রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

কবিতা

কবিতাশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ – কবি সোহাগ ওবায়দুজ্জামানের কাব্যগ্রন্থ

করেছে Wazedur Rahman জুন ৩, ২০২০

প্রেমহীন এই নিথর ধরা যেন অসার
পুনরায় শূন্য থেকে শুরু করে আবার।

কবিতা হচ্ছে ছন্দ, দোলা এবং স্পন্দন নিয়ে রচিত একগুচ্ছ শব্দমালা। অথবা, কবিতা বা পদ্য হচ্ছে শব্দের ছন্দোময় বিন্যাস; যা একজন কবির আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি চিন্তাকে সংক্ষেপে এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে উদ্ভাসিত করে আর তা শব্দের ছন্দায়িত ব্যবহারে সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে।

কবিতা। তিনটি অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ অথচ এর বিশালতা আর গভীরতা অকল্পনীয়। হ্যাঁ সত্যিকার অর্থেই অকল্পনীয়। জীবনের প্রত্যেকটি উপাদান আর উপাত্ত নিয়েই কবিতা। একটি জীবনের আলোকে সামগ্রিক জীবন নিয়ে লেখা হয় কবিতা। কবিতা হাসায়, কবিতা কাদায়। কবিতা আনন্দ দেয়, কবিতা বেদনা শেখায়। তাই একজন কবির কাছে তার কবিতা নিজের সন্তানের মতো, নিজের সহধর্মিণীর মতো যে তাকে ভালোবেসে পাশে থাকে দুঃখের সময়েও।

২০২০ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নৈঋতা ক্যাফে থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি সোহাগ ওবায়দুজ্জামানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ শিরোনামে। বইটির প্রচ্ছদ করেছে চারু পিন্টু। প্রচ্ছদ বেশ মানানসই হয়েছে কাব্যগ্রন্থের কাব্যগুলো অনুসারে।

ছবি: সংগ্রহীত

খুবই সাদামাটা না আবার খুব বেশি ঝমকালো নয়; যতটুকু অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার ততটুকুই যেন। বইটির পেইজ, বাইন্ডিং বেশ স্ট্যান্ডার্ড মানের। আর যেহেতু কাব্যগ্রন্থ তাই গাউন পেপারের ব্যবহার যেন বইটির আউটলুককে আরও পরিপূর্ণ করেছে।  

শ্রাবণ জুড়ে মেঘ থাক, আশা রাখি  
কেটে যাক দাবদাহ জ্বর, প্রসন্ন হাসি;  
ফিরে আয় মেঘমালা- বিষণ্ণ ঢাকি  
পোড়া চোখে বৃষ্টি ঝরুক, তোমায় ভালোবাসি।

কবিতা এমন একটা ব্যাপার যেটা আসলে পড়ে, অনুভব করে অন্যকে ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর নয়। তবুও কিছু কথা জড়ো হয় যে কোন কাব্যগ্রন্থ পাঠ শেষেই। এই বইটি পাঠ শেষেও তেমন কিছু কথাই জড়ো হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থে অর্ধশতেকের বেশি কবিতা স্থান পেয়েছে। সবগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করলে এই পর্যোলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে আর পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। তাই যেসব কবিতা ভাবনার খোরাক যোগাতে সক্ষম হয়েছে সেগুলো নিয়েই বরং আলোচনা করা যাক।

কবিতা লিখেন কে? একজন কবি। পাঠকের মনের অজানা কথাগুলোই যেন ভেসে উঠে পঙক্তি হয়ে কবির কবিতার। পাঠক নিজের না বলা কথাগুলো গুচ্ছ আকারে লিপিবদ্ধ দেখে আনন্দে হয় আত্মহারা; কিন্তু কখনো কি ভাবে কবির কথা! সেই আক্ষেপটাই যেন কবিতায় তুলে ধরেছেন কবি। যেখানে তিনি বলেন –

কে শুনবে কার কথা?  
এই ধরো আমার কথা-  
নিদারুণ দুঃখ বোধ,  
ভিতরে-ভিতরে ক্ষয়রোগ;

কবির আক্ষেপটাই যেন প্রতিবাদের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে ক্ষোভে পরিণত হয়। সেই ক্ষোভটাই যেন কবিকে প্ররোচিত করে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান দেয়ার। তখন কবি বলেন –

এই অন্ধকার থেকে আলোর মুখ কবে বের হয়ে আসবে?  
সেদিন কোথায় যেদিন সম্মিলিত প্রতিরোধ হবে… আর কত দিন…???

কবি মানেই রোমান্টিক আর কবিতা মানেই রোমান্টিকতা। হোক না তা দ্রোহের কবিতাগুচ্ছ সেখানেও চুপিসারে রয়ে যায় কবির অজানার প্রেমের কথা। কবির অজানায় হারিয়ে যাবার কথা। এমনই হারিয়ে যাবার উপাখ্যানে কবি বলেন –

দাঁড়াও, আমিও আসছি, হাওয়ার তরী –  
বেয়ে-বেয়ে তোমার অজানা দ্বীপে।

ছবি: সংগ্রহীত

হাজার মানুষের ভীড়ে ছুটে চলা মানুষটার একাকীত্ব আর ঝাঁকে উড়ে বেড়ানো পাখিটার শূন্যতায় কবি যেন এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন খুঁজে পান। সেই মানুষটা কিংবা সেই পাখিটার যে ভালোবাসার মানুষটাকে পাবার আকাঙ্ক্ষা তাই ফুটে উঠেছে এই কবিতায়। কবির ভাষ্যে-

অসহ্য যন্ত্রণায় ওড়ে পাখি –  
নিয়ে ডানায় শ্বাসহীন রাখী।

তথাকথিত সমাজের ভালোবাসা মানেই যেন জৈবিক চাহিদার এক আঁতুড়ঘর। আসলেই কি তাই? ভালোবাসা তো মনের সঙ্গে মন বুনার এক কাজ। ভালোবাসা সে তো অশরীরী – না ধরা যায় না ছোঁয়া যায়। ভালোবাসার সেই অকথিত কোমলতার কথাই কবি বলেছেন ভালোবাসা এত কোমল কবিতাটিতে। কবি বলেন –

নশ্বর শরীর পাবে না এর নিগূঢ় ভেদ-  
তাইতো ভালোবাসা আজ অভাবনীয় নিঃশেষ!

স্বপ্ন আর মিছিল যেন একই সূত্রে গাঁথা দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। স্বপ্ন যেন কবিতার মতো। প্রতিবার পড়ার সময় তা নিজেকে আরো মেলে ধরে, নিজের আরো বিস্তৃতি বাড়ায়। আর মিছিল!! স্বপ্ন হোক কিংবা মিছিল সে তো শুরু করে একজনই। কিন্তু তার কি কোনো শেষ আছে? স্বপ্ন আর মিছিলের স্ফুলিঙ্গ নিয়ে পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়ায় কোনো না কোনো এক সুবোধ। তাই কবি বলেন –  

স্বপ্নটা পৃথিবীর তাবৎ সুবোধ-  
প্রাণের আকুতি নিয়ে জনাকীর্ণ এক মিছিল।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর সৌন্দর্যের মুগ্ধ হয়ে কত শিল্পী আর মনীষী এই দেশের প্রেমে পড়েছেন তার ইয়াত্তা নাই। কিন্তু আধুনিকতার কবলে পড়ে ক্রমশ নদী হারাচ্ছে তার অস্তিত্ব। কিন্তু সেই নদীর এমন দগ্ধতা আর ক্ষতের কথা কতজনে মনে রাখে? কতজন সেই নদীর হাহাকার শোনে? কবি সেই হাহাকারের খানিকটা তুলে ধরেন এভাবে –  

আমি এখন খরায় পোড়া ক্ষত-
আমাকে নিয়ে ভাবছে সবাই কত?

ছবি: সংগ্রহীত

প্রেম। প্রকৃতির অদ্ভুত এক সৃষ্টি। প্রেমের বন্ধন যে কতটা গাঢ় তা তো যুগে যুগে ইতিহাসই প্রচার করে এসেছে। কিন্তু সেই গাঢ়তা কি খানিকটা ম্লান হয়নি? হয়েছে বটে আর তাই তো বেড়েছে প্রেমের ব্যর্থতা আর বিচ্ছিন্নতা। সেই বিচ্ছিন্নতার জ্বালা সইতে পারে এমন কজনাই বা আছেন? তাই কবি নিজের ভাষায় বলেন –  

নিঃস্ব জীবন- প্রেমহীন প্রেমিকা- 
এক দৌড়ে হচ্ছে সভ্যতার গণিকা!

কথার কোনো ক্ষয় আছে কিংবা শেষ আছে? কথা স্রোতস্বিনী নদীর মতো; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মাতরে, যুগ থেকে যুগান্তরে। কথার কোনো ক্ষয় নেই কিংবা শেষ নেই তবে কথা থাকে অপেক্ষায়। সেই অপেক্ষায় পালা শেষ হয় কিন্তু কথা তবু ফুরোয় না। গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে কথাগুলো জমতে জমতে একদা হারিয়ে যায় কোনো অতলে, কোনো এক অজানার দেশে। তাই কবি বলেন –

অবশেষে, অপেক্ষমাণ কথাসমূহের দল- 
ফিরে যায় অজানার দেশে!

এই আমরা প্রতদিন সমাজ বদলের কথা বলি। নিত্যনতুন নিয়ম গড়ি। সমাজকে নিয়ে চলি আগামীর তলে। কিন্তু আসলেই কি সমাজ বদলায়? যদি তাই হয় তাহলে দিনমজুর এখনো দিন এনে দিন খায় কেন? নাকি কেবল আমরা মুখেই বলি শুধু সমাজ বদলাই। কবি তার নিজের ভাষায় এভাবে বলেন-

এখনো দিনমজুর দিন আনে দিন খায়- 
আমরা সবাই অহরহ সমাজ বদলাই।

কবি সোহাগ ওবায়দুজ্জামানের জন্ম কুষ্টিয়াতে। তবে বর্তমানে ঢাকার বাসিন্দা। স্কুলের গণ্ডি পেড়িয়ে কলেজ জীবনে প্রবেশ করেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই কবিতার প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসা এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ২০১২ সালের প্রথম কবিতার বই ‘একজন মোনালিসা চাঁদের গহবরে মুচকি হাসে।’ এরপর সময় যেন থমকে গেল দীর্ঘ আটটি বছরের জন্য। কিংবা হয়তো বলা যায় কবি আটটি বছরের জন্য কবিতায় সিদ্ধহস্ত হতে সময় নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ’।

কবিতার বই পড়ার সবচেয়ে ভালো সুবিধা হলো একরাশ মুগ্ধতায় ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায়। অবাধ্য শৈশবকে যেমন অনুভব করা যায় তেমনি সমাজের রূঢ় বাস্তবতাকে চোখের সামনে স্পষ্ট দেখা যায়। এভাবেই কবি নিজের গান গেয়ে অন্যকে করে প্রভাবিত। আর কবিতার বই একরাশ মুগ্ধতায় রয়ে যায় পাঠকের মনে হয়তোবা ক্ষণিকের জন্যে কিংবা হয়তো আজীবনের জন্যে। যেমনটা কবিও যেতে যেতে বলে যান –

মনুষ্যত্বের বাহক খাক হয়ে যায়
কিছুমানুষ আমৃত্যু স্বপ্নহীন থেকে যায়।

বই: পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ
লেখক: সোহাগ ওবায়দুজ্জামান
প্রচ্ছদ: চারু পিন্টু
প্রকাশনী: নৈঋতা ক্যাফে
মূল্য: ২৫০ টাকা মাত্র

লেখা: ওয়াজেদুর রহমান ওয়াজেদ
ছবি: সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
উপন্যাসগল্পশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

পুতুলের গল্প : এক অনবদ্য সৃষ্টি

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২০

পুতুলের গল্প কবি শামীম রফিকের একটি এক অনবদ্য সৃষ্টি। ঝকঝকে প্রিন্টে মোস্তাফিজ কারিগরের আঁকা অসম্ভব সুন্দর প্রচ্ছদে কবি প্রকাশনীর দারুণ সৃষ্টি। প্রচ্ছদেই যেনো কবি শামীম রফিকের মনের কথা ফুটে উঠেছে। বইটির ফ্ল্যাপে লেখা আমরা সকলেই পুতুল। কেউ কথা বলা, কেউ কথা না বলা পুতুল। লাইনটি বুকের মাঝে কেমন যেনো ধাক্কা দিয়ে উঠলো। এটা কি কবির একার মনের কথা নাকি আমাদের সকলের মনের কথা যা কবি বলে দিলেন। প্রথম কবিতার প্রথম লাইনটি, আজ সারারাত তাঁর মাঝে ডুবে থাকার ছিল প্রয়োজন, সারারাত।

লাইনটির শেষে কমা (,) চিহ্ন দিয়ে আবার সারারাত লিখে কবি লাইনটিকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। আজ সারারাত তিনি কার মাঝে ডুবে থাকতে চেয়েছিলেন? প্রথম লাইনেই তিনি কেমন ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে দিলেন। একটু পরেই তিনি আবার লেখেন, উপুর হয়ে পড়ে আছে মানুষের নিথর দেহ মানুষের আঘাতে। কবি তাঁর প্রতিটি বইয়ে নতুন নতুন বাঁক খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি যেন ম্যাচিউরড্ হয়ে উঠছেন প্রতিদিন। তাঁর শব্দগঠন, শব্দবিন্যাস, বাক্য গঠন, প্রকরণগত ভিন্নতা তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে আলাদা এক জগতে।

তিনি লেখেন: যুদ্ধের অপর নাম বিশ্বস্ত হাতের পাশে বিশ্বাসের ক্রমাগত মিশ্রণ। এই লাইনটির কি অর্থ হতে পারে? এটা কি কোন শাব্দিক অর্থবোধক লাইন নাকি লাইনটির আড়ালে লুকিয়ে রাখা ভিন্ন কোন অর্থ? যা শব্দ দিয়ে বা শাব্দিক অর্থ দিয়ে বুঝানো সম্ভব নয়। তিনি আবার লেখেন: হোমারের জন্মান্ধ চোখ থেকে তলোয়ার কেড়ে এনেছি, সাজিয়ে দিয়েছি বেড়ালের অপলক চোখে, তুমি আসবে ঈশ্বরের মতো, তোমাকে আসতেই হবে এই প্রণয়ে।কবি কাকে ডাকছেন এইভাবে? কার জন্যে তার এতো আয়োজন? কবি তাকে শরীর ও মনের লাবণ্য দিয়ে গভীরতর উষ্ণ স্পর্শের জন্যে উদগ্রীব। তাহলে সে কি তার কল্পদেবী নাকি গোপনে সঞ্চয় করা আদর্শের তীক্ষ- তলোয়ার!

আমাদেরকে মন্ত্রমুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে তিনি চলে যান দ্বিতীয় কবিতায় এবং সৃষ্টি করেন নতুন গল্প। এখানে শুরুতেই তিনি লেখেন : প্রেম হলো দুরন্ত সাপ; আজন্ম তাড়া করে ফেরে। এখানে কবি প্রেমকে এমন হতাশায় নিমজ্জিত কেন করলেন তা আমরা বুঝে ওঠার আগেই তিনি আবার বলেন : তবুও মানুষ অকাতরে ডুব দেয় সেই সাগরে। আমাদেরকে বাস্তব সত্যের মুখোমুখি করেই তিনি আবার দার্শনিকতায় মেতে ওঠেন।

ব্যর্থতার গোলাপি প্রহসন-এই উপমাটি দিয়ে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন তা আমরা বুঝবার আগেই তিনি আমাদেরকে আবার নিয়ে যান: একই সারিতে থেকে থেকে ধুলো জমে গেছে বিশ্বাসে। এই লাইনটাতে আমরা চমকে উঠি। কেন? কবির মনে এমন হতাশা কেন? তিনি কি জীবনের কোন খেলায় হেরে গেছেন নাকি থমকে গেছেন? তিনি একই সারিতে আছেন কেন? তিনি কি এখানে নিজের জীবনের কথা বলেছেন নাকি কোন উপমার আড়ালে আমাদের জীবনের কথাই বলে গেলেন? স্মরণ করিয়ে দিলেন কত সমস্যা নিয়েও আমরা বেঁচে আছি।

পরের কবিতায় তিনি আবার বলেছেন: হৃদয়হীন তোমার স্বপ্নকে করেছি দ্বিধাহীন আলিঙ্গন। তিনি এত হতাশার কথা বলছেন কেন? তিনি কি হতাশাগ্রস্থতার মাঝে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছেন? ফলতঃ আমার হাতে ঈশ্বরের পৃথিবী। ঈশ্বরের পৃথিবী কবির হাতে কেন? তবে কি তিনিও ঈশ্বর হয়ে যাচ্ছেন? কিন্তু কিভাবে? একটু আগেও তো তিনি একই সারিতে আবদ্ধ ছিলেন। কিছু ক্রটি ভালো নতুবা জন্মাবে না পেছনের ভুল সবুজ গুল্ম হয়ে অন্ধ সন্ধ্যার গোলাপি মায়ায়। কবি কি ভুল থেকে কোন সফলতার কথা বলছেন নাকি ভুলের অভিজ্ঞতা মানুষকে সফলতার পথ দেখায়-তিনি কোন সত্যের মুখে আমাদেরকে দাঁড় করালেন? কিন্তু তবুও প্রতীক্ষার শেষ প্রহরে এসে আমাকে ব্যর্থ করে দেয় তোমার নীরবতা।

অর্পাকে তিনি স্বপ্ন, আদর্শ ও যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি লেখেন: তার্কিকেরা যতই উড়িয়ে ফেলুক সীমানার খুঁটি, যতই দাঁড় করিয়ে দিক একই ঘোষণার দুইজন ঘোষক। এই কথায় কবি কি বুঝাতে চেয়েছেন তা আমরা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছি। শমিত স্বরের কবি শামীম রফিক যেনো খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সাম্রাজ্যবিরোধী চেতনা তার কবিতাকে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সত্য ঘটনাকে আমাদের সামনে অত্যন্ত শিল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। এরপর তিনি আবার লেখেন: সেখানে আমার মতো ভীতু বা নূর হোসেনের মতো নির্ভিকেরা যেকোনো উপায়ে লুটিয়ে পড়বে যার বিচার করতে পারে একমাত্র-‘সময়’।

এখানে তিনি আরেকটি রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের সামনে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে। নূর হোসেনকে উপস্থাপন করতে গিয়ে তিনি নিজেকে ভীতু বলে অভিহিত করেছেন। নূর হোসেন যতটা সাহসী ছিলেন তা প্রকাশে কি কবি কম সাহসিকতা দেখিয়েছেন? তারপর তিনি আবার আমাদেরকে সমাজ ও পারিবারিক বাস্তবতায় নিয়ে যান। তিনি লেখেন: সম্পর্ক হলো নদীর ভাঙনের মতো, যে বুকে ভাঙে সে বুকে ঘুমায়। এমন সত্যকে তিনি আমাদের সামনে নিয়ে আসলেন কেন? তিনি কেন এখনো দেখতে শিখেননি? যা হবার কথা নয় তা তার জীবনে ঘটে গেছে। অথচ তা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না।

কবি শামীম রফিক বলেন, যতই ড্রামাটিক হোক তিনি লড়াইটা চালিয়ে যেতে চান। তিনি মনে করেন লড়াই অনেকের প্রয়োজন হলেও সবাই জানে না কি করে লড়াই করতে হয়। তিনি মনে করেন তার বোন বা মা পারেনি। শুধু তারাই নয়, এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। অনেকের সামনে চৌরাস্তা থাকে না, অন্য কোন অপশন থাকে না। তিনি পুতুলদের কষ্ট কমানোর জন্য বিধাতার কাছে বহুবিধ অনুরোধ করেছেন। তিনি অমরত্ব চেয়েছেন মানুষের জন্য। তিনি বলেছেন আমরা সব স্বাদ নিতে চাই কিন্তু মৃত্যুর স্বাদ নিতে চাই না। তিনি অন্য শাস্তি বিনিময়ে মৃত্যুর মুচলেকাকে সংশোধন করতে বলেছেন।

পরের কবিতাটিতে মৃত্যুকে উপহাস করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন মানুষ কতকিছু করে, কত সুখ-স্বচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করেন, ভুল পথে হলেও অনেক সুখ তারা উপভোগ করে কিন্তু মৃত্যু নিরস ও ভয়ংকর মৃত্যু সম্পন্ন করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই, করতেও পারে না। কবি এখানেও পিএম উপদেষ্টা ও ভিসিকে অপকর্মে জড়িত হবার জন্য দোষী অভিহিত করেছেন এবং কুণ্ঠিত হননি। এখানেও কবির দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক সচেতনতা প্রকাশ পেয়েছে।

এখানে তিনি আবার পি.এম. উপদেষ্টা, বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি, এমিরিটাস প্রফেসর, আইজিপি, র‌্যাবের মহাপরিচালককে একজন অবৈধ সম্পদ আহরনকারীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াকে ক্ষোভের ও ক্রোধের চোখে দেখছেন। পরের কবিতাটিতে তিনি তার শৈশব স্মৃতি বিজড়িত কিছু ঘটনার উপস্থাপনা করেছেন। এ নদীকে ঘিরে মেলা হতো, খেলা হতো, আপনজনদের দেখা হতো। সেই নদী এখন নেই তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেন মানুষ নদীও খায়, মাটিও খাবে, স্মৃতির সাথে আপনও খাবে, নদীর সব জলও খাবে।

কবি শামীম রফিকের কবিতা সমাজ, সংসার, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অভিঘাতকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলে। আমরা যেটা ভালোবাসা বলে মনে করছি, তিনি বলেন ওটা প্রেম নয়। এরপর তিনি লেখেন: প্রস্তুতি নিচ্ছি, নিজেকে নিজেই বাঁচাব। প্রথম লাইনেই তিনি নিজের দৃঢ়তার কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি এখন অনেক অভিজ্ঞ, তিনি এখন গোলাপ-গোলাপ খেলা শিখেছেন। পোড়ে পোড়ে তিনি নিজেকে পোড়াবার জন্য প্রস্তুত করেছেন। এত পোড়েও তিনি নিঃশেষ হয়ে যাননি। তিনি মস্তিষ্কের সেল মরে ব্লাকআউট ব্লাকআউট খেলার ছলে মস্তিষ্কে অন্ধকারাচ্ছন্ন গর্ত তৈরী করেছেন কিন্তু তার ছোড়া স্বপ্নের তীরটা হারিয়ে ফেলেছেন।

এরপর তিনি তার হাসপাতালে কাটানো সময়ের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি আবার লেখেন: আমি এখন বিধাতার সাথে কথা বলি, প্রশ্ন করি আর সাদা বিছানায় শুয়ে স্যালাইনের ফোঁটা গুনি, হৃদকম্পন শুনি। তিনি গিল্টি অব রোমান্স দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন? আর দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেন: আমি থামব না। কার মাংসল স্বাদ কবির মস্তিষ্কে ঘুমায়। সে প্রত্যাশা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তিনি আবার বলেন: সব দেখেছি, সব পেয়েছি-তবু কেন অন্ধকার!

অনুভবের আগুন জ্বালাতে গিয়ে তিনি আবার হতাশায় নিমজ্জিত করেন আমাদেরকে। মানসিক বিকৃতি নিজস্ব সম্পদ। কথাটাতে কবির দার্শনিকতা আমাদেরকে অবাক করে দেয়। এই সম্পর্ক আগুন ও বৃষ্টির। কোন সম্পর্ক আগুন ও বৃষ্টির? কিন্তু কবিতার শেষে তিনি আবার বলেন: আমাকে নিঃসঙ্গ শুইয়ে রেখে ঘুম আনে অন্যের চোখে, আর সৃষ্ট আগুনে থাকে জ্বলন্ত চিতা। এখানে কবি আমাদেরকে কোন হতাশায় আবার হারিয়ে দিতে চান? এরপর তিনি আবার লেখেন: তোমার এই ক্ষোভ আর সঞ্চিত অবিশ্বাসের কোনোটাই জানা নেই/ তাই এই দায় আমার ছিল না কিন্তু…। তিনি কেন জান্তব আদর একান্ত দেয়ালে নিজের শৈশব ছবির পাশে এঁকে দিলেন? শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নিষ্পাপ ছবির পাশে জান্তব আদরের কি প্রয়োজন ছিল? তাহলে তার কষ্ট কোথায় ছিল। এখানে আমরা কি কিছুটা জীবনানন্দীয় জটিলতা খুঁজে পাই?

জীবনানন্দ তার আট বছর আগে একদিন কবিতায় এইরকম জটিলতা সৃষ্টি করেছিলেন। বাড়িটি অসস্পূর্ণ কেন, মায়ের পরাজিত স্বপ্ন কাঁদছে কেন, বাবা অভিসম্পাত করেন কেন? কিন্তু কাকে? এই লাইনটুকু দিয়ে তিনি আবার কনফিউজড্ করলেন আমাদের। তারপরই সপ্তম আকাশ থেকে নেমে আসে উপদেশ। কবি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তিনি লেখেন: কার্নিশে জ্যোৎস্নার খেলা সবার ভাগ্যে জোটে না/ তবু উড়ে বাবুইয়ের দল, দোল খায় ঝুলন্ত শান্তিতে। কবির ঘরে যার ছবি তার প্রতি তিনি এতো ভীষণ্ন ও দুঃখভারাক্রান্ত কেন?

কবি শামীম রফিক নিজেই আমাদের কাছে তার আত্মকেন্দ্রিকতাকে নিজস্ব ভালোবাসার ফসল হিসেবে বুঝাতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বললেন, শিল্পের জন্য শৈলী খুব প্রয়োজন। কিন্তু তিনি আবারও বলছেন: মানি কিন্তু মানব না। তিনি কেন এই জটিলতাগুলো সৃষ্টি করছেন? তিনি কি ইচ্ছে করেই তা করছেন নাকি এটাও শিল্পেরই অংশ। মহৎ কবিতার তো অনেক গুণাবলী থাকে। রোমান্টিক কবির সকল বৈশিষ্ট্য কি ধারন করতে যাচ্ছেন? তিনি কেন আবার বলছেন: আমার নীরব পৌরুষ ব্যর্থ নয়, অবহেলিত। অবহেলিত কেন?

কিন্তু আমাদেরকে হতবাক করে দিয়ে তিনি উচ্চারণ করেন: কিন্তু তবুও বিধাতার করুণা নিয়ে সৃষ্টি করছি মিথ্যে নয় জন্ম। এইসব কথায় কবি মনের দৃঢ়তার কথা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। এখানে তিনি ষাটের কবি সিকদার আমিনুল হকের মতো করে লিখেছেন: আর ক’টা বছর দাও সুস্থভাবে কাজ করি। ডুবুরির চেয়ে অধিক গভীরে ডুব দেই। সিকদার আমিনুল হক চেয়েছিলেন ডা: দেবী শেঠী-র কাছে সময় আর শামীম রফিক চাইলেন বিধাতার কাছে। দু’জনেই কাজের জন্য সময় চেয়েছিলেন। সিকদার আমিনুল হকের প্রেক্ষিত ছিল দেরীতে শুরু করা এবং অলসতা-তবে তার প্রেরণা ও অনুকূল প্রেক্ষাপট ছিল। কিন্তু শামীম রফিক শুরু করেছিলেন ঠিক সময়েই কিন্তু কর্মপরিবেশ ও ব্যক্তিগত অবস্থান মোটেও অনুকূল ছিল না। প্রচণ্ড প্ররিশ্রমী হওয়া সত্ত্বেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন অনেকের চেয়ে কিন্তু তিনি তা টার্ন-আউট করতে পেরেছেন। তিনি বাবার সমাধিতে কান রেখে ওখানকার ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছিলেন। তিনি নিজের মৃত্যুকে রহস্যময় করে রাখতে চান।

কবি শামীম রফিক সবচেয়ে বেশি সময় পেয়ে যাবার বেলায় কাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন? কবিতাটিকে সম্পূর্ণ রূপক অর্থে তিনি ব্যবহার করেছেন। মস্তিষ্কে ভিন্ন সংস্কার ও অনুৎঘাটিত রিমঝিম বর্ষা থাকা স্বত্ত্বেও মুখে নির্বাক ফুলের পাপড়ি আর কানে হাইলি মিউজিক্যাল সাউণ্ড লাগিয়ে দিয়েছিল। আর ইন্সট্টাকশন দিয়েছিল বুকের উত্তাপ, মুখের বাতাস, রক্ত থেকে পানি আর যেখানে যা-কিন্তু শিউলি চাই। এটা কি সত্যিই শিউলি ফুল। নিশ্চয়ই নয়। কবি তা বুঝাতে চাননি। আর সেন্সর লাগিয়ে মানুষটাকে নিছক জড় পদার্থে পরিণত করা হয়েছিল।

এরপর কবি লেখেন : স্বপ্নহীন এতদিন থাকা যায় না কিন্তু প্রাণান্ত চেষ্টা করেছি-পারিনি একটি ফুলও ফোটাতে/ আমার শাস্তি হলে হারানো উত্তাপ আর ফিরে পাব না। জীবিত একজন মানুষ স্বপ্নহীন কি করে থাকবে-একটি মুহুর্ত? শাস্তি হলে তিনি আর হারানো উত্তাপ ফিরে পাবেন না। তিনি শাস্তি চান না। আবার তিনি ফিরে যান শৈশব অহংকারে। তার শৈশব-ই শুধু অহংকারের, তবে কি এখন তিনি হারিয়ে ফেলেছেন অহংকারের সকল উপাদান? শৈশবের সম্ভবনা কি কবি আর ফিরে পাননি, যার জন্য তার এত হাহাকার। তার কবিতার অনেক জায়গায় তিনি শৈশবকে নিয়ে আক্ষেপ করেছেন।

এবার কবি শামীম রফিক যা যা নিত্য প্রয়োজন তার সবকিছুই হারিয়েছেন। মনে হয় শেষ বেলায় তিনি অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে হিসেব মিলাচ্ছেন। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, আর ঘটনার আড়ালে নিজেকে গোপন রেখে তিনি প্রস্থানকে শ্রেয়তর মনে করেন। তাই তো বলেন: ক্যাসিনো তো খেলা, কত খেলা খেলে লোকে! অতি সাধারন কথামালায় তিনি কত গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন, যা আমাদেরকে হতবাক করে। লাইনটির মধ্যে কি নেই? কবি জীবনের প্রবাহমানতার এমন এক জায়গায় এসে আটকে গেছেন সেখান থেকে পেছনে ফেরা একবারেই দুরূহ। কিসের হিমালয় গড়ে উঠে তার ভেতর? ভাঙন তো সাগর হয়, হিমালয় নয়।

আবার তিনি বুখে লুকান বিষাক্ত ছোবল। অতি উৎসাহী লোকেরা কতটা সংগোপনে ঢেলে দেয় বিষ, এঁকে দেয় বিষাক্ত ছোবল-তা সহজে বুঝে না অনেক মানুষ। তারপরও কবির আত্মার ভেতর খেলা করে আবুল হাসান, সুকান্ত আর নজরুল। কেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা জীবনানন্দ নাই কেন? তিনি বেছে নিলেন বাংলা সাহিত্যের চির দুঃখী, অকালে ঝরে যাওয়া আর শৈল্পিক বিপ্লবে নিবেদিত কতিপয় প্রাণ-আর তাদের সাথে নিজেকে মিলিয়ে দিলেন অবলীলায়।

কবি শামীম রফিক কবি ও কবিতার গোপন ভূবন থেকে প্রস্থান নিতে চেয়েছেন কিন্তু পারেননি। হয়তো পারবেন না আর তাই তিনি ত্রুটিহীন একটু সাহস নিয়ে আবার ব্রতী হয়েছেন। তিনি বহু যুবতীর স্বপ্ন সংগ্রহ করেছেন, যা দিয়ে মৃত্যুকে জয় করা যায়। তিনি নিজে থেকেই বলছেন যে, তিনি খুব ভালো চিত্রকল্প আঁকতে পারেন। কিন্তু তিনি বঞ্চিত হয়েই চিত্রকল্পের কল্পনা আর উপমা ব্যবহারের আলস্যতাকে মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু শেষ লাইনে এসে আমাদেরকে আবার সেই স্বভাবসুলভ জাদুতে হারিয়ে দিয়ে উচ্চারণ করেন: নারী তোমাকে একবারও পাব না ক্লান্তির চরম উদাসীনতায়!

নারীকে ঘিরে কবির এহেন হাহাকার আমরা খুব বেশি দেখি না। বইটির ছেচল্লিশটি কবিতা এক, দুই তিন … করে হলেও শেষ কবিতাটির সুনির্দিষ্ট শিরোনামে আবদ্ধ। কেন এমন খেলা কেবল কবিই বলতে পারেন। বইটির শিরোনামে এই কবিতাটির শিরোনাম ‘পুতুলের গল্প’। তবে কি এই গল্পই বইটির সারাংশ? এমন ভাবনা আসতেই পারে সঙ্গত কারন বশত। কিন্তু না, তা নয়। আঁধার কবিকে খেয়েছিল, সেটা সেই কবে কিন্তু না খেলেও হতো। বয়সকে তিনি উপমা আর সময়ের মিশেলে করেছেন এক অপরূপ রূপসী।

তিনি খুব সহজভাবেই বললেন: তোমার বুক শেলফে শোভা পাবে আমার কবিতার বই। আমাকে মানুষ ভাবাই ভালো, কেননা ঈশ্বর তেমনি ভেবেছেন। তবে কি কেউ তাকে মানুষ ভাবছে না? তিনি লেখেন: যারা পেয়েছিল মৃত্যুময় মেয়েটির সর্বাঙ্গে প্রেম/ তারা অতীতের হাওয়া খেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তারপর কবির হাহাকার বিদীর্ণ করে আকাশ বাতাস আর মানুষের হৃদয়। তিনি আবার বলেন: বিচ্ছেদ নেই, ধ্বংসাত্মক হাহাকার নেই, প্রতিশোধের শিখা জ্বলে না, আমি স্থির শান্ত-লোভের কাছে নতজানু নই, যৌনতা শরীরে নয়, যতটা মনে।

আর কি শুনতে চাই আমরা? এরপর আর কি বলার থাকে কবির অর্থ্যাৎ একজন মানুষের? তিনি প্রচণ্ড আক্ষেপ আর অহিংসু মানবিকতায় বলেন: অর্থের চেয়ে লোভ/ লোভের কাছে পরাজিত ভালোবাসা/ হায়রে মানুষ!

বইটির মূল্য : ১৭০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। কবি প্রকাশনী থেকে অথবা রকমারী থেকে অথবা বাতিঘরের বিভিন্ন শাখা থেকে বইটি সংগ্রহ করা যাবে। কবি প্রকাশনীর মেইল : editorkobi@gmail.com বা ০১৭১৭-২১৭৩৩৫ বা ০১৫১৯-৫২১৯৭১ হটলাইন ১৬২৯৭।

রকমারী: www.rokomari.com/kobipublisher

 

লেখা: রাহেল রাজিব 
ছবি: রোদসী ডেস্ক 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কবিতাশিল্প ও সাহিত্যশিল্প-সংস্কৃতি

বইমেলার বই – পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ (কাব্যগ্রন্থ)

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২০

চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০। মাসব্যাপী এই মেলা প্রায় শেষের দিকে। প্রতিদিন হাজারো সাহিত্যপ্রেমীদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে উঠছে মেলা প্রাঙ্গণ। লেখকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে অটোগ্রাফ কিংবা ফটোগ্রাফ দিতে। পাঠকরা খুঁজে নিচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রন্থ। আর আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের জন্য বই প্রকাশের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে প্রকাশকরা।

এবারের মেলায় ফিকশন-ননফিকশন সহ অসংখ্য বই প্রকাশ করেছে সকল প্রকাশকরা। তবে প্রবীণ লেখকদের উপর নির্ভর না হয়ে পাশাপাশি তরুণ লেখকদের প্রতিও বেশ ভালো সুনজর দিয়েছে প্রকাশনী সংস্থাগুলো। তাই এবারের মেলা যেন তরুণ লেখকদের মিলনমেলা। অনেকেই ইতিমধ্যে বই কিনে ফেলেছে অনেকেই আবার এখনো অপেক্ষায় আছে। এই অপেক্ষার পালাটা খানিকটা কমিয়ে আনতে রোদসী ম্যাগাজিন পাঠকদের সুবিধার্থে বইয়ের প্রচার করবে। আজ থাকছে কবিতার বইয়ের কথা।

কবি সোহাগ ওবায়দুজ্জামানের জন্ম কুষ্টিয়াতে। তবে বর্তমানে ঢাকার বাসিন্দা। স্কুলের গণ্ডি পেড়িয়ে কলেজ জীবনে প্রবেশ করেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই কবিতার প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসা এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ২০১২ সালের প্রথম কবিতার বই ‘একজন মোনালিসা চাঁদের গহবরে মুচকি হাসে।’ এরপর সময় যেন থমকে গেল দীর্ঘ আটটি বছরের জন্য। কিংবা হয়তো বলা যায় কবি আটটি বছরের জন্য কবিতায় সিদ্ধহস্ত হতে সময় নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ’।

বই: পালকখসা পাখির ঠোঁটে প্রতিবাদ ।। লেখক: সোহাগ ওবায়দুজ্জামান ।। প্রচ্ছদ: চারু পিন্টু ।।
প্রকাশনী: নৈঋতা ক্যাফে ।। মূল্য: ২৫০ টাকা

 

লেখা ও ছবিসূত্র: রোদসী ডেস্ক 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কবিতাশিল্প ও সাহিত্য

কবিতা || তন্ময় সিকদার

করেছে Rodoshee Magazine জুলাই ২৬, ২০১৮

দৌড়

তন্ময় সিকদার

তাদের নরম চোখের পাতায়
এই শহরের বুকের খাতায়
দৃষ্টিগুলো থমকে আছে ।
পকেট ফোনে রিংটোনে
হাতের আঁচড় টাচস্ক্রিনে
মুখবইয়ের ছবির মনে
অনুভূতি আটকে গেছে ।
হাতের মুঠোয় এই দুনিয়া
তবু নাকি সবাই একা
রাজপথে তাই শুধুই হাটা
ঘাড় মুড়িয়ে তাই দেখছে না সে ।
এখন সবাই কাঁকের মত
ডাস্টবিনে জমা নোংরা যত
করছে শুধু কেবল কা কা
অন্তরে তাই সবার ফাঁকা ।
বাতসে যেন উড়েছে টাকা
হাত মেলে শুধু ধরতে হবে
করতে হবে গাড়ি বাড়ি
তাই টাকা চাই কাড়ি কাড়ি ।
দৌড় শুধু তাই দৌড়ে চল
হিসাব করে কথা বল
না দৌড়ালে কি জীবন চলে
নাকি এই দৌড়ানোকেই জীবন বলে ?

 

 

অযাচিত ভালবাসা

তন্ময় সিকদার

তুমি তো নির্বাসিত  জোৎস্নার মত ,

শুধু উদ্যম আকশে  আলো ছড়িয়ে  দাও ।

তোমাকে অনুভব করা যায় কিন্তু স্পর্শ করতে পারি কই ?

তুমি গাড় অন্ধকার পরে চাঁদের আলোর বেদনার মত

ক্ষত সারাতে তৈরি করে দাও আরেক ক্ষত ।

তুমি অযাচিত আক্ষেপ, যেন তোমাকে ভালবাসাই অপরাধ

তুমি  চাঁদের বিকিরণের সেই কণা

যা ছিদ্র করে ঢুকে যায় বুকের বা পাশে ।

তুমি  শুক্লা পক্ষের উন্মত্ত  নর্তকী

উত্তাল নৃত্যে  বিভোর কর সমস্ত রাত্রি,

আর ভোর হতেই নির্জন বৈরাগ্য নিয়ে   হয়ে যাও নিরুদ্দেশ  ।

তুমি কোন ছলনা নও ,তারপরও আমি প্রতারিত

তুমি কোন মরীচিকা নও তারপরও আমি অযাচিত

জানি তুমি সূর্যের আলোর অন্য প্রকাশ

তবু কেন ভালোবেসে ফেলি তোমায়

সির্দ্ধাতের ন্যায়  সর্বস্ব  ত্যাগের  মোহের মত ।

 

আত্মশুদ্ধির বৃষ্টি

 তন্ময় সিকদার

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

অনুভূতির অনুর্বর মরুভূমিতে

যেখানে উত্তপ্ত বালুর মত বসবাস করে হিংসা।

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

সেই সেচ্ছা ব্যাথার কষ্টে যা অঙ্কুরিত হয়

তীব্র পরশ্রীকাতরতায়।

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

অযাচিত চাই চাই স্বভাবে,

শুধু না পাওয়ার আক্ষেপে ।

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

প্রচন্ড ঘৃণার চৌচালে

যেখানে সামান্য সহানুভূতিও জন্মায় না ।

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

মনের সেই প্রান্তে যেখানে

সহস্র ক্রোশ ভুমি শুধু আক্রোশে ভরা ।

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

মস্তিষ্কের সেই কোষে

যেখানে অনুভূতি কেবলই

লালসায় নিম্মজিত এক নিকৃষ্ট অন্ধকার ।

এক পশলা বৃষ্টি নামুক

অনুভুতির বিরান চত্বরে ।

অঙ্কুরিত হক ভালবাসা,

ভালবাসার কমল পুষ্পের সুবাস

প্লাবিত করুক অনুভূতির

অবরুদ্ধ মরুভূমিকে,

ভরিয়ে তুলুক সন্তুষ্টি আর প্রশান্তির

শীতল কোমলতায় সকল মনের অফুরন্ত ভূমিকে।

 

 

প্রতিবাদ স্ফুলিঙ্গ

 তন্ময় সিকদার

আমি  আর আমারা কিই বা করতে পারি

পৃথিবীর এই রংচটা মঞ্চে,

ন্যায় বিহীন বার বার অন্যায় এর  আগ্রাসনে।

পৃথিবীর বয়স হয়েছে যত

সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছে তত ,

তবে কেন এখনও রুঢ় আবদ্ধ শেকল হয়ে আটকে থাকে অন্যায় ।

তবে কেন এখনো দেশে দেশে অপরাধী থাকে বিচারহীন,

দোর্দন্ড প্রতাপে শাসন করে স্বৈরাচারী ।

তবে কেন ক্ষুধা বর্তমান থাকা শর্তেও কিনতে হয় মেশিনগান

তৈরি করতে হয় ফাইটার প্লেন আণবিক মরনাস্ত্র ।

আমি তো দেখি চোখের পলকেই বার বার ফিরে আসে মধ্যযুগীয় বর্বরতা,

ধর্ষণ ,নিপীড়ন , সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা , খুন রাহাজানি বেঁচে ওঠে থেকে থেকে।

চলে এক জাতি দ্বারা অন্যজাতিকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তাড়া

গনহত্যা , নারকীয় তান্ডব আর নির্মম আর্তনাদে পৈচাশিক উল্লাস ।

চলে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন

মুক্ত বাণিজ্যের নামে অর্থনৈতিক আগ্রাসন ।

সম্পদের পাহাড় জমায় ধনিক শ্রেণী

বাঁচতে হয় সেই বুর্জুয়া আর ফ্যাসিবাদীয় শাসন অনুশাসনে ।

তারপর ও এই পৃথিবীতে বার বার গর্জে ওঠে প্রতিবাদ,

ন্যায়ের মশালে লাগে আগুন

চলে সংগ্রাম , হয় দাবানল

শক্তি হয়ে প্রবল আঘাত করে অন্যায় কে ।

আর  কোন একদিন সেই প্রতিবাদের ফসল

একটি স্নিগ্ধ গোলাপ হয়ে ফোটে

সত্য , ন্যায় আর মানবিকতার নির্মল বাগানে ।

আমি বা আমার আর কিই বা করতে পারি

হ্যাঁ ভাবতে পারি ,ভাবাতে পারি

গর্জে উঠতে পারি ওই প্রতিবাদ স্ফুলিঙ্গে

মশালের আগুন হয়ে ।

তুমুল করাঘাতে আঘাত করতে পারি ওই অন্যায় এর

হিমালয়ে বারং বার ।

 

 

 

 

০ মন্তব্য করো
2 FacebookTwitterPinterestEmail

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook