অরুন্ধতি রায়। যার লেখায় প্রধান চরিত্ররা অ-প্রধান হয়ে ওঠে । বলে অথবা না-বলে যিনি বর্ণনা করে যেতে পারেন, চ্যালেঞ্জ নিয়ে তৈরি করতে পারেন এমন একটি পথ, যেপথ পাঠকের কাছে একেবারে নতুন। সম্প্রতি ‘অল দ্য লাইভ’স উই নেভার লিভড’ (All The Lives We Never Lived) উপন্যাসের জন্য ডিএসপি পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন অরুন্ধতি।
হিন্দুস্তান টাইমস-এ দেওয়া অরুন্ধতি রায়ের সাক্ষাৎকারটি অনূদিত করে রোদসীর পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো:
প্রশ্ন : আমরা একইসঙ্গে অ-লৌকিক এবং লৌকিক জীবন যাপন করি না। সেক্ষেত্রে, অ-লৌকিক চরিত্র কীভাবে লৌকিক হয়ে উঠতে পারে?
আমাদের লোকজীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হলো ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো। একটি বই ইতিহাস, স্মৃতি, অ-লৌকিক থেকে লৌকিক কাহিনী তৈরি করতে পারে। আমি আমার লেখায় চেয়েছি, জীবিতদের স্বর ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো ধারণ করুক।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারী চরিত্রগুলো নিয়ে লেখেন তখন কি ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়? গায়েত্রী চরিত্রটি নিয়ে কি কোন জটিলতায় পড়েছিলেন?
গায়েত্রী চরিত্রটি আমার কাছে খুব স্বাভাবিক এবং পরিপূর্ণ রূপে ধরা দিয়েছে। তার শক্তিশালী কণ্ঠস্বর, দারুণ ব্যক্তিত্ব একটি সময় নিয়ে চিন্তা করতে সহায়তা দিয়েছে। একটি জটিল অংশে সে তার বন্ধু বালির কাছ থেকে ইংরেজিতে লেখা একটি চিঠি পায়। এটি ১৯৩০সালে মৃত এক নারীর স্বরের প্রতিস্বর। এখানে বর্ণনা একেবারে পরিবর্তন হয়ে যায়। ওই বৃদ্ধের সময়-তার শ্রেণি, তারা কী বিশ্বাস করতো; সেই সময়ে সত্য বলে কি প্রচলিত ছিল তাই সামনে চলে আসে। এমন একটি জায়গায় গায়েত্রীর চিঠিগুলি স্বাভাবিক আর স্বত:স্ফুর্তভাবে আমাকে সেই সব সামনে নিয়ে আসতে দিয়েছে। এখানে ভিন্ন বা এককভাবে কোন নারী বা পুরুষকে খোঁজ করা হয়নি। সত্যিই না।
প্রশ্ন : পুরস্কারপ্রাপ্তিকে কীভাবে দেখেন?
পুরস্কারপ্রাপ্তির মাধ্যমে একজন লেখক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন। যেহেতু সাহিত্যিকগণ পুরস্কারের জন্য বইটি মনোনীত করেন, সেহেতু পুরস্কারপ্রাপ্তি একজন লেখকের কাছে তার কাজের সংশোধনের মতো।
প্রশ্ন : আপনি ইংরেজি, হিন্দি এবং বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন। চিন্তা করার জন্য কোন ভাষাটি বেছে নিতে চান?
বাংলা ও ইংরেজি।
প্রশ্ন: লেখা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আপনি কি মনে করেন, ডিএসসি পুরস্কারের মতো উদ্যোগগুলি উদীয়মান লেখকদের পরিপূর্ণ পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করবে?
লেখালেখিকে যেকোন দেশে পরিপূর্ণ পেশা হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব না। বেশিরভাগ লেখক অন্য পেশায় নিযুক্ত থাকেন। পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক সৃজনশীল রয়েছেন, কিন্তু তারা কেবল লেখালেখিই করছেন না। এর পাশাপাশি অন্যপেশায় নিযুক্ত রয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনি বর্তমানে কি পড়ছেন? বই পড়ার জন্য কত সময় বরাদ্দ রাখেন?
আমার একসঙ্গে দুই থেকে তিনটি বই পড়ার ঝোঁক রয়েছে। এই সময়ে জেনেট ম্যালকম-এর ‘জার্নলিস্ট অ্যান্ড দ্য মার্ডারার’ বই পড়ছি। এতে সংবাদ এবং সাংবাদিকের মধ্যে অস্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে লেখা রয়েছে।
প্রশ্ন: বিশেষভাবে কার লেখা আপনি পছন্দ করেন, কেন পছন্দ করেন?
আমি অ্যালিস মুনরোর কাজকে ভালোবাসি – কারণ তার ছোট গল্পগুলিতে আধ্যাত্মিকতা রয়েছে। তার গল্পগুলির ছাপ মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তিনি সংক্ষিপ্ত বিররণে লিখে ফেলতে পারেন। মুনরোর পর্যবেক্ষণ তীক্ষ্ন, আগে থেকে বোঝা যায় না তার লেখা আমার কাছে উপহারের মতো।
অনুবাদ : স্বরলিপি