রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

নারী

অনুসঙ্গআয়নাঘরকেনাকাটানারীরূপ ও ফ্যাশনরোদসীর পছন্দ

মেকআপ টিপস এন্ড ট্রিকস

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৩

শায়লা জাহান:

কর্মক্ষেত্রে যাওয়া হোক কিংবা কোন পার্টি, প্রতিনিয়তই আমরা সকলেই মোটামুটি মেকআপ করে থাকি। এই ব্যাপারে তুমি একজন বিগেইনার বা এক্সপার্ট হও না কেন, মেকআপ বিষয়ক কিছু টিপস এবং কৌশলের ব্যাপারে জানা থাকলে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হয়ে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে সর্বদা কাজে আসবে। আর এই লেখাটি সাজানো হয়েছে এমন কিছু মেকআপ কৌশল নিয়ে।

মেকআপ হল একটি শিল্প। একজন আর্টিস্ট যেমন রঙ তুলির ছোঁয়ায় একটি সাধারণ কাগজে অসাধারণ চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে, তেমনি মেকআপের সাহায্যে আমরা আমাদের চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রেখেই একে আরও উন্নত করতে পারি। আর নিখুঁতভাবে তা ফুটিয়ে তুলতে ধৈর্য ও মনোযোগের পাশাপাশি জানা দরকার কিছু কৌশলের। যা অনেক কাজে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ কৌশল তোমাকে আইশ্যাডো ব্যবহার করে নিখুঁত উইং ডিজাইন পেতে সাহায্য করতে পারে। আবার কন্ট্যুর করতে কিংবা হাইলাইট করতে একই আইশ্যাডো প্যালেট কীভাবে কাজে আসতে পারে। এমন অনেক ছোট ছোট আইডিয়ার মাধ্যমে তুমি খুব সহজেই ত্রুটিবিহীন এবং মার্জিত একটি লুক ক্রিয়েট করতে পারবে।

  • একটি স্মার্ট মেসি-মুক্ত মেকআপ চাও? তবে মুখের মেকআপ শুরু করার আগে চোখের মেকআপ করে নাও। আগে বেজ তৈরি করে নিলে পরবর্তীতে গালে পাউডার শ্যাডো পড়ে যাওয়া বা আই লাইনার স্ম্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই তা এড়াতে এই পদক্ষেপটি নিতে পারো। এবং চোখের কিছু দেয়ার আগে প্রাইমার বা ক্রিম শ্যাডো দিয়ে বেস ঠিক করে নিতে পারো। এতে চোখের মেকাআপের সতেজ ও মসৃণভাব দেখাবে।
  • শ্যাডোর ক্ষেত্রে ডার্ক আইয়ের জন্য ওয়ার্ম টোন এবং লাইট আইয়ের জন্য শীতল বা হালকা টোন, কখনোই তোমাকে নিরাশ করবেনা। চোখের লিডে কিছুটা ফ্যাকাশে, শিমারী শ্যাডো তোমার টায়ার্ড চোখে স্পার্কল যোগ করবে। ক্রিজের জন্য চুজ করবে মাঝারি শেড, যা যেকোন ফ্লেশিভাব দূর করতে ও চোখকে বড় দেখাতে সাহায্য করবে।
  • মেকআপকে দীর্ঘসময়ের জন্য ধরে রাখার জন্য প্রাইমারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তো সবারই জানা আছে। তেল বা ওয়াটার বেইসড যে প্রাইমারই ব্যবহার করোনা কেন, তোমার প্রাইমার এবং ফাউন্ডেশন যেন একই ধরনের হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এদের একসাথে মিশাতে কঠিন করে তুলবে।
  • ফাউন্ডেশন এপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে কি ধরনের কভারেজ চাও আগে তা ঠিক করে নাও। যদি তুমি নিখুঁত কভারেজ চাও, তবে আঙুল দিয়ে নিয়ে তা স্কিনে ড্যাব ড্যাব করে লাগিয়ে নাও। আর যদি ফুল কভারেজ চাও তবে একটি ফাউন্ডেশন ব্রাশ বেছে নাও। সেক্ষেত্রে একসাথেই একেবারে পুরে মুখে ফাউন্ডেশন না দিয়ে অল্প অল্প করে ব্রাশ বা আঙুলের সাহায্যে লাগিয়ে তারপরে স্পঞ্জ দিয়ে যে কোন লাইন ব্লেন্ড করে দিতে পারো।
  • সবসময় নীচের দিকে স্ট্রোক করে ফাউন্ডেশন লাগাও। আমাদের বেশিরভাগের মুখে চুলের পাতলা স্তর থাকে এবং উপরের দিকে ফাউন্ডেশন লাগালে চুলের স্ট্র্যান্ডগুলো আলাদা হয়ে যায়। ফাউন্ডেশন ব্রাশ মেকআপকে ফাটল ধরা থেকে বাধা দেবে। মুখের মাঝখান থেকে শুরু করো এবং ফাউন্ডেশনকে বাইরের দিকে মিশিয়ে দাও। নাকের ছিদ্র, নাকের নীচে, ঠোঁটের চারপাশে এবং নাক থেকে মুখের ক্রিজগুলোতে নিয়ে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে নাও। চোখের নীচে, নাকের পাশে ভেতরের কোণের জন্য ছোট কনসিলার ব্রাশ ব্যবহার করো।
  • মুখের ছোট ছোট দাগ, ডার্ক সার্কেল, পিগমেন্টেশন আড়াল করতে কনসিলারের জুড়ি নেই। সবসময় ফাউন্ডেশন থেকে এক শেড হালকা কনসিলার নির্বাচন করো। আমরা বেশিরভাগই চোখের নিচে অর্ধবৃত্তাকার প্যাটার্নে কনসিলার প্রয়োগ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য, চোখের নিচে ত্রিভুজাকৃতি করে কনসিলার দিলে ভালো। এতে শুধুমাত্র যে তোমার পিগমেন্টেশন বা ফোলাভাব লুকানোর জন্য ভালো কাজ করে তা না, এটি মিশ্রিত করাও সহজ।
  • মুখের গুরুত্বপূর্ণ ফোকাল পয়েন্টগুলো সম্পর্কে জেনে নাও। এই হ্যাকটি তোমার তখনই বেশ কাজে দেবে, যখন তোমার তাড়া আছে বা কনসিলার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে আলসে বোধ করছো। এক্ষেত্রে একটি ব্রাশ দিয়ে কিছুটা কনসিলার নিয়ে তোমার চোখের নীচে, মুখের কোণে এবং নাকের কাছে লাগিয়ে নাও। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র তোমার মুখের কেন্দ্রটি হাইলাইট করাই হয়েছে।
  • মুখের বেজ মেকআপের শেষ স্তর বলা হয় ফেস পাউডার। ফেস পাউডার প্রাধানত দুই ধরনের হয়- লুজ পাউডার এবং প্রেসড পাউডার, এবং উভয়ই ডিউয়ি এবং ম্যাট ফিনিশের মধ্যে আসে। কোনটা কোন কাজে ব্যবহৃত হয় তা জানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। লুজ পাউডার মেকাপকে সঠিকভাবে সেট করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে ব্যবহার করা হয়। আর প্রেসড পাউডার টাচ-আপের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
  • ত্বকে একটুখানি ব্লাশনের ছোঁয়া তোমাকে তাৎক্ষণিক স্নিগ্ধ ও সজীব দেখাবে। একটু অন্যভাবে ব্লাশন ব্যবহার করতে পারো। এর জন্য তোমাকে প্রথমে ব্লাশ লাগিয়ে তার উপর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। ফলাফল দেখলে তুমি নিজেই চমকে উঠবে। মনে হবে তুমি ভেতর থেকে যেন গ্লো করছো। তবে ব্লাশটি হতে হবে ক্রিম বা লিকুইড ফর্মের। পাউডার ব্লাশের ক্ষেত্রে তা প্যাচিনেস সৃষ্টি করতে পারে।
  • পাউডার দিয়ে ব্লাশ ব্লাটিং করার পরিবর্তে একটি টিস্যু পেপার ব্যবহার করো। প্রয়োগ করার পর এটিকে হালকাভাবে ব্লাশের উপর প্রেস করে নাও। তারপর ব্রাশ বা স্পঞ্জ দিয়ে বাকি কাজ শেষ করে নাও।
  • চোখে আই লাইনার লাগাতে যেয়ে বেশ হ্যাপায় পড়তে হয়না এমন সংখ্যা খুব কমই আছে। এক চোখে পারফেক্টলি ওকে থাকলে দেখা যায় আরেক চোখে সব ভন্ডুল হয়ে যায়। এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে তোমার ল্যাশ লাইনে একেবারেই সরল রেখা আঁকার চাইতে লাইনার দিয়ে ছোট ছোট ডট বা ড্যাশ এঁকে নাও এবং তাদের একসাথে মিলিয়ে দাও। নিখুঁতভাবে করা আইলাইনার পেয়ে যাও নিমিষেই।
  • সব তো হলো। কিন্তু ঠোঁট রাঙানো ছাড়া সব সাজ যেন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। ঠোঁটের আকৃতি সুন্দর দেখাতে লিপ লাইনার দিয়ে এর আউটার লাইন এঁকে নাও। লিপ লাইনার এবং লিপস্টিক সবসময়ই একই শেড নির্বাচন করো, না হলে তা দেখতে দৃষ্টিকটু দেখাবে। লিপস্টিক লাগাতে সবসময় মাঝখান থেকে শুরু করে বাইরের দিকে লাগাতে হবে। ঠোঁটকে আরও সুন্দর ও ডিফাইন করতে এর আউটার লাইনের বাহিরে কনসিলার দিয়ে সেট করে নাও। সবশেষে লিপস্টিকের স্থায়িত্ব ধরে রাখতে এর উপর টিস্যু পেপার ধরে কিছু পাউডার বুলিয়ে নাও।

একদিনেই কেউ রাতারাতি মেকআপে এক্সপার্ট হতে পারেনা। যত তুমি প্র্যাক্টিস করবে ততই তুমি অভিজ্ঞ হবে। তবে হ্যাঁ, শুধু মেকআপ করলেই কিন্তু হবেনা; সাথে তোমার ব্যবহার করা মেকআপ ব্রাশ, বিউটি ব্লেন্ডারগুলো সময়ে সময়ে পরিষ্কার করা জরুরী। কারণ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু এসব থেকেই হয়ে থাকে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গআয়নাঘরকেনাকাটাজীবনযাত্রানারীবসন ভূষণরূপ ও ফ্যাশন

বিয়েতে আজও অমলিন বেনারসি

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২৩

বিয়ে, ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু এর গভীরতা বিশাল। এটি হলো একটি নতুন জীবনের শুরু, পরিবারের শুরু এবং সারাজীবন একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকারনামা। আর এই স্পেশাল মুহূর্তের সবকিছুই হওয়া চাই স্পেশাল। সবাই চায় বিয়ের দিনের সাজপোশাকটা এমন হোক, যা তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে শাড়ি ছাড়া নববধূর সাজ যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। আর প্রসঙ্গ যদি হয় বিয়ের শাড়ির, সে ক্ষেত্রে বেনারসি শাড়ি সবসময়ই বিয়ের ফ্যাশনে আধিপত্য বিস্তার করে আছে এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে এর স্থান কখনোই হারায় না। এই বেনারসি শাড়ির টুকিটাকি নিয়েই লিখেছেন শায়লা জাহান। 

বেনারসি শাড়ি প্রাচীন ভারতীয় একটি শহর বেনারস বা বারানসিতে তৈরি একপ্রকার শাড়ি, যা এর সোনা এবং রুপার জরি, সূক্ষ্ম রেশম এবং আকর্ষণীয় সুচিকর্মের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। শাড়িগুলো সূক্ষ্ম রেশম তন্তুর তৈরি এবং জটিল নকশায় সজ্জিত ও নকশাকাটার কারণে তুলনামূলকভাবে ভারী ওজনের হয়ে থাকে। এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে সোনার কাজ, ঘন বুনন, পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশা, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস, আঁচল এবং জালি কাজ। নকশা এবং বিন্যাসের জটিলতার ওপর নির্ভর করে একটি বেনারসি শাড়ি সম্পূর্ণ হতে ১৫ দিন থেকে এক মাস এবং কখনো কখনো ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বিয়ের পোশাকের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফ্যাশন, ট্রেন্ডের অনেক ভিন্নতা এলেও বেনারসির আবেদন কখনো ফুরায়নি। এই শাড়ির জমকালো চেহারার সঙ্গে নববধূর সাজের যে রাজকীয় ভাব প্রকাশ পায়, সেটার চেয়ে প্রশংসার আর কী হতে পারে। আজকাল দক্ষ কারিগর এবং তাঁতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য বেনারসি শাড়িগুলো আরও সহজলভ্য এবং বিয়ের কনের পোশাকে একটি পছন্দসই সংযোজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নববধূর জন্য কেমন রঙের বেনারসি যথার্থ?

বিয়ের কনে মানেই আমাদের মাথায় আসে ‘লাল টুকটুকে বউ’। তবে বিয়ের দিন আজকাল নানা রঙের শাড়ি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চলে। তবে অনেকেই সেই চিরাচরিত লাল পরেন। সবার মনোযোগ আকর্ষণ এবং ব্রাইডাল ওয়্যারের ক্ষেত্রে লাল হলো সব রঙের রাজা। এই রং শাড়ির প্রিন্টকে আরও শাইন এবং সমৃদ্ধ করে তোলে। গোলাপি রংও এই বিশেষ দিনের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এটি নববধূর মধ্যে একটা গর্জিয়াস লুক আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে গোলাপি রঙের যেকোনো শেড বা বিভিন্ন রঙের সমন্বয়ে বিয়ের শাড়ি নির্বাচন করা যেতে পারে। যদি কিছুটা ইউনিক লুক ক্রিয়েট করার ইচ্ছা থাকে, তবে শুভ্র সাদা বা সবুজ রঙের দিকে যাওয়া যেতে পারে। সবুজ রঙের ক্ষেত্রে ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানের সময়ের ওপর নির্ভর করে হালকা বা গাঢ় উভয় শেডেই পরা যেতে পারে। সবুজ রং ও লাল রঙের মতোই কাপড়ের পুরোটাজুড়ে প্রিন্টকে উজ্জ্বল করে তোলে। মনে রাখতে হবে যে সব মানুষের স্কিন কমপ্লেকশন কিন্তু আলাদা। তাই যে রংই বাছাই করা হোক না কেন, সেই শাড়ির রং যেন আমাদের ত্বকের রংকে আরও বেশি করে হাইলাইট করে।

অথেনটিক বেনারসি চেনার উপায়

খাঁটি বেনারসি শাড়িগুলো দক্ষ কারিগরদের দ্বারা পরম যত্নে তৈরি করা হয়। প্রতিটি বেনারসি শাড়ি আলাদা এবং এটি কীভাবে হস্তশিল্পে তৈরি হয়েছিল, তার একটি গল্প বহন করে। আর সেই সূক্ষ্ম, অথেনটিক শাড়ি খুঁজে পাওয়ার কিছু টিপস হলো :

-খাঁটি বেনারসি শাড়িগুলো উচ্চ মানের সিল্ক এবং আসল সোনা এবং রুপার জরি থেকে তৈরি করা হয়। এই ধরনের তাঁত বয়ন সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত জটিল। আর এটিই শাড়িকে অনন্যতা দেয় এবং দামেও কিছুটা উচ্চমানের হয়। কম দামে অনেকেই সাধারণ শাড়িকে বেনারসি বলে চালিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে সস্তা বিকল্পগুলো থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

-শুধু শাড়ির বিপরীত দিকটি পরীক্ষা করেও এর আসলতা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাঁতে বোনা বেনারসি শাড়ি সবসময় পাটা এবং তাঁতের গ্রিডের ভেতরে ভাসমান থাকবে। মেশিনে বোনা শাড়ি হবে মসৃণ ফিনিশিং।

Ñএর জটিল কারুকার্যের জন্য এক একটি বেনারসি তৈরি হতে অনেক সময় লেগে যায়। উন্নত মানের সুতা ও সিল্ক দিয়ে তৈরি এই বেনারসির আসল শাড়ির কাজ হবে নিখুঁত ও রং হবে পাকা।

-আসল বেনারসি শাড়িতে আমরু, আম্বি এবং ডোমকের মতো মোগল মোটিফ, সেই সঙ্গে কলগা এবং বেলের মতো সূক্ষ্ম ফুল ও পাতার মোটিফ থাকবে, যা নকল নয়।

-শাড়ির আঁচলে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা, সাধারণ সিল্কের একটি প্যাচ থাকবে। যা শুধু আসল বেনারসি শাড়িতেই থাকবে।

বেনারসি শাড়ির যত্ন-আত্তি

শখের বেনারসি শাড়ি কেনার আগেও যেমন সতর্ক থাকতে হয়, তেমনি এর যত্নের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে। কখনো যদি এটি ধোয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তা বাসায় ধোয়া যাবেনা। লন্ড্রিতে ড্রাই ওয়াশ করাই এর একমাত্র সমাধান। আর আলমারিতে অনেক শাড়ির সঙ্গে গাদাগাদি করে এটা রাখতে যাবেনা। এতে ঘষা লেগে এর সুতার কাজ উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় অন্য সুতি কাপড়ের ভেতরে শাড়িটি মুড়িয়ে রেখে দিলে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গআয়নাঘরজীবনযাত্রানারীরূপ ও ফ্যাশন

বিয়ের সাজে সাজবে কন্যা

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৩

প্রকৃতিতে শীতের হিমেল হাওয়ার দোলা লাগার সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশে সানাইয়ের সুর বেজে ওঠারও ধুম পড়েছে। শীত ঋতুর সঙ্গে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার এক যোগসূত্র রয়েছে। আগেকার সময়ে দেখা যেত ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’ অথবা ‘বিয়ের সাজনী সাজো, কন্যা লো’ এমন গীত গেয়ে বিয়ের আসর বসত। সবার মধ্যমণি হয়ে বিয়ের কন্যাকে বসিয়ে চুড়ি, আলতা, টিপ, নোলক, কাজল দিয়ে লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে দেওয়া হতো। কালের আবহে পাল্টে গেছে সেই সব সময়। এখন মাসের পর মাস চলে এই স্পেশাল দিনের প্ল্যানমাফিক ছক কষা। আনুষ্ঠানিকতার ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের সাজপোশাকে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আর এইসব আয়োজন নিয়েই লিখেছেন শায়লা জাহান।

বিয়ের মতো এত বড় একটি দিনে নববধূ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সবার সবচেয়ে বেশি উৎসুক দৃষ্টি থাকে তার সাজ নিয়ে। জমকালো পোশাক এবং গহনাসহকারে কনের ব্রাইডাল লুক অনুষ্ঠানের এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। কী ধরনের লুকে স্পেশাল দিনে স্পেশাল লাগবে? বরাবরের মতো ট্র্যাডিশনাল লুক? নাকি যোগ হবে কিছুটা ফিউশনের? তা নিয়ে চলে বিস্তর জল্পনা। বিয়ের সাজে ট্র্যাডিশনাল লুক বজায় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারার মাধ্যমেও তাদের সাজে ভিন্নরূপ ফুটে উঠেছে। প্রতিবছর একাধিক ট্রেন্ডের আনাগোনা ঘটে বিয়ের সাজপোশাকের ক্ষেত্রে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বও আলাদা। মেকআপের ভিড়ে সেই স্বাভাবিক স্নিগ্ধতাকে না ঢেকে তার মতো রেখেই লাবণ্যময়ী কনে করে তোলার ট্রেন্ড কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, এমন অনেক কনের সাজ দেখতে পাবে, যারা তাদের বড়দিনের জন্য রং এবং টেক্সচার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করে। এর মানে হলো যদিও এই ব্রাইডাল মেকআপের ট্রেন্ড বিদ্যমান, সেখানে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, যা তোমাকে অনুসরণ করতেই হবে। এই ধরনের ট্রেন্ডি অপশনগুলো বিশেষ দিনের জন্য তোমাকে আরও অনন্য করে তুলতে সহায়তা করবে মাত্র। বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে ট্রেন্ডে চলা এমন কিছু সাজ আসো দেখে নিই।

ন্যাচারাল মিনিমাল মেকআপ লুক

বিয়ের সাজ আর দশটা দিনের মতো নরমাল সাজ নয়। সচরাচর ফাউন্ডেশন, কনসিলার, শ্যাডো, ব্লাশ, কনট্যুরের সমন্বয়ে বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ গ্ল্যাম মেকআপ লুক দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পাল্টে গেছে সময়, পাল্টে গেছে ক্ষণ। ‘বিউটি ইন সিমপ্লিসিটি’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ন্যাচারাল মিনিমাল মেকআপ লুকের আগমন ঘটেছে। ষাট-সত্তর দশকে যেমন সাজ ছিল ছিমছাম, হালকা; তেমনি এখনকার সময়ে সেলিব্রেটিদের থেকে শুরু করে অনেকের মাঝেও মেকআপেরভারী স্তরের পরিবর্তে ন্যূনতম মেকআপের উপস্থিতি প্রাধান্য দিচ্ছে। ত্বকের টোনের সঙ্গে মিল রেখে হালকা বেস করা হয় এবং সঙ্গে থাকে কনটুরিং এবং ব্লাশনের সামঞ্জস্য ব্যবহার। ঠোঁটে থাকছে হালকা লিপস্টিকের ছোঁয়া। মোটকথা এই লুকে চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বজায় রেখে একটি প্রাকৃতিক দীপ্তিময় আভা যোগ করা হয়।

এইচডি মেকআপ

একটি আড়ম্বরপূর্ণ পোশাক এবং চমকপ্রদ গহনার সম্মিলন নিঃসন্দেহে বিয়ের কনের লুক আরও জাঁকজমক করে তোলে। তবে সঙ্গে যদি ফ্ললেস ব্রাইডাল মেকআপের উপস্থিতি না থাকে, তবে সবকিছুই বৃথা হয়ে যাবে। হাইডেফিনিশন (এইচডি) মেকআপ সাধারণত বড় পর্দায় দেখা যায়। এই মেকআপের কৌশলের মাধ্যমে মুখের ত্রুটি, দাগ, গর্ত, ব্রণ, ফাইন লাইন কভার করা যায় কোনো ধরনের ক্রিজ তৈরি না করেই। এ ধরনের মেকআপের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি ভারী বা কেকি মনে হয়না এবং ত্বককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাজা ও উজ্জ্বল রাখে। নববধূর জন্য এই মেকআপ টাইপ উপযুক্ত। কারণ এর ভালো ফিনিশিংয়ের জন্য এটি ন্যাচারাল এবং ক্লাসি এক লুক দেয়।

ম্যাট মেকআপ লুক

বিভিন্ন ব্রাইডাল মেকআপের লুকের মধ্যে, ম্যাট মেকআপ লুক বেশ জনপ্রিয়। ম্যাট লুকগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয়, চটকদার এবং মার্জিত হয়ে থাকে এবং এগুলো মুখের বৈশিষ্ট্যকে খুব ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য অক্ষত থাকে। এই মেকআপ লুকে গাঢ় রং সৃজনশীলতার সঙ্গে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের মেকআপ সব আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত। এটি লাইটওয়েট, প্রাকৃতিক এবং সাহসী উভয়ই দেখাতে পারে। এখানে এমন পণ্য ব্যবহার করা হয়, যা কার্যকরভাবে ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল শোষণ করে একটি মসৃণ এবং মখমল ফিনিস প্রদান করে রাজকীয় চেহারা দেয়।

 

স্মোকি চোখের জাদু

মুখের সবচেয়ে লক্ষণীয় এবং আকর্ষণীয় অংশ হলো চোখ, যা ব্যক্তিগত শৈলীকে সর্বোত্তম প্রতিফলিত করে। ব্রাইডাল সাজে চোখের মেকআপ হলো এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা তাদের আলাদা করে তোলে। শুধু চোখের সাজ সহজেই একজনকে গ্ল্যামারাস ও কুল চেহারায় পরিবর্তন করতে পারে। চোখের সাজের ক্ষেত্রে স্মোকি আইজ আরেকটি বড় জাদু। উইকংড আইলাইনারের সঙ্গে  স্মোকি আইজের পেয়ার আপ, পুরো লুকে ঝড় তুলতে পারে। গরম হোক বা শীত, মেকআপের এই ট্রেন্ডটি পুরো সময়ে চলছে স্বমহিমায়। চোখে ভারিক্কি সাজের সঙ্গে থাকছে ন্যুড লিপস, অন্য সাজও থাকছে একদম হালকা।

বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ কনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় নিখুঁত মেকআপ করা এবং সেই সঙ্গে নিখুঁত চেহারা পাওয়া। সাজের এমন অনেক ট্রেন্ড সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকবে। শুধু ট্রেন্ড ফলো করলেই চলবেনা, জীবনের এই বিশেষ দিনে নিজেকে অনন্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলে আগেই নিতে হবে নিজের যত্ন। নিয়মিত ঘরোয়াভাবে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বিউটি স্যালনে গিয়ে নিতে হবে বিশেষ পরিচর্যার সুবিধাগুলো।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নারীসংগ্রামসচেতনতাসম্ভাবনা

অভিবাসী নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি

করেছে Suraiya Naznin জানুয়ারী ১১, ২০২৩

নাজমুল হুদা খান

অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। তারা অনেক বেশি অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকেন। ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, চর্মরোগ, জন্ডিসসহ নানাবিধ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভিবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতি মজবুত করতে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের ১৭৪টির বেশি দেশে প্রায় দেড় কোটি অভিবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করছে এবং শতকরা ১২% জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে। এই অভিবাসীদের উল্লেখযোগ্য অংশ নারী শ্রমিক। ২০০৪ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকের শতকরা হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ, এক যুগের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০১৫ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ শতাংশে উন্নীতকরণ; যদিও করোনা অতিমারিতে এ লক্ষ্যমাত্রায় ছেদ পড়েছে।

বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিকদের প্রায় ৯০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত। বর্তমানে সৌদি আরবে দুই লক্ষাধিক নারী শ্রমিক রয়েছে, আরব আমিরাত ও জর্ডানে আছে দেড় লক্ষাধিক অভিবাসী নারী, লেবাননে লক্ষাধিক, ওমানে প্রায় এক লাখ। এ ছাড়া কুয়েত ও বাহরাইনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এসব নারী অভিবাসী শ্রমিক উল্লিখিত দেশগুলোতে গৃহকর্মী, হাসপাতাল, পোশাকশিল্প, বিভিন্ন কলকারখানা, অফিস, কৃষি খামার, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি কর্মকা-ে নিযুক্ত রয়েছে। পুরুষ কর্মীদের প্রবাসে গমনের বিষয়ে সমাজ ও পরিবারের বাধাবিপত্তি না থাকলেও নারীদের নানা ধরনের বিপত্তি পেরিয়ে অগ্রসর হতে হয়। অথচ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা যায়। পুরুষ শ্রমিকেরা যেখানে উপার্জিত আয়ের ৫০ শতাংশ দেশে প্রেরণ করে থাকেন; সেখানে নারীদের এর পরিমাণ ৯০ শতাংশ।

অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। তারা অনেক বেশি অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকেন। গৃহস্থালি, রেস্টুরেন্ট, কলকারখানার গরম, আর্দ্র ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে হয় বলে অনেকেরই ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, চর্মরোগ, জন্ডিসসহ নানাবিধ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। পশুপাখির খামারের কর্মরতদের মধ্যে যক্ষ্মা, চোখের নানাবিধ ব্যাধি এবং পেশি ও অস্থিসন্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা ও প্রদাহ দেখা দেয়। খনি ও অন্যান্য কারখানায় কর্মরতদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস, উ”চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, প্রভৃতি রোগে ভুগতে দেখা যায়। খাবারের রেস্টুরেন্ট ও খাবার তৈরির কাজে নিয়োজিতরা খাদ্যনালি, পরিপাকতন্ত্র, লিভারসহ নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রামক ব্যাধিতে ভুগে থাকেন।

প্রবাসী নারী শ্রমিকেরা বিভিন্ন সামাজিক অসংগতি, বৈষম্য ও অপরিচিত পরিবেশের কারণে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি ঘটে। অধিকাংশ নারী গৃহশ্রমিককে অতিরিক্ত কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়। তারপরও মুখ বুজে সহ্য করে এবং নিজের অসুস্থতাকে লুকিয়ে বিদেশের মাটিতে কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। নারী শ্রমিকদের অধিকাংশেরই নিরাপত্তাহীন বারান্দা, রান্নাঘর, স্টোররুমে রাতযাপন করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেককেই দৈহিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হতে দেখা যায়। ফলে ভুক্তভোগী নারী শ্রমিকদের যৌনবাহিত রোগ, এইডস, অনিচ্ছাকৃত ও অবৈধ গর্ভধারণ, অনিরাপদ গর্ভপাতের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ধরনের অসহ্য নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং ডিপ্রেশন, সিজোফ্রেনিয়াসহ নানাবিধ মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। উপরš‘ পরিবারের কাছ থেকে দীর্ঘদিন আলাদা থাকা, সামাজিক ও পারিবারিক স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চনা, একাকিত্ব, দারিদ্র্য; সব মিলিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়।

 

নারী শ্রমিকেরা অসুস্থতার পরও বিভিন্ন বাধাবিঘ্নর কারণে অথবা চিকিৎসাকেন্দ্রসমূহে প্রবেশাধিকার কিংবা ইনস্যুরেন্স না থাকার কারণে চিকিৎসা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালমুখী হতে পারলেও ভাষা সমস্যা বা অদক্ষতার কারণে সঠিক চিকিৎসাটি পায় না। অনেক সময় বেতন কম পাওয়া বা বেতন না পাওয়ার ভয়ে শারীরিক অসুস্থতাকে পুষে রাখে; যা পরে জটিল আকারে রূপ নেয়। অবৈধ পথে গমনকারী বা অবৈধ ভিসা পাসপোর্টধারী নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও প্রকট।
নারী শ্রমিকেরা বিদেশ গমনকালে ফিটনেস টেস্টেও বিড়ম্বনার শিকার হয়। অনেক সময় মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতি করে ফিটনেসের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। ফিট শ্রমিককে আনফিট কিংবা আনফিটকে ফিট করতে অর্থ প্রদানে বাধ্য করা হয়।

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণার তথ্যমতে, ৩৮ শতাংশ নারী বিদেশে যাওয়ার পর শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ৫২ শতাংশ নারী শ্রমিককে জোর করে অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করা, ৬১ শতাংশ বিদেশে খাদ্য ও পানির অভাব, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে তথ্য উঠে এসেছে। ৮৭ শতাংশ নারী শ্রমিক প্রবাসে সঠিক চিকিৎসাসেবা পান না বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। চাকরি হারিয়ে বা দেশে ফিরে ৮৫ শতাংশ নারী হতাশাগ্রস্ত, ৬১ শতাংশ ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন, ৫৫ শতাংশ শারীরিকভাবে ও ২৯ শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থতায় ভুগে থাকেন। এমনকি বিদেশ থেকে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে দেশে ফেরত আসার পর নারী শ্রমিকেরা সমাজ ও পরিবারের কাছে অসম্মানিত হচ্ছেন। ৩৮ শতাংশ নারী চরিত্রহীনা বলে গণ্য, ২৮ শতাংশ দাম্পত্যজীবন ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১৫ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত হন। বিদেশ ভ্রমণের প্রাক্কালে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সেবাবিষয়ক তথ্যাদি পুরোপুরি অবগত করা হয় না। এবং বিদেশে তাদের চিকিৎসাসেবাবিষয়ক তথ্যসংবলিত চুক্তিনামাও অনেক ক্ষেত্রে থাকে না।

 

অভিবাসী শ্রমিক ও নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিতের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্বারোপ করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সব দেশসমূহকে অভিবাসী শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী শ্রমিক অধিকার কনভেনশন সব অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা; এমনকি অবৈধ শ্রমিকের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের ওপর জোরারোপ করেছে। সুতরাং অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাগতিক দেশসমূহকে শ্রমস্বাস্থ্যআইন সঠিকভাবে নিশ্চিতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শ্রমিক নিয়োগকৃত কোম্পানিসমূহকে স্বাস্থ্যসেবা চুক্তিনামা পালনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্মকান্ডে নজরদারি বাড়ানো উচিত।

 

মালিকপক্ষের অভিবাসী শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসা দায়িত্ব ও কর্তব্য। শ্রমিক নিয়োগ চুক্তিপত্রে হেলথ ইনস্যুরেন্স, চিকিৎসা-সুবিধা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, জখম ও মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়গুলো স্পষ্টীকরণ করা উচিত। বাংলাদেশে অভিবাসী শ্রমিক ও নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি লাঘবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট পলিসি ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। আইএলওর সহায়তায় অভিবাসী শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তিন বছর মেয়াদি জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে। অভিবাসী আইন ২০১৩ এবং অভিবাসীকল্যাণ ও নিয়োগ আইন ২০১৬-তে জখম ও মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ এবং শ্রমিকের নিরাপদ ও সম্মানজনক কাজ এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হেলথ ইনস্যুরেন্স, সামাজিক ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং স্বাস্থ্যগত কারণে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকের তথ্য-উপাত্তের প্রোফাইল সংরক্ষণের কাজ করছে।

 

অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব প্রদান করে সব অভিবাসী শ্রম আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকের অভিবাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পৃথক স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্য বিভাগ গঠন করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট এনজিও এবং ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসতে হবে। অভিবাসী নারী শ্রমিকের সমাজ ও পরিবারকে তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে মর্যাদা প্রদান করতে হবে।
রাষ্ট্রের অর্থনীতি সুদৃঢ়, সামাজিক ও পরিবারের স”ছলতা আনয়নে জীবনের প্রতিটি স্তরে ঝুঁকি নিয়ে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে নারীরা সাহসী ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন নারীর ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সারা বিশ্বে ভূমিকা রাখতে উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য ও সম্মান সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় গঠন ও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বটি সুচারুরূপে পালনে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের অংশ হিসেবে তাদের পাশে সদা আমাদের দাঁড়াতে হবে।

লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান
এমফিল, এমপিএইচ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সাবেক সহকারী পরিচালক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা ঢাকা।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নারীসংগ্রামসচেতনতা

নারী নিপীড়ন এবং এড়িয়ে যাওয়া

করেছে Suraiya Naznin জানুয়ারী ৯, ২০২৩

নাসরিন সুলতানা-

এড়িয়ে যাওয়া কিংবা অন্যায়ের পক্ষে কথা বলা একটু একটু করে নারী নিপীড়নের দরজা খুলে দেয়-

কোনো রকম ভিড় ঢেলে বাসে উঠল দীপা। কিছু দূর গিয়ে পেছনের সারিতে একটা সিট পেল। আঁটসাঁট হয়ে বসে দৃষ্টি শুধু এপাশ-ওপাশ। এই বুঝি কিছু হলো! গন্তব্যে পৌঁছে শঙ্কিত পায়ে দীপা নামতে গেল, ওমা? ধাক্কা লাগল সামনে বসা এক যুবকের পায়ে। দীপা দুটো কথা বলতেই বাবার বয়সী একজন বলে উঠল ছেড়ে দাও না। একটু লাগতেই পারে, তাতে কী এমন হয়েছে? দীপার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। একজন বাবার বয়সী মানুষ তিনি, প্রতিবাদ না করে অন্যায়ের পক্ষে কথা বলছেন! এই যে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা অন্যায়ের পক্ষে কথা বলা একটু একটু করে নারী নিপীড়নের দরজা খুলে দেয়।

 

বর্তমানে গণপরিবহন এবং শপিংমলে নারীদের হেনস্তার বিষয়টিকে ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। ঢাকায় কর্মজীবী অনেক নারী রয়েছেন, যাদের প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যেতে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। গণপরিবহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদিন নানা রকম হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। যাত্রীর চাপ বেড়ে গেলে নারীদের বাসে না নেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গণপরিবহনে নারীদের জন্য আসন নির্ধারিত থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা সেই সুবিধাটা পাচ্ছে না।

রাজধানীর অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, মিডিয়া হাউস, হাসপাতালে যেসব নারী কাজ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশ কোর্সে যারা পড়েন, তাদের প্রায় সময় রাতে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। কোনো কোনো বাস কন্ডাক্টর যাত্রীর চাপের কারণে নির্ধারিত আসন থাকা সত্ত্বেও সে সময় নারী যাত্রীদের বাসে তুলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে থাকেন।

রাজধানীতে ঘটে যাওয়া কয়েক বছর আগেরই ঘটনা, গণপরিবহনের ভেতরে যৌন হয়রানি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী বাড্ডা লিংক রোড থেকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে নিজের ক্যাম্পাসে যেতে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি পথে পথে যাত্রী নামালেও নতুন করে কোনো যাত্রী তোলেনি। একসময় সেটি প্রগতি সরণিতে গেলে যাত্রীশূন্য হয়ে যায়। তখন বাসের হেলপার দরজা আটকে ছাত্রীর পাশে বসে তাকে টেনেহিঁচড়ে পেছনের সিটের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রী জোর করে বাস থেকে নামতে চাইলে সেটি দ্রুত চলতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটি চিৎকার শুরু করলে চালক বাসটি থামায়। তখন ওই ছাত্রী বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে।

ঘটনার শিকার ছাত্রী বিষয়টি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে জানালে শিক্ষার্থীরা বাসের চালক-হেলপারকে গ্রেপ্তারে আন্দোলন শুরু করেন। তারা তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস আটকে রাখেন। ওই ঘটনায় ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় মামলাও করা হয় এবং পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাসের চালক, হেলপার এবং কন্ডাক্টরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আবার নিউমার্কেট থানা এলাকার চাঁদনি চক মার্কেটে এক দল নারীকে দোকানিরা নিপীড়ন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে সম্পর্কিত খবরও প্রকাশিত হয়। মার্কেটটির সামনে জনসমক্ষেই এমন ঘটনা ঘটেছে দাবি করে ভুক্তভোগী এক নারী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন এবং সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা হয় এবং তারপর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিš‘ প্রতিদিনই এ রকম ঘটনা কমবেশি কোথাও না কোথাও ঘটছে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রাদেহ ও মননারীসুস্থ মনস্বাস্থ্য

মেনোপজ এবং মনের যত্ন

করেছে Suraiya Naznin জানুয়ারী ৪, ২০২৩

সাবিরা ইসলাম-

একজন কিশোরী যখন পিরিয়ড জীবন শুরু করে, তখন তার ভেতরে প্রথম প্রথম কিছু অস্বস্তি কাজ করে। সেটা মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই হতে পারে। একইভাবে মেনোপজ শুরু হলেও সে নতুন কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। তবে সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু মানসিক প্রস্তুতির।

 

 

কথায় আছে, যার শুরু আছে, এর শেষও আছে। এমনকি একজন মানুষ জন্ম নেওয়ার মাধ্যমে যে জীবনযাত্রা শুরু করে, মৃত্যুর মাধ্যমে সে যাত্রা শেষ হয়। এমনিভাবে বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি, যা কিছু চলমান সবকিছু একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে থেমে যায়। থেমে যেতে হয়। কারণ, নতুন করে অন্য কাউকে শুরু করার সুযোগ যে দিতে হবে। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নারীর জীবনপ্রক্রিয়ায় তেমনই একটি বিষয়। একজন নারীর কিশোরী বয়সে মাসিক ঋতুস্্রবা বা রজঃ¯্রাবের মাধ্যমে জীবনের নতুন ও অর্থবহ একটি অধ্যায় শুরু করে। এর সহজ বাংলা বা প্রচলিত, পরিচিত শব্দ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড। একজন কিশোরীর মাসিক শুরু হওয়া মানে সে পরিপূর্ণ নারী জীবনে প্রবেশ করল। সে মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এটি অনেক বড় একটি অর্জন।

 

বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া যে আমি সেই নারী, যে এই পৃথিবীতে আরেকজন মানবজাতিকে নিয়ে আসার সক্ষমতা অর্জন করেছি। আগে এসব বিষয়কে মনে করা হতো গোপনীয় বিষয়। লোকসমক্ষে ঋতু¯্রাব বা মাসিক বা পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা করা ছিল লজ্জার। এখন অনেকটাই কেটে গেছে। কারণ, নেট দুনিয়ায় প্রবেশ করলে এসব বিষয়ে নানারকম আর্টিকেল অনায়াসে সামনে চলে আসে। আবার ছোট ছোট নাটিকা বা প্রামাণ্যচিত্র তৈরিকরে সামাজিক যে কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা, তা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি নাটিকায় দেখা গেছে, মেয়ের প্রথম মাসিকের দিন মা-বাবা এবং বড় বোন কেক কেটে তা উদ্্যাপন করছে। মেয়েটিকে ঘুম থেকে ডেকে এনে কেক কাটতে বলায় তাকে যখন এর কারণ জানানো হয়, তখন মেয়েটি বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়ে। এটি অবশ্যই একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তবে মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতোএরকম একটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া কিশোরীটি পরিবারের সামনে সহজ হবে এবং তার সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। মনের ভীতি কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হবে। এটি যে আতঙ্কের কোনো বিষয় নয়, তা বুঝতে এবং গ্রহণ করতে সে সহজেই সক্ষম হবে।

 

রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ হলো মাসিক বা পিরিয়ড জীবনের সমাপ্তি। একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর নারীর আর সন্তান জন্মদানের প্রয়োজন পড়ে না। তখন এটি চলমান থাকা অস্বস্তিকর। পিরিয়ড একজন নারীর জন্য আশীর্বাদ। কারণ, সে তখন শুধু মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে, তা নয়। বরং শারীরিক অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি পায়। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হওয়ার পর ঋতু¯্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। ৪৯ থেকে ৫২ বছর বয়সের মধ্যেই এটি হয়ে থাকে।তবে শারীরিক কোনো জটিলতার কারণে এই বয়সসীমার এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে খুব স্বাভাবিকভাবে নারীদের একবছর ধরে রজঃস্রাব বন্ধ থাকলে চিকিৎসকেরা এটাকে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বলেন। এসময় ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম হ্রাস পায় বা বন্ধ হয়ে যায়।

 

বিশ্বের সব দেশে মেনোপজের সময় এক রকম নয়। পশ্চিমাবিশ্বে রজঃনিবৃত্তির বয়স ৪০ থেকে ৬১ বছর এবং সর্বশেষ রজঃ¯্রাবের গড় বয়স ৫১ বছর। অস্ট্রেলিয়ায় প্রাকৃতিক রজঃনিবৃত্তির গড় বয়স ৫১.৭ বছর। ভারত ও ফিলিপাইনে গড়ে ৪৪ বছর বয়সে মেনোপজ হয়। রজঃনিবৃত্তির বয়স প্রথম রজঃস্রাব বা সর্বশেষ গর্ভধারণের ওপর নির্ভর করে না। এ ছাড়া এর সঙ্গে গর্ভধারণ সংখ্যা, সন্তানকে দুগ্ধদান, জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন, আর্থসামাজিক অবস্থা, জাতিগত পরিচয়, উচ্চতা বা ওজনের কোনো সম্পর্ক নেই।

একজন কিশোরী যখন পিরিয়ড জীবন শুরু করে, তখন তার ভেতরে প্রথম প্রথম কিছু অস্বস্তি কাজ করে। সেটা মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই হতে পারে। একইভাবে মেনোপজ শুরু হলেও সে নতুন কিছুঅভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। তবে সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু মানসিক প্রস্তুতির। যেমন আমরা জানি, মা হতে গেলে একজন নারীকে দীর্ঘ নয় মাসের একটি ধীর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সে সময় নারীটির মানসিক প্রস্তুতি একটি সুস্থ মা ও শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। পিরিয়ড বন্ধও এরকম একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। তখনঅনিয়মিত মাসিক হতে থাকে। অনিয়মিত বলতে বোঝানো হচ্ছে যে এটা অল্প বা বেশি সময় ধরে চলতে পারে অথবা হালকা বা বেশি পরিমাণ রক্তপাত হতে পারে। এই সময়টায়নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় যেমন একধরনের গরম আভা বা উষ্ণতা অনুভব করে, যা দেহ থেকে মুখম-লের দিকে ছড়িয়ে যায়, যা হট ফ্লাশ (যড়ঃ ভষঁংযবং) নামে পরিচিত। এটা ৩০ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর সঙ্গে কাঁপুনি, রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম, ত্বক লালচে হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ থাকতে পারে। হট ফ্লাশ প্রায় ৭৫% মহিলার ক্ষেত্রে ঘটে এবং প্রায়ই এক বা দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় যোনিপথের শুষ্কতা, নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্নরকম মানসিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

 

Sad woman sitting on a sofa in the living room

তবে সবার ক্ষেত্রে এ লক্ষণ সমানভাবে প্রকাশ পায় না। নারীর পারিপাশির্^ক পরিবেশ এবং পরিবারের সদস্যের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর এসবের প্রভাব নির্ভর করে। যৌনমিলনে ব্যথা অনুভব করা, যোনিপথের ঝিল্লি পাতলা হওয়া ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া, প্রস্্রাব আটকে রাখার অক্ষমতা, ত্বকের শুষ্কতা, ওজন বৃদ্ধি, স্তনের আকার বৃদ্ধি ও ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি লক্ষণ এসময় প্রকাশ পেতে পারে।

 

মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, মনোযোগহীনতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি। রজঃনিবৃত্তির ফলে নারীদের অ্যাথেরোসক্লেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অস্টিওপোরোসিস বা অস্থিক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। তবে ওজন, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিত্যাগ করার মাধ্যমে এসব রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। মেনোপজের পর নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার কথা ভেবে অনেক নারীই আগাম মানসিক চাপে পড়ে। পরিবারের অনিবার্য একজন সদস্য হয়ে এধরনের শারীরিক, মানসিক চাপ সামলে স্বাভাবিক জীবন কীভাবে যাপন করা সম্ভব বা পরিবারের অন্যান্য সদস্য যারা, তারা এই সময়ে তার শারীরিক, মানসিক পরিবর্তনকে কতটা সহজভাবে গ্রহণ করবে বা তার আচরণগত পরিবর্তনকে কতটা স্বাভাবিকভাবে নেবে এ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই পরিবারের সদস্যদের মেনোপজ সম্পর্কে একটুধারণা দিয়ে রাখলে পরিবর্তিত সময়কে যাপন করা সহজ হবে।

 

মেনোপজ হোক বা না হোক, প্রতিটি মানুষই জীবনের নানা স্তরে নানারকম শারীরিক ও মানসিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করে চলে। একজন মানুষের জীবনে জ¦র, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা এগুলো খুব স্বাভাবিক ও সাধারণ অসুস্থতা। মেনোপজ-পরবর্তী নানা উপসর্গও তেমনই। এটিকে খুব সিরিয়াস কিছু ভেবে আগে থেকেই অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বরং মেনোপজের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন পিরিয়ড টাইম পার করতে করতে একজন নারীর মনে একধরনের মানসিক অবসাদ চলে আসে। তখন তিনি এর থেকে মুক্তি কামনা করেন। প্রতি মাসে পিরিয়ডের জন্য আলাদা মনোযোগ দিতে হয় না বলে একধরনের স্বস্তি পান। যেকোনো মুভমেন্টের জন্য নিজেকে তৈরি বলে মনে করেন। এতে মানসিক স্বস্তি তৈরি হয়। রাতের ঘুম ভালো হয়। পাশ ফিরতে গিয়ে কোনো অস্বস্তি কাজ করে না। শরীরে বাড়তি কোনো কাপড় বা প্যাড ব্যবহার করতে হয় না বলেও অন্যধরনের স্বস্তি মেলে।

 

আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী রজঃনিবৃত্তিকে ভয় পায়। এক ধরনের শঙ্কায় ভোগে। কারণ, বিষয়টি নিয়ে সব সময়ই একধরনের রাখঢাক চলে। অনেকে মনে করে, রজঃনিবৃত্তি মানে তার সোনালি জীবনের সমাপ্তি। বিষয়টি মোটেও তা নয়। বরং এই সময়ে অনেকেরই সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। দীর্ঘ সংসার জীবন থেকেও অধিকাংশ নারী এই সময়ে অবসর জীবনযাপন করেন। তারা ধর্মকর্মে মন দেন। মূলত এই সময়টিই নিজের মতো করে কাটানোর সময়ই”ছা হলেই প্ল্যান করে কোথাও বেড়াতে যাওয়া যায়। দেশ-বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া যায়। সমবয়সী নারী যারা, তাদের নিয়ে আড্ডায় কাটানো যায়। সমাজসেবামূলক কর্মকা-ে আরও বেশি সংযুক্ত হওয়া যায়।

 

 

শারীরিক সমস্যার যে বিষয়গুলোকে অনেক নারী ভয় পায়, তা একেবারেই অমূলক। কারণ, মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক নানা পরিবর্তন আসে। এছাড়া জীবনের নানা ধাপে নানা কারণে নানা রোগে ভুগি। এটিও তেমন। এতদিনের দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলতে থাকা শরীর নতুন অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবেই। সেজন্য শরীরকেও একটু সময় দিতে হবে। তবে বিষয়টি যতটা না শরীরের, তার চেয়ে বেশি মনের। কারণ, মন যদি নিজেকে প্র¯‘ত রাখে, তবে যেকোনো অবস্থা মানিয়ে চলা সহজহয়। এ ব্যাপারে পরিবারকেও সহযোগিতা করতে হবে। কারণ, নতুন এই জীবনধারা নারীর জন্য আরেকটি বিশেষ অধ্যায়। এ সময় শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনজনিত যেসব আচরণ অস্বাভাবিক মনে হবে, তা পরিবারের সদস্যদের সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। বুঝতে হবে এই নারীটিকে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হতে সময় দিতে হবে।এ সময়ে নারীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া জরুরি। আসলে পুরো বিষয়টি একেবারেই মানসিক। যে নারী যত মানসিকভাবে শক্ত থাকবে, নতুন জীবনকে মানিয়ে নেওয়া ততই সহজ হবে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিকান পেতে রইগ্রুমিংজীবননারীপ্যারেন্টিংরোদসীর পছন্দসংগ্রামসমস্যাসুস্থ মন

একলা চলো রে

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৩, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

মাতৃত্ব এমন এক অনুভূতি যার কোন তুলনা হয়না। কিন্তু মাতৃত্বের যাত্রা সবার জন্য সহজবোধ্য হয়না, আর তা যদি হয় সিঙ্গেল মাদারহুড; তখন পরিস্থিতি তো আরও কঠিন মনে হতে পারে। এমন অনেক দ্বন্দ্ব এবং চাপ রয়েছে যা একক মায়েদের মধ্য দিয়ে যায় যা অন্য পরিবারগুলো সরাসরি অনুভব করতে পারেনা। একক মায়েদের শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা অবিশ্বাস্যভাবে প্রশংসনীয়, তবে এর পেছনে তাদের ক্লান্তি অনুভব করাও বোধগম্য।

সুখী সমৃদ্ধময় একটি পারিবারিক জীবন কে না চায়। কিন্তু অনেক সময় বাস্তবতার খাতিরে আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় যা কারোরই কাম্য হতে পারেনা। সিঙ্গেল প্যারেন্টস এমনই এক বিষয়। একক অভিভাবক হওয়ার পেছনে অনেক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদ, পরিত্যাগ, বিধবা হওয়া, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, একক ব্যক্তি দ্বারা সন্তান জন্মাদান বা দত্তক নেয়া। সঙ্গীর সাথে অভিভাবকত্ব ইতিমধ্যেই অপ্রতিরোধ্য এবং চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সেখানে একক মা হওয়া সম্পূর্ণ অন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। তাদের প্রতিনিয়ত জীবনে বেশকিছু অপ্রতিরোধ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যেমনঃ

আর্থিক চ্যালেঞ্জ

সন্তানের জীবনে একমাত্র উপার্জনকারী এবং যত্নশীল হওয়া অবিশ্বাস্যভাবে চ্যালেঞ্জিং। একজন প্রাপ্তবয়স্ককে একাই ভার বহন করতে হয় যা সাধারণত দুজন বহন করে। এতে করে বিশাল এক দায়িত্ব এসে পড়ে। এই কষ্ট শুধুমাত্র আর্থিক নয়, এটি একটি মানসিক বোঝাও বটে এবং মা প্রায়ই তার বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট না দেওয়ার জন্য নিজেকে দোষী বোধ করেন।

মানসিক চ্যালেঞ্জ

বাস্তবতা হলো একক মা হওয়া মানে একাকী হয়ে যাওয়া। নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা শেয়ার করার মতো কোন সঙ্গী থাকেনা। উদ্বেগ, স্ট্রেস, আশাহীন বা মূল্যহীন বোধের মতো মানসিক স্বাস্থ্যের লড়াই একক মায়েদের জন্য সাধারণ।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

একটি একক মায়ের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অনেক বড় এক প্রতিবন্ধকতার কাজ করে। সিঙ্গেল মাদারহুডের সাথে সাথে সামাজিকভাবে যে অপবাদ আসে তা পুরানো এবং সেকেলে কিন্তু কোনভাবেই তা দূর করা যাবেনা। সমাজ এখনও মনে করে একজন একক বাবা শান্ত ও সাহসী এবং একক মা দরিদ্র ও ক্লান্ত।

সিদ্ধান্তের চাপ

অভিভাবকত্ব দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে এই দায়িত্ব আরও বেশি বেড়ে যায়। একজন সঙ্গীর সমর্থন ছাড়া একটি সন্তানের জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একক মায়ের উপর সবকিছুই ছেড়ে দেয়া হয়। এটি অবিশ্বাস্যভাবে ভীতিজনক এবং প্রচুর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

অপরাধবোধ

সমস্ত একক মায়ের সংগ্রামের মধ্যে, এটির বিরুদ্ধে লড়াই করা সবচেয়ে কঠিন হতে পারে। তাদের মনে অপরাধবোধ আসার যেন শেষ নেই। নিজে যে আর্থিক জিনিসগুলো সরবরাহ করতে পারবেনা সে সম্পর্কে অপরাধবোধ, বাচ্চাদের থেকে দূরে কাটানো সময় সম্পর্কে অপরাধবোধ, পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যেগুলো করতে পারা যায়না সে সম্পর্কে অপরাধবোধ। সন্তানরা একক পিতামাতার সন্তান হিসেবে যেভাবেই বেড়ে উঠুক না কেন তা তাদের উপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিজেদের দায়ী বোধ মনে হয়।

একক মাতৃত্ব সহজ করার উপায়

একটি শিশুকে নিজের মতো করে বড় করা সহজ কাজ নয়, তবে তুমি একা নও। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ব্যক্তি হিসেবে উন্নতি করতে এবং মাতৃত্ব সহজ করার কিছু উপায় দেয়া হলঃ

-তুমি তোমার ধারণার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। একজন সঙ্গী ছাড়া সবচেয়ে কঠিন কাজ তুমি একাই করতে পারছো। যখন ক্লান্তি ও হতাশা মনে ধরে যাবে তখন নিজেকে ব্যর্থ মনে হবে। কিন্তু সেখান থেকে একবার পাশ কাটিয়ে উঠে যখন দেখবে দিন শেষে বাচ্চারা সুস্থ থাকে, সুখী হয় তাহলে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছুতেই নেই।

-মাতৃত্বের কঠিন সময়ে পরিবার এবং বন্ধুদের উপর নির্ভর করতে সক্ষম হওয়া তোমার সুস্থতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। সাহায্য প্রয়োজন তা স্বীকার করা শক্তি প্রমাণ করে, দূর্বলতা নয়।

-নিজের জন্য সময় বের করা। যদিও এটা অর্জন করা কঠিন হতে পারে কিন্তু নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করা বার্নআউট এবং ক্লান্তি এড়াতে প্রয়োজনীয়। নিয়মিতভাবে মাইন্ডফুলনেস ভিত্তিক স্ব-যত্ন অভ্যাস অনুশীলন করতে হবে। এটি শারীরিক পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

-কীভাবে একজন একক মা সুখী হতে পারে? নিজেকে জীবনে অনুপ্রাণিত রাখতে নিজের জন্য স্মার্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যদিও তোমার সন্তানের উপর ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে তোমার সমগ্র জীবনকে কেন্দ্র করে তাদের চারপাশে থাকতে পারবেনা। তাই নিজের জন্যও কিছু ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

-একাকীত্ব বোধ এমন এক জিনিস যা অনেকের ভিড়ে থেকেও নিজেকে নিঃসঙ্গ বোধ করিয়ে দেয়। এই একাকীত্ব বোধের সাথে লড়াই করতে হবে। ছবি আঁকা, বই পড়া, গান শোনা বা বন্ধুদের নিয়ে প্রিয় কোন মুভি দেখতে যাওয়ার মতো কাজ করা যেতে পারে।

তুমি তোমার জীবনের স্থপতি। মনে রাখবে প্রতিটি দিন নতুন করে তৈরি হয়। নিজেকে বিশ্বাস ও সম্মান করা তোমার সন্তানের জন্য একটি চরিত্র গঠনের পরিবেশ তৈরী করতে সাহায্য করে।

-ছবি সংগৃহীত

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
আমরা গড়িতুমিই রোদসীনারীরোদসীর পছন্দসম্ভাবনাসাফল্য

আলোয় ভুবন ভরা

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ২৯, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘুচিয়ে অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। গতকাল উদ্বোধন (২৮ ডিসেম্বর) হয়ে গেলো দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের। সাথে সংযুক্ত হয়েছিলেন ছয় নারী চালক। এ স্বপ্নযাত্রায় চালকের আসনে আসীন হয়ে মরিয়ম আফিজা দেশের ইতিহাসের গর্বিত অংশ হিসেবে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাথে নিয়ে মরিয়ম আফিজার পরিচালনায় মেট্রোরেল উড়ে গিয়েছে আগারগাঁওয়ের দিকে। কে এই মরিয়ম আফিজা? লক্ষীপুরের মেয়ে আফিজা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে গতানুগতিক ধারায়  ক্যারিয়ারকে পরিচালিত না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানায় নিজেকে নিয়ে গেছেন। অনেকটা নিজ আগ্রহ বশতই এই পদে আবেদন করে গত বছরের ২ নভেম্বর পান ট্রেন অপারেটর হিসেবে নিয়োগ। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের পর দেশের এই মেট্রোযুগে প্রবেশে নিজেকে শরীক করতে পেরেছেন।

শুধু মরিয়ম আফিজাই নন, এমন অনেকেই আছেন যারা সমাজের প্রচলিত ট্যাবু ভেঙে সামনে এগিয়ে গিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় উবার চালক লিউজার কথা। আমাদের দেশে নারী উবার চালক?  তার উপর আবার রাতে-বিরেতে বের হওয়া? অত চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। কিন্তু সমাজের সব বাধা-বিপত্তিকে পাশে ঠেলে তিনি সামনেই এগিয়ে গিয়েছেন। গল্পটি আবার হতে পারে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ নেয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী বডিবিল্ডার মাকসুদা আক্তারের। কোন মেয়ে বডি বিল্ডিং করছে এমন দৃশ্য তো ভাবাই যায়না। কিন্তু সকল কটুবাক্যকে হটিয়ে আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বুকে দেশের পতাকা উড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি।

এবছরই সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশীপে নারী ফুটবল দল দেখিয়ে দিয়েছে তাদের ক্ষমতা। নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে ইতিহাস রচনা করেছেন বাংলার এই বাঘিনীদের দল। এই শিরোপা জেতা তাদের জন্য অতটা সুগম ছিলোনা। ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই চ্যাম্পিয়নশিপে একবারই ফাইনাল খেলার সুযগ থাকলেও জয়ের স্বাদ নিতে ব্যর্থ হয় তারা। পরবর্তীতে ২০২২ সালে এসে সেই আকাঙ্ক্ষিত জয় আনতে সক্ষম হয়।

নারীদের এমন শত শত সাফল্যগাঁথা গল্পও রয়েছে। যার পদে পদে থাকে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু সব কিছু জয় করে তারা সামনে এগিয়ে যেতে পেরেছে। যে কোন সেক্টরেই হোক না কেন, সহযোগিতা, অনুকুল পরিবেশ এবং ইতিবাচক মনোভাব থাকলে নারীরাও এগিয়ে যেতে পারে। নারীর অধিকার মানে অন্যদের দাবিয়ে রেখে তাদেরকে উপরে তোলা নয়, বরং তাদেরকেও দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়া।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.অনুসঙ্গআয়নাঘরকেনাকাটানারীবসন ভূষণরূপ ও ফ্যাশনরোদসীর পছন্দ

হাই হিল  জুতা হোক আরো আরামদায়ক

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ১৯, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

বলা হয়, ‘গুড শুজ টেক ইউ গুড প্লেসেস’। যদি তোমার চুল সঠিকভাবে করা হয় এবং ভালো জুতা পরে থাকো তবে তুমি যে কোথাও যাওয়ার জন্যই প্রস্তুত। চলাচল এবং সারাদিনের জন্য কম্ফোর্টেবল থাকতে সু বা স্লিপার হলো আদর্শ। কিন্তু আজকাল ফ্যাশন সচেতন নারীদের কাছে ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে সমাদৃত পাচ্ছে হাই হিলের জুতা। যদিও অধিকাংশ হাই হিল অস্বস্তিকর। এমনকি হোক সেটা তোমার বেস্ট, সবচেয়ে বিলাসবহুল জোড়া; কয়েক ঘন্টা হাঁটার পরে এটি পায়ে ব্যথার সৃষ্টি করবেই। অবশ্যই বিউটি ইজ পেইন এবং আমরা ফ্যাশনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করি কিন্তু প্রতিদিন হাই হিল পরলে তোমার পায়ের কিছু গুরুতর সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও  বড় কোন ইভেন্ট হোক, কিংবা যেকোন প্রোগ্রাম; আমাদের সাজ পোশাকের সাথে একজোড়া হাই হিল চাইই চাই। এই হাই হিল জুতাই কিভাবে আরো আরামদায়কভাবে আমরা পড়তে পারি সে ব্যাপারে কিছু টিপস শেয়ার করছি।

সঠিক আকারের জুতা নির্বাচন

তুমি যদি তোমার হিলগুলোকে আরো আরামদায়ক করার উপায় খুঁজো, তবে প্রথম পদক্ষেপ হবে সঠিক আকারের জুতা নির্বাচন করা। সঠিক মাপের জুতা পরা তোমার পা কে খুশি রাখার চাবিকাঠি। পায়ের আঙুলের সামনে তোমার হিলের এক চতুর্থাংশ থেকে দেড় ইঞ্চি জায়গা থাকা উচিৎ। আমাদের অনেকের একটি পা অন্যটির চেয়ে সামান্য বড়, তাই জুতা বড় পায়ের সাথে মানাসই করা গুরুত্বপূর্ন। জুতা ট্রায়াল দেয়ার সময় যদি দেখো যে, তোমার পায়ের আঙুলগুলো কয়েক মিনিট পরে কুঁচকে যাচ্ছে, তাহলে অর্ধেক সাইজ উপরে যেতে দ্বিধা করোনা।

উচ্চতা কমানো

তুমি যদি হাই হিল লাভার হয়ে থাকো, তবে জেনে রেখো ৫ ইঞ্চি উচ্চতার জুতা তোমার পায়ের সাথে সর্বনাশ খেলতে চলছে। জুতার হাইট ৩ ইঞ্চির উপরে যায়, তা তোমার হাঁটার বায়োমেকানিক্স এবং ভারসাম্য পরিবর্তন করে দিবে। যদি তোমার শখের প্রিয় হিল জোড়া ৩ ইঞ্চির উপরে হয়, চিন্তার কোন কারণ নেই। জুতা মেরামতের দোকানগুলো থেকে জুতার প্রকারের উপর নির্ভর করে হিলের উচ্চতা কমিয়ে নিতে পারো।

প্ল্যাটফর্ম জুতা নির্বাচন

কীভাবে হিল আরো আরামদায়ক করা যায় তার আরেকটি পদক্ষেপ হলো প্ল্যাটফর্ম জুতার নির্বাচন। জুতার আকৃতি আরামের স্তরকে কতটা প্রভাবিত করে তার পারফেক্ট উদাহরণ হল এই জুতা কারণ, তারা একই উচ্চতা অফার করে। এতে তোমার হিল ও তোমার পায়ের বলের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দেয় এবং পায়ের আঙুলগুলোকে সমতল্ভাবে শুয়ে থাকতে দেয়, যার দরুণ হিল পরার সাথে যুক্ত অনেক ব্যথার উপশম করে।

হাঁটার দিকে মনোনিবেশ করা

এটা অদ্ভুতুড়ে শোনালেও, হিল পরে হাঁটা সত্যিই একটি বিজ্ঞান। পায়ের সাথে মানাসই জুতা কিনলেই হলোনা, তা পরে তুমি কিভাবে হাঁটছো সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সর্বাধিক আরাম এবং ব্যথা কমানোর জন্য হিল পরে হাঁটার জন্য এখানে ৩টি পদক্ষেপ রয়েছেঃ

-হিল-টু-টো এই ধারাবাহিকতায় স্টেপ ফেলতে হবে। সঠিকভাবে হিল পরে হাঁটার গতি হলো তোমার গোড়ালিকে প্রথমে নিচে রাখা এবং তারপরে পায়ের আঙুলগুলো নিচে রাখার জন্য এগিয়ে যাওয়া। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, হাই হিল পরে হাঁটার গতি ফ্ল্যাট পরা থেকে আলাদা। ফ্ল্যাট পরিধান করে হাঁটার সময় ভারসাম্য হারানোর ভয় থাকেনা।

-হিল দিয়ে হাঁটার একটি কৌশল হল ছোট ছোট পদক্ষেপ নেয়া। কেন? কারণ হিল পরা তোমার চলার পথকে ছোট করে। এই ছোট পদক্ষেপের মাদ্যমে, তুমি তোমার ভারসাম্যের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে। এর অর্থ হল নিচে পড়ে যাওয়া, ছিটকে পড়া এবং পায়ে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়।

-হিল পরে হাঁটার ভঙ্গির মাঝেও পরিবর্তন আসে। ঝুঁকে হাঁটা নয় বরং কাঁধ সোজা রেখে মাথা উঁচু করে রাখো। হাঁটার সময় শুধু একটি স্ট্রিং কল্পনা করো যা তোমার মেরুদন্ডের গোড়া থেকে মাথার ডগা পর্যন্ত সংযুক্ত রয়েছে। সেই স্ট্রিংটি সোজা রেখে হাঁটো, দেখবে কিছুক্ষণের মাঝেই তুমি পেশাদারের মতো হাঁটছ।

জেল অথবা প্যাডের ব্যবহার

পায়ের ব্যথার উপশম করতে জুতায় স্টিকি জেল বা প্যাডিং যুক্ত করা আরেকটি ভালো পদক্ষেপ। তবে মনে রাখবে যে, যেকোন জুতার সাথে প্যাড যুক্ত করলে তা জুতাটিকে আরো শক্ত করে তুলবে। তাই তখনও তুমি জুতা পরে আরাম পাচ্ছো তার নিশ্চয়তা করতে হবে। তোমার জুতাগুলো যদি সাইজে একটু বড় হয়ে থাকে তবেই কেবল প্যাডটি পুরো ঢোকাতে হবে, অন্যথায় এটি পায়ের জায়গায় ক্র্যাম্প করবে।

পায়ের আঙ্গুলে টেপ ব্যবহার

ব্যথা উপশম কমানোর নিমিত্তে জুতা পরার আগে পায়ের আঙ্গুলে টেপ পরা যেতে পারে। এটা কিছুটা অদ্ভূত শোনালেও, ২০১৭ সালে পডিয়াট্রিস্ট জোয়ান ওলোফ ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে এই হ্যাক কাজ করে। মেটাটারসাল বা পায়ের পাঁচটি লম্বা হাড়, যেখানে পায়ের বলের সাথে শেষ হয়; হিল জুতা ফ্ল্যাট জুতার তুলনায় হাড়ের প্রান্তে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, অনেকে এমন অনেক ব্যথা অনুভব করে যা ছোট ছোট ইন্টারমেটাটারসেল স্নায়ু থেকে পায়ের হাড়ের মধ্যে চলে যায়। এবং আমরা যখন হিল পরি তখন এই স্নায়ুগুলো ডিস্টার্ব হয় এবং প্রসারিত হয়ে যায়। এটি একটি বার্সা স্নায়ুকে ঘিরে ফেলে এবং প্রদাহজনক টিস্যু দিয়ে পূর্ণ করে, যার ফলে ব্যথা হয়। সবচেয়ে সাধারণ স্নায়ু যা বিরক্ত হয় তা হল তৃতীয় এবং চতুর্থ পায়ের আঙুল। এই কারণে জুতা পরিধানের আগে তৃতীয় এবং চতুর্থ আঙ্গুলে টেপ দিয়ে রাখলে তা স্নায়ু এবং স্ফীত টিস্যু থেকে কিছুটা চাপ সরাতে পারে।

নতুন জুতা ট্রায়াল দিয়ে রাখা

আসন্ন কোন ইভেন্টের জন্য একদম নতুন এক জোড়া হিল কিনে থাকলে, তা আগে থেকেই ব্যবহার করে রাখতে হবে। সম্ভব না হলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা তা পরে চারপাশে হাঁটতে পার। এতে করে কোন সম্ভাব্য ব্যথার পয়েন্ট গুলো সনাক্ত করতে সহায়তা করবে এবং জুতাগুলো পায়ের আকারের সাথে এডজাস্ট হয়ে উঠবে। এছাড়াও আগে থেকেই পায়ে দিয়ে রাখলে জুতার চারপাশের এরিয়া কিছুটা প্রসারিত হবে।

তাদের কম পরিধান

এই টিপসটি সবচেয়ে সহজ এবং যুক্তিযুক্ত। তুমি যখন কোন প্রোগ্রামে যাচ্ছো এবং সেখানে পরার জন্য পারফেক্ট জুতা ম্যাচ করে নিয়েছো, মূল ইভেন্টে না পোঁছানো পর্যন্ত সেগুলো পরবেনা। পায়ের বিরতি দিতে এবং পরবর্তীতে আরামদায়কভাবে চলাচলের জন্য এই কাজটি করতে পারো।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গঅন্দরের ডায়েরিআয়নাঘরগ্রুমিংনারীরূপ ও ফ্যাশনরোদসীর পছন্দসচেতনতা

বিয়ের আগে ত্বকের যত্ন

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ১৫, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

যে কোন মানুষের জীবনে বিয়ের দিন হলো সবচেয়ে স্মরনীয় মুহূর্ত। এই বড় দিনের প্রস্তুতির জন্য মাসে পর মাস চলে বিভিন্ন প্ল্যান প্রোগ্রামের। এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে নিজেকে সেরা দেখানোর সাজ পোশাক ছাড়াও ত্বকের যত্নেও সক্রিয় থাকতে হবে। বিয়ের দিনে তোমার ত্বক তোমার সামগ্রিক চেহারার একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। তুমি যা খাও, সেই সাথে ত্বকে যা এপ্ল্যাই করো সবকিছুই কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে পার্থক্য করতে পারে। তাই নিজেকে গ্লোয়িং ও পরিপাটি দেখানোর জন্য বিয়ের অন্তত মাসখানেক আগে থেকেই কিছু নির্দেশনা ফলো করা উচিৎ।

প্রোপার ডায়েট ফলো করা

ত্বকের যত্ন বলতে স্কিনকে ফ্ললেস করার জন্য শুধুমাত্র বিভিন্ন পন্যের ব্যবহারকে বুঝায় না। তোমার বড় দিনে একেবারে ফিট এবং সুন্দর দেখাতে এর প্রথম ধাপ হলো উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা। তুমি যা খাও তাই তোমার মুখে প্রতিফলিত হয়। অতএব, একটি সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিৎ। ডায়েটেশিয়ানরা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের ভারসাম্য সহকারে পুষ্টিকর স্বাস্থ্যকর বাসায় তৈরি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

নিজেকে হাইড্রেট রাখা

আরেকটি স্কিনকেয়ারের নিয়ম সম্পর্কে কেউ অবধি আজ শুনে না এমন পাওয়া যাবেনা আর তা হল প্রচুর পানি পান করা। পানি পান করার গুরুত্ব কেমন তাতো আর বলার অপেক্ষা থাকেনা। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩ লিটার পানি পানের নিশ্চয়তা করতে হবে।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

ত্বক যদি বেশি সেনসেটিভ হয়ে থাকে এমতাবস্থায় অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। অনুষ্ঠানের জন্য যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে ত্বকের যেকোন সমস্যার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ভালো হবে। তিনি তোমাকে উপযুক্ত পরামর্শ দিবেন এবং একটি সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন সেট করতেও সাহায্য করবেন।

শরীরচর্চা করা

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে যেকোন ধরনের শরীরচর্চা করা ভালো। এতে দেহ ও মন থাকবে প্রশান্ত ও সতেজ। যোগব্যায়ামও এই ক্ষেত্রে ভালোই কাজে দিবে। এতে রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে, দুশ্চিন্তা কমে যাবে এবং সেগুলো ত্বকের উপর ভালো প্রভাব পড়বে। এছাড়াও মুখের ত্বকের জন্য মুখের যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে। যা ত্বককে টানটান, লাবন্যময় এবং উজ্জ্বল করবে।

সানস্ক্রিনের ব্যবহার

বিয়ে উপলক্ষে কেনাকাটা সহ অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। কাজের প্রয়োজনে অনেক বারই ঘরের বাহিরে যেতে হয়। যখনই বাইরে যাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা মাস্ট। কী গরম, কী শীত সব ঋতুতেই এর ব্যবহার চাইই চাই। এটি শুধুমাত্র ত্বককে সুর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেনা বরং অন্যান্য ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকেও রক্ষা করা যা আমরা দেখতে পাইনা।

ফেসিয়াল করানো

হাতে সময় নিয়ে ফেসিয়াল করানো এটাই উপযুক্ত সময়। ফেসিয়ালগুলো ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে এবং এটিকে ময়েশ্চারাইজ রাখে। পার্লারে পেশাদার কারো কাছ থেকে নিজের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী সঠিক ফেসিয়েল বেছে নাও। এটি তোমাকে বিয়ের দিনে তাজা এবং উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করবে।

সিটিএম উপেক্ষা করা যাবেনা

সিটিএম অর্থাৎ ক্লিঞ্জিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং- এই প্রসেস স্কিনকেয়ার রুটিনে কখনোই উপেক্ষা করা যাবেনা। এর প্রত্যেকটি দৈনন্দিন ত্বকের যত্নে স্ব স্ব কাজে স্কিনকে উন্নত করে। ক্লিনজিং  স্কিনের উপরিভাগের ময়লা অপসারণ করে, টোনিং পরবর্তী ধাপের জন্য ত্বককে প্রিপেয়ার করে এবং ময়েশ্চারাইজিং এর ফলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে নরম, কোমল হতে সাহায্য করে।

এক্সফোলিয়েট

এক্সফোলিয়েটিং খুবই দরকার। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ত্বকের সমস্ত মৃত কোষ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে এবং পরিষ্কার, উজ্জ্বল এবং চকচকে ত্বকের উপহার দিবে। এক্সফোলিয়েটিং অ্যাক্ট তোমার ত্বককে কোমল থেকে কোমলতর করে তুলবে।

ফেসমাস্ক ব্যবহার

যদিও বাজারে আজকাল অনেক ধরনের ফেসমাস্ক পাওয়া যায় সেখান থেকে ত্বকের উপযুক্ত মাস্ক এনে ব্যবহার করতে পার। অথবা আমাদের বাসায় হাতের কাছে যা আছে, তা হতে পারে যে কোন ফল অথবা সামান্য বেসন, চালের গুঁড়া বা মধু যে কোন কিছু দিয়েই হ্যান্ডমেড মাস্ক বানিয়ে তা অ্যাপ্লাই করতে পারো। আর এগুলোর নিয়মিত ব্যবহারে তার রেজাল্ট দেখে নিজেই চমকে যাবে।

ম্যানিকিউর এবং পেডিকিউর

তোমার হাত এবং পা বাইরের আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত। হাত এবং পায়ের ত্বককে ময়েশ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করার জন্য প্রতিদিন এগুলো ধুয়ে, ময়েশ্চারাইজ এবং অন্যান্য লোশন প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বাড়িতে বসেও ম্যানিকিউর এবং পেডিকিউর করা যেতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম

স্কিন কেয়ারের আরেকটি নিয়ম যার ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়না তা হল সঠিক ঘুমের চক্র বজায় রাখা। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই দরকার তাও একটি নির্দিষ্ট রুটিন সময়ে। সঠিক এই ঘুমের চক্র শুধু তমার শরীরকে নিয়ন্ত্রিত করেনা বরং এটি কাজ করে যা সরাসরি ত্বককে প্রভাবিত করে।

মানসিক চাপ এড়ানো

বিয়ে এমন একটি বিষয় যা তোমার মানসিক অবস্থারও অনেক প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্ত মানসিক চাপ যা তোমার শরীর এবং মনকে ব্রেকআউট বা নিস্তেজ করে দেয়। তাই অযথা এই চাপ ঝেড়ে ফেলো। এক্ষেত্রে শরীর ও মনকে শান্ত করার জন্য এবং স্ট্রেস রিলিফ করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হল মেডিটেশন করা।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook