পিরিয়ডের সময় নারীদের খুব কমন একটি সমস্যা হচ্ছে ব্যথা। মূলত পেট, পিঠ ও কোমর দিয়েই এ ব্যথা রাজত্ব করে বেড়ায়। পিরিয়ডের ব্যথায় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় নারীদের। অনেকেই এ সময় ব্যথানাশক ওষুধ নিয়ে থাকে। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন ও টেম্প্যাস ডটকম পিরিয়ডের ব্যথার সমাধান আর এ সময় করণীয় বিষয় নিয়ে কিছু কার্যকর টিপস দিয়েছে। সেগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন। লিখেছেন সাবিহা জামান
গরম ভাপ
পিরিয়ডের সময় আমরা অনেকেই অতিরিক্ত ব্যথায় কাতর থাকি। এ সময় গরম ভাপ খুব কাজে আসে। আমাদের প্রায় সবার বাসাতেই হট ওয়াটার ব্যাগ থাকে। ব্যাগে গরম পানি ভরে তলপেটে চেপে রাখলে ধীরে ধীরে ব্যথা কমে আসবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পানির তাপমাত্রা যেন সহনীয় হয়। গরম ভাপ ইউট্রাসের পেশিগুলো শিথিল করে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এ কারণেই পিরিয়ডের সময় ব্যথা হলে গরম ভাপ খুব কাজে দেয়।
ব্যায়াম
আমাদের শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান কিন্তু একটি শরীরচর্চা করলেই পাওয়া যায়। পিরিয়ডের ব্যথায় যখন তুমি কাবু, তখন কিছু ব্যায়াম তোমাকে বেশ আরাম দেবে। যোগব্যায়াম ও কার্ডিও ব্যায়াম পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ম্যাসাজ
শরীর ব্যথা হলে আমরা অনেকেই ম্যাসাজ করি, যা অনেকটাই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এবার থেকে পিরিয়ডের সময় যখন ব্যথা করবে, পেটে ও পিঠে ম্যাসাজ করবে, দেখবে বেশ ভালো বোধ করবে।
ওষুধ
আমরা অনেকেই পিরিয়ডের ব্যথা উপশমে ওষুধ নিতে চাই না। কারণ, আমরা ধারণা করি, এতে আমাদের শরীরের ক্ষতি হতে পারে। যেটি একটি ভুল ধারণা। অতিরিক্ত ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করলে কোনো ক্ষতি নেই বরং তীব্র ব্যথা থেকে রেহাই মেলে। তবে ওষুধ নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। নিজ থেকে কোনো ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকো।
খাদ্যতালিকায় যুক্ত করো
আদা
শুধু ঠান্ডা-কাশি হলেই আমরা আদা খাই। কিন্তু ব্যথা কমাতেও আদা যথেষ্ট উপকারী। পিরিয়ড চলাকালে ব্যথা কমাতে আদা-চা পান করলে ভালো ফল পাবে। তাই এ সময়ে আদা ও ক্যামোমাইল দিয়ে চা খেতে পারো। আদা প্রোস্টাগান্ডিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যামোমাইল ব্যথা উপশমে সহায়ক।
মৌরি
মৌরি ‘অ্যান্টিসপাসমডিক’ এবং ‘অ্যান্টিইনফ্লামাটরি’ উপাদান ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়লেই মৌরি খেতে পারো। পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো করে অথবা অল্প পরিমাণ নিয়ে চিবিয়ে দুভাবেই খেতে পারো মৌরি দানা।
দারুচিনি
পিরিয়ডের সময় জমাট বাঁধা রক্তপাত হয়ে থাকে। এর কারণে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দারুচিনি খেতে পারো। কারণ দারুচিনিতে ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা ব্যথা উপশমে কাজে দেয়। দারুচিনি দিয়ে চা অথবা গরম পানিতে আধা চা-চামচ দারুচিনি গুঁড়া গুলে সারা দিন অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর পান করো, দেখবে বেশ ভালো লাগছে।
পানি
শুধু ব্যথাই পিরিয়ডের সমস্যা নয়। এ সময়ে সারা দিন বেশ ক্লান্তি লাগে আর গা ম্যাজম্যাজ করতে থাকে। তাই অন্য সব দিনের তুলনায় পিরিয়ডের সময় বেশি পানি পান করতে হবে। এতে তোমার ক্লান্তিভাব যেমন কাটবে, সঙ্গে পানিশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। আমাদের অনেকেরই পিরিয়ডের সময়ে মুখে ব্রণ হয়। তুমি যদি নিয়মিত পানি পান করো, তবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
এড়িয়ে চলো
পিরিয়ড চলাকালে কিছু খাবার তোমার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ, এসব খাবার পিরিয়ডের সময় খেলে নানান জটিলতা দেখা দেবে শরীরে। এদের মধ্যে রয়েছে লবণ, চিনি, কফি, অতিরিক্ত চা, রেড মিট, অ্যালকোহল, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার। অনেক সময় দেখা যায় মাথাব্যথা, অবসাদ, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, ক্লান্তি এ সমস্যাগুলো দেখা দেয় পিরিয়ড চলাকালে। যার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই এ খাবারগুলো দায়ী।
ছবি : সংগৃহীত