রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

স্বাস্থ্য

জীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে কী করণীয়?

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ২২, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

ঘুমের সময় নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া এমন অনেক সমস্যার সাথেই আমরা অনেকেই পরিচিত। ঘুমের মাঝে এই ব্যাঘাত, ঘুম পূর্ণতা পেতে বাধার সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় দিনের বেলায়ও সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ‘নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত’।

ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শরীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদরোগ সহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যদি শ্বাসনালী বাধাগ্রস্থ হয়, তবে ঘুমের মধ্যে সশব্দে নাক ডাকার শব্দ হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো নাক ডাকার ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যা। বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হল সবচেয়ে সাধারণ ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাধি। এই ধরনের অ্যাপনিয়া ঘটে যখন গলার পেশী মাঝে মাঝে শিথিল হয় এবং ঘুমের সময় শ্বাসনালী ব্লক করে। সারা বিশ্বে সাধারণত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুই থেকে চারজন এই ওএসএ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ ও নারীদের ৪.৪৯ ও ২.১৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে এর চিকিৎসা করা দরকার না হয় এটি আরও গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

লক্ষণ

কিছু লক্ষণ রোগীর নিদ্রার সময় দেখা দেয়। ফলে রোগী নিজেও বুঝতে পারেনা। কিন্তু ঘুমানোর সময় পাশে কেউ থেকে সাহায্য করতে পারে যাতে তারা লক্ষণগুলো পরীক্ষা করতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

-দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম

-জোরে নাক ডাকা

-হঠাৎ জেগে উঠার সাথে হাঁপাতে বা দম বন্ধ হয়ে যাওয়া

-মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া

-সকালে মাথাব্যথা

-মেজাজ পরিবর্তন যেমন বিষন্নতা বা বিরক্তি

-উচ্চ রক্তচাপ

ঝুঁকির কারণ

যে কারো অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। যাইহোক, কিছু কারণ যা তোমাকে এই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। যার মধ্যে রয়েছেঃ

-যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

-এক্ষেত্রে বয়সও একটি ফ্যাক্ট। ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা বেশি। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের টনসিল বা অ্যাডিনয়েড আকারে বড় হয়, তাদেরও হতে পারে।

-মুখ ও করোটির গঠনগত ত্রুটি থাকলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।

-যারা ধূমপান করে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

-আরেকটি কারণ হতে পারে জেনেটিক বা বংশগত। হার্ট ফেইলিওর, অ্যাজমা, স্ট্রোক ইত্যাদি এ রোগ বাড়িয়ে দেয়।

করনীয় ও প্রতিকার

স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরণ ও তীব্রতার উপর। অবস্থা যদি গুরুতর পর্যায়ে চলে যায় তবে সেক্ষেত্রে সিপিএপি মেশিন নামে একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। এটি ঘুমের সময় মুখ বা নাকে পরা একটি মাস্কের মধ্যে বাতাস পাম্প করে শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করে। আর যদি এটি হালকা পর্যায়ে হয়ে থাকে তবে নিজের কিছু লাইফ স্টাইল চেইঞ্জের মাধ্যমে এর প্রতিকার ব্যবস্থা নিজে নিজেই করা সম্ভব। যেমনঃ

-ওজন যদি বেশি হয় তবে তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

-নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সক্রিয় থাকা নিজের ভেতর বিদ্যমান থাকা লক্ষণগুলোকে উন্নত করতে পারে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ওজন রাখতে সাহায্য করতে পারে।

-ভালো ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। শুতে যাওয়ার আগে চারপাশের পরিবেশ শান্ত এবং ঘুমের উপযোগী করে তুলতে হবে। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া ও উঠার অভ্যাস করতে হবে।

-ধূমপান এবং অ্যালকোহল পানে অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।

-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোন ধরনের ঘুমের ঔষধ খাওয়া উচিৎ নয়। এগুলো স্লিপ অ্যাপনিয়াকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসুস্থ মনস্বাস্থ্য

সাঁতারের যত উপকারিতা

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১৯, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

কথায় আছে, ‘একটি ফিট শরীর, একটি শান্ত মন এবং ভালোবাসায় পূর্ণ একটি ঘর- এই জিনিসগুলো কেনা যাবেনা, সেগুলো অবশ্যই অর্জন করতে হবে’। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুক্ষণ শরীরচর্চা করা আবশ্যক। আর সেই শরীরচর্চার মাঝে যদি সাঁতারকে অন্তর্ভূক্ত করা যায় তাহলে তো পুরো ষোলকলা পূর্ণ। জেনে নাও সাঁতারের যত উপকারিতার দিকসমূহ।

বিশেষজ্ঞরা একজন প্রাপ্তবয়স্ককে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মাঝারি কার্যকলাপ বা ৭৫ মিনিটের জোরালো কার্যকলাপ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি থেকে উন্নত মেজাজ পর্যন্ত, ওয়াটার ওয়ার্কআউট সুস্থতার জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। তোমার ফিটনেস লেভেল যাই হোক না কেন, সাঁতার অনেক সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। পুরো শরীর এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের কাজ করার একটি চমৎকার একটি উপায় হলো এই সাঁতার। এটি যে সব সুবিধা প্রদান করে থাকেঃ

-গবেষণায় দেখায় যে, সাঁতার দীর্ঘজীবী করতে সাহায্য করতে পারে। ২০১৭ সালের ইংল্যান্ডের দ্বারা পরিচালিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, সাঁতারুদের প্রারম্ভিক মৃত্যুর ঝুঁকি ২৮ শতাংশ কম এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে যারা সাঁতার কাটেনা তাদের তুলনায় ৪১ শতাংশ কম মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল।

-সাঁতারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি সত্যিকার অর্থেই পুরো শরীর, মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাজ করে। এর মাধ্যমে-

#শরীরের চাপ ছাড়াই হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে

#পেশী টোনিং করে

#শক্তি তৈরি করে

#সহনশীলতা তৈরি করে

-অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে চাইলে এর বিকল্প কিছুই নেই। হার্ভাড মেডিকেল স্কুল অনুসারে, একজন ১৫৫ পাউন্ড ব্যক্তি এক ঘন্টায়, প্রায় ৪৩২ ক্যালোরি সাঁতার কাটার মাধ্যমে পোড়াতে পারে যেখানে মাঝারি গতিতে  হাঁটার মাধ্যমে বার্ন হয় ২৬৬ ক্যালোরি। ২০২১ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৬ সপ্তাহে সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরের চর্বি এবং বিএমআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

-অ্যারবিক ব্যায়ামের অন্যান্য রুপের মতো সাঁতার কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস উন্নত করতে পারে। সাঁতারের ফলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হতে পারে এবং ফুসফুস অক্সিজেন ব্যবহারে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও, এটি হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের অন্যান্য মার্কারের উন্নতির সাথে যুক্ত হয়েছে।

-বাত, আঘাত, অক্ষমতা সহ অন্যান্য সমস্যা যা উচ্চ প্রভাব ব্যায়ামকে কঠিন করে তোলে; তাদের জন্য সাঁতার হতে পারে একটি নিরাপদ ব্যায়ামের বিকল্প। এটি ব্যথা কমাতে এমনকি আঘাত থেকে পুনরুদ্ধারের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জয়েন্টের ব্যথা এবং দৃঢ়তা সাঁতারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস হওয়ার প্রমান পাওয়া গেছে।

-ইনডোর পুলের আর্দ্র পরিবেশ হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সাঁতারকে একটি দূর্দান্ত কার্যকলাপ করে তোলে। শুধু তাই নয়, খেলার সাথে যুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম যেমন শ্বাস ধরে রাখা, ফুসফুসের ক্ষমতা প্রসারিত করা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে সাহায্য করতে পারে।

আবার কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, পুলে ব্যবহৃত ক্যামিকেল হাঁপানির ঝুঁকি বাড়াতেও পারে। তাই যদি হাঁপানির প্রবলেম থাকে তবে চিকিৎসকের সাথে আগে পরামর্শ করে নেয়া ভাল।

-সমস্ত ব্যায়াম একটি মেজাজ বুস্টার হতে পারে। এক্ষেত্রে ওয়াটার ওয়ার্কআউট একটি ভাল মেজাজ বজায় রাখতে পারে। মস্তিষ্কে সুখের রাসায়নিকের মুক্তির কারণে, বিশেষ করে এন্ডোরফিন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নিয়মিত সাঁতার কাটা চাপ কমাতে পারে, উদ্বেগ কমাতে পারে এবং হতাশার বিরুদ্ধে লরাই করতে পারে।

-উন্নত ঘুম হল যে কোন ব্যায়ামের রুটিনে লেগে থাকার একটি সুবিধা। ব্যায়াম শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি পুনরায় সেট করতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান ছন্দ পুনরুদ্ধার করে। এর মধ্যে সাঁতার হল একটি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনিদ্রার সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। ইনসমনিয়ার মতো সমস্যায় যারা ভুগে থাকে, তাদের জন্য নিয়মিত সাঁতার কাটা ভালো একটি চিকিৎসা। এতে ঘুম ভালো হবে।

-বাচ্চাদের জন্য সাঁতার হতে পারে দারুন এক ওয়ার্কআউট। এটি হতে পারে তাদের জন্য একটি মজার ক্রিয়াকলাপ।

সতর্কতা

সাঁতার বেশিরভাগ মানুষের জন্যই নিরাপদ। তবে যেকোন ওয়ার্কআউটের মতোই সাঁতারের সাথে যুক্ত কিছু ঝুঁকি রয়েছে। তুমি যদি আহত হও বা কিছু চিকিৎসা শর্ত থাকে তবে সেক্ষেত্রে সাঁতার কাটার আগেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়াই ভালো। সাধারণভাবে, যখনই একটি নতুন ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করবে তখন তোমার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা একটি ভাল ধারণা। এছাড়াও, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যাযুক্ত লোকদের জন্য ক্লোরিনযুক্ত পুলের পানিতে নামা আরও সমস্যার সৃষ্টি করবে। সাঁতার কাটার আগে সবসময় পুলে বর্ণিত নির্দেশাবলি এবং লাইফগার্ডের নিয়মাবলি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
চলন বলনজীবনজীবনযাত্রাদেহ ও মনবিদেশভালো থাকার ভালো খাবারস্বাস্থ্য

বয়স? সে তো শুধুই একটি সংখ্যা!

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১১, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

বর্তমানে পুরো দুনিয়ায় কোরিয়ান ড্রামা, মুভি, মিউজিক এবং টিভি শো’র ক্রেজ এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেখে মানুষ বিস্মিত হয়। অনন্য সাংস্কৃতিক দিক ছাড়াও তারা নিখুঁত ত্বক এবং ফিট শরীরের জন্য সুপরিচিত। কোরিয়ান মহিলাদের বিশেষ করে একটি দর্শনীয়ভাবে ফিট ব্যক্তিত্ব রয়েছে যা সারা বিশ্বের সকলকে কৌতুহলী এবং বিস্ময়কর করে তুলেছে। কখনও মনে জেগেছে কি, তাদের দেখতে এমন কী করে হয়? কিইবা তাদের রহস্য? আসো একসাথে আজ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিই।

এশিয়ান সংস্কৃতিতে খাবারের অনেক কদর রয়েছে। এমনই একটি এশিয়ান দেশ যেখানে মানুষ খেতে খুবই ভালোবাসে তা হল কোরিয়া। শুনতে অদ্ভূত শোনালেও এটাই বাস্তব সত্য। ফুলকোর্স ভারী খাবার খাওয়া সত্ত্বেও, তাদের শরীর ফিট এবং স্লিম থাকে যা অনেকের জন্য স্বপ্ন। কোরিয়ান খাবার এবং জীবনধারা ওজন বজায় রাখতে এবং শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা তাদের খাবার এবং ডায়েট সম্পর্কে খুব নির্দিষ্ট এবং কঠোর। যে খাবার গ্রহণ করে তাতে ভারসাম্যতা নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা কার্বোহাইড্রেট থেকে ফ্যাট থেকে প্রোটিন পর্যন্ত গ্রহণ করে। তারা ওজন বাড়ায় না কারণ সবকিছুই সুষম অনুপাতে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইলের ব্যাপারে কিছু জেনে নিইঃ

শাকসবজি প্রাধান খাদ্য

অ্যাপেটাইজার, মেইন কোর্স, স্ন্যাকস অথবা যে কোন ঐতিহ্যগত কোরিয়ান খাবার উপভোগ করতে যাও না কেন, প্রথমেই টেবিলে বিস্তৃত পরিসরে শাকসবজির উপস্থিতি দেখতে পাবে। কোরিয়ান লোকেরা তাদের শাকসবজি পছন্দ করে, যা তাদের স্লিম এবং ফিট থাকার পিছনে অন্যতম প্রাধান কারণ। প্রদত্ত যে বেশিরভাগ শাকসবজি আঁশযুক্ত, স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরি যা ওজন কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে। শাকসবজিতে থাকা ফাইবার তৃপ্তি বোধ করতে সাহায্য করে ও অন্যান্য উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে।

ফার্মেন্টেড বা গাঁজানো খাবারের অন্তর্ভুক্তি

তাদের সমস্ত খাবারের সাথে একটি সাইট ডিশ থাকে, যা সাধারণত গাঁজন করা খাবারের একটি সিরিজ। কিমচি, সেই গাঁজনযুক্ত মশলাদার বাঁধাকপি যা বিশ্বব্যাপী ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জাতীয় খাবারগুলো অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য দূর্দান্ত এবং তা হজমেরও উন্নতি করে। এটি রোগক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করার পাশাপাশি ওজন কমাতেও কাজ করে। অনেক ধরনের কিমচি রয়েছে এবং সবকিছুই বাঁধাকপি থেকে তৈরি হয়না। মূলা, শসা সহ প্রায় যেকোন সবজি দিয়েই হয়ে উঠতে পারে কিমচি।

সামুদ্রিক খাবার

কোরিয়াকে তিন দিকে সাগর ঘিরে রেখেছে। সামুদ্রিক খাবার কোরিয়ার অন্যতম প্রধান খাবার। তাদের দুর্দান্ত চুল, ত্বক এবং স্বাস্থ্যের পিছনে একটি প্রধান কারণ হল সামুদ্রিক খাবারের প্রতি তাদের ভালোবাসা। গ্রিলড ম্যাকেরেল, স্কুইড, অক্টোপাস তাদের অনেক প্রিয় আইটেম। চর্বিযুক্ত মাছ ব্যতীত, যা স্বাস্থ্যের জন্য দূর্দান্ত; সামুদ্রিক শৈবাল একটি সাধারণ কোরিয়ান খাদ্য আইটেম যা তারা স্যুপ থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুতে অন্তর্ভুক্ত করে। ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ, সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে প্রচুর ফাইবার আছে, যা হজমের জন্য দূর্দান্ত এবং তোমাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্নতা অনুভব করে।

ঘরে তৈরি খাবারের প্রাধান্য

কোরিয়ান মহিলাদের ফিট শরীরের পিছনে মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল তাদের খাবারের পছন্দগুলো। তুমি যখন ওজন কমাতে মনোস্থির করো সেক্ষেত্রে ঘরে তৈরি খাবারের চেয়ে ভালো আর কিছুই নেই। প্রক্রিয়াজাত, অস্বাস্থ্যকর খাবার, ফাস্টফুড- এগুলো শুধুমাত্র ওজন বাড়াতে দায়ী নয়, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। কোরিয়ানরা বাইরের পরিবর্তে ঘরের খাবারের প্রতি বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাদের শরীরের জন্য ভাল খাবার সম্পর্কে তারা সচেতন এবং সেই অনুযায়ী তারা সেভাবে খাবার নির্বাচন করে থাকে।

চিনি কম, উপকারিতা বেশি

কোরিয়ান খাবার বেশিরভাগই মশলাদার এবং টক। তারা তাদের খাদ্য তালিকায় ভারী মিষ্টি অন্তর্ভূক্ত করেনা, তাদের মিষ্টান্নগুলো ফলের রস, এক বাটি তাজা ফল বা মিষ্টি ভাতের পানীয়ের মতো হালকা। এগুলো শরীরের ওজন বাড়ায় না। বিখ্যাত কোরিয়ান ডেজার্টগুলোর মধ্যে পাটবিংসু সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। এটি চাঁচা বরফ দিয়ে তৈরি এবং এতে কোন কৃত্রিম রঙ নেই। এটি স্বাস্থ্যকর করতে তারা এতে প্রচুর ফল ব্যবহার করে।

সোডা কে না

তারা কোক এবং সোডা তেমন খায়না, তার পরিবর্তে প্রচুর চা খায়। বার্লি চা, যাতে অনেক কিছুই আছে। এটির স্বাদ অদ্ভুত তবে এটি একটি চিনিহীন চা। এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। এটি ঘুমের অভ্যাস উন্নত করতে, হজমে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালনেও কাজ করে।

হাঁটা, হাঁটা এবং হাঁটা

বেশিরভাগ কোরিয়ানরা হাঁটা পছন্দ করে। তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পাবলিক পরিবহণের পরিবর্তে তাদের পা ব্যবহার করতে পছন্দ করে। একটি সক্রিয় জীবনধারা নেতৃত্ব দেওয়া বেশিরভাগ কোরিয়ান মহিলাদের সুস্থ রাখে এবং তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে। তাদের জন্য দিনে ১০,০০০ পদক্ষেপ সম্পূর্ণ করা কোন বড় ব্যাপার নয়। আমরা সবাই জানি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন এটি আমাদের শরীরের ওজন এবং আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আসে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিপ্যারেন্টিংসচেতনতাস্বাস্থ্য

বেবী ম্যাসেজঃ ভালো না খারাপ?

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১০, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

পরিবারে একটি নতুন শিশুর আগমন অনেক আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে আসে। শিশুটির পিতা-মাতা থেকে শুরু করে পরিবারের বয়োজৈষ্ঠ্য সকলেরই চোখের মণি হয়ে উঠে সে। কিন্তু প্রায়শই যে একটা ব্যাপার নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝে কিছুটা মতানৈক্য শুরু হয় তা হল শিশুকে ম্যাসেজ বা মালিশ করা নিয়ে। এটি ভালো না খারাপ তা নিয়ে চলে বিতর্কের। আজ আমরা এই সব কিছু নিয়েই জানবো।

নবজাতক শিশুকে ম্যাসেজ করা বিশ্বব্যাপী একটি প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আমাদের দেশে তো তা আরও ব্যাপক। বাচ্চার গোসলের ঠিক আগে তাদের রোদে শুইয়ে পুরো শরীরে তেল মালিশ করে নেয়া হয়। মৃদু স্ট্রোকে করা এই মালিশে জড়িয়ে থাকে আদর এবং ভালোবাসার ছোঁয়া। নিয়মিতভাবে শিশুকে  ম্যাসেজ করা তাদের আরও অনেক কিছু দেওয়ার একটি উপায়। আরও বন্ধন সময়, আরও সংবেদনশীল উদ্দীপনা, আরও স্বাস্থ্যকর বিকাশ। গবেষণা প্রকাশ করে যে, নিয়মিত স্পর্শ এবং ম্যাসেজ উন্নত শারীরবৃত্তিয়, জ্ঞানীয়, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের দিকে পরিচালিত করতে পারে। শিশুর প্রথম মানসিক বন্ধন দৈহিক যোগাযোগ থেকে তৈরি হয় এবং এগুলো পরবর্তী জীবনে মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। নবজাতকের সাথে স্পর্শই হলো আমাদের প্রথম ভাষা আর এই প্রেমময় স্পর্শ তাদের শক্তিশালী হতে এবং কম উদ্বেগ অনুভব করতে সাহায্য করতে পারে।

শিশুর ম্যাসেজের স্বাস্থ্য উপকারিতা

-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইনফ্যান্ট ম্যাসেজ (আইএআইএম) অনুসারে, শিশুর ম্যাসেজ রক্ত সঞ্চালন এবং পাচনতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করতে পারে

-হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস, ক্র্যাম্প, কোলিক, কোষ্ঠকাঠিন্য এর মতো পরিস্থিতি দূর করতে সাহায্য করে

-নিয়মিত মালিশ করা তাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে

-এর মাধ্যমে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে হ্যাপি হরমোন যেমন সেরোটোনিন এবং ডোপামিন বৃদ্ধি করে, যা শিশুকে আরও ভাল ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে

-নাক বন্ধ এবং দাঁতের অস্বস্তি দূর করে

-ভালো পেশীর সমন্বয় ও নমনীয়তা বিকাশে সহায়তা করে

-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

-ত্বকের গঠন উন্নত করে

এইতো গেল ম্যাসেজের উপকারী দিক।

তবে কিছু কিছু জিনিস বাচ্চার ভালোর জন্য সবসময় মনে রাখতে হবে। যেমনঃ

-বাড়িতে বাচ্চাকে ম্যাসেজ করার জন্য অনেক সময় অনেকেই এক্সট্রা লোক নিয়োগ করে থাকে। যিনি ম্যাসেজ করতে আসে তাদের প্যাটার্ন প্রায়ই রুক্ষ হয়, বাচ্চার বাহু এবং পা অতিরিক্ত প্রসারিত করার চেষ্টা করা হয়। এতে জয়েন্টগুলোর স্থানচ্যুতি বা এমনকি ফ্রাকচার হতে পারে। ফলস্বরুপ, ম্যাসেজ প্রায়ই একটি প্রশান্তিদায়ক অভিজ্ঞতার পরিবর্তে একটি চাপযুক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে উঠে। এগুলো পরিহার করতে হবে।

-কখনও কখনও শিশুর ম্যাসেজ করার জন্য ব্যবহৃত তেলগুলো ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এতে শক্তিশালী/ কঠোর পদার্থ সহ্য করার ক্ষমতা থাকেনা।

-শিশুর কানে তেল দেওয়ার অভ্যাস তার কানে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে।

-ম্যাসেজ করার সময় যদি মনে হয় যে তার কোন ধরনের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে বা তার মাঝে তেমন আরামের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছেনা তবে তৎক্ষণাৎ তা থামিয়ে দেয়াই ভালো।

-খাবার খাওয়ার পর পরই কখন ম্যাসেজ করবেনা।

তেল ব্যবহার কি অপরিহার্য?

শিশুর শরীর ম্যাসেজের মতোই তেল ব্যবহারের বিষয় নিয়েও চলে অনেক মতানৈক্যের। আগেরকার সময়ে দাদি-নানিরা খাঁটি সরিষা তেল দিয়ে নবজাতকের পুরো শরীর মালিশ করে দিতো, যা এখনকার সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিষেধ করা হয়ে থাকে। তাহলে উপায়?

-তেল ম্যাসেজ শিশুর নরম, সূক্ষ্ম ত্বককে রক্ষা করতে এবং একই সাথে এটিকে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। কিন্তু তাই বলে সমস্ত তেল সমান নয় এবং সেগুলো শিশুর ত্বকের জন্য ভাল নয়। শিশুর ম্যাসেজের জন্য সঠিক তেলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

-নির্বাচিত তেল প্রথমেই শিশুর ত্বকের একটি প্যাচে ছোট ড্যাব করে প্রয়োগ করে দেখতে হবে তাতে কোন প্রতিক্রিয়া হয় কিনা। অ্যালার্জি বা সংবেদনশীল ত্বকের শিশুদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

-সরিষা তেল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয় কারণ এটি ত্বকের উপর বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে শিশুর সূক্ষ্ম ত্বকে জ্বালা এবং সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে।

-পরিচিত তেলের মধ্যে অনেকেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেও এর উচ্চ অলিক অ্যাসিডের কারণে শিশুর মালিশের জন্য একেও সুপারিশ করা হয়না। এটি বাচ্চার ত্বকের শুষ্কতার কিছু স্তর তৈরি করতে পারে।

-২০২০ সালে এক গবেষণায় বলা হয় যে, নবজাতকের উপর ভার্জিন নারকেল তেল প্রয়োগ করা তাদের ত্বকের উন্নতি এবং শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে। এটি নবজাতক এবং বয়স্ক শিশুদের জন্য একটি ম্যাসেজ তেল এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে একই কাজ করতে পারে।

-বাদাম তেল ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এবং ২০২০ থেকে ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখায় যে এটি শিশুর উপর প্রয়োগ করা নিরাপদ।

-এছাড়াও, বিভিন্ন বেবি অয়েল যা আসলে একটি খনিজ তেল এগুলোও ব্যবহার করা নিরাপদ। পেট্রোলিয়াম জেলির মতো খনিজ তেলগুলো শিশুর ত্বকে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনা।

শিশুর ম্যাসেজ একটি চমৎকার, প্রশান্তিদায়ক থেরাপি যা শিশুকে শান্ত করতে এবং বন্ধনের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সঠিকভাবে ম্যাসেজ করার আগে কয়েকবার অনুশীলন করে নাও। প্রতিটি অনুশীলনের সাথে তুমি তোমার শিশুর সাথে একটি গভীর ও প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিস্বাস্থ্যহেঁসেল

সালাদ ড্রেসিংয়ের রকমফের

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৫, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

ভিটামিন, মিনারেল , পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে সালাদের জুরি নেই। নিয়মিত সালাদ গ্রহণে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন ও উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাসসহ নানান উপকারিতা রয়েছে। ড্রেসিং সালাদের স্বাদ আরও বাড়ায় এবং এটিকে সুস্বাদু করে তোলে। তাই এটি সালাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর অপশনের মধ্যে সালাদের স্থান সবসময় ঊর্ধমুখী। সালাদ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সৃজনশীল স্বাধীনতা সীমাহীন। এটি লেটুসের একটি সাধারণ প্লেট হতে পারে বা এটি শাকসবজি, শস্য এবং ফলের একটি সমন্বিত উপাদানের হতে পারে। অর্থাৎ সালাদের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। সালাদ ড্রেসিং হল সালাদের জন্য একটি সস। কার্যত যা সব পাতাযুক্ত সালাদে ব্যবহৃত হয়। সালাদ ড্রেসিংগুলোকে সালাদের উপকরণের সাথে যোগ করে টস করা হয়। এতে সকল উপকরণ এক বাটিতে একত্রিত করে, সেগুলোকে একটি স্বাদযুক্ত আবরণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে। আবার অনেক সময় এতে কোন কিছু ডিপ করে খাওয়ার জন্য সাইড ডিশ হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক জনপ্রিয় হওয়া এমন কিছু সালাদ ড্রেসিংগুলো ব্যাপারে আসো জেনে নিই।

রাঞ্চ ড্রেসিং

এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় সালাদ ড্রেসিংগুলোর মধ্যে একটি। এটি ক্রিমিনেস, ভেষজ এবং পেঁয়াজের বাইটের নিখুঁত ট্রাইফেক্টার জন্য পরিচিত। রাঞ্চ এতোই জনপ্রিয় যে এটি কেবল স্যালাডে ব্যবহৃত হয়না, ডিপিং সস হিসেবে এবং স্যান্ডউইচ ও পিজ্জাতেও ব্যবহৃত হয়। এটি বাটারমিল্ক, লবণ, রসুন, পেঁয়াজ, ভেষজ (ডিল, পার্সলে, থাইম ইত্যাদি) এবং মশলা (সরিষার বীজ, কালো মরিচ, পেপারিকা) দিয়ে মেয়োনিজ ভিত্তিক একত্রিত করে তৈরি করা হয়। মূলত ১৯৫৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারার কাছে একটি খামারে গ্যাল এবং স্টিভ হেনসন দ্বারা এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল।

ব্লু  চিজ ড্রেসিং

এটি প্রায়শই সালাদে ব্যবহার করা হয় আবার ডিপিং সস হিসেবে খাওয়া হয়। দুধ, ভিনেগার, টক ক্রিম বা দই, মেয়োনেজ, পেঁয়াজের গুঁড়া এবং রসুনের গুঁড়ার সংমিশ্রণে এটি তৈরি। এর উৎস সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে প্রথম লিখিত প্রমান পাওয়া গেছে ১৯২৮ এজওয়াটার হোটেল সালাদ বইতে এবং ড্রেসিংয়ের আগের সংস্করণগুলো ফ্যানি ফার্মারের ১৯১৮ কুকবুকে। তবে এটি মূলত ১৯৩০- এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ব্লু  চিজ ড্রেসিং প্রায় রাঞ্চ ড্রেসিং এর একটি এক্সটেনশন। এর ভোজ্য ছাঁচের উজ্জ্বল নীল শিরাগুলো এটিকে একটি শক্তিশালী গন্ধ দেয় যা মিষ্টি এবং সুস্বাদু উপাদানগুলোর সাথে আশ্চর্যজনকভাবে জোড়া দেয়।

ইটালিয়ান ড্রেসিং

এর নাম ইটালিয়ান হওয়া সত্ত্বেও এটি মূলত আমেরিকানদের সৃষ্টি। এটি আমেরিকান স্বপ্নের অনেক পণ্যের মধ্যে একটি, যা ১৯৪০ এর দশকে প্রথম প্রজন্মের ইতালীয় আমেরিকান ফ্লোরেন্স হানা দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল। ইতালীয় ড্রেসিং ছিলো তার একটি পুরানো পারিবারিক রেসিপির অভিযোজন যা তিনি তার পরিবারের ম্যাসাচুসেটস রেস্টুরেন্টে পরিবেশন করেছিলেন। এটি রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় সালাদ ড্রেসিং গুলোর মধ্যে একটি। এতে ইতালীয় ভেষজ, লেবুর রস, সূক্ষ্মভাবে কাটা বেল মরিচ এবং রসুন দিয়ে ভরা একটি তেল এবং ভিনেগার বেস রয়েছে। এটি একটি হালকা ড্রেসিং যা সবুজ শাক এবং কাঁচা সবজির মিশ্রণকে উজ্জ্বল করে।

হানি মাস্টার্ড ড্রেসিং

মিষ্টি, মশলাদার এবং ট্যাঞ্জি স্বাদের এই মধু সরিষার ড্রেসিং হল আরেকটি আমেরিকান ক্লাসিক। এই ড্রেসিং একটি ব্যাপক আবেদন আছে। মধু সরিষা রুটিযুক্ত চিকেন টেন্ডার, ফ্রাই এবং অন্যান্য সুস্বাদু খাবারের জন্য একটি জনপ্রিয় ডিপিং সস। এই ডিপিং সসে প্রায়শই মেয়োনিজ বেস থাকে। হানি মাস্টার্ড ড্রেসিং গ্রিলড চিকেন সালাদের সাথে দূর্দান্ত স্বাদ যোগ করে।

ভিনাইগ্রেট ড্রেসিং

ভিনাইগ্রেট ড্রেসিং হল সবচেয়ে বহুমুখী সালাদ ড্রেসিং, যা তেল এবং অ্যাসিডের ভিত্তি সহ সসের একটি সম্পূর্ণ পরিবারকে উল্লেখ করে। এর নাম থেকেই বোঝা যায় ভিনিগ্রেটগুলো সাধারণত ভিনেগারের সাথে তেল একত্রিত করে। সুগন্ধি ভেষজ বা মশলাগুলোর সংমিশ্রণ তারপর যোগ করা হয়।

রাশিয়ান ড্রেসিং

এটিও ইটালিয়ান ড্রেসিং এর মতোই নামেই যা রাশিয়ান, মূলত সৃষ্টি আমেরিকানদের। ১৯০০ এর ধকের গোড়ার দিকে নিউ হ্যাম্পশায়ারের স্থানীয় জেমস কলবার্ন দ্বারা উদ্ভাবিত এই ড্রেসিং মেয়োনিজ, কেচাপ, পিমেন্টো মরিচ এবং মরিচের সসকে একত্রিত করে। কেচাপের মিষ্টতা এবং মেয়োনিজের ক্রিমিনেস অন্যান্য শক্তিশালী গন্ধযুক্ত এবং মশলাদার উপাদানগুলোর জন্য একটি আনন্দদায়ক ভিত্তি প্রদান করে। যেকোন সালাদ, স্যান্ডউইচ বা উদ্ভিজ্জ খাবারের সাথে রাশয়ান ড্রেসিং একটি ভারী এবং ট্যাঞ্জি সংযোজন।

থাউজেন্ড আইল্যান্ড ড্রেসিং

এই ড্রেসিংটি মূলত কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উপরের সেন্ত লরেন্স নদীর ধারে হাজার দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এটি রুবেন স্যান্ডউইচ, ওয়েজ স্যালাড এবং প্রোটিন- ভারী সালাদে দারুণ স্বাদযুক্ত। কখনও কখনও একে সিক্রেট সস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই ক্রিমি ড্রেসিংটি সাধারণত একটি সিজনিং বা ডিপ সস হিসেবে পরিবেশন করা হয় এবং বেশিরভাগ সংস্করণে এতে মেয়োনিজ, কেচাপ, ভিনেগার এবং চিনির স্বাদ থাকে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রাদেহ ও মননারীসুস্থ মনস্বাস্থ্য

মেনোপজ এবং মনের যত্ন

করেছে Suraiya Naznin জানুয়ারী ৪, ২০২৩

সাবিরা ইসলাম-

একজন কিশোরী যখন পিরিয়ড জীবন শুরু করে, তখন তার ভেতরে প্রথম প্রথম কিছু অস্বস্তি কাজ করে। সেটা মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই হতে পারে। একইভাবে মেনোপজ শুরু হলেও সে নতুন কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। তবে সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু মানসিক প্রস্তুতির।

 

 

কথায় আছে, যার শুরু আছে, এর শেষও আছে। এমনকি একজন মানুষ জন্ম নেওয়ার মাধ্যমে যে জীবনযাত্রা শুরু করে, মৃত্যুর মাধ্যমে সে যাত্রা শেষ হয়। এমনিভাবে বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি, যা কিছু চলমান সবকিছু একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে থেমে যায়। থেমে যেতে হয়। কারণ, নতুন করে অন্য কাউকে শুরু করার সুযোগ যে দিতে হবে। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নারীর জীবনপ্রক্রিয়ায় তেমনই একটি বিষয়। একজন নারীর কিশোরী বয়সে মাসিক ঋতুস্্রবা বা রজঃ¯্রাবের মাধ্যমে জীবনের নতুন ও অর্থবহ একটি অধ্যায় শুরু করে। এর সহজ বাংলা বা প্রচলিত, পরিচিত শব্দ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড। একজন কিশোরীর মাসিক শুরু হওয়া মানে সে পরিপূর্ণ নারী জীবনে প্রবেশ করল। সে মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এটি অনেক বড় একটি অর্জন।

 

বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া যে আমি সেই নারী, যে এই পৃথিবীতে আরেকজন মানবজাতিকে নিয়ে আসার সক্ষমতা অর্জন করেছি। আগে এসব বিষয়কে মনে করা হতো গোপনীয় বিষয়। লোকসমক্ষে ঋতু¯্রাব বা মাসিক বা পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা করা ছিল লজ্জার। এখন অনেকটাই কেটে গেছে। কারণ, নেট দুনিয়ায় প্রবেশ করলে এসব বিষয়ে নানারকম আর্টিকেল অনায়াসে সামনে চলে আসে। আবার ছোট ছোট নাটিকা বা প্রামাণ্যচিত্র তৈরিকরে সামাজিক যে কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা, তা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি নাটিকায় দেখা গেছে, মেয়ের প্রথম মাসিকের দিন মা-বাবা এবং বড় বোন কেক কেটে তা উদ্্যাপন করছে। মেয়েটিকে ঘুম থেকে ডেকে এনে কেক কাটতে বলায় তাকে যখন এর কারণ জানানো হয়, তখন মেয়েটি বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়ে। এটি অবশ্যই একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তবে মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতোএরকম একটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া কিশোরীটি পরিবারের সামনে সহজ হবে এবং তার সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। মনের ভীতি কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হবে। এটি যে আতঙ্কের কোনো বিষয় নয়, তা বুঝতে এবং গ্রহণ করতে সে সহজেই সক্ষম হবে।

 

রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ হলো মাসিক বা পিরিয়ড জীবনের সমাপ্তি। একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর নারীর আর সন্তান জন্মদানের প্রয়োজন পড়ে না। তখন এটি চলমান থাকা অস্বস্তিকর। পিরিয়ড একজন নারীর জন্য আশীর্বাদ। কারণ, সে তখন শুধু মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে, তা নয়। বরং শারীরিক অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি পায়। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হওয়ার পর ঋতু¯্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। ৪৯ থেকে ৫২ বছর বয়সের মধ্যেই এটি হয়ে থাকে।তবে শারীরিক কোনো জটিলতার কারণে এই বয়সসীমার এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে খুব স্বাভাবিকভাবে নারীদের একবছর ধরে রজঃস্রাব বন্ধ থাকলে চিকিৎসকেরা এটাকে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বলেন। এসময় ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম হ্রাস পায় বা বন্ধ হয়ে যায়।

 

বিশ্বের সব দেশে মেনোপজের সময় এক রকম নয়। পশ্চিমাবিশ্বে রজঃনিবৃত্তির বয়স ৪০ থেকে ৬১ বছর এবং সর্বশেষ রজঃ¯্রাবের গড় বয়স ৫১ বছর। অস্ট্রেলিয়ায় প্রাকৃতিক রজঃনিবৃত্তির গড় বয়স ৫১.৭ বছর। ভারত ও ফিলিপাইনে গড়ে ৪৪ বছর বয়সে মেনোপজ হয়। রজঃনিবৃত্তির বয়স প্রথম রজঃস্রাব বা সর্বশেষ গর্ভধারণের ওপর নির্ভর করে না। এ ছাড়া এর সঙ্গে গর্ভধারণ সংখ্যা, সন্তানকে দুগ্ধদান, জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন, আর্থসামাজিক অবস্থা, জাতিগত পরিচয়, উচ্চতা বা ওজনের কোনো সম্পর্ক নেই।

একজন কিশোরী যখন পিরিয়ড জীবন শুরু করে, তখন তার ভেতরে প্রথম প্রথম কিছু অস্বস্তি কাজ করে। সেটা মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই হতে পারে। একইভাবে মেনোপজ শুরু হলেও সে নতুন কিছুঅভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। তবে সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু মানসিক প্রস্তুতির। যেমন আমরা জানি, মা হতে গেলে একজন নারীকে দীর্ঘ নয় মাসের একটি ধীর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সে সময় নারীটির মানসিক প্রস্তুতি একটি সুস্থ মা ও শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। পিরিয়ড বন্ধও এরকম একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। তখনঅনিয়মিত মাসিক হতে থাকে। অনিয়মিত বলতে বোঝানো হচ্ছে যে এটা অল্প বা বেশি সময় ধরে চলতে পারে অথবা হালকা বা বেশি পরিমাণ রক্তপাত হতে পারে। এই সময়টায়নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় যেমন একধরনের গরম আভা বা উষ্ণতা অনুভব করে, যা দেহ থেকে মুখম-লের দিকে ছড়িয়ে যায়, যা হট ফ্লাশ (যড়ঃ ভষঁংযবং) নামে পরিচিত। এটা ৩০ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর সঙ্গে কাঁপুনি, রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম, ত্বক লালচে হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ থাকতে পারে। হট ফ্লাশ প্রায় ৭৫% মহিলার ক্ষেত্রে ঘটে এবং প্রায়ই এক বা দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় যোনিপথের শুষ্কতা, নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্নরকম মানসিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

 

Sad woman sitting on a sofa in the living room

তবে সবার ক্ষেত্রে এ লক্ষণ সমানভাবে প্রকাশ পায় না। নারীর পারিপাশির্^ক পরিবেশ এবং পরিবারের সদস্যের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর এসবের প্রভাব নির্ভর করে। যৌনমিলনে ব্যথা অনুভব করা, যোনিপথের ঝিল্লি পাতলা হওয়া ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া, প্রস্্রাব আটকে রাখার অক্ষমতা, ত্বকের শুষ্কতা, ওজন বৃদ্ধি, স্তনের আকার বৃদ্ধি ও ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি লক্ষণ এসময় প্রকাশ পেতে পারে।

 

মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, মনোযোগহীনতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি। রজঃনিবৃত্তির ফলে নারীদের অ্যাথেরোসক্লেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অস্টিওপোরোসিস বা অস্থিক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। তবে ওজন, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিত্যাগ করার মাধ্যমে এসব রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। মেনোপজের পর নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার কথা ভেবে অনেক নারীই আগাম মানসিক চাপে পড়ে। পরিবারের অনিবার্য একজন সদস্য হয়ে এধরনের শারীরিক, মানসিক চাপ সামলে স্বাভাবিক জীবন কীভাবে যাপন করা সম্ভব বা পরিবারের অন্যান্য সদস্য যারা, তারা এই সময়ে তার শারীরিক, মানসিক পরিবর্তনকে কতটা সহজভাবে গ্রহণ করবে বা তার আচরণগত পরিবর্তনকে কতটা স্বাভাবিকভাবে নেবে এ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই পরিবারের সদস্যদের মেনোপজ সম্পর্কে একটুধারণা দিয়ে রাখলে পরিবর্তিত সময়কে যাপন করা সহজ হবে।

 

মেনোপজ হোক বা না হোক, প্রতিটি মানুষই জীবনের নানা স্তরে নানারকম শারীরিক ও মানসিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করে চলে। একজন মানুষের জীবনে জ¦র, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা এগুলো খুব স্বাভাবিক ও সাধারণ অসুস্থতা। মেনোপজ-পরবর্তী নানা উপসর্গও তেমনই। এটিকে খুব সিরিয়াস কিছু ভেবে আগে থেকেই অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বরং মেনোপজের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন পিরিয়ড টাইম পার করতে করতে একজন নারীর মনে একধরনের মানসিক অবসাদ চলে আসে। তখন তিনি এর থেকে মুক্তি কামনা করেন। প্রতি মাসে পিরিয়ডের জন্য আলাদা মনোযোগ দিতে হয় না বলে একধরনের স্বস্তি পান। যেকোনো মুভমেন্টের জন্য নিজেকে তৈরি বলে মনে করেন। এতে মানসিক স্বস্তি তৈরি হয়। রাতের ঘুম ভালো হয়। পাশ ফিরতে গিয়ে কোনো অস্বস্তি কাজ করে না। শরীরে বাড়তি কোনো কাপড় বা প্যাড ব্যবহার করতে হয় না বলেও অন্যধরনের স্বস্তি মেলে।

 

আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী রজঃনিবৃত্তিকে ভয় পায়। এক ধরনের শঙ্কায় ভোগে। কারণ, বিষয়টি নিয়ে সব সময়ই একধরনের রাখঢাক চলে। অনেকে মনে করে, রজঃনিবৃত্তি মানে তার সোনালি জীবনের সমাপ্তি। বিষয়টি মোটেও তা নয়। বরং এই সময়ে অনেকেরই সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। দীর্ঘ সংসার জীবন থেকেও অধিকাংশ নারী এই সময়ে অবসর জীবনযাপন করেন। তারা ধর্মকর্মে মন দেন। মূলত এই সময়টিই নিজের মতো করে কাটানোর সময়ই”ছা হলেই প্ল্যান করে কোথাও বেড়াতে যাওয়া যায়। দেশ-বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া যায়। সমবয়সী নারী যারা, তাদের নিয়ে আড্ডায় কাটানো যায়। সমাজসেবামূলক কর্মকা-ে আরও বেশি সংযুক্ত হওয়া যায়।

 

 

শারীরিক সমস্যার যে বিষয়গুলোকে অনেক নারী ভয় পায়, তা একেবারেই অমূলক। কারণ, মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক নানা পরিবর্তন আসে। এছাড়া জীবনের নানা ধাপে নানা কারণে নানা রোগে ভুগি। এটিও তেমন। এতদিনের দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলতে থাকা শরীর নতুন অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবেই। সেজন্য শরীরকেও একটু সময় দিতে হবে। তবে বিষয়টি যতটা না শরীরের, তার চেয়ে বেশি মনের। কারণ, মন যদি নিজেকে প্র¯‘ত রাখে, তবে যেকোনো অবস্থা মানিয়ে চলা সহজহয়। এ ব্যাপারে পরিবারকেও সহযোগিতা করতে হবে। কারণ, নতুন এই জীবনধারা নারীর জন্য আরেকটি বিশেষ অধ্যায়। এ সময় শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনজনিত যেসব আচরণ অস্বাভাবিক মনে হবে, তা পরিবারের সদস্যদের সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। বুঝতে হবে এই নারীটিকে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হতে সময় দিতে হবে।এ সময়ে নারীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া জরুরি। আসলে পুরো বিষয়টি একেবারেই মানসিক। যে নারী যত মানসিকভাবে শক্ত থাকবে, নতুন জীবনকে মানিয়ে নেওয়া ততই সহজ হবে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
চলন বলনজীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

ব্যাক পেইন থেকে মুক্তি? জেনে নাও এখনই

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৩, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

ব্যাক পেইন বর্তমানে সবচেয়ে সাধারণ শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। গবেষণায় দেখা যায় যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৮জন তাদের জীবনের কোন না কোন সময়ে এই ব্যথার মুখোমুখি হয়। এটি একটি নিস্তেজ, অবিরাম ব্যথা থেকে হঠাৎ তীক্ষ্ম ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। যে কোন বয়সে, যে কোন পরিস্থিতিতে এর যন্ত্রণা শুরু হতে পারে; যা স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রতি পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে। কারণ ও উপসর্গের উপর  নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়।

মূলত মেরুদন্ড বা স্পাইন সম্পর্কিত ব্যথাকেই আমারা ব্যাক পেইন বলে থাকি। ব্যাক পেইন কেন হয়? এর নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। মানুষের পিঠ পেশী, লিগামেন্ট, টেন্ডন, ডিস্ক এবং হাড়ের একটি জটিল কাঠামোর সমন্বয়ে গঠিত, যা শরীরকে সমর্থন করার জন্য একসাথে কাজ করে এবং আমাদের চারপাশে চলাফেরা করতে সক্ষম করে। এই উপাদানগুলোর যেকোন একটির সমস্যা হলে ব্যাক পেইন হতে পারে। কখনও কখনও এটি হঠাৎ আসতে পারে- দূর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া বা ভারী কিছু তোলার কারণে বা মেরুদন্ডে বয়স-সম্পর্কিত অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের কারণে এটি ধীরে ধীরে বিকাশ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, প্রদাহজনিত ব্যাধি বা অন্যান্য চিকিৎসার কারণে এই ব্যথা হয়ে থাকে। আবার আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপও এইক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকে, ঘাড় সামনের দিকে চাপিয়ে গাড়ি চালানো বা কম্পিউটার ব্যবহার করা, এমন বেডে শোয়া যা শরীরের জন্য উপযুক্ত নয় ইত্যাদি। এটি সাধারণত শুরুতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে লোকাল পেইন থেকে শুরু করে পুরো পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কখনও কখনও ব্যথা পিঠ থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে যেমন নিতম্ব, পা বা পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথার তীব্রতা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য পরিবর্তিত হয়।

ঘরোয়া প্রতিকার

হঠাৎ বা তীব্র ব্যথা ডাক্তার বা শারীরিক থেরাপিস্ট দ্বারা পরীক্ষা করা উচিৎ। কিন্তু কখনও কখনও তুমি নিজেই এই বিরক্তিকর ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করতে ঘরোয়াভাবে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারো।

ভালো ঘুম

ব্যাক পেইন দেখা দিলে তা ঘুমের জন্য কঠিন হতে পারে। এটি একটি দুষ্টচক্র হতে পারে কারণ যখন তুমি পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারবেনা তা ব্যথার মাত্রা অসহনীয় করে তোলে। এক্ষেত্রে পাশ ফিরে শুতে পারো যাতে মেরুদন্ড একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে পারে এবং পিঠের উপর চাপ কমাতে হাঁটুর মধ্যে বালিশ রাখতে পারো। এছাড়াও ম্যাট্রেসও এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আরামদায়ক শক্ত ম্যাট্রেস নির্বাচন করতে ভূলবেনা।

সঠিক ভঙ্গি

সঠিক ভঙ্গিমার অভাবেও ব্যথার উদ্রেক হতে পারে, বিশেষ করে যদি তোমাকে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থেকে কাজ করতে হয়। স্ক্রিনের সামনে কাজ করতে হলে তা টেবিল বা ডেস্কে এমনভাবে রাখো যাতে বাহুর সমভাবে অবস্থান থাকে এবং পর্দার শীর্ষে চোখ সমান থাকে। অযথা কীবোর্ডের উপর ঝুঁকে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম

শক্তিশালী পেশী, বিশেষ করে পেটের মাসল পিঠকে সর্থন করতে সাহায্য করে। শক্তি এবং নমনীয়তা উভয়ই ব্যথা উপশমে এবং এটি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। যোগব্যায়াম, পাইলেটস এবং তাই চি হলো পেটের কোর এবং নিতম্বের চারপাশের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করার কয়েকটি উপায়। বয়স্ক ব্যক্তিরাও ইয়োগার কিছু স্টেপ ফলো করেও উপকার পেতে পারে।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরানো পিঠের উপর লোড হালকা করে।ওজন কামানো ব্যথায় দারুন কাজ করে কারণ এটি মেরুদন্ডে যান্ত্রিক শক্তির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। যদি মাত্রাতিরিক্ত ওজন হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে ডায়েট এবং ব্যায়ামের পরিকল্পনা করে নিতে পারো।

আইস এবং হিট থেরাপি

বেদনাদায়ক জায়গায় বরফের নিয়মিত প্রয়োগ আঘাত থেকে ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিবার ২০ মিনিট পর্যন্ত এটি দিনে কয়েকবার চেষ্টা করো। ত্বকের সুরক্ষার জন্য একটি পাতলা কাপড়ে বরফের প্যাকটি মুড়িয়ে রাখো। কয়েক দিন পর, হিটে স্যুইচ করো। পেশী শিথিল করতে এবং আক্রান্ত স্থানে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করার জন্য একটি হিটিং প্যাড প্রয়োগ করো। এছাড়া শিথিলায়নের জন্য উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করতে পারো। পোড়া এবং টিস্যুর ক্ষতি এড়াতে কখনোই হিটিং প্যাড নিয়ে ঘুমাবেনা।

সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ

আমরা যা খাই তা থেকে ভিটামিন এবং মিনারেল পাওয়া ভালো। কিন্তু যদি কোন প্রকার সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন দেখা দেয় তবে ডাক্তারের পরামর্শে তা নেয়া ভালো। উদাহরণস্বরূপ, অনেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি সূর্যালোকের এক্সপোজারের অভাব থেকে বা শরীর খাবার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারেনা বলে ঘটতে পারে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পেশী দূর্বলতা এবং ক্র্যাম্প হতে পারে। এক্ষেত্রে যথাযথ সাপ্লিমেন্ট গ্রহনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নাও।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিঘরকন্যাভালো থাকার ভালো খাবারস্বাস্থ্যহেঁসেল

সালাদ তাজা রাখার উপায়

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

সালাদ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। দেহ ফিট রাখার পাশাপাশি ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল রাখতে এর উপকারিতা অনস্বীকার্য। পুষ্টিকর, মসৃণ এবং তাজা সবজীর সমারোহে এক বাটি সালাদ নিজেদের পাতে পেতে কেনা চায়? কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেখা যায় যে, সালাদ তৈরীর জন্য সবজীর প্রয়োজন দেখা দেয় সেগুলোর সতেজতা অনেকক্ষণ ব্যাপী থাকেনা। কখনও খেয়াল করে দেখেছো কি কীভাবে প্রো শেফরা তাদের সবজী সতেজ রাখতে পারে? সালাদ তথা শাকসবজি সংরক্ষণ করার কিছু টিপস শেয়ার করা হলো যাতে তারা বেশি সময় ধরে ফ্রেশ থাকতে পারে।

-তুমি যদি প্রথমেই গোড়ায় হালকা পচন ধরা সবজীর কোন বান্ডিল নির্বাচন করে নাও তবে শুরুতেই তোমার সবকিছু পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে। তাই যখনই এমন কিছু কেনাকেটা করতে যাবে, তা হোক কোন লেটুস অথবা মিক্সড সালাদ ব্যাগ; ভালোভাবে পরীক্ষা করে বেস্টটি নির্বাচন করে নাও।

-সবুজ শাকসবজি আবদ্ধ থাকা অবস্থায় আর্দ্রতার সৃষ্টি করে, ফলশ্রুতিতে এটি দ্রুত সতেজতা হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে তোমার সবজীর ব্যাগের সাথে কাগজের টাওয়ালে জড়িয়ে রাখা প্রাথমিকভাবে একটি অপরিহার্য সালাদ সংরক্ষণের কৌশল হিসেবে সম্মত। এই সহজ পদক্ষেপটি আর্দ্রতা দূর করতে এবং নষ্ট হওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

-সালাদ তৈরীতে লেটুস অনেক ব্যবহৃত হয়। লেটুসের আয়ু বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি হল প্রথমে অতিরিক্ত আর্দ্রতা দূর করা এবং তারপরে শুকিয়ে রাখা। তাই যখনই এগুলো কিনে আনা হয় তা প্যাকেজিং থেকে সরিয়ে সালাদ স্পিনারের মধ্যে ঘুরিয়ে নাও। অথবা কিচেন টাওয়াল দিয়ে চেপে চেপে এর গায়ের অতিরিক্ত আর্দ্রতা মুছে শুকিয়ে রাখতে হবে। তারপর তা বায়ুরোধী প্লাস্টিকের স্টোরেজ কন্টেইনারে সংরক্ষণ করতে হবে।

-ফল এবং শাকসবজি ফ্রিজের নির্দেশিত নীচের ড্রয়ারে রাখো কারণ এগুলো আসলে গ্যাস এবং আর্দ্রতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যা নষ্ট হওয়াকে ত্বরান্বিত করে। ধ্বংসাত্মক ইথিলিনকে পালানোর অনুমতি দেয়ার জন্য উচ্চ আর্দ্রতা নির্বাচন করো।

-খাবার পরিবেশনের আগেই যদি সালাদ ড্রেসিং করে তৈরি করে রেখে দাও তবে তা এর জীবনকালকে ছোট করবে নিশ্চিত। এক্ষেত্রে, পরিবেশন করার আগে পর্যন্ত ড্রেসিং আলাদা করে রেখে দাও। আরেকটি বিকল্প হলো, মেসন জারে ড্রেসিংটি একেবারে নীচে স্তরে রাখা, মাঝখানে টপিংস এবং উপরে সবুজ শাক্সবজী রেখে বাটিতে ঢেলে রাখতে পারো এবং পরিবেশনের ঠিক আগে শুধু মিশিয়ে নিলেই হবে।

-বিভিন্ন সালাদের উপকরণগুলোর জীবনকাল বিভিন্ন থাকে। কোনটি দীর্ঘস্থায়ী, কোনটি নয় তা জানতে হবে। বেশিরভাগ সবজি যেমন গাজর, মরিচ, পেঁয়াজ, মূলা, শসা এবং টমেটো এগুলো সংরক্ষণ করা সহজ এবং এগুলোর যোগে অনেকক্ষণ তাজা থাকতে পারে। অন্যদিকে, অ্যাভোকাডো, আপেল এবং অন্যান্য ফল যা কেটে ফেলার পর অতি দ্রুত বাদামী হয়ে যায়; তা সালাদে এড করতে চাইলে অনেক আগে না কেটে সাথে সাথে যোগ করা ভালো।

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

চোখের ক্লান্তি, নিমিষেই মিলবে শ্রান্তি

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

আধুনিক জীবন চলার পথ সুগম করার সকল উপকরণ সবসময় আমাদের চোখের জন্য সদয় হয়না। অনেক ডিভাইস, যেমন কম্পিউটার, ফোন এবং ট্যাবলেট থেকে নির্গত নীল আলো আমাদের চোখের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। যা চোখের ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি এবং মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে। এই ক্লান্তি দূর করার এবং চোখ শিথিল করার উপায় জানতে লেখাটি পড়তে পারো।

আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ হচ্ছে সবচেয়ে স্পর্শকাতর অংশ। দৈনন্দিন জীবনে চোখের উপরেই পড়ে সবরকমের চাপ। আধুনিকায়নের এই যুগে বেশির ভাগ কাজের জন্য আমাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের উপর নির্ভর থাকতে হয়। এছাড়াও সাম্প্রতিক ভার্চুয়াল শিক্ষার প্রয়োজনে বাচ্চারা স্ক্রিনের সামনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় কাটাতে পারে। সবকিছু ডিজিটালাইজড হওয়ার কারণে একদিকে যেমন সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে এসব কিছুই আমাদের চোখের উপর অনেক বড় প্রভাব ফেলছে। আমাদের চোখ অনেক সূক্ষ্ম পেশী দ্বারা গঠিত। শরীরের অন্যান্য পেশীগুলোর মতো, যখন আমরা আমাদের চোখের পেশীগুলো অনুশীলন করি, তখন তাদেরও বিশ্রাম দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চোখকে বিশ্রাম দেয়া, পুরো শরীরকে শিথিল করতেও সাহায্য করতে পারে। চোখের বিশ্রাম ব্যায়াম প্রতিদিন সঞ্চালিত করা উচিৎ কারণ চোখের ফিটনেস পুরো জীবনকালের ভালো দৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চোখ শিথিলকরণের কিছু কৌশল জেনে নিইঃ

চোখ শিথিলকরণ

এর জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আলো বন্ধ করে দেয়া। হাতে যদি সময় থাকে, তবে কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে থাকো কিংবা শুয়ে পড়ো। চোখ বন্ধ করে শ্বাসের দিকে মনোনিবেশ করো। শান্ত শ্বাস মুখের পেশী শিথিল করতে সাহায্য করবে এবং চোখ বন্ধ করলে চোখের চাপ কমবে।

হাতের তালুর ব্যবহার

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা এই কৌশলটিকে চক্ষু চিকিৎসক উইলিয়াম বেটস এর ‘দ্য বেটস মেথড’ নামক একটি বিকল্প থেরাপির সাথে যুক্ত করেছেন। হাতের তালু অপটিক স্নায়ু শিথিল করতে পারে এবং একই সাথে চোখকে আলো থেকে বিরতি দিতে পারে। হাত একসাথে ঘষে তাদের উষ্ণ করতে হবে। তারপর তা চোখের বলের উপর চাপ না দিয়ে বন্ধ চোখের উপর কাপ করে রাখো। ধারণা করা হয় যে এটি চোখকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।

লাইট এবং ডিভাইস স্ক্রীনে সামঞ্জস্য

বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন ধরনের আলো রিকয়ারমেন্ট করে। তুমি যখন টিভি দেখবে, তখন ঘরকে হালকা ভাবে আলোকিত রাখা চোখের জন্য ভালো। যখন কিছু পড়বে, তখন আলোটি তোমার পিছনে রাখো এবং চোখের বাইরে পৃষ্ঠার দিকে নির্দেশ করো। ডিজিটান স্ক্রিনে, চারপাশের আলোর স্তরের সাথে মেলে উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য করো। পাশাপাশি স্ক্রিনের বৈসাদৃশ্য সামঞ্জস্য করো, যাতে চোখকে দেখতে চাপ দিতে না হয়।

স্ক্রিন ব্রেক নাও

একটানা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করে নিয়মিত স্ক্রিন ব্রেক নেওয়া উচিৎ। আইস্ট্রেন এবং শুষ্ক চোখের ঝুঁকি কমাতে বিশেষজ্ঞরা ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণের সুপারিশ করে। প্রতি ২০ মিনিটের স্ক্রিন টাইম পরে, প্রায় ২০ সেকেন্ডের জন্য প্রায় ২০ ফুট দূরত্বে তাকাও; এটি তোমার চোখ শিথিল করবে এবং তাদের বিরতি দেবে।

উষ্ণ ওয়াশক্লথ প্রয়োগ

তোমার ক্লান্ত, ব্যথাযুক্ত চোখের উপর গরম পানিতে একটি ওয়াশক্লথ ভিজিয়ে তা ৫-১০ মিনিটের মতো প্রয়োগ করে দেখতে পারো। এর দ্বারাঃ

-আর্দ্রতা যোগ করে

-ব্যথা কমায়

-রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়

-পেশীর খিঁচুনি শিথিল করে

কম্পিউটার সেটআপ পরিবর্তন

নিশ্চিত করতে হবে যে, স্ক্রিনটি তোমার মুখ থেকে প্রায় বাহুর দৈর্ঘ্য ২০-২৬ ইঞ্চি দূরে রয়েছে। পর্দার কেন্দ্রটি চোখের স্তরের সামান্য নিচে (৪-৫ ইঞ্চি) হওয়া উচিৎ। যারা ল্যাপটপ বা আই প্যাডে কাজ করে, তা কোলে রেখে কাজ করলে ঘাড় নুইয়ে দেখতে হয়। এর ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে। উত্তম হয় এগুলোকে যদি ডেস্কটপের মতো করে ব্যবহার করা যায়। টেবিলে রেখে অথবা বই বা অন্যকিছু দিয়ে এর উচ্চতা বাড়িয়ে নাও।

টি ব্যাগের ব্যবহার

টি ব্যাগ গরম পানীয়ের চেয়ে ভালো কাজে দেয়। এগুলো চোখের জন্য একটি আরাদায়ক ঠান্ডা সংকোচ হিসেবে কাজ করে। টি ব্যাগ ব্যবহারের পর তা ফেলে না দিয়ে ফ্রিজে একটি পরিষ্কার পাত্রে রেখে দাও। একবার এগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে চোখকে প্রশমিত করতে এবং চোখের ফোলা ভাব কমাতে তা চোখের পাতায় রাখো।

চোখের ব্যায়াম করো

চোখের চারপাশে যে পেশী আছে, তারা একটি ওয়ার্কআউট থেকেও উপকৃত হতে পারে। তোমার আঙুল তোমার চোখ থেকে কয়েক ইঞ্চি ধরে রাখো এবং এটিতে ফোকাস করো। তারপর দূরত্বের দিকে ফোকাস করো, তারপর আবার আঙুলের দিকে ফিরে যাও। এইভাবে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করো। এছাড়াও, আরেকটা করতে পারো; চোখ বন্ধ করে, সেগুলোকে সিলিঙয়ের দিকে রোল তারপর মেঝেতে নাও। ডানদিকে তাকাও, তারপর বামে। এই ব্যায়ামগুলো চোখের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

চোখ অনেক সংবেদনশীল এক অঙ্গ। বেশি সমস্যা দেখা দিলে কালক্ষেপণ না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই সবচেয়ে উত্তম। তারপরে, চোখকে বিশ্রাম দিতে এবং তাদের চাপ এড়াতে এই টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারো।

–ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.অন্দরের ডায়েরিজীবনযাত্রাদেহ ও মনভালো থাকার ভালো খাবারসচেতনতাস্বাস্থ্য

দেরীতে খেলে, বাড়ে ওজন?

করেছে Shaila Hasan ডিসেম্বর ২৬, ২০২২

শায়লা জাহানঃ

ঘড়ির কাঁটা ঘোরার সাথে সাথে রাত বেড়েই যাচ্ছে। দিনের শেষে স্ট্রেস কম করার সময় বিছানায় বসে হালকা পাতলা কিছু খাওয়ার শখ চেপেছে। কিন্তু মাথার ভেতর থেকে কেউ বলে চলেছে যে রাতে দেরী করে খাওয়া তোমার জন্য খারাপ। এটি একটি সাধারণ বিশ্বাস যে রাতে দেরী করে খেলে ওজন বাড়বে। প্রশ্ন হলো, রাতে খাওয়ার ফলে কি সত্যিই ওজন বাড়বে? ব্যাপারটি কি আদৌ সত্যি নাকি মিথ? আসো উত্তর খুঁজে নিই।

দেরী করে খেলে, ওজন বাড়ে- এই পৌরাণিক কাহিনীটি বহু বছর ধরে চলে আসছে। এবং এই ব্যাপারে অনেকেই বলে এসেছে যে তাদের গভীর রাতে খাওয়ার অভ্যাসই তাদের ওজন বাড়ানোর পেছনে দায়ী। বলা হয়ে থাকে যে, রাতে আমাদের মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়। এর ফলস্বরুপ আমরা রাতে যা খাই তা দিনের বেলায় খাওয়া ক্যালোরির চেয়ে সহজে চর্বিতে পরিণত হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের শরীর দিনের বিভিন্ন সময়ে গ্রহণ করা খাবার ভিন্নভাবে প্রক্রিয়া করেনা। মূলত আমরা সারাদিনে যে পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করি এবং দিনে কতটা ব্যায়াম করি তাই আমাদের ওজনকে প্রভাবিত করে। এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, খাবার গ্রহণের সময়ের সঙ্গে ওজন কম বা বেশি হওয়ার যদি কোন সম্ভাবনা না থাকে, তবে ওজন বৃদ্ধির কারণ কী? এর সহজ উত্তর হলো অভ্যাস। অনেকেরই বেশি খাওয়ার প্রবণতা থাকে এবং রাতে স্ন্যাকস হিসেবে উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেছে নেয়, যার সবই আমাদের অভ্যাস এবং এটিই ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই লেট নাইট খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাজে অভ্যাসের মধ্যে রয়েছেঃ

-সকলেরই প্রতিদিনকার চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণের চাহিদা রয়েছে। তুমি যদি দিনের বেলায় তোমার প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পুরোটাই পূর্ণ করে ফেলো এবং তারপরে লেট-নাইট স্ন্যাকসের দিকে হাত বাড়াও, তবে তোমার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ হয়ে যাবে। যা ওজন বৃদ্ধিতে দায়ী।

-আমাদের বেশিরভাগেরই দিনের বেলা স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করার প্রবণতা থাকে। সারাদিনকার খাদ্য তালিকায় আমরা তাই যোগ করি যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু এই লেট-নাইট স্ন্যাকসের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্ডি, চিপস বা আইসক্রিমের মতো খাবারগুলো গ্রহণ করার টেন্ডেসি থাকে। এইগুলোর পরিবর্তে সঠিক কিছু নির্বাচন করতে আমরা সবসময়ই ব্যর্থ হই।

-আরেকটি বাজে অভ্যাস হলো খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল সামনে নিয়ে বসা। দিনের শেষে, টিভির সামনে বসে আরাম করা বা মোবাইল টেপা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যখন টিভির সামনে খাবার খাও, তখন তা তোমার অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে।

রাতে খাওয়ার টিপস

যদিও এটা বিতর্কিত বিষয়, কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞরা ঘুমানোর আগে ছোট কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেন। তুমি যখন খারাপ অভ্যাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তখন এটি তোমাকে ঘুমাতে সাহায্য করার একটি ভালো উপায় হতে পারে। স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে রাতে কীভাবে খাবে তার কিছু টিপস দেয়া হলোঃ

পরিকল্পনা করা

পরিকল্পনা ছাড়া প্রতি রাতে স্ন্যাকস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনানুযায়ী ক্যালোরি  অতিক্রম করতে না চাইলে এবং লেট নাইট স্ন্যাকস নিতে চাইলে প্রতিদিনের ক্যালোরি গণনায় পর্যাপ্ত ক্যালোরি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করো। দিনের বেলায় সেই হিসেবে খাবার গ্রহণ করো।

ডেজার্ট এবং জাঙ্ক ফুড পরিহার

এই লেট নাইট খাবারের ক্রেভিংস সবার মধ্যেই কম বেশি থাকে। কিন্তু তুমি যদি এই সময় নিজেকে কোন মিষ্টি খাবার বা চিপসের মাধ্যমে পূর্ণ করো, তবে সেই সেই ক্রেভিংস আরো বাড়বে। এই ক্যালোরিতে ভরপুর খাবারগুলো অতিরিক্ত খাওয়া আরও সহজ করে তোলে।

কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার

বিছানায় যাবার আগে যদি কিছু নিতেই হয় তবে নিশ্চিত করো যে তাতে জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন রয়েছে যা তোমাকে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, রাতে তাড়াতাড়ি না খেলেও ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নেয়া উত্তম। সেই খাবার অবশ্যই হতে হবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে ওজন বাড়ানোর সম্ভাবনাও যেমন থাকবেনা তেমনি দেহ ও মনও থাকবে সুস্থ।

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook