বেশ কিছুদিন আগে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজধানীর একটি পুর-নোটিশে ঘোষণা করা হয়েছিল যে বাড়ির ছাদের বাগানকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে সরকার। আর যারা ছাদে বাগান করবে, প্রতিটি বাড়িপিছু বছরের ট্যাক্সের একটা নির্দিষ্ট শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে সবুজায়নে ছাদে বাগান করার গুরুত্ব ঠিক কতটা, সেটা বোঝা যায়। শুধু তাই নয়, এখন যেভাবে চারপাশে দূষণ ছড়াচ্ছে, তাতে প্রতিটি ছাদে লাগানো সবুজ সেই দূষণের মাত্রাও যে কিছুটা কমাবে, তাতে আর সন্দেহ কী!
শহরজুড়ে ছাদে বাগান করার প্রবণতা বাড়ছে। শহরে বাড়ির সামনের মাটি প্রায় পাওয়া যায় না বললেই চলে। তার ওপর ফ্ল্যাটগুলোতে গাছ লাগানোর আর উপায়ও নেই। এ অবস্থায় ফ্ল্যাটের বারান্দায় কিচেন গার্ডেন কিংবা ছাদের বাগানই ভরসা। আর আজকাল একটু লক্ষ করে দেখবে, বড় বড় রেসিডেন্সিয়াল প্রজেক্টগুলোতে ছাদে বাগান করার ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। এতে আকৃষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। গাছ, পাখি, পানি, নদী- এসব সাধারণ দুচোখে বড্ড প্রিয়। আর তাই আমাদের এই শহরেও কিন্তু ছাদের বাগান বাড়ছে ক্রমে।
ছাদে বাগান করা যদিও খুব একটা সহজ কাজ নয়। বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আগে ছাদটিকে গাছ লাগানো কিংবা বাগান করার মতো উপযোগী করে নেওয়াটা দরকার। ছাদে বাগান করার সময় সবচেয়ে আগে রুফ ট্রিটমেন্ট করিয়ে নেওয়াও জরুরি। একে ”ছাদের চিকিৎসা” বলা যেতে পারে।
ছাদের মধ্যে বেশ কয়েকভাবে বাগান করা যায়। ছোট টবগুলোয় একটু সমস্যা হয়, কারণ গাছ খুব একটা বাড়ে না। তাই সিমেন্টের বড় টব কিনে বা বানিয়ে নেওয়া যায়। এ ছাড়াও বড় প্লাস্টিকের ড্রামেও লাগানো যায় গাছ। তবে যেখানেই গাছ লাগাও না কেন, এগুলোর মধ্যে একেবারে নিচে কয়েকটা ছিদ্র করে নিতে হবে। যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়। এবার কিছু পাথরের টুকরো টবের একেবারে নিচে দিতে হবে। তারপর এক ধাপ মাটি। মাটির উপরে সার। জৈব সার হলেই সবচেয়ে ভালো। তারপর আবার মাটি। এভাবেই টব প্রস্তুত করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো কী কী গাছ পুঁতবে ছাদের গাছের টবে? খুব নরম প্রকৃতির গাছ না পোঁতাই ভালো। কারণ, ছাদের রোদে লড়াই করতে হবে গাছগুলোকে। সে ক্ষেত্রে বড় গাছের বনসাই, কলমের ফল কিংবা ফুলের গাছ লাগানোই সবচেয়ে ভালো। নানা ধরনের গাছ ছাদে লাগাতে দেখেছি, এমনকি কলাগাছ, আমগাছ, নারকেলগাছও ছাদের টবে লাগাতে দেখেছি। সুতরাং ছাদে ঠিকঠাক গাছ লাগানোর জায়গাটা প্রস্তুত হলেই মন ভালো করা সব ধরনের গাছই লাগিয়ে দিতে পারো ছাদে।
ছাদের ওপরে ছোট পিলার করে মেঝে ঢালাই করে, চারপাশে ফুট দেড়-দুইয়ের মতো পাঁচিল দিয়ে তার মধ্যে সার মেশানো মাটি ফেলা হলো। এই মাটির মধ্যে কোরিয়ান ঘাস বিছিয়ে দেওয়া হলো কার্পেটের মতো। নিয়মিত পানি আর যত্নে খুব সুন্দর হয়ে উঠবে এই ছাদের উদ্যান। চারপাশে নানা বড় বড় টবে গাছ থাকল। ছোট ছোট গার্ডেন চেয়ার রাখতে পারো, আবার ঘাসের কার্পেটের ওপরেও আরাম করে বসতে পারো। ছাদের পাঁচিল ঘেঁষে আলোর ব্যবস্থা থাকবে। গরমের দিনের সন্ধে বা রাতে, আর শীতের দুপুর কিংবা বিকেলবেলা অসাধারণ অনুভূতিতে কেটে যাবে সময়।
লেখা : রোকেয়া ইসলাম