রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

শিল্প-সংস্কৃতি

ঢালিউডবিনোদনবিশেষ রচনাশিল্প-সংস্কৃতিসিনেমা

শুভ জন্মদিন নায়ক রাজ

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ২৩, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

সাদা পর্দা থেকে শুরু করে রঙিন পর্দা, সব ধাপেই সমভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন তার অসাধারণ অভিনয়ের নৈপুন্যতা। সাধারণ এক মানুষ থেকে হয়ে উঠেছিলেন নায়ক রাজ। বলা হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক রাজ্জাকের কথা। আজ (২৩ জানুয়ারি) এই মহান নায়কের জন্মদিন। অন্তর্ধানের এতো বছর পরেও তিনি আজো বেঁচে আছেন তাঁর সকল ভক্তের স্মৃতির মণিকোঠায়।

ষাট দশক থেকে শুরু করে প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রাজত্ব করা দাপুটে অভিনেতা আব্দুর রাজ্জাক, যিনি নায়ক রাজ্জাক হিসেবে পরিচিত; ১৯৪২ সালের আজকের দিনে কলকাতার নাকতলায় জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি হয় সপ্তম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে। সরস্বতী পূজা চলাকালীন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কেন্দ্রীয় চরিত্রের জন্য তাঁকে মনোনীত করেন। পরবর্তীতে কলেজ জীবনে ‘রতন লাল বাঙ্গালি’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর সিনে-জগতে প্রবেশ ঘটে। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কারণে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। আভিনয়ের ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ঘরোয়া নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হোন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ’১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরি স্টেশন’ সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। নায়ক রাজ্জাকের অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ঘুরে যায় ১৯৬৬ সালে পৌরাণিক কাহিনীধর্মী ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে লখিন্দর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি মাইলফলক হয়ে আছে। মূলত সেই থেকেই তাঁর ক্রমান্বয়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছানোর যাত্রা শুরু হয়ে যায়।

 

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার জীবন

বিভিন্ন ঘরানার ছবিতে বহুমুখী চরিত্রে সাবলীলভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন এই শক্তিমান অভিনেতা। পৌরাণিক চরিত্র বেহুলার স্বামী লখিন্দর হিসেবে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তেমনি এর পরবর্তীতে লোককাহিনীধর্মী ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’ ছবিতে শাহজাদার চরিত্রেও অভিনয় করে হয়েছিলেন প্রশংসিত। রোমান্টিকধর্মী ছবিতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। নারায়ণ ঘোষ মিতার রোমান্টিক ঘরানার ‘নীল আকাশের নিচে’ ছবিতে মামুন চরিত্রে অভিনয় করেন। রাজনৈতিক-ব্যঙ্গধর্মী ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে তাঁকে দেখা যায় পরাধীন দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে। এছাড়াও তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবি ছিলো ‘সংসার’, ‘মনের মত বউ’, ‘আবির্ভাব’, ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘ওরা এগার জন’, ‘ছুটির ঘন্টা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সহ মোট ৩০০ টি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

জুটি প্রথা

নায়ক রাজ রাজ্জাক অনেক স্বনামধন্য অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয়ের মাধ্যমে দারুন জুটি গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। সুদর্শন রাজ্জাক এবং লাস্যময়ী কবরী জুটি আজো জনমনে দাগ কেটে আছে। ‘তুমি যে আমার কবিতা’,  কিংবা ‘সে যে কেন এলোনা,কিছু ভালো লাগেনা’ এই জুটির গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ‘পীচ ঢালা পথ’ ছবির মাধ্যমে জুটি হয়ে আসেন ববিতার সাথে। সফলতার ধারাবাহিকতায় ববিতার বিপরীতে পরবর্তীতে তাঁকে দেখা যায় ‘টাকা আনা পাই’, ‘স্বরলিপি’, ‘মানুষের মন’, ‘প্রিয়তমা’-র মতো জনপ্রিয় ছবিগুলোতে। আরেক গুণী অভিনেত্রী শাবানার বিপরীতে তিনি সর্বাধিক ৪০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

সাফল্য ও পুরস্কারপ্রাপ্তি

১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে তিনি মোট পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে পেয়েছিলেন আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তাঁকে স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদান করেন। এছাড়াও বাচসাস পুরষ্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরষ্কার সহ অসংখ্য পুরষ্কার তাঁর ঝুলিতে রয়েছে।

ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার জীবনে সফল, সকলের পছন্দের এই মানুষটি ২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে এই দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেছেন চিরতরে। বাংলার চলচ্চিত্র গগণে যতদিন সূর্য উদিত হবে, চিত্রনায়ক রাজ্জাকের নাম জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বলিউডবাংলাদেশ ও বিশ্ববিদেশবিনোদনরূপ ও ফ্যাশনশিল্প-সংস্কৃতিহলিউড

অদ্ভুতুড়ে সাজপোশাকে বিশ্বের তারকারা

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১৯, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

সাল ২০১৯, মেট গালা ইভেন্টের পর্দা উন্মোচিত হলো। পুরো নেট দুনিয়ায় এই ইভেন্টে উপস্থিত বলি-অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার অদ্ভূত সাজপোশাকের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। দিন দিন আপগ্রেড হওয়া ফ্যাশন সেন্স নিয়ে সকলের প্রশংসা কুড়ানো এই জনপ্রিয় তারকার অদ্ভুতুড়ে অবতার দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। শুধু প্রিয়াঙ্কা চোপড়া নয়, ফ্যাশন শো’র এই আসরে লেডি গাগা, কেটি পেরি, কিম কার্দেশিয়ান সহ বিশ্বের নামকরা সব তারকারা একে একে হাজির হয়েছিলো এমনই সাজে। তাদের সাজ পোশাক দেখে মনে হচ্ছে যেমন খুশি তেমন সাজো’র প্রতিযোগিতা চলছে যেন। কি এই মেট গালা? আর কেনইবা তাদের এই অদ্ভূত দর্শন? সবকিছুই জানবো আজ।

আর আট-দশটা ফ্যাশন শো থেকে ভিন্ন, মেট গালা বেশ অসামান্য এক শো। ফ্যাশন জগতের অস্কারের সমতূল্য, ইভেন্টটি সর্বদা এর থিম এবং পোশাকের জন্য সবাইকে অবাক করে দেয়। ১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মেট গালা প্রথম কয়েক দশক ধরে নিউ ইয়র্ক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুষ্ঠিত অনেক বার্ষিক সুবিধার মধ্যে একটি ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সাল থেকে অ্যানা উইনটর দ্বারা সংগঠিত এবং সভাপতিত্ব করা, মেট গালা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বিশিষ্ট ও একচেটিয়া সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে। এটি নিউ ইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় তহবিল সংগ্রহের মধ্যে একটি। ২০১৩ সালে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, তার পরের বছর ১২ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে রেকর্ড ১৭.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সগ্রহ করা হয়েছে। মেট গালা বা মেট বল, যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কস্টিউম ইন্সটিউট গালা বা কস্টিউম ইনস্টিটিউট বেনিফিট বলা হয়; প্রতি বছর মে মাসের প্রথম সোমবার নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট –এ অনুষ্ঠিত হয়।

কারা আমন্ত্রিত হয়?

ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ এর প্রধান সম্পাদক এই পুরো ইভেন্টের মূল হোতা। কমিটি গঠন থেকে শুরু করে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা তৈরি করা সবই হয় তার তত্ত্বাবধানে। এই ইভেন্টে ফ্যাশন, ফিল্ম, টেলিভিশন, থিয়েটার, সঙ্গীত, ব্যবসা, খেলাধুলা, সোশ্যাল মিডিয়া এবং রাজনীতি সহ বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রের সেলিব্রেটিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এতে। মোটামুটিভাবে ৬৫০ থেকে ৭০০ আমন্ত্রিত অতিথি থাকেন এই শো তে। অতিথি এবং হোস্টদের তালিকা দৃশ্যত প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ব্লেক লাইভলি, সারা জেসিকা পার্কার, রিহানা সহ পরিচিত দীর্ঘদিনের মেট গালা অংশগ্রহণকারী ছাড়াও এখানে প্রতি বছর তরুন সৃজনশীল ব্যক্তি এবং ইন্ড্রাস্ট্রি প্যারাগনকে স্বাগত জানানো হয়।

থিম

এই ইভেন্টের সবচেয়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে যা থাকে তা হলো থিম। প্রত্যেক বছরই একটা করে থিম থাকে, আমন্ত্রিত অতিথিরা এই থিম অনুসরণ করে নিজেদের উপস্থাপন করে থাকে তবে তা কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। এতে ককটেল আওয়ার এবং একটি আনুষ্ঠানিক ডিনার অন্তর্ভুক্ত। ককটেল আওয়ারের সময়, অতিথিরা রেড কার্পেটে হেঁটে আসেন এবং পৃথিবীর বিখ্যাত সব আলোকচিত্রীদের ক্যামেরাবন্দি হোন। ফ্যাশনের পরিপ্রেক্ষিতে, ডিজাইনারদের জন্য এটি একটি সুযোগ এবং সেলিব্রেটিদের সাথে পোশাক নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য একটি উপায়। তারকাদের সাধারণত নিয়ম মেনে চলার পরিবর্তে উদ্ভাবনী পোশাক পরতে উৎসাহিত করা হয় এখানে। নির্বাচিত থিম একটি গল্প বলে বা ইতিহাস থেকে কিছু শেখায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালের ইভেন্টের থিম ছিল ‘স্বর্গীয় সংস্থাঃ ফ্যাশন এবং ক্যাথলিক কল্পনা’। এটি ভ্যাটিকান থেকে শতাধিক পবিত্র জিনিসপত্র প্রদর্শন করে। রিহানা পোপের পোশাক পরে, ক্যাটি পেরি ডানা সহ দেবদূত অবতারে নিজেকে উপস্থাপন করেছগিলেন। অদ্ভুত দর্শনের সাজ পোশাকে হাজির হওয়া ২০১৯ সালের মেট গালা ইভেন্টের থিম ছিলো ‘ক্যাম্পঃ নোটস অন ফ্যাশন’। না, এখানে ক্যাম্প বলতে স্লিপিং ব্যাগ এবং তাঁবুর সহকারে ক্যাম্প নয় বরং অতিরঞ্জিত ফ্যাশন হিসেবে ক্যাম্প বুঝানো হয়েছে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লেখক ও পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সুজান সোনট্যাগের লেখা ‘নোটস অন ক্যাম্প’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই থিম নির্ধারণ করা হয়েছিলো। ২০২২ সালের থিম ছিলো ‘আমেরিকাঃ অ্যান অ্যানথোলজি অফ ফ্যাশন’। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও নামি-দামি তারকারা মেট গালার রেড কার্পেটে চমক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।

-ছবি সংগৃহীত

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়দিবস সবিশেষবাংলাদেশ ও বিশ্ববিশেষ রচনাশিল্প-সংস্কৃতি

আনন্দের ফেরিওয়ালা সান্তা ক্লজ

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

বছর ঘুরে ডিসেম্বর মাসে চারদিকে বড়দিনের এক সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। তবে এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা না গেলেও, মূলত এই দিনে বিশ্বব্যাপী বেশ আড়ম্বরভাবে ক্রিসমাস ডে পালিত হয়। সবকিছু ছাপিয়ে ক্রিসমাস মরসুমে, শিশুদের কাছে সান্তা ক্লজের চেয়ে বেশি আইকনিক আর কোন চিত্র নেই। কিন্তু কে এই সান্তা? ঠিক কোথা থেকে তার সূচনা হয়েছিল এবং কীভাবে তিনি বছরের পর বছর ধরে একটি আইকনিক ক্রিসমাস ব্যক্তিত্ব হিসেবে টিকে আছেন? আসো জেনে নিই।

সান্তা ক্লজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি কিংবদন্তি চরিত্র। তিনি সেইন্ট নিকোলাস, ফাদার খ্রিষ্টমাস বা সাধারণভাবে সান্তা নামে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি খ্রিষ্টমাস ইভ বা ২৪ ডিসেম্বর তারিখের সন্ধ্যায় এবং মধ্যরাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে উপহার দিয়ে যান। বলা হয়, সান্তা ক্লজ হলো বড়দিনের জাদুগর, যিনি সুখ এবং আনন্দ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে যান। প্রতি বছরের এই দিনে শিশু কিশোররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন উপহারের ঝোলা নিয়ে সান্তা ক্লজ হাজির হবে। রহস্যময়ী এই সান্তা ক্লজ নিয়ে আরো কিছু তথ্য জেনে নিই।

-আমরা সান্তাকে সেই চরিত্র হিসেবেই সবচেয়ে ভালো জানি যিনি ক্রিসমাস ইভে উপহার প্রদান করেন। কিন্তু তার উৎস কল্পকাহিনী থেকেও অনেক দূরে। সান্তার গল্পটি ২৮০ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালের। সেন্ট নিকোলাস একজন সন্ন্যাসী ছিলেন যিনি দরিদ্র ও অসুস্থদের সাহায্য করার জন্য গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন। একটি গল্পে দাবী করা হয়েছে যে তিনি তিনজন দরিদ্র বোনের জন্য যৌতুক প্রদানের জন্য তার সম্পদ ব্যবহার করেছিলেন, তাদের বাবার দ্বারা বিক্রি হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন। তিনি শিশু এবং নাবিকদের একজন রক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং রেনেসাঁর মাধ্যমে তিনি ইউরোপের সবচেয়ে সাধুদের মধ্যে ছিলেন।

-সান্তা ক্লজ নাম নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছে। যখন নেদারল্যান্ডের লোকেরা নিউ ওয়ার্ল্ড উপনিবেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তারা তাদের সাথে নিয়ে এসেছিল সিস্টারক্লাসের কিংবদন্তি। ১৭০০ এর দশকের শেষের দিকে, উদার সিস্টারক্লাসের গল্প আমেরিকান পপ সংস্কৃতিতে পৌঁছেছিল যখন ডাচ পরিবারগুলো সাধুর মৃত্যুকে সম্মান জানাতে একত্রিত হয়েছিলো এবং সময়ের সাথে, নামটি সান্তা ক্লজে পরিণত হয়েছিল।

-ক্রিসমাস মানেই উৎসবের দিন, সান্তা ক্লজ থেকে উপহার পাওয়ার দিন। কিন্তু তুমি জানো কি আমেরিকার প্রথম দিকে, ক্রিসমাস এমন উৎসবের ছুটি ছিলোনা যা আমরা আজকে জানি এবং ভালোবাসি। এটি নিউ ইংল্যান্ডে পরিহার করা হয়েছিল। তখন ছিলোনা এমন কোন উৎসবমুখর পরিবেশ, না ছিলো উপহারের ডালি নিয়ে আসা কোন প্রফুল্ল ব্যক্তিত্বের আগমণ। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে কবিতা এবং গল্পের একটি স্ট্রিং সেন্ট নিককে একটি মেকওভার দিয়ে এবং পারিবারিক ও একত্রিকতার থিমগুলোতে ফোকাস করার মাধ্যমে এর নতুন সংজ্ঞা দেয়।

-সান্তা ক্লজ বললেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে গোলাকার ভুঁড়ি ওয়ালা লাল স্যুট পরা এক অবয়বের। কিন্তু প্রথম দিকে কিন্তু তাকে এভাবে চিত্রিত করা হয়নি। ১৮০৯ সালে লেখক ওয়াশিংটন আরভিং তার বই “নিকারবকার’স হিস্ট্রি অব নিউ ইয়র্ক”-এ সান্তার চিত্রকে আকার দিতে সাহায্য করেছিলেন। উপন্যাসে, তিনি সেন্ট নিকোলাসকে ওয়াগনের ছাদে উড়ে যাওয়া একজন পাইপ-ধূমপানকারী স্লিম ফিগার হিসেবে বর্ননা করেছেন। অন্যদিকে, সান্তা ক্লজকে প্রথমে বিভিন্ন রঙের স্যুটে চিত্রিত করা হয়েছে। কখনও কখনও সে স্লেজের পরিবর্তে ঝাড়ুতে চড়েছে।

-সান্তা এবং তার এলভস চমৎকার তালিকায় বাচ্চাদের উপহার প্রস্তুত করতে এবং বিতরণ করতে কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু কথিত আছে যে, যারা এই তালিকায় থাকেনা, খারাপ আচরণ করা শিশুদের উপহার নেয়ার স্টকিংসে কয়লার টুকরো রেখে আসে।

-বলা হয় যে সান্তার যে বাহন রয়েছে, সেই স্লেজ হলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী যান। বড়দিনের প্রাক্কালে, সুন্দর তালিকায় থাকা সমস্ত বাচ্চাদের উপহার দেয়ার জন্য সান্তাকে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করতে হবে। বিশ্বে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন শিশু রয়েছে। তাই সান্তার স্লেজকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৮০০ মাইল গতিতে চলতে হবে।

-সান্তার রয়েছে নয়টি হরিন, যারা তার স্লেজ উড়াতে সাহায্য করে যাতে সে উপহার দিতে পারে। সান্তার হরিণকে বলা হয় ড্যাশার, নর্তকী, প্রাণসার, ভিক্সেন, ধূমকেতু, কিউপিড,ডোনার, ব্লিটজেন এবং রুডলফ।

-সান্তা উত্তর মেরুতে থাকে নাকি ফিনল্যান্ডে থাকে তা মানুষ ঠিক করতে পারেনা। তবে উত্তর মেরুকে সান্তার বাড়ি হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিলো। কেন? উত্তরটি সহজ। তার স্লেজ চালানোর জন্য যে রেইনডিয়ার আছে তাদের বাঁচিয়ে রাখা। রেইনডিয়ারগুলোর শীতল জলবায়ুতে বসবাস করার প্রবণতা রয়েছে; তারা মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো কম হিমায়িত তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এটি কেবল বোঝায় যে, সান্তা এমন একটি স্থানে বাস করবে যেখানে ঠাণ্ডা আবহাওয়া তার সাহায্যকারীদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে।

-অনেক সময় সান্তাকে হো হো হো শব্দ করতে শোনা যায়। এই হো হো হো হল সান্তার আনন্দ এবং উল্লাস প্রকাশের উপায়। যদি সে হা হা হা বলে, লোকেরা মনে করতে পারে সে তাদের দেখে হাসছিল।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
টেলিভিশনবিনোদনশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতিসিনেমা

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ

করেছে Shaila Hasan নভেম্বর ১৩, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

 

১৯৮৫ সালে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ’৮৮ তে ‘বহুব্রীহি’, ’৯০ এ ‘কোথাও কেউ নেই’; কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকা এই সময় গুলো নির্মানের কারিগর হুমায়ূন আহমেদ। তাঁকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য সাহিত্যের কোন শাখার বাঁধনে বাঁধা যাবেনা। তার বিচরন ঘটেছিল উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে। আজ এই গুনী ব্যক্তির জন্মদিন। কোন নির্দিষ্ট শ্রেনীর দর্শকের জন্য নয়, সকল শ্রেনীর, সকল বয়সের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়।

পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজের ৬ সন্তানের মধ্যে একজন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। আইনের লোক হলেও তিনি ছিলেন বেশ সাহিত্যনুরাগী। তখনকার সময়ের পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিতে তাঁর বিচরন ছিলো। মা আয়েশ ফয়েজের লেখালেখির অভ্যাস না থাকলেও শেষ জীবনে রচনা করেছেন একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ। ছোটবেলায় হুমায়ুন আহমেদের নাম তাঁর বাবার নামের সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। ডাকনাম কাজল। তাঁর বাবার ছেলে মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে খুবই পছন্দ করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে শামসুর রহমান হয়ে যায় হুমায়ূন আহমেদ এবং বাবুল হয়ে যায় মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। লেখালেখিতে শুরুটা করেছিলেন উপন্যাস লিখার মধ্য দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ‘নন্দিত নরকে’ নামে ১ম স্বল্প দৈর্ঘ্য উপন্যাস রচনা করেন। সীমিত পরিসরেই উপন্যাসের আবহ তৈরি করতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’।

নাটক নির্মানের ক্ষেত্রেও দেখিয়েছিলেন সুনিপুন দক্ষতা। বাংলা নাটকের ব্যাকরনই পাল্টে দিলেন তিনি। ‘এইসব দিনরাত্রি’ ছিল ১ম ধারাবাহিক নাটক। এটা এতই জনপ্রিয় ছিল যে প্রচারের সময় ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলো ফাঁকা থাকত। সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা, টানাপোড়েন, মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ে কাহিনীটি আবর্ত ছিল। এরপর প্রচারিত হয় নাটক ‘বহুব্রীহি’। এটি ছিল মূলত একটি হাস্যরসাত্মক নাটক। এই নাটকের মাধ্যমে সেসময় মুক্তিযুদ্ধকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুললেন তিনি। ‘তুই রাজাকার’ এই একটি সংলাপেই স্বাধীনতা বিরোধীর প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। এর পরের বছরই তৈরি করেন ‘কোথাও কেউ নেই’। এই নাটকের বাকের ভাইয়ের চরিত্র এতটাই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, নাটকে তার সম্ভাব্য ফাঁসি রুখতে দলে দলে লোক শ্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে, হুমায়ূন আহমেদের বাসায় আক্রমণ করে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তিনি থানায় জিডিও করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বহু এক পর্বের নাটক নির্মান করেন। খেলা, অচিনবৃক্ষ, খাদক উল্লেখযোগ্য।

১৯৯৪ সালে ‘আগুনের পরশমনি’ চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচালনায় অভিষেক ঘটে। সাহিত্য যার রক্তে মিশে আছে তাঁকে কি ধরাবাঁধা নিয়মে বাঁধা যাবে? তাইতো চলচ্চিত্র নির্মানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকতার চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক এই ছবিতে ছিল অসাধারন গল্প ও দূর্দান্ত নির্মানশৈলীর মিশেল। পরবর্তীতে নিজস্ব উপন্যাস অবলম্বনে মোট ৮টি ছবি নির্মিত হয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোমোট ৬টি চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জিত হয়েছিল আগেনের পরশমনি, দারুচিনি দ্বীপ ও ঘেটুপুত্র কমলা ছবির জন্য।

লিখেছিলেন প্রায় ৩শতাধিক গ্রন্থ। একুশে বইমেলায় ১৯৯০ ও ২০০০ সালে তাঁর বই ছিল বেস্ট সেলার। তাঁর জাদুকরী লেখাতে কিছু কিছু চরিত্র হয়ে উঠে জীবন্ত। রহস্যময় এক চরিত্র ছিল মিসির আলি, যার ১ম উপস্থিত ঘটে দেবী উপন্যাসে। মিসির আলির কাহিনীগুলো ক্রাইম-ফিকশন মত নয়; বরং তা মনস্তাত্ত্বিক ও যুক্তিনির্ভর কাহিনীর বুনটে ঠাসা। আবার হিমু চরিত্র ছিল মিসির আলির একদম বিপরীত। স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ত্বের অধিকারী উদাসীন হিমু একবিংশ শতাব্দীর ১ম দশকের তরুন্দের ব্যাপক অনুপ্রাণিত করেছিল। এত গুনী ও বড় মাপের মানুষ কিন্তু তাঁর মধ্যে সবসময় বাস করত এক উচ্ছল শিশু, যে সময় পেলেই নুহাশ পল্লীতে মেতে উঠত আড্ডায় কখনোবা গানের আসরে। গানের অনুরাগী ছিলেন প্রচন্ড। নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে গানও রচনা করেছিলেন। ভালোবাসতেন বৃষ্টির শব্দ এবং জোছনার বাঁধভাঙ্গা হাসি; যা তাঁর রচিত গানেও প্রকাশ পায়-

যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো

চলে এসো এক বরষায়।।

অথবা,

ও কারিগর, দয়ার সাগর

ওগো দয়াময়

চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরন হয়।।

যে মানুষটি বাংলা সাহিত্যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, সকল বয়সি মানুষকে আবার বইমুখি করেছিল, সহজ সাধারন কাহিনী ও চরিত্রসমূহকে তাঁর জাদুকরী লেখনির মাধ্যমে জীবন্ত করে রেখেছিল সেই মানুষটি সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে ২০১২ সালে মারা যান। আজো রাত ফুরিয়ে দিন হয়, সময়ের পর সময় চলে যায়, কিন্তু এক হুমায়ূন আহমেদ আজো বেঁচে আছেন আমাদের সকলের অন্তরে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
টেলিভিশনবিনোদনশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতিসিনেমা

শুভ জন্মদিন বাকের ভাই

করেছে Shaila Hasan অক্টোবর ৩১, ২০২২

শায়লা জাহান

 

একাধারে বাংলাদেশের টেলিভিশন, থিয়েটার এবং চলচ্চিত্রের আইকন হিসেবে খ্যাত, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন; আসাদুজ্জামান নূরের জন্মদিন আজ। বিনোদন জগতে সফলতার সাথে দীর্ঘ পথচলা যাকে এই শিল্পে কিংবদন্তি করে তুলেছে।

কারাগার করিডোর; একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে মুনা, অপর প্রান্তে বাকের ভাই। সকল সঙ্কোচ, দ্বিধা-দ্বন্দ কাটিয়ে জেলের গ্রীলের উপর দিয়ে  দুজন দুজনের হাত আঁকড়ে ধরে আছেন। কি এক শূন্যতা, ভয়াবহ হাহাকার দুজনকে ঘিরে রেখেছে। পরের দৃশ্যে এক ভোরে, আধো-অন্ধকারে, চারদিকে ফযরের আজান হচ্ছিলো। জেলগেট দিয়ে বাকের ভাইয়ের লাশ বের করে দেয়া হয়। সৎকারের পর শোকে স্তব্দ একাকি মুনা ভোরের আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে। গুণী নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের  ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের এই শেষ দৃশ্য দেখে কারো চোখ পানিতে ভাসেনি এমন পাওয়া দুষ্কর। নাটক এবং বাস্তবতার মাঝে যখন চমৎকার মেলবন্ধন হয়ে যায় তখন তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া আসলেই কঠিন হয়ে পড়ে। আর তাই তো এই ধারাবাহিকটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, বাকের ভাইয়ের সম্ভাব্য ফাঁসি ঠেকাতে প্রতিবাদমুখর দর্শকদের রাস্তায় ঢল নেমেছিল। বাকের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করা আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়ের এটাই সার্থকতা যে আজ এত বছর পর এসেও তিনি জনমনে আজো বাকের ভাই হিসেবে বেঁচে আছেন।

১৯৪৬ সালে আজকের এই দিনে (৩১ অক্টোবর) নীলফামারী জেলায় জন্ম নেয়া আসাদুজ্জামান নূরের কর্মজীবন শুরু হয় বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীতে কাজের মাধ্যমে। চিত্রালীর অভ্যর্থনাকারী হিসেবে বিখ্যাত অভিনেতাদের সাক্ষাৎকার নিতে যেতেন। সেভাবেই পরিচয় হয় অভিনেতা আলী জাকেরের সাথে,যিনি সেসময় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ছিলেন। প্রথমে দলটির নেপথ্যে কন্ঠদান দিয়ে শুরু করেন। পরবর্তীতে ‘তৈল সংকট’ নামে একটি নাটক মঞ্চায়স্থ হওয়ার দুদিন আগে এর প্রধান অভিনেতা আবুল হায়েত হঠাৎ আহত হওয়াতে তাঁর পরিবর্তে আসাদুজ্জামানকে নেয়া হয়। এভাবেই তাঁর অভিনয়ের শুরু। এই দলের হয়ে ১৫টি নাটকে ৬০০ বারের বেশি অভিনয় করেছেন। দিয়েছেন নির্দেশনাও, যার মধ্যে ‘দেওয়ান গাজির কিসসা’ প্রায় তিন শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়ে রেকর্ড গড়েছে।

শুধু থিয়েটারের মঞ্চে নয়, টেলিভিশন পর্দায়েও তিনি রেখেছিলেন তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর। ১১০টিরও বেশি টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। প্রথম টেলিভিশন অভিনীত নাটক ছিল রঙ এর ফানুশ, যার পরিচালক ছিলেন গুনী নির্মাতা আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’, ও ‘সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড’। নব্বইয়ের দশকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের রচিত কথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ও ‘আগুনের পরশমণি’। এছাড়াও দেশটিভিতে প্রচারিত ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন।

হাওয়া মে উড়তা যায়ে, প্রিয় গান শুনতে শুনতে চাবির রিং হাতে নিয়ে ঘোরা মহল্লার বখাটে যুবক বাকের চরিত্র থেকে শুরু করে জীবনের সকল স্তরেই তিনি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থেকে হয়েছেন চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। স্বাধীনতা পুরষ্কার সহ পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরষ্কার।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনজীবনযাত্রাবিনোদনশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

হারিয়ে যাওয়ার চার বছর

করেছে Shaila Hasan অক্টোবর ১৯, ২০২২

শায়লা জাহান

সময় ১৬ অক্টোবর, ২০১৮; রংপুর জিলা স্কুল মাঠে চলছে ‘শেকড়ের সন্ধানে মেগা কনসার্ট’। কানায় কানায় পূর্ন মাঠের স্টেজ থেকে যখন ভেসে আসলো পরিচিত গানের গীটারের সুর, দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখে কে? সমস্বরে সবাই গেয়ে উঠলো ‘চলো বদলে যাই’ গান। কিন্তু কে জানতো গানের উন্মাদনায় বুঁদ করে রাখা আইয়ুব বাচ্চু তার ঠিক দুদিন পরেই এক আকাশের তারা হয়ে যাবেন।

চট্রগ্রামে জন্ম নেয়া আইয়ুব বাচ্চু, যিনি রক ব্যান্ড এল আর বি’র গায়ক ও গীটারবাদক  হিসেবে পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তাকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতের ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী ও গীটারবাদক বলা হয়। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া তাঁর পক্ষে সংগীতকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়া এতটা সহজ ছিলোনা। গীটারের প্রতি ছিলো তাঁর অগাধ ভালোবাসা। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে হাতেখড়ি হয় জেকব ডায়াজ নামের এক বার্মিজের কাছে। পরবর্তীতে চট্রগাম কলেজে পড়াকালীন সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। যা পরে নাম বদলে হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিল কুমার বিশ্বজিৎ এবং আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারিস্ট। ১৯৭৭ সালে তিনি যোগ দেন ফিলিংস নামের একটি রক ব্যান্ডে, যেখানে টানা ৩ বছর জেমসের সাথে কাজ করেছিলেন। আইয়ুব বাচ্চুর অসাধারন গীটার বাজানোর মুগ্ধতায় সোলস ব্যান্ডের নকীব খান তাকে তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার অফার দেন। পরবর্তী ১০ বছর তিনি সোলস’এর মূল গীটার বাদক, গীতিকার এবং গায়ক(অনিয়মিত) হিসেবে কাজ করে। ১৯৯০ সালে অবশেষে তাঁর নিজস্ব ব্যান্ড ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ গঠন করেন, যা পরবর্তী সময়ে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা সংক্ষেপে ‘এল আর বি’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

নিজস্ব ব্যান্ড গঠনের পর তাদের প্রথম কনসার্টটি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কনসার্টটি বামবা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালে তারা বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবামঃ এলআরবি ১ এবং এলআরবি ২ প্রকাশ করে। ব্যান্ডটির ৩য় স্টুডিও অ্যালবাম সুখ, যা বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রক অ্যালবামগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এতে ছিল সেই কালজয়ী গান ‘চলো বদলে যাই’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প কয়দিনের মধ্যেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রক ব্যান্ডের মধ্যে একটি হয়ে উঠে এল আর বি। বাংলাদেশের বাইরে তাদের করা ১ম কনসার্ট ছিল ব্যাংগালোরে। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠান করা তারাই ছিল একমাত্র বাংলাদেশি ব্যান্ড।

শুধু যৌথভাবেই নয়, একক শিল্পী হিসেবেও তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। সোলস’এ থাকাকালীন তাঁর ২টি অ্যালবাম বের হয়েছিল। ‘রক্ত গোলাপ’ ও ‘ময়না’ উভয় অ্যালবামেই মূলত পপ রক গান ছিল। পুরো দেশে ময়না অ্যালবামটির ৬০,০০০ কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ব্যান্ডের ঘুমন্ত শহরে অ্যালবামের পর নিজের একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’ রেকর্ড করেন। ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘ জেগে আছি একা’ র মত জনপ্রিয় গানের সম্মিলন ছিল এই অ্যালবামটিতে। বরাবরের মত এই অ্যালবামটিও প্রচুর জনপ্রিয় হয়। কারো কারো মতে এটিই ছিল তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবাম। এক বছরের ভেতরেই এর ৩ লক্ষ কপি বিক্রিত হয়েছিল।

সংগীত জীবনে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অনেক সম্মাননাও পেয়েছেন। ব্যান্ড এল আর বি’র সাথে ৬টি মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার এবং ১ টি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন। ২০০৪ সালে বাচসাস পুরষ্কার জিতেছিলেন সেরা পুরুষ ভোকাল বিভাগে। ২০১৭ সালে টেলি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার জিতেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি বেশ সুখী ছিলেন। পছন্দের মানুষ ফেরদৌস চন্দনা কে বিয়ে করেছিলেন ১৯৯১ সালের দিকে।

২০১২ সালের দিকে ফুসফুসে পানি জমার কারনে কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসা গ্রহন শেষে পরবর্তিতে সুস্থ হোন। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ বিধি। ২০১৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই লিজেন্ড মৃত্যু বরন করেন। আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চট্রগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে স্থাপন করা হয় ‘রুপালী গীটার’ ভাস্কর্য। তিনি হারিয়ে গেছেন ঠিকই কিন্তু মানুষের মনে এক বিরাট অংশ জুড়েই রয়েছে তাঁর অস্তিত্ব।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্যান্যশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

রহস্যময় নোবেল চুরি

করেছে Shaila Hasan অক্টোবর ৬, ২০২২

শায়লা জাহান

২০১১ সালে মুক্তি পায় গুণী পরিচালক সুমন ঘোষ নির্মিত  “নোবেল চোর” ছবিটি। নোবেল চুরির পটভূমিতে একজন দরিদ্র কৃষক ভানুর কল্পিত বিবরন রয়েছে এই ছবিতে। যিনি ঘটনাক্রমে চুরির সাথে জড়িয়ে যান। মেডেল ফেরত অথবা বিক্রির মাধ্যমে নিজের জীবন সাথে গ্রামের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষের দিকে তিনি এমন লোকদের সাথে সাক্ষাত করে শেষ করেছেন যারা তাঁর নিরীহতা কাজে লাগানোর আশা করেছেন। পরবর্তীতে দরিদ্র ভানুর বোধোদয় হয় এবং তাঁর স্বগতোক্তি হয় এমন, “এটা বিক্রি করার জিনিস নয়, মাথায় করে রাখার জিনিস।” ছবির এই ভানুর মত বাস্তবের নোবেল চোরের আদৌ কোন অনুতাপ হয়েছিলো কিনা কিংবা নোবেল পদকটির কি পরিণতি হয়েছিলো বিশ্ববাসীর কাছে তা আজো অজানাই রয়ে গেল।

ঘটনাটি হয়েছিল ২৫ মার্চ, ২০০৪ সালে। সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। প্রতিদিনকার মত এক দিনের বিরতির  পর  বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। মিউজিয়ামের প্রদর্শনী হলটি যখন খোলা হয় চুরির ঘটনাটি তখনিই ধরা পড়ে। ধারনা করা হয় চুরিটি তার আগেরদিন  রাতে অর্থাৎ বুধবারে করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরায়ণ কমপ্লেক্সে বিচিত্রা ভবনের রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘরে চুরির ঘটনায় নোবেল পুরস্কার, প্রশংসাপত্র  ছাড়াও কবিগুরু ও তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অনেক মুল্যবান জিনিসপত্র সহ প্রায় অর্ধ- শতাধিক আইটেম খোয়া যায়। সুরক্ষা কর্মীদের দায়িত্বের অবহেলার কারনে গার্ড সহ ৮জন কে আটক করা হয়েছিল। তবে বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছিলেন যে, চুরির  কাজটি খুব সুপরিকল্পিত ছিল এবং যারা এই কাজটির সাথে জড়িত ছিল তারা কোথায় কি আছে তার ব্যাপারে পূর্ণ  ওয়াকিবহাল ছিল। কারন দুর্বৃত্তরা শুধুমাত্র সেই আলমারিগুলো ভেঙ্গে খুলেছে যার মধ্যে মুল্যবান জিনিসপত্রগুলো ছিল।  ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে ২৬টি আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যের সব কটি শাখাই প্রস্ফুটিত হয়েছিল রবিঠাকুরের অসামান্য লেখনীতে। তাঁর রচিত গল্প, উপন্যাস,  গান আমাদের যেমন আবেগে ভাসায় তেমন ভালোবাসতে শেখায়। প্রথম এশিয়ান নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ এখনও  পুরো বাংলায় আইকন হিসেবে শ্রদ্ধাশীল। তাই তাঁর নোবেল  চুরির ঘটনায় পরবর্তীকালে দেশব্যাপী এক উত্তেজনা শুরু হয়েছিল এবং দোষীদের খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপক তল্লাশী অভিযান চালানো হয়েছিল। রাজ্য সরকার, প্রতিবেশী রাজ্য এবং দেশগুলোর সাথে সীমানা সিল করে দিয়েছিল এবং চুরির সম্ভাব্য পলায়নের পথ রোধ করতে রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার ছয়দিনের মাথায় এর তদন্তের ভার চলে যায় সিবিআই এর হাতে। কিন্তু সিবিআইও এটা পুন্রুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় এবং  ২০০৭ সালে মামলাটি বন্ধ করে দেয়। রাজনৈতিক চাপে ২০০৮ সালে আবার তদন্ত শুরু হলেও পরের বছরে তারা ইস্তফা দেয়।

মেডেল উদ্ধারের জন্য তদন্ত ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেপ্লিকা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুইডিশ সরকারকে অনুরোধ করেছিল। শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে স্টকহোম তাতে সম্মত হয়েছিল। রবিঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পদকটির স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রতিলিপিগুলো কবির ১৪৪তম জন্মদিনের দুদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে, সিআইডি তদন্তে কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেছিল। নোবেল চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বীরভূম জেলার রুপপুর গ্রাম থেকে প্রদীপ বাউরি নামে এক বাউল গায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়। একসময়ের গ্রাম্য পঞ্চায়েতের প্রধান বাউরিকে জিজ্ঞাসাবাদে পদক চুরিতে জড়িত অপরাধীদের আশ্রয় এবং রাষ্ট্র থেকে তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা যায় যে, মোহাম্মদ হোসেন শিপুল নামে এক বাংলাদেশী ছিল এই ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী এবং এতে দুই ইউরোপীয়ও জড়িত ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও  ১৬টি বছর পার হয়ে গেল, কবিগুরুর নোবেলের খোঁজ অধরাই রয়ে গেল।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনাবাতিঘরশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

ছোটবেলায় ঈদে সালামি ছিল না, আনন্দ ছিল

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ১৮, ২০২২

আনিসুল হক:

আমার ছোটবেলা কেটেছে রংপুরে। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৭১ সালে, বগুড়ার সোনাতলা পিটিআইতে। মার্চ মাসে মিছিলে যেতাম, স্লোগান দিতাম, ‘ভুট্টোর পেটে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ একটা বাঁশঝাড়ে গিয়ে বাঁশ কেটে এনে ছোট্ট লাঠি কতগুলো বানিয়েছিলাম আমরা, আমাদের ভাইবোনেরা। তারপর তো শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। আমরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম। যুদ্ধের মধ্যেও ঈদ এসেছিল। সেই ঈদের কিছুই মনে নেই, শুধু একটা কথা ভাসা-ভাসা মনে পড়ছে, ঈদের চাঁদ দেখা না দেখা নিয়ে তর্ক উঠেছিল। গ্রামের মানুষ রেডিওর কথা বিশ্বাস না করে নিজের চোখে চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

১৯৭২ সালে আমরা রংপুরে চলে আসি। সেবারের ঈদের কথা আমার মনে পড়ে। স্কুলের দেয়ালে বোমার শেল আটকে ছিল। সেই অংশটা আমরা বের করে এনেছিলাম। তারপর মাঠের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে সেই গোলার অংশটা রাখা হলো। প্রচ- শব্দে বিস্ফোরণ হলো। আজ ভাবলেও আমার গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। কী ভীষণ বিপদই না সেদিন হতে পারত।

আমাদের এক বন্ধু, রংপুর জিলা স্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়েছি, তার নাম দীপু। তিনি এ রকম একটা গোলাকার চাকা পেয়েছিলেন, সেটা দিয়ে গাড়ি বানানোর জন্য মাঝখানে পেরেক পুঁততে গেলে হাতুড়িতে বাড়ি দিয়েছিলেন। সেটা বিস্ফোরিত হয়, তার হাতের কটা আঙুল আর একটা চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই ছিল আমাদের ছোটবেলার পরিস্থিতি। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ। আরেকটা গল্প বলে ঈদের সালামির প্রসঙ্গে আসি।

১৯৭৯ সাল। আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোল। আমি ফার্স্ট হলাম। সেদিন ছিল ছুটির দিন। আমার প্যান্টটা তাই ধুতে দেওয়া হয়েছে। আমি লুঙ্গি পরে পিটিআইয়ের মাঠে খেলছিলাম। রংপুর জিলা স্কুলের হেড স্যার একজন পিয়ন আংকেলকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাকে ধরে আনার জন্য। সাইকেলে করে পিয়ন আংকেল এলেন। আমি তখনো মাঠে খেলছি। তিনি বললেন, ‘সাইকেলে ওঠেন। হেড স্যার ডাকে।’
আমি বললাম, আমি লুঙ্গি পরে আছি। আমার প্যান্ট ধুতে দেওয়া হয়েছে। লুঙ্গি পরে আমি স্কুলে যেতে পারব না।

পিয়ন আংকেল বললেন, ‘স্যারের অর্ডার, আনিসুলকে ধরে আনো। আমি আপনাকে ধরে নিয়ে যাবই।’

অগত্যা লুঙ্গি পরা অবস্থাতেই আমি স্কুলে হেড স্যারের রুমে গেলাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘তুমি বৃত্তিতে ফার্স্ট হয়েছ। তোমাকে আমি দোয়া করি। তোমাকে প্রেসিডেন্ট ডেকে পাঠিয়েছেন। দোয়া করি, আজ তোমাকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডেকে পাঠিয়েছেন, একদিন যেন তোমাকে পৃথিবীর প্রেসিডেন্ট ডেকে পাঠান।’

আমি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। প্যান্টটা পরে বঙ্গভবনে যেতে হবে। কাজেই আমি পায়জামার ওপরে শার্ট পরে ঢাকা শহরে এলাম।

মানে ক্লাস নাইনে আমার প্যান্ট ছিল মাত্র একটা। পরে বৃত্তির টাকা পেয়ে আরেকটা প্যান্ট আমি তৈরি করাতে পেরেছিলাম।

তার মানে এই নয় যে আমরা গরিব ছিলাম। তার মানে এই যে তখন সারা দেশের জেলা শহরগুলোর মধ্যবিত্তের সবারই এই রকমই ছিল জীবনযাপনের মান। আমাদের কোনো অভাববোধ ছিল না। কিš‘ প্রাচুর্য বলতে কিছুই ছিল না। একেবারে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলার মতো। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন :

‘জানিয়ে রাখি আমাদের চাল ছিল গরিবের মতো। গাড়িঘোড়ার বালাই ছিল না বললেই হয়। বাইরে কোণের দিকে তেঁতুলগাছের তলায় ছিল চালাঘরে একটা পাল্কিগাড়ি আর একটা বুড়ো ঘোড়া। পরনের কাপড় ছিল নেহাত সাদাসিধে। অনেক সময় লেগেছিল পায়ে মোজা উঠতে। যখন ব্রজেশ্বরের ফর্দ এড়িয়ে জলপানের বরাদ্দ হল পাউরুটি আর কলাপাতামোড়া মাখন, মনে হল আকাশ যেন হাতে নাগাল পাওয়া গেল। সাবেক কালের বড়োমানুষির ভগ্নদশা সহজেই মেনে নেবার তালিম চলছিল।’

রবীন্দ্রনাথ জমিদারের ছেলে ছিলেন। তাঁর ছোটবেলার জীবনেই বাহুল্য বলতে কিছু ছিল না। আমরা জমিদারের ছেলে ছিলাম না। আব্বা ছিলেন পিটিআইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট। সরকারি চাকরি। আমরা নিজেরা বাগান করতাম, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি নিজেদের বাগানে হতো। বাড়িতে গরু ছিল। তিন সের দুধ দিত দুটো গরু। গোটা কুড়ি মুরগি, গোটা ছয়েক হাঁস ছিল। ডিম আসত দেদার। সেসব খেয়ে আমাদের দিন যেত ভালোমতোই। তবে একটা নাবিস্কো পাইন অ্যাপেল ক্রিমের বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে কোনো অতিথি বাসায় এলে সেই বিস্কুট খাওয়া ছিল মহাভোজ।

কাজেই আমাদের ছোটবেলায় ঈদে কেউ আমাদের সালামি দিত না। আমরাও কাউকে কদমবুসি করতাম না। মুন্সিপাড়ায় ছিল আমাদের মামাবাড়ি। ওখানে গিয়ে দেখি মামাতো ভাইবোনেরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে এবং বড়রা তাদের সিকিটা আধুলিটা দেন। এখনকার ছেলেমেয়েরা সিকি আধুলি কী বুঝবে কি না, আমার সন্দেহ আছে। ১০ পয়সায় একটা লাল রঙের আইসক্রিম পাওয়া যেত। চার আনা বা সিকিতে পাওয়া যেত মালাই আইসক্রিম। ১০ পয়সা দিয়ে জোড়া পাপড় কিনে খেতে পারতাম। রাস্তার ফেরিওয়ালার কাছ থেকে তিলের খাজা বা শনপাপড়ি কিনে খেতে আট আনা বা আধুলির দরকার পড়ত।

প্রত্যেক ঈদে তাই নতুন জামা পাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। কোনো ঈদে হয়তো শার্ট পেলাম। পরের ঈদে আর কিছু না। তারপরের ঈদে বাটার স্যান্ডেল শু। তার পরের বছর একটা প্যান্ট।

তবে আমাদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ছিল। ঈদের আগে সেসব বের করে ধুয়ে মাড় দেওয়া হতো। আমাদের কাজ ছিল সেসব ইস্ত্রি করে রাখা। ইস্ত্রি ছিল দুই ধরনের। একটা শক্ত লোহার ইস্ত্রি। সেটা চুলার আগুনে ধরে গরম করতে হতো। আরেকটা ইস্ত্রির ছিল গহ্বর ভরা পেট। সেই পেটে কাঠের কয়লা ভরতে হতো। এরপর আগুন উসকে দেওয়ার জন্য হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতাম। বাঁশের চোঙ দিয়ে ফুঁ দিতাম। এই পায়জামা-পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করাটা ছিল বিশাল আনন্দের কাজ। তারপর স্যান্ডেল বা জুতা কালি করা। নিজেদের জুতা স্যান্ডেল নিজেরাই বুরুশ করতাম। তারপর সেগুলো রোদে মেলে ধরতে হতো।

আমাদের বাসায় সেমাই বানানোর মেশিন ছিল। সেটা দেখতে ছোটখাটো টিউবওয়েলের মতো। এক দিক দিয়ে পানি মেশানো আটার ছোট ছোট গুলি ভরে ওপরের হাতল ঘোরাতে হতো। নিচে ছিল ফুটো ফুটো পাত। সেটা দিয়ে সেমাই বের হতো। সেই সেমাই আমরা শুকাতে দিতাম মাদুরে। ছাদের ওপরে সেমাই শুকাতে দিয়ে পাখি তাড়ানোর জন্য বিশাল পাটকাঠি নিয়ে আমি বসে থাকতাম। সময়টা উপভোগ্য করে তোলার জন্য একটা কাগজের চোঙ বাঁশের লাঠির ডগায় বেঁধে মাইক হিসেবে চালাতাম। একটা দিয়াশলাইয়ের বাক্স হতো আমার মাউথপিস। সেই মাউথপিস মুখের কাছে ধরে আমি নিজে নিজে রেডিওর অনুষ্ঠান প্রচার করতাম। কবিতা আবৃত্তিই ছিল প্রধান অনুষ্ঠান। কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামি কবিতাগুলো বই দেখে পাতার পর পাতা আবৃত্তি করতাম। তাতে রোজা থাকার কষ্ট কমত। দিনটা পার হয়ে যেত দ্রুত।

ঈদ মানেই ছিল আনন্দ। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য বিকেল তিনটা থেকে আমরা পিটিআইয়ের ছাদে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সূর্য ডোবার আগেই চাঁদ দেখা গেল। কী আনন্দ! ছেলেরা মিছিল বের করত, আজ আমাদের কিসের খুশি, ঈদের খুশি ঈদের খুশি। ১৯৭৮ সালের আগে রংপুরে টিভি ছিল না। সম্প্রচার কেন্দ্র হলো ১৯৭৮-এ। তারপর সাদাকালো টিভি রংপুরে আসতে লাগল। কাজেই তার আগে ঈদের আগের রাতে রেডিওতেই আমরা শুনতাম সেই গানটা, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ এমনকি আমজাদ হোসেনের বিখ্যাত জব্বর আলীর ঈদের নাটক প্রথমে প্রচারিত হয়েছিল রেডিওতে। তার একটা সংলাপ আজও মনে আছে, জব্বর আলীর মেয়ে বলছে, ‘বাবা, ঈদে আমাকে ম্যাক্সি কিনে দিতে হবে।’ জব্বর আলী বলছে, ‘ট্যাক্সি, আমি তোকে ট্যাক্সি কিনে দিতে পারব না।’

আমরা অবশ্যই ঈদসংখ্যা কিনতাম। বিচিত্রা, রোববার, সন্ধানী। উপন্যাসগুলোর কোনো কোনোটাতে যৌনতা থাকত। এমনকি হাসান আজিজুল হকের লেখা ‘পাতালে হাসপাতালে’ গল্পে ‘রাত্রে স্ত্রী সহবাসে সে যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছিল’ এই বাক্য পড়ে আমি নিষিদ্ধ জিনিস পড়ার আনন্দ লাভ করেছিলাম। যৌনতা থাকত আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দীনের গল্পে। আমাদের শৈশবে ঈদের আরেকটা বিনোদন ছিল সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। প্রচন্ড ভিড় হতো। ওই সময় সৈনিকদের জন্য আলাদা কাউন্টার ছিল। আমি সেই কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কোনো সৈনিক আংকেল টিকিট কাটতে এলে আমি তাঁকে অনুরোধ করতাম, আমাকে একটা টিকিট কেটে দেবেন? আমার চেহারার মধ্যে একটা গো বেচারি ভাব তখনো ছিল। সহজেই তাঁরা রাজি হতেন। আমি নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত ঈদের সিনেমা দেখতাম রংপুরের লক্ষ্মী টকিজে বা ওরিয়েন্টাল প্রেক্ষাগৃহে। আগের দুদিন মাইকিং করে সিনেমার গান আর নাম জানিয়ে যাওয়া হতো। কাজেই সিনেমা না দেখে পারা যায়?

এরপর এল টেলিভিশনের যুগ। ঈদ মানেই টেলিভিশনে ঈদের নাটক আর আনন্দমেলা। আনন্দমেলাগুলো খুব আনন্দময় হতো। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, জুয়েল আইচ, আফজাল হোসেন, আনিসুল হকÑ এঁরা সব আশ্চর্য আনন্দময় আনন্দমেলা করেছিলেন। পরে করেছিলেন হানিফ সংকেত। ঈদের নাটক ভালো করতেন হুমায়ূন আহমেদ। উফ। ঈদের নাটকগুলো দেখে হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যেত।

তারপর বড় হয়ে গেলাম। আমার ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা আমাকে ঈদে সালাম করতে লাগল। আমিও সাধ্যমতো তাদের বকশিশ দিতে শুরু করলাম। বিয়ের পরে খালু হলাম। ভাগনে-ভাগ্নিরা এলে আমি সালামি দিই। সে তারা সালাম করুক আর না করুক। ইদানীং তো অনেক নতুন নিয়মকানুন শোনা যাচ্ছে। কদমবুসি করতে হয় না। আমার আম্মা অবশ্য আমাকে শিখিয়েছিলেন, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার সময় মাথা উঁচু রাখতে হবে।

বড় হয়েই আমি আম্মাকে সালাম করতাম। শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করতাম। আম্মা মারা গেছেন। শ্বশুর সাহেবও মারা গেছেন বেশ ক’বছর আগে। এখন শাশুড়িকে সালাম করি। অফিসেও আমার জুনিয়র সহকর্মী মেয়েরা আগে আমার কাছ থেকে ঈদের সালামি আদায় করত। তার ছবিও ফেসবুকে দিত। এখন আমাদের অফিসও বড় হয়ে গেছে। আমরা এখন দূরে দূরে বসি। সালাম করে সালামি আদায় করবে, এমন মানুষেরা আর আমার ফ্লোরে বসেও না।

নিজের একমাত্র মেয়ে থাকে বিদেশে। ঈদে আসবে না। হয়তো ফোন করবে। ভিডিও কলে দেখা হবে। কথা হবে।

আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যাচ্ছি। আগে আম্মা যখন বেঁচে ছিলেন এবং রংপুরে ছিলেন, আমরা পাঁচ ভাইবোন দারা পুত্র পরিবার নিয়ে রংপুর যেতাম। বাড়িতে চাঁদের হাট যেন লেগে যেত। সন্ধ্যার সময় বাচ্চারা নিজেরাই আনন্দমেলা করত। এখন আম্মাই নাই। রংপুরে কেউ থাকে না।

ঈদ আসলে ছোটবেলাতেই আনন্দের ছিল। এখন বড় হয়ে গেছি। এখন ঈদে আনন্দর চেয়ে দায়িত্বই বোধ করি বেশি। আর করোনার দুই বছরে তো ঈদেও আমরা বন্দী ছিলাম।
এবারের ঈদ হয়তো মুক্তি এনে দেবে।
করোনার বন্দিত্ব থেকে মুক্তি।

মধ্যখানে কিছুদিন আমারও ঈদ মানে ছিল টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য ঈদের নাটক লেখা। প্রথম দিকে সেই সব নাটক ভালো হলো নাকি মন্দ হলো, তাই নিয়ে টেনশন করতাম। তারপর এত চ্যানেল আর এত নাটক প্রচারিত হতে লাগল যে নিজের নাটকও নিজে দেখা হয়ে উঠত না। এখন আর ঈদের নাটক লেখার সময় পাই না। আগ্রহও পাই না।

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা দিয়ে এই লেখা শেষ করি, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ/ তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/ দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ।’
আমরা যদি ঠিকভাবে জাকাত দিই, দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকার কথা নয়। বিলাসব্যসনের প্রতিযোগিতা না করে আমরা কি সুচিন্তিতভাবে গরিব-আত্মীয়স্বজনকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সহযোগিতা করতে পারি না?

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিল্প-সংস্কৃতি

রেজা নুরের ‘নিরীহ হাওয়ার নদী’র মোড়ক উন্মোচন

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ১২, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: সত্যিকারের লেখক নিজের তাড়নায় লেখালেখি করেন। তবে কেউ কেউ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও লেখেন। আবার কেউ লেখেন মনের আনন্দে। কবি ও কথাসাহিত্যিক রেজা নুর মনের আনন্দে সরল অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে স্বদেশ ও বিশ্বের অনন্য সৌন্দর্য কবিতায় তুলে ধরেন। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

মাইকেল মধুসূদনের মতো প্রবাসে থেকেও রেজা নুর স্বদেশ ভাবনায় প্রতিনিয়ত বিভোর থাকেন। বাস্তবে প্রবাসী হলেও মননে একজন কবি। রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘নিরীহ হাওয়ার নদী’ কাব্যগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয় গত ১ এপ্রিল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বেতারের নিউজ প্রেজেন্টার ও এক্সিলেন্ট কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার জিনাত রেহানা লুনা। বায়োফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক বাচ্চু এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিরেক্টর রবিউল হাসান।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও নাট্যকার বীরেন মুখার্জী, কবি ও কথাশিল্পী জব্বার আল নাঈম, কথাশিল্পী ফিরোজ আশরাফ, কথাশিল্পী শামস সাঈদ, কবি ও কথাশিল্পী রাসেল রায়হান ও কবি সাম্মি ইসলাম নীলা।

কবি রেজা নুর বলেন, ‘লেখার অভ্যাসটা দীর্ঘদিনের। তাই প্রবাসে গিয়েও ভুলতে পারি না। লেখার নেশা রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। কবিতা কখনোই ছাড়া যাবে না। কবিতা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন, আমাকে থাকতে হবে লেখার সঙ্গে।’

‘নিরীহ হাওয়ার নদী’ তার ষোলোতম প্রকাশিত গ্রন্থ হলেও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। পাঁচ ফর্মার বইটি ধ্রুব এষের আঁকা প্রচ্ছদে প্রকাশনা সংস্থা রণন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সিফাত সালাম।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
টেলিভিশনশিল্প-সংস্কৃতিসমস্যা

মিডিয়ায় নারীর উপস্থাপন

করেছে Tania Akter মার্চ ৬, ২০২২

নারীর জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পেশাগুলোর মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম হলেও বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়। মাত্র কয়েক বছর আগেও পরিবার নিরাপত্তার অভাবের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরুৎসাহিত করত। এখন নারী প্রথা ভেঙে হয়ে উঠেছেন দক্ষ সাংবাদিক।

 

বর্তমানে রিপোর্টিংয়ের তুলনায় এবং সাহসী সাংবাদিকতার জায়গাগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। সংবাদপাঠ কিংবা উপস্থাপনায় যে পরিমাণ নারী দেখা যায়, মূলধারার সাংবাদিকতায় তা হাতে গোনামাত্র। ভিশন ৫০-৫০ অর্জন কিংবা সমতার বাংলাদেশ সবার কাম্য। তাই গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ ও নারীকে উপস্থাপনের দিকে মনোযোগ দেওয়া সময়ের দাবি।
মানুষের জীবনে যোগাযোগের চাহিদার কারণে বর্তমানে যোগাযোগ শিল্প রূপ নিয়েছে। তথ্য বিনোদনের পাশাপাশি একেকটি জাতির ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি, দর্শন সবকিছুই তুলে ধরছে গণমাধ্যম এতটা শক্তিশালী যে, যে তথ্য দিচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে সভ্যতা।

সমাজের প্রতিফলক হয়ে নির্মাণ করছে জেন্ডার সংস্কৃতি।গণমাধ্যমে জেন্ডার উপস্থাপন বিষয়ে বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন ১৯৯৫-এর সুপারিশগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নানা পদক্ষেপ নিলেও গত ২৭ বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মাধ্যম এবং বিজ্ঞাপনে সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়।
সংবাদপত্র হলো সমাজের দর্পণ।

 

 

 

১৯৯৫-২০২২-এ বাংলাদেশের সংবাদপত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। নারী নির্যাতনকে একপ্রকার বিনোদন হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের ‘বাংলাদেশের সংবাদপত্রে নারী নির্যাতনের চিত্র: যৌতুক, ধর্ষণ ও অ্যাসিড নিক্ষেপ’ গবেষণায় দেখা যায়, সংবাদপত্রে ধর্ষণসংক্রান্ত খবর বেশি।
আগে ধর্ষণের বর্ণনা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে বিষয়টি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

সপ্তাহে একদিন বিশেষ নারী পাতা ছাপিয়ে সংবাদপত্র যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে নারী আলাদা কিছু। নারীর অর্জন এসব পাতায় যাওয়ার অজুহাতে মূল খবরেও থাকছে না নারী।বিনোদন পাতায় শোবিজের নায়িকাদের অশ্লীল ছবিকে পুঁজি করতে প্রথম পাতার এক কোণে দেওয়া হয় সেই ছবি। বেগম পত্রিকা, অনন্যা এসব পত্রিকার সম্পাদক নারী হওয়ার কারণেই হয়তো নারীর ক্ষমতায়নভিত্তিক প্রচার বেশি। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে পাঠকের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে প্রিন্ট কমিয়ে পত্রিকাগুলো অনলাইনেই খবর দিচ্ছে। রয়েছে প্রচুর অনলাইন পত্রিকা কিন্তু নিউজ পড়লেই বোঝা যায় ঘাটতি আছে জার্নালিজম এথিকসের।

ইলেকট্রনিক মাধ্যম 

টেলিভিশন :
চ্যানেল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই টেলিভিশনের সংবাদে পরিবর্তন এসেছে। আমাদের দেশে নারী সংবাদ উপস্থাপিকাদের অতিরিক্ত মেকআপ ও সাজসজ্জায় উপস্থাপন করা হয়। নারীরা সংবাদ পড়লেও নারীকে নিয়ে সংবাদ খুব কম থাকে।
টিভিতে প্রচারিত নাটক, সিরিয়াল ডেইলি সোপে ভালো নারী মন্দ নারীর অবয়ব তৈরি করে দিচ্ছে মিডিয়া। বাস্তব ক্রাইমভিত্তিক নাটক জনপ্রিয়তা শীর্ষে থেকে মানুষের অজান্তে ক্রাইমের দিকেই আকৃষ্ট করছে। পরকীয়া, পারিবারিক কলহের পেছনে টিভিতে দেখা বিষয়গুলো ভূমিকা রাখে।

চলচ্চিত্র : ১৯৯৫-২০২১-এর মধ্যে ২০১০ সাল পর্যন্তই রাজত্ব করেছে অশ্লীলতা। নায়িকাকে ধর্ষণের চেষ্টা আর নায়কের বোনকে ধর্ষণ করার দৃশ্য না থাকলে যেন সিনেমা হয় না। এসব সিনেমা পুরুষকে ধর্ষণে উৎসাহ দেয়। মেয়েরা রান্নাবান্না করলেই ভালো মেয়ে, মন্দরা ক্লাবে যায়, মদ খায় অথচ নায়ককে বিরহে মদ খেতে দেখা যায়। গোটা কয়েক সিনেমা ছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমাই সমাজে নারীর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দর্শকের মনে নেগেটিভ বীজ বোনে।

৩. অনলাইন প্লাটফর্ম : অনলাইনে কোনো আইন না থাকায় সংবাদসহ যার যে রকম খুশি ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করছে। সম্প্রতি অনলাইন সংবাদের পুরোটাজুড়ে ছিল পরীমনি। এ ছাড়া এরা বিভিন্ন অভিনয়শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মনগড়া তথ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক জগৎকে নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করে। নুসরাত মা হলেন কিন্তু তার ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করেই প্রচারিত হয় মুখরোচক সংবাদ। সব সমস্যার সমাধান ফ্রিতে ইউটিউবে পেয়ে ডায়েট করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়।


টিকটকের নেশায় ঘর ছাড়ছে কিশোরীরা। ওয়েব সিরিজের নামে অবাধে প্রাপ্তবয়স্কদের দৃশ্য দেখে ফেলছে শিশু-কিশোরেরাও। এ ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠবে নারীকে ভোগ্যপণ্য ও দাসী মনে করার মানসিকতা নিয়ে। অতি সম্প্রতি ধর্ষণ ও হত্যার সংবাদগুলো পর্নোগ্রাফি ও বিকৃত রুচির প্র্যাকটিসই প্রকাশ করে।

লেখক: সায়মা রহমান তুলি, গবেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook