রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

সংগ্রাম

নারীসংগ্রামসচেতনতাসম্ভাবনা

অভিবাসী নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি

করেছে Suraiya Naznin জানুয়ারী ১১, ২০২৩

নাজমুল হুদা খান

অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। তারা অনেক বেশি অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকেন। ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, চর্মরোগ, জন্ডিসসহ নানাবিধ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভিবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতি মজবুত করতে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের ১৭৪টির বেশি দেশে প্রায় দেড় কোটি অভিবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করছে এবং শতকরা ১২% জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে। এই অভিবাসীদের উল্লেখযোগ্য অংশ নারী শ্রমিক। ২০০৪ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকের শতকরা হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ, এক যুগের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০১৫ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ শতাংশে উন্নীতকরণ; যদিও করোনা অতিমারিতে এ লক্ষ্যমাত্রায় ছেদ পড়েছে।

বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিকদের প্রায় ৯০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত। বর্তমানে সৌদি আরবে দুই লক্ষাধিক নারী শ্রমিক রয়েছে, আরব আমিরাত ও জর্ডানে আছে দেড় লক্ষাধিক অভিবাসী নারী, লেবাননে লক্ষাধিক, ওমানে প্রায় এক লাখ। এ ছাড়া কুয়েত ও বাহরাইনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এসব নারী অভিবাসী শ্রমিক উল্লিখিত দেশগুলোতে গৃহকর্মী, হাসপাতাল, পোশাকশিল্প, বিভিন্ন কলকারখানা, অফিস, কৃষি খামার, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি কর্মকা-ে নিযুক্ত রয়েছে। পুরুষ কর্মীদের প্রবাসে গমনের বিষয়ে সমাজ ও পরিবারের বাধাবিপত্তি না থাকলেও নারীদের নানা ধরনের বিপত্তি পেরিয়ে অগ্রসর হতে হয়। অথচ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা যায়। পুরুষ শ্রমিকেরা যেখানে উপার্জিত আয়ের ৫০ শতাংশ দেশে প্রেরণ করে থাকেন; সেখানে নারীদের এর পরিমাণ ৯০ শতাংশ।

অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। তারা অনেক বেশি অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকেন। গৃহস্থালি, রেস্টুরেন্ট, কলকারখানার গরম, আর্দ্র ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে হয় বলে অনেকেরই ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, চর্মরোগ, জন্ডিসসহ নানাবিধ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। পশুপাখির খামারের কর্মরতদের মধ্যে যক্ষ্মা, চোখের নানাবিধ ব্যাধি এবং পেশি ও অস্থিসন্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা ও প্রদাহ দেখা দেয়। খনি ও অন্যান্য কারখানায় কর্মরতদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস, উ”চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, প্রভৃতি রোগে ভুগতে দেখা যায়। খাবারের রেস্টুরেন্ট ও খাবার তৈরির কাজে নিয়োজিতরা খাদ্যনালি, পরিপাকতন্ত্র, লিভারসহ নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রামক ব্যাধিতে ভুগে থাকেন।

প্রবাসী নারী শ্রমিকেরা বিভিন্ন সামাজিক অসংগতি, বৈষম্য ও অপরিচিত পরিবেশের কারণে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি ঘটে। অধিকাংশ নারী গৃহশ্রমিককে অতিরিক্ত কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়। তারপরও মুখ বুজে সহ্য করে এবং নিজের অসুস্থতাকে লুকিয়ে বিদেশের মাটিতে কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। নারী শ্রমিকদের অধিকাংশেরই নিরাপত্তাহীন বারান্দা, রান্নাঘর, স্টোররুমে রাতযাপন করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেককেই দৈহিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হতে দেখা যায়। ফলে ভুক্তভোগী নারী শ্রমিকদের যৌনবাহিত রোগ, এইডস, অনিচ্ছাকৃত ও অবৈধ গর্ভধারণ, অনিরাপদ গর্ভপাতের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ধরনের অসহ্য নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং ডিপ্রেশন, সিজোফ্রেনিয়াসহ নানাবিধ মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। উপরš‘ পরিবারের কাছ থেকে দীর্ঘদিন আলাদা থাকা, সামাজিক ও পারিবারিক স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চনা, একাকিত্ব, দারিদ্র্য; সব মিলিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়।

 

নারী শ্রমিকেরা অসুস্থতার পরও বিভিন্ন বাধাবিঘ্নর কারণে অথবা চিকিৎসাকেন্দ্রসমূহে প্রবেশাধিকার কিংবা ইনস্যুরেন্স না থাকার কারণে চিকিৎসা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালমুখী হতে পারলেও ভাষা সমস্যা বা অদক্ষতার কারণে সঠিক চিকিৎসাটি পায় না। অনেক সময় বেতন কম পাওয়া বা বেতন না পাওয়ার ভয়ে শারীরিক অসুস্থতাকে পুষে রাখে; যা পরে জটিল আকারে রূপ নেয়। অবৈধ পথে গমনকারী বা অবৈধ ভিসা পাসপোর্টধারী নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও প্রকট।
নারী শ্রমিকেরা বিদেশ গমনকালে ফিটনেস টেস্টেও বিড়ম্বনার শিকার হয়। অনেক সময় মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতি করে ফিটনেসের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। ফিট শ্রমিককে আনফিট কিংবা আনফিটকে ফিট করতে অর্থ প্রদানে বাধ্য করা হয়।

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণার তথ্যমতে, ৩৮ শতাংশ নারী বিদেশে যাওয়ার পর শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ৫২ শতাংশ নারী শ্রমিককে জোর করে অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করা, ৬১ শতাংশ বিদেশে খাদ্য ও পানির অভাব, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে তথ্য উঠে এসেছে। ৮৭ শতাংশ নারী শ্রমিক প্রবাসে সঠিক চিকিৎসাসেবা পান না বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। চাকরি হারিয়ে বা দেশে ফিরে ৮৫ শতাংশ নারী হতাশাগ্রস্ত, ৬১ শতাংশ ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন, ৫৫ শতাংশ শারীরিকভাবে ও ২৯ শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থতায় ভুগে থাকেন। এমনকি বিদেশ থেকে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে দেশে ফেরত আসার পর নারী শ্রমিকেরা সমাজ ও পরিবারের কাছে অসম্মানিত হচ্ছেন। ৩৮ শতাংশ নারী চরিত্রহীনা বলে গণ্য, ২৮ শতাংশ দাম্পত্যজীবন ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১৫ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত হন। বিদেশ ভ্রমণের প্রাক্কালে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সেবাবিষয়ক তথ্যাদি পুরোপুরি অবগত করা হয় না। এবং বিদেশে তাদের চিকিৎসাসেবাবিষয়ক তথ্যসংবলিত চুক্তিনামাও অনেক ক্ষেত্রে থাকে না।

 

অভিবাসী শ্রমিক ও নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিতের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্বারোপ করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সব দেশসমূহকে অভিবাসী শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী শ্রমিক অধিকার কনভেনশন সব অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা; এমনকি অবৈধ শ্রমিকের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের ওপর জোরারোপ করেছে। সুতরাং অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাগতিক দেশসমূহকে শ্রমস্বাস্থ্যআইন সঠিকভাবে নিশ্চিতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শ্রমিক নিয়োগকৃত কোম্পানিসমূহকে স্বাস্থ্যসেবা চুক্তিনামা পালনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্মকান্ডে নজরদারি বাড়ানো উচিত।

 

মালিকপক্ষের অভিবাসী শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসা দায়িত্ব ও কর্তব্য। শ্রমিক নিয়োগ চুক্তিপত্রে হেলথ ইনস্যুরেন্স, চিকিৎসা-সুবিধা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, জখম ও মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়গুলো স্পষ্টীকরণ করা উচিত। বাংলাদেশে অভিবাসী শ্রমিক ও নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি লাঘবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট পলিসি ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। আইএলওর সহায়তায় অভিবাসী শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তিন বছর মেয়াদি জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে। অভিবাসী আইন ২০১৩ এবং অভিবাসীকল্যাণ ও নিয়োগ আইন ২০১৬-তে জখম ও মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ এবং শ্রমিকের নিরাপদ ও সম্মানজনক কাজ এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হেলথ ইনস্যুরেন্স, সামাজিক ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং স্বাস্থ্যগত কারণে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকের তথ্য-উপাত্তের প্রোফাইল সংরক্ষণের কাজ করছে।

 

অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব প্রদান করে সব অভিবাসী শ্রম আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকের অভিবাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পৃথক স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্য বিভাগ গঠন করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট এনজিও এবং ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসতে হবে। অভিবাসী নারী শ্রমিকের সমাজ ও পরিবারকে তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে মর্যাদা প্রদান করতে হবে।
রাষ্ট্রের অর্থনীতি সুদৃঢ়, সামাজিক ও পরিবারের স”ছলতা আনয়নে জীবনের প্রতিটি স্তরে ঝুঁকি নিয়ে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে নারীরা সাহসী ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন নারীর ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সারা বিশ্বে ভূমিকা রাখতে উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য ও সম্মান সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় গঠন ও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বটি সুচারুরূপে পালনে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের অংশ হিসেবে তাদের পাশে সদা আমাদের দাঁড়াতে হবে।

লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান
এমফিল, এমপিএইচ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সাবেক সহকারী পরিচালক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা ঢাকা।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নারীসংগ্রামসচেতনতা

নারী নিপীড়ন এবং এড়িয়ে যাওয়া

করেছে Suraiya Naznin জানুয়ারী ৯, ২০২৩

নাসরিন সুলতানা-

এড়িয়ে যাওয়া কিংবা অন্যায়ের পক্ষে কথা বলা একটু একটু করে নারী নিপীড়নের দরজা খুলে দেয়-

কোনো রকম ভিড় ঢেলে বাসে উঠল দীপা। কিছু দূর গিয়ে পেছনের সারিতে একটা সিট পেল। আঁটসাঁট হয়ে বসে দৃষ্টি শুধু এপাশ-ওপাশ। এই বুঝি কিছু হলো! গন্তব্যে পৌঁছে শঙ্কিত পায়ে দীপা নামতে গেল, ওমা? ধাক্কা লাগল সামনে বসা এক যুবকের পায়ে। দীপা দুটো কথা বলতেই বাবার বয়সী একজন বলে উঠল ছেড়ে দাও না। একটু লাগতেই পারে, তাতে কী এমন হয়েছে? দীপার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। একজন বাবার বয়সী মানুষ তিনি, প্রতিবাদ না করে অন্যায়ের পক্ষে কথা বলছেন! এই যে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা অন্যায়ের পক্ষে কথা বলা একটু একটু করে নারী নিপীড়নের দরজা খুলে দেয়।

 

বর্তমানে গণপরিবহন এবং শপিংমলে নারীদের হেনস্তার বিষয়টিকে ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। ঢাকায় কর্মজীবী অনেক নারী রয়েছেন, যাদের প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যেতে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। গণপরিবহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদিন নানা রকম হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। যাত্রীর চাপ বেড়ে গেলে নারীদের বাসে না নেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গণপরিবহনে নারীদের জন্য আসন নির্ধারিত থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা সেই সুবিধাটা পাচ্ছে না।

রাজধানীর অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, মিডিয়া হাউস, হাসপাতালে যেসব নারী কাজ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশ কোর্সে যারা পড়েন, তাদের প্রায় সময় রাতে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। কোনো কোনো বাস কন্ডাক্টর যাত্রীর চাপের কারণে নির্ধারিত আসন থাকা সত্ত্বেও সে সময় নারী যাত্রীদের বাসে তুলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে থাকেন।

রাজধানীতে ঘটে যাওয়া কয়েক বছর আগেরই ঘটনা, গণপরিবহনের ভেতরে যৌন হয়রানি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী বাড্ডা লিংক রোড থেকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে নিজের ক্যাম্পাসে যেতে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি পথে পথে যাত্রী নামালেও নতুন করে কোনো যাত্রী তোলেনি। একসময় সেটি প্রগতি সরণিতে গেলে যাত্রীশূন্য হয়ে যায়। তখন বাসের হেলপার দরজা আটকে ছাত্রীর পাশে বসে তাকে টেনেহিঁচড়ে পেছনের সিটের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রী জোর করে বাস থেকে নামতে চাইলে সেটি দ্রুত চলতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটি চিৎকার শুরু করলে চালক বাসটি থামায়। তখন ওই ছাত্রী বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে।

ঘটনার শিকার ছাত্রী বিষয়টি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে জানালে শিক্ষার্থীরা বাসের চালক-হেলপারকে গ্রেপ্তারে আন্দোলন শুরু করেন। তারা তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস আটকে রাখেন। ওই ঘটনায় ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় মামলাও করা হয় এবং পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাসের চালক, হেলপার এবং কন্ডাক্টরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আবার নিউমার্কেট থানা এলাকার চাঁদনি চক মার্কেটে এক দল নারীকে দোকানিরা নিপীড়ন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে সম্পর্কিত খবরও প্রকাশিত হয়। মার্কেটটির সামনে জনসমক্ষেই এমন ঘটনা ঘটেছে দাবি করে ভুক্তভোগী এক নারী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন এবং সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা হয় এবং তারপর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিš‘ প্রতিদিনই এ রকম ঘটনা কমবেশি কোথাও না কোথাও ঘটছে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিকান পেতে রইগ্রুমিংজীবননারীপ্যারেন্টিংরোদসীর পছন্দসংগ্রামসমস্যাসুস্থ মন

একলা চলো রে

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৩, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

মাতৃত্ব এমন এক অনুভূতি যার কোন তুলনা হয়না। কিন্তু মাতৃত্বের যাত্রা সবার জন্য সহজবোধ্য হয়না, আর তা যদি হয় সিঙ্গেল মাদারহুড; তখন পরিস্থিতি তো আরও কঠিন মনে হতে পারে। এমন অনেক দ্বন্দ্ব এবং চাপ রয়েছে যা একক মায়েদের মধ্য দিয়ে যায় যা অন্য পরিবারগুলো সরাসরি অনুভব করতে পারেনা। একক মায়েদের শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা অবিশ্বাস্যভাবে প্রশংসনীয়, তবে এর পেছনে তাদের ক্লান্তি অনুভব করাও বোধগম্য।

সুখী সমৃদ্ধময় একটি পারিবারিক জীবন কে না চায়। কিন্তু অনেক সময় বাস্তবতার খাতিরে আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় যা কারোরই কাম্য হতে পারেনা। সিঙ্গেল প্যারেন্টস এমনই এক বিষয়। একক অভিভাবক হওয়ার পেছনে অনেক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদ, পরিত্যাগ, বিধবা হওয়া, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, একক ব্যক্তি দ্বারা সন্তান জন্মাদান বা দত্তক নেয়া। সঙ্গীর সাথে অভিভাবকত্ব ইতিমধ্যেই অপ্রতিরোধ্য এবং চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সেখানে একক মা হওয়া সম্পূর্ণ অন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। তাদের প্রতিনিয়ত জীবনে বেশকিছু অপ্রতিরোধ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যেমনঃ

আর্থিক চ্যালেঞ্জ

সন্তানের জীবনে একমাত্র উপার্জনকারী এবং যত্নশীল হওয়া অবিশ্বাস্যভাবে চ্যালেঞ্জিং। একজন প্রাপ্তবয়স্ককে একাই ভার বহন করতে হয় যা সাধারণত দুজন বহন করে। এতে করে বিশাল এক দায়িত্ব এসে পড়ে। এই কষ্ট শুধুমাত্র আর্থিক নয়, এটি একটি মানসিক বোঝাও বটে এবং মা প্রায়ই তার বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট না দেওয়ার জন্য নিজেকে দোষী বোধ করেন।

মানসিক চ্যালেঞ্জ

বাস্তবতা হলো একক মা হওয়া মানে একাকী হয়ে যাওয়া। নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা শেয়ার করার মতো কোন সঙ্গী থাকেনা। উদ্বেগ, স্ট্রেস, আশাহীন বা মূল্যহীন বোধের মতো মানসিক স্বাস্থ্যের লড়াই একক মায়েদের জন্য সাধারণ।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

একটি একক মায়ের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অনেক বড় এক প্রতিবন্ধকতার কাজ করে। সিঙ্গেল মাদারহুডের সাথে সাথে সামাজিকভাবে যে অপবাদ আসে তা পুরানো এবং সেকেলে কিন্তু কোনভাবেই তা দূর করা যাবেনা। সমাজ এখনও মনে করে একজন একক বাবা শান্ত ও সাহসী এবং একক মা দরিদ্র ও ক্লান্ত।

সিদ্ধান্তের চাপ

অভিভাবকত্ব দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে এই দায়িত্ব আরও বেশি বেড়ে যায়। একজন সঙ্গীর সমর্থন ছাড়া একটি সন্তানের জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একক মায়ের উপর সবকিছুই ছেড়ে দেয়া হয়। এটি অবিশ্বাস্যভাবে ভীতিজনক এবং প্রচুর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

অপরাধবোধ

সমস্ত একক মায়ের সংগ্রামের মধ্যে, এটির বিরুদ্ধে লড়াই করা সবচেয়ে কঠিন হতে পারে। তাদের মনে অপরাধবোধ আসার যেন শেষ নেই। নিজে যে আর্থিক জিনিসগুলো সরবরাহ করতে পারবেনা সে সম্পর্কে অপরাধবোধ, বাচ্চাদের থেকে দূরে কাটানো সময় সম্পর্কে অপরাধবোধ, পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যেগুলো করতে পারা যায়না সে সম্পর্কে অপরাধবোধ। সন্তানরা একক পিতামাতার সন্তান হিসেবে যেভাবেই বেড়ে উঠুক না কেন তা তাদের উপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিজেদের দায়ী বোধ মনে হয়।

একক মাতৃত্ব সহজ করার উপায়

একটি শিশুকে নিজের মতো করে বড় করা সহজ কাজ নয়, তবে তুমি একা নও। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ব্যক্তি হিসেবে উন্নতি করতে এবং মাতৃত্ব সহজ করার কিছু উপায় দেয়া হলঃ

-তুমি তোমার ধারণার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। একজন সঙ্গী ছাড়া সবচেয়ে কঠিন কাজ তুমি একাই করতে পারছো। যখন ক্লান্তি ও হতাশা মনে ধরে যাবে তখন নিজেকে ব্যর্থ মনে হবে। কিন্তু সেখান থেকে একবার পাশ কাটিয়ে উঠে যখন দেখবে দিন শেষে বাচ্চারা সুস্থ থাকে, সুখী হয় তাহলে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছুতেই নেই।

-মাতৃত্বের কঠিন সময়ে পরিবার এবং বন্ধুদের উপর নির্ভর করতে সক্ষম হওয়া তোমার সুস্থতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। সাহায্য প্রয়োজন তা স্বীকার করা শক্তি প্রমাণ করে, দূর্বলতা নয়।

-নিজের জন্য সময় বের করা। যদিও এটা অর্জন করা কঠিন হতে পারে কিন্তু নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করা বার্নআউট এবং ক্লান্তি এড়াতে প্রয়োজনীয়। নিয়মিতভাবে মাইন্ডফুলনেস ভিত্তিক স্ব-যত্ন অভ্যাস অনুশীলন করতে হবে। এটি শারীরিক পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

-কীভাবে একজন একক মা সুখী হতে পারে? নিজেকে জীবনে অনুপ্রাণিত রাখতে নিজের জন্য স্মার্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যদিও তোমার সন্তানের উপর ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে তোমার সমগ্র জীবনকে কেন্দ্র করে তাদের চারপাশে থাকতে পারবেনা। তাই নিজের জন্যও কিছু ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

-একাকীত্ব বোধ এমন এক জিনিস যা অনেকের ভিড়ে থেকেও নিজেকে নিঃসঙ্গ বোধ করিয়ে দেয়। এই একাকীত্ব বোধের সাথে লড়াই করতে হবে। ছবি আঁকা, বই পড়া, গান শোনা বা বন্ধুদের নিয়ে প্রিয় কোন মুভি দেখতে যাওয়ার মতো কাজ করা যেতে পারে।

তুমি তোমার জীবনের স্থপতি। মনে রাখবে প্রতিটি দিন নতুন করে তৈরি হয়। নিজেকে বিশ্বাস ও সম্মান করা তোমার সন্তানের জন্য একটি চরিত্র গঠনের পরিবেশ তৈরী করতে সাহায্য করে।

-ছবি সংগৃহীত

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.অন্যান্যজীবনজীবনযাত্রাফটো ফিচারসংগ্রাম

সারা বিশ্বকে কাঁদানো কিছু ফটোগ্রাফ

করেছে Shaila Hasan নভেম্বর ২৪, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

 

আমাদের মানুষ করে তোলার সঠিক পরিমাপ কি? অন্যান্য প্রানী থেকে আমাদের আলাদা করার প্রাথমিক অনুভূতি কি? অন্যের দুঃখ বেদনার সাথে নিজেকে একাত্মতা প্রকাশ করা আমাদের অনন্য ক্ষমতা? একটি ছবি হাজার কথা বলে। এমন কিছু ছবি আছে যা কিছু না বলেও অনেক কথা বুঝিয়ে দেয়। মানুষের দুঃখ যন্ত্রনার অনুভূতি আছে বলেই এই ছবিগুলো বিশ্ববাসীকে করেছে বাকরুদ্ধ। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক এবং দুঃখজনক কিছু ফটো বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং দাঙ্গায় বেঁচে থাকা এবং একটি উন্নত জীবনের জন্য লড়াই করা কেমন লাগে। যে ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার সাহস ছিল তারাই পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা ট্রমার মুখোমুখি হয়েছেন তারাই বিশ্বের আসল নায়ক। অনেক ছবি থেকে কিছু ছবি এখানে তুলে ধরা হলো।

ওমায়রা সানচেজ

ওমায়রা সানচেজ, ১৩ বছর বয়সী এক মেয়ে যে ১৯৮৫ সালে কলম্বিয়ার আরমেরো গ্রামকে ধ্বংসকারী আগ্নেয়গিরি নেভাডো দেল রুইজের অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধ্বসের পরে নির্মান বর্জ্যের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন। উদ্ধারকারীরা উদ্ধার করতে পারেনি। তার আটকে থাকার প্রায় ৬০ ঘন্টা পরে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফ্রাঙ্ক ফোর্নিয়ারের তোলা ছবিতে ওমায়রা সানচেজের সেই নিষ্প্রাণ অসহায় চোখের দৃষ্টি পুরো বিশ্বকে কাঁদিয়েছে।

ফান থি কিম ফুক

১৯৭৩ সালে পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী এবং সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধের ছবি। কিম ফুক একটি বায়বীয় নেপালম আক্রমনের পরে দক্ষিণ ভিয়েতনামের ট্রাং ব্যাং এর কাছে একটি রাস্তা ধরে দৌড়াচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য, কিম তার শরীরের আগুনে তার কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছিল।

সুদানে দুর্ভিক্ষ

১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত ছবি এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে কেভিন কার্টারের উত্থানের জন্য দায়ী। ১৯৯৪ সালে, কেভিন ফটোগ্রাফির জন্য পুলিৎজার পুরষ্কার জিতেছিলেন। ছবিতে সুদানের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা চরম ভাবে ফুটে উঠেছে। দুর্ভিক্ষের ছোবলে কঙ্কালসার এক বালককে দেখা যাচ্ছে যার অদূরেই এক শকুন অপেক্ষা করছে কখন ছেলেটির প্রান যায়। যদিও পরবর্তীতে ছবিটি অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং সৌভাগ্যবশত ছেলেটি সে যাত্রায় বেঁচেও গিয়েছিল।

উগান্ডা

মাইক ওয়েলসের করা ফটোগ্রাফি, এপ্রিল ১৯৮০ সালে, উগান্ডার কারামোজা প্রদেশে একটি শিশুকে একজন মিশনারির হাত ধরে দেখায়। দুই হাতের মধ্যে বৈপরীত্য যেন উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোকে আলাদা করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। ছবিটি বছরের পর বছর অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল।

ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি

পাবলো বার্থোলোমিউ হলেন একজন প্রশংসিত ভারতীয় ফটোসাংবাদিক যিনি ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডিকে তার লেন্সে ধরেছিলেন। ভারতের সবচেয়ে খারাপ শিল্প বিপর্যয় ৫৫৮১২৫ জন আহত এবং ১৫০০০ জনের মতো নিহত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড কীটনাশক প্ল্যান্টে নিরাপত্তার মান এবং রক্ষণাবেক্ষনের পদ্ধতি উপেক্ষা করায়, মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের একটি ফাঁস একটি ব্যাপক পরিবেশগত এবং মানবিক বিপর্যয় ঘটায়।

আয়লান কুর্দি

সাল ২০১৫, তুরস্কের অন্যতম অবকাশ যাপন কেন্দ্র বোদরামের সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে লাল টি শার্ট আর নীল প্যান্ট পরা এক শিশু। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে প্রানে বাঁচতে সে দেশের হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে ইউরোপের দিকে ছুটছে। অন্যদের মত সাগর পাড়ি দিতে আয়লানের পরিবার নৌকায় চেপে বসে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত নৌকা ডুবিতে প্রান হারায় তিন বছর বয়সী এই আয়লান কুর্দি। তুরস্কের ফটোসাংবাদিক নিলুফার দেমিরের তোলা এই একটি ছবি বিশ্বের বিবেক যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাকেই নাড়িয়ে দিয়ে গেছে প্রচন্ডভাবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রানারীপ্যারেন্টিংবিশেষ রচনাসংগ্রাম

কাজে ফেরা মাতৃত্বের পর

করেছে Suraiya Naznin মে ৩০, ২০২২

রেহনুমা তারান্নুম

অনেকেরই ম্যাটারনিটি লিভ থেকে ফিরে মনে হয় ‘একেবারে নতুন করে শুরু করছি!’ আবার বাড়িতে ছোট্ট শিশুটিকে রেখে এলে তার জন্যও মন কেমন করে। আসে ইমোশনাল ব্যাঘাত। তবে সমস্যা যা-ই হোক না কেন, স্ট্রেসড হবে না। কারণ, মাতৃত্ব কেবল নিজের জন্য নয়, উন্নত জাতির জন্যও!

মা হওয়ার পরে একটা লম্বা সময় কাজের জগৎ থেকে দূরে থাকলে অভ্যাসটা চলে যায়, এমনটাই মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ। অবশ্য বিষয়টা যে খুব ভুল, তা-ও নয়! মা হওয়ার ঝক্কি তো কম নয়। তাই তিন মাস বা তারও বেশি পাওয়া ছুটিটা শুয়ে-বসে উপভোগ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। ফলে ছুটি কাটিয়ে অফিসে ফিরলে যে রিফ্রেশড ব্যাপারটা আসে, এ ক্ষেত্রে তা একেবারেই অসম্ভব। রোজকার ডেডলাইনের চাপ, অফিস মিটিং, এদিক-ওদিক ছোটাছুটি এসব কিছুই এত দিন অনুপস্থিত ছিল।

 


তাই অনেকেরই ম্যাটারনিটি লিভ থেকে ফিরে মনে হয় ‘একেবারে নতুন করে শুরু করছি!’ আবার বাড়িতে ছোট্ট শিশুটিকে একলা ফেলে রেখে এলে তার জন্যও মন কেমন করে। ফলে মন দিয়ে কাজ করবে, সেখানেও কিছুটা ইমোশনাল ব্যাঘাত। তবে সমস্যা যা-ই হোক না কেন, স্ট্রেসড হবে না। পুরোনো অভ্যাসে ফিরতে একটু সময় লাগুক না! তা নিয়ে ভেবে মাথা খারাপ করার কিছু নেই।

বস ও সহকর্মীদের সঙ্গে একবার গোড়াতেই কথা বলে নাও। আগামী তিন-চার মাসে কী প্রজেক্ট আসতে পারে, ও তাতে তুমি কীভাবে কন্ট্রিবিউট করবে, সে ব্যাপারে মোটামুটি জেনে গেলে সুবিধা হয়। প্রথমেই খুব বড় প্রজেক্টে হাত দেবে না। ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করতে পারো। কয়েক দিন পর ছন্দ ফিরে পেলে আবার পুরোদমে কাজ করবে। প্রথম প্রথম অফিসের কাজ খুব হেকটিক মনে হলে অফিসের বাইরে নিজেকে প্যাম্পার করো।

 

ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়া, নিজেকে উপহার দেওয়া ইত্যাদি অফিস স্ট্রেস অনেকটা কমিয়ে দেবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। সন্তানকে বাড়িতে কারও নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে রেখে আসো। বারবার যদি বাড়িতে ফোন করতে হয়, বা সন্তান ঠিকমতো খাচ্ছে বা ঘুমাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে টেনশন করতে হয়, তাহলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবেই। তুমি চাকরি করছ বলেই যে সন্তানের দেখভাল ঠিকমতো করতে পারছ না, এ রকম ধারণা মনের মধ্যে রাখবে না। বেবিসিটার রাখার আগে তার স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। এ ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করতে পারলে, অফিসে পুরোপুরি মন দিতে পারবে। কাজের ফাঁকে এক-আধবার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে নাও। তবে সন্তান পালনের অজুহাতে কাজে ফাঁকি দেওয়া বা দেদার অফিস ছুটি নেওয়া মোটেও কাজের কথা নয়। কাজের জগৎটা প্রফেশনাল জায়গা। সংসারের সঙ্গে অফিসের সঠিক ভারসাম্যটাই জরুরি।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
প্রধান রচনাসংগ্রামসচেতনতাসমস্যা

বডি শেমিং কোনো রসিকতা নয়

করেছে Suraiya Naznin মে ২৬, ২০২২

জহুরা আকসা

অন্যের শারীরিক গঠন, চেহারা, আকার, আকৃতি বা গায়ের রং নিয়ে রসিকতা করা আমাদের সমাজের আদিতম চর্চাগুলোর একটি। সমাজের লোকেরা এসব করে মজা পায়। এগুলো যে বডি শেমিং এবং অন্যায়, সে বোধ সমাজের লোকজনের নেই। তাই তো যুগ যুগ ধরে রসিকতার নামে বডি শেমিং কোনো রকম বাধানিষেধ ছাড়াই সমাজে চর্চিত হয়ে আসছে।

বেশির ভাগ মানুষ নিজের অজান্তে বা জেনেবুঝেই অন্য মানুষকে তার শারীরিক গঠন নিয়ে কটাক্ষ করে থাকে। যেমন দেখা হলেই কাউকে মুটকি, ভুটকি, বাট্টু-পাতলু ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা। কিংবা বলা আরে তুমি এত কালো হয়ে গেছ? তোমার মুখে এত দাগ কেন? ডাক্তার দেখাও! তোমার তো বিয়ে হবে না! এই কথাগুলো বডি শেমিংয়ের মধ্যে পড়ে। অথচ মানুষ এগুলো এতটা সাবলীলভাবে বলে যে মনে হয় সামনের জন বুঝি অনুভূতিশূন্য মানুষ!

 

 

আসলে ছোট থেকেই আমরা কত কিছু শিখি কিন্তু এই শিক্ষা পাই না যে কাউকে তার শারীরিক গঠন নিয়ে তাচ্ছিল্য করাটা অপরাধ। বরং সামাজিকভাবে আমরা অন্যের খুঁত নিয়ে রসিকতা করার শিক্ষা নিয়ে থাকি।

অবশ্য এমন আচরণের পেছনে দায় কেবল সাধারণ মানুষের তা নয়। প্রতিদিন পেপার-পত্রিকা খুললেই বা টেলিভিশন অন করলেই মোটা থেকে চিকন হওয়া বা কালো থেকে ফরসা হওয়ার এত এত বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে যে আমরা ধরেই নিই যে চিকন আর ফরসা মানেই সুন্দর। এ ছাড়া টিভি সিরিয়ালগুলোতে স্বাস্থ্যবান মানুষদের যেভাবে ভাঁড় বানিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বাস্তব জীবনের মোটা মানুষদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাদের নিয়ে হাসাহাসি করা, রসিকতা করা সবাই যেন সমাজের বিনোদনের একটা অংশ মনে করে। রসিকতার নামে এই অসভ্যতা বিশ্বব্যাপী চলে।

 

সাম্প্রতিক অস্কারের মঞ্চে সেটাই দেখা গেল। আমেরিকান বিখ্যাত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান ক্রিস রক, রসিকতার ছলে অভিনেতা উইল স্মিথের স্ত্রী জেডা পিঙ্কেট স্মিথের কামানো মাথাকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জেডা, “জিআই জেন টু”-এর জন্য আমার আর তর সইছে না।’ ক্রিস রক মূলত ১৯৯৭ সালের সিনেমা ‘জিআই জেন’- এর প্রসঙ্গ টেনেছিলেন, যেখানে অভিনেত্রী ডেমি মুরের চুল খুব ছোট করে ছাঁটা ছিল। অথচ জেডা পিঙ্কেট স্মিথ তার আগেই অ্যালোপেশিয়া অসুখের কারণে তার চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল, এই চুল কমে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে জেডাকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য শুনতে হয় বলে এটা তার একটা অস্বস্তির জায়গা। আর মঞ্চে যখন ক্রিস রক তাকে নিয়ে রসিকতা করছিলেন, তখন জেডার চেহারায় সেই অস্বস্তি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। মূলত সেদিন অস্কারের মঞ্চে ক্রিস রক যা বলেছিলেন, তা বডি শেমিংয়ের নামান্তর। নিশ্চয় মানুষের অসুস্থতা কখনো কোনো রসিকতার বিষয় হতে পারে না।

কিন্তু এর প্রতিবাদে উইল স্মিথ যা করেছেন, সেটাও সমর্থনযোগ্য ছিল না। কাউকে এভাবে চড় মারা বা শারীরিকভাবে আঘাত করা যায় না। প্রতিবাদের আরও অনেক মাধ্যম আছে। গায়ে হাত তুলে কেন প্রতিবাদ করতে হবে? মুখে কথা বলেও তো প্রতিবাদ করা যেত।

তবে পুরো ঘটনায় একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো ছিল। আর তা হলো, যখন ক্রিস রক জেডাকে নিয়ে রসিকতা করেছিলেন, আর উইল স্মিথ যখন প্রতিবাদস্বরূপ ক্রিসকে চড় মারছিলেন, এই দুই সময়েই কিš‘ দর্শকেরা একইভাবে হেসে যাচ্ছিলেন। অর্থাৎ বডি শেমিং এবং সহিংসতা দুটোই তাদের কাছে রসিকতা মনে হয়েছে। আর এটাই হলো সমাজের বাস্তবতা। সমাজ রসিকতা করতে ও দেখতে পছন্দ করে। কিš‘ এই রসিকতার কারণে কেউ কষ্ট পেল কি না বা কারোর আত্মসম্মানে আঘাত করা হলো কি না, তা ভেবে দেখার তাদের সময় নেই।

 

শুধু অস্কারের মঞ্চে নয়, টিভির যত জনপ্রিয় কমেডি অনুষ্ঠান আছে, সেখানেও কিš‘ অবলীলায় সেক্সিস্ট এবং বডি শেমিং-জাতীয় রসিকতা করা হয়। মানুষের আকার, আকৃতি, চেহারা নিয়ে রসিকতা করা, মোটা ও কালো মানুষদের নিয়ে মজা করা, পঙ্গু বা খোঁড়া মানুষদের হাঁটা নিয়ে রসিকতা করা, ইত্যাদি চলে। অনেক সময় স্ট্যান্ডআপ কমেডি যারা করেন, তারা মিমিক করতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডারদের গলার স্বর নকল করেন। ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে হাসাহাসি করেন। এতে কিন্তু পুরো একটি কমিউনিটিকে অসম্মান করা হয়। অথচ বডি শেমিং বা কমিউনিটি শেমিংয়ের এই বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়ার বা অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকে না। উল্টো মিডিয়া নিজেদের টিআরপি বাড়াতে এই ধরনের কনটেন্টগুলোকেই বেছে নেয়। কারণ, সমাজের লোকেরা এগুলোই খায় বেশি। জনপ্রিয় হতে হলে সমাজের কাছে এসব কনটেন্ট বেচা সহজ। যে কারণেই দিনে দিনে এসব রসিকতা আরও বাড়ছে।

 


অথচ প্রত্যেক মানুষ আলাদা; আলাদা তাদের গঠন, স্কিন কালার। এটাই স্বাভাবিক ও প্রকৃতির সৌন্দর্য। তাই আমাদের কোনো অধিকার নেই নিজেদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি দিয়ে অন্যের সৌন্দর্য মাপা। আধুনিক সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের সবার উচিত একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আমাদের বোঝা উচিত রসিকতার নামে বডি শেমিং, যা অন্যকে দুঃখ দেয়, কষ্ট দেয়, ছোট করে, তা কখনো কোনো সুস্থ বিনোদনের বিষয় হতে পারে না।

 

ছবি: সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
প্রধান রচনাসংগ্রামসচেতনতাসমস্যা

বডি শেমিং : সভ্য সমাজে অসভ্যতার চর্চা

করেছে Suraiya Naznin মে ২৫, ২০২২

সাবিরা ইসলাম

কেউ কারও শারীরিক গঠন, আকৃতি ও বর্ণের জন্য দায়ী নয়। সুতরাং কারও শারীরিক উচ্চতা, রং বা আকৃতি নিয়ে কোনো কটাক্ষ করা অসভ্যতার নামান্তর। যদিও অহরহ আমরা তা করি। একজন মানুষের মূল্যায়ন হবে তার কাজে, মেধায়, মননে-

আমরা বলি মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। বিশ্বাস করি এ কথা। আবার লালনও করি। তবে স্রষ্টার কোন সৃষ্টিই-বা শ্রেষ্ঠ নয়? এমন একটি সৃষ্টি কি আছে, যা মানুষ সৃষ্টি করতে পারে? পারে না। মানুষ যা পারে তা হলো স্রষ্টার সৃষ্টিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে। আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করতে, সম্মান করতে, মর্যাদা দিতে। ভালো পোশাক, দামি অলংকার বা আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছু দিয়ে শরীরকে আবৃত করার নামই সাজ নয়। বরং একজন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশও তার অবস্থানকে সাজিয়ে তোলা, উন্নত করা। আমরা অনেকেই তা করি না। করতে পারি না। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক উচ্চতায় ত্রুটি বা ঘাটতি রয়েছে।

 

আজকের বিষয়টি বডি শেমিং নিয়ে। বডি শেমিং কী? সহজ ভাষায় বডি শেমিং হলো কারও শারীরিক গঠন, আকৃতি ও বর্ণ নিয়ে কটাক্ষ করা, আঘাত করা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ করা বা ব্যঙ্গ করা। মানসিকভাবে বিপন্ন করে তোলা।

আমাদের মানতে হবে, জগতের সব সৃষ্টি এক রকম নয়। এ জগৎকে সাজানোই হয়েছে বৈচিত্র্য দিয়ে। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি একেকজনকে একেক রকম করে তৈরি করেছেন দুটি কারণে। এক. আমরা যেন সর্বাবস্থায় স্রষ্টার সৃষ্টিবৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হই এবং দুই. আমরা যেন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজের জন্য শুকরিয়া প্রকাশ করি। কিন্তু আমরা তা করি না। বরং স্রষ্টার সৃষ্টিকে অপমান করি, ব্যঙ্গ করি, তাচ্ছিল্য দেখাই।

স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে আমরা খুব সহজেই সহপাঠীর শারীরিক ত্রুটি নিয়ে কথা বলি। প্রকাশ্যে তাকে নানা ধরনের টাইটেল দিয়ে ফেলি। উ”চতায় কম হলে বাটলু, বাটুস, বাইট্টা, খাইট্যা, বামন এমন সব নামকরণ করি। আবার উচ্চতা বেশি হলে লম্বু, তালগাছ, কুতুব মিনার বলতেও ছাড়ি না। গায়ের রং কালো হলে নিগ্রো, কালাচান, ব্ল্যাক ডায়মন্ড এসব বলি। মোটা হলে কোন গুদামের চাল খায়, জলহস্তী, হাতি বলি। হালকা-পাতলা হলেও নিস্তার নেই। সে ক্ষেত্রেও তালপাতার সেপাই, রবিউল, শুঁটকি, জীবনেও কিছু খায় নাই ধরনের মন্তব্য করি। আমরা এসব নামে যাদের নামকরণ করি, তাদের মনোযাতনা আমরা কেউ বুঝি না বা বোঝার চেষ্টা করি না। এতে যে তারা নিজেদের হীন মনে করে, করতে পারে, মনে মনে কষ্ট পায়, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।

মনে রাখতে হবে, কেউ কারও শারীরিক গঠন, আকৃতি ও বর্ণের জন্য দায়ী নয়। সুতরাং কারও শারীরিক উ”চতা, রং বা আকৃতি নিয়ে কোনো কটাক্ষ করা অসভ্যতার নামান্তর। যদিও অহরহ আমরা তা করি। একজন মানুষের মূল্যায়ন হবে তার কাজে, মেধায়, মননে।

ধর্ম কাউকে হেয় করার শিক্ষা দেয় না। বরং শারীরিক কোনো অসামঞ্জস্যের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন মানসিকভাবে নিজেকে ছোট মনে না করে, সেদিকে নজর রাখার কথা বলে। এটি প্রতিটি মানুষের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু গুণ রয়েছে। সেই গুণগুলোকে সামনে তুলে আনা জরুরি। সেই কর্মক্ষমতা, সেই যোগ্যতাগুলোকে মূল্যায়ন করা উচিত।

 

 

আমাদের সমাজে শারীরিক ত্রুটি নিয়ে নারীরা বেশি কটাক্ষের শিকার হয়। গায়ের রং কালো হলে তার পদে পদে হেনস্তা। পরিবার চিন্তিত হয় তার পাত্র¯’ করা নিয়ে, পাত্র¯’ করা গেলেও এর পেছনে অর্থনৈতিক দ- দিতে হয় প্রচুর। কারণ মা-বাবা অর্থ দিয়ে মেয়েটির সুখ কিনতে চায়, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চায়, পাত্রপক্ষও তাদের দর একটু বাড়িয়েও রাখে। কিš‘ এতে আদৌ কি কোনো সমাধান হয়? বরং এতে পাত্রপক্ষের লোভের সলতে উসকে দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েটির ওপর আরও বেশি মানসিক চাপ তৈরি করে দেওয়া হয়।

সংসারে বউ শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী কথা-কাটাকাটি হয় না এমন খুব কম পরিবারই আছে। এসব ক্ষেত্রেও দেখা যায় বডি শেমিং করা হয়। শিকার হয় নারীটিই। যদিও সাংসারিক কোনো দায়িত্ব পালনে নারীটি অক্ষম নয়। বর্তমান সময়ে অনেক নারী সংসার, সন্তান এবং চাকরি একা সামলাচ্ছে। তবু কখনো কখনো বডি শেমিংয়ের শিকার হচ্ছে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে এ রকম উদাহরণ মেলা কঠিন নয়।

তবে পুরুষ একদম বডি শেমিংয়ের শিকার হয় না, তা নয়। একজন কালো পুরুষের সুন্দরী বউ হতে পারবে না, একজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষের কম বয়সী বউ হওয়া যাবে না, লম্বা পুরুষের ছোটখাটো বউ, খাটো পুরুষের লম্বা বউ হলেও কটু কথায় কেউ ছাড়ে না। কোনো দম্পতি নিঃসন্তান হতে পারবে না, কোনো দম্পতির একাধিক ছেলেসন্তান বা কন্যাসন্তান হতে পারবে না সবকিছু নিয়েই অন্যদের কথা বলতে হবে এবং আঘাত করেই তা বলতে হবে।
কিন্তু আমরা জানিও না, এসব বলার অধিকার আমাদের কারও নেই। অধিকার যে নেই, তা প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন দেশে বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইনও রয়েছে।

 

 

* মালয়েশিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে কারও শরীর নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলে সর্বো”চ সোয়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বো”চ এক বছরের জেল কিংবা উভয় শাস্তি হতে পারে।
* ভারতে ২০২০ সালে এক নারী বডি শেমিং করায় তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগে তিনি বলেন যে ২০১৭ সালে বিয়ের পর থেকে তারা তার শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে কথা বলতে থাকে।

* ইন্দোনেশিয়ায় বডি শেমিং করার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাড়ে চার মাস জেল কিংবা সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপি জরিমানা হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে বডি শেমিং করলে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল কিংবা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি হতে পারে।

* বাংলাদেশে বডি শেমিংয়ের জন্য কেউ সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারে না। কারণ, এর সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। ২০২২ সালের মার্চে প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছে। ৩৭.২৪ শতাংশ তরুণী আত্মীয়স্বজনের কথায় ও ইঙ্গিতে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। বন্ধুবান্ধবের কাছে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছে ২২ শতাংশ নারী। দেশে অন্যান্য যৌন হয়রানির ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বডি শেমিংয়ের বিষয়ে আইন স্পষ্ট নয়। অন্য আইনগুলো দিয়ে মামলা করা বা থানায় অভিযোগ করা যায়।

* যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্য ও সান ফ্রান্সিসকো, ম্যাডিসনের মতো কয়েকটি শহর ছাড়া বাকি সব জায়গায় চাকরিদাতারা মোটা হওয়ার কারণ দেখিয়ে কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে পারে। এই বৈষম্য থেকে রক্ষা করার কোনো আইন নেই সেখানে। এক জরিপ অনুযায়ী প্রতি ২.৭২ কেজি ওজন বাড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী কর্মীর বেতন ঘণ্টাপ্রতি ২ শতাংশ কমে গেছে।

* অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ওজনধারী প্রায় ১৪ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি তাদের ডাক্তার, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ক্লাসমেট ও সহকর্মীদের দ্বারা ফ্যাট-শেমিংয়ের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি (৭৬ থেকে ৮৮ শতাংশ) ফ্যাট-শেমিং করেছে পরিবারের সদস্যরা।

এর মানে বিশ্বজুড়েই বডি শেমিংয়ের চর্চা রয়েছে। তাতে যত উন্নত দেশই হোক না কেন। গবেষণা বলে, যারা বডি শেমিং করে, তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো হতাশার মধ্যে আছে। যে কারণে তারা তাদের হতাশা বা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটায় অন্যের ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে। যদি বিষয়টি এ রকমই হয়, তবে যারা এমনটি করে, তাদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

বডি শেমিং রোধে নানা দেশে নানা আইন রয়েছে। কিন্তু এতে মূল সমস্যার সমাধান কতটা হয়েছে? আমাদের কথা হলো, সর্বক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ ও কার্যকর সম্ভব হয় না। বডি শেমিং এমন একটি সামাজিক ব্যাধি, যার উৎপত্তি ও বসবাস মানুষের মগজে। একে রোধ করতে হলে পারিবারিক শিক্ষাটা অনেক জরুরি। পরিবার থেকেই শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে কারও শারীরিক আকার-আকৃতি, বর্ণ নিয়ে কটাক্ষ করা মানবিক ও নৈতিক অপরাধ, মানসিক নীচতা। শিশুর উন্নত মানসিকতা, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ পরিবারকেই তৈরি করে দিতে হবে।

আগেও বলেছি, কোনো মানুষ তার শারীরিক কোনো ত্রুটির জন্য দায়ী নয়। সুতরাং তাকে সেসব বিষয়ে কথা শোনানো যাবে না। দুঃখের বিষয় হলো, এসব আমরা মানি না। সমাজের প্রায় সব স্তরেই বডিং শেমিংয়ের চর্চা হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত, মূর্খ কিংবা ধনী-গরিব নেই। সব স্তরে এর কম বেশি চর্চা হয়, হচ্ছে। অথচ সারা বিশ্বে ত্রুটিপূর্ণ শারীরিক গঠনসমৃদ্ধ মানুষের সাফল্য কম নয়। স্টিফেন হকিংয়ের নাম এখানে উল্লেখ করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের এই মহিরুহের নাম বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই, যারা শোনেনি।

সুরসম্রাট মোজার্টের সুর মূর্ছনায় মোহিত হয়নি এমন সুরপ্রেমী কি আছে কোথাও? অথচ তারা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না। বিশ্বে এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে, যারা তাদের শারীরিক ত্রুটিকে জয় করে নিজেকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গেছেন এবং বিশ্ববাসীর জন্য রেখে গেছেন বিশেষ অবদান। আমাদের উচিত তাদের সেই সব অবদান স্মরণে রাখা। মূল্যায়ন করা। সেইমতো নিজেদের আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

আমাদের দেশেও এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হলে আমরা এমন কিছু শিক্ষার্থীকে পাই, যারা তাদের নানা ধরনের শারীরিক ত্রুটি উপেক্ষা করে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে, আনছে। নিজের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অন্যের অনুপ্রেরণার কারণ হয়েছে। সুতরাং মানুষের মূল্যায়ন হবে তার কর্মে। বডি শেমিং করে সভ্য সমাজে সভ্য মানুষের অসভ্যতার চর্চা বন্ধ করে নিজেকেও শুদ্ধ মানুষ প্রমাণ করার এটাই সময়। সঠিক আইন ও এর প্রয়োগ, পারিবারিক শিক্ষা এবং সচেতনতাই হতে পারে এর থেকে উত্তরণের পথ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, গল্পকার।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বিশেষ রচনাসংগ্রামসম্ভাবনা

‘সুমির সাথে রান্না’ যেমন..

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ২৭, ২০২২

জীবনের নিরেট সত্য হলো, আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়া কেউ কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় নিজের সঙ্গে নিজেরই। বলছিলেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা নাজনীন সুমি। তিনি এবার বইমেলায় রন্ধনশিল্পের ওপর একেবারেই ভিন্নধর্মী বই প্রকাশ করেছেন, যা বাংলাদেশে প্রথম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সুরাইয়া নাজনীন-

কেমন আছেন?
সুমি : ভালো আছি। সত্যি বলতে কি আমি সব সময়ই ভালো থাকতে চেষ্টা করি।

আপনি একজন জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী। এই জনপ্রিয় হতে গিয়ে আপনার সংগ্রামটা কেমন ছিল?
সুমি : জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখাটা কঠিন। সংগ্রাম ছাড়া তো সফলতা আসে না। ধৈর্য আর পরিশ্রম মানুষকে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কাজটাকে ভালোবেসে করতে হবে। তবেই সে কাজে সফল হবে। বাধা পেয়ে থেমে যাওয়া যাবে না। আর সংগ্রামের গল্প যদি বলতে হয়, আমার সংগ্রামের গল্পটা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে বহুমুখী প্রফেশনাল হয়ে ওঠার। পড়াশোনা করেছি ‘এইচআর’ নিয়ে এমবিএ। ইচ্ছা ছিল করপোরেট জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু সংসার ও সন্তান সামলিয়ে নানা প্রতিকূলতার কারণে সেই করপোরেট জগতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সব সময়ই ইচ্ছা ছিল কিছু একটা করার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এই কিছু একটা করার ইচ্ছা তাড়িয়ে বেড়াত সব সময়। কারণ নিরেট সত্য হলো আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়া কেউ কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় নিজের সঙ্গেই। ড্রাইভিং শেখা, ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ওপর প্রফেশনাল ট্রেনিং, বারিস্তা ট্রেনিং নেওয়া, ফুড হাইজিনের ওপর কোর্স করা, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের ওপর সার্টিফিকেশন কোর্স করা, ফটোগ্রাফির কোর্স করা এসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলাটা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। সেই থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক খাবারের সঙ্গে পরিচয় আর ভালোবাসা।

 


আফরোজা নাজনীন সুমির বিশেষত্বের জায়গা কোনগুলো?
সুমি : বিশেষত্বের জায়গা যদি বলি, আমি একা এগিয়ে যেতে চাই না, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগে। আমি অসম্ভব পরিশ্রমী, সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি। সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছি, করে যেতে চাই। নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

এই পেশার প্রতি আগ্রহ কেন হলো?
সুমি: ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে আর আশপাশের মানুষকে খাওয়ানোর আনন্দ থেকেই এই পেশার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ভালো রান্নার হাত থাকায় খুব অল্প সময়েই আশপাশে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই একদিন ডাক পড়ে যমুনা টেলিভিশনের লাইভ কুকিং শোতে। সেই থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পথচলা শুরু। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি।

হাজারো প্রতিকূলতা সামাল দেওয়া হয় যেভাবে
সুমি : পরিবার থেকে সে রকম কোনো সহযোগিতা না থাকায় একাই ঘরসংসার সব সামলিয়ে হাজারো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বাইরের জগতে টিকে থেকে, কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু হয় নতুন এক সংগ্রামের। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সুনামের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি সুমিস কিচেনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রতিষ্ঠিত করা শুরু হয়। শুধু রন্ধনশিল্পী থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে একজন উদ্যোক্তার ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হই। এই পথচলার শুরুটাও খুব সহজ ছিল না। আসলে আমাদের এই সমাজে এখনো মেয়েদের এগিয়ে চলতে হয় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই আর সেই বাধাটা প্রথম আসে পরিবার থেকেই। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা তো আছেই। ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে প্রথম যে বাধার সম্মুখীন হই, সেটা হলো মূলধনের অপ্রতুলতা। তারপর দক্ষ কর্মী প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে মেয়েদের ব্যাংক লোন জোগাড় করা খুব একটা সহজ নয়। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।

বাংলাদেশে রন্ধনশিল্পের মূল্যায়ন কেমন?
সুমি : এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে যায় নেই, তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো বলব।

 

নতুনেরা এ পেশায় আসতে হলে কী বলবেন
সুমি : ডেডিকেশন, ধৈর্য থাকতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে।

 

এবার ঈদ নিয়ে আয়োজন কী?
সুমি : ঈদ সব সময়ই পরিবারের সঙ্গে একান্তে কাটাতে চাই। খাবারের আয়োজনেও থাকবে পরিবার আর আত্মীয়স্বজনের পছন্দের মেনু।

এবারের বইমেলায় আপনার বই প্রকাশ হয়েছে, সেটার ভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট্য আছে, জানতে চাই বিস্তারিত
সুমি : ‘সুমির সাথে রান্না’ নামে বাংলানামা প্রকাশনা থেকে এবার আমার যে বইটি বের হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের প্রথম রেসিপি বই, যেখানে কিউআর কোডে রেসিপির ভিডিও দেখা যাবে, নিউট্রিশন ভ্যালু আছে, বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই রেসিপি পাওয়া দেওয়া। প্রতিটি রেসিপির সঙ্গে সেই রেসিপির ছবিও পাওয়া যাবে। তা ছাড়া গত বছর বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বাহারি রান্না’ নামে একটা ব্রেইন রেসিপি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

 

দেশে রন্ধনশিল্পের জন্য তৈরি প্ল্যাটফর্ম কতটুকু মজবুত?
সুমি : প্ল্যাটফর্ম তো তৈরি থাকে না, করে নিতে হয়। আমাদের আগে অনেকেই সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা শক্ত ভিত করে দেওয়ার।

 

পারিবারিক সাপোর্ট কতটুকু দরকার বলে মনে করেন?
সুমি : একা একা যুদ্ধ করাটা অনেক কঠিন। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া এগিয়ে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। পরিবারের সাপোর্ট থাকলে কঠিন কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যায়। গত বছর বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বাহারি রান্না’ নামে একটা ব্রেইন রেসিপি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
বিনোদনবিশেষ রচনাসংগ্রামসম্ভাবনা

৬০ এর পরেই জিতলেন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ১৪, ২০২২

রোদসী ডেস্ক: সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা জেতার কোন বয়স নেই তা দেখিয়ে দিলেন মার্কিনি নারী। ৬০ বছরের পিয়ানো শিক্ষিকা কিম্বার্লি ঘেদির রয়েছে সাত নাতি-নাতনি। টেক্সাসের বাসিন্দা বহু দিন মনে করতেন বয়স ৬০ পেরোলেই জীবন শেষ। কিন্তু ৬৩ বছর বয়সে এসে তিনি শরীরচর্চা করা শুরু করেন, বিয়ে করেন এবং ‘মিস টেক্সাস সিনিয়র আমেরিকা’ নামে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিজয়ী হন। তাই বয়স নিয়ে সব রকম ভুল ধারণা ভেঙে গিয়েছে তাঁর।

 


‘‘নিজেকে নিয়ে ধারণা পাল্টে গিয়েছে আমার। এখন মনে হয় বলিরেখার মধ্যেও অন্য রকম সৌন্দর্য রয়েছে। পরিণত বয়সের নারীরা সত্যিই সুন্দর,’’ প্রতিযোগিতা জিতে বললেন কিম্বার্লি।

৬০ থেকে ৭৫ বছর বয়সি নারীদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা হয় প্রত্যেক বছরই। বেলি ডান্সিং থেকে এক হাতে পুশ আপ— সব রকম খেলাতেই অংশ নেন নারীরা।


এই প্রতিযোগীরা মনে করেন ৪০, ৫০, ৬০, ৭০— যে কোনও বয়সেই মেয়েরা সুন্দর। বিজয়ী কিম্বার্লি জানিয়েছেন, ১৯ বছর বয়সেও তিনি এতটা ফিট ছিলেন না। ৬৩ বছর বয়সে শরীরচর্চা শুরু করার পর থেকে তিনি অনেক বেশি ফিট হয়ে গিয়েছেন।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
তুমিই রোদসীনারীপ্রধান রচনাসংগ্রামসচেতনতা

কনফিডেন্ট হওয়া খুব জরুরি

করেছে Suraiya Naznin মার্চ ৩, ২০২২

বাবা বদলির চাকরি করতেন, সেই সুবাদে নানা জায়গায় ঘোরার সুযোগ মিলেছে। পড়াশোনা হলিক্রস থেকে। তারপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা। বলছিলাম ইশিতা শারমিনের কথা। তিনি বর্তমানে বিক্রয় ডটকমের সিইও হিসেবে কাজ করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সুরাইয়া নাজনীন

 

জীবনযাত্রার বেলায়
ইশিতা শারমিন : আমার পড়াশোনা যখন শেষ হয়, তারপর আমি মোবাইল কোম্পানি সিটিসেলে জয়েন করি। বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করে সিটিসেল। আমি ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস নিয়ে কাজ করতাম। আমাদের হুয়াওয়ের সঙ্গে কাজ হতো চায়নায়। সেখানে আমি ট্রেনিংয়ের জন্য যাই। পরবর্তী সময়ে আমি খুব কম সময়ের মধ্যে প্রমোশন পাই। তারপর ২০১০ সালে আমি সিটিসেল ছেড়ে দিই, তখন আমার বিয়ে হয়ে যায়। তারপর আমি দুবাইয়ে চলে যাই। দুবাইয়ে ব্লুবেরি টেকনোলজিতে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। এরপর আমি সল্টসাইট টেকনোলজিতে কাজ করেছি। এটা একেবারেই অন্য রকম একটি কোম্পানি ছিল। এদের কাজ ছিল পুুরো বিশ্বে অনলাইনে ওয়েবসাইট লঞ্চ করা।

 

ইশিতা শারমিন

 

 

বিক্রয় ডটকমে যেভাবে এলেন
ইশিতা শারমিন : দুবাইয়ে যখন সল্টসাইটে কাজ করি, তখন ওরা বাংলাদেশে একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নেয়, বিক্রয় ডটকম নামে। সল্টসাইট একটি ব্রিটিশ কোম্পানি, যারা বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার সঙ্গে কাজ করত দুবাইয়ে বসে। পরে আমাকে সল্টসাইট থেকে বিক্রয় ডটকমের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওখানকার মার্কেটিং পলিসি নিয়ে আমি কাজ করতাম। ২০১৬ পর্যন্ত আমি বিক্রয় ডটকমে মার্কেটিংয়ের হেড হিসেবে কাজ করেছি। পরে বাংলাদেশে অফিস নিয়ে খুব বড় পরিসরে সেটআপ করা হয়। কিš‘ পরবর্তী সময়ে আমি আবার দুবাইয়ে সেটেল ডাউন করি। তখন অনলাইন মার্কেটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছিলাম ২০১৬ এবং ২০১৭ পর্যন্ত। এরপর আমি আবার বাংলাদেশে ব্যাক করি ২০১৮ সালে। এখন আমি বিক্রয় ডট কমের সিইও হয়ে কাজ করছি।

 

জীবনের সংগ্রামটা কি নারীর জন্য একেবারেই আলাদা?
ইশিতা শারমিন : আসলে সংগ্রামটা নারী-পুরুষ সবাইকে করতে হয়। তবে একটু ভিন্নভাবে। নারীর জন্য যেটা হয় তা হলো কেউ প্রায়োরিটির জায়গায় রাখে না নারীর ক্যারিয়ার। নারী মানেই একটু গৃহবন্দী টাইপ কিছু ব্যাপার সবার চিন্তায়। তবে নারীর মনের ইচ্ছাটা খুব জরুরি। আমি কী করতে চাই এবং যেটা করব সেটাতে কি আমি স্বাচ্ছন্দ্য। যে কাজ ভালো লাগবে না, সেটা ধরে টিকে থাকাটাও কঠিন।

 


নারীর জন্য ক্যারিয়ারসচেতন হওয়া কতটা জরুরি?
ইশিতা শারমিন : অবশ্যই জরুরি। কখনো কেউ বলতে পারে না জীবনের দুর্র্ঘটনার কথা। পরিবারের স্বাবলম্বী ব্যক্তিটির হঠাৎ করে যদি কিছু হয়ে যায়, কে সেই পরিবারের দায়িত্ব নেবে? আমাদের সরকারব্যবস্থা ও ততটা সক্ষম নয় যে সেই পরিবারের পাশে সারা জীবন দাঁড়াবে। তাই সবার আগে পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিকল্প কেউ কিছু করলে সেই পরিবারের আর সমস্যা হবে না। সে জন্য বিকল্প হয়েও নারী যদি কিছু করতে চায়, খারাপ কী?

পরিবারের সহযোগিতার জন্য একজন নারী কতটুকু এগিয়ে আসে?

ইশিতা শারমিন : বিয়ের পর একজন নারী তার স্বামী, সন্তান এবং তার পরিবারকে ভালো রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। অনেকে ভাবেন বিয়ে হয়েছে, সন্তান হয়েছে, সন্তান মানুষ করবে চাকরির কী দরকার! কিš‘ ওই সন্তানদের ভালো ভবিষ্যতের জন্যই একজন নারী কিংবা মায়ের চাকরির দরকার। আবার কর্মজীবী মায়ের সন্তানেরাও অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়, যা তার ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে অনেক কাজে লাগে।

 


কনফিডেন্ট থাকাটা কতটা জরুরি?
ইশিতা শারমিন : এটার কোনো বিকল্প নেই। অনেক সময় একজন নারীই তার সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এটা কি আমি করব? কিংবা এটা কি আমাকে দিয়ে হবে? এসব আচরণের কারণে পুরুষেরাও এটার সুযোগ নেন। নারীকে কোনো বড় দায়িত্ব দিতে চান না। তাই নারীকে স্কিলড হয়ে নিজের জায়গাটি ধরে রাখতে হবে। তাহলে কনফিডেন্ট লেভেলটি আরও উন্নত হবে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook