রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

রোমান্স

জীবনযাত্রারোদসীর পছন্দরোমান্সরোমান্স রসায়ন

মধুচন্দ্রিমায় বিয়ে

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২৩

বিয়ে মানেই নতুন স্বপ্ন। হাজার বছর ভালো থাকার ব্রত। তবে সেই ভালো থাকা, সুন্দর থাকা যদি হয় বিয়ের দিন থেকেই! বিয়ের দিন বর-কনের মনে থাকে নানা সংশয়। কিন্তু প্রকৃতি তা এক তুড়িতে উড়িয়ে দিতে পারে। যদি হয় স্বপ্নের জায়গায় বিয়ের স্থান নির্বাচন। লিখেছেন সায়মা ইসলাম।

অনেকেই ভাবে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং খরচসাপেক্ষ। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই ভয় পায় এ ধরনের পরিকল্পনা করতে। আবার রয়েছে কিছু ঝক্কিও। তবে একটু সময় নিয়ে, ভেবে পরিকল্পনা করলে যেতে হবে না বিদেশে; যা দেশেই সম্ভব। নতুন প্রজন্মের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং। শুধু তারকারা নয়, সাধারণ মানুষও এখন আত্মীয়স্বজন, জাঁকজমক ছেড়ে চাইছে সুন্দর কোনো লোকেশনে শুধু কাছের মানুষদের নিয়ে ছিমছাম পরিসরে বিয়ে করতে। তবে বর-কনের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে সেই লোকেশন ঠিক করতে।

বিচ ওয়েডিং

যদি সমুদ্রতটের একরাশ বালিয়াড়িতে সাজাতে চাও নিজের বিয়ের আসর, তবে অবশ্যই বেছে নিতে পারো নিজের দেশেরই সমুদ্রতট। তবে কক্সবাজার পর্যটকদের সমাগম বেশি হওয়ায় বিয়ের জন্য বেছে নেওয়া উচিত বছরের এমন একটা সময়, যখন পর্যটক সমাগম হয় কম। এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক কুয়াকাটা কিংবা অন্য কোথাও। পর্যটক সমাগম কম হওয়ায় বিছানো সমুদ্রতটের ফাঁকা জায়গাজুড়ে সাজাতে পারো বিয়ের আসর।

প্যালেস ওয়েডিং

বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় তারকারা এখন অনেকেই বিয়ের জন্য বেছে নিচ্ছেন রাজস্থান বা আগ্রার বিভিন্ন প্রাসাদ। পিছিয়ে নেই হায়দরাবাদের ফলকনামা প্যালেস হোটেলও। ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রাসাদকে পরিণত করা হয়েছে হোটেলে। যেখানে বিয়ের থিমও হয় রাজকীয়। অর্থাৎ, বিয়ের সাজ থেকে আবহ, খাবারের তালিকা সবকিছুতেই থাকবে রাজঐতিহ্যের ছোঁয়া। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার রাজবাড়ি, মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, ঝাড়গ্রাম প্রাসাদ (মেদিনীপুর),  ভুটান হাউস প্যালেসেও হতে পারে বিয়ের আসর।

মাউন্টেন ওয়েডিং

বসন্তের পর সবারই যেন বিয়ের জন্য সব থেকে পছন্দের ঋতু শীত। অনেকেই চায় ঠান্ডায় বিয়ে করতে। আর বিয়ে যদি করা যায় হিমালয়ের কোলে, তাহলে তো কথাই নেই। ঝকঝকে আকাশে বিয়ের ছবি যেমন সুন্দর হবে, তেমনই সুন্দর আবহাওয়ায়, হিমেল পরিবেশও বিয়ের অনুষ্ঠানও হবে মনোরম। পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং, কালিম্পঙ, কার্সিয়ঙ, সন্দাকফু, লাভা, ডুয়ার্স, পেডং, সামসিং হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ ওয়েডিং ডেস্টিনেশন। বিচ ও প্যালেস ওয়েডিংয়ের পাশাপাশি জনপ্রিয়তায় ক্রমেই ওপরে উঠে আসছে মাউন্টেন ওয়েডিং।

ফরেস্ট ওয়েডিং

ভালোবাসায় পরিপূর্ণ জীবন শুরু করার জন্য জঙ্গলে বিয়ের থেকে ভালো কিছুই হতে পারে না। সবুজ, পাখির কলরবের মাঝে জঙ্গল সেজে উঠবে বিয়ের জন্য। রাঙামাটি, বান্দরবান, সিলেট, কাছের সবুজ ছায়া রিসোর্টগুলোতেও পরিকল্পনা করতে পারে বিয়ের। তবে বনের পশুপাখিকে বিরক্ত না করেই বিয়ের অনুষ্ঠান করা শ্রেয়। দিনের বেলা সুন্দরবনের লঞ্চেও হতে পারে বিয়ের অনুষ্ঠান।

ভিলেজ ওয়েডিং

অনেকেই চায় বিয়ে করতে গ্রাম্য পরিবেশে। তাই বাড়ির কাছের সুন্দর গ্রামগুলোকে সাজিয়ে ফেলা যায় বিয়ের জন্য। আবার ঝক্কি মনে না হলে নিজ গ্রামকেও ওয়েডিং ডেস্টিনেশনের জন্য ভাবা যায়। সে ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রাম্য পরিবেশে অনায়াসে পরিকল্পনা করা যেতে পারে বিয়ের।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
রোমান্স

হারিয়ে যাচ্ছে প্রেমপত্র

করেছে Sabiha Zaman মার্চ ১, ২০২১

শিরোনামটিই যেন কেমন, না? মন খারাপ করা, বিষণ্ন একটা অনুভূতিতে মন ছেয়ে দেওয়া। অথচ প্রেম মানবজীবনে এক শাশ্বত অধ্যায়ের নাম। একটি অসাধারণ অনুভূতির নাম। প্রেমহীন জীবন কোনো জীবনই না। অনেকে বলে বা বলতে চায়, তার জীবনে প্রেম আসেনি বা সে প্রেমে পড়েনি। এটি একটি ভুল কথা। প্রেম এসেছিল। হয়তো সে টের পায়নি। ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’ গানটির মতো। সঠিক সময়ে সে টের পায়নি। আবার কারও জন্য প্রেম অনুভব করলেও সেটা প্রকাশ করার মানসিক শক্তি অর্জন করে উঠতে পারেনি। যে বা যারা পারেনি, তারা দুর্ভাগা! নিরন্তর বিরহে পোড়াই তাদের ভবিতব্য।
একসময় প্রেম প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ছিল প্রেমাস্পদকে চিঠি লেখা। রঙিন খামে, নানা ধরনের নকশা করা প্যাডে চিঠি লিখত প্রেমিক প্রেমিকাকে বা প্রেমিকা তার প্রেমিককে। অনেকে স্কুল-কলেজের ক্লাসের খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে তাতে চিঠি লিখত। রুল টানা বা সাদা পৃষ্ঠায় লেখা হতো চিঠি। কত ছন্দ, কত কবিতা, কত গানের কলি প্রাণ পেত সেসব চিঠিতে। কি না থাকত চিঠির বুকপকেটে? হৃদয়ের যত আকুতি ভরে থাকত সেসব চিঠি। কত কান্না, কত যন্ত্রণা, কত হাহাকারই না শব্দ হয়ে ঝরে পড়ত চিঠির পাতায়। কত রাত বিনিদ্র রজনী কেটে যেত একটি চিঠির ভাষা মনে মনে গুছিয়ে নিতে।
চাইলেই সে চিঠি স্বপ্নের মানুষের কাছে পৌঁছানো যেত না। দরকার হতো কাছের মানুষের সহযোগিতার। বিশ্বস্ত হতেও হতো সেই সব মানুষের। চিঠি আদান-প্রদান করতে করতে চিঠির বাহকের প্রেমে পড়ে যাওয়ার ঘটনা জগৎজুড়ে কম নেই। তাই সতর্কতা দরকার হতো এখানেও।


ডাকে চিঠি পাঠিয়েও স্বস্তি ছিল না। ঠিকমতো প্রাপকের হাতে পৌঁছাল কি না এই মানসিক চাপ সহ্য করা সহজ ছিল না। তার ওপর ধরা পড়ার ভয়। যদি চিঠি মুরব্বি গোছের কারও হাতে পড়ত, তাহলে তো শেষ। রীতিমতো দরবার বসত। চিঠির প্রাপকের তখন একঘরে অবস্থায় পড়া ছাড়া গতি ছিল না। তবু কি চিঠি লেখা থেমে থাকত? না বুকের নিচে বালিশ চেপে উপুড় হয়ে মনের মানুষটিকে চিঠি লেখার তাড়া থেকে কোনো বাধাই আটকে রাখতে পারত না।
ইতিহাসখ্যাত বহু মানুষ রয়েছে, যাদের চিঠিও লোকের আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে।
চিঠিতে কত নামেই না সম্বোধন করা হতো প্রেমের মানুষটিকে। প্রিয়তমা, মায়াবিনী, স্বপ্নের রানি, পাখি থেকে আরও কত-কী! সেই চিঠি পাঠিয়ে তারপর তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা। চাইলেই তো আর চিঠির জবাব পাওয়া যেত না। অপেক্ষা করতে হতো ক্ষণ, দিন আর মাসের।
এখন আর কেউ কাউকে চিঠি লিখে না। গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরাঞ্চলের ডাকবাক্সগুলো মরিচা পড়ে মলিন। অথচ এগুলো কত সম্পর্ক গড়ে ওঠা আর হৃদয় ভাঙার ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত ঠায়।
তাহলে কি মানুষের মনে এখন আর প্রেম নেই? প্রেম আছে। থাকবেও। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে প্রকাশের ধরন পাল্টেছে। পাল্টেছে মাধ্যমও। এখন যোগাযোগ হয় ভার্চ্যুয়ালি। ইচ্ছা হলেই কথা বলা যায়, দূরত্ব যতই হোক একে অন্যকে দেখতে পারে। মেসেঞ্জারে, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো ছোট ছোট অ্যাপস পুরো বিশ্বকে এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ছোট ছোট বাক্যে একে অন্যকে ভাব প্রকাশ করতে পারে সহজেই। এখন আর কাগজ-কলম নিয়ে দীর্ঘ চিঠি লেখার দিন নেই। এ ছাড়া বেড়েছে মানুষের ব্যস্ততাও। মানুষ পথে যেতে যেতে মুহূর্তে বার্তা পাঠিয়ে দেয় মনের মানুষের কাছে।


তবে এটা ঠিক প্রেমপত্র লেখার যে আবেদন, তা কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনায় আনা যায় না।
যা কিছু সহজ বা বিনা বাক্য হাতের মুঠোয় চলে আসে তা দিন দিন গুরুত্ব হারানোটা স্বাভাবিকই। যে কারণে প্রেম আছে, তবে ঠিক যেন সেই সুর আর ছন্দে নেই।
তবে এখনো চেষ্টা করা যেতে পারে প্রেমপত্র বাঁচিয়ে রাখার।
সেটা হতে পারে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে। যারা একটু ভাবুক, লিখতে পছন্দ করে, এমন মানুষের কাল্পনিক প্রেমপত্র লেখার আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। যেসব বিখ্যাতজনের প্রেমপত্র নিয়ে লেখালেখি, আলোচনা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা বললেও অনেকে আগ্রহী হতে পারে প্রেমপত্র লিখতে।
প্রেম শাশ্বত, প্রেম অসাধারণ এক অনুভূতির নাম। একমাত্র প্রেমই পারে জগতের সব অন্ধকার সরিয়ে আলোর পথের যাত্রা সুগম করতে। একের প্রতি অন্যের সেই প্রেমের প্রকাশ ঘটুক অসাধারণ সব চিঠি লেখার মাধ্যমে। প্রেম হারায়নি, হারায় না। তবে কেন হারাবে প্রেমের চিঠি?

লেখা :  সাবিরা ইসলাম

ছবি :  সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইরোমান্সরোমান্স রসায়ন

হানিমুনের সেরা দশ গন্তব্য

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২১

আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা অনেক। সাগর, পাহাড়, স্থাপত্য সব রকম পর্যটন আকর্ষণই আছে বাংলাদেশে। বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য হানিমুনে ঘুরে আসতে পারো এ রকমই জনপ্রিয় দশটি ভ্রমণ গন্তব্য তুলে ধরা হলো এখানে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। টেকনাফ থেকে ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এই দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এ দ্বীপের আকর্ষণ সৈকতজুড়ে সারি সারি নারকেলগাছ, বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথর, দিগন্তজুড়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনমাতানো সৌন্দর্য। ছোট্ট এই দ্বীপে বৈচিত্র্যে ঠাসা। উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পূর্ব থেকে পশ্চিম, সব জায়গাতেই সৌন্দর্যের পসরা। যেমন উত্তরের সৈকতে জোয়ার-ভাটায় জেলেদের মাছ ধরা, পশ্চিমের সৈকতে সারি সারি নারকেলবাগান। পূর্ব আর দক্ষিণ পাশের সৈকতজুড়ে মৃত প্রবালের সঙ্গে নীলসমুদ্র। এত নীল পানির সমুদ্র বাংলাদেশের আর কোথাও নেই।

নারিকেল জিঞ্জিরা 
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এ দ্বীপটির অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এ দ্বীপের বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারকেলগাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি পর্যটক আকর্ষণের মূল উপাদান। সেন্ট মার্টিনের আরেক আকর্ষণ ছেঁড়া দ্বীপ। মূল দ্বীপের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত। একসময় মূল দ্বীপ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন প্রায় মিলে গেছে। তবে জোয়ারের সময় এখনো এর সংযোগস্থল ডুবে যায়। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালু আছে বেশ কিছু সমুদ্রগামী জাহাজ।

কক্সবাজার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভও। ভ্রমণে তাই কক্সবাজার এখন আরও বেশি উপভোগ্য। কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রসৈকত। শহর থেকে শুরু করে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ পর্যন্ত এখানে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর সৈকত আছে। কক্সবাজার শহরের লাবণী ও সুগন্ধা সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভে আছে হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর, হাজামপাড়া আর টেকনাফ। এর একেকটি সৈকত যেন বৈচিত্র্যের ভান্ডার।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানা রামুতে আছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। আর চকরিয়ার ডুলাহাজারায় আছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কুতুবদিয়া চ্যানেল
কুতুবদিয়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে এই কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল  ভূখণ্ড  বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটি। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে যেতে হলে চকরিয়ার মগনামা ঘাট থেকে পাড়ি দিতে হয় এই চ্যানেল। শীত মৌসুমে এ চ্যানেল বেশ শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। জায়গাটিতে ঘুরতে যাওয়ার আসল সময় তাই শীতকাল।

কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে আছে নানান পর্যটন আকর্ষণ। নির্জন সমুদ্রসৈকত, একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাচীন বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজারসহ দেখার মতো অনেক কিছুই আছে এ দ্বীপে। চকরিয়ার মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় দ্বীপে। এখানকার সমুদ্রসৈকত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বেশির ভাগ এলাকাই বেশ নির্জন। সৈকতের তীরে অনেক জায়গাতেই আছে ঝাউগাছের বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও কুতুবদিয়ায়। এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের আলী আকবরের ডেল এলাকায়।

আর দ্বীপের উত্তর প্রান্তে আছে কুতুবদিয়ার প্রাচীন বাতিঘর। সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। পুরোনো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনো কখনো জেগে উঠতে দেখা যায়।
দ্বীপের মাঝামাঝি ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরিফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবীর জন্মস্থান এটি। জনশ্রুতি আছে, দ্বীপটির নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই। বর্তমানে কুতুব শরিফ দরবারের দায়িত্বে আছেন তারই পুত্র শাহজাদা শেখ ফরিদ। এ ছাড়া কুতুবদিয়ার সর্বত্রই লবণ চাষ হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে।


বান্দরবান
তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান। এখানে রয়েছে বেড়ানোর মতো সুন্দর সব জায়গা। বান্দরবান শহরের এক পাশেই আছে বোমাং রাজার বাড়ি। বোমাং রাজার উত্তরসূরিরা এখন বসবাস করেন এ বাড়িতে। আর বান্দরবান শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান চন্দ্রঘোনা সড়কের পুল পাড়ায় জাদির পাহাড়ে আছে স্বর্ণমন্দির। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের এ মন্দিরের নাম বুদ্ধধাতু জাদি। শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। প্রকৃতির কোলে এখানে আছে ঝুলন্ত সেতু, চিড়িয়াখানা আর হ্রদ। শহরের কাছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম নীলাচল। শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় এ পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় এক হাজার ফুট। এখানে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহরসহ দূরদূরান্তের অনেক জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত। এখানে আছে একটি ঝরনা। শৈলপ্রপাতের পাশেই স্থানীয় আদিবাসীদের ভ্রাম্যমাণ বাজারটি দেখার মতো। তাদের তৈরি চাদর আর পাহাড়ি ফলমূল পাওয়া যায় এ বাজারে। এখানে আরও আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বম সম্প্রদায়ের একটি গ্রামও।

শৈলপ্রপাত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। এ পথে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে চারপাশের দৃশ্য ছবির মতো।

রাঙামাটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা রাঙামাটি। এখানকার জেলা শহরে আছে উপজাতীয় জাদুঘর। জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে এ জাদুঘরের জুড়ি নেই। এর কাছেই বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবনবিহার। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের নানান আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি।
রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীরে খুব ব্যস্ত দুটি জায়গা রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার। দুটি বাজারেই মূলত আদিবাসীদের আনাগোনা বেশি। তবলছড়ি ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ছাড়াও এর ভেতরে আছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু।
রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকায় চড়ে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। বাজারের আগেই বাঁ দিকের পাহাড়ে আছে শুভলং ঝরনা। তবে শীতে এ ঝরনায় পানি থাকে না। শুভলং যেতে পথে কাপ্তাই হ্রদের মাঝের ছোট দ্বীপজুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং। এখানকার রেস্তোরাঁয় মেলে হরেক পদের পাহাড়ি খাবার।

রাঙামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটি হলো সাজেক। জায়গাটির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও যাতায়াত সুবিধা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে। সেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্যগুলোর একটি সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গাটির অবস্থান। সাজেকের পাহাড়চ‚ড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দৃষ্টিগোচর হয় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে।

খাগড়াছড়ি
পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা খাগড়াছড়ি। এখানেও ভ্রমণের অনেক জায়গা রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এই জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ১২২ কিলোমিটার। চারদিকে পাহাড়ের মাঝে অনেকটা সমতলে এই শহর।
খাগড়াছড়ির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের জায়গা হলো আলুটিলা পাহাড়। জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে এই পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চ‚ড়ায় দাঁড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। আলুটিলা পাহাড়ের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো এর নিচের গুহাপথ। পাহাড়ের নিচে গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা।

আলুটিলা পাহাড় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রিসাং ঝরনাটিও বেশ সুন্দর। আর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নুনছড়ির পাহাড়চ‚ড়ায় দেবতার পুকুরও মনোরম জায়গা।


সুন্দরবন
প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারই বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বেঙ্গল টাইগারের বাস ছাড়াও এ বনে আছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুইসাপ, ভোঁদড়, ডলফিন, লোনাপানির কুমিরসহ আরও অনেক বন্য প্রাণী। সুন্দরবনের প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, হেঁতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।
মোংলার কাছাকাছি করমজল আর হারবাড়িয়া ছাড়াও সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, কোকিলমনি, মান্দারবাড়িয়া, পুটনি দ্বীপ ইত্যাদি। এর মধ্যে কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া এবং পুটনি দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবনে ভ্রমণে এখন অনেক পেশাদার ভ্রমণ সংস্থা এখন প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে।

শ্রীমঙ্গল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। আর এ জেলার শ্রীমঙ্গলেই সবচেয়ে বেশি চা-বাগান। জীববৈচিত্র্যে ভরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও শ্রীমঙ্গলের পাশেই। শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু সুন্দর চা-বাগান আছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় চারদিকে চোখে পড়বে শুধুই চা-বাগান আর চা-বাগান। পছন্দসই যেকোনো বাগানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারো। শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্টও। তাই চা-বাগান বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও বেড়াতে পারো বাইক্কা বিল। এ বিল অতিথি পাখির অন্যতম অভয়াশ্রম। শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী থলই এলাকায় আছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। আর কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকও শ্রীমঙ্গল থেকে খুবই কাছের একটি দর্শনীয় স্থান।

 

 

 

বাগেরহাট

প্রাচীন মসজিদের একটি শহর বাগেরহাট। বেশ কিছু প্রাচীন মসজিদ এখানকার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহান আলীর এসব প্রাচীন স্থাপনা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। খানজাহান আলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি ষাটগম্বুজ মসজিদ। ঐতিহাসিকদের মতে, এই ষাটগম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দেরও কিছু আগে।
বাগেরহাট শহরের মাঝে হজরত খানজাহানের (র.) সমাধিসৌধ, মসজিদ আর প্রাচীন দিঘি। এ ছাড়া এই দিঘির তীরে জিন্দাপীর মসজিদ আর নয়গম্বুজ মসজিদ নামে আরও দুটি মসজিদ আছে। হজরত খানজাহান আলীর (র.) সমাধিসৌধ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ষাটগম্বুজ মসজিদ। এটি বাগেরহাটের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। বিশাল এই মসজিদ ইটের তৈরি। ষাটগম্বুজ নাম হলেও মসজিদটিতে ৮১টি গম্বুজ আছে। তবে মসজিদের ভেতরের ষাটটি স্তম্ভ থাকার কারণে এর নাম হতে পারে ষাটগম্বুজ। স্তম্ভগুলো কালো পাথরের তৈরি।
এ ছাড়া বাগেরহাটের অন্য প্রাচীন মসজিদগুলো হলো ষাটগম্বুজের পাশেই সিংড়া মসজিদ, রণবিজয়পুর গ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একগম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রণবিজয়পুর মসজিদ। চুনাখোলা গ্রামের চুনাখোলা মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

কুয়াকাটা
বাংলাদেশের দক্ষিণে কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগরকন্যা। একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়ার কারণে এ জায়গাটি বেশি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এখানকার সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে নারকেলগাছের বাগান। তবে এর অনেকটাই সাগরে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সমুদ্র তীরের এই নারকেল বাগান।
এ সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলেপল্লি। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। শীত মৌসুমে এ পল্লির জেলেরা ব্যস্ত থাকেন শুঁটকি তৈরির কাজে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। এর নাম ফাতরার বন। সুন্দরবনের অংশ হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্য  প্রাণী নেই সেখানে।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতীর খাল। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতীর জঙ্গল। এখান থেকে আরও সামনে গেলে ছোট্ট একটি দ্বীপে আছে লাখ লাখ লাল কাঁকড়া। দ্বীপটি ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত।

লেখা – রোদসী ডেস্ক

ছবি – সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনরোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসার সম্পর্ক

করেছে Sabiha Zaman জানুয়ারী ২১, ২০২১

চার অক্ষরের একটি মিষ্টি শব্দ ‘ভালোবাসা’। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক ব্যাপার। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে ভালোবাসা। ভালোবাসা ছাড়া প্রাণিজগতের বেঁচে থাকার কথা চিন্তাই করা যায় না।

ব্যক্তিগত অনুভূতি

‘ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী/ ভালোবাসা হলো নিঃশ্বাস এ দেহের/ নিঃশ্বাস বিনা মানুষ কখনো বাঁচে কি…’ কিশোর কুমারের বিখ্যাত এ গানটিই বলে দেয় ব্যক্তিজীবনে ভালোবাসার প্রয়োজন কতটুকু। ভালোবাসার সংজ্ঞাটি বিতর্ক, অনুমান এবং অন্তর্দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাধারণভাবে ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। কারও প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতি ক্ষেত্রে কারও উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত।

প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ভালোবাসাকে নিয়ে রচিত হয়েছে হাজার হাজার গান, কবিতা ও গল্প। এই ভালোবাসা সামনে রেখে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে পালিত হয় ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার সম্পর্ক পৃথিবীতে ছিল, আছে এবং থাকবেও অনন্তকাল।

ভালোবাসা এবং ভালো লাগা

ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- নিষ্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি। অনেকেই ভালোবাসার মতো একটি সর্বজনীন ধারণাকে আবেগপ্রবণ ভালোবাসা, কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসা কিংবা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ভালোজন এসব ভাগে ভাগ করার পক্ষপাতী নন। তবে এসব ভালোবাসাকে শারীরিক আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা যেতে পারে। ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারও সঙ্গে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এ ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। ‘ভালোবাসা’ এবং ‘ভালো লাগা’ শব্দ দুটি একই রকম মনে হলেও অনেকটা গোলমেলে বা বিভ্রান্তিকর। ভালো লাগা ছাড়া ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা ছাড়া প্রেম হয় না কিন্তু প্রেম না হলেও ভালোবাসা হতে পারে। ভালো লাগাটা প্রাথমিক পর্যায়, প্রেমের পর্যায়টা চূড়ান্ত। অন্যভাবে বলা যায়, ভালোবাসার ব্যাপারটা হলো কারণ, আর প্রেমটা ফল।

ভালোবাসার জৈবিক ভিত্তি

প্রেম বিশেষজ্ঞ হেলেন ফিশার প্রেম বা ভালোবাসার অভিজ্ঞতাকে তিনটি আংশিক ওভারল্যাপিং পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। কামনা, আকর্ষণ এবং সংযুক্তি। কামনা হলো যৌন বাসনার প্রাথমিক ধাপ যা টেস্টোস্টাইন এবং অ্যাস্ট্রোজেনের মতো রাসায়নিক পদার্থ বেশি মাত্রায় ত্যাগ করে। এর প্রভাব কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত পর্যন্ত হয়। আকর্ষণ আরও স্বতন্ত্র এবং রোমান্টিক হয় একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর জন্য, যার মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র লালসা বিকশিত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন তার মস্তিষ্ক নিয়মিত নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন এবং সেরোটোনিন রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে। এর ফলে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, হার্টের কম্পন বৃদ্ধি পায়, ক্ষুধা এবং ঘুম হ্রাস পায় এবং উত্তেজনা বেড়ে যায়। এই পর্যায় সাধারণত দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত  স্থায়ী হয়। যেহেতু কামনা এবং আকর্ষণের পর্যায়গুলোকে অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য একটি তৃতীয় পর্যায় প্রয়োজন।

আর তা হলো সংযুক্তি। সংযুক্তি হলো একধরনের বন্ধন, যার কারণে সম্পর্ক অনেক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত দীর্ঘ¯ স্থায়ী হতে পারে। সংযুক্তি সাধারণভাবে বিবাহ বা শিশু জন্মদান করার মতো অঙ্গীকারগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পছন্দের বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়ার কারণেও সম্পর্ক দীর্ঘ¯স্থায়ী হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের চেয়ে দীর্ঘ স্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক অক্সিটসিন এবং ভাসপ্রেসিন নির্গত হয়। প্রোস্টেট অণুটি স্নায়ু বৃদ্ধিকারক ফ্যাক্টর (এনজিএফ) নামে পরিচিত। যখন কেউ প্রথম প্রেমে পড়ে তখন এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে, কিন্তু এক বছর পর তা আবার পূর্ববর্তী স্তরে ফিরে আসে।

ভালোবাসাকে প্রকাশ করো
ভালোবাসা হলো এক অর্থে দুই স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে শান্তিপূর্ণ  সহাবস্থান। ভালোবাসা কোনোভাবেই মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে নেই। এর ফলে তুমি একসময় তোমার মনের মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারো। ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সবাই ভালোবাসে, সবাই প্রেমে পড়ে। কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গি সবার একরকম হয় না। ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে তুমি সহজেই কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারো।

ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে প্রথম উপায় হলো ভয় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা প্রকাশ করা। মনের মানুষটি কী পছন্দ করে, তা শিগগিরই খুঁজে বের করো। সেটা কোনো জিনিস হতে পারে, কোনো বিষয় হতে পারে, এমনকি খাবারও হতে পারে। পছন্দের জিনিসটি উপস্থাপন করে কিংবা উপহার দিয়ে তোমার ভালোবাসাকে প্রকাশ করো এবং বুঝিয়ে দাও তোমার ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই। মানুষের ভালোবাসা প্রকাশ করার অন্যতম উপায় উপহার। মনের মানুষটির কাছে এই উপহার তোমার অনুভূতিকে বারবার প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।

ভালোবাসার মানুষটিকে প্রতিটি কাজে উৎসাহ দাও, যাতে সে সাহস পায়। সব বিষয়ে তোমার উৎসাহ পেলে সে তোমার কাছে অন্য রকম স্বস্তি অনুভব করবে। আর তোমার ভালোবাসাও তার কাছে ধরা পড়বে। মনের মানুষটির চাহিদা অনুযায়ী কিছু একটা করার চেষ্টা করো, এতে তোমার ভালোবাসাটা প্রকাশ পাবে।

মনের মানুষটির কাছে নিজেকে প্রকাশ করো। সত্যিকারের তোমাকে যখন সে খুঁজে পাবে, তখন তোমার ভালোবাসাও সে অনুভব করতে পারবে। মনে রাখবে, মানুষ তখনই নিজেকে একজন মানুষের কাছে পুরোপুরি প্রকাশ করে, যখন সে তাকে সত্যি ভালোবাসে। সামনাসামনি কথা বলার অনুভূতিটাই অন্য রকম। তাই একবারের জন্য হলেও তাকে সামনাসামনি বলার চেষ্টা করো তুমি তাকে ভালোবাসো।

ভালোবাসার আলিঙ্গনে হৃদরোগ নিরাময়

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের ব্যাপারে এক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়েছিল ২০০৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্বিদ্যালয়ের ড. ক্যারেল গ্রেন কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে গবেষণা করে জানিয়েছিলেন, প্রেম বা ভালোবাসার আলিঙ্গন হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা শতগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদযন্ত্রের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে আসে। ভালোবাসার আলিঙ্গন নারী-পুরুষ উভয়ের  হৃদযন্ত্রের   জন্যই নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে। আর এ প্রক্রিয়া পুরুষের চেয়ে নারীর হৃদয়ের জন্য বেশি কার্যকর। গবেষণার শুরুতে ৩৮ নারী ও পুরুষকে বেছে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে অর্ধেক হচ্ছে দম্পতি এবং অর্ধেক অবিবাহিত। পরে নারী ও পুরুষদের আলাদা করে রক্তচাপ ও স্নায়বিক অবস্থার রেকর্ড নেওয়া হয়। পরে দম্পতিদের একটি রুমে রেখে সুখকর কোনো রোমান্টিক মুহূর্ত চিন্তা করে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। গবেষকেরা দেখেছেন, এ অবস্থায় আলিঙ্গনের ফলে তাদের রক্তচাপ কমে গেছে এবং অক্সিটসিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়েছে।

হৃদযন্ত্রের  সুস্থ ও সবল রাখতে অক্সিটসিন হরমোন অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেশি। ড. ক্যারেল গ্রেনের সঙ্গে একই মতামত পোষণ করেন ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. গ্রিফিথ। তিনি বলেন, ভালোবাসা বা প্রেমের আলিঙ্গন মানবদেহের কার্ডিও প্রোটেকটিভ ব্যবহার অত্যন্ত দৃঢ় করে।

সম্পর্কটাকে ঠিক রাখো

‘সম্পর্ক’ ও ‘ভালোবাসা’ শব্দ দুটি একসঙ্গে জড়িত। ভালোবাসে সবাই। কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে কজন? ভারসাম্যপূর্ণ রোমান্টিক জীবন গড়ে তোলা ও সম্পর্ক গভীরতর করা কঠিন কিছু নয়। অনেক সময় সামান্য ভুল-বোঝাবুঝির কারণে সহজেই ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। ভালোবাসার সম্পর্ককে ঠিক রাখার জন্য কিংবা ধরে রাখার জন্য তোমাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।

নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকো এবং খুব কাছের বন্ধু হিসেবে ওকে সবকিছু জানতে দাও। দেখবে সেও তার নিজের দুর্বলতাগুলো তোমার কাছে তুলে ধরছে। এতে সম্পর্ক গাঢ় হবে। জীবনে নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত থাকে। সেই সংকটের মুহূর্তে দৃঢ়তা নিয়ে তোমার সঙ্গীর পাশে দাঁড়াও। তোমার সরলতা তোমার সঙ্গীকে আরও কাছে টানবে। তুমি যা, তা তোমার বন্ধুকে জানতে দাও। নিজের মতো করে তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে গড়ে তোলার চেষ্টা করো না। এতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, প্রত্যেক মানুষেরই থাকে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব। তুমি যদি সব সময় তোমাদের সম্পর্ক নিয়ে দুর্ভাবনায় থাকো তা তোমার সঙ্গীকে দূরে সরিয়ে দেবে। কাজেই কোনো কিছু না বুঝে কিংবা না জেনে ভালোবাসার মানুষটিকে সন্দেহ করা কোনোভাবেই উচিত নয়।

ভালোবাসার সম্পর্ক যেমন গভীর, তেমনি ঠুনকো। সামান্য সন্দেহ কিংবা সামান্য কোনো কারণে ভালোবাসার সম্পর্কটা যেন ফাটল না ধরে, সে ব্যাপারে অবশ্যই তোমাকে সচেতন থাকতে হবে। খুব ভালো করে জানতে হবে, বুঝতে হবে তোমার কাছের মানুষটিকেÑ তবেই না তোমাদের দুজনের ভালোবাসার সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হবে।

লেখা :  প্রদীপ সাহা

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কর্মক্ষেত্রদেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়ন

প্রেমের বিয়ে ভালোবাসা কি হারিয়ে যায়?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২৭, ২০২০

প্রেম- খুব ছোট্ট একটি শব্দ। একটি দ্বৈত সম্পর্ক। দুজন মানুষের পূর্ণ অংশগ্রহণের সম্পর্ক। প্রেম সুন্দর, প্রেম পবিত্র। কিন্তু প্রেমের সম্পূর্ণটাই আনন্দদায়ক নয়। প্রেমে ব্যর্থতার গল্প হয়তো সাফল্যের গল্পের চেয়ে অনেক বেশি শোনা যায়। আবার বিয়ের পরে প্রেম হারিয়ে যায়, এমনটাও খুব সাধারণ।

জীবনের বিভিন্ন ব্যস্ততার ভিড়ে প্রেম হারিয়ে গেলেও আমাদের মধ্যে অনেকেই সেটাকে স্বাভাবিক মনে করে নিয়ে চলতে থাকি। কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করি না যে বিয়ের পরেও প্রেম সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের পরে প্রেম বেড়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। শুধু একটু চেষ্টার প্রয়োজন।

বিয়ে মানে নতুন করে শুরু করা

কৈশোরে যখন প্রেমের প্রথম ছোঁয়া লাগে মনে, তখন সবকিছুই সুন্দর মনে হয়। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল-ঠিক এর বিচার-বিবেচনাও করতে পারে না। পরিবার থেকে বাধা এলেও মনে হয় মনের মানুষটা সঙ্গে থাকলে সব বাধাই পেরোনো সম্ভব। তারুণ্যে পা দিয়ে প্রেম, গল্পের বই ও সিনেমা থেকে বেরিয়ে এসে একটু একটু করে বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু সেই সঙ্গে বিয়ে নিয়েও চলতে থাকে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও স্বপ্নের জাল বোনা।

সেই সময় মনে হয় যেন কোনোভাবেই এই প্রেম হারাতে পারে না। বরং বিয়ে করতে পারা মানেই প্রেমের সফলতা। কিন্তু সবাইকে বরাবরই ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিয়েই প্রেমের সঠিক রূপটি চিনতে মানুষকে সাহায্য করে। না, সেটা সব সময়ই নেতিবাচক হয় না। বরং, এমন অনেক স্বামী-স্ত্রী রয়েছে যারা প্রেম করে বিয়ে করলেও বিয়ের পরই সঙ্গীকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে, যেটা সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করে তোলে।

যা করতে হবে

সাইকোলজি টুডে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের কারণেই দুজন নারী-পুরুষ একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আফসোস এই যে এই আকর্ষণ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফুরিয়েও যায়। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী ‘এটাই স্বাভাবিক’-  এ রকম মনে করে চলতে থাকে।

আর সাধারণ মতামত দাঁড়ায়, বিয়ে মানেই ঝামেলা, বিয়ে মানেই অসুখী জীবনের শুরু। কিন্তু তা-ও বিয়ে করা বন্ধ হচ্ছে না। একই সঙ্গে ডিভোর্সও বন্ধ হচ্ছে না। অর্থাৎ যারা বিয়ের পরে প্রেমের হারিয়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে আপস করে চলতে পারে না, তারা এই বিচ্ছেদের রাস্তাটি বেছে নেয়। অথচ এতটা নেতিবাচক না হয়ে, ভিন্ন কিছু চেষ্টা করাই যায়। সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে হয়।

ইমোশনাল ফিটনেস এক্সপার্ট ড. বার্টন গোল্ডস্মিথ বলেন, ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, শুধু প্রাথমিক আকর্ষণটা মিইয়ে যায়। আর এই মিইয়ে যাওয়া আকর্ষণকে ফিরিয়ে আনার জন্য বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কের আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

কিন্তু সেটিও সঠিক সমাধানের পথ নয়। এটা ঠিক যে একটা সম্পর্কে শরীর ও মন দুই-ই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। একটিকে বাদ দিলে অন্যটি অর্থহীন। তাই দুটিকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু হারিয়ে বা মিইয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে ফিরিয়ে আনার জন্য শারীরিক সম্পর্ক কোনো সমাধান নয়। বরং নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জীবনে বৈচিত্র্য আনা উচিত।

সঙ্গীকে সঠিকভাবে জানতে পারা এবং বুঝতে পারা খুবই জরুরি। আর অবশ্যই উভয়ের মতামত ও রুচিকে একই রকমভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা মানেই নতুন নতুন রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া বা শপিং করা নয়। বরং এমন কিছু করা যাতে দুজনেই একান্তভাবে একজন আরেকজনকে সময় দিতে পারে। হতে পারে সপ্তাহের কোনো একদিন দুজনে মিলে একসঙ্গে রান্না করা কিংবা নতুন কোথাও বেড়াতে যাওয়া।

মনে রাখবে, দুজনে মিলে একসঙ্গে নতুন কোনো অভিজ্ঞতা অর্জন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলার সবচেয়ে উপযোগী উপায়। কিন্তু এই ধরনের যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় দুজনের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। একজনের ভালো লাগে বলেই সেটা আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আবার অন্যের কোনো রকম অসুবিধা হয়, এমন কিছুও করা যাবে না।

আমরা বিয়েকে দোষ না দিয়ে বা ‘সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায়’- এ রকম কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি নিজেদের মধ্যকার ভুল-বোঝাবুঝি দূর করার চেষ্টা করি, তাহলেই বেশির ভাগ সমস্যা শেষ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মতামত বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা খারাপ লাগা এই অনুভূতিগুলো সরাসরি প্রকাশ করলে সমস্যা হওয়ার আগেই সেটাকে এড়ানো যায়।

যা করা যাবে না

আজকের যুগে প্রায় সব পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরি করে। সে ক্ষেত্রে ব্যস্ততা ও স্ট্রেস দুজনেরই সমান। সুতরাং কখনোই সঙ্গীর কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না, বা সঙ্গীর ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করা যাবে না। ব্যস্ততায় সকালের নাশতা প্রায়ই হয় না। তাই দিন শেষে চেষ্টা করো যেন একসঙ্গে রাতের খাবারটা খাওয়া যায়। আর অবশ্যই এ সময় মুঠোফোনটি বন্ধ রাখো।

সন্তানের দায়িত্বটিও ভাগাভাগি করে নিতে হবে যেন সে উপেক্ষিত বোধ না করে, আবার স্বামী বা স্ত্রী কোনো একজনের ওপর চাপ না পড়ে। সন্তান দুজনেরই আর তাকে সময়ও তাই দুজনেরই দিতে হবে। বাবা-মা উভয়েরই প্রয়োজন একটি সন্তানের সুষ্ঠুভাবে বড় হয়ে ওঠার জন্য।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল-বোঝাবুঝির শুরুটা প্রায়ই তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কারণে ঘটে থাকে। সেটা হতে পারে প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মী বা আত্মীয়-পরিজন। একটা কথা মনে রাখবে, দিন শেষে তোমরা দুজনই নিজেদের সবচেয়ে কাছের মানুষ। বিশ্বাস যে কোনো সম্পর্কে যেমন সবচেয়ে জরুরি, তেমনি সবচেয়ে সংবেদনশীলও। সেই সঙ্গে অযথা অন্য কারও সঙ্গে নিজের সঙ্গীর তুলনা করে তাকে খাটো করে দেখানো যাবে না। যে কোনো সমস্যাতেই চেষ্টা করো বাড়িতে নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে।

বাইরের মানুষের সামনে কখনই সঙ্গীকে ছোট করা যাবে না। তর্ক-বিতর্ক খুব স্বাভাবিক, কিন্তু চেঁচামেচি করে অযথা নিজেকে ছোট করার কোনো মানে হয় না। বরং ধীরস্থিরভাবে যুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা অনেক সময়ই সেই বন্ধুটির সাহায্য চাই যে আমাদের বিয়ের আগের প্রেমের সময়টাতে আমাদের খুব কাছে ছিল। এটাও সব সময় ঠিক নয়। মনে রেখো, সেই বন্ধুটি কিন্তু বিয়ের পরে তোমাদের মাঝে গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কটাকে বুঝবে না।

সম্পর্ক যেমন দুজন মানুষ একসঙ্গে শুরু করে, ঠিক তেমনিভাবেই একসঙ্গে থেকেই পুরোনো প্রেমকে বছরের পর বছর নতুন রূপে জিইয়ে রাখতে পারে। সঙ্গীর প্রতি যত্নবান হওয়াটাই এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জরুরি। তবে কোনোভাবেই ‘মানিয়ে নেওয়া’টা যেন একজনের দায়িত্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানসিকভাবে একজনের পরাধীন বোধ করতে শুরু করার মাধ্যমেই সম্পর্কের অবনতির শুরু হয়। ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, মানুষ নিজের ভুলের কারণেই তা হারিয়ে ফেলে।

লেখা : সোহেলী তাহমিনা 
ছবি: সংগ্রহীত 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, তারপর?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২৩, ২০২০

মানুষের একটি বিশ্বাস রয়েছে যে সবচেয়ে কাছের বন্ধুরা একে অপরের প্রেমে পড়লে তারা সেরা জুটি হয়, আবার অনেকেই পরামর্শ দেন যে সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক না জড়ানোই ভালো। কী যে ভালো আর কী মন্দ সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবু বলার চেষ্টা।

একবার যদি ভালোবাসা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ভালোবাসার পাশাপাশি বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, প্রেমের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পরিচিতজনকে (বন্ধু) অন্যের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। এই পরিচিতজনকে প্রেমের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলে সম্পর্ক ভালো হয়।

নিরাপত্তাবোধ থেকে কাছে আসা

যে কোনো সমর্থন, সমর্পণে যার কাছে যাওয়া যায়, সেই তো বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই যদি একসঙ্গে বড় হয় দুজন, তাহলে বোঝাপড়াটা অনেক মজবুত থাকে। সে ক্ষেত্রে নতুন একটা সম্পর্কের শুরুতে দুজনেই মানসিকভাবে যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করে।

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম না হলে যার কাছে গেলেই সব শান্তি হতো তখন তার কাছে গেলেই কষ্ট পাওয়ার ভয়ে সম্পর্ক পরিণত হয় এড়িয়ে যাওয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বন্ধু তার সেরা বন্ধুর কাছে প্রেমের আহ্বান আশা করে না সে ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের মতো ব্যাপার ঘটে থাকে। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হলে পুরো প্রেম পর্বটাই থাকে জমজমাট। সাধারণত পড়াশোনা চলাকালীন সময়টার অনিশ্চয়তা, চতুর্মুখী চাপের সময়টায় বন্ধুত্বের পাশাপাশি প্রেমের এই অনুভূতিটুকু পারস্পরিক প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

আর যদি প্রেমটাই না হয়

সহজ, স্বাভাবিক বন্ধুত্বে নেমে আসা কঠিন হয়ে যায়। বন্ধুত্বে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যায়। এটুকু মনে রাখা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যাখ্যা গভীরভাবে চমৎকার,

বন্ধুত্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হইয়া ভালোবাসায় উপনীত হইতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা নামিয়া অবশেষে বন্ধুত্বে আসিয়া ঠেকিতে পারে না। একবার যাহাকে ভালোবাসিয়াছি, হয় তাহাকে ভালোবাসিব নয় ভালোবাসিব না; কিন্তু একবার যাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়াছে, ক্রমে তাহার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হইতে আটক নাই।

সুতরাং একজন আরেকজনকে প্রপোজ করার আগে, আকার-ইঙ্গিত সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে প্রপোজ করা উচিত। যদি পজিটিভ মনে না হয়, তবে বন্ধু হয়েই থাক না।

ভালো-মন্দে

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম অতঃপর বিয়েতে গড়ালে নতুন করে নিজেকে চেনানোর ব্যাপারগুলো থাকে না। একজন আরেক জনের পছন্দ, অভ্যাস, অন্যভস্ততা, রুচির ব্যাপারগুলো পরিচিত থাকায় নতুন করে আর মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় না।

কতটুকু সফল

টানাপোড়েন এ সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই ক্লাসে একই বিষয়ে পড়াশোনা করে একই পেশায় ক্যারিয়ার গঠন বা একই সঙ্গে উচ্চতর পড়াশোনায় যারা আছে তাদের জীবন সম্পর্কে জানা যায় বিয়ের আগে বেশির ভাগেরই বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের পর সম্পর্ক বিয়েতে গড়িয়েছে।

স্বস্তিদায়ক হয় এই সম্পর্কগুলো? যদিও ‘The secret of a happy marriage remains secret’। তারপরও বিপরীত গল্প তৈরি হয়। খুব আবেগপ্রবণ ভালোবাসাই যে সফল দাম্পত্য জীবন নিশ্চিত করে, ব্যাপারটি তা হয়ে ওঠে না।

শুধু ভালোবাসার অভাব নয় বিয়ের পর বন্ধুত্বের অভাবই অসুখী দাম্পত্য জীবনের একটি কারণ হতে পারে। তাই বিবাহিত জীবন স্বস্তিদায়ক ভালোবাসার চেয়েও অন্যান্য যে কটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ‘বন্ধুত্ব’ তার মাঝে একটি।

এমনটিও ঘটে থাকে, এমন জুটি রয়েছে কখনোই বন্ধু ছিল না বা দীর্ঘদিনের পরিচিতও নয়, তারা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়েছে স্বল্প সাক্ষাতেই, প্রথমেই বন্ধুত্বে পরিণত হয় না এই সম্পর্ক। জানাশোনা বাড়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে এই আকর্ষণ বাড়তে থাকে, ভালোবাসার বন্ধনটাও মজবুত হয়, তারপর তারা আবিষ্কার করে যে তারা একে অপরের ভালো বন্ধুও। এই আবিষ্কার একসঙ্গে চলার জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সহজতর করে তোলে।

আসলেই কি রোমান্স কমে যায়?

অনেকেই ভাবে, বন্ধু যদি জীবনসঙ্গী হয় তাহলে রোমান্স একটু কমে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটাও বলা যায় যে একটা সম্পর্কের সফলতা কেবল রোমান্সের ওপরই নির্ভর করে না। একটি সফল সম্পর্কের আরও অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলো সম্পর্ককে সুন্দর ও আনন্দের করে তুলতে সর্বোপরি এ কথাই সবচেয়ে বড় সত্য যে সঙ্গী একই সঙ্গে কখনো বন্ধু, কখনো জীবনসঙ্গী, কখনো ভালোবাসার মানুষ। সবচেয়ে বেশি মনোযোগ, সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়ার আশা সে-ই করতে পারে।

আরবি ভাষার বিশ্বখ্যাত কবি, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী কাহলিল জিবরান ‘যা তোমার সর্বোৎকৃষ্ট’ তাই বন্ধুকে দিতে বলেছেন। আর জীবনসঙ্গী যদি হয় বন্ধু তবে তুমিই তার জন্য বড় উপহার। আর সেও তোমার জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট কেউ।

 

লেখা: তাসনুভা রাইসা 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রারোমান্সরোমান্স রসায়ন

সঙ্গী সিরিয়াস নয়

করেছে Sabiha Zaman এপ্রিল ২৩, ২০২০

সম্পর্ক থাকা আর প্রেমে পড়ার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। প্রেমে পড়ার সময়গুলো যতটা পেলব, একটা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেই তেমন নয়। প্রেমে পড়লেই যে সম্পর্কে তা পরিণতি পাবে, তারও কোনো মানে নেই। আবার প্রেম চলতে চলতে হঠাৎ ছন্দপতন হলে অনেক সময়ই যোগাযোগ কমে, দেখা-সাক্ষাৎও তলানিতে এসে ঠেকে। এতেও সব সময় বোঝা যায় না আদৌ সম্পর্কটা আর আছে কি না। তবে সম্পর্ক নিয়ে সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত।

অনেক সময় দেখা যায়, এক পক্ষ মনে করে যে সম্পর্কে রয়েছে, কিন্তু অন্য পক্ষের ব্যবহার বুঝিয়ে দেয় প্রেম-প্রেম ব্যাপার থাকলেও সেটা আদতে সম্পর্ক নয়। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু একজনের স্পষ্ট করে জানানোর অভাবে সম্পর্ক যদি ঝুলে থাকে, তাহলে তা মোটেই সুখের হয় না। তোমাকেও কি এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে? কয়েকটি লক্ষণ খতিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে সঙ্গী ঠিক কী চাইছে। দেখে নাও সঙ্গীর মনোভাব জানার কৌশল।
ঝুলিয়ে রাখার মানসিকতা থাকলে সঙ্গী কখনো তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে তোমার পরিচয় করাবে না। কারণ, তোমার সঙ্গী এই সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান, এমনকি এটা আদৌ সম্পর্ক কি না, তা নিয়েও তিনি ধন্দে আছে।

এরা নিজেদের খুবই স্বাধীনচেতা ও ভবঘুরে হিসেবে দেখাতে চায়। যারা ঝুলিয়ে রাখতে পছন্দ করে সম্পর্ক, তারা কখনোই কোনো কমিটমেন্টের প্রসঙ্গে সোজাসাপ্টা উত্তর দেয় না। নানাভাবে এ ধরনের প্রশ্ন উদাসীন হয়ে এড়িয়ে যায়। মনোবিদদের মতে, তারা জেনেবুঝেই সবটা করে। কিন্তু এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে তারা দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়।
সম্পর্ক থাকলে পরস্পরের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে নিশ্চয়ই থাকবে। লক্ষ করে দেখবে, তারা নিজেদের সুবিধামতো ছাড়া তোমার সঙ্গে কখনোই দেখা করবে না।
এদের তুমি প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে খুব কমই পাবে। তারা এই সম্পর্কটায় অসম্পূর্ণভাবে জুড়ে থাকছে, কারণ তোমাকে হয় একটা বিকল্প হিসেবে সে ভেবে রাখছে, অথবা সন্দিহান রয়েছে বলেই এমন ব্যবহার করছে। সম্পর্কে ঝুলিয়ে রাখার অন্যতম লক্ষণ হলো, তারা কখনোই তোমার মেসেজ বা ফোনের উত্তর একবারে দেবে না। তোমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবে।

তারা নিজের মর্জি অনুযায়ী তোমার সঙ্গে কথা বলবে। নিজের মেজাজ ভালো হলে তোমার সঙ্গে এত গদগদ হয়ে কথা বলবে যে তুমি ভাববে এই তো আমার স্বপ্নের মানুষ। কিন্তু আবার দেখবে দু-তিন দিন তার কোনো পাত্তা নেই। অর্থাৎ বুঝবে ব্যাপারটা মোটেই সিরিয়াস সম্পর্ক নয়।

লেখা : রোদসী ডেস্ক

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

প্রেম কি কেবলি শরীরের চাহিদা?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২২, ২০২০

পড়াশোনা, তারপর চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছু পিছু দৌড়। কেউ নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। শেষে বিয়েটাই পিছিয়ে যায়। কেউ বিয়ে করেন ২০ থেকে ৩০-এর কোঠায় আবার কেউ দ্বিধায় পড়েন। কিন্তু মন, দিন শেষে নির্ভরতা খোঁজে, ভালোবাসা খোঁজে। প্রেমের সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রেম কখনো কখনো গড়ায় লিভ টুগেদার পর্যন্ত। কথায় আছে, একটা মিথ্যা কথা ঢাকতে হাজারটা মিথ্যা বলতে হয়। লিভ টুগেদার এমন একটা বিষয়, দুজন মানুষকে ঠেলে দেয় অনিশ্চয়তা আর ভীত অবস্থার দিকে। তবু তো থেমে থাকছে না এই মোহময় হাতছানি, এই রক্তরাগ এই সর্বনাশ!

সায়েম (ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ার পাশাপাশি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পার্টটাইম চাকরি করছে। ক্লাসফ্রেন্ড রত্নার সঙ্গে তিন বছর প্রেম করার পর তারা রাজধানীতে একটি ছোট্ট বাসায় বসবাস শুরু করে। এরপর সন্তান ধারণ করে রত্না। তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। শেষে অ্যাবরশন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বন্যা (ছদ্মনাম) একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করে। প্রেম হয় স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে। বিয়ে করার কথা ছিল দুজনের। সেই আশ্বাস থেকে বন্যা রনকের সঙ্গে ট্যুরে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরে রনকের আচরণ পুরোপুরি পাল্টে যায়। এরপর বন্যার মনে বাসা বাঁধে অন্য আতঙ্ক। নিজ থেকে চাকরিটা ছেড়ে দেয় বন্যা।

মিলনের নিকটাত্মীয় সামিয়া (ছদ্মনাম)। সামিয়া মফস্বল ছেড়ে রাজধানীতে আসে কোচিং করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। শহরে আসার পর নিয়মিত যোগাযোগ হয় মিলনের সঙ্গে। তারপর প্রেম। মিলন একদিন বলে একটি অ্যাডাল্ট সম্পর্কে যা যা হয়, এই সম্পর্কেও তাই তাই হবে। পরিণতি কত ভয়ংকর হবে বুঝতে পারে সামিয়া। কিন্তু মিলনকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ সে খুঁজে পায় না। ধ্যানে-জ্ঞানে মিলন। মিলনের উপস্থিতি মানে সামিয়ার ভালো লাগা। ছাত্রী হোস্টেলে থাকত সামিয়া। সন্ধ্যার পর হোস্টেল থেকে বের হওয়া নিষেধ। বাইরে থাকলে রাত আটটার পর হোস্টেলে প্রবেশ করার নিষেধ।

কোচিং শেষ করে মিলনের সঙ্গে দেখা করত সামিয়া। ফিরে আসত রাত আটটার আগেই। এক রাতে ফেরা হলো না তার। হোস্টেলে ফোন করে জানিয়ে দিল জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি গেছে। এই কথার সত্যতা প্রমাণ দেওয়ার জন্য টানা তিন দিন হোস্টেলে ফেরেনি সামিয়া। মিলনের সঙ্গে তার বাসায় ছিল। তিন দিন পর হোস্টেলে ফেরে সামিয়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পড়ালেখায় আগ্রহ হারায়। বিষণ্নতা-হতাশা গ্রাস করতে থাকে সামিয়াকে।

বিয়ে করতে আগ্রহী ছিল না মিথিলা (ছদ্মনাম)। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। বিয়েভীতি ছিল। ভয় ছিল চাকরি হারানোরও। যদি চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। যদি পরিবারের দায়িত্ব নিতে না পারে; সে ভয়ও ছিল মিথিলার। বাবা-মাকে রাখতে চেয়েছিল নিজের কাছে। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। একসময় বিয়ে করতে রাজি হয় মিথিলা। কিন্তু বয়সের দোহাই দিয়ে বিয়ে ভেঙে যেতে থাকে। দিন শেষে সে যে ঘরে ফিরে যায়, সে ঘরে একা।

একাকিত্ব গ্রাস করছিল মিথিলাকে। নিজের ভালো থাকা-মন্দ থাকার গল্প যার সঙ্গে শেয়ার করত, একদিন তার সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিথিলার। কিন্তু সে বিবাহিত। ঘর বাঁধতে হলে আরেকজনের ঘর ভাঙতে হবে। নীরব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে মিথিলার সঙ্গে ঘর বাঁধতে রাজিও হয়। কিন্তু নীরবের স্ত্রী একদিন হাজির হয় মিথিলার অফিসে। মিথিলার বসের কাছে বিচার দেয়। ক্ষমা চাইতে হয় মিথিলাকে।

সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, লিভ টুগেদার সম্পর্কে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই সম্পর্কের জের ধরে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এই প্রযুক্তি প্রসারের যুগে আমাদের হাতের মুঠোই ফোন। হাই রেজল্যুশন ক্যামেরাযুক্ত ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। অনেক সময় হাতে থাকা এই ক্যামেরাটি রোমান্টিক মুহূর্তবন্দী করার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গোপনীয়তার সীমা অতিক্রম করে সেই রোমান্টিক মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও যখন ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়, তখন সামাজিকভাবে হেয় হয় ভিকটিম ও তার পরিবার।

একটি প্রশ্ন

আমরা কি শুধু নিজের জন্য নিজে? তা তো নয়। আমাদের সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে মিশে থাকে পরিবারের সামাজিক মর্যাদা। তাই বিয়ের সম্পর্ক যে মানুষটির সঙ্গে নেই, যে মানুষটি সামাজিক ও আইনিভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দায়বদ্ধ নয়; তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়ার আগে যেন প্রিয় মানুষগুলোর মর্যাদার কথা ভুলে না যাই।

কী হচ্ছে

  • বিয়েবহির্ভূত লিভ টুগেদার
  • দূরে ট্যুর
  • ভ্রণ হত্যা
  • হত্যাকাণ্ড
  • সাইবার ক্রাইম
  • নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

কেন হচ্ছে এমন

  • পরিবার থেকে দূরে থাকা
  • অর্থনৈতিক মুক্তি
  • দেরিতে বিয়ে

লেখা: রোদসী ডেস্ক 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়বিশেষ রচনারোদসীর পছন্দরোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসি বলো বারবার

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ৮, ২০২০

ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞান যুগে যুগে ভালোবাসার অসামান্য ব্যাখ্যা দিয়েছে। যুগে যুগে, কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী। গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ।

ভালোবাসার শব্দচ্ছেদ

উইকিপিডিয়ায় ভালোবাসাকে বলা হয়েছে, ‘মনের গভীর থেকে উত্থিত শক্তিশালী ইতিবাচক আবেগ, মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারও সঙ্গে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না।’

মারিয়াম ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে ব্যক্তি, বস্তু বা কোনো ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি আত্মসমপর্ণ, তীব্র শরীরী আকর্ষণ এবং গভীর বন্ধন।’  আরবান ডিকশনারিতে সত্যিকার ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে ‘মোহ, একাকিত্ব, হতাশা আবার কখনো বিষণ্নতা।’ কেমব্রিজ ডিকশনারিতে ভালোবাসাকে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তির বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেমময় ভাব ও শরীরী আকর্ষণ অথবা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি শক্তিশালী অনুভূতি।’

ভালোবাসার বিজ্ঞান ও দর্শন

গ্রিক দার্শনিকেরা ভালোবাসাকে চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন, আত্মীয়তার জন্য ভালোবাসা (স্বজনপ্রীতি), বন্ধুত্বের জন্য ভালোবাসা (বন্ধুত্বপূর্ণ), বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা (প্রেমময়) এবং ঈশ্বরের জন্য ভালোবাসা (স্বর্গীয়)। অন্যদিকে যেখানে অপরের কল্যাণ নিহিত, তাই অ্যারিস্টোটলের কাছে ভালোবাসা। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের কাছে ভালোবাসা নিরঙ্কুশ, তিনি ভালোবাসাকে স্বজনকেন্দ্রিকতার ঘোর বিরোধিতা করেছেন। জীববিজ্ঞানী জেরেমি গ্রিফিথের মতে, ভালোবাসা হচ্ছে নিঃশর্ত নিঃস্বার্থতা। অন্যদিকে প্রতিটি ধর্মেই মানুষ, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে, যা স্বর্গীয় ও নিঃস্বার্থ।

প্রাচীন রোমানদের কাছে আবেগ মানেই প্রেম বা যৌনতা। চৈনিক সংস্কৃতিতে কনফুসিয়াসের মতে, ভালোবাসা হচ্ছে ‘কর্ম ও দায়িত্ব’। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বেদ মোতাবেক ভালোবাসার আদি ব্যাখ্যা ‘কাম’, যা শুধুমাত্র যৌনতা নয়, পার্থিব যেকোনো ইচ্ছাকেই বোঝায়। পারসি সংস্কৃতিতে ‘ইশক’ শব্দটি পাওয়া যায়, যা বন্ধু, পরিবার, স্বামী-স্ত্রী এবং স্রষ্টার প্রতি ঐশ্বরিক ভালোবাসাকে বোঝায়।

আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশার ভালোবাসাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন- কামনা, আকর্ষণ ও সংযুক্তি। ফিশারের মতে, প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক এই তিনটি ধরনের যে কোনো একটি দিয়ে শুরু হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। আবার একই সঙ্গে তিনটি ধরনই উপস্থিত থাকতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম মেকানিকসে ‘স্ট্রিং তত্ত্ব’ নামে একটি সূত্র আছে। এই সূত্রটির মাধ্যমে বিশ্বের সবকিছুকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

‘স্ট্রিং’ হলো এমন একটি অদৃশ্য জিনিসের নাম, যা দ্বারা বিশ্বের সবকিছু গঠিত হয়। অর্থাৎ আলো, বাতাস, শব্দ, তরঙ্গ, বস্তু সবকিছুই এই অতি ক্ষুদ্র ‘স্ট্রিং’ নামক একক দ্বারা গঠিত। ভালোবাসাকেও এই স্ট্রিং দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। ‘স্ট্রিং তত্ত্ব’ অনুযায়ী ভালোবাসারও একটি স্বতন্ত্র স্ট্রিং সত্তা রয়েছে।

পোল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানী বাউমান বর্তমান ভালোবাসাকে ‘তরল ভালোবাসা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, শার্টের বুকপকেটে যেমন খুব বেশি দরকারি কোনো কিছু থাকে না এবং তা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই সেটা পূরণ করা যায়, ভালোবাসা তেমনই। প্রথম দেখায় ভালোবাসার একটি বিশেষ আবেদন রয়েছে। এটি অহরহই ঘটতে দেখা যায়।

মানুষ বলে এটি সব সময়ই ঘটে। অনেকের কাছেই এটি হৃদয়ের গভীর থেকে উত্থিত কোনো এক স্বর্গীয় অনুভূতি, এক পলকেই যেখানে আটকে পড়ে প্রেমিক মন। কিন্তু এই আবেগ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার ব্যক্তিত্ব, নীতি কিংবা আদর্শ নয়, শারীরিক বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি তীব্র অনুভূতি থেকে সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞান বলে, প্রথম দেখায় যে আবেগ বা প্রেমভাব অনুভূত হয় তা প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা নয়। এটি গভীর আকর্ষণ যা সম্পর্কের সম্ভাবনা তৈরি করে।

ভালোবাসার মনোবিজ্ঞান

প্রেম হলো ভালোবাসার উত্তেজনাপূর্ণ আবেগ বা অনুভূতি। মনোবিজ্ঞানী চার্লস লিন্ডহোমের মতে, ‘প্রেম হলো একটি প্রবল আকর্ষণ, যা কোনো যৌন আবেদনময় দৃষ্টিকোণ হতে কাউকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপর ব্যক্তির প্রতি একই সঙ্গে শক্তিশালী মানসিক এবং যৌন আকর্ষণ কাজ করে, দাম্পত্যের ক্ষেত্রে যৌন আকর্ষণের তুলনায় ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভূতি অধিক গুরুত্বের অধিকারী হয়।’ দার্শনিক বার্নার্ডশ প্রেমকে দেখেছেন ধ্বংসকারী উপাদান হিসেবে। তার মতে, ‘প্রেম হলো সিগারেটের মতো যার শুরু আগুন দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে।’

মার্কিন মনোবিজ্ঞানী রবার্ট জেফ্রি স্টার্নবার্গ ‘ভালোবাসার ত্রিভুজ তত্ত্বে’ বলেছেন, ভালোবাসা মূলত গভীরতা, যৌনতা ও প্রতিশ্রুতির সমন্বয়। ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বে সব প্রেমের উৎস হচ্ছে যৌনতা। নর-নারীর মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও বিজ্ঞান ভালোবাসার নানা দিক দেখিয়েছে। ভালোবাসার আরেক প্রকাশ ফিলিয়া হলো ‘স্নেহের সম্পর্ক’ বা ‘বন্ধুত্ব’।

অ্যারিস্টোটল ফিলিয়া বলতে নবীন প্রেমিক, আজীবন বন্ধু, পাশাপাশি শহর, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চুক্তি, পিতা-মাতা ও সন্তান, নাবিক ও সৈনিক সহকর্মী, একই ধর্মের অনুসারী, একই সম্প্রদায়ের সদস্য এবং একজন মুচি ও তার খদ্দেরের সম্পর্ককে বুঝিয়েছেন।

ভালোবাসার সবচেয়ে শুদ্ধতম প্রকার হলো প্লেটোনিক বা বায়বীয় ভালোবাসা, যেখানে কামনা-বাসনার কোনো স্থান নেই। প্লেটোর প্লেটোনিজম মতবাদে এই ভালোবাসায় প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রবেশ করবে কিন্তু এখানে শরীর নামক বস্তুটি থাকবে অনুপস্থিত। এ ভালোবাসা কামগন্ধহীন।

কোনো চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রেমকে মনে হয় স্বর্গসুখ। কিন্তু সুখের অপর পিঠই যে জরা, ব্যাধি, মৃত্যু। তাই ভালোবেসে রোগাক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। এই রোগ মূলত ভালোবাসার সঙ্গে জড়িত মানসিক বেদনা। ইবনে সিনা বিষণ্নতাকে এই মানসিক পীড়ার প্রথম লক্ষণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

ভালোবাসা, প্রেম ও যৌনতা

১৯ শতক থেকেই মুক্ত ভালোবাসা বা ফ্রি লাভ শব্দটি একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এটি বিয়ে ও সন্তানের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। ‘উন্মুক্ত যৌনতা’ শব্দটি ‘মুক্ত ভালোবাসার’ ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের তত্ত্বমতে শরীরের উপস্থিতি ছাড়া ভালোবাসার অস্তিত্ব অকল্পনীয় ও সব প্রেমের উৎস শরীরী আকর্ষণ। সফ্লোকিসের অমর সৃষ্টি ইডিপাস রেক্স থেকে ফ্রয়েড সৃষ্টি করেন তার মতবাদ ইডিপাস কমপ্লেক্স। যেখানে মাতার প্রতি পুত্রের আসক্তি ও পিতার প্রতি পুত্রের ঈর্ষাবোধ দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে গ্রিসের পৌরাণিক লোককাহিনি, যেখানে ইলেকট্রা নামে একজন নারী তার এক ভাইয়ের সঙ্গে মিলে নিজের মাকে হত্যা করে পিতাকে বিয়ে করেছিল, এটাকে কেন্দ্র করে ফ্রয়েড দাঁড় করান ইলেকট্রা কমপ্লেক্স। এখানে ফ্রয়েড দেখিয়েছেন কন্যাসন্তানের পিতার প্রতি থাকা একধরনের অবচেতন যৌনকামনা। কালের প্রবাহে এই থিওরি বিতর্কিত এবং এর বিপক্ষে শক্ত যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু সত্যের সন্ধান করতে গিয়ে ইডিপাসের করুণ পরিণতি সমালোচক ভিন্ন পাঠকদেরও হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। মাতাকে বিয়ে করে তার গর্ভেই বংশ উৎপাদন করা ইডিপাসের আর্তনাদ পাঠক অনুভব করেছে তীব্র বেদনার সঙ্গে।

ইডিপাসের বলা, ‘No one should be called happy until he died happily’ উক্তিটি আমাদের জীবনের করুণ রসের সন্ধান দেয়। কারণ, ফ্রয়েড যৌনতাকে আশ্রয় করে তত্ত্ব বানিয়েছিলেন, মস্তিষ্ককেই বাদ দিয়ে, মনকে বুঝতে চেষ্টা করে গেছেন ফ্রয়েড। তথাপি এখনো এই মতবাদের প্রভাব কম নয়, এখনো অনেকের কাছে প্রেম মানেই শরীর বা যৌনতা।

ইতিহাসে ভালোবাসা

ব্রিটিশ সম্রাট অষ্টম হেনরি ভালোবাসার প্রতি আত্মসমর্পণ করে বলেছিলেন, ‘হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে তোমার কাছে মিনতি করছি, তোমার মন আর আমাদের মধ্যকার ভালোবাসার সবটুকু আমাকে জানতে দিও।’ কোনো এক অসীম ক্ষমতার বলে সাহিত্য, শিল্প, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই বিস্তার। মিসরীয় রানি ক্লিওপেট্রা আর তার সেনাপতি অ্যান্টনিওর প্রেমের বন্ধনে মিসর পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। গ্রিক প্রেমিকা পেনেলোপ ১০৮ রাজাকে প্রত্যাখ্যান করে ২০ বছর অপেক্ষা করেন প্রেমিক অডিসিয়াসের জন্য, যেখানে ভালোবাসার অপর নাম অপেক্ষা।

রানি ভিক্টোরিয়া স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। অন্যদিকে মেরি ও তার স্বামী পিয়েরে কুরির প্রেম ছিল মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই। অনিন্দ্যসুন্দরী নর্তকী আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন মোগল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম। প্রেমের জন্য লড়াই করেন পিতার বিরুদ্ধে, পরাজিত হওয়ার পর সেলিমের চোখের সামনে জীবন্ত কবর দেওয়া হয় আনারকলিকে।

সাহিত্যে ভালোবাসা

স্বর্গে গিয়েও ভালোবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতিগাঁথা লিখে গিয়েছেন মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী। লাইলি-মজনু অধরা প্রেমের এক বিয়োগান্ত গাথা। সত্য ঘটনাকে ঘিরে তৈরি কাব্য দান্তের অমর কীর্তি ‘ডিভাইন কমেডি’র দুই কিংবদন্তি চরিত্র পাওলো এবং ফ্রান্সেসকা। স্বামী জিয়ানসিয়োতোর ভাই পাওলোকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ হয়ে পড়লে ফ্রান্সেসকা ও পাওলোকে হত্যা করা হয়।

ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনির প্রেমের সত্য কাহিনি নিয়ে নাটক লেখেন বিখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্্সপিয়ার। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়া এই যুগলের বন্ধন মিসরকে ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল। কিন্তু রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর ভুয়া খবর শুনে বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেন অ্যান্টনিও।

অন্যদিকে অ্যান্টনির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ক্লিওপেট্রাও আত্মহত্যা করেন। রোমিও-জুলিয়েট উইলিয়াম শেক্্সপিয়ার রচিত আরেকটি ট্র্যাজেডি রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান। সারা দুনিয়ায় যুগে যুগে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে প্রাণ দেওয়া এই প্রেমিক যুগল ভালোবাসার আরেক প্রতিশব্দ। ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাণ্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা এটি। মামি ইসলদের প্রেমে পড়া ত্রিস্তান ভগ্ন হৃদয় নিয়েই মারা যান।

অন্যদিকে পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি ও ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও নেপোলিয়নের উত্তরাধিকারের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারায় জেসেফাইনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। সাহিত্যজগতে মার্গারেট মিচেলের বিখ্যাত উপন্যাস ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ একটি অমর সৃষ্টি স্কারলেট ও’হারা ও রেট বাটলার। তিনি এখানে স্কারলেট ও’হারা এবং রেট বাটলারের ধারাবাহিক প্রেমের এবং ঘৃণার সম্পর্কের একটি নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। উগ্র দ্বৈত অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে শুধু কামুকতা সৃষ্টি করেছে, কিন্তু কোনো স্থায়িত্ব সৃষ্টি করেনি।

ভালোবাসার অমর উপাখ্যান

গ্রিক পুরাণমতে, দেবী আফ্রোদিতি ভালোবাসা, সৌন্দর্য এবং যৌন পরমানন্দর দেবী। রোমানদের কাছে আফ্রোদিতি ভেনাস নামে পরিচিত এবং সেখানে তিনি প্রেম ও সুন্দরের দেবী। গ্রিক মিথলজিতে সাইপ্রাসের রাজা পিগম্যালিয়ন নিজের হাতে গড়া নারী মূর্তির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে দেবী ভেনাসের মন্দিরে মূর্তিটিকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করলেন। প্রেমের দেবী ভেনাস মঞ্জুর করলেন তার প্রার্থনা। ভালোবাসার শক্তিতে পাথরে ফিরে এলো প্রাণ। এই নারী মূর্তির নাম দেওয়া হয়েছিল গ্যালাতিয়া।

গ্রিক পুরাণের হেক্টর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মনুষ্যত্বের প্রতি ভালোবাসার কারণে দাঁড়িয়ে ছিলেন দানবের মুখোমুখি। রাজা মেনেলাসের স্ত্রী অপূর্ব সুন্দরী হেলেনের প্রেমে পড়েছিলেন প্যারিস। হেলেন তখন রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। পরকীয়া প্রেমের শাস্তিস্বরূপ ধ্বংস হয়েছিল ট্রয় নগরী। প্রাচীন গ্রিকের অরফিয়াস প্রেমে পড়েন সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের। বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভূমি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর।

পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইউরিডাইস পালাতে গিয়ে সাপের বিষাক্ত ছোবলের শিকার হয়ে মৃত্যুর দেশে চলে যান। দেবতাদের বরে অরফিয়াসকে পাতালপুরি থেকে ইউরিডাইসকে নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। পাতালপুরিতে ইউরিডাইসকে নিয়ে আসার সময় শর্ত অবজ্ঞা করে পেছনে তাকাতেই তার জীবন থেকে চিরতরে বিদায় নেয় প্রিয়তমা ইউরিডাইস।

এ ভালোবাসার শহর

যুগে যুগে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে অনেক স্মৃতির ভাস্কর্য। ভালোবাসার ধূম্রজালে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দাঁড় করিয়েছে ভালোবাসার নানা সংজ্ঞা, সৌন্দর্য। সম্রাট শাহজাহান স্ত্রী মমতাজ মহলকে ভালোবেসে তৈরি করেছেন পৃথিবীর বিস্ময় তাজমহল। দেশ, কালের অতীত বিশ্বনন্দিত এই কীর্তির বিশালত্ব আর অসাধারণ সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় প্রেমিক হৃদয়। সত্যিই ‘এক বিন্দু নয়নের জল, কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল। এ তাজমহল।’

উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের বিখ্যাত রোমান্টিক উপন্যাস রোমিও-জুলিয়েটের স্মৃতিবিজড়িত ইতালির ভেরেনায় জুলিয়েটের বাড়িটি প্রেমিক যুগলের কাছে এক তীর্থস্থান। জুলিয়েটের বাড়িটির মূল ফটকের দেয়ালে পর্যটকেরা প্রেমের নানান সমস্যা, প্রিয় মানুষটিকে না পাওয়ার বেদনার কিংবা সম্পর্কের সুখ-শান্তি কামনা করে লিখে যান চিঠি-চিরকুট। প্যারিসের সিন নদীর ওপর শৈল্পিক ৩৭টি ব্রিজের রেলিংয়ে চোখে পড়ে ‘লাভ প্যাডলক’ নামে বিশেষ তালার। পৃথিবীজুড়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদের নামের অক্ষর খচিত করে এই তালাগুলো ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে চাবি ফেলে দেন সিন নদী।

নদীর কাছে আকুতি থাকে একটাই, এ বাঁধন যেন না ছিঁড়ে। ইউক্রেনের ক্লেভান শহরের কাছে অবস্থিত ‘টানেল অব লাভ’ প্রেমিক যুগলের কাছে আরেক তীর্থস্থান। সবুজ গাছপাতায় ঘেরা একটি ট্রেন টানেলের মাঝ দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেমিক যুগলেরা ও দম্পতিরা এই টানেলে বেড়াতে আসে। চুমু খেয়ে সম্পর্কের সুখ ও দীর্ঘস্থায়িতার প্রার্থনা করে তারা। প্রচলিত আছে, কোনো যুগল যদি এই পথটির ওপর দিয়ে হাত ধরে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যায় এবং তারা যদি কোনো ইচ্ছাপোষণ করে তাহলে তা বাস্তবে পরিণত হয়। মিথ কিংবা সত্যি, ভালোবাসায় বাঁধা পড়া হৃদয় চলে তার নিজ গতিতেই পথের সন্ধান করে, খুঁজে নেয় তার পথ।

ভালোবাসার ন্যায়-অন্যায়

প্রেমকে কখনো মানুষের কাছে শুদ্ধতা-পবিত্রতার প্রতীক আবার কখনো তার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে পাপাচার ও কলঙ্কের দাগ। পৃথিবীর প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। ঈশ্বরের নিষেধ উপেক্ষা করে সঙ্গিনীর প্রতি প্রেমে অন্ধ হয়ে গন্ধম খেয়েছেন আদি পিতা। এই প্রেমকে বলা হয় শাশ্বত প্রেম। হিন্দু পুরাণে শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতার প্রেমে পড়ে রাবণ তাকে অপহরণ করে সীতাকে দেহ-মনে পাওয়ার সব কলাকৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এই প্রেম কুটিল। কারণ, এটি একতরফা বলে। আবার দেবরাজ ইন্দ্র গৌতম মুনি সেজে মুনিপত্নী অহল্যার সঙ্গে সহবাস করেছেন। রাজা জনমেজয় সর্পযজ্ঞের পর যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে শুরু করেন, তখন ইন্দ্র কৌশলে রানি বোপস্টুমার ধর্ম নষ্ট করেছিলেন।

রাধা ছিলেন কৃষ্ণের মামি-মা। কিন্তু তারাও অমর হয়েছেন এই সুধা পান করে। কৃষ্ণ কেন রাধাকে বিয়ে করেননি এটি নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক। কৃষ্ণ বলেন, যেখানে আত্মা এক সেখানে বন্ধনের প্রশ্ন কোথায়? নিজকে কি বিয়ে করা যায়? কৃষ্ণের প্রতি গোপিনীদের ভালোবাসা ও রাধার আত্মত্যাগ আজও এক রহস্য। এ রহস্যের সন্ধান কেবল জানে প্রেমিক হৃদয়, যা না মানে জাত-পাত-ধর্ম কিংবা শুদ্ধ-নিষিদ্ধের বিধিবিধান।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশ সমকামী সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু শত শত বছর আগে পুরুষ হয়ে পুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট। যা ছিল পাপ, নিষিদ্ধ। কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে প্রেম এসেছিল বারবার। নার্গিস খানম, প্রমীলা দেবী, বেগম ফজিলাতুন্নেসা, রানি সোমসহ অনেকের প্রতি আসক্ত হয়েছিলেন তিনি। তারপরও প্রেমের বিরহে হয়েছেন বেদনাবিধুর। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে একা ঝরা ফুল কুড়িয়ে গিয়েছেন।

কবিগুরুর মতে ‘যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে হৃদয়ের সব পচা পুকুরে ডুবিয়ে-চুবিয়ে একাকার না করলে হয়তো ভালোবাসা পূর্ণ হয় না।’ রবিঠাকুরের জীবনে মৃণালিনী ও কাদম্বরী দেবীর দ্বন্দ্ব এক গোপন রহস্য। মৃণালিনী দেবীকে বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন কাদম্বরী দেবী। ‘জীবনস্মৃতি’তে কবি লিখেছিলেন, তার ‘চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’

প্রেম কবিকে হয়তো শান্তি দিতে পারেনি, তারই প্রকাশ পাওয়া যায় ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনাময়’ এ। কবির এই জিজ্ঞাসা মনে করিয়ে দেয় শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মাতাল হয়ে বিভ্রান্তের মতো ‘পারু পারু’ বলে ঘোরার দৃশ্যপট, যা কখনোই প্রেমিক হৃদয়ের প্রত্যাশিত জীবন হতে পারে না।  তারপরও ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা ছিল, ভালোবাসা থাকবে।

পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, ভালোবাসা নিত্যসহিষ্ণু, ভালোবাসা স্নেহ-কোমল, তার মধ্যে নেই কোনো ঈর্ষা। ভালোবাসা কখনো বড়াই করে না, উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না, সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজিও নয়। পরের অপরাধ সে ধরেই না। অধর্মে সে আনন্দ পায় না বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ।

সুতরাং ভালোবাসি বলো বারবার।

লেখা: লিহান লিমা 
ছবি: রোদসী  ও সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনারোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসা বিষয়টি ইউনিভার্সাল

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ৬, ২০২০

প্রচলিত আছে যে, ফ্রয়েড একবার এক হল থেকে বক্তৃতা দিয়ে বেরোচ্ছেন, তখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এরিক ফ্রম???। একটু হেসে বললেন, আপনি যেখানে শেষ করলেন, আমি সেখান থেকে শুরু করব।  ফ্রয়েডের যৌনতার বিরুদ্ধে এরিক ফ্রম ঘোষণা করলেন, The soul has no sex.

আমি এ পর্যন্ত যত অসাধারণ কথা শুনেছি, তার মধ্যে এটি একটি। আমরা ততদূর পর্যন্ত আমাদের মনকে বিকশিত করতে পারি, যতদূর পর্যন্ত আমরা জানি। আসলেই তো তাই। আত্মার তো কোনো লিঙ্গ নেই। আমরা মানুষকে শুধু যৌনতার মাপকাঠিতে ভালোবাসি না। যদিও ফ্রয়েডের তত্ত্ব বড় বেশি যৌনতানির্ভর। ফ্রয়েড এমনও বলেছেন, যার সঙ্গে মানুষের যৌন সম্পর্ক যত গভীর, তাকেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

তাহলে আমরা একটা পশুপাখি কিংবা গাছের পাতাকে কেন ভালোবাসি! দূর আকাশের একটি নক্ষত্রের জন্য কেন আমাদের মন হাহাকার করে ওঠে? কারণ আমরা জানি, যে পৃথিবীতে আমরা আছি, সেখানে আমরা একদিন থাকব না। মৃত্যুর বিপরীতে আমরা জীবনের একটা অর্থ দাঁড় করানোর জন্য আমরা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ভালোবাসি। ভালোবাসাই আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র অর্থ।

ভালোবাসা বিষয়টি কী? আসলেই কেন মানুষের মনে ভালোবাসা মতো পবিত্র একটি অনুভূতি জাগ্রত হয়? ভালোবাসার কী দরকার? ভালো না বাসলে কী হয় তা নিয়ে প্রচুর আধ্যাত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক, বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সখী, ভালোবাসা কারে কয়/ সে কি কেবলই যাতনাময়? সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুঃখের শ্বাস?

শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আসলেই কি এর কোনো উত্তর আছে? বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য বের করা সম্ভব, কিন্তু, প্রেম-ভালোবাসা যে কী জিনিস, তার রহস্য বের করা অসম্ভব! আসলেই কি তাই। ব্যাপারটা কিছুটা রহস্যময় হলেও মানুষ তার আদ্যোপান্ত-নাড়ি-নক্ষত্র খুঁজে বের করার জন্য পিছিয়ে নেই। আদিমকাল থেকেই মানুষ তার জীবনের একটা অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছে। মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করেছে, আমি কে? কোত্থেকে এলাম? এই পৃথিবীতে আমার কী কাজ? এই সমস্ত প্রকৃতি, বিশ্বচরাচরের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? এর সমস্ত উত্তর মানুষ খুঁজে পেয়েছে একমাত্র ভালোবাসার মধ্যে।

আদিমকাল থেকেই মানুষ তার জীবনের একটা অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছে।

ভালোবাসাই মানুষের একমাত্র আশ্রয়। অসীমের দিকে চোখ মেলে মানুষ খুঁজে পেয়েছে ঈশ্বরকে। ঈশ্বর হচ্ছেন সেই ধারণা, যার নামে সমস্ত মানুষ অনন্ত অসীমের সঙ্গে এক হয়। ঈশ্বর হচ্ছেন ভালোবাসার অপর নাম। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রাচীন ধর্ম-দর্শনের হাত ধরেই মানুষের মনে ভালোবাসার বোধ জাগ্রত হয়েছে। এটা শুধু শারীরিক কোনো ব্যাপার না। এর সঙ্গে যুক্ত আছে আত্মিক বিকাশ, বোধ ও মনন। পরবর্তীকালে বিবর্তনবাদী দার্শনিকেরা এসেও আবিষ্কার করেছেন কেন মানুষের মনে ভালোবাসা জেগে ওঠার প্রয়োজন হলো? এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা রয়েছে। মানুষ একটা কেমিক্যাল পদার্থ বটেই। তবে শুধু হরমোনগত কারণেই যে মানুষ ভালোবাসে, তা না।

ভালোবাসা সত্যিই বাস্তব বোধবুদ্ধিবহির্ভূত এক অনন্ত রহস্যময় অনুভূতির নাম। মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাকে তো আবার ঘৃণাও করে। মানুষ তো নিজেকেও ঘৃণা করে। অন্যকে ঘৃণা করে বলেই নিজেকে ঘৃণা করে, আবার নিজেকে ঘৃণা করে বলেই অন্যকে ঘৃণা করে। সাবজেক্ট ও অবজেক্টের এ এক অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব। প্লেটো তার সিম্পোজিয়ামে বলেছিলেন, মানুষ সুন্দরকে ভালোবাসে। মানুষ যেহেতু অন্য কোনো সুন্দরকে ভালোবাসে, তার মানে হচ্ছে সে নিজে সুন্দর নয়, কিংবা তার মধ্যে সুন্দরের কিছু অপূর্ণতা আছে বলেই সে অন্য কোনো সুন্দর কামনা করে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চায়।

কিন্তু নার্সিসাস তো নিজেকেই ভালোবেসেছিল, সে অধিক সুন্দর বলে। কিন্তু না, নার্সিসাসও আসলে ভালোবেসেছিল অন্যকেই। লেকের জলে নিজের ছায়া দেখে সে ভেবেছিল এ বোধ হয় অন্য কেউ। সেই অন্য কারও সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই সে লেকের পাশে বসে থাকতে থাকতে না খেয়ে শুকিয়ে মরল। গ্রিক মিথের গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যায়, নার্সিসাসের মৃত্যুতে।

কিন্তু পাওলো কোয়েলহো তার ‘অ্যালকেমিস্ট’ উপন্যাসে গল্পটির আরেকটু সংযোজন করেছেন। নার্সিসাসের মৃত্যুর পর একদিন জঙ্গলে আসেন দেবীরা, যারা নার্সিসাসের প্রণয়প্রার্থী ছিলেন। তারা লেকটি খুঁজে পান। দেখেন লেকের পাশে সুন্দর একটি ফুল ফুটে আছে। তারা লেকটিকে বলেন, আহা, তুমি কী ভাগ্যবান! তুমি একা নার্সিসাসের সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করছ! লেকটি বিস্মিত হয়ে বলে, নার্সিসাস কি দেখতে খুব সুন্দর ছিল!

দেবীরা বলেন, তোমার চেয়ে ভালো তা আর কে জানে! তোমার তীরে বসে থেকেই তো সে জীবন শেষ করে দিল। তুমি একাই তার সৌন্দর্য উপভোগ করেছ। লেকটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, নার্সিসাস সুন্দর ছিল কি না, সেটা আমার কখনো খেয়াল করা হয়নি। তার চোখে তো আমি কেবল আমার নিজের সৌন্দর্যই ঝকমক করতে দেখেছি!

আসলেই তো তাই। আমরা অপরকে ভালোবাসি তো কেবল নিজের সৌন্দর্যই অবলোকন করার জন্য। ভালোবাসা তো একটা জাদুর আয়না, যেখানে কেবল নিজেকেই দেখা যায়।

ভালোবাসা সত্যিই বাস্তব বোধবুদ্ধিবহির্ভূত এক অনন্ত রহস্যময় অনুভূতির নাম।

ভালোবাসা প্র্যাকটিসের বিষয়

ভালোবাসা সম্পর্কে সবাই দু-চার কথা বলতে পারে। অন্তত বয়ঃসন্ধিকাল যার অতিক্রম হয়েছে তার এই অভিজ্ঞতা মোটামুটি আছে যে ভালোবাসা কী, ভালোবাসার কী দরকার। সামাজিক, পারিবারিক কারণেই মানুষ তা পেয়ে যায়। তারা ভালোবাসানির্ভর অসংখ্য চলচ্চিত্র দেখছে। তারা প্রতিনিয়ত ভালোবাসা নিয়ে দুনিয়ার গান শুনছে। তারপরও ভালোবাসা যে শিখতে হয়, এটা নিয়ে খুব অল্প লোকই ভাবে।

বেশির ভাগ মানুষই শুধুু ভালোবাসা পেতে চায়, ভালোবাসতে চায় না। এর জন্য নিজেকে যতখানি আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। একজন নারী নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নিজের শরীরের দিকে মনোযোগ দেয়, হাল-জামানার বাজার চলতি ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি করতে থাকে, আর একজন পুরুষ সেই নারীটিকে জয় করার জন্য নিজেকে সেই নারীটির যোগ্য করে তোলার জন্য মনোযোগ দেয় অর্থ রোজগারের দিকে।

তারপর তারা যখন এক হয়, পরস্পরকে ভালোবাসে, সেটা একটা বাজারি ভালোবাসা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে প্রকৃত ভালোবাসা বলে কিছু থাকে না। কারণ, তারা কেউ কাউকে ভালোবাসে না, তারা শুধু ভালোবাসা কিনতে চায়। কিন্তু ভালোবাসা তো পণ্য নয়। ভালোবাসা একটা শিল্প। তাই অন্যান্য শিল্পের মতোই ভালোবাসা শিখতে হয়। নিরন্তর চর্চার মধ্য দিয়েই তা অর্জন করতে হয়।

এরিক ফর্ম???? তার ‘আর্ট অব লাভিং’ বইয়ে বলছেন, সংগীত, নাট্যকলা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র যে কোনো শিল্পেরই দুটো দিক : একটা হচ্ছে তাত্ত্বিক, আরেকটা হচ্ছে প্রায়োগিক। ভালোবাসার শিল্পকলাও সে রকম, প্রথমে জানতে হয় কীভাবে ভালোবাসতে হয়, তারপর সেটা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হয়, আমি কাকে কতটুকু ভালোবাসি সেটা প্রমাণ করতে হয়।

‘ভালোবাসা’ শুধু একটা শব্দমাত্র না, ভালোবাসা হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য। কোনো মা যদি তার সন্তানকে দুধ না খাওয়ায়, কোলে নিয়ে ঘুম না পাড়ায়, আদর-যত্ন না করে তাকে কি আমরা কোনো দিন মায়ের ভালোবাসা বলব? কেউ যদি বলে, ‘আমি ফুল ভালোবাসি’, কিন্তু, ফুলগাছের প্রতি সে কোনো যত্ন নিল না, তাকে আমরা ভালোবাসা বলতে পারি না। ঈশ্বর জোনাহ্কে বলছেন, যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে কিছু পরিশ্রমও আছে, যেখানে পরিশ্রম নেই, যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই।

‘ভালোবাসা’ শুধু একটা শব্দমাত্র না, ভালোবাসা হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য।

দায়িত্ব-কর্তব্যের সঙ্গে ভালোবাসার মধ্যে আরেকটা ব্যাপার যুক্ত আছে, সেটা হচ্ছে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা মানে হচ্ছে যে যে রকম তাকে সেভাবেই গ্রহণ করা, তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া, সেভাবেই ভালোবাসা। যখনই ভালোবাসার মানুষকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা চলে আসে, তখনই শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার আসে অধিকারবোধ থেকে। অধিকারবোধ আসে নিজের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে। অর্থাৎ তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, আমার প্রয়োজনে তোমাকে থাকতে হবে, আমার কথামতো চলতে হবে। তখনই ভালোবাসায় শর্ত আরোপ হয়ে যায়। তার মানে যখনই ভালোবাসায় শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দেয়, তখনই সেটা প্রকৃত নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকে না।

শিশুতোষ ভালোবাসা হচ্ছে এ রকম যে সে মনে করে, আমাকে সবাই ভালোবাসে বলেই আমি সবাইকে ভালোবাসি। কিন্তু প্রকৃত যথার্থ ভালোবাসা হচ্ছে আমি ভালোবাসি বলেই আমাকে সবাই ভালোবাসে। অবুঝরা বলবে, তোমাকে আমার প্রয়োজন বলেই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু যারা বুঝে তারা বলবে, না, তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই তোমাকে আমার প্রয়োজন।

একজন স্বার্থপর মানুষ শুধু নিজেকেই ভালোবাসে, সে শুধু নিজের সম্পর্কেই আগ্রহী, সে শুধু নিজের জন্যই সবকিছু চায়, অপরকে কিছু দেওয়ার মধ্যে তার কাছে কোনো আনন্দ নেই, তার সব আনন্দ নিজে পাওয়ার মধ্যে। প্রকৃত অর্থে, সে আসলে নিজেকেও ভালোবাসে না, আসলে সে নিজেকে ঘৃণা করে। কাউকে ভালোবাসাটা শুধু কোনো অনুভূতির ব্যাপার না, এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, বিচারের ব্যাপার, প্রতিজ্ঞার ব্যাপার। নানা রকম অনুভূতি আসতেও পারে, যেতেও পারে, কিন্তু বিচারবহির্ভূত সিদ্ধান্ত ছাড়া আমি কীভাবে জানব যে এই অনুভূতি সত্যিই চিরদিন থাকবে!

মা যখন তার সন্তানকে ভালোবাসে, তখন এই সিদ্ধান্তটা নেয় যে সন্তানের প্রতি তার কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে। সত্যি বলতে, সন্তান জন্মের আগেই মা এই দায়িত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়, তার কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। যখন দুজন নারী-পুরুষ একত্রিত হয়, বিয়ে করে, সংসার করে, তারাও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

পারিবারিক পছন্দের অনেক বিয়েতে স্বামী-স্ত্রী বিয়ের পর উভয়কে ভালোবাসতে শুরু করে, কারণ, তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু তাদের বিয়ে হয়েছে, বাকি জীবন একসঙ্গে পাশাপাশি থাকতে হবে সেহেতু পরস্পরকে ভালোবাসতে হবে। আমি রাস্তায় কাউকে দেখলাম আর বললাম, তার জন্য পাগল হয়ে গেছি, তাকে না পেলে মরে যাব…এর মধ্যে ভয়ংকর যৌনাভূতি থাকতে পারে, কোনো ভালোবাসা নেই।

কাউকে ভালোবাসাটা শুধু কোনো অনুভূতির ব্যাপার না, এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, বিচারের ব্যাপার, প্রতিজ্ঞার ব্যাপার।

ভালোবাসার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত

এই কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা নিউজ ভাইরাল হয়েছে, উঁচু বিল্ডিংয়ের জানালার কার্নিশ থেকে পড়ে যাওয়ারত এক শিশুকে জীবনবাজি রেখে বিল্ডিং বেয়ে উঠে বাঁচিয়েছে এক যুবক। তারপর গত বছর জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন এক ডুবুরি। শেষ পর্যন্ত সব শিশুকেই উদ্ধার করা গেছে। এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে পৃথিবীজুড়েই।

বিপদে পড়লে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবতার সেবায় মানুষের এগিয়ে আসার নজির আমরা দেখি। শীতে-বন্যায়-ভূমিকম্পে যখন একটি অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তখন অসংখ্য মানুষ এগিয়ে আসে মানবতার সেবায়। এসবই অনন্য ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ একদিনও টিকতে পারত না।

মানুষের গল্প তার ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসা ছাড়া তার কোনো গল্প নেই। মানুষের ইতিহাস তার ভালোবাসার ইতিহাস। কত বাধাবিপত্তি পার হয়ে, কত ঝড়-ঝঞ্ঝা, কত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষ আজকের পর্যায়ে এসেছে ভাবলে গা শিউরে ওঠে। ঝড়-তুফান-বৃষ্টি-খরা-ভূমিকম্প-বন্যা-মহামারি কত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন। তাদের অমানুষিক শ্রমের বিনিময়েই আজকে আমরা এই সভ্যতা পেয়েছি। আজ আমরা বেঁচে আছি এ জন্য যে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছিলেন।

পাথর ঠুকে ঠুকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আগুন জ্বেলেছিলেন বলেই আজ আমরা ম্যাচের কাঠির একটি ঠোকায় খুব সহজেই আগুন জ্বেলে ফেলতে পারি। আমাদের জীবনের সমস্ত সুবিধার জন্য আজ আমরা আমাদের পূর্বপূরুষদের কাছে ঋণী। এই ঋণ আমরা কী করে শোধ করব? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে দিয়ে। এটা আমাদের দায়। এবং এটাই হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে মানুষের ধারাবাহিক ভালোবাসা। যদি এই মানবসভ্যতার কোনো অর্থ থাকে তা একমাত্র এই ভালোবাসায়।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে মানুষের ধারাবাহিক ভালোবাসা। যদি এই মানবসভ্যতার কোনো অর্থ থাকে তা একমাত্র এই ভালোবাসায়।

পরিবারের প্রতি ভালোবাসা

পরিবার একটি প্রাচীন সংগঠন। মানুষের মায়া-মমতা-ভালোবাসার উৎস পরিবার থেকেই। পরিবারের বন্ধন আমাদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে। পরিবারই মানুষের প্রথম ও শেষ আশ্রয়। আমরা যখন বুঝতে শিখিনি, হাঁটতে-চলতে শিখিনি, তখনই মা-বাবা, বড় ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন আমাদের হাত ধরেন। তারা আমাদের হাত ধরে হাঁটতে শেখান। জীবনের চলার পথে পথ দেখান। মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে আসলে আর কিছুই তুল্য নয়। জগতে একমাত্র নিখাদ, নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত ভালোবাসা হচ্ছে মায়ের ভালোবাসা। জগতের সমস্ত ভালোবাসাই প্রথমে বিচ্ছিন্নতা থেকে এক হওয়ার চেষ্টা করে, একমাত্র মায়ের ভালোবাসাই প্রথমে এক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

জগতের প্রতিটি মানুষ তার মায়ের বিচ্ছিন্ন সত্তা। এই বিচ্ছিন্ন সত্তার শূন্যতা পূরণ করার জন্যই মানুষের আজন্ম সাধনা : ভালোবাসার মধ্যে আশ্রয় খোঁজা। আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন সত্তা, আমরা সবাই একা, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আমরা একাত্ম হতে চাই। ভালোবাসা হচ্ছে বিশ্বমায়ের একটা বিরাট কোল, সেখানে আমরা সবাই শিশুর মতো ঘুমিয়ে থাকি। বাবার ভালোবাসার মধ্যেও কিছুটা শর্ত থাকে। বাবা বলেন, তোমাকে আমার মতো হতে হবে, আমার সব স্বপ্ন তোমাকে পূরণ করতে হবে। কিন্তু মা তার সন্তানের ওপর কোনো শর্ত আরোপ করেন না। সন্তান যেমন, মা তাকে সেভাবেই গ্রহণ করেন।

পরিবারই প্রথম আমাদের এ শিক্ষাটা দেয় যে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো না। পরিবারে কিছু নিয়মশৃঙ্খলা আছে, কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে, তোমাকে অবশ্যই সেগুলো পালন করতে হবে। তুমি যখন অবুঝ ছিলে, তোমাকে পেলেপুুষে যেমন অন্যরা বড় করেছে, বড় হওয়ার পর তোমাকেও তেমন অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারই আমাদের সমজ-সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখে। আমরা একটি ব্যক্তির প্রতি যতটা না অনুরাগ প্রকাশ করি, তার চেয়ে অনেক বেশি অনুভূতি ধারণ করি পুরো একটা পরিবারের প্রতি। কোনো পরিবারের কোনো তরুণ সদস্য রোগে ভুগে বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমরা পুরো পরিবারটার জন্যই হাহাকার করে উঠি, আহা, পরিবারটার এখন কী হবে! পরিবার মানুষের সমস্ত অবলম্বন।

আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্ন পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আমরা চাই আমাদের নিজের পরিবারটি যেমন সুন্দর থাকুক, অন্যের পরিবারটিও তেমন সুন্দর হোক। পরিবার সুন্দর না হলে কোনো মানুষের জীবনই সুন্দর হতে পারে না। পরিবারের সৌন্দর্যই সভ্যতার কল্যাণে ভূমিকা রাখে। দিন শেষে আমরা যার যার ঘরে ফিরি। ঘর মানেই আপন কিছু মানুষজন। যার ঘর নেই, একমাত্র সেই জানে ঘর হারানোর যন্ত্রণা। বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্ট তাই বলছেন, হোম ইজ দ্য প্লেস হোয়ার/ হোয়েন ইউ হ্যাভ টু গো দেয়ার/ দে হ্যাভ টু টেক ইউ ইন।

বিচ্ছিন্ন সত্তার শূন্যতা পূরণ করার জন্যই মানুষের আজন্ম সাধনা : ভালোবাসার মধ্যে আশ্রয় খোঁজা।

বন্ধুমহলের প্রতি ভালোবাসা

পরিবারের পরেই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রাখে তারা বন্ধুবান্ধব। এমন অনেক কথা আছে, যা পরিবারে বলা যায় না। মানুষের একান্ত কিছু অনুভূতি আছে যা বন্ধু ছাড়া আর কারও কাছে শেয়ার করা যায় না। জীবনে এমন কিছু সমস্যা আসে, যখন পরিবারকেও পাশে পাওয়া যায় না। পরিবার যেমন নিখাদ ভালোবাসার একটি জায়গা, তেমনি কিছু স্বার্থেরও জায়গা। একমাত্র গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্কটি সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে। কিছু বন্ধুবান্ধব আমাদের থাকে, যারা পরিবারের সদস্যদের মতোই আপন।

পরিবার যদি হয় একটি ঘর, বন্ধুবান্ধব হচ্ছে সেই ঘরের একেকটি জানালা। যেসব জানালা দিয়ে আমরা সারা বিশ্বটাকে দেখি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও আমরা সেসব বন্ধুর দেখা পাই। পরিবার নিয়ে আমরা সারাক্ষণ চলতে পারি না। আমার প্রতিটি চলার পথে পরিবার সঙ্গী হয় না। কিন্তু জীবনের প্রতি পদে পদেই একজন বন্ধু দরকার। বন্ধুরা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সব দুঃখের সঙ্গী। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

বন্ধুবান্ধবের প্রতিও আমাদের অলিখিত কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে। সে আমার জন্য যা করেছে, আমিও যদি তার জন্য তা না করি তাহলে সে আমার জন্য থাকবে কেন! অলিখিত বলেই হয়তো বন্ধুত্বের সম্পর্কটি চিরন্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্কেও নানা ভুল-বোঝাবুঝি, কথা-কাটাকাটি হয়। এমন অনেক বন্ধু আছে, যার সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। কিন্তু একদিন রাস্তায় চকিতে দেখা হয়ে গেলে, সুমনের গানের মতো আমাদের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে, হঠাৎ রাস্তায় অফিস অঞ্চলে, হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে, বন্ধু, কী খবর বল?

বন্ধুরা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সব দুঃখের সঙ্গী। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

লেখা: কামরুল আহসান 
ছবি: রোদসী 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook