রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

নারী

.তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনাসম্ভাবনাসাফল্য

স্বপ্ন দেখি নারী দিবসের দরকারই হবে না

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ১০, ২০২২

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে। চরের মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান নানান বিষয়ে কাজ করলেও তার মূল আগ্রহ নারীর জীবন নিয়ে। কারণ তিনি মনে করেন, নারীর উন্নয়ন না হলে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিশ্ব নারী দিবসে রোদসীর বিশেষ সংখ্যায় কথা হলো ফ্রেন্ডশিপ-এর ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুনা খানের সঙ্গে। কথা বলেছেন সোলাইমান হোসেন-

 

রুনা খান

 

শুরুতেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের আন্তর্জাতিক রিবা অ্যাওয়ার্ড লাভ করার জন্য। শুরুতেই আমরা আপনার ছোটবেলার গল্প শুনতে চাচ্ছি। কীভাবে কেটেছে আপনার ছেলেবেলা?

রুনা খান : বাংলাদেশের একটি কয়েকশ বছরের পুরোনো পরিবার থেকে আমি উঠে এসেছি। আসলে একটা নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে আমরা বড় হয়েছি। আমাদের আশপাশে গরিব কী তা আমরা জানতাম না। ঢাকা শহরে গাড়িতে যখন বসতাম, তখন গরিব আসতÑওটাই আমাদের জন্য গরিব দেখা ছিল। এর একটাই কারণ- আসলে একটা গ-ির মধ্যে আমরা সবাই বড় হয়েছি। পারিবারিকভাবেই আমার বিয়ে হয়ে যায় এবং এখন আমার তিনটি সন্তান আছে। তবে আমি যতই নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে বড় হই না কেন, কখনো কাজ থামাইনি।

 

অনেকেরই তো অনেক রকম চিন্তা থাকে। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। আপনার ছোটবেলায় এমন কোনো ইচ্ছা ছিল কি?

রুনা খান : আমি আইনজীবী হতে চেয়েছিলাম। আমি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সবখানেই পড়াশোনা করেছি। কিন্তু একটা জিনিস সারা জীবন মনে হতো, তা হলো দেশের জন্য কিছু করব। কিন্তু কী করব এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে এটা আমার মাথায় সব সময় ছিল যে, এই দেশ ছেড়ে আমি কখনোই চলে যেতে পারব না। আমি যখনই চিন্তা করি আমি কখনো ধানখেত দেখতে পারব না, কখনো কৃষক দেখতে পারব না, আমার তখন মন খারাপ হয়ে যায়। আমি যখন নৌকা নিয়ে এদিক-সেদিক যেতাম, তখন দেখতাম সবচেয়ে গরিব লোক এখানে থাকে। তখন মনে হলে এসব মানুষকে নিয়ে কিছু একটা করা যেতে পারে। সেভাবেই শুরু।

চরের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তো আপনারা কাজ করছেন। এর মধ্যে নারীর জীবন নিয়ে আপনার আলাদা কোনো ভাবনা আছে কি?

রুনা খান : আমি নারী, কেমন করে নারীদের জন্য ভাবব না? ভাবনা অবশ্যই আছে। নারীদের জন্য সব সময় ভাবি। নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের সন্তান। এ কারণেই নারী এবং শিশু আমার কাজের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু একটা সংসার সুন্দর হয় নারী-পুরুষ আর সন্তান নিয়ে। তাই আমি শুধু নারীকে নিয়ে কাজ করি, এটা কখনো মনে করি না। কারণ, উন্নতি সবাইকে নিয়েই হবে। যে কারণেই আমাদের কোনো কাজ শুধু নারীর জন্য নয়। তারপরও আমাদের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা হলেন নারী।

নারীকে নিয়ে অনেক কাজই তো করেছেন, কিন্তু এমন কোনো কাজ কি আছে, যেটা ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে তৃপ্তি দিয়েছে?

রুনা খান : চরে একটা মেয়ের যখন ফিস্টুলা কিংবা পোলাস্ট নিউট্রেস হয়, ১৯ কিংবা ২০ বছরের একটা মেয়েকে যখন দেখি এসব কারণে তার স্বামী তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, তখন খুব খারাপ লাগে। পরিবার থেকে আলাদা করে দিয়ে আলাদা ঘরে রেখে দেয়। অথচ সাধারণ আধা ঘণ্টার একটা অপারেশন করিয়ে তাকে আবার পরিবারে ফেরত পাঠানো যায়। এমনি করে যখন আমি লাইফ চেঞ্জ দেখতে পারি, তখন এমন কাজের শান্তি অন্য রকম হয়।

আপনার দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আপনার কি কখনো মনে হয়েছে নারীর কোন জায়গাটা উন্নত হলে পুরো সমাজ উন্নত হবে?

রুনা খান : আমি মনে করি, নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে হবে। সেই শ্রদ্ধাবোধ যেমন তার স্বামীর, সেই সঙ্গে তার পরিবারের। নারী যখন তার সঠিক শ্রদ্ধাবোধ এবং মূল্যায়নটা পাবে, তখনই কেবল নারী সব করতে পারবে। একটা নারী একই সঙ্গে বাড়ির কাজ, বাড়ির বাইরের কাজ করে সন্তান জন্ম দেওয়া, টাকা আয় করা থেকে শুরু করে সব রকম কাজের সঙ্গেই যুক্ত।

আসলে একটা সমাজ কিংবা পরিবার কিন্তু নারীকেন্দ্রিক। আমরা যতই অস্বীকার করার চেষ্টা করি না কেন, আসলে একজন নারীকে কেন্দ্র করেই কিন্তু পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র সবই চলে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

রুনা খান : আসলে এ বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। একজন নারীকে কেন্দ্র করেই তার সন্তান-সংসার এবং সমাজ। নারীকে কেন্দ্র করেই সংসারের আয়, এমনকি কিভাবে সংসারের জন্য সুন্দরভাবে ব্যয় করতে হয় সেই ব্যাপারে নারীর জানাশোনা অসামান্য। নারীরা যেভাবে সংসার চালাতে পারেন, ছেলেরা সেই আন্দাজে চালাতে পারেন না।

আসলে নারীর যে সঞ্চয়ক্ষমতা, সেটা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি আলাদা। আমাদের দাদি-নানি কিংবা মায়েদের দেখেছি ভাতের চাল থেকে একমুঠ হয়তো রেখে দিত সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে। এই চাল আবার কোনো বিপদের দিনে সংসারের কাজেই লাগাত। এগুলো তো নারীর অন্য রকম ক্ষমতা।

রুনা খান : হ্যাঁ, এটা নারীদের একটা অসামান্য একটা ক্ষমতা। আর এ কারণেই আমাদের একটা ফিন্যান্সিয়াল প্রোগ্রাম আছে, যেটার নাম দিয়েছি মুষ্টি। কারণ, এটাই কিন্তু মেয়েদের সক্ষমতার জানান দেয়। এটাই নারীর বিশেষত্ব। কোনো একদিন দেখা দেখা গেলো ওই পরিবারের ঘরে চাল নেই, সেদিন এ চালই তাদের মুখে ভাত তুলে দেয়। চিন্তার এই জায়গার কারণেই তারা শ্রদ্ধার যোগ্য। মেয়ের ক্ষমতা এবং ছেলের ক্ষমতা কিন্তু আলাদা। আমি বলছি না মেয়েদের শক্তি ছেলেদের মতো হতে হবে। বা একটা মেয়ে, ছেলেদের মতোই কাজ করবে।

মেয়ে আসলে তার বৈশিষ্ট্য নিয়েই মেয়ে এবং এটাই তার সৌন্দর্য

রুনা খান : একদম তাই। মেয়ে তার নারীত্ব নিয়েই সুন্দর। একটা মেয়ের মনুষ্যত্ববোধ আর নমনীয়তাকে যে ছেলে দুর্বলতা ভাবে, সে আসলে বিরাট ভুল করে। এগুলো নারীর দুর্বলতা নয়। এটাই কিন্তু নারীর সাহস, এটাই নারীর ক্ষমতা।

সামনে বিশ্ব নারী দিবস। আপনি যে নারীদের নিয়ে কাজ করছেন, তাদের কাছে নারী দিবস এবং অন্য আর দশটা দিন একই। প্রতিবছর নারী দিবস আসে কিন্তু এই নারী দিবস কি কোনো প্রভাব তৈরি করতে পারে? এই নারী দিবসটা আপনি কীভাবে দেখেন?

রুনা খান : যখন কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তখন একটা একক জিনিস দিয়ে তা হয় না। আমি যদি বলি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজই আমার সমাজ বদলে দেবে কিংবা মাইক্রোফিন্যান্সই আমার সমাজ বদলে দেবে, তা কিন্তু কখনো সম্ভব নয়। কোনো একটা কিছু দিয়ে কখনো দুনিয়া পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। দুনিয়ায় বিভিন্ন রকম মানুষ, তাই বিভিন্ন রকম জিনিস লাগে এই দুনিয়াকে পরিবর্তন করতে। আমরা নারী দিবস পালন করি, এটা আসলে একটা কম্পোনেন্ট। এটা নারীকে অনুভূতি দেয় যে, তুমি স্পেশাল। তাই আমি মনে করি নারী দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার স্বপ্ন হলো হয়তো কোনো একদিন নারী দিবসের আর দরকারই হবে না। হয়তো নারী-পুরুষ মিলে একটা দিবস পালন করবে, যেটার নাম হবে হিউম্যান ডে।

 

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, বিশেষ করে নারীদের নিয়ে?

রুনা খান : আমরা বিভিন্ন বিষয়ে অনেক উন্নতি করেছি। আমাদের মতো অর্থনীতির সক্ষমতার দেশের তুলনায় এদেশের নারীদের আমরা অনেক ওপরে নিয়ে গেছি। আপনি যদি আশপাশের কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। কিন্তু দারিদ্র্য আমাদের অনেক কিছু বাধাগ্রস্ত করছে। এসব কিছুর মধ্য থেকেও আমি চেষ্টা করছি চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে।

এবার চরের তিনটি মেয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে চান্স পেয়েছে। যাদের বাসায় একটা মাত্র কুঁড়েঘর। যেখানে কোনো রকমে তারা পরিবার নিয়ে বাস করে। অথচ এই মেয়েগুলো এখন পুরো দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছে। আমার স্বপ্ন হলো প্রতিটি চর থেকে যেন অন্তত একটি করে মেয়েকে এমন ভাবে তৈরি করতে পারি, যারা তাদের পুরো কমিউনিটির আদর্শ হবে।

এখন তো ডিজিটালাইজেশনের যুগ। আপনি যে নারীদের নিয়ে কাজ করছেন, তাদের প্রযুক্তিগতভাবে উন্নয়নের জন্য কিছু করছেন কি?

রুনা খান : হ্যাঁ, এগুলো আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে করি। আমাদের স্কুলগুলো সব ডিজিটালাইজড। তা ছাড়া বাচ্ছাদের আমরা কম্পিউটারে দক্ষ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিই।

আপনারা এখন পর্যন্ত কতগুলো স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন?

রুনা খান : আমাদের প্রাইমারি স্কুল ৪৮টির মতো। হাইস্কুল আছে ২২টির মতো। এ ছাড়া অ্যাডাল্ট এডুকেশন সেন্টার আছে ৪৮টি। আর আমাদের রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৪০০ স্কুল আছে।

এর বাইরে আপনারা আর কী কী বিষয়ে কাজ করছেন?

রুনা খান : আমরা প্রথমেই চেষ্টা করি মানুষের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে। যেখানে মানুষ দাঁড়াতে পারে। সেই প্ল্যাটফর্মটা তৈরি করতে কী কী দরকার? প্রথমেই লাগে স্বাস্থ্য। আমরা স্বাস্থ্য খাতে খুব বেশি কাজ করি। প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ লোককে আমরা সরাসরি সেবা দিই। শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। এরপর আমরা ইনকাম জেনারেশন করাই। যারা কৃষিকাজ করতে পারে, তারা সেটা করে। যারা হাঁস-মুরগি পুষতে পারে, তারা সেটা করে। কেউ বাগান করে। মাছ চাষ করে। এমন অনেক কাজ।

 

আপনার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫১ শতাংশ নারী কর্মী কাজ করেন। এটা কি কোনো বিশেষ চিন্তা থেকে করা?

রুনা খান : এটা আসলে বিভিন্ন আমাদের অফিসের বিভিন্ন দপ্তরে ভেদে কমবেশি আছে। তবে চেষ্টা থাকে নারী-পুরুষের সমন্বয়টা ঠিক রাখতে। বিশেষ কোনো চিন্তা থেকে নয়।

 

বাংলাদেশের নারীদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

রুনা খান : আমি বলব বাংলাদেশের লোকজন যেন নারীদের আরও একটু সম্মান করে। আমি সব পুরুষকে অনুরোধ করব আপনি আপনার স্ত্রী-সন্তান-মাকে সম্মান করুন। আপনি যদি সম্মান না করেন, তাহলে আপনি জানেনই না আপনার কি ক্ষতি হচ্ছে। অর্ধেক সম্ভাবনা আপনি হারাচ্ছেন যদি আপনি আপনার স্ত্রীকে সম্মান না করেন।

এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
রুনা খান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবননারীবিশেষ রচনা

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ৮, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপি সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর আজকের এই দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ”। এই মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো:আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’ দিবসের এই প্রতিপাদ্যটিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সহযাত্রী হিসেবে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ার কাজে পুরুষের মতো সমান অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা আগামীতে আরো বেগবান হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক এক বাণীতে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে। সারাবিশ্বে তাই আজ বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, স্বীকৃতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এদেশের নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেমন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তেমনিভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইউএন উইমেন এর অফিস প্রধান গীতাঞ্জলি সিং।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাব আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে “স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী সাংবাদিকতা” শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নারী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা অংশ নেবেন।

৬৬ টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি নারী দিবস উপলক্ষ্যে আজ বিকাল ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ বছর সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘নারী-পুরুষের সমতা, টেকসই আগামীর মূলকথা’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন করেছে। র‍্যালির পর ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী দিবসের বিশেষ সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হবে।

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট আজ আনড়ি দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২ টা ০১ মিনিটে অনলাইনে রাতের আধার ভাঙার প্রতিকী আয়োজন ও পাশাপাশি হ্যাশট্যাগ (#) ‘আঁধার ভাঙ্গার শপথ’ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। এই জোট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি জানিয়েছে সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নারীর জন্য প্রতিটি সময়, স্থান ও মুহূর্তকে নিরাপদ করার।

এছাড়াও ক্রিশ্চিয়ান উইমেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আগামী ৯ মার্চ (বুধবার) বেলা ২টায় ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে “উইমেনস ক্যাফে: টেকসই ভবিষ্যতে নারীর অবদান” শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন মেহের আফরোজ চুমকি।

সূত্র: বাসস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনা

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি হোক ইতিবাচক

করেছে Tania Akter মার্চ ৩, ২০২২

দেশসেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটিতে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রথম সারির সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও রয়েছে সুনাম। নারী উদ্যোক্তাদের দিচ্ছেন প্রশিক্ষণসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কাজই একাগ্রচিত্তে করে যাচ্ছেন ফারজানা নাহিদ। সমাজে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে সর্বক্ষেত্রেই জয়লাভ করা যায়, এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি। এবারের রোদসীর বিশ্ব নারী দিবসের বিশেষ আয়োজনে তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন তানিয়া আক্তার

শুভ্র সাজে ফারজানা নাহিদ

শৈশবে কী হতে চেয়েছিলেন?
ফারজানা নাহিদ : কখনোই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করিনি। জীবনে চলার পথে প্রতিটি ধাপেই মনোযোগ আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। এখনো নিখুঁত জীবনের আশায় না থেকে জীবন যেভাবেই ধরা দিক না কেন, সেই অসম্পূর্ণতাকে নিজের মেধা আর দক্ষতায় পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত হয়ে কেমন অনুভূতি হয়?
ফারজানা নাহিদ : ভীষণ ভালোলাগার একটি পেশা শিক্ষকতা। নিজের মেধা, দক্ষতা আর জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারার আনন্দ অতুলনীয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে চার বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছি। প্রতিবছরই নতুন নতুন মুখ শ্রেণিকক্ষ আলোকিত করে। তাদের শুধু পড়ানোর সঙ্গেই আমি জড়িত নই। তাদের জীবনচলার পথকে আরও সুগম করতে বছর দুয়েক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি স্টার্টআপ নেক্সটের (এনএসইউএসএন) পরিচালক হিসেবে কাজও করেছি। কারণ, এই তরুণ মুখগুলোই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের শ্রেণিকক্ষের বাইরেও অনেক শিখতে হবে। সেই সুবিধা দিতেই স্টার্টআপের সঠিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করেছি। এখনো নিয়মিত তাদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে থাকি। সরাসরি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো সমাধানের অনুভূতি অন্য রকম। তাই এই পেশার প্রতি বেশ ভালোলাগা কাজ করে।

প্রশিক্ষক ফারজানা নাহিদ

 

শিক্ষক কিংবা সংবাদ পাঠিকা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হয়?

ফারজানা নাহিদ : শিক্ষকতা এমন একটি দায়িত্ব, প্রথমেই এটাকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে নিতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। এর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানে দক্ষ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের নানা রকম বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের উত্তর দেওয়ার মতো ধারণা থাকলে সেই শিক্ষকের প্রতি আস্থা বাড়ে। ধৈর্য নিয়ে শিক্ষার্থীর কথা বা প্রশ্ন শোনার গুণ থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মের জীবনযাপনের বিষয়েও ধারণা রাখতে হবে। আর নিয়মিত শিখে যেতে হবে। কারণ, প্রতিবছরই বিশ্ব বদলাচ্ছে। শিক্ষকতা পেশায় গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ এবং বানানের প্রতি সচেতন থাকা। যারা শিক্ষকতায় আসতে চায়, তাদের এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকতার মতোই সংবাদ পাঠিকার জায়গাটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমি ছাত্রাবস্থাতেই অর্থাৎ ২০০৪ সালে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে সংবাদ চ্যানেল এনটিভিতে যোগ দিয়েছি। জ্যেষ্ঠ সংবাদ পাঠিকা হিসেবে এখনো কাজ করে যাচ্ছি এনটিভিতেই। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমাকে এটাই শেখায় যে এই পেশায় আসতে হলে অবশ্যই বাচনভঙ্গি ভালো হতে হবে। বানান ও উচ্চারণ আয়ত্তে রাখতে হবে। সংবাদ উপস্থাপনের স্বকীয়তা তৈরি করতে হলে নিয়মিত সংবাদ দেখতে হবে। প্রতিনিয়ত বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে। আত্মবিশ্বাস আর সাহসের সঙ্গে অনুভূতি সামলে নিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

সংবাদ পাঠের সময়

জীবনে কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
ফারজানা নাহিদ : জীবনে কাজ করতে গিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইনি। কারণ, আমার পারিবারিক আবহ বেশ অনুকূলে ছিল। তবে প্রাকৃতিকভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি। আমার বাবা এবং জীবনচলার সঙ্গীকে হারিয়েছি অকালেই। আমার জীবনের অনুপ্রেরণা ছিলেন সেই দুজন। সেই প্রিয় মানুষদের সঙ্গ জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের একমাত্র মেয়েটি এখনো ছোট। বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমিই তার বাবা এবং মা। এই একা অভিভাবকত্ব বেশ কঠিন। তবু জীবনের বাঁকে বাঁকে কিছু বদল তো থাকেই। সেগুলো মেনে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

ফারজানা নাহিদ 

বিশ্ব নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিলিভ ইকুয়াল। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই

ফারজানা নাহিদ : নারী-পুরুষের সমতার ব্যাপারটি আসলে বিশ্বাসের বিষয়। কারণ, প্রথমত নারীরা মানুষ। আর মানুষ হিসেবে সমান সুযোগ অবশ্যই একজন নারীর থাকা উচিত। লিঙ্গবৈষম্য করার বিষয়টি জেন্ডারভিত্তিক নয়, এটি মানসিকতাভিত্তিক। এই মানসিকতায় নারী ও পুরুষ উভয়েই হতে পারে।  নারীদের দুর্বল মনে করার কোনোই কারণ নেই। যদি নারীরা মানসিকভাবে দুর্বল হতো, তাহলে সংসার, চাকরি সব ধরনের কাজ গুছিয়ে করাটা সম্ভব হতো না। আর নারীদের শারীরিক গঠনও দুর্বল মনে করার কোনো কারণ নেই। শারীরিকভাবে দুর্বল হলে গর্ভধারণের মতো জটিল প্রক্রিয়া, মাতৃত্ব অর্থাৎ প্রজনন প্রক্রিয়া সামলানো সম্ভব হতো না। কখনই  আমরা পুরুষের ওপরে নয়, বরং সঙ্গে দাঁড়ানোর সুযোগ চাই। আমরা যদিও নিজের দক্ষতা দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়াতে পারব কিন্তু প্রথমেই আমাদের অবহেলিত করা হয় নারী হয়ে জন্ম নেওয়ার কারণে। ফলে আমরা সেই সুযোগটাই হারাচ্ছি যুগ যুগ ধরে। তাই সমতার লড়াইয়ে প্রথমে মানসিকতা পরির্বতন করে নারীকে মানুষ হিসেবে যে সুযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো দিতে হবে।

সিটিআলো ওমেন এন্টারপ্রেনিয়োর সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামে মডিউল ডিজাইনার ও ট্রেইনার হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহন

 

সমাজে টিকে থাকার জন্য নারীদের কোন বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার

ফারজানা নাহিদ : নারীদের সমাজে টিকে থাকতে হলে প্রথমেই স্বাবলম্বী হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অর্থনৈতিক মুক্তি নারীর জন্য অনেক দুয়ার খুলে দেয়। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াটাও জরুরি। কারণ, আত্মবিশ্বাস না থাকলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব হবে না। এই আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি নারীর নিজেরই তৈরি করতে হবে। কেউ এসে সে জায়গাটি তৈরি করে দেবে, সেটি প্রত্যাশা করাও ঠিক নয়। আর সেই জায়গাটি তৈরি হবে শিক্ষাগত যোগ্যতায়। কারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে জীবন ও জীবিকার পথ অনেক সুগম হয়ে ওঠে। তাই আত্মবিশ্বাস আর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব। আর অর্থনৈতিক মুক্তি নারীকে সমাজে ভালো অবস্থানে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালযের প্রাঙ্গনে ফারজানা নাহিদ

নারীর প্রতি কেমন দৃষ্টিভঙ্গি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন?

ফারজানা নাহিদ : নারীদের স্বাভাবিক মানুষের মতো চলা এবং বলার স্বাধীনতা দিলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। এর জন্য বিশেষ দিবস, বাসে নারী আসনসংখ্যা ইত্যাদি থাকা ঠিক নয়। এগুলো নারীর চলার পথকে আরও সংকুচিত করে ফেলে বলে আমার মনে হয়। নারীকে বাসে বসতে না দিয়ে বরং তাকে মানসিক বা যৌন নিপীড়ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অফিস বা বাসায় পুরুষের পাশাপাশি সব কাজে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। নারীদের মানুষ হিসেবে দেখার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। নারীদের মানুষ হিসেবে দেখার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। আর নারীর প্রতি প্রতিদিনের এ স্বাভাবিক আচরণই ধীরে ধীরে সমাজকে বদলে দেবে।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
ফারজানা নাহিদ : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনা

‘নিজের অধিকার নিজে বুঝে নাও’

করেছে Rubayea Binte Masud Bashory মার্চ ৩, ২০২২

 

নারী জাগরণ মানেই হলো নিজের অধিকার নিজেকে বুঝে নেওয়া। আগে বুঝতে হবে আমার অধিকারটা কী? তারপর আসবে মূল্যায়নের জায়গা। নিজের জায়গাটি শক্ত করতে না পারলে কেউ সেই মূল্যায়নটা দিতে আসবে না। তাই সেই জায়গাটিও নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে। সেটা ঘরে হোক আর বাইরে। বললেন আবুল খায়ের গ্রুপের ব্র্যান্ড অ্যান্ড রিসার্চের কনসালট্যান্ট তাসনিম করিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুরাইয়া নাজনীন

জীবনের শুরুটা কীভাবে?

তাসনিম করিম : আমার বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। তবে বাবা ব্যাংকার হওয়ায় পরিবারের সাথে বিভিন্ন জায়গাতেই থাকতে হয়েছে। ঢাকাতেই আমার পড়াশোনা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি এ থেকে এম বি এ শেষ করি। তখনকার সময়ে আই বি এ তে নারীর সংখ্যা তেমন চোখে পড়ার মতো ছিলো না। পড়াশোনার মাঝেই আমার বিয়ে হয়। এম বি এ শেষ করে আমি লন্ডনে যাই, আমার হাজবেন্ড তখন সেখানে এম আর সি পি করছেন। সেখানে গিয়ে আমি কো-অপারটিভ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর উপর পড়ালেখা করি। পড়ালেখা শেষে আমরা দুজনেই দেশে ফিরে আসি এবং চট্টগ্রাম স্যাটেল করি। আমি কিছুদিনের জন্য ইস্পাহানিতে জয়েন করি। এর পর তৎকালীন রেকিট এন্ড কোলম্যান এ ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করি। মার্কেটিং শেখার শুরুটা মূলত রেকিট থেকেই। এর পর লিভার ব্রাদার্স এ মার্কেট রিসার্চ ম্যানেজার এ জয়েন করি। লিভার ব্রাদার্স এ আমার প্রচুর শেখার সুযোগ ছিলো। এরই মধ্যে লিভার ব্রাদার্স ঢাকায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলো। যেহেতু আমার মেয়ে বেশ ছোট ছিলো, আমি তখন ঢাকায় আসিনি। কারণ, আমার কাছে আমার ফ্যামিলি প্রায়োরিটি ছিলো। এরপর কিছুদিনের জন্য কানাডায় ছিলাম, আমার ছোট মেয়ে সেখানেই হয়। এই সময় আমার ক্যারিয়ারের প্রায় এক বছর গ্যাপ ছিলো। তারপর আবার দেশে ফেরা, আমার হাজবেন্ড নিজেই একটি অলাভজনক হাসপাতালের সাথে জড়িত ছিলো। ইনফ্যাক্ট পরিবারের সবাই জড়িত। এই প্রজেক্টটি একটি ডাচ্ ফান্ডের তত্বাবধানে চলছিলো। ওই সময়ে আমি এই প্রজেক্টার সাথে জড়িত হয়ে পড়ি। এই সময়টা আমার গ্রামের নারীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। তখনই আমি লক্ষ্য করেছিলাম গ্রামের নারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও নারীর ক্ষমতায়ন জাগ্রত হচ্ছিলো।

আবুল খায়ের গ্রুপে জয়েন করার গল্পটি জানতে চাই

তাসনিম করিম : আমি হসপিটালে কাজ করতে করতে আবুল খায়ের গ্রুপে কাজ করার সুযোগ আসে। যেহেতু আমার পক্ষে ফুলটাইম সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না, তাই আমি কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করি। সেই শুরু তারপর আস্তে আস্তে দায়িত্ব বাড়তে থাকলো। পরে আমি ফুড ডিভিশনের ব্রান্ড এন্ড রিসার্চ (মার্কেটিং) এ দায়িত্ব পালন করেছি। সবকিছু মিলিয়ে আবুল খায়ের গ্রুপ নারীবান্ধব একটি প্রতিষ্ঠান বলা চলে। যেটা না বললেই নয়, যখন আমি এখানে জয়েন করি তখন এই কোম্পানিতে আমি একাই নারী। সবকিছু সামলিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিলো না, যদি এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট না করতো।

আপনি এই পর্যন্ত আসতে কতটা চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে?

তাসনিম করিম: চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই ছিলো। একে তো নারী তার উপর আমি কাজ করেছিলাম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। মাল্টিন্যাশনাল এবং দেশীয় কোম্পানির মধ্যে কাজের ধারা ভিন্ন। আমি বলবো দেশিয় কোম্পানিতে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি। কিন্তুু নিজেকে একবার প্রুফ করতে পারলে আস্থা অর্জন করাটা অনেক সহজ।

কাজের ক্ষেত্রে জেন্ডার কি প্রভাব ফেলে?

তাসনিম করিম: কাজের ক্ষেত্রে আমি নিজে যদি ক্যাপাবল হই তাহলে জেন্ডার কোনো ব্যাপার নয়। ক্যারিয়ার করতে চাইলে চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। এখানে জরুরী বিষয়টা হলো নিজেকে প্রস্তুত করা এবং কনফিডেন্ট থাকা।

নারী জাগরণের সংঞ্জা কি আপনার কাছে?

তাসনিম করিম: নারীর নিজেকে বুঝতে হবে তার অধিকার। তারপর আসবে তার মূল্যায়নের জায়গা। সেজন্য নারীর নিজের প্রস্তুতি নিজেকেই নিতে হবে। এখানে কেউ তাকে এটা করে দিবে না। সে ঘরে হোক আর বাহিরে হোক।

ব্যালেন্সটা কতটুকু জরুরী?

তাসনিম করিম: আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এখনো বলে, নারীদের জন্য ব্যালেন্স করাটা অত্যন্ত জরুরী। একটা পর্যায় সবার প্রধান প্রত্যাশার জায়গায় এটা হয়ে যায়, যে নারীকে কি কি দায়িত্ব নিতে হবে। বিয়ের আগে মেয়েদের দায়িত্ব তেমন কিছুই থাকে না। দায়িত্ব, ব্যালেন্স সবকিছু শুরু হয় বিয়ের পর থেকেই। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া। পুরো সংসারের দায়িত্ব একটু একটু করে বুঝে নেওয়া। তারপর আাসে সন্তান হওয়ার একটি চ্যাপ্টার। নারী জীবনের এই অধ্যায়গুলো একটি থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবকিছু ম্যানেজ করে চলতে পারাটাই একেক জনের গুণাবলী। প্রত্যেকটি সেক্টরেই প্রায়োরিটি সেট করে নিতে হবে। এখানে ব্যালেন্স করাটা খুবই জরুরী। আমি বার বার বলতে চাই আগে নিজেকে প্রস্তুত করো, ক্যাপাবল হও সবক্ষেত্রে।

নারীর জন্য সময়ের ফ্লেক্সিবিলিটি

তাসনিম করিম: মেয়েদের ক্ষেত্রে সময়ের ফ্লেক্সিবিলিটিটা বাড়লে তাদের কাজের প্রোডাক্টিভিটি ভালো হয়। এই ক্ষেত্রে আমি বলবো আমি যথেষ্ট ভাগ্যবান।

পারিবারিক সহযোগিতা

তাসনিম করিম: এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমি বলবো। পারিবারিক সহযোগিতা না থাকলে একজন নারী শত মেধাবী হলেও সে কাজের জায়গাটা ধরে রাখতে পারে না। তাই পরিবার যদি নারীকে নারী হিসেবে না ভেবে একজন মানুষ হিসেবে তার প্রতি আন্তরিক হয় তবে নারীর উঠে আসাটা খুব সহজ।

নারীর প্রতি গৎবাধা দৃষ্টিভঙ্গির কি পরিবর্তন হয়েছে?

তাসনিম করিম: শহরগুলোতে অনেকটাই পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে। নারী নিজের কাজ নিজে করা শিখেছে। বড় বড় সমস্যা মোকাবেলা করার সাহসও অর্জন করছে নারীরা। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনো পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তনের সামিল সবাইকেই হতে হবে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনা

জীবনে কখনো শো অফ করিনি

করেছে Rubayea Binte Masud Bashory মার্চ ৩, ২০২২

রাইসিন গাজী। পাকিস্তানের পেশোয়ারে তার জন্ম। তখন অবশ্য দেশভাগ হয়নি। জীবনের অনেক কিছু তিনি তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে বন্দী করেছেন। মানবিক মানুষ হিসেবে রাইসিন গাজী বিবেকের কাছে অনেক হিসাব-নিকাশ এখনো মেলাতে পারেননি। তিনি পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষক। তার গল্প উঠে এল রোদসীর নারী দিবস সংখ্যায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুরাইয়া নাজনীন

 

জীবন নিয়ে বলুন-

রাইসিন গাজী- তখন সময়টা ১৯৭৫ সাল। আমার পড়াশোনা ভারতেশ্বরী হোমস থেকে। আমি ওখান থেকেই এসএসসি পাস করি। তারপর কাজ আমাকে তাড়া করে ফেরে জীবনের প্রয়োজনে। আমি একটি এনজিওতে চাকরি নিই। তার দু-তিন বছরের মাথায় আমার সন্তান হলো। কিন্তু জীবনটা ঠিক থমকে গেল। শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে আমাকে কোনো সহযোগিতা করা হলো না। কিন্তু পড়াশোনাটা চালিয়ে গেলাম। আমার মেয়ের যখন ছয় বছর বয়স, তখন আমি আলাদা হয়ে গেলাম। ওই তখন থেকেই আমাদের একা পথচলা। আমি সে সময় নারায়ণগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিজের নাম লেখালাম। আমার বয়স তখন ২২ বছর। একা মেয়েকে নিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে আমাকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হলো। আমি হাঁপিয়ে উঠছিলাম। পরে ধানমন্ডিতে আমার বোনের বাসায় চলে গেলাম, আর ওখান থেকেই প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ গিয়ে শিক্ষকতা করতাম। তখন পরিবহন সুবিধা ততটা ভালো ছিল না। তাই আর ওটা নিয়মিত করতে পারিনি। কিন্তু ঘরে বসেই আমি শুরু করলাম স্টুডেন্ট পড়ানো। প্রচুর পরিমাণ স্টুডেন্ট হয়ে গেল কদিনেই। শুধু ইংলিশ পড়াতাম। যেহেতু আমার হাতেখড়ি পাকিস্তানের স্কুলে, তাই ইংরেজির উচ্চারণসহ সবকিছু খুব ভালো রপ্ত ছিল।

পাওয়া না পাওয়ার গল্পগুলো জানতে চাই

রাইসিন গাজী : আমি অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ। তবে কারও বিপদে আমি ঘুমিয়ে থেকেছি তেমন রেকর্ড নেই। এই যে যখন রোহিঙ্গা আসা শুরু হলো, তখন আমি একাই ছুটে গেছি দেখতে যে কী অবস্থা ওখানে। খুব সামান্য পরিমাণ সাহায্য নিয়ে গিয়েছিলাম। যেতেই তা নেই হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন হোটেলের লাউঞ্জে বসে ভাবছি কী করা যায়। ভাবতে ভাবতে একজন ফ্রেঞ্চ লেডি সেখানে এলেন। হাসি দিয়ে আমার সঙ্গে মতবিনিময় হলো। দু-একটা কথা বলতে বলতে তিনি বললেন আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন? আমি খুবই অবাক হই। বললাম কী করতে হবে? তিনি বললেন কিছুই না, আপনি দোভাষীর কাজ করবেন। আমি এদিক-ওদিক না ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। অনেকটা দিন তাদের সঙ্গে কাজ করা হয়েছিল। আমাকে অনেক ইউরো মুদ্রায় সম্মানী দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় প্রয়োজনটা আমার থেকে রোহিঙ্গাদের বেশি ছিল, তাই পুরোটাই আমি ওদের দিয়ে আসি। এর থেকে আমি যে আত্মতৃপ্তি পেয়েছি, কোটি টাকাতেও তার হিসাব করা যাবে না।

শুরুতে করোনার সময় নিয়ে কথা হচ্ছিল, সে সম্পর্কে জানতে চাই

রাইসিন গাজী : যখন করোনা বলে কোনো একটি মহামারি পুরো বিশ্বে ছেয়ে গেল, তখন সবাই আতঙ্কে। সুরক্ষাসামগ্রীগুলো গায়েব হতে থাকল বাজার থেকে। আমার চিন্তা সব সময়, মানুষের জন্য কিছু করব, আমার যা কিছু আছে তার থেকেই কিছু করতে হবে। আমি মাস্ক দেওয়া শুরু করলাম। প্রায় ৯০ হাজার পিস মাস্ক দিলাম, লেবার থেকে শুরু করে পুলিশ, পথচারী সবাইকে। তবে কয়েক দিন দেওয়ার পর লক্ষ্য করলাম ওদের খাবার দরকার। তখন চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, তেল দেওয়া শুরু করলাম। কয়েক দিন যাওয়ার পর আমিও কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। পরে শুধু চাল আর ডাল দিয়ে দীর্ঘদিন চালিয়েছি। আবার দেখলাম মানুষের বিপদের সীমা-পরিসীমা নেই। কারও কারও আর্থিক সহযোগিতা এত প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ালাম। দূরের নানা জেলা থেকে আমার কাছে এসেছে সাহায্যের জন্য। কয়েকটি পরিবারকে ভ্যান কিনে দিলাম। পরে দেখা গেল পুলিশে মেইন রাস্তায় ভ্যান চালাতে দিচ্ছে না। পরে আমি তাদের বললাম আপনারা আলু, পেঁয়াজের ব্যবসা করেন। তখন আবার টাকা দিলাম ব্যবসার জন্য, তারা একপর্যায়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো। একটা সময় বলল আমাদের আর সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আমরা এখন চলতে পারি। এ কথা শুনে আমার মনটা প্রাপ্তিতে ভরে গেল।

ব্যক্তিগতভাবে আপনি অনেক সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন, করছেন কিন্তু কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হননি কেন?

রাইসিন গাজী : আমি যতটুকু করেছি, নিজের বিবেক থেকে করেছি। একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু আমার দায়িত্ব বলে মনে হয়েছে এবং হয় সেই জায়গা থেকেই আমি কাজ করি। জীবনে যত কাজ করেছি তার প্রমাণ কিংবা ছবি রাখা হলে তা আজ একটা ঘরে জায়গা ধরত না, কিন্তু আমি কোনো দিন কোনো ছবি তুলে রাখিনি। মানুষের পাশে দাঁড়ালে মনের যে আত্মতৃপ্তি, ওটাই আমি অনুভব করি আর ওটাই আমার সব থেকে পড় পাওয়া। সংগঠনের ব্যানারে কাজ করলে তখন আলাদা হিসাব-নিকাশ চলে আসে। কিন্তু ওসবে আমি কখনো যেতে চাইনি। আমার স্বল্প আয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি যতটুকু পারি, ততটুকুই আমার প্রাপ্তি। এখনো রাত-বিরাতে কারও কোনো প্রয়োজন হলে ঠিক আমার বাসাটাতেই সবাই নক করে। এটা আমার অর্জন বলে আমি মনে করি।

আপনার সন্তানকে নিয়ে অনেক যুদ্ধজীবন পার করতে হয়েছে, বলবেন কি কিছু তা নিয়ে?

রাইসিন গাজী : আমি মনে করি, আমার মেয়ে পৃথিবীর সেরা সন্তান। ও ঠিক আমার মতো করেই ভাবে। আমি ওকে নারী হিসেবে মানুষ করিনি, ওকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছি। ওর যতখানি ইচ্ছা ঠিক ততখানি আমি পূরণ করেছি। তবে ও আমাকে খুব বোঝে। আমার মেয়ের নাম মিনান। ওর গল্প বলতে গেলে হয়তো সময় ফুরাবে না। মিনান এখন একজন নারী স্কেটার। সে স্কেটিংয়ের ক্লাব পরিচালনা করে। অনেক ছোট ছোট শিশুকে স্কেটিং করা শেখায়। ছোট্ট একটি জুতা দিয়ে যে আকাশ ছোঁয়া যায়, মিনান তা প্রমাণ করেছে। আমাদের পরিবারে তিনজন সদস্য মিনান, আমি ও তার স্বামী। অনেক সহযোগী মানসিকতার মানুষ মিনানের স্বামী। আমরা যেকোনো কাজ করার আগে তিনজন মিলে মিটিং করি। তারপর সেটা খুব সুন্দর ও সহজভাবে তা পরিচালনা করি। এভাবেই জীবন চলছে তো বেশ।

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনা

অনলাইন ব্যবসায় ভিন্নতা জরুরী

করেছে Tania Akter মার্চ ৩, ২০২২

অনলাইনে আধুনিক ধাঁচের জুয়েলারি নিয়ে কাজ করছেন তরুণ উদ্যোক্তা মুমু তাবাচ্ছুম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান নিয়ে বাস্তবে কাজ করছেন।  ভার্চুয়াল জগতেও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে মন জয় করেছেন অসংখ্য গ্রাহকের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তানিয়া আক্তার

 

উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছের শুরুটা বলুন

মুমু তাবাচ্ছুম: শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহে। কৈশোরে পা দিয়েই পরিবারসহ থাকছি নগরীর উত্তরাতে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিউপি) থেকে বিবিএ (সাধারণ) নিয়ে স্নাতক শেষ করেছি মাসখানেক হলো। উদোক্তা হওয়ার ইচ্ছেটা স্নাতকে পড়ার সময়ই তৈরি হয়। এর পেছনে বিবিএ নিয়ে পড়ার ভূমিকাটাই বেশি ছিলো। কারণ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছি বিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু স্নাতকে ব্যবসায় শিক্ষার প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়। আগ্রহ আর পরিবেশ যখন অনুকূলে থাকায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা তৈরি হয়।

 

 

 

শাড়িতে ঝলমলে মুমু তাবাচ্ছুম

 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান কী উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য জরুরী?

মুমু তাবাচ্ছুম: উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান জরুরী না। তবে শুধু প্র্যাকটিক্যাল নলেজ নিয়ে ব্যবসা করার চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা সাথে থাকলে কাজের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। এখন তো ইউটিউবেও অনেক কনন্টেন্ট রয়েছে। এছাড়াও অনেক আর্টিকেল থেকেও অনেক শেখা যায়।

উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান কিভাবে কাজে লাগতে পারে?

মুমু তাবাচ্ছুম: বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিখানো হতো যে একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে হলে প্রথমে একটা কমপেটেটিভ অ্যাডভান্টেজ দরকার হয়। শুধু ব্যবসার জন্যই না দক্ষতা ও অর্জনের ভিত্তিতে ব্যক্তিকেও এটা দিয়ে বিচার করা যায়। এই বিষয়টি ভালোভাবে জানার কারণে নিজেকে এই পেশায় কিভাবে উপস্থাপন করবো সে বিষয়ে একটা ধারণা পেয়েছি। তখন ভাবলাম যে আমাকে যদি কোন করপোরেশন নেয় তাহলে অন্যদের থেকে আমার ভিন্নতাটা কোথায়? তখন অনলাইন ব্লুমিং চলছে। সময় নষ্ট না করে স্নাতক প্রথম বর্ষের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু করে দিয়ে।

’রে বাই লাইজু’ এর গয়না

 

তারপর নিজের কাজকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে স্নাতক শেষ হতে না হতেই ৩০ হাজারের মতো সদস্যের দীর্ঘ পরিবারের সাথে যুক্ত থাকতে পারেছি। আমার কাজের ভিন্নতাই আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই গুণগুলো আমি পেয়েছি আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর এর অনবদ্য পরিবেশ থেকে।

 

এই পথচলার শুরু কোন কাজটি দিয়ে?

মুমু তাবাচ্ছুম: আমার প্রথম অনলাইন কাজ শুরু হয় ‘ইন  মাই রুম’ দিয়ে। তবে একা নয় সাথে আরও দুই থেকে তিনজন মিলে এই পেইজ শুরু করি। সেটা একবছরের মতো ছিলো। এছাড়া মার্চেন্ডাইজারের ব্যবসাও ছিলো। স্নাতক প্রথম বর্ষের মাঝামাঝি সময় থেকেই যেহেতু এই উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু করেছি তাই দ্বিতীয় বর্ষের মাঝামাঝিতে একা কিছু করার ইচ্ছে জাগে। ‘রে বাই লাইজু’ দিয়ে আমার একার কাজ শুরু। আধুনিক ধাঁচের জুয়েলারির পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে বিশ্বস্ততা অর্জন করার পর মানুষের মুখে মুখে আমার পেইজের সুনাম বয়ে বেড়ায়। কারণ মানুষ যখন বুঝতে পারে এই পেইজের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ভালো তখন অন্যদের কাছে এর প্রশংসা করে। এভাবেই  গ্রাহকের একটি বিশাল পরিবার তৈরি হয়েছে।

স্নিগ্ধ সাজে মুমু তাবাচ্ছুম

 

 

‘রে বাই লাইজু’ নামকরনের বিষয়ে বলুন?

মুমু তাবাচ্ছুম: এই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন আমার মা। আমার মায়ের নাম উম্মে লাইজু। তিনিও একজন উদ্যোক্তা। তার নামেই আমার এই উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু। আমার বাবা সরকারি চাকুরীজীবি। তাই তিনি প্রথমে না বুঝতে পারলেও পরে ভালো লাগতে শুরু করেছে। এখন আমার কাজের অবস্থান দেখে তারা বেশ আনন্দিত।

কাজ করতে গিয়ে কোন ধরণের বাধার সমুক্ষিন হতে হচ্ছে?

মুমু তাবাচ্ছুম:  রে বাই লাইজু’ দিয়ে কাজ শুরুর প্রথম দিকে কঠিন ছিল। কারণ অনেক অর্থের বিনিয়োগের দরকার ছিলো। আর পুরো বিনিয়োগ একা করতে হয়েছে। এটা আসলেই বেশ কঠিন। দায়িত্বের জায়গাটাতেও একা সামলাতে হয়েছে। প্রথম আমি নিজেই সব কাজ করতাম। এখন কর্মী নিয়োগ করেছি। বিশেষ করে নারীদের সুযোগ দিয়েছি। অর্থ বিনিয়োগের বাইরেও এই অনলাইন ব্যবসায় আরেকটা বাধা হলো গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করা। শুরুতে কেউ বিশ্বাস করতে চাইতো না।

’রে বাই লাইজু’ এর গয়না

 

তাই পুরোপুরি ক্যাশ অন ডেলিভারি দিতে হতো। অনেক সময়   গ্রাহকদের কাছ থেকে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ আমার পণ্যগুলো চায়না বেজড। আর এমন অনেকেই একই ধরণের ব্যবসা করছে।  তাই এই ভীড়ের মধ্যে নিজেকে আলাদা করতে পারা একটা বড় বাধা ছিলো। যেহেতু বিজনেস নিয়ে পড়েছি তাই অনেক থিওরি জানা ছিলো। সেগুলো মেনে বাস্তবজীবনে কাজ করেছি। তাই এই বাধা কাবু করতে পারে। আর গ্রাহকের রুচি অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করতে পারা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং অন্যদিকে আনন্দ পাওয়া যায়। আর এই কাজে আনন্দ পেয়েছি বলেই সমস্যা এলেও সমাধান করে এগিয়ে যাচিছ।

 

’রে বাই লাইজু’ এর গয়না

 

রে বাই লাইজু’ এর অবস্থান ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?

মুমু তাবাচ্ছুম: আমার টার্গেট ছিলো যে রে বাই লাইজু ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি হবে। কারণ চায়না বেডজ জুয়েলারির অনলাইন ব্যবসা অনেকেই করছে। সেখানে আমার ভিন্নতাটা যেন থাকে সেভাবেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে প্রথম দিকে ইমর্পোট করতাম। যেহেতু আধুনিক ধাঁচের জুয়েলারি নিয়ে ব্যবসাটি করছি আর এর ট্রেন্ড সারা বিশ্বেই খুব দ্রুত পরিবতন হয়। সেই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলছি। অনেক বছরের ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকায়  কিছু জুয়েলারি নিজের পছন্দমতো ডিজাইনও করিয়ে আনতে পারছি। যা অন্য অনেকেই তা পারছে না।

’রে বাই লাইজু’ এর গয়না

 

 

ফলে আমার পেইজের পণ্যগুলো অন্যদের থেকে বেশ ভিন্ন। এই ভিন্নতা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। এছাড়াও অফলাইনেও নিয়ে আসতে চাই। তবে খুব বেশি ইচ্ছে নেই । কারণ ভবিষ্যতের পৃথিবীতে অফলাইন বিজনেস আরো কমে আসবে। তাই অনলাইনে থাকার ইচ্ছেটাই বেশি। আগামী পাঁচ বছরে এই উদ্যোক্তার জায়গাটিতে নেত্রীস্থানীয় অবস্থানে নিজেকে দেখতে চাই।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ

মুমু তাবাচ্ছুম: রোদসীকেও অনেক ধন্যবাদ

গয়নার ফটোগ্রাফার: মাশিয়াত বিনতে রহমান

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনাসচেতনতা

‘নারীকে দায়িত্ব দিতে এখনো সংকোচ দেখা যায়’

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ৩, ২০২২

নারীদের ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা আছে। কারণ, কেউ নারী বললেই আগে চুপসে যান। আমার জন্যও এ চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আমাকে পছন্দ করে নিয়েছে। তারপরও আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। নারীকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংকোচ দেখা যায়। বলছিলেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম। গ্রন্থনা করেছেন- সুরাইয়া নাজনীন

 

জীবনের শুরুর গল্পটি জানতে চাই

হুমায়রা আজম : পুরান ঢাকায় জন্ম হলেও একদম ছোটবেলাটা আমার কাটে পশ্চিম পাকিস্তানের ইসলামাবাদে। বাবা সেখানে শিক্ষকতা করতেন। সেখান থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন বাবা সৈয়দ আলী আজম। আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরপরই বাবা মারা যান। জীবনের কঠিন সময়টা শুরু হয় তখন থেকেই। মা আমাদের পাঁচ ভাইবোনকে কঠোর নিয়মে মানুষ করেন। আমাদের ছোট থেকে টিউশনি করতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল শেষে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে পড়াশোনা করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হই ১৯৮২ সালে।

আন্দোলনের কারণে ১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হই। ১৯৯০ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করি। এএনজেড ব্যাংকে সাড়ে ছয় বছর ছিলাম। আমরা পাঁচজন একসঙ্গে যোগদান করেছিলাম। শাখা ব্যাংকিং দিয়ে শুরু করি। কয়েক মাসের মধ্যে চলে যায় করপোরেট ব্যাংকিংয়ে। ১৯৯৬-এ এইচএসবিসি বাংলাদেশে করপোরেট ব্যাংকিং দিয়ে কাজ শুরু করি। বাংলাদেশে এইচএসবিসি ব্যাংকের অফশোর লাইসেন্স, এডি লাইসেন্স, ওদের সফট লঞ্চিং সবকিছু প্রতিষ্ঠা হয়েছে আমার হাত দিয়ে। এইচএসবিসি থেকে ২০০২ সালে গেলাম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। সেখানে গ্রুপ স্পেশালিস্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের হেড ছিলাম। সাত বছর এই বিদেশি ব্যাংকে কাজ করেছি।

আমি ছিলাম এখানকার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম নারী সদস্য। পরে ওখানে ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের প্রধান হই। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসিতে গেলাম ২০০৯-এর এপ্রিলে। সেখানকার প্রথম নারী এমডি ছিলাম। সে সময়ে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে নারী এমডি ছিলেন না। আসলে নিজেকে কখনো পুরুষ বা নারী হিসেবে ভাবিনি। নিজের সক্ষমতার ওপরই বেশি জোর দিয়েছি।

যখন আইপিডিসিতে যাই, ওদের আর্থিক অবস্থা ভয়াবহ অবস্থায় ছিল। আমি পুরো ১০০ শতাংশ মূলধন পুনরুদ্ধার করেছি। প্রতিষ্ঠানটি ভালো জায়গায় রেখে এসেছি। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়ায় গেলাম প্রধান ঝুঁকি পরিপালন কর্মকর্তা হয়ে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে কাজ করেছি। জীবনে সব জায়গাতেই আমি সফলভাবেই কাজ করেছি। অনেক কোম্পানিকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছি। ২০১৮ সালের মার্চে ট্রাস্ট ব্যাংকে প্রধান ঝুঁকি পরিপালন কর্মকর্তা হিসেবে এসেছি। এখন এমডি হিসেবে ট্রাস্ট ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করছি।

 

 

হুমায়রা আজম

সংগ্রামের জোয়ারে নারীর উঠে আসাটা কতটুকু চ্যালেঞ্জের?

হুমায়রা আজম : নারীদের ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা আছে। কারণ, কেউ নারী বললেই আগেই চুপসে যান। আমার জন্যও এ চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আমাকে পছন্দ করে নিয়েছে। তারপরও আমাকেও সংগ্রাম করতে হয়েছে। নারীকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংকোচ দেখা যায়। পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। নারীদেরও নিজেদের উদ্যোগ থাকতে হবে, আন্তরিকতা থাকতে হবে। তাহলেই সফল হওয়া যাবে। নারী পারবে, এটা মেনে নেওয়ার মানসিক প্রতিবন্ধকতা আছে সমাজে। তবে এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারীরা ফাঁকি দেন কম। যারা দায়িত্বশীল, তারা দায়িত্ব নিয়েই কাজ করেন।

 

উন্নত দেশ গড়তে নারী জাগরণ কতটুকু দরকার

হুমায়রা আজম : নারী শক্তির প্রতীক-নারী উন্নয়নের প্রতীক। কিš‘ বাস্তব সত্য হচ্ছে এখনো পৃথিবীর পিছিয়ে থাকা এবং পিছিয়ে রাখা মানুষের মূল অংশটি হচ্ছে নারী। কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর জাগরণ ও ক্ষমতায়ন একটি চাবিকাঠি। সে জন্য সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালেই শুধু চলবে না, নেতৃত্বের পর্যায়ে নারীকে আসতে হবে। পরিমাণগত ও গুণগত উভয় দিক থেকেই নারীর জাগরণ প্রয়োজন। নারীর উন্নয়নের পথে একটি বাধা তাদের দুর্বল মানসিকতা। তাই নারীর জাগরণের জন্য তাদের নিজেদের আগে এগিয়ে আসতে হবে। নারী জাগরণ শুধু নারীর জন্য দরকার নয়, একটা সমৃদ্ধ সুখী সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য দরকার। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে কখনোই সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনায় নারীর যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

 

এবার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিলিভ ইকুয়াল। আপনার কি মনে হয় আমাদের দেশে এটা হয়?
হুমায়রা আজম : গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটলেও এ কথা বললে ভুল হবে না যে বিদ্যমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এবং অগণতান্ত্রিক আচার-আচরণের কারণে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য চলে গেছে। সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে মেধার ওপর জোর দিতে হবে। কারণ, এটা ম্যারিটোক্রেসি বা গুণতন্ত্র হওয়া উচিত। সোজাভাবে বললে, যোগ্যতার পরিচয় যেমন দেওয়া লাগবে, তেমনি কাজে পরিশ্রমী হতে হবে। মেধা, পরিশ্রম সবকিছুর সমন্বয় এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ, জায়গায় বসে নিজের কাজ ঠিকমতো করা, যারা এগুলো করতে রাজি আছে তারাই ভালো করবে ও স্বাভাবিকভাবে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হবে আর নইলে হবে না।

 

জীবনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে শিক্ষাগুলো কেমন ছিল, যা এখনো কাজে লাগে?
হুমায়রা আজম : সব মানুষকে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়। সেটা সব জায়গাতেই। করপোরেট রাজনীতি নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কিছু নয়, সেটা সবার জন্যই সমান। আপনি সহজ-সরল হলে, অনেক কাজ করলে তাদের জন্য মাঝেমাঝে কাজে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এ ছাড়া যারা কাজে ফাঁকি দেয়, তারা আপনার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে থাকে সচরাচর। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা কমবেশি সবারই হয় বা হয়েছে। আমি নিজের দায়িত্বকে প্রাধান্য দিয়েছি, তাই জীবনে সব জায়গাতেই আমি সফলভাবে কাজ করেছি। কখনো কোনো কাজে পিছপা হইনি, নিজেকে কখনো নারী বা পুরুষ ভাবিনি, নিজের সক্ষমতাকে জোর দিয়েছি। আজকের প্রাপ্তিটা আসলে সেই কাজেরই ধারাবাহিক সফলতা।

 

একজন নারীর টিকে থাকতে কী থাকা জরুরি
হুমায়রা আজম : নারীদের নিজেদের উন্নতি নিজেদেরই করতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের কাজ ও জীবনের ভারসাম্য নিজেদের ঠিক করতে হবে। বাড়ি থেকে তাদের সাপোর্টটা পেতে হবে। মূলত সবকিছু তাদের নিজেদেরই ঠিক করে নিতে হবে। যদি তারা নিজেরা ঠিক করে নিতে পারেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তারা স্ব স্ব উন্নয়নে এগিয়ে যেতে পারবেন। অবশ্য একটা ব্যাপার আছে, প্রতিষ্ঠানকেও আরও নমনীয় হতে হবে, অনেক সময় দেখা যায় তারা নারী হলেই তারা পিছপা হয়। তা, সবকিছুই ভারসাম্য করে কাজ করতে হবে। পরিবার থেকে যেমন সাপোর্ট পেতে হবে, তেমনি চ্যালেঞ্জ নিতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

যারা সামনে আসতে চায়, তাদের অনুপ্রেরণার জন্য কী বলতে চান?
হুমায়রা আজম : পরামর্শ তো আসলে কিছু না, সবাইকে কাজটা শিখতে হবে আর জানার আগ্রহ থাকতে হবে। যেটা আমি দেখি বাস্তবে, কারও যেমন শেখার আগ্রহ নেই, তেমনি কাজেরও আগ্রহও নেই। ক্যারিয়ার গড়তে হলে যেমন পরিশ্রম করতে হবে, তেমনি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সফলতার পথে এগিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। কাজে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। এ প্রতিযোগিতাপূর্ণ সময়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করাটা জরুরি। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে অবিরাম যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সুযোগ কাজে লাগানোর মানসিকতা থাকতে হবে। আসলে যত কথাই বলি, পরিবার থেকে যদি অনুপ্রেরণা ও সমর্থন না দেওয়া হয়, তাহলে ব্যাপারটা অসম্ভব।

 

ঘরে-বাইরে কীভাবে ম্যানেজ করেন?
হুমায়রা আজম : কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। আমি অবশ্যই বলব এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ও ইতিবাচক মানসিকতা প্রয়োজন। আমার ক্ষেত্রে আমার পরিবার আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। বিশেষ করে আমার জীবনসঙ্গী ও প্রিয় বন্ধু আমার স্বামী এরশাদুল হক খন্দকার আমাকে সাপোর্ট না দিলে আমার ক্যারিয়ার অসম্ভব ছিল। আমার ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে আসাই হচ্ছে আমার স্বামীর জন্য।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনা

জীবনের বাঁকবদলে

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ৩, ২০২২

মারিয়াম জাভেদ জুহি। তিনি বাংলাদেশে বসবাস করলেও নন বেঙ্গলি পরিবারের সন্তান। মা পাকিস্তানের, বাবা ইন্ডিয়ান। এক ভাই, এক বোন। খুব সংরক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা জুহির। ছোটবেলা থেকেই মেয়ে হিসেবে নানা বাধার বেড়াজালে আবদ্ধ ছিলেন। জীবনের নানা বাঁকবদলে  আজ তিনি সিটি ব্যাংকের-সিটি আলোর হেড হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর জীবনের গল্পগুলো উঠে এল রোদসীর নারী দিবস সংখ্যায় কথা বলেছেন – সুরাইয়া নাজনীন

 


পথচলাটা যেভাবে

মারিয়াম জাভেদ জুহি : আমাদের পরিবারের মেয়েরা কখনো চাকরি বা ব্যবসা করেনি। অনুমতিও ছিল না। বাবা, ভাই ভীষণ রাগী ছিলেন। অনেক ভয় পেতাম। কোনো দিন কোনো বন্ধুর বাসায়ও যেতে পারিনি। আমি ম্যাপললিফের স্টুডেন্ট ছিলাম। এত কড়া শাসনে চলছিল আমার জীবন। অতিরিক্ত শাসনে থাকতে থাকতে মানুষ কোথাও ভালোবাসা পেলে ভুলটা করে ফেলে, যাচাই করে না একেবারেই, ওটা আমার জন্য ভালো না খারাপ। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো।

আমি জীবনে ভুল সিদ্ধান্তটি নিয়ে নিলাম। তখন আমার বয়স ১৮। যাকে বিয়ে করলাম, তিনিও সে সময় কেবল পড়াশোনা শেষ করেছেন। তেমন কিছুই করতেন না। তবে এক মাস পর যেটা দেখলাম, তিনি খুবই অ্যাবিউজিং ক্যারেক্টর। চড়-থাপ্পড়, গায়ে হাত তোলা কোনো বিষয়ই না তার কাছে। কিন্তু আমার যাওয়ার কিংবা কারও কাছে কিছু বলার সব দরজাই বন্ধ। এ রকম করতে করতে কয়েক বছর পার হলো। এর মধ্যে আমি কোনোভাবে গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ করি তেজগাঁও কলেজ থেকে।

যদি বলি ক্যারিয়ার কবে থেকে?

মারিয়াম জাভেদ জুহি : আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ভাবলাম আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। কারণ, আমার স্বামী তখনো ভালো কিছুই করতেন না। তারপর আমি কোনোভাবে একটি চাকরি ম্যানেজ করে নিলাম। বেতন ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। ওই টাকাটা আমার কাছে যে কী মূল্যবান ছিল, তা বলার বাইরে। যাহোক তারপর আমার প্রথম সন্তান হলো। ছেলে হওয়ার পর আমাকে ব্রেক নিতে হলো। তারপর আবার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আবার আরেকটি সন্তান হলো। দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে। মেয়ে হওয়ার পর জীবনের গতি কিছুটা বদলে গেল।

টার্নিং পয়েন্ট কোনটি

মারিয়াম জাভেদ জুহি : আমার সন্তান হওয়ার পর ক্যারিয়ারে বিশাল গ্যাপ পড়ে। কিন্তু টার্নিং পয়েন্ট যদি বলতে হয়, মেয়ে হওয়ার পর আমি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে একটি অফার পেলাম। আমার আগের অফিসের কলিগের মাধ্যমে। অফারটি আমি নিয়ে নিলাম। তিন বছর আমি ব্র্যাক ব্যাংকে কাজ করেছি।

 

বলছিলেন সন্তানদের ডিপ্রেশনের কথা

মারিয়াম জাভেদ জুহি : হ্যাঁ, সে গল্পটি আসলে খুব ব্যথিত করে আমাকে। আমার সন্তানদের আমি টপ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। খরচ আমিই চালাতাম। কিন্তু প্রতিদিন ওরা স্কুলে গিয়ে কান্নাকাটি করত। পড়ালেখায় কোনোভাবেই মনোযোগ দিতে পারত না। রাতে বাড়ি ফেরার পর ওরা ঘুমানোর অভিনয় করত। কারণ ওরা দেখত মায়ের ওপর বাবার নির্যাতন শুরু হবে এখন। এসব পারিবারিক কলহ দেখতে দেখতে ওরা অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন আমার মনে হলো এবার আমার স্টেপ নেওয়ার সময় এসেছে। এভাবে সহ্য আর না। এখন আমার বাবা-মাকে সবকিছু জানাতে হবে। আমি আমার ভাইকে জানালাম, বাবা-মাকেও জানালাম। তবে খুব ভয়ে ছিলাম ওরা কীভাবে নেবে বিষয়টি। আমাকে পরিবার থেকে খুব সাপোর্ট করল।

কিন্তু মা বললেন, না, ঘর ছেড়ে আসা যাবে না। যা-ই হোক মানিয়ে নাও। আমি বারবার কান্নাকাটি করে মায়ের বাড়ি চলে আসতাম। মা আমাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আবার পাঠিয়ে দিতেন। বারবার এগুলো দেখতে দেখতে বাবা শেষবার বললেন, ও আর যাবে না। ডিভোর্স লেটারটা আমিই পাঠালাম পরিবারের সহযোগিতায়। কিন্তু আমার সন্তানের বাবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল, ভদ্রলোক কখনো ভাবেননি আমি এটা করব। আমাকে নিরুপায় হয়ে জলে ভাসা পদ্মের মতো সংসার করতে হয়েছিল। তারপর ছয় বছর সিঙ্গেল মাদার হিসেবে ছিলাম। সন্তানদের বাবা কোনো তখনো কোন খরচপাতি দিতেন না।

নতুন করে আবার যেভাবে

মারিয়াম জাভেদ জুহি : আমি কাজের ক্ষেত্রে খুবই অনুগত ছিলাম। আমার কাজটা আমি সব সময় দায়িত্বের সঙ্গে করেছি। ব্র্যাক ব্যাংকে আমার প্রমোশন হলো। খুব ভালো যাচ্ছিল চাকরিটা। তারপর আমার সিটি ব্যাংক থেকে একটি অফার এল। ২০০৯ সালে আমি সিটি ব্যাংকে সার্ভিস কোয়ালিটি ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করলাম। সবার কাছ থেকে খুবই সাপোর্ট পেয়েছি, বিশেষ করে সময়ের ফ্লেক্সিবিলিটির জন্য। আমার কাজটি করে আমি বের হয়েছি কখনো কেউ আমাকে বদার করেননি। সহকর্মীরা ভালো ছিলেন বলেই আমার টিকে থাকাটা সম্ভব হয়েছে। তারপর সিটি ব্যাংকে আমেরিকান এক্সপ্রেস লঞ্চ হয়েছিল।

আমি সেখানকার লাউঞ্জ ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি দেড় বছর। তারপর প্রায়োরিটি ব্যাংক সিটিজেন লঞ্চ হলো। এটা খুব বড় একটি প্রজেক্ট ছিল। আমি সেখানকার প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করলাম। তারপর সিটি ব্যাংক নতুনভাবে একটি প্রজেক্ট চালু করল ওমেন ব্যাংকিং-সিটি আলো। তখন আমাকে বলা হলো এই প্রজেক্টটি আমাকে দেখতে হবে। আমি এই প্রজেক্টটি নিয়ে খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। যেহেতু নারীদের নিয়ে কাজ হবে। তবে আমার কাছে মনে হয় সিটি আলো ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। তা ছাড়া সিটি ব্যাংকের বড় তিনটি প্রজেক্টের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। যেগুলো সফলতার সঙ্গে আমি করতে পেরেছিলাম।

সিটি আলো নিয়ে জানতে চাই

মারিয়াম জাভেদ জুহি : এই প্রজেক্ট আমার জন্য খুব অনুপ্রেরণার এবং অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের ছিল। ২০১৮ সালে আমরা সিটি আলোর প্রজেক্টটি লঞ্চ করেছি। তারপর তো করোনা চলে এল। তবু অনেক নারী সিটি আলো থেকে অনেক বেশি সহযোগিতা পেয়েছে। কারণ, সে সময় ঘরে বসে ব্যবসা করার একটি বিপ্লব হয়। মহামারির সময় সিটি আলো অসংখ্য নারীকে নিয়ে কাজ করেছে। অনেক নারী আছে খুব ভালো কাজ করেন, কিন্তু ব্যাংকিং বোঝেন না। তাদের প্রয়োজনীয়তার জায়গাটি বুঝিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সুগম করেছে সিটি আলো।

 

 

যেমন ছিল পরিবারের সহযোগিতা

মারিয়াম জাভেদ জুহি : পরিবারের কথা অনেক বলে ফেলেছি। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এ পর্যন্ত আসা। জীবন শুরুর প্রথম দিকে কোনো সহযোগিতাই পাইনি। জীবনযুদ্ধ প্রতিটি পর্যায়েই ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যদি বলতে হয়, তাহলে আবার একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। আমি ছয় বছর যখন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে ছিলাম। তখন বাবা-মা, ভাই-ভাবির কাছ থেকে অনেক বেশি সহযোগিতা পেয়েছি, যা বলার বাইরে। আমাকে আমার পরিবার থেকে কোনো টেনশন দেওয়া হতো না।

সব সময় আমাকে তারা চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করে। দিন কাটছিল ভালোই, একটা সময় মনে হলো এখন একজনকে দরকার, যাকে দিন শেষে কিছু বলা যায়। তারপর পারিবারিক আয়োজনে একজন জীবনসঙ্গীর দেখা পাওয়া হলো। অবশ্য সেই সিদ্ধান্তটাও ছিল খুবই সেনসিটিভ। কারণ, আমার সন্তানেরা আছে তারা এটা মেনে নেবে কি না। কিন্তু যিনি আমার জীবনসঙ্গী হয়েছেন, ওনারও আগের জীবন ছিল, সন্তান আছে। তাদের নিয়ে বেশ ভালো আছি এখন। আমার হাজব্যান্ড আমাকে বলেছেন কষ্ট হলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারো। কিন্তু আমি তা কখনো ভাবতে পারি না। কারণ, আমার জীবনটাকে বারবার বাঁচিয়ে দিয়েছে আমার চাকরি। তাই প্রত্যেক নারীর উচিত ক্যারিয়ারটা ধরে রাখা।

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনা

ব্যাংকিং পেশায় নারীদের বিচরণ বাড়ছে

করেছে Tania Akter মার্চ ৩, ২০২২

পেশা হিসেবে ব্যাংকিংয়ে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত থাকার সময়েই নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। কাজ করে যাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। স্বপ্ন দেখেন ব্যাংকিং পেশায় নারীদের পথ আরও সুগম করার। তিনি মধুমতি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশনের ফাহমিদা সাকি। বিশ্ব দিবসে রোদসীর আয়োজনে তার মুখোমুখি হয়েছেন তানিয়া আক্তার

ছবি: শাড়ির সাজে ফাহমিদা সাকি

পেশাগত জীবন নিয়ে ইচ্ছার শুরুটা জানতে চাই

ফাহমিদা সাকি : কর্মজীবী দম্পতির সন্তান আমি। মা অবসর নিয়েছেন কাস্টমসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে। ছোটবেলায় মাকে দেখতাম সুন্দর করে সেজে অফিসে যাচ্ছে। খুব স্মার্ট দেখাত। সেই দৃশ্যটাই আমার পেশাগত জীবনের অনুপ্রেরণা। পারিবারিক আবহ এমন হওয়ায় আমারও স্বপ্ন ছিল পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেকে উপযোগী করে গড়ে তোলা।

পেশা হিসেবে ব্যাংকিংকেই কেন বেছে নেওয়া?

ফাহমিদা সাকি : ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষের দিকে একটি ব্যাংক থেকে অফার আসে। তখন প্রতিটি ব্যাংকেই কমপক্ষে ৩০ ভাগ নারী থাকতে হবে, এমন পদ্ধতি ছিল। পাকিস্তানের একটি জাতীয় ব্যাংকে যোগদান করি। সেই ব্যাংকে যোগদানকারী প্রথম নারীটিই ছিলাম আমি। ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করা এমন একজন নারীকেই খুঁজছিল সেই ব্যাংকটি। কাজের ধরনও এমন ছিল যে দেশের বাইরের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা। যেহেতু আমার তখনো স্নাতকোত্তরের ফলাফল আসেনি। সেই সময়টায় খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করতাম। তখন এমন একটি অফার পেয়ে চেষ্টা করতে বলেছে অনেকেই। কারণ, শিক্ষকতা পেশা আমাকে এতটা আকর্ষণ করত না। তাই সিভি নিয়ে গেলাম ব্যাংকে। যেহেতু ব্যাংকিং পেশায় কোনো অভিজ্ঞতাই আমার ছিল না, তাই গল্পের ছলে অনেকক্ষণ কথা হলো। সপ্তাহখানেক কাজ করতে বলল। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবে এমনটাই জানাল। তিন দিনের শেষে সিইও এসে আমায় দেখতে চাইলেন। কাজ দেখে তার এতটাই ভালো লেগেছে যে সেদিনই নিয়োগপত্র দিয়ে দিলেন। সেই থেকেই শুরু কর্মজীবনের পথচলা।

ছবি: সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময়

নারী হওয়ায় পেশাগত কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন?

ফাহমিদা সাকি : অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পেশাগত জীবনে প্রবেশের আগেই একজন সন্তান ছিল আমার। সেই সময়টায় ধরে নেওয়া হতো বিবাহিত বা সন্তান থাকার পর কর্মজীবন সামলাতে পারবে না নারীরা। যদিও এখনো আছে এ ধারণা। তারপরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অথচ নারীরা সব সামলে নিয়ে সব পারে। আর সন্তানধারণ করা তো প্রাকৃতিক বিষয়। সেটাকে অসুস্থতা ভাবা ঠিক নয়। নারীদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তখনো ছিল, এখনো আছে। ‘মেয়েমানুষ’ এমন একগুচ্ছ শব্দ সমাজের এমন নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আগে বেশি ছিল, তারপর দীর্ঘদিনের চর্চায় নারীরা সব সামলে নিতে অভ্যস্ত হওয়ায় এখন কিছুটা কমেছে কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে যায়নি।

নারীর অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে একজন নারীর মধ্যে কী কী বিষয় থাকা উচিত?

ফাহমিদা সাকি : প্রথমে তো শিক্ষা। এটি থাকতেই হবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। তারপর নিজেকে দাঁড় করানো। একটা লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। এ ছাড়া এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিজ ভালোভাবে রপ্ত করা। কারণ, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলেই হবে না। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সব ধরনের গুণাবলি রপ্ত করার চেষ্টাই একজনকে তার অবস্থানে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে।

নির্দিষ্ট কোন বাধাটির মুখোমুখি হন নারীরা?

ফাহমিদা সাকি : নারীদের জীবনসঙ্গী সাপোর্টিভ না হলে সবচেয়ে বড় সমস্যাটির মুখোমুখি হতে হয়। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে আর নির্দিষ্ট কোনো বাধা সাধারণত থাকে না। কর্মক্ষেত্র চায় কাজ। আর কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান।
ছবি: ফাহমিদা সাকির অফিস

 

কর্মক্ষেত্রে নারীরা বড় অবস্থানে গেলে অনেক নেতিবাচক কথা শোনায়। এ ক্ষেত্রে আপনার মতামতটা শুনতে চাই।

ফাহমিদা সাকি : নারীরা বড় অবস্থানে গেলে তার সহকর্মীরা নেতিবাচক কথা শোনায়, এমনটা অনেক আগে হতো। এখন তেমনটা হয় না বলা চলে। আমি নিজেও আমার অধীনে কাজ করা নারীদের এমনভাবেই যোগ্য করে গড়ে তুলি। তাদের এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকি। নারীরা নারীদের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না অনেক সময়। কিন্তু আমি ওদের এ বিষয়গুলো এড়িয়ে আগে কাজের জায়গায় যোগ্য হওয়ার জন্য বলে থাকি।

কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবনে ভারসাম্য নিয়ে আসেন কীভাবে?

ফাহমিদা সাকি : আমি যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি, তখন বিবাহিত ছিলাম। সন্তানও ছিল। তাই আমার ওপরও নানা ধরনের পারিবারিক চাপ ছিল। আমার অফিস টাইম ছিল ৯টা ৫টার ছকে বাঁধা। তারপর পরিবারে ফেরা। সেখানে সবাই কী খাবে, সেটা নির্ধারণ করে রান্না করা। এমন অনেক ধরনের কাজ পরিবারে থাকে, সেগুলো করেছি। তবে এটাকে আমি উপভোগ করেছি। কখনোই অভিশাপ হিসেবে ভাবিনি। কারণ, সংসারজীবনটাও উপভোগ্য করে তোলা যায়। তারপরে যখন কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ আরও বাড়ল, তখন আমি একজন হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে একজনকে নিলাম। কারণ, তখন অফিসে সময়টা বেশি দিতে হবে। এভাবে কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবন আলাদাভাবে উপভোগ করেছি। তাই জীবনে ভারসাম্য এসেছে।

ছবি: পারিবারিক পরিমন্ডলে  ফাহমিদা সাকি

সমাজের পিছিয়ে থাকা নারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ফাহমিদা সাকি : নারীদের এখন অনেক সুযোগ। প্রযুক্তি আরও সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছে। নারীরা যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো জায়গা থেকেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারে । এখন উচ্চশিক্ষিত নারীদের আক্ষেপও কমে গেছে। তারা তাদের অর্জিত শিক্ষা দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারছে। অনেক নারী উদ্যোক্তা হচ্ছে। এভাবে সব পেশাতেই নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই সমাজে পিছিয়ে আছে, এমন নারীরা প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে চাইলেই নিজের সুবিধামতো কাজ করে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম খুঁজে নিতে পারে। শুধু ইচ্ছা থাকাটাই জরুরি। আত্মবিশ্বাস আর আগ্রহ থাকলেই একজন নারী এগিয়ে যেতে পারে।

পারিবারিক সহযোগিতা কেমন পেয়ে থাকেন?

ফাহমিদা সাকি : আমি পরিবারের বেশ সহযোগিতা পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। আমার সন্তানেরা বোঝে যে মায়ের কাজ আছে। সেভাবেই তারা মেনে নিয়েছে। সন্তানেরাও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে আনন্দ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। ফলে দিনের বেলায় মায়ের অভাবটা কিছুটা পূরণ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার চর্চার মাধ্যমে তারাও স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠে। যারা কর্মজীবী নারী, তাদেরও সন্তানের বিষয়ে এত আবেগপ্রবণ না হয়ে মানসিকভাবে পরিপক্ব হতে হবে।
ছবি: বিজয় দিবসে ফাহমিদা সাকি

কারণ, এখন কিছুটা কষ্ট হলেও যখন সন্তানেরা বড় হয়ে যাবে, তখন সুখটা পাওয়া যাবে। সন্তান নাকি কাজ, এমন দ্বিধায় থেকে অনেকেই সন্তানের পাশেই থেকে যান। কিন্তু সন্তান একসময় বড় হয়ে যায়, তখন মায়েরা একাকী হয়ে পড়ে। তাই আবেগ সামলে নিয়ে কাজ করতে থাকলে একসময় সন্তানরো সময়ের প্রয়োজনে পাশে না থাকলেও নিজের একটা সামাজিক পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এই সামাজিক পরিচিতিটা সব বয়সী নারীর জন্য খুব দরকার। আমিও মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম বলেই আজ এ অবস্থানে আসতে পেরেছি। আর আমি অবশ্যই ভাগ্যবান যে এমন সাপোর্টিভ পরিবার পেয়েছি, যারা প্রতিমুহূর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রোদসীর পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন

ফাহমিদা সাকি : নারী-পুরুষের বিভেদ ভাঙতে হবে। যদিও এখন অনেকটা এগিয়ে গেছে দেশ। নারীরা পাইলট হচ্ছে, স্পিকার হচ্ছে, এমনকি বিপুল জনগোষ্ঠীর একটি গণতান্ত্রিক দেশও চালাচ্ছেন একজন নারী! অথচ ব্যাংকিং সেক্টরেও কোনো নারী ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিল না। গত বছর সেই ঘাটতিও পূরণ হয়ে গেছে। সুতরাং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে এ বিভেদের দেয়াল ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে।

রোদসীকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

ফাহমিদা সাকি : আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনাসংগ্রামসচেতনতা

কনফিডেন্ট হওয়া খুব জরুরি

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ৩, ২০২২

বাবা বদলির চাকরি করতেন, সেই সুবাদে নানা জায়গায় ঘোরার সুযোগ মিলেছে। পড়াশোনা হলিক্রস থেকে। তারপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা। বলছিলাম ইশিতা শারমিনের কথা। তিনি বর্তমানে বিক্রয় ডটকমের সিইও হিসেবে কাজ করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সুরাইয়া নাজনীন

 

জীবনযাত্রার বেলায়
ইশিতা শারমিন : আমার পড়াশোনা যখন শেষ হয়, তারপর আমি মোবাইল কোম্পানি সিটিসেলে জয়েন করি। বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করে সিটিসেল। আমি ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস নিয়ে কাজ করতাম। আমাদের হুয়াওয়ের সঙ্গে কাজ হতো চায়নায়। সেখানে আমি ট্রেনিংয়ের জন্য যাই। পরবর্তী সময়ে আমি খুব কম সময়ের মধ্যে প্রমোশন পাই। তারপর ২০১০ সালে আমি সিটিসেল ছেড়ে দিই, তখন আমার বিয়ে হয়ে যায়। তারপর আমি দুবাইয়ে চলে যাই। দুবাইয়ে ব্লুবেরি টেকনোলজিতে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। এরপর আমি সল্টসাইট টেকনোলজিতে কাজ করেছি। এটা একেবারেই অন্য রকম একটি কোম্পানি ছিল। এদের কাজ ছিল পুুরো বিশ্বে অনলাইনে ওয়েবসাইট লঞ্চ করা।

 

ইশিতা শারমিন

 

 

বিক্রয় ডটকমে যেভাবে এলেন
ইশিতা শারমিন : দুবাইয়ে যখন সল্টসাইটে কাজ করি, তখন ওরা বাংলাদেশে একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নেয়, বিক্রয় ডটকম নামে। সল্টসাইট একটি ব্রিটিশ কোম্পানি, যারা বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার সঙ্গে কাজ করত দুবাইয়ে বসে। পরে আমাকে সল্টসাইট থেকে বিক্রয় ডটকমের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওখানকার মার্কেটিং পলিসি নিয়ে আমি কাজ করতাম। ২০১৬ পর্যন্ত আমি বিক্রয় ডটকমে মার্কেটিংয়ের হেড হিসেবে কাজ করেছি। পরে বাংলাদেশে অফিস নিয়ে খুব বড় পরিসরে সেটআপ করা হয়। কিš‘ পরবর্তী সময়ে আমি আবার দুবাইয়ে সেটেল ডাউন করি। তখন অনলাইন মার্কেটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছিলাম ২০১৬ এবং ২০১৭ পর্যন্ত। এরপর আমি আবার বাংলাদেশে ব্যাক করি ২০১৮ সালে। এখন আমি বিক্রয় ডট কমের সিইও হয়ে কাজ করছি।

 

জীবনের সংগ্রামটা কি নারীর জন্য একেবারেই আলাদা?
ইশিতা শারমিন : আসলে সংগ্রামটা নারী-পুরুষ সবাইকে করতে হয়। তবে একটু ভিন্নভাবে। নারীর জন্য যেটা হয় তা হলো কেউ প্রায়োরিটির জায়গায় রাখে না নারীর ক্যারিয়ার। নারী মানেই একটু গৃহবন্দী টাইপ কিছু ব্যাপার সবার চিন্তায়। তবে নারীর মনের ইচ্ছাটা খুব জরুরি। আমি কী করতে চাই এবং যেটা করব সেটাতে কি আমি স্বাচ্ছন্দ্য। যে কাজ ভালো লাগবে না, সেটা ধরে টিকে থাকাটাও কঠিন।

 


নারীর জন্য ক্যারিয়ারসচেতন হওয়া কতটা জরুরি?
ইশিতা শারমিন : অবশ্যই জরুরি। কখনো কেউ বলতে পারে না জীবনের দুর্র্ঘটনার কথা। পরিবারের স্বাবলম্বী ব্যক্তিটির হঠাৎ করে যদি কিছু হয়ে যায়, কে সেই পরিবারের দায়িত্ব নেবে? আমাদের সরকারব্যবস্থা ও ততটা সক্ষম নয় যে সেই পরিবারের পাশে সারা জীবন দাঁড়াবে। তাই সবার আগে পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিকল্প কেউ কিছু করলে সেই পরিবারের আর সমস্যা হবে না। সে জন্য বিকল্প হয়েও নারী যদি কিছু করতে চায়, খারাপ কী?

পরিবারের সহযোগিতার জন্য একজন নারী কতটুকু এগিয়ে আসে?

ইশিতা শারমিন : বিয়ের পর একজন নারী তার স্বামী, সন্তান এবং তার পরিবারকে ভালো রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। অনেকে ভাবেন বিয়ে হয়েছে, সন্তান হয়েছে, সন্তান মানুষ করবে চাকরির কী দরকার! কিš‘ ওই সন্তানদের ভালো ভবিষ্যতের জন্যই একজন নারী কিংবা মায়ের চাকরির দরকার। আবার কর্মজীবী মায়ের সন্তানেরাও অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়, যা তার ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে অনেক কাজে লাগে।

 


কনফিডেন্ট থাকাটা কতটা জরুরি?
ইশিতা শারমিন : এটার কোনো বিকল্প নেই। অনেক সময় একজন নারীই তার সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এটা কি আমি করব? কিংবা এটা কি আমাকে দিয়ে হবে? এসব আচরণের কারণে পুরুষেরাও এটার সুযোগ নেন। নারীকে কোনো বড় দায়িত্ব দিতে চান না। তাই নারীকে স্কিলড হয়ে নিজের জায়গাটি ধরে রাখতে হবে। তাহলে কনফিডেন্ট লেভেলটি আরও উন্নত হবে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ওয়েডিং ডেস্টিনেশন

তুমিই রোদসী

  • স্বপ্ন দেখি নারী দিবসের দরকারই হবে না







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook