্রী অপূর্ব সুন্দরী হেলেনের প্রেমে পড়েছিলেন প্যারিস। হেলেন তখন রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। পরকীয়া প্রেমের শাস্তিস্বরূপ ধ্বংস হয়েছিল ট্রয় নগরী। প্রাচীন গ্রিকের অরফিয়াস প্রেমে পড়েন সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের। বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভূমি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর।

পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইউরিডাইস পালাতে গিয়ে সাপের বিষাক্ত ছোবলের শিকার হয়ে মৃত্যুর দেশে চলে যান। দেবতাদের বরে অরফিয়াসকে পাতালপুরি থেকে ইউরিডাইসকে নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। পাতালপুরিতে ইউরিডাইসকে নিয়ে আসার সময় শর্ত অবজ্ঞা করে পেছনে তাকাতেই তার জীবন থেকে চিরতরে বিদায় নেয় প্রিয়তমা ইউরিডাইস।

এ ভালোবাসার শহর

যুগে যুগে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে অনেক স্মৃতির ভাস্কর্য। ভালোবাসার ধূম্রজালে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দাঁড় করিয়েছে ভালোবাসার নানা সংজ্ঞা, সৌন্দর্য। সম্রাট শাহজাহান স্ত্রী মমতাজ মহলকে ভালোবেসে তৈরি করেছেন পৃথিবীর বিস্ময় তাজমহল। দেশ, কালের অতীত বিশ্বনন্দিত এই কীর্তির বিশালত্ব আর অসাধারণ সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় প্রেমিক হৃদয়। সত্যিই ‘এক বিন্দু নয়নের জল, কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল। এ তাজমহল।’

উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের বিখ্যাত রোমান্টিক উপন্যাস রোমিও-জুলিয়েটের স্মৃতিবিজড়িত ইতালির ভেরেনায় জুলিয়েটের বাড়িটি প্রেমিক যুগলের কাছে এক তীর্থস্থান। জুলিয়েটের বাড়িটির মূল ফটকের দেয়ালে পর্যটকেরা প্রেমের নানান সমস্যা, প্রিয় মানুষটিকে না পাওয়ার বেদনার কিংবা সম্পর্কের সুখ-শান্তি কামনা করে লিখে যান চিঠি-চিরকুট। প্যারিসের সিন নদীর ওপর শৈল্পিক ৩৭টি ব্রিজের রেলিংয়ে চোখে পড়ে ‘লাভ প্যাডলক’ নামে বিশেষ তালার। পৃথিবীজুড়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদের নামের অক্ষর খচিত করে এই তালাগুলো ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে চাবি ফেলে দেন সিন নদী।

নদীর কাছে আকুতি থাকে একটাই, এ বাঁধন যেন না ছিঁড়ে। ইউক্রেনের ক্লেভান শহরের কাছে অবস্থিত ‘টানেল অব লাভ’ প্রেমিক যুগলের কাছে আরেক তীর্থস্থান। সবুজ গাছপাতায় ঘেরা একটি ট্রেন টানেলের মাঝ দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেমিক যুগলেরা ও দম্পতিরা এই টানেলে বেড়াতে আসে। চুমু খেয়ে সম্পর্কের সুখ ও দীর্ঘস্থায়িতার প্রার্থনা করে তারা। প্রচলিত আছে, কোনো যুগল যদি এই পথটির ওপর দিয়ে হাত ধরে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যায় এবং তারা যদি কোনো ইচ্ছাপোষণ করে তাহলে তা বাস্তবে পরিণত হয়। মিথ কিংবা সত্যি, ভালোবাসায় বাঁধা পড়া হৃদয় চলে তার নিজ গতিতেই পথের সন্ধান করে, খুঁজে নেয় তার পথ।

ভালোবাসার ন্যায়-অন্যায়

প্রেমকে কখনো মানুষের কাছে শুদ্ধতা-পবিত্রতার প্রতীক আবার কখনো তার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে পাপাচার ও কলঙ্কের দাগ। পৃথিবীর প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। ঈশ্বরের নিষেধ উপেক্ষা করে সঙ্গিনীর প্রতি প্রেমে অন্ধ হয়ে গন্ধম খেয়েছেন আদি পিতা। এই প্রেমকে বলা হয় শাশ্বত প্রেম। হিন্দু পুরাণে শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতার প্রেমে পড়ে রাবণ তাকে অপহরণ করে সীতাকে দেহ-মনে পাওয়ার সব কলাকৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এই প্রেম কুটিল। কারণ, এটি একতরফা বলে। আবার দেবরাজ ইন্দ্র গৌতম মুনি সেজে মুনিপত্নী অহল্যার সঙ্গে সহবাস করেছেন। রাজা জনমেজয় সর্পযজ্ঞের পর যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে শুরু করেন, তখন ইন্দ্র কৌশলে রানি বোপস্টুমার ধর্ম নষ্ট করেছিলেন।

রাধা ছিলেন কৃষ্ণের মামি-মা। কিন্তু তারাও অমর হয়েছেন এই সুধা পান করে। কৃষ্ণ কেন রাধাকে বিয়ে করেননি এটি নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক। কৃষ্ণ বলেন, যেখানে আত্মা এক সেখানে বন্ধনের প্রশ্ন কোথায়? নিজকে কি বিয়ে করা যায়? কৃষ্ণের প্রতি গোপিনীদের ভালোবাসা ও রাধার আত্মত্যাগ আজও এক রহস্য। এ রহস্যের সন্ধান কেবল জানে প্রেমিক হৃদয়, যা না মানে জাত-পাত-ধর্ম কিংবা শুদ্ধ-নিষিদ্ধের বিধিবিধান।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশ সমকামী সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু শত শত বছর আগে পুরুষ হয়ে পুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট। যা ছিল পাপ, নিষিদ্ধ। কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে প্রেম এসেছিল বারবার। নার্গিস খানম, প্রমীলা দেবী, বেগম ফজিলাতুন্নেসা, রানি সোমসহ অনেকের প্রতি আসক্ত হয়েছিলেন তিনি। তারপরও প্রেমের বিরহে হয়েছেন বেদনাবিধুর। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে একা ঝরা ফুল কুড়িয়ে গিয়েছেন।

কবিগুরুর মতে ‘যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে হৃদয়ের সব পচা পুকুরে ডুবিয়ে-চুবিয়ে একাকার না করলে হয়তো ভালোবাসা পূর্ণ হয় না।’ রবিঠাকুরের জীবনে মৃণালিনী ও কাদম্বরী দেবীর দ্বন্দ্ব এক গোপন রহস্য। মৃণালিনী দেবীকে বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন কাদম্বরী দেবী। ‘জীবনস্মৃতি’তে কবি লিখেছিলেন, তার ‘চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’

প্রেম কবিকে হয়তো শান্তি দিতে পারেনি, তারই প্রকাশ পাওয়া যায় ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনাময়’ এ। কবির এই জিজ্ঞাসা মনে করিয়ে দেয় শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মাতাল হয়ে বিভ্রান্তের মতো ‘পারু পারু’ বলে ঘোরার দৃশ্যপট, যা কখনোই প্রেমিক হৃদয়ের প্রত্যাশিত জীবন হতে পারে না।  তারপরও ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা ছিল, ভালোবাসা থাকবে।

পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, ভালোবাসা নিত্যসহিষ্ণু, ভালোবাসা স্নেহ-কোমল, তার মধ্যে নেই কোনো ঈর্ষা। ভালোবাসা কখনো বড়াই করে না, উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না, সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজিও নয়। পরের অপরাধ সে ধরেই না। অধর্মে সে আনন্দ পায় না বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ।

সুতরাং ভালোবাসি বলো বারবার।

লেখা: লিহান লিমা 
ছবি: রোদসী  ও সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook