রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
বিভাগ

স্বাস্থ্য

প্রধান রচনাসচেতনতাস্বাস্থ্য

গরমে শিশুস্বাস্থ্য

করেছে Suraiya Naznin মে ৩১, ২০২৩

লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান

প্রচন্ড তাপের কারণে কর্মব্যস্ত মানুষের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম, তাপ-শ্রান্তি, তাপাঘাত, শিরটান বা খিঁচুনি, মূর্ছা যাওয়া, এমনকি মৃত্যুর খবরও আসছে প্রায়ই। এই প্রচন্ড গরমে বড়দের চেয়ে শিশুদের অবস্থা আরও নাজেহাল। ইউনিসেফের মতে, বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি শিশু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাপমাত্রাজনিত রোগে ভুগে থাকে-

বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে গ্রীষ্ম শুরুর আগেই বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। প্রচ- দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এ দাবদাহে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস, উৎপাদনে নিম্নগতি, চলাচলে ব্যাঘাতসহ জনস্বাস্থ্য নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ক্রমাগত দাবদাহ বিরাজ করার কারণে কর্মব্যস্ত মানুষের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম, তাপ-শ্রান্তি, তাপাঘাত, শিরটান বা খিঁচুনি, মূর্ছা যাওয়া, এমনকি মৃত্যুর খবরও আসছে প্রায়ই। এই প্রচন্ড গরমে বড়দের চেয়ে শিশুদের অবস্থা আরও নাজেহাল। ইউনিসেফের মতে, বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি শিশু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাপমাত্রাজনিত রোগে ভুগে থাকে।

পরিণত বয়সে না পৌঁছার কারণে শিশুদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনে পরিপূর্ণতা আসে না। তাই তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। এ জন্য প্রচন্ড গরমে শিশুদের নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তন্মধ্যে পানিশূন্যতা, শ্বাসতন্ত্রের রোগ যথা : সর্দি-কাশি-নিউমোনিয়া, চামড়ার ব্যাধি যেমন : ঘামাচি ও র্যাশ এবং তাপমাত্রার আধিক্যের কারণে মূর্ছা যাওয়া, হিট স্ট্রোক ও হিট এক্সাশন ইত্যাদি অন্যতম। এ ছাড়া গরম ও অতিরিক্ত আর্দ্রতায় বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণের কারণে খাদ্য, পানি ও বায়ুবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবও দেখা যায়, যথা জলবসন্ত বা চিকেন পক্স, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি।

পানিশূন্যতা
শিশুরা এমনিতেই পানি পান করতে চায় না। গরমের সময় প্রয়োজনমতো তরল বা পানি পান না করার কারণে তারা সহজেই পানিস্বল্পতা বা পানিশূন্যতায় ভোগে। বমি বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশুদের পানিস্বল্পতা হতে পারে। মৃদু বা মাঝারি ধরনের পানিশূন্যতায় তাদের জিহ্বা শুকিয়ে যেতে পারে, কান্নায় চোখ দিয়ে সামান্য পানি পড়ে বা একেবারেই পানি পড়ে না, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, প্রস্রাব কম হয় কিংবা অস্থিরতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। তীব্র পানিশূন্যতায় মুখগহ্বর শুকিয়ে যায়, পেটের চামড়া ঢিলা হয়ে যায়, শরীর নিস্তেজ ও ঘুম ঘুম ভাব থাকে, চোখ গর্তে ঢুকে যায়, নবজাতকদের মাথার চাঁদি ভেতরে বসে যায় এবং দ্রুত ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়। এ অবস্থা শিশুদের নাড়ির গতি দ্রুত ও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিশুদের বারবার তরল খাবার বা পানীয় যথা পানি, ডাবের পানি, ফলের জুস বা তরল-জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঘামাচি
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শিশুদের শরীরে প্রায়ই ঘামাচি দেখা দেয়। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে ঘাম বের হওয়ার নালিমুখ বন্ধ হয়ে ঘামাচির সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো ঘামাচি লাল হয়ে শিশুর ঘাড়ে, গলায়, পিঠে ও বুকে ছড়িয়ে পড়ে এবুং প্রচন্ড চুলকানির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ঘামাচির মুখ পেকে পুঁজেরও সৃষ্টি হতে পারে। ঘামাচি প্রতিরোধে শিশুকে সরাসরি রোদে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এ সময় স্কুলে বেশিক্ষণ বহিরাঙ্গন খেলাধুলা না করা ভালো। শিশুদের যথাসম্ভব সুতি জামাকাপড় পরাতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে শিশুর গা ঠান্ডা পানিতে মুছিয়ে দিলে ঘামাচি প্রতিরোধে সহায়ক। বাজারে সজলভ্য ঘামাচিরোধী পাউডার এ কষ্ট লাঘবে অনেক সময় সহায়তা করে।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ-সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া বাতাসে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রভৃতি রোগজীবাণু বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ সময় শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ তথা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের সর্দি, কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধে শিশুদের পরিষ্কার পরি”ছন্ন রাখতে হবে। ভিটামিন সি-যুক্ত ফলমূল যথা: আনারস, কমলা, কামরাঙা, পেয়ারা, আম ইত্যাদি এবং নানা ধরনের মৌসুমি ফল এসব রোগ প্রতিরোধে উপকারী। সর্দিতে নাক বন্ধ হলে নরসলজাতীয় ড্রপ নাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কুসুমকুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড়ে ভিজিয়ে নাকে দেওয়া যেতে পারে। কাশি হলে ছোট শিশুদের লেবুর রস মেশানো গরম পানি ও তুলসীপাতার রস কার্যকর। শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

জ্বর
শিশুরা নিজের অজান্তে অনেক সময় অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত দ্রব্যসামগ্রীর সংস্পর্শে আসে বিধায় জীবাণু সংক্রমণ ও জ্বরের প্রবণতা বেশি থাকে। গরমের সময় এ হার আরও বেড়ে যায়। তবে এ জ্বর তেমন মারাত্মক নয়। জ্বর হলে নিজেরা কোনো ওষুধ শুরু না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে জ্বর কমাতে গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে শিশুর পুরো শরীর মুছে দিলে জ্বর কমে আসে এবং শিশু তাৎক্ষণিক আরাম বোধ করে থাকে। আইসপ্যাক বা ঠান্ডা পানি না ব্যবহার করাই ভালো। কারণ, এতে পরবর্তী সময়ে জ্বর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জ্বরের সময় শিশুর শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। পানিস্বল্পতা রোধে বেশি বেশি তরল খাবার ও পানীয় খাওয়াতে হবে; তবে চা বা কফি ইত্যাদি পরিহার যুক্তিযুক্ত। জ্বরের সঙ্গে বমি বা পাতলা পায়খানা থাকলে মুখে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

হিট এক্সাশন, হিট ক্র্যাম্প, হিট স্ট্রোক, হিট সিনকোপ বা মূর্ছা যাওয়া
অত্যধিক গরমে আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে। প্রথমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। এতে শরীর কিছুটা অবসাদগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। হাত ও পা কিছুটা ফুলে যায় ও চামড়া লালচে হয়ে পড়ে। এ পর্যায়কে হিট ক্র্যাম্প বলা হয়। হিট ক্র্যাম্পের পরবর্তী পর্যায় হিট এক্সাশন। এ সময় শিশুর পুরো শরীর ঘামে ভেজা থাকে, শিশু অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, মাথাব্যথা, বমিভাব ও ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। নাড়ির গতি দ্রুত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। তৃতীয় ধরনের মারাত্মক সমস্যাটিকে বলে হিট স্ট্রোক। এ পর্যায়ে শরীর শুকিয়ে যায়, নাড়ির গতি দুর্বল, দ্রুত ও অনিয়মিত হতে দেখা যায়। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, শ্বাসের গতি বেড়ে যেতে পারে; শিশু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে, প্রলাপ বকা বা খিঁচুনি হতে পারে কিংবা মূর্ছাও যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিলে শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে।

এসব পরিস্থিতিতে শিশুকে তাড়াতাড়ি শীতল স্থানে বা ছায়ায় নিয়ে আসতে হবে। শরীর থেকে পরিধেয় কাপড়চোপড় খুলে পাখার বাতাস বা ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে। শিশুর পায়ের দিক উঁচু করে শুয়ে রাখতে হবে। জ্ঞান থাকলে ঠান্ডা পানিতে শরীর মুছে দিন। ঠান্ডা, পরিষ্কার, তরল বা পানীয় খেতে দিন। শিশু যদি বমি করতে থাকে, তাকে এক পাশ করে রাখুন, বমি শ্বাসনালিতে চলে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ডায়রিয়া বা ফুড পয়জনিং
গরমের সময় দ্রুত খাবার বা পানিতে রোগজীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। এ সময় শিশুদের নানা ধরনের পানি বা খাদ্যবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যায়, যথা : ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি। শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সঙ্গে পানি অথবা ডাবের পানি খাওয়ানো ভালো। একই সঙ্গে তাকে তরল খাবারও দিতে হবে। শিশুর শরীরে যাতে পানিশূন্যতা না হয় এবং তার প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর পায়খানা নিয়ন্ত্রণ না হলে বা সঙ্গে রক্ত গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে এবং তরল ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।

গরম ও অতিরিক্ত তাপমাত্রাজনিত শিশুদের সিংহভাগ শারীরিক সমস্যাই প্রতিরোধযোগ্য। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে এবং সংশ্লিষ্টদের অসচেতনতা তাপমাত্রাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুর বর্তমান সংখ্যা ৫০ কোটি থেকে ২০৫০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকা। তাই ইউনিসেফ বিশ্বের সব দেশকে শিশুদের বাঁচাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

ক্স রোদের সরাসরি প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করুন।
ক্স গরমের দিনে শিশুদের বেশি বেশি পানি পান করাবেন।
ক্স গরমের দিনে শিশুদের সহজপাচ্য ও স্বাস্থকর খাবার দিন।
ক্স এ সময় শিশুদের ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরিধানের ব্যবস্থা নিন।
ক্স বা”চাদের নিয়মিত গোসল করান।
ক্স যথাসম্ভব ছেলেমেয়েদের ইনডোর বা শীতল স্থানে খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন।
ক্স বাসস্থানে যথাসম্ভব আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
ক্স গরমে বাচ্চাদের নিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ কিংবা আউটডোর কর্মকান্ড পরিহার করুন।

গরমের দিনে অভিভাবকেরা কিংবা স্কুল কর্তৃপক্ষ ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত পিপাসা লাগা, হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, বমি, কিছু খেতে না চাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া বা জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া এবং বা”চাদের দুর্বল ও নিস্তেজভাব দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সাধারণত শিশুদের শরীরের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ গড়ে ওঠে না। যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ায় তাদের শরীরের ওপর প্রতিক্রিয়া শিশুরা বুঝতে পারে না। তারা ঠিকমতো বলতে পারে না কী ধরনের সমস্যায় ভুগছে। শিশুদের শারীরিক গঠন এমন যে দাবদাহের কারণে যেকোনো মুহূর্তে পূর্বসতর্কতা ছাড়াই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এসব পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে শিশুরা অজ্ঞ। তীব্র গরমে নানান স্বাস্থ্য জটিলতার মুখোমুখি হয় শিশুরা। তাই অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত এ সময় শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকা।

লেখক : লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান, এমপিএইচ, এমফিল
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
সচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

আগুনে পুড়লে

করেছে Suraiya Naznin এপ্রিল ৪, ২০২৩

রোদসী ডেস্ক: শরীরের কোথাও গভীরভাবে পুড়ে গেলে ব্যথা অনুভব করার জন্য প্রয়োজনীয় নার্ভ বা স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এমন ক্ষেত্রে অবহেলা না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত-

পানি ঢালা: শরীরের কোথাও হালকা পুড়ে গেলে পোড়া স্থানের ওপর প্রায় ২০ মিনিট ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, তবে ফ্রিজের পানি নয়। তারপর পোড়া স্থানকে ত্বক সহনীয় সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ঠান্ডা সেঁক : পোড়া স্থানের ওপর কোল্ড কমপ্রেস বা কাপড়ে পেঁচানো বরফের টুকরো ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখলে ব্যথা ও ফোলা উপশম হবে। ১০-১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে প্রয়োজন পড়লে পুনরায় সেঁক দেওয়া যেতে পারে । তবে খুব বেশি ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যাবে না, কারণ ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম: অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট বা ক্রিম পোড়া স্থানে ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারে। পোড়া স্থানের ওপর ব্যাসিট্রাসিন বা নিওসপোরিন অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট লাগানো যেতে পারে। তারপর জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

অ্যালোভেরা জেল: পোড়া স্থানের চিকিৎসায় অ্যালোভেরা এত বেশি কার্যকর যে, এটা বার্ন প্লান্ট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন ও সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন নিরাময়ে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরা প্রদাহ কমায়, রক্ত সংবহন বাড়ায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঠেকায়। অ্যালোভেরার পাতা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জেল নিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিতে হবে। অথবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কোম্পানির অ্যালোভেরা ক্রিম কিনেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

মধুর প্রলেপ: মধু খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এটা কে না জানে? চমকপ্রদ তথ্য হলো, মধু ত্বকেও ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে, মৃদু পোড়া স্থানে মধুর প্রলেপ দিলে দ্রুত সেরে ওঠে। মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিনাশক শক্তি রয়েছে। এছাড়া প্রদাহও কমাতে পারে।

ফোসকা ফাটানো যাবে না: ফোসকা চোখে পড়লে ফেটে ফেলতে ইচ্ছে হয়। ফোসকাকে তার মতো থাকতে দিতে হবে। এটা সময়মত নিজ থেকে ফেটে যাবে। ফেটে ফেললে ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে। তবে ফোসকাকে উদ্বেগজনক মনে হলে চিকিৎসকের কাছে চলে যেতে হবে।

ব্যথানাশক ওষুধ: পোড়া স্থানে ব্যথা অনুভব করলে ওভার-দ্য-কাউন্টার (যেসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ে না) ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন, যেমন- আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন। অবশ্যই বয়স অনুসারে সঠিক ডোজে ব্যবহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত ধারণা না থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

যা ব্যবহার করা যাবে না

পোড়া স্থানে মাখন, তেল, ডিমের সাদা অংশ ও টুথপেস্ট লাগাবে না। এসবকিছু ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলে জাতীয় ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসবের প্রয়োগে পোড়া স্থানের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। মাখন তাপ ধরে রাখে ও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটাতে পারে। তেলও তাপ ধরে রাখে, এমনকি নারকেল তেলও। ডিমের সাদা অংশ লাগালে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ও অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের ঝুঁকি আছে। টুথপেস্ট ত্বককে উক্ত্যক্ত করার পাশাপাশি ইনফেকশনের উপযোগী করে তোলে।

যখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

ফার্স্ট ডিগ্রি বার্নের চিকিৎসা ঘরে করলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বললেই চলে। তবে সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নের চিকিৎসা ঘরোয়া উপায়ে করলেও বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন আছে, কারণ ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যখন চিকিৎসক দেখাবে-

* পোড়া স্থানের ডায়ামিটার ৩ ইঞ্চির বেশি হলে।

* মুখমণ্ডল, হাত, নিতম্ব ও কুঁচকিতে পুড়ে গেলে।

* পোড়া স্থানের যন্ত্রণা অসহনীয় হলে বা দুর্গন্ধ ছড়ালে।

* উচ্চ মাত্রায় জ্বর আসলে।

* যদি মনে করেন যে থার্ড ডিগ্রি বার্ন হয়েছে।

* যদি পোড়ার মাত্রা বুঝতে না পারেন।

* সবশেষ টিটেনাস শট নিয়েছেন ৫ বছরের বেশি হলে।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.কান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাদিবস সবিশেষদেহ ও মনবাতিঘরবিশেষ রচনাসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়- লাইভ আলোচনা

করেছে Shaila Hasan মার্চ ৫, ২০২৩

সুরাইয়া নাজনীন:

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “close the care gap” অর্থাৎ‘ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। ‘ক্যান্সারমানেইমৃত্যু নয়’ এই বিষয় ধরে রোদসী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে  ফেসবুক লাইভ আলোচনা। রোদসীর সম্পাদক ও প্রকাশক সাবিনা ইয়াসমীনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। দুজন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম ও সহকারী অধ্যাপক ডা.তন্নিমা অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফার্মাসিস্ট স্বাগতা সরকার লোপা-

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার মানেই কি মৃত্যু? আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ধরে নেয়া হয় ক্যান্সার হলেই সব শেষ- এ  ধারণা নিয়ে কিছু বলুন?

রওশন আরা বেগম: ক্যান্সার হলেই যে মৃত্যু নিশ্চিত তেমনটি নয়।আর মৃত্যুর কথা তো আমরা কেউ বলতে পারিনা। দেখতে  হবে ক্যান্সারের স্টেজ কোন পর্যায়ে আছে। স্টেজ ১ হলে ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে আবার ২ হলে ৭০ শতাংশ আবার স্টেজ ৩ হলে ৫০  শতাংশ। এটা আসলে নির্ভর করে রোগীর শারীরিক কন্ডিশনের ওপর। স্টেজ বেশি হলে সারভাইবাল কমে যায়।তবে মৃত্যু  অবধারিত এমনটি নয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার হলে একজন মানুষ কীভাবে বুঝবে?

তন্নিমা অধিকারী: ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ আছে সেগুলো দেখে আঁচ করা যেতেপারে।  যেমন কিছু কিছু ক্ষত হলে অনেক সময় সারতে চায়না, তিন-চারসপ্তাহ ধরে থাকে। আবার শরীরের কোনো কোনো জায়গায় চাকা কিংবা পিন্ডের মতো দেখা দিলে আবার তা যদি খুব দ্রুত  বেড়ে যায় তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। অস্বাভাবিক রক্তপাতও চিন্তার বিষয় হতে পারে। যেমন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে, মাসিকের সঙ্গে অস্বাভাবিক রক্ত গেলে, স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশার পর রক্ত গেলে। আবার শরীরে আঁচিলের সংখ্যা বেড়ে  গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। কিন্তু বলে রাখা ভালো এসব লক্ষণ দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হয়েছে তেমনটি ভাবারও কারণ নেই। একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন কী কারণে এসব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী কি এর ভয়াবহতা নির্ভর করে?

রওশন আরা বেগম: ক্যান্সারের স্টেজ ভেদে এর ভয়াবহতা নির্ভর করে। আবার চিকিৎসাও ভিন্ন হয়ে যায়। অনেক সময় শুরুর দিকে ধরা পড়েনা সেজন্য উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। কিছু ক্যান্সার আছে কেমো সেনসিটিভ সেগুলো কেমোথেরাপি দিলে ভালো হয়ে যায়, আবার কিছু ক্যান্সারের জন্য রেডিওথেরাপি দরকার হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কি নারী-পুরুষের কোনো প্রভাব আছে?

তন্নিমা অধিকারী:  হ্যাঁ, ব্রেস্ট, জরায়ু আর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে নারীরা। ব্রেস্ট ক্যান্সারপুরুষেরও হয় তবে তা ১  শতাংশের মতো। প্রোস্টেড ক্যান্সার পুরুষের হয়। আমাদের দেশে অতিমাত্রায় পান-জর্দা খাওয়ার কারণে মুখের ক্যান্সার বেশি হয়। আবার ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন: ক্যান্সার কিংবা বড় কোনো রোগ হলে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই কিন্তু  এক্ষেত্রে একজন ফার্মাসিস্টও বড় ভুমিকা পালন করতে পারে সেটা কীভাবে?

স্বাগতা সরকার লোপা: রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যকার একটা ভুমিকা পালন করে ফার্মাসিস্টরা। অনেক সময় ক্যান্সারের  মেডিসিনে অনেক রকম পার্শ্ব ¦প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা কাউন্সেলিং করে থাকেন। ওষুধের ডোজের ক্ষেত্রেও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকরাই প্রেসক্রাইব করে থাকেন, সেই মোতাবেক ফার্মাসিস্টরা রোগীর কাউন্সেলিংয়ের কাজটা করেন। যেমন কেমোথেরাপি বেশ ব্যয়বহুল আমরা সেক্ষেত্রে অ্যাড মিক্সিং করি।

সাবিনা ইয়াসমীন: নারীরা কোন বয়স থেকে সচেতন তার চিন্তাটা করবে?

রওশন আরা বেগম: আসলে সচেতনতার কোনো বয়স নেই। আমরা স্কুল-কলেজে গিয়েও সচেতন তার বিষয়টি নিশ্চিত করি। তারা  যেন জানতে পারে কীভাবে ব্রেস্ট চেক করতে হয়। কখনই বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে রুটিন মাফিক নিয়ম করে ৩০ বছর  থেকেই সচেতন হওয়া খুব দরকার। বিশেষ করে মাসিক শেষ হওয়ার পর ব্রেস্ট চেক করতে হয়।তাছাড়া আর একটু নিশ্চিত হওয়ার ভায়া  টেস্ট করাটাও জরুরি।

সাবিনা ইয়াসমীন: আপনার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের মানুষ কতটুকু সচেতন?

তন্নিমা অধিকারী: আগের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে তা শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশ  তো আর শহরকেন্দ্রিক নয়। তবে একটা জিনিস জেনে রাখা ভালো দেশের প্রত্যেকটা উপজেলাতে ভায়া টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে।  সেটা সিস্টাররাই করতে পারেন। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের জানা এবং জানানো ভীষণ প্রয়োজন। এখানে সরকার এবং গণমাধ্যমের বেশ ভূমিকা রয়েছে।তবে আরও একটা জিনিস আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমাদের লাইফস্টাইলের পরিবর্তন করতে হবে।  এখন আমরা স্যানিটারি লাইফ লিড করি। যেমন – সারাদিন বসে কাজকর্ম করা,  হাঁটাচলা, ব্যায়াম খুব কম হয়,  এগুলো বাড়াতে হবে। খাওয়া-দাওয়ায় শাকসবজি সতেজ জিনিস বেশি খেতে হবে। ফাস্টফুড বাদ দিতেহবে।

সাবিনা ইয়াসমীন: অনেকেই ধারণা করেন কেমোথেরাপি দিলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, রোগীর জন্য ধারণ করাও খুব কষ্টসাধ্য। এ বিষয়ে কিছু বলুন

স্বাগতা সরকার লোপা: আজকাল শুধু নয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, সার্জারি, টার্গেটেড থেরাপিও দেয়া হয়। তবে কেমোথেরাপি দিলেই যে রোগীর খারাপ কিছু হবে তেমনটি নয়। কোন রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা কার্যকর এটা চিকিৎসকরা সঠিকভাবেই প্রেসক্রাইব করেন। তবে ওই যে আমি আবার বলব, ক্যান্সার কোন স্টেজে ধরা পড়ল সেটার ওপরই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। শেষের দিকে ধরা পড়লে কেমোতেও কাজ হয় না তখন পেলিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট দিতে হয়।

সাবিনা ইয়াসমীন:  রোদসী লাইভে ক্যান্সার বিষয়ক অনেক কথাই উঠে এসেছে। প্রত্যাশা রাখি শ্রোতা, পাঠক সবাই উপকৃত হবেন এই লাইভের মাধ্যমে। রোদসী লাইভে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

অতিথি বৃন্দ: রোদসীকে ধন্যবাদ। সব শ্রোতা ও পাঠকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

  • অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম

         এমবিবিএস, এমপিএইচ, এমফিল, ডিএমইউ, এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি)

         অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি বিভাগ।

          জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

  • ডা তন্নিমা অধিকারী

         এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি)

         সহকারী অধ্যাপক

         রেডিওথেরাপি বিভাগ

          ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

  • স্বাগতা সরকার লোপা

          ডেপুটি ম্যানেজার

          ফার্মেসি

          এভার কেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।  

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.কান পেতে রইগ্রুমিংজীবনযাত্রাদেহ ও মনবিশেষ রচনাসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

দেশেই সম্ভব ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা

করেছে Shaila Hasan মার্চ ২, ২০২৩

সাধারণ মানুষের ধারণা ক্যান্সার মানেই মরণ-ব্যাধি। বাস্তবে তা কিন্তু নয়। সঠিকসময়ে, নির্ভুল ডায়াগনোসিস ও উপযুক্ত  চিকিৎসায় অনেক ক্যান্সারই সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। লিখেছেন অধ্যাপক ডা. মো.সালাহউদ্দীন শাহ।

সারাবিশ্বেরমতো ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশেও উদযাপন করা হয়েছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর এই দিনটি পালন করা হয়। গ্লোবোক্যান ২০২০-এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১ কোটি ৯০   লাখের মতো মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছিল। এরমধ্যে নন হজকিন ও হজকিনলিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, মায়েলোমাসহ রক্তের  বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। একই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে এক বছরে নতুন প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়। যার মধ্যে সাত হাজারের বেশি লোক রক্তের বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এবছর এই  দিনটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “ক্লোজ দ্যা কেয়ার গ্যাপ”  অর্থাৎ ক্যান্সার চিকিৎসা সেবায় কোনো ফাঁক রাখা যাবেনা। প্রতিটি মানুষই সমানভাবে এই  চিকিৎসা সেবা পাওয়ারঅধিকার রাখে। আর এভাবেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ক্যান্সারকে জয় করবএবং ক্যান্সার মুক্ত  পৃথিবী গড়ে তুলব।

ক্যান্সার সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের জানা থাকা দরকারঃ

– সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করে, ক্যান্সার হলো তার ২য় বৃহত্তম কারণ।

– প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়নের মতো মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে।

–  শতকরা ৪০ শতাংশেরও বেশি ক্যান্সারজনিত মৃত্যুকে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি-  শুধু কিছু অভ্যাস পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে। যেমন ধূমপান ও মদ্যপান পরিত্যাগ করতে হবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।   নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।

– ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি নিয়মিত ক্যান্সারের কিছু রুটিন স্ক্রিনিং টেস্টের  মাধ্যমে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় সম্ভব হয়ত সঠিক চিকিৎসা নেয়া যাবে।

– স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশেরও বেশি।

– ক্যান্সার প্রতিরোধের সঠিক পরিকল্পনা, প্রাথমিক ভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে  আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি।

– ক্যান্সার চিকিৎসায় পৃথিবী ব্যাপী বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ১.১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারলে এই অর্থ স্বল্প  ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যেত।

ক্যান্সার কী?

মানুষের শরীরে যে কোষগুলো রয়েছে সেগুলো অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক ভাবে যখন বৃদ্ধি পায় তখন কোষভেদে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়  এই কোষগুলো লাম্প বা পিন্ড তৈরি করে যাকে টিউমার বলে। আর রক্তের ক্ষেত্রে রক্তের   কোষগুলো সংখ্যায় অপরিপক্বভাবে বৃদ্ধি পায়। এই ক্যান্সার কোষগুলো রক্ত ও লসিকা বা লিমফেটিক সিস্টেমের মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে   ছড়িয়ে পড়ে। কখনও টিউমার গুলো হরমোন তৈরি করে যা শরীরের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত করে।

ক্যান্সারের ধরনগুলো সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়ঃ

-বিনাইন

-টিউমার

-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এবং

-প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থা।

বিনাইন টিউমার সাধারণত জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়না। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পারিপার্শ্বিক টিস্যুতে  ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে মৃত্যু ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থা পরবর্তীতে ক্যান্সার হতে পারে। কাজেই প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।

ক্যান্সারের ধরনগুলো কে আমরা সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ

-কার্সিনোমা

-সারকোমা

-লিম্ফোমা

-মাইলোমা এবং

-লিউকেমিয়া।

নন হজকিন ও হজকিনলিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, মায়েলোমা রক্তের ক্যান্সারের অন্তর্গত। রোগের ঝুঁকি অনেকটাই নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন ও পর্যায়ের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগনির্ণয় সম্ভব হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তের  ক্যান্সার নিরাময় করা যায়।

ক্যান্সার হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্যান্সার আমরা কিছু অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস ও   জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারি। ক্যান্সারের কিছু কারণ রয়েছে যা আমরা পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি  যেমনঃ

– মদ্যপান পরিত্যাগ

– শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

– সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ

– নিয়মিত ভাবে শরীরচর্চা করা

–  ধূমপান পরিত্যাগ করা

–  অনিয়ন্ত্রিত ভাবে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন ব্যবহার করা

– পেশাগত কারণে কেমিক্যাল ডাইয়ের সংস্পর্শে আসা যেমনঃ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করেন

– বিভিন্ন ধরনের ইনফেশনের জন্যও ক্যান্সার হতে পারে যেমনঃ হেপাটাইটিস বি, সি ও এইচ আই ভি ভাইরাসজনিত ইনফেকশন

ক্যান্সার হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে যা কিনা পরিবর্তন করা যায়- বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের কিছু জেনেটিকপরিবর্তন  ঘটে  ফলে পরবর্তীতে ক্যান্সার দেখা দেয়।

– ক্যান্সার উৎপাদনকারী কার্সিনোজেন যা মানবশরীরের জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার তৈরি করে।

– কিছু মানুষ দুর্ভাগ্যক্রমে জেনেটিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ফলে পরবর্তীতে যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আবার শরীরের  দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণেও ক্যান্সার হতেপারে।

ক্যান্সার হলে শরীরে কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে?

ক্যান্সারের প্রকারভেদে শরীরের উপসর্গও ভিন্ন ভিন্ন হতেপারেঃ

– হঠাৎ করে শরীরে অস্বাভাবিক লাম্প বা পিন্ড দেখা দিতে পারে

– কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঢোক গিলতে অসুবিধা- এমন সমস্যাও ক্যান্সারের প্রাথমিক কারণ হতে পারে

– আবার হঠাৎ করে বাথরুমের ধরণ পরিবর্তন হতে পারে

– শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতেপারে

– হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমা শুরু হতে পারে

– অবসাদ, দুর্বলতা, মাংসে ও হাড়ের মধ্যে কখনও কখনও ব্যথা দেখা দিতে পারে

– শরীরে নতুন নতুন মোল অথবা মোলের ধরন পরিবর্তন হতে পারে

– হঠাৎ করে প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দিতে পারে

– অস্বাভাবিক ভাবে স্তনের পরিবর্তন হওয়া

– খাওয়ার রুচি না থাকা ও হজমে অসুবিধা হওয়া

– শরীরের কোথাও ঘা হয়েছে কিন্তু শুকাচ্ছে না

– রাত্রে অস্বাভাবিকভাবে শরীর ঘেমে যাওয়া

ক্যান্সার প্রতিরোধ

এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্যান্সার আমরা প্রতিরোধ করতে পারি- বিষয়ক ক্যান্সার গুলো কমিয়ে আনার মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের মাধ্যমে আমরা অনেক ক্যান্সার নির্মূল করতেপারি যেমনঃ Colorectal Cancer, Breast Cancer, Cervical Cancer, Oval Cancer  জাতীয়ভাবে আমরা Vaccination, testing and screening  সম্পর্কে জনগনকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করতে পারি।

ক্যান্সার নির্ণয়:

  • রুটিন রক্ত পরীক্ষা, ক্যান্সার  screening test, অস্বাভাবিক পিন্ড বা Tumar এর Biopsy করে ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারি।
  • Bone Marrow Examination, Immunohistochemistry, Cytochemistry, cytogenetic, Molecular Test, Next generation Sequencing, DET- CT Scan
  • USG, X-ray, CT-Scan, MRI

এসব পরীক্ষা ক্যান্সারের ধরন ভেদে যথাসময়ে করতে পারলে ক্যান্সার নির্ণয় সহজ হবে। ক্যান্সার   রোগের আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, হরমোনথেরাপি, জিনথেরাপি এসব চিকিৎসা ব্যবস্থার   মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার নির্মূল করতে পারি। প্যালিয়েটিভ কেয়ার- অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি নতুন সংযোজন। রক্তের   ক্যান্সারের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই হচ্ছে। তবে এ রোগের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা বিস্তরভাবে দেয়ার জন্য   জাতীয় গবেষণা ও চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

অধ্যাপক ডা. মো.সালাহউদ্দীন শাহ

চেয়ারম্যান, হেমাটোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মোবাইল: ০১৯২২১১৭৬৭০

ই-মেইল: ংযধয.ভপঢ়ং@মসধরষ.পড়স, ংযধযথফৎ@নংসসঁ.বফঁ.নফ

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
গ্রুমিংদেহ ও মনভালো থাকার ভালো খাবাররোদসীর পছন্দসচেতনতাস্বাস্থ্য

বিয়ের আগে ফিট থাকতে

করেছে Shaila Hasan ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩

রেহনুমা তারান্নুম:

নারী হোক বা পুরুষ, যেকোনো মানুষের জীবনে বিয়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ মুহূর্ত। আর বিয়ের দিনের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বর ও কনে।বিয়ের আগে বর-কনের চিন্তা একটু বেশি করতে হয়। খাবারদাবার, পোশাক, গহনা থেকে শুরু করে আরও কত-কী। বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণ হলেই শুরু হয় বর-কনের নানা রকম দায়িত্ব। এই সময় বিয়ের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বাড়তি চিন্তায় অনেকেই নিজের খাবারদাবার বা ডায়েটের কথা ভুলে যায়। আবার কেউ নিজেকে তাড়াতাড়ি স্লিম দেখাতে গিয়ে একেবারেই খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দেয়। যেটা মোটেও করা উচিত নয়।

বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে যদি হাতে কিছু সময় থাকে, তবে সেই সময়ের মধ্যেই নিজের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন এনে নিজেকে করতে পারো ফিট এবং সুন্দর। বিয়ের এই সময়টাতে বর-কনের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং এর প্রভাব পড়ে ত্বকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা করলে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়তে পারে। ত্বক সুন্দর রাখতে তাই দুশ্চিন্তা কম করতে হবে এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। প্রচুর পানি পান করে ত্বককে ডিহাইড্রেট রাখতে হবে। সবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। এতে ত্বক সজীব দেখাবে।

এছাড়া বিয়ের সময়টাতে অতিরিক্ত চিন্তার কারণে খাওয়াদাওয়ার অনিয়মে শরীরে ক্যালরি কম সঞ্চয় হয়। তাই বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন সকালে একমুঠো যেকোনো ধরনের বাদাম খেলে পুষ্টিও পাওয়া যাবে। সঙ্গে ক্যালরিও সঠিক মাত্রায় শরীর গ্রহণ করতে পারবে।

-বিয়ের আগে বর ও কনের অবশ্যই একটা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের নিয়ম করা উচিত। বাইরের খাবার বা ভাজাপোড়া খেয়ে যেন পেটের পীড়া না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এই সময় ডায়েট চার্টে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং সবজি ও ফল রাখতে হবে। শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এমন খাবার ও রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।

-বিয়ের আগে যদি হাতে একমাস সময় থাকে, তবে একমাস আগে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করো। একমাসে মাঝেমধ্যে একদিন বেশি খেয়ে ফেললেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। ভাত ও রুটির পরিমাণ একটু কমিয়ে দাও এবং সালাদ ও সবুজ শাকসবজি বেশি করে খাও। ব্যায়াম করার সময় একটু বাড়িয়ে দাও।

-নিজের পছন্দমতো সবজি দিয়ে তৈরি জুস খেতে পারো। ডায়েট সঠিক রাখতে গেলে গাজর, বিট রুট এবং টমেটো সব থেকে ভালো অপশন। এসময় স্কিন গ্লোর জন্যও এটি বেশ উপকারী। বাইরে খাওয়াদাওয়া করলে সঙ্গে সালাদ খাওয়ার চেষ্টা করো। ডুবোতেলে ভাজা খাবার থেকে বিরত থাকো।

-সারাদিন বাইরে থাকতে হলে ড্রাই ফ্রুটস সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। সেগুলো হেলদি স্ন্যাকস হিসেবে ভালো হবে। জাংক ফুড খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। বাইরের কোনো খাবার খেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করো। সারাদিনে খুব বেশি চা বা কফি না খাওয়াই ভালো।

-চিয়া সিডের পানি প্রতিদিন পান করার চেষ্টা করো। চিয়া সিড ওমেগা থ্রির সব থেকে ভালো উৎস, এটি অল্প পরিমাণে ফ্যাট যেমন আয়ত্তে রাখে, তেমনই স্কিনের সঙ্গে শক্তি বাড়াতে কাজ করে।

-খেতে ভালো লাগলে এক বাটি পাকা পেঁপে প্রতিদিন খেতে পারো। এটি দেহের কোষগুলোকে পুষ্টি প্রদান করে এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গে খাবার হজমেও সহায়তা করে।

-টক দই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। খাবারের সঙ্গে সঙ্গেই ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম দুটিই দারুণভাবে সরবরাহ করে। সে কারণে টক দই প্রতিদিন খেতে হবে।

-রাতে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করো।

-যদি ওজন কমানোর ডায়েট করতে চাও, তাহলে অবশ্যই চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। স্টার্চযুক্ত সবজি যেমন, আলু, ভুট্টা, মিষ্টি আলু কখনোই খাবে না। দুধ চা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা বদলে চিনি ছাড়া চা বা গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করো। এ ছাড়া রাতে কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি বাদ দিয়ে সবজি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ তালিকায় রাখো। পর্যাপ্ত পানি বা তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করো এবং অবশ্যই দিনে অন্তত ৩০ মিনিট রাখো শরীরচর্চার জন্য।

বিয়ের এক সপ্তাহ আগে খাও এই খাবারগুলো

তুমি ছেলে হও আর মেয়ে হও, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিয়ে জীবনে একবারই হয়। বিয়ে মানেই নতুন সঙ্গীর হাত ধরে নতুন জীবনে প্রবেশ। এই সময় সবারই টেনশন, স্ট্রেস, উত্তেজনা বেশি থাকে। বিয়ের মাস তিনেক আগে থেকে সবাই ডায়েট চার্ট মেনে চলো, নিয়মিত শরীরচর্চাও করো।

এর মধ্যে অনেক খাবার স্বাস্থ্যকর হলেও বিয়ের আগের এক সপ্তাহের টেনশন, স্ট্রেসের কথা মাথায় রেখে তা ডায়েট চার্টের বাইরে রাখার পরামর্শ দেন ডায়েটিশিয়ান ও মনোবিদেরা। জেনে নাও কোন খাবারগুলো রয়েছে এর মধ্যে।

০১. চুইংগাম:

বিয়ের ছবিতে সেলফি আদর্শ। সেলফি ফেস তৈরির জন্য অনেক ট্রেনারই চুইংগাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু যত চুইংগাম খাবে, তত শরীরে হাওয়া ঢুকে পেট ফাঁপবে। তাই বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকে চুইংগাম বন্ধ করো।

০২. ড্রাই ফ্রুট:

শুকনো ফল অবশ্যই অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ডায়েট চার্টে অবশ্যই রাখা উচিত। কিন্তু এর মধ্যে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। বিয়ের এক সপ্তাহ আগের টেনশনে ড্রাই ফ্রুট ওজন বাড়াতে পারে।

০৩. কপি:

বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকলিজাতীয় সবজির মধ্যে সেলুলোজের পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা হজমের সমস্যা করতে পারে। বরং শসাজাতীয় সবজি এই সময় বেশি করে খাও।

০৪. কফি:

এই সময় নিয়ম করে সময় মেনে ঘুমের খুব প্রয়োজন। স্ট্রেস কাটাতে তাই কফির ওপর নির্ভর করবে না। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়বে। বেশি কফি খেলে অ্যাসিডিটিও হতে পারে।

০৬. কার্বনেটেড ড্রিংক :

অনেকেই ভাবে, ডায়েট সফট ড্রিংক এই সময় খাওয়া যায়। কিন্তু বিয়ের আগে সবাই ডায়েট চার্ট মেনে চলে। সফট ড্রিংকের মধ্যে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। পেটের মধ্যেও বুদবুদ কাটে সফট ড্রিংক। ওজনও বাড়বে, স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে।

০৭. জাংকফুড:

এ ব্যাপারে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। এই সময় স্ট্রেস বেশি থাকে। পিজা, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ মুড ভালো করবে ঠিকই, কিন্তু হজমের সমস্যায় পড়বে।

০৮. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার:

ভারতীয় মায়েরা মনে করে, বিয়ের আগে রোজ দুধ খাওয়া প্রয়োজন। এতে কমজোরি যেমন কাটবে, তেমনই রংও ফরসা হবে। কিন্তু ডায়েটিশিয়ানরা জানাচ্ছেন, এই সময় অনেক রকম টেনশন থাকে। দুধ থেকে হজমে সমস্যা হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারে ওজন বাড়ার প্রবণতাও দেখা যায়।

বিয়ের এক মাস আগে থেকেই নানা জায়গায় আইবুড়ো ভাত খাওয়া শুরু হয়ে যায়। সেই সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পেটও ভালো রাখা প্রয়োজন। এরপর আসে বিয়ের আগের দিন। সেদিন দুপুরে বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খাওয়া হয়। তাই খাবারের দিকে যথেষ্ট লক্ষ রাখা উচিত। দুপুরের খাবারকে তুমি না বলতে পারবে না। কিন্তু সারাদিনের ডায়েট তো তোমার হাতেই থাকে।

অত্যন্ত তৈলাক্ত খাবার খাবে না

শরীর সুস্থ রাখার প্রধান শর্তই স্বাস্থ্যকর ডায়েট। তাই বিয়ের আগের দিন ডায়েটে তেল ঝাল মসলা দেওয়া খাবারকে বাদ দাও। বিয়ের আগের রাতে এমনিই ঠিকঠাক ঘুম হয় না। তার ওপর ওদিন যদি এসব খাবার খাও, তাহলে তোমার শরীর খারাপ কে আটকায় বলো দেখি। বিয়ের দিন ভালো থাকতে হলে বিয়ের আগেরদিনও তোমাকে সুস্থ থাকতে হবে।

কফি ও কোল্ড ড্রিংক খাবে না

কফি খেতে অনেকেই ভালোবাসে। শীতকালে আবার বাঙালি বাড়িতে কফি খাওয়ার একটা প্রচলন আছে। কিন্তু তুমি তোমার ডায়েট থেকে কফি বাদ দাও ওইদিনের জন্য। কারণ, কফি তোমার শরীরকে ডি-হাইড্রেটেড করে দিতে পারে। কোল্ড ড্রিংকও শরীরের জন্য খুবই খারাপ। তাই তুমি ফলের রস বা গ্রিন টি খেতে পারো।

দুধের প্রোডাক্ট

অনেকের চিকিৎসকই তাঁর ডায়েট থেকে দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিয়ে দেন। আমার নিজেরই সেসব খাওয়া বারণ। আমি টক দই, দুধ চা কিছুই খাই না। কিন্তু যারা খেতে ভালোবাসে, তারাও বিয়ের দিনের কথা মাথায় রেখে আগের দিন এসব খাবে না। কারণ, দুধ হজম হতে সময় নেয়। তাই ঠিকঠাক ঘুম না হওয়ার কারণে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

পর্যাপ্ত ফল খাবে

পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল খেলে তোমার শরীর এমনিই ভালো থাকবে। তুমি ব্রেকফাস্টে বা ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের মাঝামাঝি সময়ে ফল খেতে পারো। তোমার শরীর ভালো থাকবে। যেহেতুতুমি লাঞ্চ বাদ দিতে পারবে না, তাই কিছু করার নেই। ফলের রসও খেতে পারো।

সালাদ

ডিনারে ভাত বা রুটির বদলে চিকেন সালাদ কিংবা স্প্রাউটস সালাদ খেতে পারো।

পানি

পরের দিনও তোমাকে ফল ও জলের ওপরেই থাকতে হবে। এবং রাতে উল্টোপাল্টা খাওয়া তো হবেই। তাই আগের দিন শরীর ডিটক্স করা প্রয়োজন। সেই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেয়ে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে। যাতে বিয়ের দিন কোনোভাবেই ডিহাইড্রেশন হয়ে শরীর খারাপ না হয়ে যায়।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসমস্যাস্বাস্থ্য

স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে কী করণীয়?

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ২২, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

ঘুমের সময় নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া এমন অনেক সমস্যার সাথেই আমরা অনেকেই পরিচিত। ঘুমের মাঝে এই ব্যাঘাত, ঘুম পূর্ণতা পেতে বাধার সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় দিনের বেলায়ও সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ‘নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত’।

ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শরীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদরোগ সহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যদি শ্বাসনালী বাধাগ্রস্থ হয়, তবে ঘুমের মধ্যে সশব্দে নাক ডাকার শব্দ হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো নাক ডাকার ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যা। বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হল সবচেয়ে সাধারণ ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাধি। এই ধরনের অ্যাপনিয়া ঘটে যখন গলার পেশী মাঝে মাঝে শিথিল হয় এবং ঘুমের সময় শ্বাসনালী ব্লক করে। সারা বিশ্বে সাধারণত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুই থেকে চারজন এই ওএসএ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ ও নারীদের ৪.৪৯ ও ২.১৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে এর চিকিৎসা করা দরকার না হয় এটি আরও গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

লক্ষণ

কিছু লক্ষণ রোগীর নিদ্রার সময় দেখা দেয়। ফলে রোগী নিজেও বুঝতে পারেনা। কিন্তু ঘুমানোর সময় পাশে কেউ থেকে সাহায্য করতে পারে যাতে তারা লক্ষণগুলো পরীক্ষা করতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

-দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম

-জোরে নাক ডাকা

-হঠাৎ জেগে উঠার সাথে হাঁপাতে বা দম বন্ধ হয়ে যাওয়া

-মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া

-সকালে মাথাব্যথা

-মেজাজ পরিবর্তন যেমন বিষন্নতা বা বিরক্তি

-উচ্চ রক্তচাপ

ঝুঁকির কারণ

যে কারো অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। যাইহোক, কিছু কারণ যা তোমাকে এই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। যার মধ্যে রয়েছেঃ

-যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

-এক্ষেত্রে বয়সও একটি ফ্যাক্ট। ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা বেশি। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের টনসিল বা অ্যাডিনয়েড আকারে বড় হয়, তাদেরও হতে পারে।

-মুখ ও করোটির গঠনগত ত্রুটি থাকলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।

-যারা ধূমপান করে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

-আরেকটি কারণ হতে পারে জেনেটিক বা বংশগত। হার্ট ফেইলিওর, অ্যাজমা, স্ট্রোক ইত্যাদি এ রোগ বাড়িয়ে দেয়।

করনীয় ও প্রতিকার

স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরণ ও তীব্রতার উপর। অবস্থা যদি গুরুতর পর্যায়ে চলে যায় তবে সেক্ষেত্রে সিপিএপি মেশিন নামে একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। এটি ঘুমের সময় মুখ বা নাকে পরা একটি মাস্কের মধ্যে বাতাস পাম্প করে শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করে। আর যদি এটি হালকা পর্যায়ে হয়ে থাকে তবে নিজের কিছু লাইফ স্টাইল চেইঞ্জের মাধ্যমে এর প্রতিকার ব্যবস্থা নিজে নিজেই করা সম্ভব। যেমনঃ

-ওজন যদি বেশি হয় তবে তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

-নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সক্রিয় থাকা নিজের ভেতর বিদ্যমান থাকা লক্ষণগুলোকে উন্নত করতে পারে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ওজন রাখতে সাহায্য করতে পারে।

-ভালো ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। শুতে যাওয়ার আগে চারপাশের পরিবেশ শান্ত এবং ঘুমের উপযোগী করে তুলতে হবে। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া ও উঠার অভ্যাস করতে হবে।

-ধূমপান এবং অ্যালকোহল পানে অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।

-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোন ধরনের ঘুমের ঔষধ খাওয়া উচিৎ নয়। এগুলো স্লিপ অ্যাপনিয়াকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জীবনযাত্রাদেহ ও মনসচেতনতাসুস্থ মনস্বাস্থ্য

সাঁতারের যত উপকারিতা

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১৯, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

কথায় আছে, ‘একটি ফিট শরীর, একটি শান্ত মন এবং ভালোবাসায় পূর্ণ একটি ঘর- এই জিনিসগুলো কেনা যাবেনা, সেগুলো অবশ্যই অর্জন করতে হবে’। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুক্ষণ শরীরচর্চা করা আবশ্যক। আর সেই শরীরচর্চার মাঝে যদি সাঁতারকে অন্তর্ভূক্ত করা যায় তাহলে তো পুরো ষোলকলা পূর্ণ। জেনে নাও সাঁতারের যত উপকারিতার দিকসমূহ।

বিশেষজ্ঞরা একজন প্রাপ্তবয়স্ককে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মাঝারি কার্যকলাপ বা ৭৫ মিনিটের জোরালো কার্যকলাপ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি থেকে উন্নত মেজাজ পর্যন্ত, ওয়াটার ওয়ার্কআউট সুস্থতার জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। তোমার ফিটনেস লেভেল যাই হোক না কেন, সাঁতার অনেক সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। পুরো শরীর এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের কাজ করার একটি চমৎকার একটি উপায় হলো এই সাঁতার। এটি যে সব সুবিধা প্রদান করে থাকেঃ

-গবেষণায় দেখায় যে, সাঁতার দীর্ঘজীবী করতে সাহায্য করতে পারে। ২০১৭ সালের ইংল্যান্ডের দ্বারা পরিচালিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, সাঁতারুদের প্রারম্ভিক মৃত্যুর ঝুঁকি ২৮ শতাংশ কম এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে যারা সাঁতার কাটেনা তাদের তুলনায় ৪১ শতাংশ কম মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল।

-সাঁতারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি সত্যিকার অর্থেই পুরো শরীর, মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাজ করে। এর মাধ্যমে-

#শরীরের চাপ ছাড়াই হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে

#পেশী টোনিং করে

#শক্তি তৈরি করে

#সহনশীলতা তৈরি করে

-অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে চাইলে এর বিকল্প কিছুই নেই। হার্ভাড মেডিকেল স্কুল অনুসারে, একজন ১৫৫ পাউন্ড ব্যক্তি এক ঘন্টায়, প্রায় ৪৩২ ক্যালোরি সাঁতার কাটার মাধ্যমে পোড়াতে পারে যেখানে মাঝারি গতিতে  হাঁটার মাধ্যমে বার্ন হয় ২৬৬ ক্যালোরি। ২০২১ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৬ সপ্তাহে সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরের চর্বি এবং বিএমআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

-অ্যারবিক ব্যায়ামের অন্যান্য রুপের মতো সাঁতার কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস উন্নত করতে পারে। সাঁতারের ফলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হতে পারে এবং ফুসফুস অক্সিজেন ব্যবহারে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও, এটি হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের অন্যান্য মার্কারের উন্নতির সাথে যুক্ত হয়েছে।

-বাত, আঘাত, অক্ষমতা সহ অন্যান্য সমস্যা যা উচ্চ প্রভাব ব্যায়ামকে কঠিন করে তোলে; তাদের জন্য সাঁতার হতে পারে একটি নিরাপদ ব্যায়ামের বিকল্প। এটি ব্যথা কমাতে এমনকি আঘাত থেকে পুনরুদ্ধারের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জয়েন্টের ব্যথা এবং দৃঢ়তা সাঁতারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস হওয়ার প্রমান পাওয়া গেছে।

-ইনডোর পুলের আর্দ্র পরিবেশ হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সাঁতারকে একটি দূর্দান্ত কার্যকলাপ করে তোলে। শুধু তাই নয়, খেলার সাথে যুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম যেমন শ্বাস ধরে রাখা, ফুসফুসের ক্ষমতা প্রসারিত করা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে সাহায্য করতে পারে।

আবার কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, পুলে ব্যবহৃত ক্যামিকেল হাঁপানির ঝুঁকি বাড়াতেও পারে। তাই যদি হাঁপানির প্রবলেম থাকে তবে চিকিৎসকের সাথে আগে পরামর্শ করে নেয়া ভাল।

-সমস্ত ব্যায়াম একটি মেজাজ বুস্টার হতে পারে। এক্ষেত্রে ওয়াটার ওয়ার্কআউট একটি ভাল মেজাজ বজায় রাখতে পারে। মস্তিষ্কে সুখের রাসায়নিকের মুক্তির কারণে, বিশেষ করে এন্ডোরফিন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নিয়মিত সাঁতার কাটা চাপ কমাতে পারে, উদ্বেগ কমাতে পারে এবং হতাশার বিরুদ্ধে লরাই করতে পারে।

-উন্নত ঘুম হল যে কোন ব্যায়ামের রুটিনে লেগে থাকার একটি সুবিধা। ব্যায়াম শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি পুনরায় সেট করতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান ছন্দ পুনরুদ্ধার করে। এর মধ্যে সাঁতার হল একটি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনিদ্রার সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। ইনসমনিয়ার মতো সমস্যায় যারা ভুগে থাকে, তাদের জন্য নিয়মিত সাঁতার কাটা ভালো একটি চিকিৎসা। এতে ঘুম ভালো হবে।

-বাচ্চাদের জন্য সাঁতার হতে পারে দারুন এক ওয়ার্কআউট। এটি হতে পারে তাদের জন্য একটি মজার ক্রিয়াকলাপ।

সতর্কতা

সাঁতার বেশিরভাগ মানুষের জন্যই নিরাপদ। তবে যেকোন ওয়ার্কআউটের মতোই সাঁতারের সাথে যুক্ত কিছু ঝুঁকি রয়েছে। তুমি যদি আহত হও বা কিছু চিকিৎসা শর্ত থাকে তবে সেক্ষেত্রে সাঁতার কাটার আগেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়াই ভালো। সাধারণভাবে, যখনই একটি নতুন ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করবে তখন তোমার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা একটি ভাল ধারণা। এছাড়াও, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যাযুক্ত লোকদের জন্য ক্লোরিনযুক্ত পুলের পানিতে নামা আরও সমস্যার সৃষ্টি করবে। সাঁতার কাটার আগে সবসময় পুলে বর্ণিত নির্দেশাবলি এবং লাইফগার্ডের নিয়মাবলি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
চলন বলনজীবনজীবনযাত্রাদেহ ও মনবিদেশভালো থাকার ভালো খাবারস্বাস্থ্য

বয়স? সে তো শুধুই একটি সংখ্যা!

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১১, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

বর্তমানে পুরো দুনিয়ায় কোরিয়ান ড্রামা, মুভি, মিউজিক এবং টিভি শো’র ক্রেজ এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেখে মানুষ বিস্মিত হয়। অনন্য সাংস্কৃতিক দিক ছাড়াও তারা নিখুঁত ত্বক এবং ফিট শরীরের জন্য সুপরিচিত। কোরিয়ান মহিলাদের বিশেষ করে একটি দর্শনীয়ভাবে ফিট ব্যক্তিত্ব রয়েছে যা সারা বিশ্বের সকলকে কৌতুহলী এবং বিস্ময়কর করে তুলেছে। কখনও মনে জেগেছে কি, তাদের দেখতে এমন কী করে হয়? কিইবা তাদের রহস্য? আসো একসাথে আজ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিই।

এশিয়ান সংস্কৃতিতে খাবারের অনেক কদর রয়েছে। এমনই একটি এশিয়ান দেশ যেখানে মানুষ খেতে খুবই ভালোবাসে তা হল কোরিয়া। শুনতে অদ্ভূত শোনালেও এটাই বাস্তব সত্য। ফুলকোর্স ভারী খাবার খাওয়া সত্ত্বেও, তাদের শরীর ফিট এবং স্লিম থাকে যা অনেকের জন্য স্বপ্ন। কোরিয়ান খাবার এবং জীবনধারা ওজন বজায় রাখতে এবং শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা তাদের খাবার এবং ডায়েট সম্পর্কে খুব নির্দিষ্ট এবং কঠোর। যে খাবার গ্রহণ করে তাতে ভারসাম্যতা নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা কার্বোহাইড্রেট থেকে ফ্যাট থেকে প্রোটিন পর্যন্ত গ্রহণ করে। তারা ওজন বাড়ায় না কারণ সবকিছুই সুষম অনুপাতে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইলের ব্যাপারে কিছু জেনে নিইঃ

শাকসবজি প্রাধান খাদ্য

অ্যাপেটাইজার, মেইন কোর্স, স্ন্যাকস অথবা যে কোন ঐতিহ্যগত কোরিয়ান খাবার উপভোগ করতে যাও না কেন, প্রথমেই টেবিলে বিস্তৃত পরিসরে শাকসবজির উপস্থিতি দেখতে পাবে। কোরিয়ান লোকেরা তাদের শাকসবজি পছন্দ করে, যা তাদের স্লিম এবং ফিট থাকার পিছনে অন্যতম প্রাধান কারণ। প্রদত্ত যে বেশিরভাগ শাকসবজি আঁশযুক্ত, স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরি যা ওজন কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে। শাকসবজিতে থাকা ফাইবার তৃপ্তি বোধ করতে সাহায্য করে ও অন্যান্য উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে।

ফার্মেন্টেড বা গাঁজানো খাবারের অন্তর্ভুক্তি

তাদের সমস্ত খাবারের সাথে একটি সাইট ডিশ থাকে, যা সাধারণত গাঁজন করা খাবারের একটি সিরিজ। কিমচি, সেই গাঁজনযুক্ত মশলাদার বাঁধাকপি যা বিশ্বব্যাপী ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জাতীয় খাবারগুলো অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য দূর্দান্ত এবং তা হজমেরও উন্নতি করে। এটি রোগক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করার পাশাপাশি ওজন কমাতেও কাজ করে। অনেক ধরনের কিমচি রয়েছে এবং সবকিছুই বাঁধাকপি থেকে তৈরি হয়না। মূলা, শসা সহ প্রায় যেকোন সবজি দিয়েই হয়ে উঠতে পারে কিমচি।

সামুদ্রিক খাবার

কোরিয়াকে তিন দিকে সাগর ঘিরে রেখেছে। সামুদ্রিক খাবার কোরিয়ার অন্যতম প্রধান খাবার। তাদের দুর্দান্ত চুল, ত্বক এবং স্বাস্থ্যের পিছনে একটি প্রধান কারণ হল সামুদ্রিক খাবারের প্রতি তাদের ভালোবাসা। গ্রিলড ম্যাকেরেল, স্কুইড, অক্টোপাস তাদের অনেক প্রিয় আইটেম। চর্বিযুক্ত মাছ ব্যতীত, যা স্বাস্থ্যের জন্য দূর্দান্ত; সামুদ্রিক শৈবাল একটি সাধারণ কোরিয়ান খাদ্য আইটেম যা তারা স্যুপ থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুতে অন্তর্ভুক্ত করে। ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ, সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে প্রচুর ফাইবার আছে, যা হজমের জন্য দূর্দান্ত এবং তোমাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্নতা অনুভব করে।

ঘরে তৈরি খাবারের প্রাধান্য

কোরিয়ান মহিলাদের ফিট শরীরের পিছনে মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল তাদের খাবারের পছন্দগুলো। তুমি যখন ওজন কমাতে মনোস্থির করো সেক্ষেত্রে ঘরে তৈরি খাবারের চেয়ে ভালো আর কিছুই নেই। প্রক্রিয়াজাত, অস্বাস্থ্যকর খাবার, ফাস্টফুড- এগুলো শুধুমাত্র ওজন বাড়াতে দায়ী নয়, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। কোরিয়ানরা বাইরের পরিবর্তে ঘরের খাবারের প্রতি বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাদের শরীরের জন্য ভাল খাবার সম্পর্কে তারা সচেতন এবং সেই অনুযায়ী তারা সেভাবে খাবার নির্বাচন করে থাকে।

চিনি কম, উপকারিতা বেশি

কোরিয়ান খাবার বেশিরভাগই মশলাদার এবং টক। তারা তাদের খাদ্য তালিকায় ভারী মিষ্টি অন্তর্ভূক্ত করেনা, তাদের মিষ্টান্নগুলো ফলের রস, এক বাটি তাজা ফল বা মিষ্টি ভাতের পানীয়ের মতো হালকা। এগুলো শরীরের ওজন বাড়ায় না। বিখ্যাত কোরিয়ান ডেজার্টগুলোর মধ্যে পাটবিংসু সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। এটি চাঁচা বরফ দিয়ে তৈরি এবং এতে কোন কৃত্রিম রঙ নেই। এটি স্বাস্থ্যকর করতে তারা এতে প্রচুর ফল ব্যবহার করে।

সোডা কে না

তারা কোক এবং সোডা তেমন খায়না, তার পরিবর্তে প্রচুর চা খায়। বার্লি চা, যাতে অনেক কিছুই আছে। এটির স্বাদ অদ্ভুত তবে এটি একটি চিনিহীন চা। এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। এটি ঘুমের অভ্যাস উন্নত করতে, হজমে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালনেও কাজ করে।

হাঁটা, হাঁটা এবং হাঁটা

বেশিরভাগ কোরিয়ানরা হাঁটা পছন্দ করে। তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পাবলিক পরিবহণের পরিবর্তে তাদের পা ব্যবহার করতে পছন্দ করে। একটি সক্রিয় জীবনধারা নেতৃত্ব দেওয়া বেশিরভাগ কোরিয়ান মহিলাদের সুস্থ রাখে এবং তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে। তাদের জন্য দিনে ১০,০০০ পদক্ষেপ সম্পূর্ণ করা কোন বড় ব্যাপার নয়। আমরা সবাই জানি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন এটি আমাদের শরীরের ওজন এবং আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আসে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিপ্যারেন্টিংসচেতনতাস্বাস্থ্য

বেবী ম্যাসেজঃ ভালো না খারাপ?

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ১০, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

পরিবারে একটি নতুন শিশুর আগমন অনেক আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে আসে। শিশুটির পিতা-মাতা থেকে শুরু করে পরিবারের বয়োজৈষ্ঠ্য সকলেরই চোখের মণি হয়ে উঠে সে। কিন্তু প্রায়শই যে একটা ব্যাপার নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝে কিছুটা মতানৈক্য শুরু হয় তা হল শিশুকে ম্যাসেজ বা মালিশ করা নিয়ে। এটি ভালো না খারাপ তা নিয়ে চলে বিতর্কের। আজ আমরা এই সব কিছু নিয়েই জানবো।

নবজাতক শিশুকে ম্যাসেজ করা বিশ্বব্যাপী একটি প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আমাদের দেশে তো তা আরও ব্যাপক। বাচ্চার গোসলের ঠিক আগে তাদের রোদে শুইয়ে পুরো শরীরে তেল মালিশ করে নেয়া হয়। মৃদু স্ট্রোকে করা এই মালিশে জড়িয়ে থাকে আদর এবং ভালোবাসার ছোঁয়া। নিয়মিতভাবে শিশুকে  ম্যাসেজ করা তাদের আরও অনেক কিছু দেওয়ার একটি উপায়। আরও বন্ধন সময়, আরও সংবেদনশীল উদ্দীপনা, আরও স্বাস্থ্যকর বিকাশ। গবেষণা প্রকাশ করে যে, নিয়মিত স্পর্শ এবং ম্যাসেজ উন্নত শারীরবৃত্তিয়, জ্ঞানীয়, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের দিকে পরিচালিত করতে পারে। শিশুর প্রথম মানসিক বন্ধন দৈহিক যোগাযোগ থেকে তৈরি হয় এবং এগুলো পরবর্তী জীবনে মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। নবজাতকের সাথে স্পর্শই হলো আমাদের প্রথম ভাষা আর এই প্রেমময় স্পর্শ তাদের শক্তিশালী হতে এবং কম উদ্বেগ অনুভব করতে সাহায্য করতে পারে।

শিশুর ম্যাসেজের স্বাস্থ্য উপকারিতা

-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইনফ্যান্ট ম্যাসেজ (আইএআইএম) অনুসারে, শিশুর ম্যাসেজ রক্ত সঞ্চালন এবং পাচনতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করতে পারে

-হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস, ক্র্যাম্প, কোলিক, কোষ্ঠকাঠিন্য এর মতো পরিস্থিতি দূর করতে সাহায্য করে

-নিয়মিত মালিশ করা তাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে

-এর মাধ্যমে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে হ্যাপি হরমোন যেমন সেরোটোনিন এবং ডোপামিন বৃদ্ধি করে, যা শিশুকে আরও ভাল ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে

-নাক বন্ধ এবং দাঁতের অস্বস্তি দূর করে

-ভালো পেশীর সমন্বয় ও নমনীয়তা বিকাশে সহায়তা করে

-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

-ত্বকের গঠন উন্নত করে

এইতো গেল ম্যাসেজের উপকারী দিক।

তবে কিছু কিছু জিনিস বাচ্চার ভালোর জন্য সবসময় মনে রাখতে হবে। যেমনঃ

-বাড়িতে বাচ্চাকে ম্যাসেজ করার জন্য অনেক সময় অনেকেই এক্সট্রা লোক নিয়োগ করে থাকে। যিনি ম্যাসেজ করতে আসে তাদের প্যাটার্ন প্রায়ই রুক্ষ হয়, বাচ্চার বাহু এবং পা অতিরিক্ত প্রসারিত করার চেষ্টা করা হয়। এতে জয়েন্টগুলোর স্থানচ্যুতি বা এমনকি ফ্রাকচার হতে পারে। ফলস্বরুপ, ম্যাসেজ প্রায়ই একটি প্রশান্তিদায়ক অভিজ্ঞতার পরিবর্তে একটি চাপযুক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে উঠে। এগুলো পরিহার করতে হবে।

-কখনও কখনও শিশুর ম্যাসেজ করার জন্য ব্যবহৃত তেলগুলো ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এতে শক্তিশালী/ কঠোর পদার্থ সহ্য করার ক্ষমতা থাকেনা।

-শিশুর কানে তেল দেওয়ার অভ্যাস তার কানে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে।

-ম্যাসেজ করার সময় যদি মনে হয় যে তার কোন ধরনের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে বা তার মাঝে তেমন আরামের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছেনা তবে তৎক্ষণাৎ তা থামিয়ে দেয়াই ভালো।

-খাবার খাওয়ার পর পরই কখন ম্যাসেজ করবেনা।

তেল ব্যবহার কি অপরিহার্য?

শিশুর শরীর ম্যাসেজের মতোই তেল ব্যবহারের বিষয় নিয়েও চলে অনেক মতানৈক্যের। আগেরকার সময়ে দাদি-নানিরা খাঁটি সরিষা তেল দিয়ে নবজাতকের পুরো শরীর মালিশ করে দিতো, যা এখনকার সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিষেধ করা হয়ে থাকে। তাহলে উপায়?

-তেল ম্যাসেজ শিশুর নরম, সূক্ষ্ম ত্বককে রক্ষা করতে এবং একই সাথে এটিকে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। কিন্তু তাই বলে সমস্ত তেল সমান নয় এবং সেগুলো শিশুর ত্বকের জন্য ভাল নয়। শিশুর ম্যাসেজের জন্য সঠিক তেলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

-নির্বাচিত তেল প্রথমেই শিশুর ত্বকের একটি প্যাচে ছোট ড্যাব করে প্রয়োগ করে দেখতে হবে তাতে কোন প্রতিক্রিয়া হয় কিনা। অ্যালার্জি বা সংবেদনশীল ত্বকের শিশুদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

-সরিষা তেল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয় কারণ এটি ত্বকের উপর বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে শিশুর সূক্ষ্ম ত্বকে জ্বালা এবং সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে।

-পরিচিত তেলের মধ্যে অনেকেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেও এর উচ্চ অলিক অ্যাসিডের কারণে শিশুর মালিশের জন্য একেও সুপারিশ করা হয়না। এটি বাচ্চার ত্বকের শুষ্কতার কিছু স্তর তৈরি করতে পারে।

-২০২০ সালে এক গবেষণায় বলা হয় যে, নবজাতকের উপর ভার্জিন নারকেল তেল প্রয়োগ করা তাদের ত্বকের উন্নতি এবং শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে। এটি নবজাতক এবং বয়স্ক শিশুদের জন্য একটি ম্যাসেজ তেল এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে একই কাজ করতে পারে।

-বাদাম তেল ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এবং ২০২০ থেকে ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখায় যে এটি শিশুর উপর প্রয়োগ করা নিরাপদ।

-এছাড়াও, বিভিন্ন বেবি অয়েল যা আসলে একটি খনিজ তেল এগুলোও ব্যবহার করা নিরাপদ। পেট্রোলিয়াম জেলির মতো খনিজ তেলগুলো শিশুর ত্বকে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনা।

শিশুর ম্যাসেজ একটি চমৎকার, প্রশান্তিদায়ক থেরাপি যা শিশুকে শান্ত করতে এবং বন্ধনের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সঠিকভাবে ম্যাসেজ করার আগে কয়েকবার অনুশীলন করে নাও। প্রতিটি অনুশীলনের সাথে তুমি তোমার শিশুর সাথে একটি গভীর ও প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
অন্দরের ডায়েরিস্বাস্থ্যহেঁসেল

সালাদ ড্রেসিংয়ের রকমফের

করেছে Shaila Hasan জানুয়ারী ৫, ২০২৩

শায়লা জাহানঃ

ভিটামিন, মিনারেল , পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে সালাদের জুরি নেই। নিয়মিত সালাদ গ্রহণে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন ও উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাসসহ নানান উপকারিতা রয়েছে। ড্রেসিং সালাদের স্বাদ আরও বাড়ায় এবং এটিকে সুস্বাদু করে তোলে। তাই এটি সালাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর অপশনের মধ্যে সালাদের স্থান সবসময় ঊর্ধমুখী। সালাদ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সৃজনশীল স্বাধীনতা সীমাহীন। এটি লেটুসের একটি সাধারণ প্লেট হতে পারে বা এটি শাকসবজি, শস্য এবং ফলের একটি সমন্বিত উপাদানের হতে পারে। অর্থাৎ সালাদের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। সালাদ ড্রেসিং হল সালাদের জন্য একটি সস। কার্যত যা সব পাতাযুক্ত সালাদে ব্যবহৃত হয়। সালাদ ড্রেসিংগুলোকে সালাদের উপকরণের সাথে যোগ করে টস করা হয়। এতে সকল উপকরণ এক বাটিতে একত্রিত করে, সেগুলোকে একটি স্বাদযুক্ত আবরণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে। আবার অনেক সময় এতে কোন কিছু ডিপ করে খাওয়ার জন্য সাইড ডিশ হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক জনপ্রিয় হওয়া এমন কিছু সালাদ ড্রেসিংগুলো ব্যাপারে আসো জেনে নিই।

রাঞ্চ ড্রেসিং

এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় সালাদ ড্রেসিংগুলোর মধ্যে একটি। এটি ক্রিমিনেস, ভেষজ এবং পেঁয়াজের বাইটের নিখুঁত ট্রাইফেক্টার জন্য পরিচিত। রাঞ্চ এতোই জনপ্রিয় যে এটি কেবল স্যালাডে ব্যবহৃত হয়না, ডিপিং সস হিসেবে এবং স্যান্ডউইচ ও পিজ্জাতেও ব্যবহৃত হয়। এটি বাটারমিল্ক, লবণ, রসুন, পেঁয়াজ, ভেষজ (ডিল, পার্সলে, থাইম ইত্যাদি) এবং মশলা (সরিষার বীজ, কালো মরিচ, পেপারিকা) দিয়ে মেয়োনিজ ভিত্তিক একত্রিত করে তৈরি করা হয়। মূলত ১৯৫৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারার কাছে একটি খামারে গ্যাল এবং স্টিভ হেনসন দ্বারা এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল।

ব্লু  চিজ ড্রেসিং

এটি প্রায়শই সালাদে ব্যবহার করা হয় আবার ডিপিং সস হিসেবে খাওয়া হয়। দুধ, ভিনেগার, টক ক্রিম বা দই, মেয়োনেজ, পেঁয়াজের গুঁড়া এবং রসুনের গুঁড়ার সংমিশ্রণে এটি তৈরি। এর উৎস সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে প্রথম লিখিত প্রমান পাওয়া গেছে ১৯২৮ এজওয়াটার হোটেল সালাদ বইতে এবং ড্রেসিংয়ের আগের সংস্করণগুলো ফ্যানি ফার্মারের ১৯১৮ কুকবুকে। তবে এটি মূলত ১৯৩০- এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ব্লু  চিজ ড্রেসিং প্রায় রাঞ্চ ড্রেসিং এর একটি এক্সটেনশন। এর ভোজ্য ছাঁচের উজ্জ্বল নীল শিরাগুলো এটিকে একটি শক্তিশালী গন্ধ দেয় যা মিষ্টি এবং সুস্বাদু উপাদানগুলোর সাথে আশ্চর্যজনকভাবে জোড়া দেয়।

ইটালিয়ান ড্রেসিং

এর নাম ইটালিয়ান হওয়া সত্ত্বেও এটি মূলত আমেরিকানদের সৃষ্টি। এটি আমেরিকান স্বপ্নের অনেক পণ্যের মধ্যে একটি, যা ১৯৪০ এর দশকে প্রথম প্রজন্মের ইতালীয় আমেরিকান ফ্লোরেন্স হানা দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল। ইতালীয় ড্রেসিং ছিলো তার একটি পুরানো পারিবারিক রেসিপির অভিযোজন যা তিনি তার পরিবারের ম্যাসাচুসেটস রেস্টুরেন্টে পরিবেশন করেছিলেন। এটি রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় সালাদ ড্রেসিং গুলোর মধ্যে একটি। এতে ইতালীয় ভেষজ, লেবুর রস, সূক্ষ্মভাবে কাটা বেল মরিচ এবং রসুন দিয়ে ভরা একটি তেল এবং ভিনেগার বেস রয়েছে। এটি একটি হালকা ড্রেসিং যা সবুজ শাক এবং কাঁচা সবজির মিশ্রণকে উজ্জ্বল করে।

হানি মাস্টার্ড ড্রেসিং

মিষ্টি, মশলাদার এবং ট্যাঞ্জি স্বাদের এই মধু সরিষার ড্রেসিং হল আরেকটি আমেরিকান ক্লাসিক। এই ড্রেসিং একটি ব্যাপক আবেদন আছে। মধু সরিষা রুটিযুক্ত চিকেন টেন্ডার, ফ্রাই এবং অন্যান্য সুস্বাদু খাবারের জন্য একটি জনপ্রিয় ডিপিং সস। এই ডিপিং সসে প্রায়শই মেয়োনিজ বেস থাকে। হানি মাস্টার্ড ড্রেসিং গ্রিলড চিকেন সালাদের সাথে দূর্দান্ত স্বাদ যোগ করে।

ভিনাইগ্রেট ড্রেসিং

ভিনাইগ্রেট ড্রেসিং হল সবচেয়ে বহুমুখী সালাদ ড্রেসিং, যা তেল এবং অ্যাসিডের ভিত্তি সহ সসের একটি সম্পূর্ণ পরিবারকে উল্লেখ করে। এর নাম থেকেই বোঝা যায় ভিনিগ্রেটগুলো সাধারণত ভিনেগারের সাথে তেল একত্রিত করে। সুগন্ধি ভেষজ বা মশলাগুলোর সংমিশ্রণ তারপর যোগ করা হয়।

রাশিয়ান ড্রেসিং

এটিও ইটালিয়ান ড্রেসিং এর মতোই নামেই যা রাশিয়ান, মূলত সৃষ্টি আমেরিকানদের। ১৯০০ এর ধকের গোড়ার দিকে নিউ হ্যাম্পশায়ারের স্থানীয় জেমস কলবার্ন দ্বারা উদ্ভাবিত এই ড্রেসিং মেয়োনিজ, কেচাপ, পিমেন্টো মরিচ এবং মরিচের সসকে একত্রিত করে। কেচাপের মিষ্টতা এবং মেয়োনিজের ক্রিমিনেস অন্যান্য শক্তিশালী গন্ধযুক্ত এবং মশলাদার উপাদানগুলোর জন্য একটি আনন্দদায়ক ভিত্তি প্রদান করে। যেকোন সালাদ, স্যান্ডউইচ বা উদ্ভিজ্জ খাবারের সাথে রাশয়ান ড্রেসিং একটি ভারী এবং ট্যাঞ্জি সংযোজন।

থাউজেন্ড আইল্যান্ড ড্রেসিং

এই ড্রেসিংটি মূলত কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উপরের সেন্ত লরেন্স নদীর ধারে হাজার দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এটি রুবেন স্যান্ডউইচ, ওয়েজ স্যালাড এবং প্রোটিন- ভারী সালাদে দারুণ স্বাদযুক্ত। কখনও কখনও একে সিক্রেট সস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই ক্রিমি ড্রেসিংটি সাধারণত একটি সিজনিং বা ডিপ সস হিসেবে পরিবেশন করা হয় এবং বেশিরভাগ সংস্করণে এতে মেয়োনিজ, কেচাপ, ভিনেগার এবং চিনির স্বাদ থাকে।

-ছবি সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook