রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

সমস্যা

সচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

আগুনে পুড়লে

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ৪, ২০২৩

রোদসী ডেস্ক: শরীরের কোথাও গভীরভাবে পুড়ে গেলে ব্যথা অনুভব করার জন্য প্রয়োজনীয় নার্ভ বা স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এমন ক্ষেত্রে অবহেলা না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত-

পানি ঢালা: শরীরের কোথাও হালকা পুড়ে গেলে পোড়া স্থানের ওপর প্রায় ২০ মিনিট ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, তবে ফ্রিজের পানি নয়। তারপর পোড়া স্থানকে ত্বক সহনীয় সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ঠান্ডা সেঁক : পোড়া স্থানের ওপর কোল্ড কমপ্রেস বা কাপড়ে পেঁচানো বরফের টুকরো ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখলে ব্যথা ও ফোলা উপশম হবে। ১০-১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে প্রয়োজন পড়লে পুনরায় সেঁক দেওয়া যেতে পারে । তবে খুব বেশি ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যাবে না, কারণ ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম: অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম পোড়া স্থানে ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারে। পোড়া স্থানের ওপর ব্যাসিট্রাসিন বা নিওসপোরিন অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট লাগানো যেতে পারে। তারপর জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

অ্যালোভেরা জেল: পোড়া স্থানের চিকিৎসায় অ্যালোভেরা এত বেশি কার্যকর যে, এটা বার্ন প্লান্ট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন ও সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন নিরাময়ে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরা প্রদাহ কমায়, রক্ত সংবহন বাড়ায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঠেকায়। অ্যালোভেরার পাতা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জেল নিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিতে হবে। অথবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কোম্পানির অ্যালোভেরা ক্রিম কিনেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

মধুর প্রলেপ: মধু খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এটা কে না জানে? চমকপ্রদ তথ্য হলো, মধু ত্বকেও ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে, মৃদু পোড়া স্থানে মধুর প্রলেপ দিলে দ্রুত সেরে ওঠে। মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিনাশক শক্তি রয়েছে। এছাড়া প্রদাহও কমাতে পারে।

ফোসকা ফাটানো যাবে না: ফোসকা চোখে পড়লে ফেটে ফেলতে ইচ্ছে হয়। ফোসকাকে তার মতো থাকতে দিতে হবে। এটা সময়মত নিজ থেকে ফেটে যাবে। ফেটে ফেললে ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে। তবে ফোসকাকে উদ্বেগজনক মনে হলে চিকিৎসকের কাছে চলে যেতে হবে।

ব্যথানাশক ওষুধ: পোড়া স্থানে ব্যথা অনুভব করলে ওভার-দ্য-কাউন্টার (যেসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ে না) ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন, যেমন- আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন। অবশ্যই বয়স অনুসারে সঠিক ডোজে ব্যবহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত ধারণা না থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

যা ব্যবহার করা যাবে না

পোড়া স্থানে মাখন, তেল, ডিমের সাদা অংশ ও টুথপেস্ট লাগাবে না। এসবকিছু ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলে জাতীয় ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসবের প্রয়োগে পোড়া স্থানের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। মাখন তাপ ধরে রাখে ও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটাতে পারে। তেলও তাপ ধরে রাখে, এমনকি নারকেল তেলও। ডিমের সাদা অংশ লাগালে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ও অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের ঝুঁকি আছে। টুথপেস্ট ত্বককে উক্ত্যক্ত করার পাশাপাশি ইনফেকশনের উপযোগী করে তোলে।

যখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

ফার্স্ট ডিগ্রি বার্নের চিকিৎসা ঘরে করলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বললেই চলে। তবে সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নের চিকিৎসা ঘরোয়া উপায়ে করলেও বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন আছে, কারণ ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যখন চিকিৎসক দেখাবে-

* পোড়া স্থানের ডায়ামিটার ৩ ইঞ্চির বেশি হলে।

* মুখমণ্ডল, হাত, নিতম্ব ও কুঁচকিতে পুড়ে গেলে।

* পোড়া স্থানের যন্ত্রণা অসহনীয় হলে বা দুর্গন্ধ ছড়ালে।

* উচ্চ মাত্রায় জ্বর আসলে।

* যদি মনে করেন যে থার্ড ডিগ্রি বার্ন হয়েছে।

* যদি পোড়ার মাত্রা বুঝতে না পারেন।

* সবশেষ টিটেনাস শট নিয়েছেন ৫ বছরের বেশি হলে।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.কান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাদিবস সবিশেষদেহ ও মনবাতিঘরবিশেষ রচনাসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়- লাইভ আলোচনা

করেছে Shaila Hasan মার্চ ৫, ২০২৩

সুরাইয়া নাজনীন:

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “close the care gap” অর্থাৎ‘ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। ‘ক্যান্সারমানেইমৃত্যু নয়’ এই বিষয় ধরে রোদসী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে  ফেসবুক লাইভ আলোচনা। রোদসীর সম্পাদক ও প্রকাশক সাবিনা ইয়াসমীনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। দুজন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম ও সহকারী অধ্যাপক ডা.তন্নিমা অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফার্মাসিস্ট স্বাগতা সরকার লোপা-

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার মানেই কি মৃত্যু? আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ধরে নেয়া হয় ক্যান্সার হলেই সব শেষ- এ  ধারণা নিয়ে কিছু বলুন?

রওশন আরা বেগম: ক্যান্সার হলেই যে মৃত্যু নিশ্চিত তেমনটি নয়।আর মৃত্যুর কথা তো আমরা কেউ বলতে পারিনা। দেখতে  হবে ক্যান্সারের স্টেজ কোন পর্যায়ে আছে। স্টেজ ১ হলে ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে আবার ২ হলে ৭০ শতাংশ আবার স্টেজ ৩ হলে ৫০  শতাংশ। এটা আসলে নির্ভর করে রোগীর শারীরিক কন্ডিশনের ওপর। স্টেজ বেশি হলে সারভাইবাল কমে যায়।তবে মৃত্যু  অবধারিত এমনটি নয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার হলে একজন মানুষ কীভাবে বুঝবে?

তন্নিমা অধিকারী: ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ আছে সেগুলো দেখে আঁচ করা যেতেপারে।  যেমন কিছু কিছু ক্ষত হলে অনেক সময় সারতে চায়না, তিন-চারসপ্তাহ ধরে থাকে। আবার শরীরের কোনো কোনো জায়গায় চাকা কিংবা পিন্ডের মতো দেখা দিলে আবার তা যদি খুব দ্রুত  বেড়ে যায় তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। অস্বাভাবিক রক্তপাতও চিন্তার বিষয় হতে পারে। যেমন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে, মাসিকের সঙ্গে অস্বাভাবিক রক্ত গেলে, স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশার পর রক্ত গেলে। আবার শরীরে আঁচিলের সংখ্যা বেড়ে  গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। কিন্তু বলে রাখা ভালো এসব লক্ষণ দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হয়েছে তেমনটি ভাবারও কারণ নেই। একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন কী কারণে এসব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী কি এর ভয়াবহতা নির্ভর করে?

রওশন আরা বেগম: ক্যান্সারের স্টেজ ভেদে এর ভয়াবহতা নির্ভর করে। আবার চিকিৎসাও ভিন্ন হয়ে যায়। অনেক সময় শুরুর দিকে ধরা পড়েনা সেজন্য উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। কিছু ক্যান্সার আছে কেমো সেনসিটিভ সেগুলো কেমোথেরাপি দিলে ভালো হয়ে যায়, আবার কিছু ক্যান্সারের জন্য রেডিওথেরাপি দরকার হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কি নারী-পুরুষের কোনো প্রভাব আছে?

তন্নিমা অধিকারী:  হ্যাঁ, ব্রেস্ট, জরায়ু আর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে নারীরা। ব্রেস্ট ক্যান্সারপুরুষেরও হয় তবে তা ১  শতাংশের মতো। প্রোস্টেড ক্যান্সার পুরুষের হয়। আমাদের দেশে অতিমাত্রায় পান-জর্দা খাওয়ার কারণে মুখের ক্যান্সার বেশি হয়। আবার ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার কিংবা বড় কোনো রোগ হলে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই কিন্তু  এক্ষেত্রে একজন ফার্মাসিস্টও বড় ভুমিকা পালন করতে পারে সেটা কীভাবে?

স্বাগতা সরকার লোপা: রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যকার একটা ভুমিকা পালন করে ফার্মাসিস্টরা। অনেক সময় ক্যান্সারের  মেডিসিনে অনেক রকম পার্শ্ব ¦প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা কাউন্সেলিং করে থাকেন। ওষুধের ডোজের ক্ষেত্রেও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকরাই প্রেসক্রাইব করে থাকেন, সেই মোতাবেক ফার্মাসিস্টরা রোগীর কাউন্সেলিংয়ের কাজটা করেন। যেমন কেমোথেরাপি বেশ ব্যয়বহুল আমরা সেক্ষেত্রে অ্যাড মিক্সিং করি।

সাবিনা ইয়াসমীন: নারীরা কোন বয়স থেকে সচেতন তার চিন্তাটা করবে?

রওশন আরা বেগম: আসলে সচেতনতার কোনো বয়স নেই। আমরা স্কুল-কলেজে গিয়েও সচেতন তার বিষয়টি নিশ্চিত করি। তারা  যেন জানতে পারে কীভাবে ব্রেস্ট চেক করতে হয়। কখনই বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে রুটিন মাফিক নিয়ম করে ৩০ বছর  থেকেই সচেতন হওয়া খুব দরকার। বিশেষ করে মাসিক শেষ হওয়ার পর ব্রেস্ট চেক করতে হয়।তাছাড়া আর একটু নিশ্চিত হওয়ার ভায়া  টেস্ট করাটাও জরুরি।

সাবিনা ইয়াসমীন: আপনার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের মানুষ কতটুকু সচেতন?

তন্নিমা অধিকারী: আগের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে তা শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশ  তো আর শহরকেন্দ্রিক নয়। তবে একটা জিনিস জেনে রাখা ভালো দেশের প্রত্যেকটা উপজেলাতে ভায়া টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে।  সেটা সিস্টাররাই করতে পারেন। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের জানা এবং জানানো ভীষণ প্রয়োজন। এখানে সরকার এবং গণমাধ্যমের বেশ ভূমিকা রয়েছে।তবে আরও একটা জিনিস আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমাদের লাইফস্টাইলের পরিবর্তন করতে হবে।  এখন আমরা স্যানিটারি লাইফ লিড করি। যেমন – সারাদিন বসে কাজকর্ম করা,  হাঁটাচলা, ব্যায়াম খুব কম হয়,  এগুলো বাড়াতে হবে। খাওয়া-দাওয়ায় শাকসবজি সতেজ জিনিস বেশি খেতে হবে। ফাস্টফুড বাদ দিতেহবে।

সাবিনা ইয়াসমীন: অনেকেই ধারণা করেন কেমোথেরাপি দিলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, রোগীর জন্য ধারণ করাও খুব কষ্টসাধ্য। এ বিষয়ে কিছু বলুন

স্বাগতা সরকার লোপা: আজকাল শুধু নয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, সার্জারি, টার্গেটেড থেরাপিও দেয়া হয়। তবে কেমোথেরাপি দিলেই যে রোগীর খারাপ কিছু হবে তেমনটি নয়। কোন রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা কার্যকর এটা চিকিৎসকরা সঠিকভাবেই প্রেসক্রাইব করেন। তবে ওই যে আমি আবার বলব, ক্যান্সার কোন স্টেজে ধরা পড়ল সেটার ওপরই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। শেষের দিকে ধরা পড়লে কেমোতেও কাজ হয় না তখন পেলিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট দিতে হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন:  রোদসী লাইভে ক্যান্সার বিষয়ক অনেক কথাই উঠে এসেছে। প্রত্যাশা রাখি শ্রোতা, পাঠক সবাই উপকৃত হবেন এই লাইভের মাধ্যমে। রোদসী লাইভে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

অতিথি বৃন্দ: রোদসীকে ধন্যবাদ। সব শ্রোতা ও পাঠকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

  • অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম

         এমবিবিএস, এমপিএইচ, এমফিল, ডিএমইউ, এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি)

         অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি বিভাগ।

          জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

  • ডা তন্নিমা অধিকারী

         এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি)

         সহকারী অধ্যাপক

         রেডিওথেরাপি বিভাগ

          ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

  • স্বাগতা সরকার লোপা

          ডেপুটি ম্যানেজার

          ফার্মেসি

          এভার কেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।  

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.কান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাদেহ ও মনবিশেষ রচনাসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

দেশেই সম্ভব ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা

করেছে Shaila Hasan মার্চ ২, ২০২৩

সাধারণ মানুষের ধারণা ক্যান্সার মানেই মরণ-ব্যাধি। বাস্তবে তা কিন্তু নয়। সঠিকসময়ে, নির্ভুল ডায়াগনোসিস ও উপযুক্ত  চিকিৎসায় অনেক ক্যান্সারই সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। লিখেছেন অধ্যাপক ডা. মো.সালাহউদ্দীন শাহ।

সারাবিশ্বেরমতো ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশেও উদযাপন করা হয়েছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর এই দিনটি পালন করা হয়। গ্লোবোক্যান ২০২০-এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১ কোটি ৯০   লাখের মতো মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছিল। এরমধ্যে নন হজকিন ও হজকিনলিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, মায়েলোমাসহ রক্তের  বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। একই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে এক বছরে নতুন প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়। যার মধ্যে সাত হাজারের বেশি লোক রক্তের বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এবছর এই  দিনটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “ক্লোজ দ্যা কেয়ার গ্যাপ”  অর্থাৎ ক্যান্সার চিকিৎসা সেবায় কোনো ফাঁক রাখা যাবেনা। প্রতিটি মানুষই সমানভাবে এই  চিকিৎসা সেবা পাওয়ারঅধিকার রাখে। আর এভাবেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ক্যান্সারকে জয় করবএবং ক্যান্সার মুক্ত  পৃথিবী গড়ে তুলব।

ক্যান্সার সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের জানা থাকা দরকারঃ

– সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করে, ক্যান্সার হলো তার ২য় বৃহত্তম কারণ।

– প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়নের মতো মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে।

–  শতকরা ৪০ শতাংশেরও বেশি ক্যান্সারজনিত মৃত্যুকে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি-  শুধু কিছু অভ্যাস পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে। যেমন ধূমপান ও মদ্যপান পরিত্যাগ করতে হবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।   নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।

– ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি নিয়মিত ক্যান্সারের কিছু রুটিন স্ক্রিনিং টেস্টের  মাধ্যমে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় সম্ভব হয়ত সঠিক চিকিৎসা নেয়া যাবে।

– স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশেরও বেশি।

– ক্যান্সার প্রতিরোধের সঠিক পরিকল্পনা, প্রাথমিক ভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে  আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি।

– ক্যান্সার চিকিৎসায় পৃথিবী ব্যাপী বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ১.১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারলে এই অর্থ স্বল্প  ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যেত।

ক্যান্সার কী?

মানুষের শরীরে যে কোষগুলো রয়েছে সেগুলো অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক ভাবে যখন বৃদ্ধি পায় তখন কোষভেদে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়  এই কোষগুলো লাম্প বা পিন্ড তৈরি করে যাকে টিউমার বলে। আর রক্তের ক্ষেত্রে রক্তের   কোষগুলো সংখ্যায় অপরিপক্বভাবে বৃদ্ধি পায়। এই ক্যান্সার কোষগুলো রক্ত ও লসিকা বা লিমফেটিক সিস্টেমের মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে   ছড়িয়ে পড়ে। কখনও টিউমার গুলো হরমোন তৈরি করে যা শরীরের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত করে।

ক্যান্সারের ধরনগুলো সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়ঃ

-বিনাইন

-টিউমার

-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এবং

-প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থা।

বিনাইন টিউমার সাধারণত জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়না। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পারিপার্শ্বিক টিস্যুতে  ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে মৃত্যু ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থা পরবর্তীতে ক্যান্সার হতে পারে। কাজেই প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।

ক্যান্সারের ধরনগুলো কে আমরা সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ

-কার্সিনোমা

-সারকোমা

-লিম্ফোমা

-মাইলোমা এবং

-লিউকেমিয়া।

নন হজকিন ও হজকিনলিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, মায়েলোমা রক্তের ক্যান্সারের অন্তর্গত। রোগের ঝুঁকি অনেকটাই নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন ও পর্যায়ের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগনির্ণয় সম্ভব হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তের  ক্যান্সার নিরাময় করা যায়।

ক্যান্সার হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্যান্সার আমরা কিছু অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস ও   জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারি। ক্যান্সারের কিছু কারণ রয়েছে যা আমরা পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি  যেমনঃ

– মদ্যপান পরিত্যাগ

– শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

– সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ

– নিয়মিত ভাবে শরীরচর্চা করা

–  ধূমপান পরিত্যাগ করা

–  অনিয়ন্ত্রিত ভাবে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন ব্যবহার করা

– পেশাগত কারণে কেমিক্যাল ডাইয়ের সংস্পর্শে আসা যেমনঃ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করেন

– বিভিন্ন ধরনের ইনফেশনের জন্যও ক্যান্সার হতে পারে যেমনঃ হেপাটাইটিস বি, সি ও এইচ আই ভি ভাইরাসজনিত ইনফেকশন

ক্যান্সার হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে যা কিনা পরিবর্তন করা যায়- বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের কিছু জেনেটিকপরিবর্তন  ঘটে  ফলে পরবর্তীতে ক্যান্সার দেখা দেয়।

– ক্যান্সার উৎপাদনকারী কার্সিনোজেন যা মানবশরীরের জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার তৈরি করে।

– কিছু মানুষ দুর্ভাগ্যক্রমে জেনেটিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ফলে পরবর্তীতে যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আবার শরীরের  দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণেও ক্যান্সার হতেপারে।

ক্যান্সার হলে শরীরে কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে?

ক্যান্সারের প্রকারভেদে শরীরের উপসর্গও ভিন্ন ভিন্ন হতেপারেঃ

– হঠাৎ করে শরীরে অস্বাভাবিক লাম্প বা পিন্ড দেখা দিতে পারে

– কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঢোক গিলতে অসুবিধা- এমন সমস্যাও ক্যান্সারের প্রাথমিক কারণ হতে পারে

– আবার হঠাৎ করে বাথরুমের ধরণ পরিবর্তন হতে পারে

– শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতেপারে

– হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমা শুরু হতে পারে

– অবসাদ, দুর্বলতা, মাংসে ও হাড়ের মধ্যে কখনও কখনও ব্যথা দেখা দিতে পারে

– শরীরে নতুন নতুন মোল অথবা মোলের ধরন পরিবর্তন হতে পারে

– হঠাৎ করে প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দিতে পারে

– অস্বাভাবিক ভাবে স্তনের পরিবর্তন হওয়া

– খাওয়ার রুচি না থাকা ও হজমে অসুবিধা হওয়া

– শরীরের কোথাও ঘা হয়েছে কিন্তু শুকাচ্ছে না

– রাত্রে অস্বাভাবিকভাবে শরীর ঘেমে যাওয়া

ক্যান্সার প্রতিরোধ

এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্যান্সার আমরা প্রতিরোধ করতে পারি- বিষয়ক ক্যান্সার গুলো কমিয়ে আনার মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের মাধ্যমে আমরা অনেক ক্যান্সার নির্মূল করতেপারি যেমনঃ Colorectal Cancer, Breast Cancer, Cervical Cancer, Oval Cancer  জাতীয়ভাবে আমরা Vaccination, testing and screening  সম্পর্কে জনগনকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করতে পারি।

ক্যান্সার নির্ণয়:

  • রুটিন রক্ত পরীক্ষা, ক্যান্সার  screening test, অস্বাভাবিক পিন্ড বা Tumar এর Biopsy করে ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারি।
  • Bone Marrow Examination, Immunohistochemistry, Cytochemistry, cytogenetic, Molecular Test, Next generation Sequencing, DET- CT Scan
  • USG, X-ray, CT-Scan, MRI

এসব পরীক্ষা ক্যান্সারের ধরন ভেদে যথাসময়ে করতে পারলে ক্যান্সার নির্ণয় সহজ হবে। ক্যান্সার   রোগের আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, হরমোনথেরাপি, জিনথেরাপি এসব চিকিৎসা ব্যবস্থার   মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার নির্মূল করতে পারি। প্যালিয়েটিভ কেয়ার- অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি নতুন সংযোজন। রক্তের   ক্যান্সারের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই হচ্ছে। তবে এ রোগের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা বিস্তরভাবে দেয়ার জন্য   জাতীয় গবেষণা ও চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

অধ্যাপক ডা. মো.সালাহউদ্দীন শাহ

চেয়ারম্যান, হেমাটোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মোবাইল: ০১৯২২১১৭৬৭০

ই-মেইল: ংযধয.ভপঢ়ং@মসধরষ.পড়স, ংযধযথফৎ@নংসসঁ.বফঁ.নফ

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.কান পেতে রইগ্রুমিংজীবনসচেতনতাসমস্যাসুস্থ মন

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা? জেনে নাও মুক্তির উপায়

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২৩

শায়লা জাহান:

নিজেদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে চিন্তা করা সর্বদা একটি ভালো ধারণা। কিন্তু এই চিন্তার পরিমাণ যদি লাগামহীন ভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে কী করবে? প্রচলিত একটি কথা আছে, “ কোন কিছুতেই  খুব বেশি গভীরে যাবে না, এটি অতিরিক্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যায় এবং অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা এমন সমস্যার দিকে নিয়ে যায় যেগুলোর কোন  অস্তিত্ব নেই।”

ক্ষুদ্র এই মানব জীবনের সাথে চিন্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এই চিন্তার পরিধি যখন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায় তখনই তা রুপ নেয় দুশ্চিন্তার। যদিও প্রত্যেককেই কিছু না কিছু ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে কিন্তু কিছু ব্যক্তি এই ধ্রুবক বাঁধায় জর্জরিত থাকে। এই অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা অনেকটা ট্রেডমিলের মতো, যা থেকে সহজেই উতরানো যায়না। কোন কিছু সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করা প্রায়শই শব্দের চেয়ে বেশি কিছু জড়িত থাকে। এটি একটি সময় এমনভাবে মাথায় গেঁড়ে বসতে পারে যা ঘুম, কাজ, সম্পর্ক, স্বাস্থ্য বা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিকগুলোকে ব্যাহত করার পাশাপাশি পুরো জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে যথেষ্ট।

ওভার থিংকিং- যাকে রিমিনেশন ও বলা হয়, এটি সাধারণত দুই ক্যাটাগরিতে পড়েঃ অতীত সম্পর্কে চিন্তা করা বা ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। অতিরিক্ত চিন্তা করা কোন স্বীকৃত মানসিক ব্যাধি নয় ঠিকই কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সাথে যুক্ত থাকে, যার মধ্যে রয়েছেঃ

  • ডিপ্রেশন
  • উদ্বিগ্নতা
  • অবসেসিভ কম্পুলসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)
  • পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)

মুক্তির উপায়

অন্যান্য অভ্যাসের মতো, বিদ্যমান ধ্বংসাত্মক চিন্তার ধরণ পরিবর্তন করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু , ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে, তুমি তোমার মস্তিষ্ককে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে প্রশিক্ষন দিতে পারো। এর জন্য কিছু উপায় রয়েছে। যেমন-

  • অতিরিক্ত চিন্তা করা এমন এক অভ্যাসে পরিণত হতে পারে যে যখন তুমি এটি করবে তখন নিজেই বুঝতে পারবেনা। এইজন্য তোমাকে শুরুতেই উদ্ভূত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পূর্ব থেকে সনাক্ত করা সমস্যার যদি কোন ফলপ্রসূ সমাধানের পথ না থাকে, তবে সে ব্যাপারে অহেতুক চিন্তা করা রোধ করা সম্ভব হবে।
  • জীবনে ভিড় করা হাজারো সমস্যা নিয়ে চিন্তা না করে সমধান সন্ধানের প্রতি ফোকাস করা বুদ্ধিমানের কাজ। যদি এটি এমন কিছু হয় যা সমাধানযোগ্য তবে তা বিবেচনা করে সম্ভাব্য সমাধান সনাক্ত করার জন্য নিজেকে চ্যালেঞ্জ করো। আর যদি এমন হয় যার উপরে তোমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, সে ব্যাপারে তা  মোকাবেলা করার জন্য বিকল্প কৌশল গ্রহণ করো।
  • আমাদের মস্তিষ্ক যখনই ফাঁকা থাকবে তখনই এমন অতিরিক্ত চিন্তার বিষয়টি এসে ধরা দেবে। নিত্যদিনের কাজের পাশাপাশি যেকোন সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। মোট কথা মনোযোগ ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে হবে।
  • আমরা বর্তমান নিয়েই বসবাস করি। তাই গতকালকে রিহ্যাশ করা বা আগামীকাল নিয়ে চিন্তা করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে মাইন্ডফুলনেস বা মননশীলতা স্কিল প্র্যাকটিস করো, এটি তোমাকে এখানে এবং এখন সম্পর্কে আরও সচেতন হতে সাহায্য করবে।
  • দীর্ঘ সময়ের জন্য যে কোন সমস্যার ব্যাপারে চিন্তা ফলদায়ক নয়, তবে সংক্ষিপ্ত প্রতিফলন সহায়ক হতে পারে। তুমি কীভাবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারো বা সে ব্যাপারে তোমার ত্রুটিগুলোকে স্বীকৃতি দিতে পারো সে সম্পর্কে চিন্তা করা তোমাকে ভবিষ্যতে আরও ভাল পারফর্ম করতে সহায়তা করতে পারে। এজন্য তোমার দৈনন্দিন সময়সূচীতেকিছু নির্দিশট সময় ‘চিন্তার সময়’ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে পারো। তবে সেই নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে, অন্য কিছুতে চলে যাও। নির্ধারিত সময়ের বাইরে জিনিসগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে হবে।
  • সবশেষে, ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করতে হবে। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সবকিছুই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠের মতো জীবনে বিদ্যমান। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, ভেঙ্গে পড়ে, চিন্তা করে কোন ফল পাওয়া যাবেনা। তাই সর্বক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চিন্তা ঝেড়ে ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ করতে হবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিকান পেতে রইগ্রুমিংজীবনরোমান্স রসায়নসচেতনতাসমস্যাসুস্থ মন

সুস্থ সম্পর্কের জন্য…

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২৩

শায়লা জাহান:

কথায় বলে, ‘তোমার সম্পর্কগুলো কেবল তোমার মতো স্বাস্থ্যকর হতে পারে’। একটি সুস্থ সম্পর্ক আমাদের সুখ বাড়াতে, স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং চাপ কমাতে অনেক কার্যকর। কিন্তু বাস্তবে সব সম্পর্কেই সবসময় সুখকর অবস্থা বিরাজমান নয়। নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। সম্পর্কগুলো ভালোভাবে চলতে, ভারসাম্য আনতে জেনে নিতে পারো কিছু টিপস।

আতিয়া, বিয়ের বয়স সবে বছরখানেক হলো। তাদের নবদম্পতি বলাই চলে। কিন্তু কিছুদিন ধরে সে যেন লক্ষ করছে তাদের সম্পর্কের সেই ফিলিংস, সেই টান যেন কিছুটা কমে যাচ্ছে। এর পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও কোথায় যেন সুর কেটে যাচ্ছে। ঘটনাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও এমন আতিয়া আমাদের আশপাশে অনেক আছে। সব রোমান্টিক সম্পর্ক অনেক আপস-ডাউনের মধ্য দিয়ে যায় এবং তা সত্ত্বেও সবাই নিজ সঙ্গীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে বা পরিবর্তিত হতে চায়।একটি সুস্থ সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করার একটি অংশ হলো তুমি সম্পর্কটি ঠিক কীভাবে দেখতে চাও এবং তা কোথায় নিয়ে যেতে চাও, তার একটি লক্ষ্য সেট করে নেওয়া। সম্পর্ক সবে শুরু হোক বা বছরের পর বছর চলতে থাকুক, একটি সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। আর এগুলোই হতে পারে সুসম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।

বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা

আমরা সবাই চাই নিজ পার্টনার যেন মনের মতো হয়। কিন্তু কেউই সবকিছু হতে পারে না, যা আমরা তাদের মধ্যে দেখতে চাই। একটি সম্পর্কের মধ্যে থাকা দুজন ব্যক্তি পৃথক অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের অর্থ হলো যে যেমন আছে তাকে তেমনই গ্রহণ করা এবং তাদের মধ্যে জোর করে পরিবর্তন করার চেষ্টা না করা।

কমিউনিকেশন ব্যবস্থা

একটি হেলদি এবং স্ট্রং রিলেশনের জন্য স্মুথলি কমিউনিকেশন অপরিহার্য। সঙ্গীকে প্রয়োজনীয়, পছন্দসই এবং প্রশংসা করার জন্য কীভাবে যোগাযোগ ব্যবহার করবে, সে সম্পর্কে চিন্তা করো। যেকোনো ধরনের আগ্রাসন, নীরব আচরণ, গালিগালাজ বা এই ধরনের কার্যক্রম উদ্বেগের সংকেত দেয়। তাই একে অন্যের নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা, অনুভ‚তিএবং আগ্রহ সম্পর্কে জানতে হবে। যেকোনো বিষয়ে তথ্য ভাগাভাগি করা, সে ব্যাপারে মতামত প্রদান করাকে সম্মান জানাতে হবে।

ন্যায্য যুদ্ধ

ব্যাপারটি দেখলে মনে হবে বিধ্বংসী যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। আসলে ব্যাপারটি তা নয়। বেশিরভাগ সম্পর্কের মধ্যেই কিছু দ্বন্দ্ব থাকে। এর মানে এই নয় যে তুমি কোনো বিষয়ে একমত নও; আবার এটাও নয় যে তুমি একে অপরকে পছন্দ করোনা। একসঙ্গে চলতে গেলে এমন মনোমালিন্য থাকবেই। আর এর জন্য যা করতে হবেঃ

-কথা বলার আগে নিজেকে ঠান্ডা করো। রাগের মাথায় মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল ডিসিশন নিয়ে থাকে। তাই কথোপকথনটি আরও ফলপ্রসূ হবে, যদি তোমার আবেগ কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই এমন কিছু বলবেনা, যা পরে অনুশোচনার সৃষ্টি করে।

-অন্যকে সরাসরি ব্লেম বা দোষ দেওয়ার পরিবর্তে ঘটমান পরিস্থিতিতে তুমি কী ফিল করছ এবং তুমি কী চাও, তা শেয়ার করো।

-বলার ভাষা পরিষ্কার এবং নির্দিষ্ট রাখো। সমালোচনা ও বিচার না করে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করো।অর্থাৎ সমস্যাকে আক্রমণ করো, ব্যক্তিকে নয়।

-বর্তমান ইস্যুতে ফোকাস করো। আগে কী হয়েছে না হয়েছে, তা সবকিছু স্তুপ করা এড়িয়ে একেবারে একটি সমস্যা সমাধান করো।

-নিজের ভুল স্বীকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। তুমি যদি কিছু ভুল করে থাকো, তবে তা মানার দায়িত্ব নিতে হবে। এই ছোট্ট একটি কাজ অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।

অনুভূতির প্রকাশ

সম্পর্ক গবেষক জন গটম্যানের মতে, সুখী দম্পতিদের প্রতি একটি নেতিবাচক মিথস্ক্রিয়া বা অনুভূতির জন্য পাঁচটি ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া বা অনুভূতির অনুপাত থাকে। সময়ে সময়ে নিজের উষ্ণতা এবং এফেকশান প্রকাশ করো।

কমিটমেন্ট থাকা

প্রতিশ্রুতি মানে একে অপরকে এবং সম্পর্ককে প্রথমে রাখা। এর জন্য অনেক কিছু দিতে হবে এবং অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কিন্তু প্রতিদান হলো এমন একটি সম্পর্ক, যা একে অপরের জীবনে সত্যিকারের আনন্দ এবং পরিপূর্ণতা নিয়ে আসে। প্রতিটি ব্যক্তি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বিশ্বাস এবং ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এবং দম্পতিদের ভয় ও সন্দেহ মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

প্রতিটি সম্পর্কই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে এবং মানসিক, শারীরিক স্বাস্থ্য, মেজাজ বা এমনকি তা কর্মক্ষেত্রে ফোকাস করতে পারে। তাই কোনো সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলাই বিচক্ষণের কাজ হবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গআয়নাঘরগ্রুমিংরূপ ও ফ্যাশনরোদসীর পছন্দসচেতনতাসমস্যা

বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ১, ২০২৩

‘কুড়িতে বুড়ি’- এই টার্মটির সাথে পরিচিত নেই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কথাটি শুনতে হাস্যকর মনে হলেও, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এইসময় ত্বকে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু এজিং সাইন দেখা যায়, যা বেশ বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। যদিও বর্তমানে মানুষ এখন অনেক সচেতন। ভাল জীবনধারা এবং ত্বকের যত্নের অভ্যাস এই বয়স থেকেই অনুশীলন করার মাধ্যমে অকালে ত্বকে পড়া এই বার্ধক্য কমিয়ে এনে আগামী বছরগুলোতে হয়ে উঠতে পারবে ঝলমলে। আর এইসব আয়োজন নিয়েই হাজির হয়েছি আমি শায়লা জাহান। 

অনেক কিছুই আমাদের ত্বকের বয়স বাড়াতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তার মধ্যে কিছু বিষয়ে আমাদের কিছুই করার থাকেনা, আর কিছু বিষয়কে আমরা প্রভাবিত করতে পারি। প্রাকৃতিক নিয়মে আমাদের সকলেরই ধীরে ধীরে বয়স বেড়েই যায়। বয়স বাড়ার সাথে মুখের আগের সেই তারুন্যতা, লাবন্যতা হারিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু অকাল বার্ধক্য হল যখন বার্ধক্যের সাধারণ প্রভাবগুলো তাড়াতাড়ি ঘটে। এতে তোমার শরীর প্রকৃত বয়সের চেয়ে বড় দেখায়। বলিরেখা, বয়সের দাগ, শুষ্কতা, চুল পড়া বা পাকা চুল ইত্যাদি অকাল বার্ধক্যের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এই অবস্থাটি সময়ের আগেই এবং দ্রুত ঘটে থাকে। এর পেছনে জড়িয়ে আছে পরিবেশগত এবং জীবনধারা ব্যবস্থার কারণ। কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই অবস্থাকে রোধ করতে পারি।

অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধের উপায়

বয়সের আগেই যদি ত্বকে এজিং সাইনের দেখা মেলে, তা নির্দেশ দেয় যে কিছু কিছু অভ্যাস পরিত্যাগ করার এবং নিজের যত্ন নেয়ার এখনই সময়। এইক্ষেত্রে নীচের কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করা যেতে পারে, যা একে থামাতে এবং আরও খারাপ হওয়া থেকে রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

-সূর্য আমাদের ত্বকের অকালে বার্ধক্যের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। তাই ত্বককে রোদ থেকে রক্ষা করতে হবে। কোথাও অবকাশ যাপনে যাওয়া হোক কিংবা কাজে বের হতে হোক, সূর্য থেকে সুরক্ষা পাওয়া অপরিহার্য। চোখকে ঢাকার জন্য ইউভি সুরক্ষা সহ সানগ্লাস পরিধান করা যেতে পারে। পাশাপাশি কাপড় দ্বারা অনাবৃত শরীরের অংশগুলোতে ভাল করে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।

-অভ্যাসবশত আমরা কিছু কিছু মুখের অভিব্যক্তি করে থাকি যা অজ্ঞনতাবশত আমরা বারংবার করে থাকি। এমন অভ্যাস থাকলে তা এখনই এড়িয়ে চলতে হবে। এইধরনের মুখের অভিব্যক্তি অন্তর্নিহিত পেশীগুলোকে সংকুচিত করে এবং তা পুনরাবৃত্তি করার জন্য লাইনগুলো স্থায়ী হয়ে যায়।

-স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যচার্ট অনুসরণ করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল এবং শাকসবজি খাওয়া এই ধরনের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। চিনি বা অন্যান্য পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাদ্যও এই অকাল বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

-পরিমিত ব্যায়াম রক্তসঞ্চালন উন্নত করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এছাড়াও এটি ত্বককে আরও তারুন্যময় এনে দিতে পারে।

-ভালোভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। ময়লা, মেকআপ, ঘাম এবং অন্যান্য পদার্থ দূর করতে প্রতিদিন নিয়ম করে স্কিন ক্লিন রাখা মাস্ট। সুগন্ধি বা উচ্চ পিএইচ যুক্ত কঠোর ত্বকের পণ্য থেকে দূরে থাকতে হবে। শুষ্কতা দূর করতে ত্বকে প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করতে হবে।

-রাতারাতি ত্বক ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর ভাইরাল প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও এন্টি এজিং এর কোন কিছু ব্যবহার করতে চাইলেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া না ব্যবহার করাই উত্তম।

-জীবন থেকে স্ট্রেস লেভেল কমাতে হবে। যে স্ট্রেস কমাতে ব্যর্থ হবে তার জন্য স্বাস্থ্যকর স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল যেমন ধ্যান বা ব্যায়ামের অনুসন্ধান করো।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে কী করণীয়?

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ২২, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

ঘুমের সময় নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া এমন অনেক সমস্যার সাথেই আমরা অনেকেই পরিচিত। ঘুমের মাঝে এই ব্যাঘাত, ঘুম পূর্ণতা পেতে বাধার সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় দিনের বেলায়ও সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ‘নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত’।

ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শরীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদরোগ সহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যদি শ্বাসনালী বাধাগ্রস্থ হয়, তবে ঘুমের মধ্যে সশব্দে নাক ডাকার শব্দ হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো নাক ডাকার ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যা। বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হল সবচেয়ে সাধারণ ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাধি। এই ধরনের অ্যাপনিয়া ঘটে যখন গলার পেশী মাঝে মাঝে শিথিল হয় এবং ঘুমের সময় শ্বাসনালী ব্লক করে। সারা বিশ্বে সাধারণত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুই থেকে চারজন এই ওএসএ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ ও নারীদের ৪.৪৯ ও ২.১৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে এর চিকিৎসা করা দরকার না হয় এটি আরও গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

লক্ষণ

কিছু লক্ষণ রোগীর নিদ্রার সময় দেখা দেয়। ফলে রোগী নিজেও বুঝতে পারেনা। কিন্তু ঘুমানোর সময় পাশে কেউ থেকে সাহায্য করতে পারে যাতে তারা লক্ষণগুলো পরীক্ষা করতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

-দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম

-জোরে নাক ডাকা

-হঠাৎ জেগে উঠার সাথে হাঁপাতে বা দম বন্ধ হয়ে যাওয়া

-মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া

-সকালে মাথাব্যথা

-মেজাজ পরিবর্তন যেমন বিষন্নতা বা বিরক্তি

-উচ্চ রক্তচাপ

ঝুঁকির কারণ

যে কারো অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। যাইহোক, কিছু কারণ যা তোমাকে এই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। যার মধ্যে রয়েছেঃ

-যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

-এক্ষেত্রে বয়সও একটি ফ্যাক্ট। ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা বেশি। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের টনসিল বা অ্যাডিনয়েড আকারে বড় হয়, তাদেরও হতে পারে।

-মুখ ও করোটির গঠনগত ত্রুটি থাকলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।

-যারা ধূমপান করে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

-আরেকটি কারণ হতে পারে জেনেটিক বা বংশগত। হার্ট ফেইলিওর, অ্যাজমা, স্ট্রোক ইত্যাদি এ রোগ বাড়িয়ে দেয়।

করনীয় ও প্রতিকার

স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরণ ও তীব্রতার উপর। অবস্থা যদি গুরুতর পর্যায়ে চলে যায় তবে সেক্ষেত্রে সিপিএপি মেশিন নামে একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। এটি ঘুমের সময় মুখ বা নাকে পরা একটি মাস্কের মধ্যে বাতাস পাম্প করে শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করে। আর যদি এটি হালকা পর্যায়ে হয়ে থাকে তবে নিজের কিছু লাইফ স্টাইল চেইঞ্জের মাধ্যমে এর প্রতিকার ব্যবস্থা নিজে নিজেই করা সম্ভব। যেমনঃ

-ওজন যদি বেশি হয় তবে তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

-নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সক্রিয় থাকা নিজের ভেতর বিদ্যমান থাকা লক্ষণগুলোকে উন্নত করতে পারে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ওজন রাখতে সাহায্য করতে পারে।

-ভালো ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। শুতে যাওয়ার আগে চারপাশের পরিবেশ শান্ত এবং ঘুমের উপযোগী করে তুলতে হবে। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া ও উঠার অভ্যাস করতে হবে।

-ধূমপান এবং অ্যালকোহল পানে অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।

-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোন ধরনের ঘুমের ঔষধ খাওয়া উচিৎ নয়। এগুলো স্লিপ অ্যাপনিয়াকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.অন্দরের ডায়েরিকান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাপ্যারেন্টিংসচেতনতাসমস্যা

সম্পর্কে ছন্দপতন, অতঃপর…

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ২২, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

‘অবশেষে রাজা, রানী আর তাদের রাজকন্যা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো’। রুপকথার কাহিনীগুলোতে প্রায় সব গল্পেরই পরিসমাপ্তি ঘটে একটি সুখী পরিবারের বুনন ঘটিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা কখনোই রুপকথার কাহিনী নয়। এখানে সবার জীবনের গল্পেরও হ্যাপি এন্ডিংয়ের নিশ্চয়তা থাকেনা। মাঝে মাঝে সম্পর্কের দোলাচালে ঘটে ছন্দপতনের। কখনো ভেবে দেখেছো কী, জীবনের এই টানাপোড়েন ঘরের ছোট্ট সদস্যের উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে? 

 

ছোট্ট আরীবা, যে কিনা ছিল স্কুলে সবচেয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ও ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট; হঠাৎ করেই মাসখানেক তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ক্লাসে অমনোযোগী, চুপচাপ একদম। একা থাকতেই যেন পছন্দ করে সে। তাকে ঘিরে ডিভোর্স, ব্রোকেন ফ্যামেলি এমন খটমটে শব্দ শুনতে পায় সে। কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও আরো যেন বিষন্নতা ঘিরে ধরে তাকে। এটি একটি কল্পকাহিনী হলেও এমন ঘটনা আমাদের আশেপাশে অহরহ দেখা যাচ্ছে। বিবাহবিচ্ছেদ যেকোন পরিবারের জন্য একটি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয় হতে পারে। একটি পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া মানে তার সাথে সম্পর্কিত অনেকগুলো স্বপ্নের মৃত্যু। সম্পর্কের হঠাৎ এই পরিবর্তন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি ঘরে যে বাচ্চারা আছে তাদের উপরও সমান প্রভাব ফেলে। কিন্তু কখনও কখনও, পিতামাতারা তাদের সন্তানদের উপর এই বিচ্ছেদের পরবর্তী প্রভাবগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেনা। দম্পতিদের জন্য তাদের সন্তানদের দীর্ঘমেয়াদী মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আত্মদর্শন এবং আলোচনা করা অপরিহার্য। সন্তানদের উপর কেমন প্রভাব পড়ে, আসো আমরা জেনে নিই।

খারাপ একাডেমিক পারফরম্যান্স

সম্পর্কের টানাপোড়েনের দরুন পরিবারের পরিবর্তনশীল গতিশীলতা তাদের বিভ্রান্ত করে তোলে। আর এই বিভ্রান্তিতা তাদের দৈনন্দিন ফোকাসে বাধার সৃষ্টি করে। যার ফলাফল পরে একাডেমিক পারফরম্যান্সে। শিশুরা যত বেশি বিভ্রান্ত হয়, তাদের স্কুলের কাজে মনোযোগ দিতে না পারার সম্ভাবনা তত বেশি।

আবেগীয় অনুভূতি

বিবাহবিচ্ছেদ একটি পরিবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের আবেগকে সামনে আনতে পারে এবং এর সাথে জড়িত শিশুরাও আলাদা নয়। উত্তেজনা, নার্ভাসনেস, উদ্বেগ, ক্রোধ এমন আরও অনেক কিছুই এই পরিবর্তন থেকে আসতে পারে। ছোট বাচ্চাদের বয়স্কদের তুলনায় এটির প্রবণতা হয় বেশি কারণ তারা বাবা- মা উভয়ের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। একটি উদ্বিগ্ন শিশু তার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে অসুবিধা বোধ করবে এবং সকলধরনের ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে যা একসময়ে তার কাছে খুবই লোভনীয় বলে মনে হতো।

বিষন্নতা

পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদের কারণে সৃষ্ট যন্ত্রণা এবং হৃদয়বিদারক অনুভূতি একটি শিশুকে বিষন্নতায় ফেলে দিতে পারে। বিষন্নতা একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং বিবাহবিচ্ছেদের সাক্ষী শিশুদের মধ্যে বিষন্নতা এবং সামাজিক প্রত্যাহারের ঘটনা বেশি থাকে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে শিশুদের মধ্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ একটি অবদানকারী কারণ হতে পারে।

অপরাধবোধের অনুভূতি

আমেরিকান একাডেমি অফ চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি অনুসারে, অনেক শিশু তাদের পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদের পিছনে নিজেকে কারণ বলে মনে করে অপরাধবোধে ভোগে। এই অপরাধবোধ হতাশা, চাপ বাড়ায়; এতে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং দুঃস্বপ্নের মতো বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন

ছোট বাচ্চারা ঘন ঘন মুড সুইং এ ভুগতে পারে এবং এমনকি খিটখিটেও হতে পারে পরিচিত মানুষের সাথে যোগাযোগ করার সময়। তাদের রাগ অনুভূত কারণগুলোর বিস্তৃত পরিসরে পরিচালিত হতে পারে। বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়াকারী শিশুরা তাদের পিতামাতা, নিজেদের, তাদের বন্ধুবান্ধব এবং অন্যদের প্রতি রাগ প্রদর্শন করতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে তারা প্রত্যাহার মোডে চলে যায়। যেখানে তারা কারও সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবে এবং অন্যের সাথে মেশার পরিবর্তে একা সময় কাটাতে পছন্দ করবে।

ধ্বংসাত্মক আচরণের ভূমিকা

শিশুরা যখন বিবাহবিচ্ছেদের মতো এই ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়, তখন অমিমাংসিত দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তালাকপ্রাপ্ত পিতামাতার সাথে কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তালাকপ্রাপ্ত বাবা-মায়ের কিশোর-কিশোরীরা আগে অ্যালকোহল পান করে এবং তাদের সমবয়সীদের তুলনায় বেশি অ্যালকোহল, গাঁজা, তামাক এবং মাদক সেবনের রিপোর্ট করে।

সন্তানের মানসিক চাপ কমানোর উপায়

বিবাহবিচ্ছেদের মতো এমন বিরুপ পরিস্থিতির সাথে শিশুরা কীভাবে সামঞ্জস্য করে তার জন্য পিতামাতারা একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। এখানে কিছু কৌশল রয়েছে যা শিশুদের উপর মানসিক চাপ কমাতে পারেঃ

-বাবা-মায়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বাচ্চাদের সহজেই ট্রমাটাইজড করে দেয়। প্রকাশ্য শত্রুতা, একে অপরের উপর চিৎকার করা, হুমকি দেয়া শিশুদের আচরণের সমস্যার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্তানের কথা মাথায় রেখেই এগুলো পরিহার করা উচিৎ।

-বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বের মাঝখানে বাচ্চাদের রাখা এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের দুজনের মাঝে একজনকে বেছে নেয়া বা এমন কোনো কথা না বলা যাতে সন্তান নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাই সন্তানকে এত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলার আগে ভাবনাচিন্তা করা দরকার।

-বিবাহবিচ্ছেদ এমন এক বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা কোন সুফলতা বয়ে আনেনা। কিন্তু বিচ্ছেদের পরেও সন্তানের কথা চিন্তা করেই একটি সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখা যেতে পারে। ইতিবাচক যোগাযোগ, পিতামাতা উভয়ের উষ্ণতা বাচ্চাদের উচ্চ আত্মসম্মান এবং একাডেমিক পারফরম্যান্স বিকাশে সহায়তা করে।

-পরিত্যাগের ভয় এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা অনেক উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সন্তানকে ভালোবাসা, নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করতে সাহায্য করা তার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিও কমাতে পারে।

-নিজের স্ট্রেস লেভেল কমানো তা সন্তানকে সাহায্য করার জন্য সহায়ক হতে পারে। সেজন্য স্ব-যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আর দরকার হলে পেশাদারের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

-ছবি সংগৃহীত

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অনুসঙ্গঅন্দরের ডায়েরিআয়নাঘররূপ ও ফ্যাশনসমস্যা

চুলে খুশকি, কি করি?

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১২, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

মনের মতো করে সাজ-পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে বাইরে বের হচ্ছো। হঠাৎই দেখলে কাঁধের কাছে কাপড়ে সাদা গুড়ি গুড়ি খুশকি পড়ে রয়েছে। এর চেয়ে বিব্রতকর অবস্থা আর কিছুই হতে পারেনা। শুধু কাপড়ে নয় চিরুনি, বালিশেও এর দেখা মেলে। সারাবছর চুলে খুশকির সমস্যা অনেকের থাকলেও, শীতে যেন তার উপস্থিতি আরও বেড়ে যায়।

খুশকি আমাদের মাথায় দেখা দেয় যখন মাথার স্কিনে মৃত ত্বকের কোষগুলো ঝরে যায়। কখনও কখনও, কোষগুলো অতিরিক্ত উৎপাদনে যায় এবং স্বাভাবিক হারের দ্বিগুণ হারে ঝরে যায়; যা মাথার ত্বকের জন্য একটি সমস্যা উপস্থাপন করে। যখন মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন হয়, তখন তেল মৃত কোষগুলোকে একত্রে আটকে রাখে এবং সাদা ক্লাম্প অর্থাৎ খুশকি তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা ম্যালাসেজিয়া ছত্রাককে খুশকি এবং অন্যান্য অবস্থার সাথে যুক্ত করেছেন যেমন অ্যাটোপিক একজিমা, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং ফলিকুলাইটিস। ছত্রাক তেলের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তেল উৎপাদনে ম্যালাসেজিয়া ছত্রাক বহুগুণ বেড়ে যায়। যদিও খুশকি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করেনা, তবে যারা এতে ভুগছে তাদের জন্য এটি বেশ বিরক্তিকর হতে পারে।

কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?

খুশকি রাতারাতি পুরোপুরিভাবে নির্মূল করা যেতে না পারলেও একে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়। সেজন্য কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমনঃ

নিয়মিত চুল ব্রাশ করা

খুশকির চিকিৎসা বলতে বুঝায় মাথার ত্বকে চুলকানি এবং ফুসকুড়ি থেকে মুক্তি পেতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। এইজন্য চুল নিয়মিত ব্রাশ করা প্রয়োজন। স্থির, দৃঢ় স্ট্রোক দিয়ে মাথার ত্বক থেকে নিচের দিকে চুল ব্রাশ করো। এটি তোমার মাথার ত্বক থেকে তেলকে দূরে নিয়ে যায়, যেখানে এটি এবং ত্বকের কোষগুলো খুশকির কারণ হতে পারে। এছাড়াও এটি চুল চকচকে এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।

শ্যাম্পু পরিবর্তন

শীতের খুশকি কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল নিয়মিত ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা। তোমার ব্যবহার করা প্রতিদিনকার শ্যাম্পুতে এমন কিছু উপাদান থাকতে পারে যা উপসর্গগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেমন সালফেট, থ্যালেটস এবং উত্তেজক সুগন্ধি। খুশকির শ্যাম্পুতে অ্যান্টি ফাংগাল বৈশিষ্ট্য আছে যা খুশকিকে বিনাশ করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পুগুলো সাধারণত ত্বকে মৃদু, আরও ময়েশ্চারাইজিং এবং হাইড্রেটিং করে।

গরম পানি এড়িয়ে চলো

শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করা অনেক আরামদায়ক। তবে এক্ষেত্রে অত্যন্ত গরম পানি মাথায় ঢালা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি মাথার ত্বককে আরও শুষ্ক করে এবং যখন অতিরিক্ত শুষ্ক বাতাসের সাথে মিলিত হয়, তখন শীতের খুশকির উপসর্গগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ঘরোয়া চিকিৎসা

খুশকির শ্যাম্পু ছাড়াও আরও কিছু জিনিস আছে যা এটি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এই প্রাকৃতিক চিকিৎসার কিছু হয় ময়েশ্চারাইজিং করবে নয়তো ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের বিরুদ্ধে সহায়ক হবে।

-নারকেল তেলে এমন এক বৈশিষ্ট্য আছে যা অবিশ্বাস্যভাবে হাইড্রেটিং করে, আর তা হল- অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। এটি একটি শক্তিশালী সংমিশ্রণ যা শীতকালীন খুশকি প্রশমিত করতে সাহায্য করে। এটি ৩ থেকে ৫ চা চামচ মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নাও। তারপর ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলো।

-অ্যালোভেরা এমন এক রসালো উদ্ভিদ যা এর  নিরাময় বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এর পাতার জেলে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মতো বেশ কিছু জৈব সক্রিয় যৌগ রয়েছে যা খুশকি কমাতে পারে। এছাড়াও এর জেল ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে । চুলে শ্যাম্পু করার আগে এর জেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারো।

-অ্যাসপিরিনে থাকা স্যালিসিলিক অ্যাসিড, এমন একটি সক্রিয় উপাদান যা সাধারণত খুশকির শ্যাম্পুতে ব্যবহৃত হয়। স্যালিসিলিক অ্যাসিড অতিরিক্ত খুশকির ফ্লেক এক্সফোলিয়েট করতে, তেল জমা হওয়া রোধ করতে এবং মাথার ত্বকে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। খুশকিতে স্যালিসালিরিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে ১টি বা ২টি আনকোটেড অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটকে গুঁড়ো করে তা তোমার শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারো। ২ মিনিটের মত রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলো।

-অলিভ অয়েলও ভালো কাজে দেয়। মাথার ত্বকে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল দিয়ে, শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখো। পরদিন সকালে চুল শ্যাম্পু করে নিলেই হয়ে যাবে।

-সোডিয়াম বাইকার্বোনেট, যাকে আমরা বেকিং সোডা বলে চিনি; খুশকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বেকিং সোডাতেও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকির জন্য দায়ী ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এতে একটি খুব উচ্চ পিএইচ স্তর রয়েছে, যা একজন ব্যক্তি ঘন ঘন ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই এটি পরিমিতভাবে ব্যবহার করা উচিৎ।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরাণাপন্ন

সব ঘরোয়া প্রতিকার সবার জন্য কাজ করবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। এইসব প্রস্তুতি নেয়ার পরেও যদি তুমি দেখে থাকো সমস্যার তেমন কোন সমাধান হচ্ছেনা তবে বসে না থেকে কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই উত্তম।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিকান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাপ্যারেন্টিংসচেতনতাসমস্যা

বয়স যখন দুই

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৯, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

এমন কখনো খেয়াল করে দেখেছো কি বাসার যে ছোট্ট সদস্যটি রয়েছে, যে সদ্য কথা বলতে শিখেছে, আধো আধো বোলে ঘরকে মাতিয়ে রেখেছে সেই বাচ্চার রাগ, জেদে সবার অবস্থা নাজেহাল। একদিকে সে চায় তার সব কাজ সে নিজে নিজেই করতে আবার অন্যদিকে সেই প্রচেষ্টার বিফল ঘটলে হয়ে যায় হতাশ, পরবর্তীতে যা রুপ নেয় বদমেজাজে। শিশুর জীবনের এই টার্মকে বলে টেরিবল টু। অনেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত না থাকলেও বাচ্চার এই আচরণগত পরিবর্তনের সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত।

টেরিবল টু বা ভয়ংকর দুই শব্দটি দীর্ঘকাল ধরে ২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বাবা মায়েরা যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করে তা বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সন্তানের মেজাজ এবং আচরণের দ্রুত পরিবর্তন এবং তাদের সাথে মোকাবেলা করার অসুবিধার কারণে একজন পিতামাতা এই বয়সটিকে ভয়ানক বলে মনে করতে পারে। এটি একটি শিশুর বিকাশের স্বাভাবিক পর্যায়কে বোঝায় যেখানে একটি শিশু নিয়মিতভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের উপর নির্ভরতা এবং স্বাধীনতার জন্য নতুনভাবে বেড়ে উঠার আকাঙ্ক্ষার মধ্যে বাউন্স করতে পারে। লক্ষণগুলো শিশুর মধ্যে ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন এবং মেজাজ ক্ষুব্ধ হতে পারে। এক মিনিটে দেখা যাবে বাচ্চাটি পরম মমতায় তোমাকে আঁকড়ে ধরে থাকবে আবার পরের মিনিটেই দেখা যাবে সে বিপরীত দিকে দৌড়াচ্ছে। টেরিবল টু বলা হলেও এই ধরনের আচরণ প্রায়শই ১৮ মাস থেকে শুরু হয় এবং তা ৪ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এটি কেন হয়?

২ বছর বয়সের আশেপাশে শিশুরা সাধারণত অনেক ধরনের বড় উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই সময় তাদের মধ্যে নতুন সব ধরনের দক্ষতার বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। যেমন জাম্পিং, ক্লাইম্বিং, ব্লক স্ট্যাক করা, ক্রেয়ন বা মার্কার দিয়ে আঁকিবুঁকি করা ইত্যাদি। এই পর্যায়ে সে চাইবে স্বাভাবিকভাবেই নিজের একটা পরিবেশ অন্বেষণ করতে এবং নিজের মতো করে সব কিছু করতে। এটা সবই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত আচরণ। কিন্তু এই সময় তাদের মৌখিক, শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা ভালোভাবে বিকশিত না হওয়ায়, সন্তান পর্যাপ্তভাবে যোগাযোগ করতে বা কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হয়। তাদের চাহিদা এবং তা প্রকাশের অক্ষমতার জন্য তারা তখন এই ধরনের আচরণ করে থাকে।

লক্ষণ

সকল বাচ্চাই সমান নয় এবং সমভাবে তারা আচরণও করেনা। তাই এই টেরিবল টু’র লক্ষণগুলো বাচ্চা থেকে বাচ্চাদের মধ্যে আলাদা। তবে কিছু আচরণগত নিদর্শন রয়েছে যা পিতামাতাকে সংকেত দিতে পারে যে তাদের সন্তান এই জটিল বিকাশের পর্যায়ে থাকতে পারে। যেমনঃ

-ভাইবোন বা খেলার সাথীদের সাথে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝগড়া করা

-রাগ হলে লাথি, থুতু বা কামড় দেয়া

-ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন যেমন এই হাসি তো এই কান্না

-মনোযোগ আকর্ষনের জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করা, হাতের কাছে জিনিস ছুঁড়ে ফেলা

টেরিবল টু-এর সাথে আসা উত্তেজনা এবং অবাধ্যতা স্বাভাবিক যা সময়ের সাথে সাথে চলে যেতে পারে। কিন্তু তুমি যদি মনে করো যে আচরণগুলো বেশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তা বাচ্চার খাওয়া, ঘুম বা ডে কেয়ারে যোগদান করাকে প্রভাবিত করছে, তখন একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে তারা সন্তানের আচরণ সংশোধন করার জন্য টিপস দিতে পারেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন।

টেরিবল টু ম্যানেজের টিপস

সন্তান এবং নিজেকে এই ভয়াবহ টার্মটি পরিচালনার জন্য কিছু টিপস ফলো করতে পারোঃ

-বাচ্চার ঘুমের সময়সূচী রাখো। সন্তান যখন ক্লান্ত থাকে তখন এই ধরনের আচরণ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই তার ঘুমের সময় যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার চেষ্টা করো। ভালো ঘুম ও বিশ্রাম তাদের মেজাজ স্থির রাখতে সাহায্য করবে।

-একই কথা খাবারের বেলায়ও প্রযোজ্য। বাচ্চারা যখন ক্ষুদার্ত অনুভব করে তখন বাইরে যাওয়া এড়াতে চেষ্টা করো। আর যদি খাবারের সময় সন্তানের সাথে বাইরে থাকতেই হয় তবে খাবার প্যাক করে সাথে নিয়ে রাখতে পারো।

-তুমি যে আচরণগুলো অনুমোদন করবে সেগুলোর প্রশংসা করো এবং যেগুলো থেকে বিরত রাখতে চাও সেগুলোকে উপেক্ষা করো।

-সন্তানের সামনে অহিংস আচরণ উপস্থাপন করতে চাইলে তাদের আঘাত করবেনা এবং তাদের উপর চেঁচামেচি করা এড়াতে হবে।

-তাদের কোন কিছু করতে পুননির্দেশ বা বিভ্রান্ত করো। বাচ্চা যখন উত্তেজিত হয়ে চেঁচামেচি করা শুরু করতে থাকে তখন তাদের মনোযোগ অন্য দিকে ডাইভার্ট করার জন্য মজার বা আকর্ষনীয় কিছু দেখানো বা করার নির্দেশ করো।

-বাচ্চার জন্য একটি নিরাপদ, শিশুরোধী পরিবেশ নিশ্চিত করো। ভঙ্গুর বা মূল্যবান বস্তু তার হাতের নাগালে থাকতে পারে এমন জায়গায় রাখবেনা।

-বাচ্চাকে সীমিত পছন্দ করার ব্যাপারে অফার করো। উদাহণস্বরুপ, সে কি খেতে চায় তা জিজ্ঞাসা না করে তাদের আপেল বা কমলা থেকে একটি বেছে নিতে বলতে পারো। এটি শিশুকে অনেক পছন্দের সাথে যোগ না করে নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি দেয়।

-সর্বোপরি নিজেকে শান্ত রাখো। এমন পরিস্থিতিতে যে কারোরই মেজাজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু নিজেও ধৈর্য্য হারা হয়ে গেলে এতে আরও বিপত্তি বাড়ে। তাই যখনই পরিস্থিতি তোমাকে রাগের প্রান্তে নিয়ে আসে, তখন কিছুক্ষন বসে থেকে গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য সময় নাও। এটি তোমাকে শান্ত করতে এবং সহানুভুতির সাথে সন্তানের সাথে যোগাযোগ করতে সহায়তা করবে।

সন্তান যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা গ্রহণ করে এবং তাকে বা তার ভালোবাসা এবং সম্মান দেখানোর মাধ্যমে, তুমি তোমার সন্তানকে এই কঠিন পর্যায়ে সাহায্য করতে পারবে এবং তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সহায়তা করতে পারবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook