রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

কথাসাহিত্যিক

উপন্যাসশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

বইমেলার বই

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২০

চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০। মাসব্যাপী এই মেলার ইতিমধ্যেই অর্ধেকটা শেষ হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো সাহিত্যপ্রেমীদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে উঠছে মেলা প্রাঙ্গণ। লেখকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে অটোগ্রাফ কিংবা ফটোগ্রাফ দিতে। পাঠকরা খুঁজে নিচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রন্থ। আর আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের জন্য বই প্রকাশের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে প্রকাশকরা।

এবারের মেলায় ফিকশন-ননফিকশন সহ অসংখ্য বই প্রকাশ করেছে সকল প্রকাশকরা। তবে প্রবীণ লেখকদের উপর নির্ভর না হয়ে পাশাপাশি তরুণ লেখকদের প্রতিও বেশ ভালো সুনজর দিয়েছে প্রকাশনী সংস্থাগুলো। তাই এবারের মেলা যেন তরুণ লেখকদের মিলনমেলা। অনেকেই ইতিমধ্যে বই কিনে ফেলেছে অনেকেই আবার এখনো অপেক্ষায় আছে। এই অপেক্ষার পালাটা খানিকটা কমিয়ে আনতে রোদসী ম্যাগাজিন পাঠকদের সুবিধার্থে বইয়ের প্রচার করবে। আজ থাকছে আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল খ্যাত নিয়াজ মেহেদীর নতুন উপন্যাসের কথা।বললে বিশ্বাস করবেন না, ঢাকা শহরের যে এলাকায় আমার বাসা, সেখানে আড্ডা দেওয়া নিষেধ। কথার কথা নয়, একেবারে নিয়ম করে নির্দেশ দেওয়া আছে। রাস্তায় গোটা গোটা কালো অক্ষরে সতর্ক করা আছে, ‘অত্র এলাকায় আড্ডা দেওয়া নিষেধ। অমান্যকারীদের জুতা পেটা করা হইবে।’ 

কথায় কাজ না হওয়াই স্বাভাবিক। এদেশের প্রায় প্রতিটা দেয়ালেই তো লেখা থাকে, ‘এখানে প্রস্রাব করবেন না।’ সেকথা কী কেউ আদৌ গ্রাহ্য করে? সেজন্য পোস্টারে জলছাপ দিয়ে এক পাটি স্যান্ডেলের ছবি দেওয়া আছে। মোড়ের দোকানদারের কাছে শুনেছি, এই শাস্তি আসলেই দেওয়া হয়। একদল লোকই নাকি আছে যাদের কাজ শাস্তি তামিল করা। এ কারণে এলাকায় চায়ের দোকান আছে কিন্তু বসার কোনো বেঞ্চ নেই। ভাতের হোটেল আছে কিন্তু সেখানেও বড় বড় পোস্টার সাঁটা হুঁশিয়ারি আছে। খেলাধুলার মাঠ আছে কিন্তু একদণ্ড সেখানে দাঁড়িয়ে গল্প করার জো নেই। 

বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমেই সাহিত্যে অনুপ্রবেশ ঘটেছিল লেখকের। আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল, গল্পগ্রন্থ – বিস্ময়ের রাত পাঠক সানন্দে গ্রহণ করলে লেখকের লেখার স্পৃহাটা যেন আরও দূর্বার গতি পায়। আর তারই ধারাবাহিকতায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত আড্ডা দেওয়া নিষেধ।

আড্ডা দেওয়া নিষেধ
প্রকাশনীঃ মাওলা ব্রাদার্স
প্যাভিলিয়ন নং- ২৯
প্রচ্ছদঃ পার্থপ্রতিম দাস 

 

 

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
শিল্প ও সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদের বিয়ের স্মৃতি

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ৮, ২০২০

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গুলতেকিন খানকে। ১৯৭৩ সালের ২৮ এপ্রিল তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন পার করে ২০০৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। ২০১২ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরলোকগমন করেন। এখন শীতকাল। চলছে বিয়ের মৌসুম। রোদসীর পাঠকদের জন্য থাকল হুমায়ূন আহমেদ এবং গুলতেকিন খানের বিয়ের সেই স্মৃতি।

গুলতেকিনের সঙ্গে বিয়ে হয় এমন ঝোঁকের মাথায় তখন আমি হতদরিদ্র। লেকচারার হিসেবে ইউনিভার্সিটি থেকে সব মিলিয়ে সাত/আটশো টাকা পাই। দুই ভাইবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবর রোডের এক বাসায় থাকি। সে বাসা সরকারি বাসা। এভিকেশন নোটিশ হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিজে এসে বলে গেছেন বাড়ি ছেড়ে দিতে। পনেরো দিনের নোটিশ। বাড়ি না ছাড়লে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হবে। টাকা পয়সার দিক দিয়ে একেবারে নিঃস্ব। মাসের শেষের দিকে বেশির ভাগ সময়ই বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে আসার পয়সাও থাকে না। হেঁটে হেঁটে আমি ক্লাসে যাই। ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত হয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি। নিতান্ত পাগল না হলে এমন অবস্থায় কেউ বিয়ের চিন্তা করে না।

আমার মনে হলো গুলতেকিন নামের এই বালিকাটিকে পাশে না পেলে আমার চলবে না। গুলতেকিনের মা-বাবা আমার কাছে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। বড় মেয়েরই বিয়ে হয়নি। ক্লাস টেনে পড়া মেয়ের বিয়ে হবে কি করে? কি করা যায় কিছুই ভেবে পাই না। একদিন গুলতেকিন ডিপার্টমেন্টে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

হুমায়ূন আহমেদ এবং গুলতেকিন খানের দুর্লভ ছবি।

আমি বললাম, ‘চল এক কাজ করি- আমরা কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।’

সে চোখ বড় বড় করে বলল, ‘কেন? কোর্টে গিয়ে বিয়ে করব কেন?’

‘খুব মজা হবে। নতুন ধরনের হবে। ব্যাপারটা খুব নাটকীয় না? তোমাকে ভাবার জন্য তিন মিনিট সময় দিলাম। তুমি ভেবে দেখ, তারপর বল।’

সে ভাবার জন্য তিন মিনিটের মতো দীর্ঘ সময় নিল না। এক মিনিট পরেই বলল, ‘চলুন যাই। কিন্তু আমি তো শাড়ি পরে আসিনি। সালোয়ার-কামিজ পরে কি বিয়ে করা যায়?’

কোর্টে শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল না। কনের বয়স চৌদ্দ। এই বয়সে বিয়ে হয় না। আমি কোন উপায় না দেখে তার ফুপু খালেদা হাবীবকে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখলাম। আমার সাহিত্যপ্রতিভার পুরোটাই ঢেলে দিলাম চিঠিতে। চিঠি পড়ে তিনি বিস্মিত এবং খুব সম্ভব মুগ্ধ। কারণ তিনি গুলতেকিনের পরিবারের সবাইকে ডেকে দৃঢ় গলায় বললেন, ‘এই ছেলের সঙ্গেই গুলতেকিনের বিয়ে দিতে হবে। অন্য কোথাও নয়। ভবিষ্যৎ-এ যা হওয়ার হবে।’ আর আমার চিঠির জবাবে তিনি লিখলেন, ‘আপনার অদ্ভুত চিঠি পেয়েছি। এত বানান ভুল কেন?’

তারা ক্লাস টেনে পড়া মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে বিয়ে হবে। এই খবরে আমার এবং মার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। হাতে একটা পয়সা নেই। যে কোন মুহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। এই অবস্থায় বিয়ে। কে জানে নতুন বউ নিয়ে বাসায় এসে দেখা যাবে পুলিশ দিয়ে সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নতুন বউ নিয়ে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে।

হুমায়ূন আহমেদের পুরো পরিবার।

মা তাঁর সর্বশেষ সম্বল বাবার দেয়া হাতের এক জোড়া বালা, যা তিনি চরম দুঃসময়েও যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছিলেন, বিক্রি করে বিয়ের বাজার করলেন। জিনিসপত্রগুলি খুব সস্তা ধরনের কিন্তু তাতে মিশে গেল আমার বাবা এবং মার ভালোবাসা। আমি জানতাম ভালোবাসার এই কল্যাণময় স্পর্শেই আমার অনিশ্চয়তা, হতাশা কেটে যাবে।

বউ নিয়ে বাসায় ফিরে বড় ধরনের চমক পেলাম। আমার শোবার ঘরটি অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে আমার ছোট বোন। আমাদের কোন ফ্যান ছিল না। কিন্তু আজ মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে। বিছানায় কি সুন্দর ভেলভেটের চাদর। খাটের পাশে সুন্দর দুটি বেতের চেয়ার। বেতের চেয়ারের পাশে ছোট্ট একটা টেবিলে একগাদা রক্ত গোলাপ। গোলাপের পাশে একটা চিঠিও পেলাম। মেজো বোন শিখুর লেখা চিঠি –

‘দাদা ভাই,

 

তুমি যে সব গান পছন্দ করতে তার সব ক’টি টেপ করা আছে। কথা বলতে বলতে তোমরা যদি ক্লান্ত হয়ে পড় তাহলে ইচ্ছা করলে গান শুনতে পার। দরজার কাছে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার রেখে দিয়েছি।’

ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করতেই সুচিত্রা মিত্রের কিন্নর কণ্ঠ ভেসে এল –

ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে এ ভালোবাসা?

গভীর আবেগে আমার চোখে জল এসে গেল। আমি সেই জল গোপন করবার জন্য জানালা দিয়ে তাকিয়ে বললাম, ‘কেমন লাগছে গুলতেকিন?’

সে নিচু গলায় বলল, ‘বুঝতে পারছি না। কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।’

‘ঘুম পাচ্ছে?’

‘না।’

সারা রাত আমরা গান শুনে কাটিয়ে দিলাম দু’জনের কেউই কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গান শোনা ছাড়া উপায় কি?  পরদিন ভোরবেলা খুব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটল। যাদের বাসা থেকে সিলিং ফ্যান ধার করে আনা হয়েছিল তারা ফ্যান খুলে নিয়ে গেল। গুলতেকিন বিস্মিত হয়ে বলল, ‘ওরা আমাদের ফ্যান খুলে নিচ্ছে কেন?’

আমি মাথা নিচু করে রইলাম। জবাব দিতে পারলাম না। বিছানার চমৎকার চাদর, বেতের চেয়ার, ক্যাসেট প্লেয়ার সবই তারা নিয়ে গেল। এমনকি টেবিলে রাখা সুন্দর ফুলদানিও অদৃশ্য। গুলতেকিন হতভম্ব। সে বলল, ‘এসব কি হচ্ছে বলুন তো? ওরা আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে কেন? আমরা বুঝি রাতে গান শুনব না?’

গুলতেকিনের প্রশ্নের জবাব দেবার মতো মানসিক অবস্থা তখন আমার নেই। আমার জন্য আরও বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে। বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে। এই কারণেই সবাই তড়িঘড়ি করে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।

মা পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে লজ্জায় কাঁপছি। আমার ছোট বোন এসে বলল, ‘দাদাভাই, তুমি ভাবিকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে চলে যাও। এই নোংরা ব্যাপারটা ভাবির সামনে না হওয়াই ভালো।’

হুমায়ূন আহমেদ, গুলতেকিন এবং তাদের পুত্র সন্তান নুহাশ।

আমি গুলতেকিনকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। বৈশাখ মাসের ঘন নীল আকাশ, পেঁজা তূলার স্তূপীকৃত মেঘ, চনমনে রোদ। আমরা রিকশা করে যাচ্ছি। হুড ফেলে দিয়েছি। আমার মনের গোপন ইচ্ছা – পৃথিবীর সবাই দেখুক, এই রূপবতী বালিকাটিকে আমি পাশে পেয়েছি। গভীর আনন্দে আমার হৃদয় পূর্ণ। বাসায় এখন কি হচ্ছে তা এখন আমার মাথায় নেই। ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়েও ভাবছি না।

বর্তমানটাই সত্যি। অতীত কিছু না। ভবিষ্যৎ তো দূরের ব্যাপার। আমরা বাস করি বর্তমানে – অতীতেও নয়, ভবিষ্যতেও নয়।

 

সূত্র: হুমায়ূন আহমেদের অনন্ত অম্বরে
ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
.এই সংখ্যায়

অসি নয়, মসিতে আস্থা তার : কাজী রাফি, কথাসাহিত্যিক, মেজর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

করেছে Rodoshee Magazine জানুয়ারী ২৪, ২০১৯

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সেকেন্ড লেফ্টেন্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু। কিন্তু প্রচুর পাঠাভ্যাসের কারণে ছোটবেলা থেকেই ভেতরে ভেতরে লালন করেছেন লেখক হয়ে ওঠার প্রবল ইচ্ছা। বাংলার মাটির সন্তান হিসেবে এই ভূমির প্রতি নিজের দায়বোধ আছে বলে মনে করেন তিনি। বলা হচ্ছে, কথাসাহিত্যিক কাজী রাফির কথা। প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ লিখে অর্জন করেছেন এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার। কাজী রাফি বর্তমানে সেনাবাহিনীর একজন অফিসার (মেজর) হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন। অথচ এক সময় এই চাকরি থেকেই অব্যাহতি চেয়ে বসেছিলেন তিনি! কিন্তু কেন? জানা যাবে রোদসীর এই আয়োজনে। কথপোকথনে স্বরলিপি।

কী হতে চেয়েছিলেন?

ছোটবেলা থেকেই অনেক বই; বিশেষত গল্প-উপন্যাস পড়তাম। একদিন আমার ছোটবোন আমাকে প্রশ্ন করেছিলো ‘ভাইয়া, এই যে তুমি এতো বই পড়ো, তুমি আসলে কী হতে চাও?’ আমি তাকে বললাম,‘কী হতে চাই, তাতো বলতে পারছিনা, তবে আমি একজন ভালো পাঠক হতে চাই। আর সম্ভব হলে লেখক হবো।’ এই কথাটি আমি দুষ্টুমি করেই বোনকে বলেছিলাম। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারি, অবচেতনে-আনমনে আমি হয়তো লেখক হওয়ার ইচ্ছাটা লালন করতাম বলেই অনেক পরে হলেও কলম ধরেছি। আমার আটাশ বছর বয়সে আমি প্রথম লেখা শুরু করলাম। ঘোরের বসেই আট মাসের মধ্যে লেখা শেষ হলো আমার প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’।

পরিবার কী চাইছিলো

আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। চাপিয়ে দেওয়ার অভ্যাস বাবার ছিলোনা। তিনি পড়াশোনাটা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে বলতেন। কিন্তু আমি তো কেবল পরিবারের একজন সদস্য না, একটি সমাজেরও সদস্য। আমাদের সময় প্রচলিত ধারণা ছিল-ভালো ছাত্র হলে হয় ডাক্তার, না হয় ইঞ্জিনিয়ার অথবা সশস্ত্রবাহিনীর একজন অফিসার হতে হবে। তাই সেভাবেই আমার ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। বড়দের কারও কাছে কখনো বলা হয়নি ‘বড় হয়ে লেখক হতে চাই’। কারণ, এই সমাজ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের এই কথা বলার স্পেসটুকু দেয় না। কেননা এখানে আর্থিক উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

অদম্য ইচ্ছা

ইচ্ছা ছিলো ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। চান্সও পেলাম কিন্তু যেদিন বিশ্বাবিদ্যালয়ে ভর্তির তারিখ ছিল সেদিন আমি আটকা পড়ে গিয়েছিলাম আইসএসবি পরীক্ষার জন্য। আমি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যেতে পারিনি। আমার কখনো বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা হয়নি। তবে অফিসার হওয়ার পর নিজ উদ্যোগে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি।

ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা

আমি মনে করি একজন মানুষ কী করতে ভালোবাসে আগে সেটা জানা উচিত। মানুষ যদি তার ভিতরের শক্তিটা আবিষ্কার করে ফেলতে পারে তবে সেদিকেই তার পদচারণা হয়। মানুষের যেদিকে অভিযাত্রা থাকে, যদি তার ইচ্ছার প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে সেই কাজের জন্য তার মগ্নতা তৈরি হয়। এই মগ্নতা থাকলে মানুষ জীবনের যে দিকটায় বিস্তৃত হতে চায় সেখানেই তার অবস্থানকে বড় এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

লেখক হয়ে ওঠা

চিঠি লেখার একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছিলো অষ্টম শ্রেণি থেকে। বাবাকে লম্বা লম্বা চিঠি লিখতাম। বাবা শিক্ষক ছিলেন, সুন্দর করে গুছিয়ে চিঠি লিখতেন। আমিও চেষ্টা করতাম যথাসম্ভব গুছিয়ে চিঠি-লিখতে। মাকেও চিঠি লেখা হতো। কিন্তু মা কখনো ফিরতি চিঠি লিখতেন না। এরপর আমার যখন অ্যানগেইজমেন্ট হয়ে গেল-তখন স্ত্রীকে লম্বা চিঠি লিখতাম। আমি যেখানেই থাকতাম প্রতিটি চিঠিতে তার চারপাশের প্রকৃতি নিয়ে কোনোনা কোনোভাবে লেখা হতো। এমনকি আমি যখন বাবাকে চিঠি লিখতাম তখনও। মিলিটারি একাডেমিতেও লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তাম। তবে আমার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমার মা এবং আমার গ্রামের প্রাকৃতিক অবগুণ্ঠনে ঢাকা আমাদের সুনশান বড়-বাড়িটা। এমন সুনশান পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছাড়াও মা’র মুখের ফল্গুধারার মতো ঝরে পরা কবিতা শুনেশুনে কৈশোর অতিক্রম কালে আমার ভিতরে এক ধরণের অনুপ্রাস তৈরি হয়েছিল। সেই অনুপ্রাস আমাকে সবকিছু দেখে অবাক হতে শিখিয়েছিল। অবাক হয়ে গভীর মনোযোগে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার প্রবণতাই আমার লেখকসত্তার শক্তি হয়ে উঠেছিল আমার অজান্তেই।

চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন

(হাহাহা)। হ্যাঁ। ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাস লেখার সময় আমার খুব সমস্যা হচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে আর একটা গল্প বলতে হবে। আমার বাড়ি বগুড়া। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বাড়িও বগুড়ায় ছিলো। উনার ইচ্ছা ছিলো একটা উপন্যাস লিখবেন, যেখানে পুন্ড্রু-সভ্যতার ছায়া থাকবে। কিন্তু তিনি লিখে যেতে পারেননি। একথা আমি যখন জানতে পারি, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর ২০০৭ বা ২০০৮-এর দিকে এশিয়ান উইক-এ একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য ছিলো পান্ডুয়া নামক স্থানে (মহাস্থান গড়ের মতো যে নিদর্শন) সেগুলো পাওয়া গেছে। পত্রিকাটি আর্য-মৌর্য হয়ে পালদের গড়ে ওঠা সভ্যতা এবং তার অবস্থান হিসেবে ভারতের কথা লিখেছিল। ওই প্রতিবেদন পড়ার পর, সেই পু-্রভূমির সন্তান হিসেবে আমার মনে হয়েছে; আমারও একটা দায় আছে। আমাদের এই সভ্যতাকে একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে আমি অন্যের হয়ে যেতে দিতে পারিনা। ভাষা এবং সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য উপন্যাসের চেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার আর কিছু হতে পারেনা। সেই অনুভব থেকেই লেখা শুরু করলাম ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাসটি। কাজটি আমার জন্য অনেক কঠিন ছিলো। আমার গল্পকে সাজানোর ইচ্ছা ছিলো কাশ্মির থেকে জয়াপীড় এবং পুন্ড্র সভ্যতা হয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। আমি আসলে বাঙালির জাতি সত্তার সভ্যতা, ঐতিহ্য এবং কৃষ্টির স্থান থেকে শনাক্ত করতে চেয়েছিলাম। কাজটাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছিলো। ২০০৮ সালে উপন্যাসটি লিখতে শুরু করলাম, তবে একটা সময় খুব ক্লান্ত বোধ হলো। পেশাগত কারণে তা ঠিক মনমতো হয়ে উঠছিলো না। তারপর আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে অবশ্য চাকরিটা ছাড়তে হয়নি- বরং সহযোগিতা পেয়েছি। আমার অ্যাপেনডিক্স লেটার কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেননি। ২০১৩ সালে উপন্যাসটি লেখা সম্পন্ন করেছিলাম।

এতো বড় সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন?

আমি উপন্যাসটি শেষ করতে চাইছিলাম। ‘ত্রিমোহিনী’ উপন্যাস সৃষ্টিকালে মনে হচ্ছিল চাকরির চেয়ে উপন্যাস সৃষ্টিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাজটি করার সময় আমার বারবার মনে হয়েছে একজন শিল্পীর জন্য তার পেশাটা অন্তরায় হয়ে ওঠে। আমার স্ত্রী এই কাজে সবার আগে সম্মতি দিয়েছিল।

তরুণদের জন্য কী বলবেন

ব্রিটিশরা আমাদের নেটিভ বলতো। শোষণ করতো। ওদেরকে আমরা ঘৃণা করতাম। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ৮০০ বছরের শাসন-শোষণে ভারতবর্ষের মানুষদের ডিএনএর মধ্যেই এক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। তা হলো শাসক শ্রেণির প্রতি ঘৃণাবোধ করা। অনৈতিকভাবে অর্জন করা অর্থবিত্ত প্রতিপত্তি, ক্ষমতাকে বাঙালিরা পছন্দ করতো না। তাই শাসক শ্রেণিকে তারা যেমন ঘৃণা করে তেমনি আবার ওদের মতোই হয়তো হতে চায়। সেজন্য বাঙালি ক্ষমতা লাভ করলে মাঝে মাঝে তাদেরকে আমরা শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখি। যে কাজে ক্ষমতা বেশি, প্রভাব বেশি আমাদের সমাজে সেই কাজের মূল্যায়ন করা হয়। সেদিকেই সন্তানদের এগিয়ে দিতে চান-পরিবারের সদস্যরা। মহৎ জীবনাভ্যাস ব্যাতিত এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook