সঞ্চিতা খাসকেল:
ভাষা আন্দোলন এক নতুন চেতনার জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অনন্য অসাধারণ চেতনা পুষ্ট শিল্প সাহিত্যের। দিনটিকে ঘিরে ফ্যাশন ও পোশাকেও এসেছে নানান বৈচিত্র্যতা। বাংলাদেশ পুরো বিশ্বের কাছে আজ সমাদৃত। পুরো পৃথিবী তথা বাংলার মানুষের জাতীয় জীবনে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের একটি বড় অধ্যায় জুড়ে আছে আমাদের মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।
বাঙালি তথা গোটা বিশ্ববাসী এই দিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির সূর্যসন্তানদের। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা। পুরো পৃথিবী বিস্ময় এ হতবাক হয়ে গেছে ভাষার জন্য বীরদর্পে বাঙালির আত্মত্যাগ দেখে। যে আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে শেখায়। যে আত্মত্যাগ আমাদের দেশের প্রতি দায়িত্বশীল, নিষ্ঠাবান, সৎ আর নির্ভীক হতে শিক্ষা দেয় প্রতিনিয়ত। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। সারাবিশ্বে এই দিনটি আজ সমাদৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। জাতীয় চেতনার মানসপটে ভাষা আন্দোলন এক নতুন চেতনার জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অনন্য অসাধারণ চেতনাপুষ্ট শিল্প-সাহিত্যের। তাই তো নানা আনুষ্ঠানিকতার মাঝে বাঙালি দিনটিকে উদ্যাপন করে আসছে প্রতিবছর। দিনটিকে ঘিরে তাই ফ্যাশন ও পোশাকেও এসেছে নানান বৈচিত্র্যতা।
যেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় শোক দিবস, তাই এই দিনটিকে সাজানো হয় কালো আর সাদা রঙের আঙ্গিকে। বাঙালি মেয়েরা সাধারণত সাদা রঙের শাড়ি তাতে কালো পাড় অথবা সাদা রঙের সালোয়ার ওড়না আর কালো রঙের কামিজ পরতেই বেশি পছন্দ করে এই দিনটিতে। তবে যুগের হাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকেও এসেছে নতুন সংযোজন। কালো রঙের শাড়িতে ফুটে উঠেছে নানান রঙের বর্ণমালা। কখনও বা আঁচলে শোভা পায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ,শহিদ মিনার অথবা লাল-সবুজের চিরচেনা সেই গ্রামীণ দৃশ্যপট। কখনও বা শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র। ছেলেদের পোশাকেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সাদা পাঞ্জাবির পুরোটা জুড়ে থাকে প্রিয় বর্ণমালারা। কখনও বা কালো পাঞ্জাবির বুকে থাকে শহিদ মিনার অথবা ছেলেদের টি-শার্টে শোভা পায় প্রিয় কবির পংক্তিমালা-
‘মোদের গরব মোদের আশা
আ মরি বাংলা ভাষা’
কবি মাহমুদুল হাসান বলেছেন,
“মাতৃ ধ্বনিতে গুঞ্জন ফাগুনের সমীরণ
অগ্নি কণায় বাংলা বর্ণমালার আলিঙ্গন।”
প্রিয় কবির আহবানে সাড়া দিয়ে কেউ কেউ আবার কালো রঙের শাড়িতে লাল রঙের আঁচলের মাঝে রক্তিম সূর্যের আভা ছড়িয়ে দেন।
সাদা কালো সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মিল রেখে ওড়নার মাঝে কখনওবা ভেসে বেড়ায় শুভ্র মেঘপুঞ্জ। এ বিশেষদিনটিতে বড়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিশুদের পোশাকেও এসেছে বৈচিত্র্যতার ধারা। বড়দের মতো শিশুরাও বর্ণিল বর্ণমালায় তাদের শাড়ি রাঙিয়ে নেয়।সঙ্গে থাকে কালো রঙের ফেন্সি ব্লাউজ। কখনও বা কালো ধুতিসালোয়ারের সঙ্গে থাকে সাদা রঙের ফতুয়া। কখনও কখনও ছোট্টশিশুরা বেছে নেয় সাদা ফ্রক।
হালফ্যাশনে ছেলে বাবুরাও পিছিয়ে নেই। এই দিনে ওরাও বেছে নেয় চমৎকার সব টি-শার্ট আর পাঞ্জাবি। ছেলেবাবুদের টি-শার্টে উড়ে বেড়ায় রংবেরঙের প্রজাপতি, ঘাসফড়িং। পাঞ্জাবির বুকে শোভা পায় সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধার ছবি। কখনও কখনও টি-শার্ট বা পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীক। কেউ কেউ আবার সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে ব্যবহার করে কালো রঙের মুজিব কোট।
-ছবি সংগৃহীত