রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

কাভার স্টোরি

এই সংখ্যায়প্রধান রচনা

ক্যারিয়ার গোল

করেছে Wazedur Rahman মে ১৭, ২০২০

ক্যারিয়ার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত যত আর্লি নেওয়া যায়, ততই ভালো। আমাদের দেশে অনেকেরই এটা বুঝতে বুঝতে দেরি হয়ে যায় যে সে ভবিষ্যতে কী হতে চায়। এমনকি অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পরও অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে যে এখন সে কী করবে।

ক্যারিয়ার বলতে এখানে বোঝানো হয় যে কোনো একটা কাজ বা পেশা, যাতে কিছু আয় হবে। কিন্তু ক্যারিয়ার আদতে এমন কিছু না। ক্যারিয়ার হচ্ছে সফলতার উদ্দেশ্যে যাত্রা, স্বপ্নের পথে যাত্রা। মানে আমি যে পেশাটায় নিয়োজিত আছি সেখানে আরাম পাচ্ছি, সুখ পাচ্ছি, স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। যদি আমি কমফোর্টই ফিল না করি, তাহলে টাকা দিয়ে আমি করব কী!

বিদেশে ক্যারিয়ার গঠনে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্প করে। ছাত্রছাত্রীদের কোন দিকে আগ্রহ এটা বুঝতে পেরে বাবা-মা বা স্কুলশিক্ষকেরা খুব অল্প বয়সেই বাচ্চাদের তার শখ-স্বপ্ন ও আগ্রহের জায়গাগুলোতে চালিত করেন। কিন্তু আমাদের দেশে এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই।

অনেকেই মনে করেন, ভারতবর্ষে শিক্ষার যাত্রাটাই শুরু হয়েছে কিছু কর্মসংস্থান তৈরির জন্য! এ দেশে কর্ম অনেকটা বোঝার মতো। কিন্তু কাজও যে আনন্দময় হতে পারে এবং তাতে ব্যক্তি ও দেশের মঙ্গল হতে পারে, এমন নজির খুব বেশি নেই। ক্যারিয়ার হতে হবে এমন, যাতে নিজের মঙ্গল হয়, দেশ ও দশেরও উপকার হয়। তা না হলে অসংখ্য শ্রম অকারণে বৃথা যাবে।

যেখানে পৌঁছাতে চাও

তুমি কোথায় পৌঁছাতে চাও, এটা তোমাকেই আগে বুঝতে হবে। সত্যিই এটা আর কেউ বুঝবে না। কিন্তু বুঝতে পারলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে তোমার দেরি হতে পারে যে সত্যিই তুমি এ পথে চলতে চাও কি না! কারণ, তোমার পরিবার হয়তো অন্য রকম কিছু চাইতে পারে। সাধারণত আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো ক্যারিয়ার বলতে বোঝে কেবল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, ব্যবসায়ীসহ আরও কিছু নির্দিষ্ট আদি পেশা, যার মাধ্যমে ভালো আয় হয় কিন্তু গত ২০-৩০ বছরে যে ক্যারিয়ার ফিল্ডের অনেক কিছুই বদলে গেছে এ বিষয়ে বাবা-মায়ের খুব ভালো ধারণা নেই।

তোমরা যারা আমির খান অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিটি দেখেছ তারা খুব ভালো করেই জানো বাবা-মায়েরা এখনো কেমন করে ছেলেমেয়েদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে থাকে। কিন্তু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী না হয়েও তুমি শুধু একজন আর্টিস্ট বা লেখক হয়েও মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারো। যদি তুমি চাও তোমার স্বপ্নের পথে যেতে, যে কোনো পেশাতেই তুমি সফলতার চূড়ায় উঠতে পারো। বিষয়টা হচ্ছে আগে তোমাকে চাইতে হবে, নিজের কাজটার প্রতি হানড্রেড পারসেন্ট পেশন্যান্ট থাকতে হবে।

তা না হলে যত বড় পেশাই হোক, তুমি ছিটকে পড়ে যাবে। এমন উদাহরণ চোখের সামনে আছে, আত্মীয়স্বজন বা ক্ষমতাবান কাউকে ধরে খুব বড় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু যোগ্যতার কারণে সেখানে আর টিকতে পারেনি। নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে মান বাঁচাতে। তাই তুমি কোথায় পৌঁছাতে চাও এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য তুমি কতটুকু তৈরি, সেটা তুমিই সবচেয়ে ভালো জানো।

 

ক্যারিয়ারে সফলতা কী?

ক্যারিয়ারে সফলতা কী? প্রশ্নটা একটু জটিল। সফলতা বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? ধরো, তোমার এক বন্ধু বিরাট ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিয়ে এর মধ্যেই কোটিপতি হয়ে গেছে। কিন্তু তার এক মুহূর্তের অবসর নেই। দিন-রাত ছুটছে। ভোরবেলা সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, ফেরে গভীর রাতে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যও পায় না ঠিকমতো। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারে না মাসে একবারও। বন্ধুরা ফোন করলেই বলে, ‘ব্যস্ত রে, রাখি, পরে কথা বলব।’ এমন লোককে আর যা-ই হোক সফল বলা যায় না। তার হয়তো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আছে, কর্মক্ষেত্রে সে সফলও, কিন্তু ব্যক্তিজীবনে কি আসলেই সে সফল?

আবার ধরো, তোমার এক বন্ধু একটা পত্রিকায় বা টিভি চ্যানেলে কাজ করে। মাসিক বেতন ধরো তার মাত্র ৩০-৪০ হাজার টাকা। একটু টানাটানি আছে। তারপরও এ দিয়ে ভালোই চালিয়ে নেয়। নিয়মিত গান শুনে, সিনেমা দেখে, বই কেনে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। নিজের অলস-অবসর সময়টা দারুণভাবে উপভোগ করে। তাহলে কাকে তুমি সবচেয়ে বেশি সফল বলবে? আসলেই সফলতার সংজ্ঞা বোঝাটা একটু কঠিন। এ নিয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের দারুণ একটা কথা আছে। তিনি বলেছিলেন,

চোর-বাটপারও অনেক সময় সফল হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশের সফল লোকদের মধ্যে ৮০ ভাগই তো দুর্বৃত্ত। এমন জিনিস নিয়ে পাগল হওয়ার আর কী আছে? সবচেয়ে বড় যা জিনিস সাফল্য নয়, সার্থকতা।

তাই তো। শেষ পর্যন্ত দিন শেষে আমি শান্তিমতো ঘুমাতে যেতে পারছি কি না, আর আমি আমার স্বপ্নের পথে স্থির আছি কি না, সেটাই হচ্ছে আসল কথা।

বাংলাদেশে সফল ক্যারিয়ার হিসেবে যে পেশাগুলোকে আইডেন্টিফাই করা হয়

তারপরও কিছু পেশা আছে, যা আর্থিক নিরাপত্তা দেয়, সামাজিক সম্মানও দেয়। এ রকম কিছু পেশার মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার ছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশে এমন কিছু নতুন পেশার উদ্ভব হয়েছে, যেখানে খুব সহজেই আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক সম্মানও আসতে পারে। যেমন কম্পিউটার প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। এগুলোর পাশাপাশি নানা রকম ক্রিয়েটিভ কাজ তো আছেই। চাইলেই এখন কেউ শুধু ফটোগ্রাফি করে লাখ টাকা ইনকাম করতে পারে।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এখন খুবই আকর্ষণীয় একটি পেশা। এর সঙ্গে মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, ক্যারিয়ার গ্রুমিং, করপোরেট ট্রেইনার, মোটিভেশনাল স্পিকার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট তো আছেই। তুমি চাইলে ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে কিংবা মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলে কিংবা নানা মজার মজার ভিডিও আপলোড করেও এখন টাকা কামাতে পারো। মোট কথা টাকা কামানোর একটা অসংখ্য পথ আছে এবং তা তুমি করতে পারবে তোমার শখ, স্বাধীনতা বজায় রেখেই।

তোমার শুধু দরকার হবে ইচ্ছাশক্তি আর স্বপ্ন। এসব করতে, শিখতে খুব বেশি টাকাপয়সারও প্রয়োজন হয় না। তা তুমি করতে পারবে কিছু ধারদেনা করেই। গুগল সার্চ দিয়েই তুমি জেনে নিতে পারবে কীভাবে কী করতে চাও। আর বন্ধুদেরও হেল্প পাবে। আর এসবও যদি না পারো, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ-বিজিবিতেও প্রচুর লোক নেয় প্রতিবছর। এগুলো যে কোনো দেশেরই সম্মানজনক ও নিরাপদ পেশা। নিজের পছন্দমতো কোথাও ঢুকে পড়ো। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দরকার শুধু দক্ষতার আর পথযাত্রার।

 

যারা উচ্চমর্যাদার পেশা ছেড়েছিলেন

সত্যি বলতে নিজের পছন্দমতো পেশা বেছে নেওয়াটা সহজ কথা নয়। সবার এ সৌভাগ্যটা হয় না। খুব অল্প কিছু মানুষই এ বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। আসলে সৌভাগ্যবান না, তারা সাহসী ও পরিশ্রমী। তারা নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে শিখেছেন। অনেক সময় আর্থিক-সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা নিজের পছন্দকে বিসর্জন দিই। আবার এমন বিরল দৃষ্টান্ত আছে, যারা নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেক উচ্চমর্যাদার পেশা ছেড়েছেন।

যেমন বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাট্যকার হাসান ফেরদৌস। তিনি আর্মি অফিসার ছিলেন। নাটক লেখার জন্য সামরিক বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলম হাতে তুলে নিলেন এবং সফল হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বাংলাদেশের সফল নাট্যকারের খ্যাতি ধরে রেখেছেন। নাটক-সিনেমা বানানোর জন্য এবং সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে যুক্ত থাকার জন্য হুমায়ূন আহমেদও একসময় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তত দিনে তিনি অবশ্য সাহিত্যজগতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলেন। তাও শেষ বয়সে এসে এমন সম্মানজনক একটি চাকরি ছেড়ে দেওয়া সহজ কথা না।

তার চেয়েও বড় উদাহরণ কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি একটা স্কলারশিপ নিয়ে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। সেই ষাটের দশকে। তখনো আমেরিকা এক স্বপ্নের দেশ, আর ভারতীয় কিংবা উপমহাদেশের লোকদের জন্য সেখানে যাওয়াটা সহজ কথা নয়। সুনীল সেখানে গিয়ে সারা জীবনেরই থাকা-খাওয়া এবং চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভাবলেন, আমেরিকা থেকে তিনি কী করবেন? তিনি তো লিখবেন, আর তাকে লিখতে হবে বাংলাতেই। নিতান্তই শূন্য হাতে তিনি নিজের দেশে ফিরে এলেন। তারপর তার উত্থান আর কারও জানার বাকি নেই। তিন-চার দশক ধরে তিনি বাংলা সাহিত্য শাসন করে গেছেন। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।

রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে পড়তে গিয়েও ব্যারিস্টার না হয়ে ফিরে এসেছিলেন। তাতে তার সফলতা কেউ আটকাতে পারেনি।

আজকের প্রযুক্তি জগতের দুই মহান দিকপাল মার্ক জাকারবার্গ এবং বিল গেটসও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় ছিলেন বিরাট ফাঁকিবাজ। কিন্তু আজকের পৃথিবীর তারাই সবচেয়ে সফলতম ব্যক্তি। আমি এটা বলতে চাচ্ছি না যে স্কুল ফাঁকি দিলেই কেউ রবীন্দ্রনাথ হয়ে যায়, বরং আমি বলতে চাচ্ছি যে নিজের কাজটা ভালোবাসা দিয়ে করলে যে কোনো উপায়েই মানুষ সফল হতে পারে। কোনো কিছুই তাকে আটকাতে পারে না।

 

বাবা-মায়েরা আরেকটু সচেতন হতে পারো

আমাদের সমাজে পরিবার, পিতা-মাতা এখনো সন্তানবান্ধব নয়, বরং তারা খুব কর্তৃত্বপরায়ণ। বেশির ভাগ বাবা-মা’ই সন্তানদের নিজের ইচ্ছা ও খেয়ালখুশিমতো চালাতে চায়। তারা মনে করে এটা তারা সন্তানদের ভালোর জন্যই করছে। তাতে সন্তান হয়তো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিতও হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেই সন্তান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীও হয়ে ওঠে। এটা বোঝা যায় অনেক পরে, যখন সন্তান স্বাভাবিকভাবে আর কারও সঙ্গে চলতে-ফিরতে পারে না।

পড়াশোনা থেকে শুরু করে ক্যারিয়ার পর্যন্ত বাবা-মায়েরা তাদের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেন। তারা শুধু মানুষের কাছ থেকে শুনেছে এটা করলে ভালো হবে, ওটা পড়লে ভালো হবে, ওই চাকরিটা ভালো। ব্যস, এতটুকু জেনেই তারা সন্তানের ওপর জোর করে সেই বোঝা চাপিয়ে দেয়। খুব অল্প বাবা-মা’ই সন্তানের ইচ্ছা ও স্বপ্নকে মূল্য দেয়।

এখন বিসিএস বা সরকারি চাকরির জন্য অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের চাপ দিয়ে থাকে। কিন্তু সন্তানের হয়তো কোনো সৃষ্টিশীল পেশায় আগ্রহ, বেতনের চেয়ে, সামাজিক স্ট্যাটাসের চেয়ে সে বেশি প্রাধান্য দিতে চায় নিজের ইচ্ছা ও স্বাচ্ছন্দ্যকে। কিন্তু বাবা-মা তার ইচ্ছাকে কোনো গুরুত্বই দিল না। উল্টো বলবে, এটা কোনো কাজ হলো, এসব করলে মানুষকে মুখ দেখাব কী করে! ও দেখো কত বড় জব করে, তোমার খালাতো ভাইকে দেখো ব্যাংকের অফিসার, তোমার মামাতো বোন ডাক্তার, আর তুমি এসব করবে! এতেই সন্তানের মনটা মরে যায়।

বরং সন্তান যা-ই করতে চায়, তাতেই যদি উৎসাহ দেওয়া যায় তাহলে সেখানে ভালো করার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। আর পরিবার থেকেই যদি সে উৎসাহ না পায়, তখন আসলে খুব বেশি দূর আর এগোনো যায় না। আজকালকার আধুনিক বাবা-মায়েরা অবশ্য সন্তানের ইচ্ছাকে অনেক মূল্য দেয়। তবে সন্তানের ইচ্ছাকে মূল্য দেওয়ার জন্য সেই সব বাবা-মাকে কতখানি সুশিক্ষিত হতে হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, তাহলে কাউকে ঠেকানো যায় না। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে পৃথিবীজুড়েই। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেডিং সাইট আলিবাবার কর্ণধার জ্যাক মার কথা আমরা জানি। তিনি চীনের শীর্ষ ধনী। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন না। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে বারবার ফেল করে তিনি বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। সেখানেও কৃতকার্য না হওয়ায় লেখাপড়ার পাট জীবনের তরে চুকিয়ে দেন।

 

বহু চাকরির আবেদন করে ব্যর্থ হন। চীনে যখন প্রথম কেএফসি আসে, সেখানেও তিনি আবেদন করেন। ২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জনকে নেওয়া হয়, একমাত্র যে ব্যক্তিটিকে নেওয়া হয়নি তিনি জ্যাক মা। তাও তিনি আশা ছাড়েননি। এখন বিশে^র অন্যতম ধনী ব্যক্তি। এখন তিনি হাসতে হাসতে নিজের ব্যর্থতার কথা বলে বেড়ান।

এমন উদাহরণ আছে, জনপ্রিয় প্রযুুক্তিবিদ অ্যাপেল ইনকরপোরেশন ও পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ জবসকে নিয়েও। তার আসল বাবা-মা এত গরিব ছিলেন যে তাকে ছোটবেলায় দত্তক দিতে বাধ্য হন। হাইস্কুল শেষ করার পর তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ক্যালিগ্রাফিসহ কিছু কোর্স শিখেছিলেন। আর ছিল কম্পিউটারের প্রতি প্রচুর আগ্রহ। পরে বন্ধু রোনাল্ড ওয়েনকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান অ্যাপেল গড়ে তোলেন। কিন্তু একসময় ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এই প্রতিষ্ঠান তাকে ছেড়ে দিতে হয়। নিজের হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে তিনি হতাশায় বিমর্ষ হয়ে যান।

পরবর্তী সময়ে সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে আবার উঠে দাঁড়ান। গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান নেক্সট ইনকরপোরেটেড। বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে অসংখ্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তার আশা-জাগানিয়া বক্তব্যগুলো পৃথিবীজুড়েই অনেক জনপ্রিয়। তার কথাগুলো এখন বাণী চিরন্তনীর মতো স্মরণীয়। তার জনপ্রিয় উক্তিগুলোর মধ্যে আছে,

আপনাকেও পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে, এমন চিন্তাই কেবল কোনো কিছু হারানোর দুশ্চিন্তা থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। আপনার জীবনের একটি বড় অংশজুড়েই থাকবে আপনার কর্ম এবং যে কাজটি নিজের কাছে সেরা বলে মনে হয় সেই কাজটি করতে পারাই হলো আত্মতুষ্টির একমাত্র উপায়। কবরস্থানে সবচেয়ে ধনী হয়ে থাকার ব্যাপারটি আমার কাছে তেমন কিছুই মনে হয় না…রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এটা ভেবে ঘুমানো উচিত যে আমরা দারুণ কিছু করতে পেরেছি…এটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার।

সুতরাং তুমি কী হতে চা-ও সেটাই হচ্ছে বড় ব্যাপার। যদি তোমার লক্ষ্য অটুট থাকে, তোমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। একটা কথা আছে, যদি তুমি কিছু চাও তাহলে অবশ্যই পাবে, আর যদি না পাও তাহলে ধরে নিও তুমি আসলে মন থেকে ওটা চাওনি।

আবার এ কথাও সত্য, আমরা সবাই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব নই। ইচ্ছা করলেই আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি না। তারা তো লাখ, কোটিতে একজন-দুজন। আমরা বেশির ভাগ মানুষই তো খুব গড়পড়তা সাধারণ মানুষ। কোনো রকমে একটা কাজকর্ম করে একটু ঘুরেফিরে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। এত সফল আমরা সবাই হতেও চাই না। চেষ্টা করলে সেটা করা কঠিন কিছু না। এ কথা সত্য ভয়ংকর প্রতিযোগিতার এই পৃথিবী।

দিন দিন সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা বাড়ছে। আবার এ কথাও সত্য, প্রতিযোগিতা যেমন বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কর্মক্ষেত্র, নানা সুযোগ-সুবিধাও। আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে কোনো একটা কাজে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে অন্য পথ খুঁজতে হবে। নিজের আগ্রহের সবগুলো জায়গায় টোকা দিয়ে দেখতে হবে। একটা কথা আছে, তুমি টোকা দাও, দরজা খুলে যাবে। হাঁটো, পথ পাবে।

আজকাল অনেকেই একটা নির্দিষ্ট বিশ^বিদ্যালয়ে বা নির্দিষ্ট সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। যেন ওই একটা মাত্র সাবজেক্ট বা বিশ্বিবদ্যালয়েই তার জীবন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পায়নি বলে তিন দিন হতাশায় ভাত খায়নি এমন ছেলে আমি চোখের সামনে দেখেছি। অথচ ডাক্তার হতে চাইলে দেশে এখন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সে শেষ পর্যন্ত একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ডেন্টালে ভর্তি হয়েছিল এবং এখন সে সফল।

আমার আরেক বন্ধু ইংরেজি সাহিত্যে পড়ত জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের একটা কলেজে। এ নিয়ে তার মনে খুব সংকোচ ছিল। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ে সে কী করবে? যেখানে বড় বড় বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাস করে নাকি ছেলেমেয়েরা বেকার থাকে বলে সে শুনেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার সে এখন একটা বিদেশি ফার্মে কাজ করে। কয়েকবার বিদেশে গিয়ে ঘুরে এসেছে। শেষ পর্যন্ত সে পড়াশোনাটাকে নিয়েছিল প্রেম হিসেবে, যা-ই পড়ত বুঝে পড়ত, আগ্রহের জায়গা থেকেই সে ইংরেজি সাহিত্য বুঝতে চেষ্টা করেছিল। এখন সে সফল।

কেউ যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে দক্ষ হয় তাকে ঠেকিয়ে রাখার মতো শক্তি এই পৃথিবীতে কারও নেই। আজকাল তো একটু ভালো ইংরেজি জানলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় একটু ভালো হলে বিদেশে পড়তে যাওয়াটাও কোনো ব্যাপার না। প্রচুর ছেলেমেয়ে এখন প্রতিবছর লন্ডন, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগ পড়াশোনার মাধ্যমেই।

শেষ করি অসামান্য একটা গল্প দিয়ে। এক পাথুরে পাহাড়ের ওপরে বড় একটা গাছ বেড়ে উঠেছে। এটা দেখে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা তো বিস্মিত, আরে এখানে এই গাছটা এত বড় হলো কী করে! এখানে তো পানির কোনো উৎস নেই। পানি ছাড়া তো এই গাছ বাঁচার কথা না। আর তো এ রকম কোনো গাছ নেই আশপাশে। বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, গাছটা যখন এত বড় হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই কোথাও পানির উৎস আছে। তারা গাছটার গোড়া থেকে খুঁড়তে শুরু করলেন। অনেক দূর খোঁড়ার পর দেখেন শিকড়ের মূলটা বাঁকা হয়ে অন্যদিকে চলে গেছে। তারা সেদিকেও খুঁড়লেন এবং কী আশ্চর্য, সেদিক দিয়ে পানির একটা শীর্ণ ধারা বয়ে যাচ্ছে।

গাছ যদি নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে, তুমি তো মানুষ। তুমি এত ভয় পাও কেন!

লেখা: কামরুল আহসান 
ছবি: সংগ্রহীত 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনারোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসা বিষয়টি ইউনিভার্সাল

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ৬, ২০২০

প্রচলিত আছে যে, ফ্রয়েড একবার এক হল থেকে বক্তৃতা দিয়ে বেরোচ্ছেন, তখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এরিক ফ্রম???। একটু হেসে বললেন, আপনি যেখানে শেষ করলেন, আমি সেখান থেকে শুরু করব।  ফ্রয়েডের যৌনতার বিরুদ্ধে এরিক ফ্রম ঘোষণা করলেন, The soul has no sex.

আমি এ পর্যন্ত যত অসাধারণ কথা শুনেছি, তার মধ্যে এটি একটি। আমরা ততদূর পর্যন্ত আমাদের মনকে বিকশিত করতে পারি, যতদূর পর্যন্ত আমরা জানি। আসলেই তো তাই। আত্মার তো কোনো লিঙ্গ নেই। আমরা মানুষকে শুধু যৌনতার মাপকাঠিতে ভালোবাসি না। যদিও ফ্রয়েডের তত্ত্ব বড় বেশি যৌনতানির্ভর। ফ্রয়েড এমনও বলেছেন, যার সঙ্গে মানুষের যৌন সম্পর্ক যত গভীর, তাকেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

তাহলে আমরা একটা পশুপাখি কিংবা গাছের পাতাকে কেন ভালোবাসি! দূর আকাশের একটি নক্ষত্রের জন্য কেন আমাদের মন হাহাকার করে ওঠে? কারণ আমরা জানি, যে পৃথিবীতে আমরা আছি, সেখানে আমরা একদিন থাকব না। মৃত্যুর বিপরীতে আমরা জীবনের একটা অর্থ দাঁড় করানোর জন্য আমরা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ভালোবাসি। ভালোবাসাই আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র অর্থ।

ভালোবাসা বিষয়টি কী? আসলেই কেন মানুষের মনে ভালোবাসা মতো পবিত্র একটি অনুভূতি জাগ্রত হয়? ভালোবাসার কী দরকার? ভালো না বাসলে কী হয় তা নিয়ে প্রচুর আধ্যাত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক, বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সখী, ভালোবাসা কারে কয়/ সে কি কেবলই যাতনাময়? সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুঃখের শ্বাস?

শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আসলেই কি এর কোনো উত্তর আছে? বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য বের করা সম্ভব, কিন্তু, প্রেম-ভালোবাসা যে কী জিনিস, তার রহস্য বের করা অসম্ভব! আসলেই কি তাই। ব্যাপারটা কিছুটা রহস্যময় হলেও মানুষ তার আদ্যোপান্ত-নাড়ি-নক্ষত্র খুঁজে বের করার জন্য পিছিয়ে নেই। আদিমকাল থেকেই মানুষ তার জীবনের একটা অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছে। মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করেছে, আমি কে? কোত্থেকে এলাম? এই পৃথিবীতে আমার কী কাজ? এই সমস্ত প্রকৃতি, বিশ্বচরাচরের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? এর সমস্ত উত্তর মানুষ খুঁজে পেয়েছে একমাত্র ভালোবাসার মধ্যে।

আদিমকাল থেকেই মানুষ তার জীবনের একটা অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছে।

ভালোবাসাই মানুষের একমাত্র আশ্রয়। অসীমের দিকে চোখ মেলে মানুষ খুঁজে পেয়েছে ঈশ্বরকে। ঈশ্বর হচ্ছেন সেই ধারণা, যার নামে সমস্ত মানুষ অনন্ত অসীমের সঙ্গে এক হয়। ঈশ্বর হচ্ছেন ভালোবাসার অপর নাম। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রাচীন ধর্ম-দর্শনের হাত ধরেই মানুষের মনে ভালোবাসার বোধ জাগ্রত হয়েছে। এটা শুধু শারীরিক কোনো ব্যাপার না। এর সঙ্গে যুক্ত আছে আত্মিক বিকাশ, বোধ ও মনন। পরবর্তীকালে বিবর্তনবাদী দার্শনিকেরা এসেও আবিষ্কার করেছেন কেন মানুষের মনে ভালোবাসা জেগে ওঠার প্রয়োজন হলো? এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা রয়েছে। মানুষ একটা কেমিক্যাল পদার্থ বটেই। তবে শুধু হরমোনগত কারণেই যে মানুষ ভালোবাসে, তা না।

ভালোবাসা সত্যিই বাস্তব বোধবুদ্ধিবহির্ভূত এক অনন্ত রহস্যময় অনুভূতির নাম। মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাকে তো আবার ঘৃণাও করে। মানুষ তো নিজেকেও ঘৃণা করে। অন্যকে ঘৃণা করে বলেই নিজেকে ঘৃণা করে, আবার নিজেকে ঘৃণা করে বলেই অন্যকে ঘৃণা করে। সাবজেক্ট ও অবজেক্টের এ এক অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব। প্লেটো তার সিম্পোজিয়ামে বলেছিলেন, মানুষ সুন্দরকে ভালোবাসে। মানুষ যেহেতু অন্য কোনো সুন্দরকে ভালোবাসে, তার মানে হচ্ছে সে নিজে সুন্দর নয়, কিংবা তার মধ্যে সুন্দরের কিছু অপূর্ণতা আছে বলেই সে অন্য কোনো সুন্দর কামনা করে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চায়।

কিন্তু নার্সিসাস তো নিজেকেই ভালোবেসেছিল, সে অধিক সুন্দর বলে। কিন্তু না, নার্সিসাসও আসলে ভালোবেসেছিল অন্যকেই। লেকের জলে নিজের ছায়া দেখে সে ভেবেছিল এ বোধ হয় অন্য কেউ। সেই অন্য কারও সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই সে লেকের পাশে বসে থাকতে থাকতে না খেয়ে শুকিয়ে মরল। গ্রিক মিথের গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যায়, নার্সিসাসের মৃত্যুতে।

কিন্তু পাওলো কোয়েলহো তার ‘অ্যালকেমিস্ট’ উপন্যাসে গল্পটির আরেকটু সংযোজন করেছেন। নার্সিসাসের মৃত্যুর পর একদিন জঙ্গলে আসেন দেবীরা, যারা নার্সিসাসের প্রণয়প্রার্থী ছিলেন। তারা লেকটি খুঁজে পান। দেখেন লেকের পাশে সুন্দর একটি ফুল ফুটে আছে। তারা লেকটিকে বলেন, আহা, তুমি কী ভাগ্যবান! তুমি একা নার্সিসাসের সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করছ! লেকটি বিস্মিত হয়ে বলে, নার্সিসাস কি দেখতে খুব সুন্দর ছিল!

দেবীরা বলেন, তোমার চেয়ে ভালো তা আর কে জানে! তোমার তীরে বসে থেকেই তো সে জীবন শেষ করে দিল। তুমি একাই তার সৌন্দর্য উপভোগ করেছ। লেকটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, নার্সিসাস সুন্দর ছিল কি না, সেটা আমার কখনো খেয়াল করা হয়নি। তার চোখে তো আমি কেবল আমার নিজের সৌন্দর্যই ঝকমক করতে দেখেছি!

আসলেই তো তাই। আমরা অপরকে ভালোবাসি তো কেবল নিজের সৌন্দর্যই অবলোকন করার জন্য। ভালোবাসা তো একটা জাদুর আয়না, যেখানে কেবল নিজেকেই দেখা যায়।

ভালোবাসা সত্যিই বাস্তব বোধবুদ্ধিবহির্ভূত এক অনন্ত রহস্যময় অনুভূতির নাম।

ভালোবাসা প্র্যাকটিসের বিষয়

ভালোবাসা সম্পর্কে সবাই দু-চার কথা বলতে পারে। অন্তত বয়ঃসন্ধিকাল যার অতিক্রম হয়েছে তার এই অভিজ্ঞতা মোটামুটি আছে যে ভালোবাসা কী, ভালোবাসার কী দরকার। সামাজিক, পারিবারিক কারণেই মানুষ তা পেয়ে যায়। তারা ভালোবাসানির্ভর অসংখ্য চলচ্চিত্র দেখছে। তারা প্রতিনিয়ত ভালোবাসা নিয়ে দুনিয়ার গান শুনছে। তারপরও ভালোবাসা যে শিখতে হয়, এটা নিয়ে খুব অল্প লোকই ভাবে।

বেশির ভাগ মানুষই শুধুু ভালোবাসা পেতে চায়, ভালোবাসতে চায় না। এর জন্য নিজেকে যতখানি আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। একজন নারী নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নিজের শরীরের দিকে মনোযোগ দেয়, হাল-জামানার বাজার চলতি ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি করতে থাকে, আর একজন পুরুষ সেই নারীটিকে জয় করার জন্য নিজেকে সেই নারীটির যোগ্য করে তোলার জন্য মনোযোগ দেয় অর্থ রোজগারের দিকে।

তারপর তারা যখন এক হয়, পরস্পরকে ভালোবাসে, সেটা একটা বাজারি ভালোবাসা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে প্রকৃত ভালোবাসা বলে কিছু থাকে না। কারণ, তারা কেউ কাউকে ভালোবাসে না, তারা শুধু ভালোবাসা কিনতে চায়। কিন্তু ভালোবাসা তো পণ্য নয়। ভালোবাসা একটা শিল্প। তাই অন্যান্য শিল্পের মতোই ভালোবাসা শিখতে হয়। নিরন্তর চর্চার মধ্য দিয়েই তা অর্জন করতে হয়।

এরিক ফর্ম???? তার ‘আর্ট অব লাভিং’ বইয়ে বলছেন, সংগীত, নাট্যকলা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র যে কোনো শিল্পেরই দুটো দিক : একটা হচ্ছে তাত্ত্বিক, আরেকটা হচ্ছে প্রায়োগিক। ভালোবাসার শিল্পকলাও সে রকম, প্রথমে জানতে হয় কীভাবে ভালোবাসতে হয়, তারপর সেটা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হয়, আমি কাকে কতটুকু ভালোবাসি সেটা প্রমাণ করতে হয়।

‘ভালোবাসা’ শুধু একটা শব্দমাত্র না, ভালোবাসা হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য। কোনো মা যদি তার সন্তানকে দুধ না খাওয়ায়, কোলে নিয়ে ঘুম না পাড়ায়, আদর-যত্ন না করে তাকে কি আমরা কোনো দিন মায়ের ভালোবাসা বলব? কেউ যদি বলে, ‘আমি ফুল ভালোবাসি’, কিন্তু, ফুলগাছের প্রতি সে কোনো যত্ন নিল না, তাকে আমরা ভালোবাসা বলতে পারি না। ঈশ্বর জোনাহ্কে বলছেন, যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে কিছু পরিশ্রমও আছে, যেখানে পরিশ্রম নেই, যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই।

‘ভালোবাসা’ শুধু একটা শব্দমাত্র না, ভালোবাসা হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য।

দায়িত্ব-কর্তব্যের সঙ্গে ভালোবাসার মধ্যে আরেকটা ব্যাপার যুক্ত আছে, সেটা হচ্ছে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা মানে হচ্ছে যে যে রকম তাকে সেভাবেই গ্রহণ করা, তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া, সেভাবেই ভালোবাসা। যখনই ভালোবাসার মানুষকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা চলে আসে, তখনই শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার আসে অধিকারবোধ থেকে। অধিকারবোধ আসে নিজের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে। অর্থাৎ তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, আমার প্রয়োজনে তোমাকে থাকতে হবে, আমার কথামতো চলতে হবে। তখনই ভালোবাসায় শর্ত আরোপ হয়ে যায়। তার মানে যখনই ভালোবাসায় শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দেয়, তখনই সেটা প্রকৃত নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকে না।

শিশুতোষ ভালোবাসা হচ্ছে এ রকম যে সে মনে করে, আমাকে সবাই ভালোবাসে বলেই আমি সবাইকে ভালোবাসি। কিন্তু প্রকৃত যথার্থ ভালোবাসা হচ্ছে আমি ভালোবাসি বলেই আমাকে সবাই ভালোবাসে। অবুঝরা বলবে, তোমাকে আমার প্রয়োজন বলেই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু যারা বুঝে তারা বলবে, না, তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই তোমাকে আমার প্রয়োজন।

একজন স্বার্থপর মানুষ শুধু নিজেকেই ভালোবাসে, সে শুধু নিজের সম্পর্কেই আগ্রহী, সে শুধু নিজের জন্যই সবকিছু চায়, অপরকে কিছু দেওয়ার মধ্যে তার কাছে কোনো আনন্দ নেই, তার সব আনন্দ নিজে পাওয়ার মধ্যে। প্রকৃত অর্থে, সে আসলে নিজেকেও ভালোবাসে না, আসলে সে নিজেকে ঘৃণা করে। কাউকে ভালোবাসাটা শুধু কোনো অনুভূতির ব্যাপার না, এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, বিচারের ব্যাপার, প্রতিজ্ঞার ব্যাপার। নানা রকম অনুভূতি আসতেও পারে, যেতেও পারে, কিন্তু বিচারবহির্ভূত সিদ্ধান্ত ছাড়া আমি কীভাবে জানব যে এই অনুভূতি সত্যিই চিরদিন থাকবে!

মা যখন তার সন্তানকে ভালোবাসে, তখন এই সিদ্ধান্তটা নেয় যে সন্তানের প্রতি তার কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে। সত্যি বলতে, সন্তান জন্মের আগেই মা এই দায়িত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়, তার কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। যখন দুজন নারী-পুরুষ একত্রিত হয়, বিয়ে করে, সংসার করে, তারাও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

পারিবারিক পছন্দের অনেক বিয়েতে স্বামী-স্ত্রী বিয়ের পর উভয়কে ভালোবাসতে শুরু করে, কারণ, তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু তাদের বিয়ে হয়েছে, বাকি জীবন একসঙ্গে পাশাপাশি থাকতে হবে সেহেতু পরস্পরকে ভালোবাসতে হবে। আমি রাস্তায় কাউকে দেখলাম আর বললাম, তার জন্য পাগল হয়ে গেছি, তাকে না পেলে মরে যাব…এর মধ্যে ভয়ংকর যৌনাভূতি থাকতে পারে, কোনো ভালোবাসা নেই।

কাউকে ভালোবাসাটা শুধু কোনো অনুভূতির ব্যাপার না, এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, বিচারের ব্যাপার, প্রতিজ্ঞার ব্যাপার।

ভালোবাসার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত

এই কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা নিউজ ভাইরাল হয়েছে, উঁচু বিল্ডিংয়ের জানালার কার্নিশ থেকে পড়ে যাওয়ারত এক শিশুকে জীবনবাজি রেখে বিল্ডিং বেয়ে উঠে বাঁচিয়েছে এক যুবক। তারপর গত বছর জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন এক ডুবুরি। শেষ পর্যন্ত সব শিশুকেই উদ্ধার করা গেছে। এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে পৃথিবীজুড়েই।

বিপদে পড়লে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবতার সেবায় মানুষের এগিয়ে আসার নজির আমরা দেখি। শীতে-বন্যায়-ভূমিকম্পে যখন একটি অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তখন অসংখ্য মানুষ এগিয়ে আসে মানবতার সেবায়। এসবই অনন্য ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ একদিনও টিকতে পারত না।

মানুষের গল্প তার ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসা ছাড়া তার কোনো গল্প নেই। মানুষের ইতিহাস তার ভালোবাসার ইতিহাস। কত বাধাবিপত্তি পার হয়ে, কত ঝড়-ঝঞ্ঝা, কত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষ আজকের পর্যায়ে এসেছে ভাবলে গা শিউরে ওঠে। ঝড়-তুফান-বৃষ্টি-খরা-ভূমিকম্প-বন্যা-মহামারি কত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন। তাদের অমানুষিক শ্রমের বিনিময়েই আজকে আমরা এই সভ্যতা পেয়েছি। আজ আমরা বেঁচে আছি এ জন্য যে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছিলেন।

পাথর ঠুকে ঠুকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আগুন জ্বেলেছিলেন বলেই আজ আমরা ম্যাচের কাঠির একটি ঠোকায় খুব সহজেই আগুন জ্বেলে ফেলতে পারি। আমাদের জীবনের সমস্ত সুবিধার জন্য আজ আমরা আমাদের পূর্বপূরুষদের কাছে ঋণী। এই ঋণ আমরা কী করে শোধ করব? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে দিয়ে। এটা আমাদের দায়। এবং এটাই হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে মানুষের ধারাবাহিক ভালোবাসা। যদি এই মানবসভ্যতার কোনো অর্থ থাকে তা একমাত্র এই ভালোবাসায়।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে মানুষের ধারাবাহিক ভালোবাসা। যদি এই মানবসভ্যতার কোনো অর্থ থাকে তা একমাত্র এই ভালোবাসায়।

পরিবারের প্রতি ভালোবাসা

পরিবার একটি প্রাচীন সংগঠন। মানুষের মায়া-মমতা-ভালোবাসার উৎস পরিবার থেকেই। পরিবারের বন্ধন আমাদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে। পরিবারই মানুষের প্রথম ও শেষ আশ্রয়। আমরা যখন বুঝতে শিখিনি, হাঁটতে-চলতে শিখিনি, তখনই মা-বাবা, বড় ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন আমাদের হাত ধরেন। তারা আমাদের হাত ধরে হাঁটতে শেখান। জীবনের চলার পথে পথ দেখান। মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে আসলে আর কিছুই তুল্য নয়। জগতে একমাত্র নিখাদ, নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত ভালোবাসা হচ্ছে মায়ের ভালোবাসা। জগতের সমস্ত ভালোবাসাই প্রথমে বিচ্ছিন্নতা থেকে এক হওয়ার চেষ্টা করে, একমাত্র মায়ের ভালোবাসাই প্রথমে এক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

জগতের প্রতিটি মানুষ তার মায়ের বিচ্ছিন্ন সত্তা। এই বিচ্ছিন্ন সত্তার শূন্যতা পূরণ করার জন্যই মানুষের আজন্ম সাধনা : ভালোবাসার মধ্যে আশ্রয় খোঁজা। আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন সত্তা, আমরা সবাই একা, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আমরা একাত্ম হতে চাই। ভালোবাসা হচ্ছে বিশ্বমায়ের একটা বিরাট কোল, সেখানে আমরা সবাই শিশুর মতো ঘুমিয়ে থাকি। বাবার ভালোবাসার মধ্যেও কিছুটা শর্ত থাকে। বাবা বলেন, তোমাকে আমার মতো হতে হবে, আমার সব স্বপ্ন তোমাকে পূরণ করতে হবে। কিন্তু মা তার সন্তানের ওপর কোনো শর্ত আরোপ করেন না। সন্তান যেমন, মা তাকে সেভাবেই গ্রহণ করেন।

পরিবারই প্রথম আমাদের এ শিক্ষাটা দেয় যে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো না। পরিবারে কিছু নিয়মশৃঙ্খলা আছে, কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে, তোমাকে অবশ্যই সেগুলো পালন করতে হবে। তুমি যখন অবুঝ ছিলে, তোমাকে পেলেপুুষে যেমন অন্যরা বড় করেছে, বড় হওয়ার পর তোমাকেও তেমন অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারই আমাদের সমজ-সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখে। আমরা একটি ব্যক্তির প্রতি যতটা না অনুরাগ প্রকাশ করি, তার চেয়ে অনেক বেশি অনুভূতি ধারণ করি পুরো একটা পরিবারের প্রতি। কোনো পরিবারের কোনো তরুণ সদস্য রোগে ভুগে বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমরা পুরো পরিবারটার জন্যই হাহাকার করে উঠি, আহা, পরিবারটার এখন কী হবে! পরিবার মানুষের সমস্ত অবলম্বন।

আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্ন পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আমরা চাই আমাদের নিজের পরিবারটি যেমন সুন্দর থাকুক, অন্যের পরিবারটিও তেমন সুন্দর হোক। পরিবার সুন্দর না হলে কোনো মানুষের জীবনই সুন্দর হতে পারে না। পরিবারের সৌন্দর্যই সভ্যতার কল্যাণে ভূমিকা রাখে। দিন শেষে আমরা যার যার ঘরে ফিরি। ঘর মানেই আপন কিছু মানুষজন। যার ঘর নেই, একমাত্র সেই জানে ঘর হারানোর যন্ত্রণা। বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্ট তাই বলছেন, হোম ইজ দ্য প্লেস হোয়ার/ হোয়েন ইউ হ্যাভ টু গো দেয়ার/ দে হ্যাভ টু টেক ইউ ইন।

বিচ্ছিন্ন সত্তার শূন্যতা পূরণ করার জন্যই মানুষের আজন্ম সাধনা : ভালোবাসার মধ্যে আশ্রয় খোঁজা।

বন্ধুমহলের প্রতি ভালোবাসা

পরিবারের পরেই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রাখে তারা বন্ধুবান্ধব। এমন অনেক কথা আছে, যা পরিবারে বলা যায় না। মানুষের একান্ত কিছু অনুভূতি আছে যা বন্ধু ছাড়া আর কারও কাছে শেয়ার করা যায় না। জীবনে এমন কিছু সমস্যা আসে, যখন পরিবারকেও পাশে পাওয়া যায় না। পরিবার যেমন নিখাদ ভালোবাসার একটি জায়গা, তেমনি কিছু স্বার্থেরও জায়গা। একমাত্র গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্কটি সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে। কিছু বন্ধুবান্ধব আমাদের থাকে, যারা পরিবারের সদস্যদের মতোই আপন।

পরিবার যদি হয় একটি ঘর, বন্ধুবান্ধব হচ্ছে সেই ঘরের একেকটি জানালা। যেসব জানালা দিয়ে আমরা সারা বিশ্বটাকে দেখি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও আমরা সেসব বন্ধুর দেখা পাই। পরিবার নিয়ে আমরা সারাক্ষণ চলতে পারি না। আমার প্রতিটি চলার পথে পরিবার সঙ্গী হয় না। কিন্তু জীবনের প্রতি পদে পদেই একজন বন্ধু দরকার। বন্ধুরা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সব দুঃখের সঙ্গী। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

বন্ধুবান্ধবের প্রতিও আমাদের অলিখিত কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে। সে আমার জন্য যা করেছে, আমিও যদি তার জন্য তা না করি তাহলে সে আমার জন্য থাকবে কেন! অলিখিত বলেই হয়তো বন্ধুত্বের সম্পর্কটি চিরন্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্কেও নানা ভুল-বোঝাবুঝি, কথা-কাটাকাটি হয়। এমন অনেক বন্ধু আছে, যার সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। কিন্তু একদিন রাস্তায় চকিতে দেখা হয়ে গেলে, সুমনের গানের মতো আমাদের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে, হঠাৎ রাস্তায় অফিস অঞ্চলে, হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে, বন্ধু, কী খবর বল?

বন্ধুরা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সব দুঃখের সঙ্গী। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

লেখা: কামরুল আহসান 
ছবি: রোদসী 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়কর্মক্ষেত্রপ্রধান রচনা

ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট

করেছে Wazedur Rahman মার্চ ২, ২০২০

কী, কেন, কবে, কেমন, সেসব বলার আগে এই পেশার সবচেয়ে আকর্ষক দিকটার কথা বলি। তা হলো ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট পেশার মতো এমন ব্যাপক ব্যাপ্তি কিন্তু খুব কম ক্যারিয়ার অপশনেরই থাকে।

অন্য রকমের পেশা ঠিকই। কিন্তু দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। কী রকম? সরকারি পর্যটন দপ্তর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টম সার্ভিস, ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইনস, ট্যুর অপারেটর, হোটেলের মতো প্রত্যক্ষ এবং এয়ারলাইন ক্যাটারিং বা লন্ড্রি সার্ভিস, গাইড, অনুবাদক, ট্যুরিজম প্রমোশন ও সেলস সংস্থার মতো পরোক্ষ একগুচ্ছ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট। যার এক হাত যদি ছড়িয়ে থাকে বড় বড় ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির দোরগোড়া পর্যন্ত, অন্যটি তবে বাড়তে বাড়তে গিয়ে থেমেছে ছোট্ট প্রাইভেট ট্রাভেল এজেন্টের অফিসের ভেতরে।

এই পেশায় যারা আসতে চাও প্রথমেই মনে রাখতে হবে, এখানে তোমাকে কাজ করতে হবে তাদের নিয়ে, যারা কোনো না কোনো কারণে নিজেদের বাড়ির চার দেয়ালের আরাম ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছ। কেউ হয়তো কর্মসূত্রে, কেউ নিছক ছুটি কাটাতে, কেউ আবার বেরিয়ে পড়েছ স্রেফ ঘোরার আনন্দে! কারও চাহিদা প্যাকেজ ট্যুর, কেউ হয়তো বেরিয়েছেন তীর্থযাত্রায়। ট্রাভেল এজেন্টদের দায়িত্ব ট্যুরিস্ট অথবা কর্মসূত্রে ভ্রমণরত মানুষটির দাবিদাওয়া জেনে নিয়ে তাকে সবচেয়ে ভালো সেবা প্রদান করা। এই কাজে আসতে গেলে আর কী কী মাথায় রাখা প্রয়োজন, কাজটার ঘাঁতঘোঁত, সেসব প্রসঙ্গে আসার আগে একটু ধাপে ধাপে এগোনো যাক বরং।

লেখাপড়া কদ্দুর কী প্রয়োজন

উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরই ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের স্নাতক স্তরে ভর্ভির জন্য অ্যাপ্লাই করা যায়। পোস্টগ্র্যাজুয়েশন স্তরে ভর্তির জন্য যে কোনো বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন থাকলেই চলে। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব এন্ট্রান্স টেস্ট ও তৎপরবর্তী ইন্টারভিউ নিয়ে তবেই ভর্তি নেয়। মাতৃভাষা ছাড়া অন্তত একটি বিদেশি ভাষায় দক্ষতা থাকা বাঞ্ছনীয়। পাবলিক রিলেশন বা অ্যাডভার্টাইজিংয়ে ডিপ্লোমা করে নিতে পারলে আরও ভালো। এই শেষোক্ত কোয়ালিফিকেশনগুলো করেসপনডেন্স কোর্সের মাধ্যমেও করে ফেলা যায়।

সার্টিফিকেশন কোর্সের জন্যও শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন সেই ১০+২। সরকারি সংস্থায় কাজ পেতে হলে অতি অবশ্যই ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমে ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। সরকারি ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টে ইনফরমেশন অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ পেতে হলে স্টাফ সিলেকশন কমিশন আয়োজিত কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় উতরাতে হয়। এই পদের জন্য গ্র্যাজুয়েশন থাকা মাস্ট। সেই সঙ্গে চাই ইংরেজিতে দক্ষতা, ভারতীয় ইতিহাস, কলা ও স্থাপত্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানগম্যি।

আরও যা যা দরকার

শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি এই পেশায় আসার জন্য আর যে যে জিনিসগুলো চাই, তার মধ্যে কমিউনিকেশন এবং প্রেজেন্টেশন স্কিলের কথা সবার আগে উল্লেখ করতে হয়। একটু ছটফটে স্বভাব, বন্ধুভাবাপন্ন ব্যক্তিত্ব, মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে মেশার ক্ষমতা, কথাবার্তায় চোস্ত হওয়া, নানা ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারার মতো গুণ এই পেশায় তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। নিত্যনতুন ফ্যাসিলিটি ও সার্ভিস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারলে তো আরও ভালো। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বা ম্যানেজারিয়াল লেভেলে কাজ করতে হলে আবার অর্গানাইজিং অ্যাবিলিটি, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, সমস্যায় পড়লে মাথা ঠান্ডা রেখে সমাধান খোঁজার ধৈর্য, দল হিসেবে কাজ করার মানসিকতা প্রয়োজন এই গুণগুলো।

কাজটা কেমন? বাজার কেমন?

বিস্তীর্ণ একটা ক্ষেত্র হওয়ার দরুন ট্যুরিজম সেক্টরে কাজের সুযোগ ফাটাফাটি। উপরন্তু এখন অবধি এই পেশায় ভিড়ভাট্টা তেমন বেশি না হওয়ায় চাকরির বাজারও গরমাগরম। চাকরি আছে পাবলিক ও প্রাইভেট, দুই সেক্টরেই। পাবলিক সেক্টরে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিরেক্টরেট ও ডিপার্টমেন্ট অব ট্যুরিজমে এবং রাজ্য সরকারের অধীনে অফিসার, ইনফরমেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট, ট্যুরিস্ট গাইডের মতো নানা পদে কাজ আছে।

প্রশিক্ষিত ট্যুরিজম প্রফেশনালদের জন্য কাজ আছে প্রাইভেট সেক্টরে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, এয়ারলাইন, হোটেল, ট্রান্সপোর্ট ও কার্গো কোম্পানিতে। বিমান পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে বিদেশি ট্যুরিস্টের সংখ্যা বছর বছর বাড়ছে। যেহেতু ক্যারিয়ার অপশন হিসেবে এই পেশায় এখনো লোকজনের আগ্রহ কম, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজারের সংখ্যাও তাই এই জগতে এই মুহূর্তে খুব বেশি নয়। অন্যের অধীনে কাজে ঢুকে হুড়মুড়িয়ে উন্নতির সুযোগ ছাড়াও নিজস্ব ব্যবসা ফেঁদে বসার ব্যবস্থাও এই পেশায় আছে বিলক্ষণ।

আয়রোজগার

ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির চাকরিতে সন্তোষজনক বেতন ছাড়াও এমপ্লয়ি ও তার পরিবারের লোকজনের আজীবন ফ্রিতে এদিক-ওদিক ঘোরার সুযোগ থাকে। এই জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্যালারির পরিমাণও আলাদা আলাদা। তবে বিদেশি এয়ারলাইন কিংবা বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে সাধারণত স্যালারির পরিমাণ একটু বেশিই। তবে যাওয়ার আগে অন্য রকম কাজ করার কথা ভাবলে যাদের পেট গুড় গুড় করে না, ঘুরে বেড়ানোয় যাদের আছে প্রবল আগ্রহ, নতুন নতুন মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় বাড়াতে, তাদের ভালোমন্দের খেয়াল রাখতে (অবশ্যই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) যাদের আপত্তি নেই, তারা হাসতে হাসতে চলে আসতে পারো এই পেশায়।

 

লেখা: রোদসী ডেস্ক 
ছবি: সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়কর্মক্ষেত্রপ্রধান রচনা

পিআর প্রফেশনাল হতে চাও?

করেছে Wazedur Rahman মার্চ ১, ২০২০

পাবলিক রিলেশনস আর কিছুই নয়, একটি ব্র্যান্ডকে বিশ্বের জনতার কাছে প্রমোট করা
এবং সমাজে সেই ব্র্যান্ডের ‘ইমেজ’ রক্ষা করার কাজ।

তোমার কমিউনিকেশন স্কিল কি জবরদস্ত? বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখা করে, মিষ্টি কথায়, আকর্ষক আদবকায়দায় তাদের পটিয়ে ফেলতে কি তোমার জুড়ি নেই? তাহলে পিআর (পাবলিক রিলেশনস) ক্যারিয়ার তোমার পক্ষে আদর্শ হতে পারে। তুমি যদি সৃজনশীল মানুষ হও, আবার ৯-৫ ডেস্ক জব যদি তোমার কাছে চক্ষুশূল হয়, তাহলে পিআর হয়ে উঠতে পারে তোমার ড্রিম জব।

কী এই পিআর? পাবলিক রিলেশনস আর কিছুই নয়, একটি ব্র্যান্ডকে বিশ্বের জনতার কাছে প্রমোট করা এবং সমাজে সেই ব্র্যান্ডের ‘ইমেজ’কে রক্ষা করার কাজ। পিআর এজেন্টদের কারসাজিতে যে কোনো সেলেব বা সংস্থার খ্যাতি মুহূর্তে আকাশ ছুঁতে পারে বা কর্পূরের মতো উবে যেতে পারে। এমনই হচ্ছে পিআরের ক্ষমতা!

ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন?

তুমি যদি আত্মবিশ্বাসী হও, নানা ধরনের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করো, আবার একই সঙ্গে তোমার মধ্যে ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) এবং প্রবলেম সলভিং ক্ষমতা থাকে তাহলে এর চেয়ে যোগ্য ক্যারিয়ার খুঁজে পাওয়া মুশকিল! একটি সংস্থা বা সেলেবের ইমেজ বা খ্যাতিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব হবে তোমার। আবার একই সঙ্গে তাদের ইমেজকে সব রকম কলঙ্ক বা ‘নেগেটিভ’ পাবলিসিটি থেকে রক্ষা করার দায়িত্বটিও তোমার। এর জন্য তোমাকে নানা খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেল ও বিভিন্ন মিডিয়া হাউসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

কাজটা কী

সাধারণত পিআর এজেন্টদের দুই ধরনের দায়িত্ব থাকে- ব্র্যান্ড প্রমোশন এবং ব্র্যান্ড প্রটেকশন। ব্র্যান্ড প্রমোশনের ক্ষেত্রে তোমাকে কোনো সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষের ইমেজ গড়েপিটে তুলতে হবে। আমজনতা এবং তোমার ক্লায়েন্টের মধ্যিখানে তুমি হবে মিডলম্যান। কীভাবে জনসাধারণকে তোমার ক্লায়েন্টের প্রতি আরও উৎসাহিত করা যায়, কীভাবে একটি সংস্থা বা সেলেবকে জনতার কাছে একটি রোমাঞ্চকর ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করা যায়, তার দায়িত্ব তোমার। তার জন্য তোমাকে নানা রকম মিডিয়া হাউস বা চ্যানেলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তারা তোমার ক্লায়েন্টের ব্যাপারে যাতে ভালো ভালো খবর লেখে, যাতে মেপেজুপে তোমার ক্লায়েন্টের সমালোচনা করে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নানা ধরনের প্রেস রিলিজ, কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে তোমার ক্লায়েন্ট যাতে প্রচারের আলোয় থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

তোমার ক্লায়েন্টের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মধ্য দিয়ে তাদের ইমেজকে ‘ম্যানেজ’ করারও দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো সেলেবের পিআরের দায়িত্ব যদি নাও, তাহলে তাকে জনসমক্ষে কীভাবে আরও বেশি ‘সমাজসচেতন’ হিসেবে প্রতিপন্ন করা যায়, তার দায়িত্বও তোমার। আবার একই সঙ্গে তোমার ক্লায়েন্টের সুনাম যাতে অক্ষুণ্ন থাকে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। কোনো রকম কলঙ্ক, বিতর্ক থেকে রক্ষা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া, রিভিউ বা রেটিং সাইট বা বিভিন্ন মিডিয়ায় তোমার ক্লায়েন্টের ‘ইমেজ’ যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কোনো সংস্থা যদি কোনো রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যায়, সেই সংস্থাকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও তোমার।

কী স্কিল লাগবে

পিআরের ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে সর্বপ্রথম দরকার উৎকৃষ্ট মানের কমিউনিকেশন স্কিল। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলামেশা করতে তুমি যত সক্ষম হবে ততই পিআর এজেন্ট হিসেবে তোমার সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে। এ ছাড়া দরকার গবেষণা করার ক্ষমতা। তোমার ক্লায়েন্ট সংস্থা বা সেলেবটির ব্যাপারে নিখুঁত এবং বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে। সে কোন কনজ্যুমার বা দর্শকদের এন্টারটেইন করছে, তার ইউ এসপি (ইউনিক সেলিং পয়েন্ট) কী, সে সম্বন্ধে তোমায় অবগত থাকতে হবে, না হলে ভালো ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে পারবে না। তা ছাড়াও লাগবে ভালো লেখার ক্ষমতা। তোমার ক্লায়েন্টের জন্য প্রেস রিলিজ তোমায় দক্ষভাবে লিখতে হবে, যাতে সেটা দর্শকের নজর কাড়ে।

আয়রোজগার

আর পাঁচটা পেশার মতোই এই পেশাতেও উপার্জন কী রকম হচ্ছে, তা নির্ভর করবে তোমার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ওপর। সাধারণত বছরে ৪-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে পিআর প্রফেশনালদের দক্ষিণা। পিআর অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার হিসেবে অগলিভি অ্যান্ড ম্যাদার, জে, ওয়াল্টার থম্পসনের মতো নানা সংস্থায় কাজ পেতে পারো।

ডিগ্রির প্রয়োজন আছে কি?

সাধারণত পিআর সংস্থার যেকোনো বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন চায়। কোনো বিষয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কাজটা যেহেতু মূলত সৃজনশীল, তাই তুমি যদি সাহিত্য, মাস-কমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক হও, তা হলে সেটি অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ। এখন যখন জেনেই গেলে যে পিআর হতে গেলে কী করা উচিত, তা হলে তোমাকে দ্য নেক্সট পিআর ম্যাজিশিয়ান হতে রুখছে কে?

 

লেখা: রোদসী ডেস্ক 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনামনের মত ঘররোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

ভালোবাসা আর ভালো বাসা দুটোই বেশ দুর্লভ!

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২০

ভালোবাসা আর ভালো বাসা দুটোই বেশ দুর্লভ! অন্তত আজকের এই দুনিয়ায় কথাটা একশ ভাগ খাঁটি। ভালোবাসা বলতে যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপের ইমোজিতে বন্দী এক সম্পর্কের নাম; ঠিক তেমনি অভিজাত এলাকার খুপরিঘরে কোনোমতে ঠাঁই নেওয়াটাই ভালো বাসার শিরোনাম। হ্যাঁ, আজকের যুগে ভালোবাসা আর ভালো বাসা তাই দুর্লভ একটা ব্যাপারই বটে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অজানা আতঙ্কে প্রাচীন যুগের মানুষ প্রথম গুহার অভ্যন্তরে নিজেদের আশ্রয়স্থল বানিয়েছিল। কিংবা হয়তো অন্ধকারে অশুভর উপদ্রব থেকে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে বাঁচাতে গড়েছিল গুহা বা জঙ্গলের মধ্যে বাসা। এরপর আগুন জ্বালানোর মধ্য দিয়ে সভ্যতার উন্নতি হয় ধীরে ধীরে। গুহা বা জঙ্গল ছেড়ে সুউচ্চ অট্টালিকা কিংবা দৃষ্টিনন্দন আর আভিজাত্যময় বাড়ি বানানোর পেছনে সময়, শ্রম আর অর্থ সবই ব্যয় করতে রাজি হয় মানুষ। এভাবেই কালের প্রেক্ষাপটে বদলে যায় বাসার সংজ্ঞা।

আবার ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও কিন্তু একইভাবে সময়ের আবর্তে বদলে গেছে। নবী ইউসুফ আর জুলেখা, শিরি-ফরহাদ, লাইলী-মজনু কিংবা আধুনিক কালের রোমিও-জুলিয়েটের উপাখ্যান যা-ই বলা হোক না কেন, বদলে গেছে অনেক রীতি আর কৌশল। সবচেয়ে বড় কথা, এখনকার সময়ে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে সামাজিকতা কিংবা পারিপার্শ্বিকতা। কিন্তু ইন্টারনেটের এই যুগে এসে যেখানে ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী নিজের বিস্তার লাভ করার কথা ছিল, সেখানে ইন্টারনেটের সংকোচনের মতোই যেন কুঞ্চিত হয়ে এল ভালোবাসারও পরিধি।

প্রিয়জনের সঙ্গে থাকা অবস্থায়ও এখন চোখ থাকে মোবাইল ফোনে। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়বদ্ধতায়ও মা-বাবার সঙ্গে অনেক সময় কথাবার্তার সুযোগ হয় না। এ ছাড়া বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সবার সঙ্গেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ সেরে নেওয়ায় কমছে বন্ধনের স্থায়িত্ব।

অথচ প্রবাদ আছে, মানুষ নাকি ভালোবাসার কাঙাল।

যদি এখন কেউ জিজ্ঞেস করো আমায় কেন বললাম এ কথা? তাহলে হয়তো আমার বিশাল পরিসরের উত্তর শোনার ধৈর্য তোমাকে রাখতে হবে। কেননা, ভালোবাসা মানেই যে প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এমনটা কিন্তু নয়; বরং পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানসন্ততির, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোও এখানে যুক্ত। আবার একইভাবে বৃহৎ পরিসরের একটা খোলামেলা বাসায়ই যে কেবল ভালো বাসার সংজ্ঞা, এমনটা ভাবাও নেহাত বোকামি।

ভালো বাসার মধ্যে ভালো পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিকতার একটা ব্যাপার থাকে; থাকে নির্ভরশীলতা আর আস্থার ব্যাপারগুলো। সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, সুসম্পর্ক থেকে শুরু করে সুনাগরিকতার ব্যাপারটা যুক্ত থাকে এই ভালো বাসা ব্যাপারটিতে। ভালোবাসা কিংবা ভালো বাসা দুর্লভ কেন, সেটা জানতে হলে বুঝতে হবে ভালোবাসা আর ভালো বাসার জন্য কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ আর আবশ্যক।

ভালো বাসার মধ্যে ভালো পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিকতার একটা ব্যাপার থাকে; থাকে নির্ভরশীলতা আর আস্থার ব্যাপারগুলো।

ভালোবাসা আর ভালো বাসা

ভালোবাসা মানেই যে শুধু মনের মানুষ তা কিন্তু নয়; প্রথমেই এই ধারণা থেকে মুক্তি দিতে হবে নিজের মস্তিষ্ককে। মনের মানুষ বলতে যে আমি প্রিয়জন কিংবা সঙ্গী বুঝিয়েছি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ভালোবাসার সংজ্ঞাটা এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব হলেও এর ব্যাপ্তি সম্পর্কে বিস্তারিত বলাটা একপ্রকারের অসম্ভবই বটে।

কেননা, ভালোবাসা হচ্ছে এমন একটা ব্যাপার, যা ঠিক যতটা মানবিক, ততটাই জাগতিক আর ঐশ্বরিক। ভালোবাসাটা অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতি যেমন হতে পারে, তেমনি প্রকৃতির প্রতিও হতে পারে; অবলা জীবদের প্রতিও হতে পারে। আবার একইভাবে বাড়িঘর নামক এক জড়বস্তুর ওপরও ভালোবাসাটা আটকে যেতে পারে।

তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা; আর ভালোবাসা থেকে মায়া। তবে শুধু ভালোবাসি বললেই যে ভালোবাসা হয়ে যায়, এমনটা কিন্তু নয়! এর জন্য চাই মনের গভীর অনুভূতি। তাহলে এটা স্পষ্ট যে ভালোবাসা কেবল দুটি মনের বন্ধনই নয়, বরং পরিবর্তিত দুটি মনের বাঁধন। যুক্তিতর্কের বিচারে অনেকেই ভালোবাসা নামক এই অবোধ্য শব্দটিকে বুঝতে না পেরে হেসে উড়িয়ে দেয়। তাদের জন্য আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, পাঁচ মিনিটের মতো সময় লাগে বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি আকৃষ্ট হতে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা ৪ মিনিট বা ৪ মিনিট ৩০-৪০ সেকেন্ড মধ্যেই ঘটে থাকে। এই আকৃষ্টতার ক্ষেত্রে মানবমস্তিষ্ক কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। অঙ্গভঙ্গি কিংবা বাহ্যিক রূপ ৫৫ শতাংশ, কণ্ঠস্বর থেকে শুরু করে মার্জিত কথা বলার ভঙ্গিমায় থাকে ৩৮ শতাংশ এবং এরপর মূল বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে শেষ ৭ শতাংশ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় ভালোবাসাবিষয়ক গবেষণার ফল হিসেবে জানিয়েছে, প্রেমের মূলত তিনটি স্তর আছে। প্রতিটি স্তরেই আলাদা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে মস্তিষ্কে এবং স্তরভেদে রাসায়নিক পদার্থ আর হরমোন নিঃসৃত হয়।

প্রথম স্তর ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা

বিপরীত লিঙ্গের কাউকে ভালো লাগলে সেই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষা তৈরি হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টেরন আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন নামক এক হরমোন নিঃসৃত হয়।

দ্বিতীয় স্তর আকর্ষণ

কারও সঙ্গে দীর্ঘদিন মেশার ফলে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে কাউকে ভালোবাসার ফলে তার প্রতি একধরনের আকর্ষণবোধ তৈরি হয়। এই স্তরে তিনটি নিউরোট্রান্সমিটার জড়িত : এড্রিনালিন, ডোপামিন এবং সেরোটানিন। নিউরোট্রান্সমিটার আসলে একধরনের এন্ড্রোজেন রাসায়নিক। এটি এক স্নায়ুকোষ থেকে অন্য স্নায়ুকোষে সংকেত পাঠায়।

তৃতীয় স্তর সংযুক্তি

এই স্তরে এসেও দুটি আলাদা হরমোনের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় : অক্সিটোসিন এবং ভ্যাসোপ্রেসিন। দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকার পর পরস্পরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। ফলে ঘর বাঁধতে রাজি হয় দুজনই।

শুধু ভালোবাসি বললেই যে ভালোবাসা হয়ে যায়, এমনটা কিন্তু নয়! এর জন্য চাই মনের গভীর অনুভূতি।

ওই আলোচনাটিকে শুধু মনের মানুষের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখাটা মোটেও সমীচীন হবে না। কেননা, মা-বাবার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কটা যেমন নাড়ির বা অস্তিত্বগত, ঠিক তেমনি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কটা আবার আত্মিক। এখন অনেক পরিবারই আছে, যাদের সব সদস্যই দিন শেষে রাতে এসে কিছু সময়ের জন্য মিলিত হয় জীবনযাপনের তাগিদে। নাহ্্, এটা শুধু যে দিন আনে দিন খায় মানুষের চিত্র; এমনটা কিন্তু নয়।

বরং নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারেও একই চিত্র বিরাজমান। এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তাদের ভালোবাসার বন্ধন কি ঠুনকো? নাহ্! মোটেই নয়! যদিনা তারা রাতের একটা নির্দিষ্ট প্রহর সবাই একসঙ্গে কাটায়। সারা দিনের ক্লান্তিও যেন হার মানে তাদের সেই ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে।

তবে এই যে পরিবারের সবার একত্র হওয়া, এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার পাশাপাশি ভালো বাসাটাও জরুরি। কেননা, একটু খোলামেলা পরিবেশ, একটু প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, যথেষ্ট আলো-বাতাসের উপস্থিতির সঙ্গে হাঁটাচলা কিংবা নড়াচড়ার জন্যও চাই পর্যাপ্ত জায়গা। শুধু কি তাই? এর পাশাপাশি দরকার ঘরের দেয়ালের রং থেকে শুরু করে বিছানার চাদর, জানালার পর্দা, বারান্দায় টবের গাছ ইত্যাদির কথাও চলে আসে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সারা দিনের ক্লান্তি শেষে সাজানো-গোছানো একটা ঘর মনে বইয়ে দিতে পারে প্রশান্তির বাতাস। আর একটা ঘিঞ্জি ঘর করতে পারে বিরক্তির উদ্রেক, মনের অশান্তি এবং সাংসারিক কলহের সূত্রপাত। আর সাংসারিক কলহ কিন্তু আবার ঘুরেফিরে সেই ভালোবাসার ওপরই আঘাত হানে।
তাহলে এখন কী বলবে? যে লাউ সেই কদু? হ্যাঁ, যেই ভালোবাসা সেই ভালো বাসাও বলা যায়। তাহলে চলো ভালো বাসা সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

তবে এই যে পরিবারের সবার একত্র হওয়া, এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার পাশাপাশি ভালো বাসাটাও জরুরি।

সকালের প্রথম সূর্য কিরণ আর স্নিগ্ধ পরিবেশ করতে পারে একটা শুভদিনের সূচনা। কেননা, ভোরের সেই কোমল আলোয় মন হয়ে ওঠে প্রশান্তিময়। আর একই কথা যদি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে যাই, তাহলে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের গবেষণার সাহায্য নিতে হয়। তাদের মতে, যাদের ঘরে দিনের আলো বেশি সময় ধরে স্থায়িত্ব হয়, তাদের শরীর আর মন দুটোই সুস্থ থাকে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকলে গুমোট পরিবেশে মনমেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ভালো বাসার এই প্রাদুর্ভাবটা ভালোবাসার সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।

চাই সাজানো-গোছানো ছিমছাম বাসা! বাংলায় একটা বাক্য আছে না, ‘সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ’। ঠিক তেমনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ীই ঘরটাকে সাজাও। লোকদেখানো ব্যাপারটাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে দেখা গেল তোমার ঘরের তুলনায় আসবাব বড় হয়ে গেছে কিংবা বেমানান লাগছে; তখন কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। তাই সাধ্যের পাশাপাশি নান্দনিকতার ব্যাপারটাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। দরকারে সময় নিয়ে ঘরের আসবাব বাছাই করো; কেননা ঘরের আসবাবের ওপরই অতিথিদের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করে। আবার, একই সঙ্গে এত নান্দনিক উপস্থাপনায় ঘর সাজিয়ে অগোছালো রেখে দিলে কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হবে না। যে তো সেই হয়ে যাবে ব্যাপারটা। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর গোছানো ভাবটা সদা কাম্য।

আচ্ছা বলো তো, প্রকৃতির রং সবুজ কেন? আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা চালিয়েছেন। আর তাতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে সতেজ সবুজ রং মানুষের অনুভূতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে উদ্যমী করে তোলে। যার জন্য শত স্ট্রেস কিংবা মন খারাপের সময়গুলোতেও সবুজ মাঠ অথবা প্রান্তরের দিকে তাকালে কিংবা সবুজের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর মনে একধরনের প্রশান্তি অনুভূত হয়।

সতেজ সবুজ রং মানুষের অনুভূতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আরেক গবেষণালব্ধ জ্ঞানে এ-ও জানা গেছে, সবুজের মাঝে গেলে ৯০ মিনিটের মধ্যেই মানুষের সব মানসিক চাপ কমে আসে ধীরে ধীরে।
তাহলে এবার চিন্তা করে দেখো তো, যদি সারা দিনের ক্লান্তি আর জ্যামের বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে একপশলা সবুজ দেখতে পাও, তাহলে কি তোমার মন খানিকটা হলেও শান্ত হবে না? অবশ্যই হবে। সে জন্য ঘরে প্রবেশের করিডরগুলো সবুজ রঙে সাজলে নিজের পাশাপাশি অতিথিদের কাছেও ব্যাপারটা ইতিবাচক বলেই গণ্য হবে। কিন্তু অনেকেই ভাড়া বাসায় থাকে। ফলে চাইলেও সবুজ রং করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না অনেক সময়ই।

তবে কি জানো তো, সবুজ মানেই প্রকৃতি। তাই চাইলেই একগাদা প্রকৃতি ঘরের দুয়ারে কিংবা অভ্যন্তরে রেখেও এই প্রক্রিয়া চালু রাখা সম্ভব। এতে করে সিমেন্টের জঞ্জালে থেকেও থাকা যাবে প্রকৃতির আরও কাছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভেসে আসবে ফুলের সুবাস। একই সঙ্গে বাড়বে ধৈর্য। আবার একই সঙ্গে বারান্দা কিংবা ছাদে গড়ে তোলা সম্ভব ছোটখাটো কৃষিবাগান। মনে রেখো, মানুষ যতই যান্ত্রিক হোক না কেন আদতে সে প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতির কাছেই ফিরতে হবে তাকে। তাই প্রকৃতির প্রতি সূক্ষ্ম টানটা মানুষের আদি আর উৎসের প্রবৃত্তি।

তবে ভালো অনুভূতি জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে সবুজের পরেই নীল আর হলুদ রঙের জুড়ি মেলা ভার। যদিও সাহিত্যের বিচারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের এটা জ্ঞাত যে নীল হচ্ছে বেদনার রং। তবে একই সঙ্গে কবি-সাহিত্যিকেরা কিন্তু এটাও বলে যে নীল হচ্ছে প্রশান্তির এক রং। নীল রং মনকে করে প্রশান্ত। যেমনটা সমুদ্রের বিশাল নীলের কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। তাই হালকা নীল বা আকাশি নীল রঙের বিছানার চাদর, পর্দা মনকে রাখতে পারে প্রফুল্ল। আর হ্যাঁ, সাদা হচ্ছে শুভ্রতা আর পবিত্রতার প্রতীক। তাই সাদা রং ব্যবহার করাটাও অনিবার্য। তবে কি, সাদায় দাগ পড়লে বিরক্তির মাত্রা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তাই সাদা রং ব্যবহারে চাই অতিরিক্ত সতর্কতা।

মানুষ যতই যান্ত্রিক হোক না কেন আদতে সে প্রকৃতিরই সন্তান।

আবার অনেকে হলুদ রঙের কথাও ভাবতে পারে তারুণ্যের প্রতীক ভেবে। কিন্তু হলুদ আদতে বাসাবাড়ির সবকিছুর জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন তোয়ালে, ফুলদানি, টব বা শোপিস হলে মানানসই বলা যায়। একই সঙ্গে লালকে ভালোবাসার রং বলা হলেও লাল রং বাড়িঘরের ক্ষেত্রে অনেক কটকটে লাগে। ঠিক যেমনটা কালো এবং অন্যান্য কটকটে রঙের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ওপরের আলোচনায় ব্যাপারগুলো আসলে ভালো বাসার জন্য জরুরি বা আবশ্যকই বলা চলে। পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম আর আলো ঝলমলে বাসা মনকে রাখে প্রফুল্ল আর সতেজ। বাসার আকৃতিটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না, যদি সুন্দর, নান্দনিক, ঝকঝকে, আরামদায়ক, গোছানো, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের উপস্থিতি থাকে। এমন মনোরম পরিবেশের ভালো বাসায় ভালোবাসার অভাব হওয়ার কথা নয়; হোক না সেটা স্বামী-স্ত্রী বা মা-বাবা অথবা ভাই-বোন কিংবা পরিবার-পরিজনের সম্পর্ক।

ভালোবাসায় ভালো বাসার প্রভাব কতটুকু?

ভালোবাসা মানেই একটা সম্পর্কের সূচনা। আর এই সম্পর্কের আদতে কোনো নাম নেই। যদিও প্রচলিত ভাষায় তা ভালোবাসা বলেই খ্যাত তবে এই শব্দটা নিজের শব্দের মাঝেই বিশাল আর পরিপূর্ণ। সম্পর্ক এমন একটা ব্যাপার যে এই নামের সঙ্গে যেটাই জুড়ে দেওয়া হোক না কেন, সেটাকেই সে পূর্ণতা দেবে। তবে যে কোনো ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রেই গভীরতা, আস্থা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান এবং একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

ধরো, তোমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই জব করো। তো সারা দিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি ফিরে যদি দেখো ঘরবাড়ি অগাছালো; তাহলে কি মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব? নাহ্্ একদমই নয়। আবার, ধরো দিন শেষে তোমার একটু একা সময় কাটাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু বাসাটা এতটা কনজাস্টেড যে এক মুহূর্তের জন্যও খানিকটা একা সময় কাটানোর ফুরসত নেই। তাতে করে এই বিরক্তিভাবটা মনকে প্রবোধ দিবে আর রাগের উৎপত্তিটাও এখান থেকেই ঘটবে।

ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রেই গভীরতা, আস্থা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান এবং একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

আবার এই অগোছালো বাসার কারণে সৃষ্ট বিরক্তির ভারটা গিয়ে পড়তে পারে সন্তানসন্ততির ওপর রাগে পরিণত হয়ে। হ্যাঁ, এটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। অথচ খোলামেলা, আলো ঝলমলে এক বাস্তুসংস্থান কিন্তু রাগান্বিত একটা মনকে মুহূর্তেই শীতল করে তুলতে পারে। আর এটা যে মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফল, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তাই ভালোবাসার সম্পর্ক অটুট রাখতে চাই ভালো বাসা।

আবার অনেকে বাসাবাড়িতেই পোষা প্রাণীর অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে চায়। জীবের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এমনটা করে থাকে অনেকে। এর মধ্যে বিড়াল, কুকুর, কবুতর, টিয়া পাখি, ময়না, খরগোশ বা অ্যাকুরিয়ামে হরেক প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে যে বাসায় পোষা প্রাণী থাকলে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থাকে কম। কেননা, তুমি যখনই একটু দুশ্চিন্তায় ডুবে যেতে শুরু করবে তখনই হয়তো তোমার পোষা প্রাণীটা উষ্ণতার খোঁজে তোমার কোলে আশ্রয় নেবে। এতে করে তোমার মস্তিষ্ক আর শরীর ব্যস্ত হয়ে পড়বে পোষা প্রাণীটিকে নিয়ে আর দুশ্চিন্তা নিমেষেই বিদায় নেবে। তবে পোষা প্রাণী যেটাই হোক না কেন, চাই বাড়তি যত্ন আর সতর্কতা। ভ্যাকসিন দেওয়া থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটাও তোমাকে করতেই হবে।

তুমি যখনই একটু দুশ্চিন্তায় ডুবে যেতে শুরু করবে তখনই হয়তো তোমার পোষা প্রাণীটা উষ্ণতার খোঁজে তোমার কোলে আশ্রয় নেবে।

আগের আলোচনা শেষে নিশ্চয়ই তুমি আমার সঙ্গে একমত পোষণ করবে যে ভালোবাসার পরিপূর্ণতায় ভালো বাসাটাও আবশ্যক। যে ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন, সম্পর্কে যেমন একে অপরকে বোঝার কিংবা বোঝানোর ক্ষমতা থাকা লাগে, তেমনি ভালো বাসার ক্ষেত্রেও ঘরের মাপজোখ বুঝে সে অনুযায়ী ঘরকে সাজিয়ে তোলার মানসিকতাও থাকা লাগবে। তাহলে হয়তো তোমাদের মধ্যে কেউ আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবে, ভালোবাসা আর ভালো বাসা এতটা দুর্লভ নয় বরং চাইলেই এটাকে সহজলভ্য করে তোলা সম্ভব।

 

লেখা: ওয়াজেদুর রহমান ওয়াজেদ 
ছবিসূত্র: ওমর ফারুক টিটু , রোদসী এবং সংগ্রহীত  

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবননারীরোদসীর পছন্দ

বিয়ের পরে নারীর জীবন

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ২৩, ২০২০

বিবাহজীবনের আগের কথা

বিয়ে মানুষের জীবনের বড় একটা পদক্ষেপ। বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবন কোনোভাবেই আর এক থাকে না। নারী-পুরুষ উভয়েরই। তবে নারীর জন্য বিষয়টা আরও বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। প্রথমত অধিকাংশ নারীকেই এখনো বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি যেতে হয়। সেখানে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ও অচেনা কিছু মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। তাদের নিজের পরিবার ভাবতে হয়। এটা তার জন্য বিশাল একটা আত্মত্যাগ এবং মর্যাদা রক্ষার লড়াই।

দ্বিতীয়ত বিবাহজীবনের পরেই নারীকে নিতে হয় মাতৃত্বের স্বাদ। আরেকজন মানুষ সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে এ পৃথিবীতে আসে। তাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নারীকে বিসর্জন দিতে হয় নিজস্ব স্বাধীনতা। এর পাশাপাশি যে স্বামী ভদ্রলোকটির সঙ্গে সে ঘর বাঁধল, সে আসলেই কী রকম, তাকে যথেষ্ট সময় ও অন্যান্য সাপোর্ট দেয় কি না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

স্বামী যদি হয় ঘরছাড়া, বাঁধনহারা; তাহলে সে নারীটির মতো অসহায় তখন আর কেউ হয় না। বিশাল এ পৃথিবীতে সে একেবারে একলা হয়ে পড়ে। পুরুষের জন্য বিবাহ-পরবর্তী জীবন খুব বেশি ভয়ংকর নয় এ সমাজব্যবস্থার কারণেই। পুরুষের জন্য আছে বিশাল পৃথিবী। এখনো, আমাদের এ সমাজব্যবস্থায়, অধিকাংশ নারীর পৃথিবী ঘরসংসারের মধ্যেই আবদ্ধ।

তাই বিয়ে নিয়ে পুরুষদের চেয়ে নারীর চিন্তা-দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতাই সবচেয়ে বেশি। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে এখনো আমাদের দেশে অনেক পুরুষ বিয়ে না করে থাকতে পারে, কিংবা একটু বেশি বয়সেও বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একটি মেয়ের জন্য এটা খুব কঠিন। তাই বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও যথাসময়ে বিয়ে না হলে একটি মেয়েকে এ নিয়ে চিন্তা করতে হয়।

বিয়ে নিয়ে চিন্তা স্থান-কাল-পরিবারভেদে আলাদা

বিয়ে নিয়ে চিন্তা আসলে স্থান-কাল-পরিবারভেদে আলাদা। গত এক শ বছরেই বিবাহের ধরনধারণ অনেক বদলে গেছে। সব দেশে, সব শ্রেণি-পেশা-ধর্মভিত্তিক অঞ্চলেই। একশ বছর আগেও এই বৃহৎ-বঙ্গে হিন্দু-মুসলমান উভয় পরিবারের মেয়ে বারো- তেরো বছর হলেই বিবাহযোগ্য বলে গণ্য করা হতো। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের মতো অগ্রশীল মানুষ তার তিন কন্যাকে বাল্যবিবাহ দিয়েছিলেন। আমাদের অনেকের দাদি-নানির ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যাবে তাদের বিয়ে হয়েছে খুব অল্প বয়সে। যখন তারা জানতই না বিয়ে কী, তখনই তারা বউ হয়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছে।

এখন অবস্থাটা প্রায় সব অঞ্চলেই অনেক বদলে গেছে। যদিও নিষিদ্ধ সত্ত্বেও এখনো অনেক বাল্যবিবাহ হয়। সেসব ব্যতিক্রম ঘটনা। মোটামুটি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি অনেক নিম্ন পেশাজীবী শ্রেণির বাবা-মাও এখন চায় বিয়ের আগে তাদের মেয়েটা অন্তত এসএসসি বা এইচএসসি পাস করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক, তারপর বিয়ে করুক। সচেতন কোনো মেয়ে এখন প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাবলম্বী হওয়ার আগে বিয়ের কথা ভাবতে পারে না।

সচেতন একটি মেয়ে বিয়ে সম্পর্কে কী ভাবে?

সচেতনতা মানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। একটি সুন্দর, সুস্থ জীবনের পরিকল্পনা। যদিও বয়ঃসন্ধি ও তারুণ্যবেলায় আবেগ কাজ করে বেশি। আবেগ যুক্তিকে হার মানিয়ে দেয়। ফলে অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। আজকাল দেখা যায় স্কুল-কলেজ জীবন শেষ করার আগেই অনেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকের কারণে প্রেম এখন হাতের নাগালে। চাইলেই যেন পাওয়া যায়। তা ছাড়া শরীর-মনের হরমোনগত কারণে এ বয়সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, কৌতূহল কাজ করে বেশি। এ সময়টা তাই বেশ স্পর্শকাতর। এ সময় নিজেকে তেমন সচেতন থাকতে হয়, পরিবারকেও একটু বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়।

কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে পরিবারের চাপে হয়তো অপ্রস্তুত অবস্থায় বিয়ে করে ফেলতে হয় অথবা সম্পর্কটা ভেঙে দিতে হয়। দুটো ঘটনাই শরীর ও মনের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ওই একটা ভুলের কারণে একটি জীবন সম্পূর্ণ ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে, ছেলে-মেয়ে উভয়েরই। তবে একটি মেয়ের জীবনেই তা প্রভাব ফেলে বেশি। কারণ, এমনিতেই এ বয়সী মেয়েদের আবেগ বেশি। আর ও বয়সে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বাইরের পৃথিবী থেকে সে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শক্ত মনোবলের মেয়ে না হলে ওই অবস্থা থেকে বেরোনো একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আবার অন্য রকমও হতে পারে। খুব সুন্দর একটি জীবনও তারা উপহার পেতে পারে। যদি দুজনের বোঝাপড়া ভালো থাকে। সম্পর্কটা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়। এবং উভয়ের পরিবার থেকে যদি যথাসম্ভব সমর্থন পায়। তবে বাস্তবতাটা কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এ সম্পর্কে পরিবার কিছুই জানে না। সুশিক্ষিত একটি মেয়ে এ সম্পর্কে খুবই সচেতন থাকে। সে আগে নিজের ভবিষ্যতের পথটিকে সুন্দর করে নির্মাণ করে নেয়, বর্তমানের আবেগটিকে দূরে সরিয়ে রেখে।

সচেতন একটি মেয়ে আগে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করে। তখনই সে কোনো সম্পর্কে জড়ায়, যখন সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সম্পর্কটা সে কত দিন স্থায়ী রাখতে পারবে তা নিয়েও সে হাজারবার চিন্তা করে। সাধারণত প্রত্যেকেই চায় তার প্রেম ও সংসারের সম্পর্কটা চিরস্থায়ী হোক। তখন সে এমন কাউকে বেছে নেয় যে তার রুচি, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে যায়।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো আমাদের সমাজে অনেক মেয়ের এ সিদ্ধান্তটা নেওয়ার ক্ষমতা নেই। পরিবার থেকেই তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। লাভ ম্যারেজ আর সেটেল ম্যারেজ নিয়ে আধুনিক শিক্ষিত পরিবারে একটা দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

লাভ ম্যারেজ বনাম সেটেল ম্যারেজ

লাভ ম্যারেজ না সেটেল ম্যারেজ, কোনটা ভালো এ নিয়ে তর্কে-বিতর্কে হার-জিৎ কঠিন। পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছু ভালে যুক্তি থাকবে। অসংখ্য অপূর্ব প্রেমের সম্পর্কও যেমন ভেঙে যায়, বিপুল আয়োজনের পারিবারিক বিয়েও আজকাল ভেঙে যাচ্ছে কাচের চুড়ির মতো অতর্কিতে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন কোনটা ভালো। ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে! তারপরও স্বাধীন-ইচ্ছার মেয়েটি নিজের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়, নিজেই কাউকে পছন্দ করে নেয়। মা-বাবার বাধ্যগত লক্ষ্মী মেয়েটি সিদ্ধান্তটি বাবা-মাকেই নিতে বলে। বাবা-মা, মামা-চাচা, পরিবারের মুরব্বিরা মিলে অনেক পাত্র দেখে ভালো একটি পাত্রকে বাছাই করে নিয়ে আসে।

তারপরও দেখা যায় মেয়েটির জীবনে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতেই হয়। বাস্তবতার কারণে, সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে। এটা প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। প্রেমের সময় ছেলেটি বা মেয়েটি দেখে কেবল একে অপরকে, পরিবার থাকে তখন আড়ালে। আর বিয়ের পর উভয়ের পুরো বংশ এসে সামনে হাজির হয়! শুধু কি উভয়ের বংশ! সত্যি বলতে তারা নিজেরাও কি তখন আড়ালে থাকে না! প্রেম তো এক প্রলেপ, সুন্দরের আবরণটুকু। কিন্তু বিয়ে! একেবারে অস্থিমজ্জাসহ। ভেতরের সবটুকু রস ও নির্যাস, ক্লেদ ও কুসুম তখন হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়ে। তাই গভীর প্রেমের সম্পর্কেও দেখা যায়, কোমল প্রেমিকাটি তার সরল প্রেমিকটির দিকে তাকিয়ে বলছে, এই ছিলে তুমি! এই তোমার প্রকৃত রূপ! ছেলেটি তখন আর প্রেমিক নেই, স্বামী। সে তখন প্রবল হুংকার দিয়ে ওঠে, তোমাকেও ভালো করে চিনেছি আমি!

বিয়ের পরে নারীর প্রধান লড়াই

বিয়ের পরে নারীর প্রধান লড়াই শ্বশুরবাড়ির সবার মন জুগিয়ে চলাটাই। যদি চাকরিজীবী, স্বনির্ভর, সুশিক্ষিত নারী হয় তাহলে হয়তো কিছুটা বেঁচে যায়। নিজের মতো একটি আলাদা সংসার সে গুছিয়ে নিতে পারে। কিন্তু তাকে যদি থাকতে হয় শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে, যতোই অর্থশালী, উচ্চশিক্ষিত হোক না কেন, শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে চলার লড়াইটা একটি নারীকে কমবেশি করতেই হয়। প্রথমত এ কারণে যে নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া কিছু সামাজিক, পারিবারিক বিধিনিষেধ আছে। স্বনির্ভর হলেও তাকে রান্নাঘরে যেতে হয়। স্বাধীনচেতা হলেও তার যখন খুশি তখন ঘর থেকে বেরোনো চলে না।

পোশাক-আশাক, আচরণ, অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা সব বিষয়েই তাকে সচেতন থাকতে হয়। পান থেকে চুন খসলেই তার বিরুদ্ধে নানা রকম অপবাদ জোটে। উচ্চশিক্ষিত হলেও সে ক্ষমা পায় না। বরং আমাদের সমাজে উচ্চশিক্ষিত বিবাহিত নারীর প্রতি এই অভিযোগ ওঠে যে সে স্বেচ্ছাচারী। এ গেল বাইরের দিকে কিছু আচরণগত লড়াই। কিন্তু বিয়ের পর একটি নারীকে ভেতরে ভেতরেও কিছু লড়াই করতে হয় যা কেউ দেখে না। এ লড়াইটা নারীর নিজের সঙ্গে নিজের। পরিচিত একটি পরিবেশ ছেড়ে যে সে নতুন একটি পরিবেশে আসে, সবার অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও সে নিঃসঙ্গ বোধ করতে পারে। এটা প্রতিটি মানুষ তো বটেই, প্রতিটি প্রাণীরই বৈশিষ্ট্য যে পরিচিত পরিমণ্ডল ছেড়ে আসার সে নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তা ও নিঃসঙ্গতায় ভোগে।

মানুষকে সঙ্গ কেবল মানুষই দেয় না, বরং দেয় তার পরিচিত পরিবেশ। বাবার বাড়িতে ফেলে আসা একটা গাছের জন্যও মেয়েটির মন খারাপ হতে পারে। সে কথা তো সে কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারবে না। এই যে সে ছোট ছোট অনুভূতির অনেক জায়গা ফেলে চলে আসে, এটা সামলানোও তার জন্য বিরাট একটা লড়াই।

নাইওর

‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া
আমার ভাইধন রে কইয়ো
নাইওর নিতো বইলা
তোরা কে যাস কে যাস

বছরখানি ঘুইরা গেল
গেল রে
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না
পাইলাম না
কইলজা আমার পুইড়া গেল
গেল রে
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না
পাইলাম না’

মীরা দেব বর্মনের লেখা শচীনদেব বর্মনের কণ্ঠে নাইওরির হাহাকার করুণভাবে ফুটে উঠেছে। এমন আরও অনেক গান আছে নাইওরিদের নিয়ে। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেও সারা বাংলার বিবাহিত নারীদের বাবার বাড়ি নাইওর যাওয়া ছিল এক অপার আনন্দের বিষয়। নাইওর কী এখনকার মেয়েরা এটা কোনোভাবেই বুঝবে না। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল, চাইলেই কল করে বাবার বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলা যায়। ভিন্ন জেলায় থাকলেও ইচ্ছা করলেই এক দিনে চলে যাওয়া যায়।

কিন্তু আজ থেকে মাত্র ত্রিশ বছর আগেও পাশাপাশি দুই উপজেলায় বাস করলেও ইচ্ছা করলেই বাবার বাড়ি যাওয়া ছিল কোনো মেয়ের জন্য অকল্পনীয় ব্যাপার। শুধু সামাজিক রীতিনীতির জন্যই না, যোগাযোগব্যবস্থার জন্যও। পথঘাট নেই, বিলের পর বিল। বাহন একমাত্র গরুর গাড়ি অথবা পালকি। যার সেই সামর্থ্য নেই তার পায়ে হাঁটা। মাইলের পর পর মাইল এই যাত্রা অসহনীয়। তাই গ্রামবাংলার মেয়েরা বাবার বাড়ি নাইওর যেত বর্ষাকালে, নৌকায়। এ নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর গান, কবিতা আছে।

গান-কবিতায় সুন্দর মনে হলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে নারীর বেদনা। একদিকে সে বছর ধরে বাবার বাড়ি যেতে পারছে না, ভাইবোনদের প্রিয় মুখগুলো দেখতে পারছে না, অন্যদিকে তাকে বাস করতে হচ্ছে অচেনা-অপরিচিত কিছু লোকের সঙ্গে। যারা সারাক্ষণ উঠতে-বসতে তার দোষ ধরে, গালমন্দ করে। এখন যোগাযোগব্যবস্থা যেমন অনেক সহজ হয়েছে, নতুন বউয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও অনেক বদলেছে। ত্রিশ বছর আগের একজন বিবাহিত নারীর দুঃখ এ যুগের মেয়েরা কোনোভাবেই বুঝবে না।

মাতৃত্ব নারীর সম্ভাবনা নাকি সীমাবদ্ধতা

নারীর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় মাতৃত্ব। বলা হয়, মা না হলে নারীর জীবন পূর্ণ হয় না। মা হওয়ার পর তার কানের কাছে মন্ত্র পড়ার মতো বারবার বলে দেওয়া হয়, দেখো, তুমি কিন্তু আর আগের মতো নেই। এখন তুমি মা হয়েছ। চাইলেই এখন তুমি যা খুশি করতে পারবে না।

সন্তানের জন্য তোমার সব ত্যাগ করতে হবে। এই মন্ত্র নারীকে পড়ানো হয় একেবারে বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই, দেখো, তুমি এখন বড় হয়েছ, তুমি এখন আর আগের মতো নেই, চাইলেই তুমি যা খুশি করতে পারো না। বিয়ের পরও এ কথা বলা হয়। এসব কথা কিন্তু একজন পুরুষকে বারবার এভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় না। অবশ্যই তার দায়িত্ব থাকে, কিন্তু যাকে বলা হয় সামাজিক চাপ, সেটা সে কখনোই বোধ করে না। এসব চাপ একমাত্র নারীর ওপর।

আত্মত্যাগ করতে করতে একজন নারী শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে মাতৃত্বে। সমাজে বেঁধে দেওয়া যা তার সর্বোচ্চ স্তর। কিন্তু মাতৃত্বই কি নারীর জীবনের শেষ? তার তো আরও অনেক সম্ভাবনা থাকতে পারে। নিজেকে সে নানাভাবেই বিকশিত করতে পারে। সন্তানের দেখভাল করেই। আজকাল অনেক নারী সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করেই নিজেও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। আবার এ কথাও সত্য যে মা হওয়ার পর অনেক সম্ভাবনাময়ী নারীর জীবন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই মাতৃত্ব কি নারীর সম্ভাবনা নাকি সীমাবদ্ধতা এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।

কীভাবে একজন সম্ভাবনাময়ী মাকে শুধু মাতৃত্বের কোটরে আবদ্ধ না রেখে তাকে একজন পরিপূর্ণ স্বাধীন মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া যায়, সেসব নিয়ে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। এখন সময় অনেক বদলে গেছে। মেয়েরাও এখন চাকরিজীবী। তারা ঘুরতে ভালোবাসে, বই পড়তে ভালোবাসে।

তারা নিজের মতো বাঁচতে চায়। অবশ্য এখন অনেক আধুনিক, সুশিক্ষিত পরিবারে সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব বাবাও নেয় কিছুটা। তারপরও একটি সন্তানের পেছনে মায়ের যে আত্মত্যাগ সেটা অকল্পনীয়। মা যদি তখন স্বামী, স্বামীর পরিবারের কাছ থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট না পায়, তখন সে একেবারেই অসহায় হয়ে পড়ে।

বিবাহিত নারী যখন আবার চাকরিজীবী

এখন অবস্থাটা অনেক অনেক বদলে গেছে। প্রায় প্রতিটি শিক্ষিত পরিবারই চায় তার মেয়েটা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক, তারপর বিয়ে করুক। শ্বশুরবাড়ি থেকেও বিষয়টা মেনে নেয়। অনেক সুশিক্ষিত পরিবার বরং চাকরিজীবী মেয়েদেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু তারপরও কিছু সমস্যা তো থাকেই। প্রধান সমস্যাটা হয় টাইম-বাইন্ডিং, সময় কুলানোর। দশটা-পাঁচটা অফিস করে আর সংসার সামলানোর সময় থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই একজন চাকরিজীবী বিবাহিত নারীকে গৃহপরিচারিকার ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হতে হয়।

পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা পেতে হয়। বিশেষ করে সে নারী যদি আবার মা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে আরও নাকে-মুখে সব সামলাতে হয়। এ ক্ষেত্রে শাশুড়ির ভূমিকা অনস্বীকার্য। এখনো দেখা যায় মা বা শাশুড়ির সাপোর্ট না পেলে অনেক বিবাহিত চাকরিজীবী নারীই হিমশিম খেয়ে যায়। স্বামীকেও পালন করতে হয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আধুনিক শিক্ষিত স্বামীরা বাচ্চা ডায়াপার পাল্টানোর ভূমিকা নেয়, রাত জেগে বসে থাকে, বাচ্চার দুধ গরম করে আনে। স্ত্রী ও বাচ্চাকে যথেষ্ট সময় দেয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই পরিবেশটা একই রকম নয়।

অনেক সুশিক্ষিত স্বামীকেও দেখা যায় দু-এক বছরের মধ্যেই হাঁপিয়ে পড়ে। মনে করে প্রথম কয়েকটা দিনই তার দায়িত্ব। তারপর সে ফিরে যায় নিজের আড্ডায়, কাজে। নারীটি তখন একা হয়ে পড়ে। ফলে দেখা যায় বাচ্চা হওয়ার পরই সংসারে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এর অনেকগুলো কারণ।

প্রথমত নারীটি তখন একেবারেই সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, সারাক্ষণ একটা বাচ্চা নিয়ে পড়ে থাকে। সন্তান তার যতই প্রিয় হোক, সে চায় সবকিছুর সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে। বিশেষত সে যে এখনো ফুরিয়ে যায় এ বিশ্বাসটা তার থাকতে হবে।

স্বামীকে নিয়ে এই সময়টায় নারীরা একধরনের জটিলতায় ভুগতে থাকে। তার অনেক শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে। স্বামীর সাপোর্ট এ সময় সবচেয়ে বেশি দরকার। কিন্তু ভুল-বোঝাবুঝির কারণে অনেক সংসার ভেঙে যায়। সন্তান হওয়ার পর সংসারে যেমন অন্য রকম একটা আনন্দ আসে, নতুন বন্ধনের সূচনা হয়, তেমনি নতুন কিছু জটিলতাও সৃষ্টি হয়। অনেক নারী তখন সংসারটা টিকিয়ে কেবল সন্তানের মুখ চেয়ে।

তবু আনন্দধারা

মানুষের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য সুখী হওয়া। বিবাহিত জীবনের উদ্দেশ্যও তাই। বিবাহ অত্যন্ত প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত সংগঠন। এটা টিকে থাকে পারস্পরিক বিশ্বাস, ভালোবাসা ও নৈতিকতার ওপর। বিবাহিত জীবনে নারীকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়, প্রতি মুহূর্তেই তাকে নতুন নতুন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

শুধু সন্তান জন্মদানের মধ্য দিয়ে তার ভূমিকা শেষ হয় না, তাকে মানুষ করা, তাকে বড় করা এমনকি তার সন্তানের দেখভাল করা পর্যন্ত একটি নারীর জীবন গড়ায়। এটা একটা সামাজিক রীতি, কিন্তু তারপর নারীর যেন নিজের জন্য একটা রুম থাকে, যেমনটা বলেছিলেন ভার্জিনিয়া উলফ।

নারী যেন নিজের মতো বাঁচতে পারে। তার যেন স্বাধীনতা থাকে। নারী সুখী ও স্বাধীন না হলে পরিবারেও শান্তি আসতে পারে না। পরিবারে শান্তি না এলে দেশেও শান্তি আসবে না। নারী হচ্ছে সমাজ-সংস্কৃতি-সভ্যতার প্রধান সেতুবন্ধ। নারী হচ্ছে প্রকৃতি, নারী না টিকলে পুরুষও টিকবে না। তবে নারীর কথা নারীকেই বলতে হবে, তাকে বলতে দিতে হবে।

 

লেখা: কামরুল আহসান ছবিসূত্র: সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ঘরেই বানিয়ে নাও মেকআপ সেটিং স্প্রে

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook