রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

ভালোবাসা

দিবস সবিশেষবিশেষ রচনারোমান্স রসায়ন

দুনিয়াকাঁপানো অমর প্রেমকাহিনি

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

যুগ যুগ ধরে প্রেম-ভালোবাসা ছিল, আছে। কিছু প্রেম ইতিহাসের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লিপিবদ্ধ। আবার কিছু প্রেম হারিয়ে গেছে অমানিশায়। যাদের প্রেমের অমর গল্প যুগ যুগ ধরে চলমান, নিশ্চয়ই সেসব গল্পের মাহাত্ম্য অবিচল। সেসবের আছে বিচার, আছে বিশ্লেষণ, আছে উদাহরণ। অনেকে জীবন দিয়েছে, কেউবা বনবাসী হয়েছে। সে জন্যই তো ভালোবাসার জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা দিবস। যাদের প্রেমের গল্প অমর হয়েছে, তাদের নিয়ে এই সংখ্যার আয়োজনÑ

রানি ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্ট 

হাজার বছরের পুরোনো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাদের হাজার হাজার প্রেমকাহিনির ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেমকাহিনি অুুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তার চাচা কিং উইলিয়ামের মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তার ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তারা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তারা একে অপরকে প্রচÐ ভালোবাসতেন। তাদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর পর স্বামীর শোকে রানি পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তার এই বিরহ শোক জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে। জীবননাশের হামলাও হয় ভিক্টোরিয়ার ওপর। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে রানি পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং পার্লামেন্টে যোগ দেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। তার শাসনামলেই ব্রিটেন সুপারপাওয়ার হিসেবে দুনিয়ায় আবিভর্‚ত হয়।

লাইলি ও মজনু 

প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র, লাইলী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লাইলি এবং মজনু একে অপরের প্রেমে পড়ে। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লাইলির বাবা মজনুকে আহত করলে লায়লাও আহত হতো, এমনি ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ মজনু মরু প্রান্তরে নির্বাসনে যায়। মজনুর প্রকৃত নাম ছিল কায়েস। বিরহকাতর খ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলিকে পাওয়ার জন্য মজনুকে প্রেরণা দেয়। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লাইলির বাবা মজনুর সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেন না। লাইলিকে তার বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর, যদিও লাইলি মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচÐ দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলিও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা,’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট 

রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেমকাহিনি। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রæতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরে পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রæতার জেরে এবং ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম!

সেলিম ও আনারকলি :

মোগল সম্রাট   আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়ে রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্যসুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে সম্রাট পুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয় এবং নিজ সন্তানের মৃত্যুদনন্ড করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চায়। তখন সেলিমের চোখের সামনে প্রিয়তমা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়।

 

শাহজাহান ও মমতাজ 

১৬১২ সালে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহানের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোগল সা¤্রাজ্য পরিচালনা করেন। স¤্রাট শাহজাহান তার ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ সালে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সা¤্রাজ্য হারিয়ে বন্দিজীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্যসুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে ‘তাজমল’ গড়ে উঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তার ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ‘তাজমহল!’

নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন 

২৬ বছর বয়সী মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তারা দুজনেই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। ফলে তাদের ভালোবাসা কখনো ¤øান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ান খুব চাইতেন জোসেফাইনের গর্ভে যেন তার সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেফাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালোবাসা থাকা সত্তে¡ও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।

ত্রিস্তান অ্যান্ড ইসলদে
ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাÐুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালোবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। একসময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হৃদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। একপর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তার স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো। তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদে আর আসবেন না। ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান। তার শোকে ভগ্নহৃদয় নিয়ে ইসলদেও কিছুদিন পর তারই রাজ্যে মারা যান।

অরফিয়াস এবং ইফরিডাইস 

এটি প্রাচীন গ্রিসের এক অন্ধ প্রেমের কাহিনি। অরফিয়াস সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের প্রেমে পড়েন। একপর্যায়ে বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভ‚মি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর। কিন্তু ইউরিডাইসের প্রেমে সাড়া না পেয়ে তার ক্ষতি করতে উদ্যত হন। পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাতে গিয়ে ইউরিডাইস এক সাপের গর্তে পড়লে সাপ তার পায়ে বিষাক্ত ছোবল হানে। শোকে কাতর অরফিয়াসের হৃদয় বিদীর্ণ করা হাহাকার শুনে পরি আর দেবতাদের চোখেও জল আসে। দেবতাদের পরামর্শে অরফিয়াস পাতালপুরীতে প্রবেশ করেন। পাতালপুরীতে তার গান শুনে হেডসের মন গলে যায়। মুগ্ধ হয়ে হেডস ইউরিডাইসকে অরফিয়াসের সঙ্গে পৃথিবীতে পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু সে জন্য একটা বিশেষ শর্ত দেন। শর্তটি হলো অরফিয়াসকে ইউরিডাইসের সামনে থেকে হেঁটে যেতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে না পৌঁছাবে, ততক্ষণ অরফিয়াস পেছনে ফিরতে পারবে না। কিন্তু উৎকণ্ঠিত অরফিয়াস হেডসের সেই শর্তের কথা ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে ইউরিডাইসকে দেখতে পেছনে ফেরেন। আর তখনই অরফিয়াসের জীবন থেকে চিরদিনের মতো অদৃশ্য হয়ে যান প্রিয়তমা ইউরিডাইস। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সংগীত ও মিউজিক অনেক বড় ভ‚মিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনি থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।

রামোস অ্যান্ড থিইবি 

অত্যন্ত আবেগী আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেমকাহিনি। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাদের প্রেম দ্বারা প্রভুর থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে স্বর্গেও তারা একসঙ্গে থাকবে! সুপুরুষ রামোস ছিল ব্যাবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবির বাল্যকালের বন্ধু। তারা প্রতিবেশী হওয়ায় একই সঙ্গে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাদের পরিবার এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেয় না। তাই তারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরিগাছের নিচে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবি গোপনীয়তা রক্ষার্থে মুখে একটা কাপড় পরে রামোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুধার্ত সিংহ থিইবির সামনে হাজির হলে ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার সময় তার মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ধরে নেয় যে সিংহ তার থিইবিকে ভক্ষণ করেছে। তাই সেও তার ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবি এসে মৃত রামোসকে দেখতে পেয়ে সেই একই ছুরি দিয়েই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।

মেরি এবং পিয়েরে কুরি

রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনি। অথচ দুনিয়াকাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনি স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ রকম একটি জুটি হলো মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পৌরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনি। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাদের প্রেমকাহিনি। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, এরা ছিল একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চের অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সুন্দরবনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর র‌্যাডিয়াম। পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরি কুরি পৃথিবীর একমাত্র নারী, যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন।

লেখা : সুরাইয়া নাজনীন

ছবি : সংগৃহীত2

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কর্মক্ষেত্রদেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়ন

প্রেমের বিয়ে ভালোবাসা কি হারিয়ে যায়?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২৭, ২০২০

প্রেম- খুব ছোট্ট একটি শব্দ। একটি দ্বৈত সম্পর্ক। দুজন মানুষের পূর্ণ অংশগ্রহণের সম্পর্ক। প্রেম সুন্দর, প্রেম পবিত্র। কিন্তু প্রেমের সম্পূর্ণটাই আনন্দদায়ক নয়। প্রেমে ব্যর্থতার গল্প হয়তো সাফল্যের গল্পের চেয়ে অনেক বেশি শোনা যায়। আবার বিয়ের পরে প্রেম হারিয়ে যায়, এমনটাও খুব সাধারণ।

জীবনের বিভিন্ন ব্যস্ততার ভিড়ে প্রেম হারিয়ে গেলেও আমাদের মধ্যে অনেকেই সেটাকে স্বাভাবিক মনে করে নিয়ে চলতে থাকি। কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করি না যে বিয়ের পরেও প্রেম সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের পরে প্রেম বেড়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। শুধু একটু চেষ্টার প্রয়োজন।

বিয়ে মানে নতুন করে শুরু করা

কৈশোরে যখন প্রেমের প্রথম ছোঁয়া লাগে মনে, তখন সবকিছুই সুন্দর মনে হয়। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল-ঠিক এর বিচার-বিবেচনাও করতে পারে না। পরিবার থেকে বাধা এলেও মনে হয় মনের মানুষটা সঙ্গে থাকলে সব বাধাই পেরোনো সম্ভব। তারুণ্যে পা দিয়ে প্রেম, গল্পের বই ও সিনেমা থেকে বেরিয়ে এসে একটু একটু করে বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু সেই সঙ্গে বিয়ে নিয়েও চলতে থাকে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও স্বপ্নের জাল বোনা।

সেই সময় মনে হয় যেন কোনোভাবেই এই প্রেম হারাতে পারে না। বরং বিয়ে করতে পারা মানেই প্রেমের সফলতা। কিন্তু সবাইকে বরাবরই ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিয়েই প্রেমের সঠিক রূপটি চিনতে মানুষকে সাহায্য করে। না, সেটা সব সময়ই নেতিবাচক হয় না। বরং, এমন অনেক স্বামী-স্ত্রী রয়েছে যারা প্রেম করে বিয়ে করলেও বিয়ের পরই সঙ্গীকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে, যেটা সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করে তোলে।

যা করতে হবে

সাইকোলজি টুডে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের কারণেই দুজন নারী-পুরুষ একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আফসোস এই যে এই আকর্ষণ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফুরিয়েও যায়। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী ‘এটাই স্বাভাবিক’-  এ রকম মনে করে চলতে থাকে।

আর সাধারণ মতামত দাঁড়ায়, বিয়ে মানেই ঝামেলা, বিয়ে মানেই অসুখী জীবনের শুরু। কিন্তু তা-ও বিয়ে করা বন্ধ হচ্ছে না। একই সঙ্গে ডিভোর্সও বন্ধ হচ্ছে না। অর্থাৎ যারা বিয়ের পরে প্রেমের হারিয়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে আপস করে চলতে পারে না, তারা এই বিচ্ছেদের রাস্তাটি বেছে নেয়। অথচ এতটা নেতিবাচক না হয়ে, ভিন্ন কিছু চেষ্টা করাই যায়। সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে হয়।

ইমোশনাল ফিটনেস এক্সপার্ট ড. বার্টন গোল্ডস্মিথ বলেন, ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, শুধু প্রাথমিক আকর্ষণটা মিইয়ে যায়। আর এই মিইয়ে যাওয়া আকর্ষণকে ফিরিয়ে আনার জন্য বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কের আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

কিন্তু সেটিও সঠিক সমাধানের পথ নয়। এটা ঠিক যে একটা সম্পর্কে শরীর ও মন দুই-ই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। একটিকে বাদ দিলে অন্যটি অর্থহীন। তাই দুটিকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু হারিয়ে বা মিইয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে ফিরিয়ে আনার জন্য শারীরিক সম্পর্ক কোনো সমাধান নয়। বরং নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জীবনে বৈচিত্র্য আনা উচিত।

সঙ্গীকে সঠিকভাবে জানতে পারা এবং বুঝতে পারা খুবই জরুরি। আর অবশ্যই উভয়ের মতামত ও রুচিকে একই রকমভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা মানেই নতুন নতুন রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া বা শপিং করা নয়। বরং এমন কিছু করা যাতে দুজনেই একান্তভাবে একজন আরেকজনকে সময় দিতে পারে। হতে পারে সপ্তাহের কোনো একদিন দুজনে মিলে একসঙ্গে রান্না করা কিংবা নতুন কোথাও বেড়াতে যাওয়া।

মনে রাখবে, দুজনে মিলে একসঙ্গে নতুন কোনো অভিজ্ঞতা অর্জন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলার সবচেয়ে উপযোগী উপায়। কিন্তু এই ধরনের যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় দুজনের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। একজনের ভালো লাগে বলেই সেটা আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আবার অন্যের কোনো রকম অসুবিধা হয়, এমন কিছুও করা যাবে না।

আমরা বিয়েকে দোষ না দিয়ে বা ‘সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায়’- এ রকম কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি নিজেদের মধ্যকার ভুল-বোঝাবুঝি দূর করার চেষ্টা করি, তাহলেই বেশির ভাগ সমস্যা শেষ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মতামত বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা খারাপ লাগা এই অনুভূতিগুলো সরাসরি প্রকাশ করলে সমস্যা হওয়ার আগেই সেটাকে এড়ানো যায়।

যা করা যাবে না

আজকের যুগে প্রায় সব পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরি করে। সে ক্ষেত্রে ব্যস্ততা ও স্ট্রেস দুজনেরই সমান। সুতরাং কখনোই সঙ্গীর কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না, বা সঙ্গীর ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করা যাবে না। ব্যস্ততায় সকালের নাশতা প্রায়ই হয় না। তাই দিন শেষে চেষ্টা করো যেন একসঙ্গে রাতের খাবারটা খাওয়া যায়। আর অবশ্যই এ সময় মুঠোফোনটি বন্ধ রাখো।

সন্তানের দায়িত্বটিও ভাগাভাগি করে নিতে হবে যেন সে উপেক্ষিত বোধ না করে, আবার স্বামী বা স্ত্রী কোনো একজনের ওপর চাপ না পড়ে। সন্তান দুজনেরই আর তাকে সময়ও তাই দুজনেরই দিতে হবে। বাবা-মা উভয়েরই প্রয়োজন একটি সন্তানের সুষ্ঠুভাবে বড় হয়ে ওঠার জন্য।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল-বোঝাবুঝির শুরুটা প্রায়ই তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কারণে ঘটে থাকে। সেটা হতে পারে প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মী বা আত্মীয়-পরিজন। একটা কথা মনে রাখবে, দিন শেষে তোমরা দুজনই নিজেদের সবচেয়ে কাছের মানুষ। বিশ্বাস যে কোনো সম্পর্কে যেমন সবচেয়ে জরুরি, তেমনি সবচেয়ে সংবেদনশীলও। সেই সঙ্গে অযথা অন্য কারও সঙ্গে নিজের সঙ্গীর তুলনা করে তাকে খাটো করে দেখানো যাবে না। যে কোনো সমস্যাতেই চেষ্টা করো বাড়িতে নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে।

বাইরের মানুষের সামনে কখনই সঙ্গীকে ছোট করা যাবে না। তর্ক-বিতর্ক খুব স্বাভাবিক, কিন্তু চেঁচামেচি করে অযথা নিজেকে ছোট করার কোনো মানে হয় না। বরং ধীরস্থিরভাবে যুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা অনেক সময়ই সেই বন্ধুটির সাহায্য চাই যে আমাদের বিয়ের আগের প্রেমের সময়টাতে আমাদের খুব কাছে ছিল। এটাও সব সময় ঠিক নয়। মনে রেখো, সেই বন্ধুটি কিন্তু বিয়ের পরে তোমাদের মাঝে গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কটাকে বুঝবে না।

সম্পর্ক যেমন দুজন মানুষ একসঙ্গে শুরু করে, ঠিক তেমনিভাবেই একসঙ্গে থেকেই পুরোনো প্রেমকে বছরের পর বছর নতুন রূপে জিইয়ে রাখতে পারে। সঙ্গীর প্রতি যত্নবান হওয়াটাই এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জরুরি। তবে কোনোভাবেই ‘মানিয়ে নেওয়া’টা যেন একজনের দায়িত্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানসিকভাবে একজনের পরাধীন বোধ করতে শুরু করার মাধ্যমেই সম্পর্কের অবনতির শুরু হয়। ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, মানুষ নিজের ভুলের কারণেই তা হারিয়ে ফেলে।

লেখা : সোহেলী তাহমিনা 
ছবি: সংগ্রহীত 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, তারপর?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২৩, ২০২০

মানুষের একটি বিশ্বাস রয়েছে যে সবচেয়ে কাছের বন্ধুরা একে অপরের প্রেমে পড়লে তারা সেরা জুটি হয়, আবার অনেকেই পরামর্শ দেন যে সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক না জড়ানোই ভালো। কী যে ভালো আর কী মন্দ সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবু বলার চেষ্টা।

একবার যদি ভালোবাসা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ভালোবাসার পাশাপাশি বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, প্রেমের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পরিচিতজনকে (বন্ধু) অন্যের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। এই পরিচিতজনকে প্রেমের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলে সম্পর্ক ভালো হয়।

নিরাপত্তাবোধ থেকে কাছে আসা

যে কোনো সমর্থন, সমর্পণে যার কাছে যাওয়া যায়, সেই তো বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই যদি একসঙ্গে বড় হয় দুজন, তাহলে বোঝাপড়াটা অনেক মজবুত থাকে। সে ক্ষেত্রে নতুন একটা সম্পর্কের শুরুতে দুজনেই মানসিকভাবে যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করে।

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম না হলে যার কাছে গেলেই সব শান্তি হতো তখন তার কাছে গেলেই কষ্ট পাওয়ার ভয়ে সম্পর্ক পরিণত হয় এড়িয়ে যাওয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বন্ধু তার সেরা বন্ধুর কাছে প্রেমের আহ্বান আশা করে না সে ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের মতো ব্যাপার ঘটে থাকে। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হলে পুরো প্রেম পর্বটাই থাকে জমজমাট। সাধারণত পড়াশোনা চলাকালীন সময়টার অনিশ্চয়তা, চতুর্মুখী চাপের সময়টায় বন্ধুত্বের পাশাপাশি প্রেমের এই অনুভূতিটুকু পারস্পরিক প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

আর যদি প্রেমটাই না হয়

সহজ, স্বাভাবিক বন্ধুত্বে নেমে আসা কঠিন হয়ে যায়। বন্ধুত্বে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যায়। এটুকু মনে রাখা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যাখ্যা গভীরভাবে চমৎকার,

বন্ধুত্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হইয়া ভালোবাসায় উপনীত হইতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা নামিয়া অবশেষে বন্ধুত্বে আসিয়া ঠেকিতে পারে না। একবার যাহাকে ভালোবাসিয়াছি, হয় তাহাকে ভালোবাসিব নয় ভালোবাসিব না; কিন্তু একবার যাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়াছে, ক্রমে তাহার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হইতে আটক নাই।

সুতরাং একজন আরেকজনকে প্রপোজ করার আগে, আকার-ইঙ্গিত সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে প্রপোজ করা উচিত। যদি পজিটিভ মনে না হয়, তবে বন্ধু হয়েই থাক না।

ভালো-মন্দে

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম অতঃপর বিয়েতে গড়ালে নতুন করে নিজেকে চেনানোর ব্যাপারগুলো থাকে না। একজন আরেক জনের পছন্দ, অভ্যাস, অন্যভস্ততা, রুচির ব্যাপারগুলো পরিচিত থাকায় নতুন করে আর মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় না।

কতটুকু সফল

টানাপোড়েন এ সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই ক্লাসে একই বিষয়ে পড়াশোনা করে একই পেশায় ক্যারিয়ার গঠন বা একই সঙ্গে উচ্চতর পড়াশোনায় যারা আছে তাদের জীবন সম্পর্কে জানা যায় বিয়ের আগে বেশির ভাগেরই বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের পর সম্পর্ক বিয়েতে গড়িয়েছে।

স্বস্তিদায়ক হয় এই সম্পর্কগুলো? যদিও ‘The secret of a happy marriage remains secret’। তারপরও বিপরীত গল্প তৈরি হয়। খুব আবেগপ্রবণ ভালোবাসাই যে সফল দাম্পত্য জীবন নিশ্চিত করে, ব্যাপারটি তা হয়ে ওঠে না।

শুধু ভালোবাসার অভাব নয় বিয়ের পর বন্ধুত্বের অভাবই অসুখী দাম্পত্য জীবনের একটি কারণ হতে পারে। তাই বিবাহিত জীবন স্বস্তিদায়ক ভালোবাসার চেয়েও অন্যান্য যে কটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ‘বন্ধুত্ব’ তার মাঝে একটি।

এমনটিও ঘটে থাকে, এমন জুটি রয়েছে কখনোই বন্ধু ছিল না বা দীর্ঘদিনের পরিচিতও নয়, তারা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়েছে স্বল্প সাক্ষাতেই, প্রথমেই বন্ধুত্বে পরিণত হয় না এই সম্পর্ক। জানাশোনা বাড়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে এই আকর্ষণ বাড়তে থাকে, ভালোবাসার বন্ধনটাও মজবুত হয়, তারপর তারা আবিষ্কার করে যে তারা একে অপরের ভালো বন্ধুও। এই আবিষ্কার একসঙ্গে চলার জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সহজতর করে তোলে।

আসলেই কি রোমান্স কমে যায়?

অনেকেই ভাবে, বন্ধু যদি জীবনসঙ্গী হয় তাহলে রোমান্স একটু কমে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটাও বলা যায় যে একটা সম্পর্কের সফলতা কেবল রোমান্সের ওপরই নির্ভর করে না। একটি সফল সম্পর্কের আরও অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলো সম্পর্ককে সুন্দর ও আনন্দের করে তুলতে সর্বোপরি এ কথাই সবচেয়ে বড় সত্য যে সঙ্গী একই সঙ্গে কখনো বন্ধু, কখনো জীবনসঙ্গী, কখনো ভালোবাসার মানুষ। সবচেয়ে বেশি মনোযোগ, সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়ার আশা সে-ই করতে পারে।

আরবি ভাষার বিশ্বখ্যাত কবি, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী কাহলিল জিবরান ‘যা তোমার সর্বোৎকৃষ্ট’ তাই বন্ধুকে দিতে বলেছেন। আর জীবনসঙ্গী যদি হয় বন্ধু তবে তুমিই তার জন্য বড় উপহার। আর সেও তোমার জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট কেউ।

 

লেখা: তাসনুভা রাইসা 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
দেহ ও মনরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

প্রেম কি কেবলি শরীরের চাহিদা?

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ২২, ২০২০

পড়াশোনা, তারপর চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছু পিছু দৌড়। কেউ নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। শেষে বিয়েটাই পিছিয়ে যায়। কেউ বিয়ে করেন ২০ থেকে ৩০-এর কোঠায় আবার কেউ দ্বিধায় পড়েন। কিন্তু মন, দিন শেষে নির্ভরতা খোঁজে, ভালোবাসা খোঁজে। প্রেমের সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রেম কখনো কখনো গড়ায় লিভ টুগেদার পর্যন্ত। কথায় আছে, একটা মিথ্যা কথা ঢাকতে হাজারটা মিথ্যা বলতে হয়। লিভ টুগেদার এমন একটা বিষয়, দুজন মানুষকে ঠেলে দেয় অনিশ্চয়তা আর ভীত অবস্থার দিকে। তবু তো থেমে থাকছে না এই মোহময় হাতছানি, এই রক্তরাগ এই সর্বনাশ!

সায়েম (ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ার পাশাপাশি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পার্টটাইম চাকরি করছে। ক্লাসফ্রেন্ড রত্নার সঙ্গে তিন বছর প্রেম করার পর তারা রাজধানীতে একটি ছোট্ট বাসায় বসবাস শুরু করে। এরপর সন্তান ধারণ করে রত্না। তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। শেষে অ্যাবরশন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বন্যা (ছদ্মনাম) একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করে। প্রেম হয় স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে। বিয়ে করার কথা ছিল দুজনের। সেই আশ্বাস থেকে বন্যা রনকের সঙ্গে ট্যুরে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরে রনকের আচরণ পুরোপুরি পাল্টে যায়। এরপর বন্যার মনে বাসা বাঁধে অন্য আতঙ্ক। নিজ থেকে চাকরিটা ছেড়ে দেয় বন্যা।

মিলনের নিকটাত্মীয় সামিয়া (ছদ্মনাম)। সামিয়া মফস্বল ছেড়ে রাজধানীতে আসে কোচিং করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। শহরে আসার পর নিয়মিত যোগাযোগ হয় মিলনের সঙ্গে। তারপর প্রেম। মিলন একদিন বলে একটি অ্যাডাল্ট সম্পর্কে যা যা হয়, এই সম্পর্কেও তাই তাই হবে। পরিণতি কত ভয়ংকর হবে বুঝতে পারে সামিয়া। কিন্তু মিলনকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ সে খুঁজে পায় না। ধ্যানে-জ্ঞানে মিলন। মিলনের উপস্থিতি মানে সামিয়ার ভালো লাগা। ছাত্রী হোস্টেলে থাকত সামিয়া। সন্ধ্যার পর হোস্টেল থেকে বের হওয়া নিষেধ। বাইরে থাকলে রাত আটটার পর হোস্টেলে প্রবেশ করার নিষেধ।

কোচিং শেষ করে মিলনের সঙ্গে দেখা করত সামিয়া। ফিরে আসত রাত আটটার আগেই। এক রাতে ফেরা হলো না তার। হোস্টেলে ফোন করে জানিয়ে দিল জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি গেছে। এই কথার সত্যতা প্রমাণ দেওয়ার জন্য টানা তিন দিন হোস্টেলে ফেরেনি সামিয়া। মিলনের সঙ্গে তার বাসায় ছিল। তিন দিন পর হোস্টেলে ফেরে সামিয়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পড়ালেখায় আগ্রহ হারায়। বিষণ্নতা-হতাশা গ্রাস করতে থাকে সামিয়াকে।

বিয়ে করতে আগ্রহী ছিল না মিথিলা (ছদ্মনাম)। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। বিয়েভীতি ছিল। ভয় ছিল চাকরি হারানোরও। যদি চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। যদি পরিবারের দায়িত্ব নিতে না পারে; সে ভয়ও ছিল মিথিলার। বাবা-মাকে রাখতে চেয়েছিল নিজের কাছে। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। একসময় বিয়ে করতে রাজি হয় মিথিলা। কিন্তু বয়সের দোহাই দিয়ে বিয়ে ভেঙে যেতে থাকে। দিন শেষে সে যে ঘরে ফিরে যায়, সে ঘরে একা।

একাকিত্ব গ্রাস করছিল মিথিলাকে। নিজের ভালো থাকা-মন্দ থাকার গল্প যার সঙ্গে শেয়ার করত, একদিন তার সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিথিলার। কিন্তু সে বিবাহিত। ঘর বাঁধতে হলে আরেকজনের ঘর ভাঙতে হবে। নীরব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে মিথিলার সঙ্গে ঘর বাঁধতে রাজিও হয়। কিন্তু নীরবের স্ত্রী একদিন হাজির হয় মিথিলার অফিসে। মিথিলার বসের কাছে বিচার দেয়। ক্ষমা চাইতে হয় মিথিলাকে।

সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, লিভ টুগেদার সম্পর্কে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই সম্পর্কের জের ধরে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এই প্রযুক্তি প্রসারের যুগে আমাদের হাতের মুঠোই ফোন। হাই রেজল্যুশন ক্যামেরাযুক্ত ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। অনেক সময় হাতে থাকা এই ক্যামেরাটি রোমান্টিক মুহূর্তবন্দী করার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গোপনীয়তার সীমা অতিক্রম করে সেই রোমান্টিক মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও যখন ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়, তখন সামাজিকভাবে হেয় হয় ভিকটিম ও তার পরিবার।

একটি প্রশ্ন

আমরা কি শুধু নিজের জন্য নিজে? তা তো নয়। আমাদের সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে মিশে থাকে পরিবারের সামাজিক মর্যাদা। তাই বিয়ের সম্পর্ক যে মানুষটির সঙ্গে নেই, যে মানুষটি সামাজিক ও আইনিভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দায়বদ্ধ নয়; তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়ার আগে যেন প্রিয় মানুষগুলোর মর্যাদার কথা ভুলে না যাই।

কী হচ্ছে

  • বিয়েবহির্ভূত লিভ টুগেদার
  • দূরে ট্যুর
  • ভ্রণ হত্যা
  • হত্যাকাণ্ড
  • সাইবার ক্রাইম
  • নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

কেন হচ্ছে এমন

  • পরিবার থেকে দূরে থাকা
  • অর্থনৈতিক মুক্তি
  • দেরিতে বিয়ে

লেখা: রোদসী ডেস্ক 
ছবি: সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়বিশেষ রচনারোদসীর পছন্দরোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসি বলো বারবার

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ৮, ২০২০

ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞান যুগে যুগে ভালোবাসার অসামান্য ব্যাখ্যা দিয়েছে। যুগে যুগে, কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী। গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ।

ভালোবাসার শব্দচ্ছেদ

উইকিপিডিয়ায় ভালোবাসাকে বলা হয়েছে, ‘মনের গভীর থেকে উত্থিত শক্তিশালী ইতিবাচক আবেগ, মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারও সঙ্গে নিজের সব মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না।’

মারিয়াম ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে ব্যক্তি, বস্তু বা কোনো ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি আত্মসমপর্ণ, তীব্র শরীরী আকর্ষণ এবং গভীর বন্ধন।’  আরবান ডিকশনারিতে সত্যিকার ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে ‘মোহ, একাকিত্ব, হতাশা আবার কখনো বিষণ্নতা।’ কেমব্রিজ ডিকশনারিতে ভালোবাসাকে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তির বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেমময় ভাব ও শরীরী আকর্ষণ অথবা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি শক্তিশালী অনুভূতি।’

ভালোবাসার বিজ্ঞান ও দর্শন

গ্রিক দার্শনিকেরা ভালোবাসাকে চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন, আত্মীয়তার জন্য ভালোবাসা (স্বজনপ্রীতি), বন্ধুত্বের জন্য ভালোবাসা (বন্ধুত্বপূর্ণ), বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা (প্রেমময়) এবং ঈশ্বরের জন্য ভালোবাসা (স্বর্গীয়)। অন্যদিকে যেখানে অপরের কল্যাণ নিহিত, তাই অ্যারিস্টোটলের কাছে ভালোবাসা। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের কাছে ভালোবাসা নিরঙ্কুশ, তিনি ভালোবাসাকে স্বজনকেন্দ্রিকতার ঘোর বিরোধিতা করেছেন। জীববিজ্ঞানী জেরেমি গ্রিফিথের মতে, ভালোবাসা হচ্ছে নিঃশর্ত নিঃস্বার্থতা। অন্যদিকে প্রতিটি ধর্মেই মানুষ, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে, যা স্বর্গীয় ও নিঃস্বার্থ।

প্রাচীন রোমানদের কাছে আবেগ মানেই প্রেম বা যৌনতা। চৈনিক সংস্কৃতিতে কনফুসিয়াসের মতে, ভালোবাসা হচ্ছে ‘কর্ম ও দায়িত্ব’। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বেদ মোতাবেক ভালোবাসার আদি ব্যাখ্যা ‘কাম’, যা শুধুমাত্র যৌনতা নয়, পার্থিব যেকোনো ইচ্ছাকেই বোঝায়। পারসি সংস্কৃতিতে ‘ইশক’ শব্দটি পাওয়া যায়, যা বন্ধু, পরিবার, স্বামী-স্ত্রী এবং স্রষ্টার প্রতি ঐশ্বরিক ভালোবাসাকে বোঝায়।

আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশার ভালোবাসাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন- কামনা, আকর্ষণ ও সংযুক্তি। ফিশারের মতে, প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক এই তিনটি ধরনের যে কোনো একটি দিয়ে শুরু হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। আবার একই সঙ্গে তিনটি ধরনই উপস্থিত থাকতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম মেকানিকসে ‘স্ট্রিং তত্ত্ব’ নামে একটি সূত্র আছে। এই সূত্রটির মাধ্যমে বিশ্বের সবকিছুকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

‘স্ট্রিং’ হলো এমন একটি অদৃশ্য জিনিসের নাম, যা দ্বারা বিশ্বের সবকিছু গঠিত হয়। অর্থাৎ আলো, বাতাস, শব্দ, তরঙ্গ, বস্তু সবকিছুই এই অতি ক্ষুদ্র ‘স্ট্রিং’ নামক একক দ্বারা গঠিত। ভালোবাসাকেও এই স্ট্রিং দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। ‘স্ট্রিং তত্ত্ব’ অনুযায়ী ভালোবাসারও একটি স্বতন্ত্র স্ট্রিং সত্তা রয়েছে।

পোল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানী বাউমান বর্তমান ভালোবাসাকে ‘তরল ভালোবাসা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, শার্টের বুকপকেটে যেমন খুব বেশি দরকারি কোনো কিছু থাকে না এবং তা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই সেটা পূরণ করা যায়, ভালোবাসা তেমনই। প্রথম দেখায় ভালোবাসার একটি বিশেষ আবেদন রয়েছে। এটি অহরহই ঘটতে দেখা যায়।

মানুষ বলে এটি সব সময়ই ঘটে। অনেকের কাছেই এটি হৃদয়ের গভীর থেকে উত্থিত কোনো এক স্বর্গীয় অনুভূতি, এক পলকেই যেখানে আটকে পড়ে প্রেমিক মন। কিন্তু এই আবেগ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার ব্যক্তিত্ব, নীতি কিংবা আদর্শ নয়, শারীরিক বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি তীব্র অনুভূতি থেকে সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞান বলে, প্রথম দেখায় যে আবেগ বা প্রেমভাব অনুভূত হয় তা প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা নয়। এটি গভীর আকর্ষণ যা সম্পর্কের সম্ভাবনা তৈরি করে।

ভালোবাসার মনোবিজ্ঞান

প্রেম হলো ভালোবাসার উত্তেজনাপূর্ণ আবেগ বা অনুভূতি। মনোবিজ্ঞানী চার্লস লিন্ডহোমের মতে, ‘প্রেম হলো একটি প্রবল আকর্ষণ, যা কোনো যৌন আবেদনময় দৃষ্টিকোণ হতে কাউকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপর ব্যক্তির প্রতি একই সঙ্গে শক্তিশালী মানসিক এবং যৌন আকর্ষণ কাজ করে, দাম্পত্যের ক্ষেত্রে যৌন আকর্ষণের তুলনায় ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভূতি অধিক গুরুত্বের অধিকারী হয়।’ দার্শনিক বার্নার্ডশ প্রেমকে দেখেছেন ধ্বংসকারী উপাদান হিসেবে। তার মতে, ‘প্রেম হলো সিগারেটের মতো যার শুরু আগুন দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে।’

মার্কিন মনোবিজ্ঞানী রবার্ট জেফ্রি স্টার্নবার্গ ‘ভালোবাসার ত্রিভুজ তত্ত্বে’ বলেছেন, ভালোবাসা মূলত গভীরতা, যৌনতা ও প্রতিশ্রুতির সমন্বয়। ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বে সব প্রেমের উৎস হচ্ছে যৌনতা। নর-নারীর মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও বিজ্ঞান ভালোবাসার নানা দিক দেখিয়েছে। ভালোবাসার আরেক প্রকাশ ফিলিয়া হলো ‘স্নেহের সম্পর্ক’ বা ‘বন্ধুত্ব’।

অ্যারিস্টোটল ফিলিয়া বলতে নবীন প্রেমিক, আজীবন বন্ধু, পাশাপাশি শহর, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চুক্তি, পিতা-মাতা ও সন্তান, নাবিক ও সৈনিক সহকর্মী, একই ধর্মের অনুসারী, একই সম্প্রদায়ের সদস্য এবং একজন মুচি ও তার খদ্দেরের সম্পর্ককে বুঝিয়েছেন।

ভালোবাসার সবচেয়ে শুদ্ধতম প্রকার হলো প্লেটোনিক বা বায়বীয় ভালোবাসা, যেখানে কামনা-বাসনার কোনো স্থান নেই। প্লেটোর প্লেটোনিজম মতবাদে এই ভালোবাসায় প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রবেশ করবে কিন্তু এখানে শরীর নামক বস্তুটি থাকবে অনুপস্থিত। এ ভালোবাসা কামগন্ধহীন।

কোনো চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রেমকে মনে হয় স্বর্গসুখ। কিন্তু সুখের অপর পিঠই যে জরা, ব্যাধি, মৃত্যু। তাই ভালোবেসে রোগাক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। এই রোগ মূলত ভালোবাসার সঙ্গে জড়িত মানসিক বেদনা। ইবনে সিনা বিষণ্নতাকে এই মানসিক পীড়ার প্রথম লক্ষণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

ভালোবাসা, প্রেম ও যৌনতা

১৯ শতক থেকেই মুক্ত ভালোবাসা বা ফ্রি লাভ শব্দটি একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এটি বিয়ে ও সন্তানের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। ‘উন্মুক্ত যৌনতা’ শব্দটি ‘মুক্ত ভালোবাসার’ ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের তত্ত্বমতে শরীরের উপস্থিতি ছাড়া ভালোবাসার অস্তিত্ব অকল্পনীয় ও সব প্রেমের উৎস শরীরী আকর্ষণ। সফ্লোকিসের অমর সৃষ্টি ইডিপাস রেক্স থেকে ফ্রয়েড সৃষ্টি করেন তার মতবাদ ইডিপাস কমপ্লেক্স। যেখানে মাতার প্রতি পুত্রের আসক্তি ও পিতার প্রতি পুত্রের ঈর্ষাবোধ দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে গ্রিসের পৌরাণিক লোককাহিনি, যেখানে ইলেকট্রা নামে একজন নারী তার এক ভাইয়ের সঙ্গে মিলে নিজের মাকে হত্যা করে পিতাকে বিয়ে করেছিল, এটাকে কেন্দ্র করে ফ্রয়েড দাঁড় করান ইলেকট্রা কমপ্লেক্স। এখানে ফ্রয়েড দেখিয়েছেন কন্যাসন্তানের পিতার প্রতি থাকা একধরনের অবচেতন যৌনকামনা। কালের প্রবাহে এই থিওরি বিতর্কিত এবং এর বিপক্ষে শক্ত যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু সত্যের সন্ধান করতে গিয়ে ইডিপাসের করুণ পরিণতি সমালোচক ভিন্ন পাঠকদেরও হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। মাতাকে বিয়ে করে তার গর্ভেই বংশ উৎপাদন করা ইডিপাসের আর্তনাদ পাঠক অনুভব করেছে তীব্র বেদনার সঙ্গে।

ইডিপাসের বলা, ‘No one should be called happy until he died happily’ উক্তিটি আমাদের জীবনের করুণ রসের সন্ধান দেয়। কারণ, ফ্রয়েড যৌনতাকে আশ্রয় করে তত্ত্ব বানিয়েছিলেন, মস্তিষ্ককেই বাদ দিয়ে, মনকে বুঝতে চেষ্টা করে গেছেন ফ্রয়েড। তথাপি এখনো এই মতবাদের প্রভাব কম নয়, এখনো অনেকের কাছে প্রেম মানেই শরীর বা যৌনতা।

ইতিহাসে ভালোবাসা

ব্রিটিশ সম্রাট অষ্টম হেনরি ভালোবাসার প্রতি আত্মসমর্পণ করে বলেছিলেন, ‘হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে তোমার কাছে মিনতি করছি, তোমার মন আর আমাদের মধ্যকার ভালোবাসার সবটুকু আমাকে জানতে দিও।’ কোনো এক অসীম ক্ষমতার বলে সাহিত্য, শিল্প, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই বিস্তার। মিসরীয় রানি ক্লিওপেট্রা আর তার সেনাপতি অ্যান্টনিওর প্রেমের বন্ধনে মিসর পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। গ্রিক প্রেমিকা পেনেলোপ ১০৮ রাজাকে প্রত্যাখ্যান করে ২০ বছর অপেক্ষা করেন প্রেমিক অডিসিয়াসের জন্য, যেখানে ভালোবাসার অপর নাম অপেক্ষা।

রানি ভিক্টোরিয়া স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। অন্যদিকে মেরি ও তার স্বামী পিয়েরে কুরির প্রেম ছিল মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই। অনিন্দ্যসুন্দরী নর্তকী আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন মোগল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম। প্রেমের জন্য লড়াই করেন পিতার বিরুদ্ধে, পরাজিত হওয়ার পর সেলিমের চোখের সামনে জীবন্ত কবর দেওয়া হয় আনারকলিকে।

সাহিত্যে ভালোবাসা

স্বর্গে গিয়েও ভালোবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতিগাঁথা লিখে গিয়েছেন মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী। লাইলি-মজনু অধরা প্রেমের এক বিয়োগান্ত গাথা। সত্য ঘটনাকে ঘিরে তৈরি কাব্য দান্তের অমর কীর্তি ‘ডিভাইন কমেডি’র দুই কিংবদন্তি চরিত্র পাওলো এবং ফ্রান্সেসকা। স্বামী জিয়ানসিয়োতোর ভাই পাওলোকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ হয়ে পড়লে ফ্রান্সেসকা ও পাওলোকে হত্যা করা হয়।

ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনির প্রেমের সত্য কাহিনি নিয়ে নাটক লেখেন বিখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্্সপিয়ার। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়া এই যুগলের বন্ধন মিসরকে ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল। কিন্তু রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর ভুয়া খবর শুনে বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেন অ্যান্টনিও।

অন্যদিকে অ্যান্টনির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ক্লিওপেট্রাও আত্মহত্যা করেন। রোমিও-জুলিয়েট উইলিয়াম শেক্্সপিয়ার রচিত আরেকটি ট্র্যাজেডি রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান। সারা দুনিয়ায় যুগে যুগে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি। দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে প্রাণ দেওয়া এই প্রেমিক যুগল ভালোবাসার আরেক প্রতিশব্দ। ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনি আর পাণ্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা এটি। মামি ইসলদের প্রেমে পড়া ত্রিস্তান ভগ্ন হৃদয় নিয়েই মারা যান।

অন্যদিকে পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি ও ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও নেপোলিয়নের উত্তরাধিকারের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারায় জেসেফাইনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। সাহিত্যজগতে মার্গারেট মিচেলের বিখ্যাত উপন্যাস ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ একটি অমর সৃষ্টি স্কারলেট ও’হারা ও রেট বাটলার। তিনি এখানে স্কারলেট ও’হারা এবং রেট বাটলারের ধারাবাহিক প্রেমের এবং ঘৃণার সম্পর্কের একটি নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। উগ্র দ্বৈত অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে শুধু কামুকতা সৃষ্টি করেছে, কিন্তু কোনো স্থায়িত্ব সৃষ্টি করেনি।

ভালোবাসার অমর উপাখ্যান

গ্রিক পুরাণমতে, দেবী আফ্রোদিতি ভালোবাসা, সৌন্দর্য এবং যৌন পরমানন্দর দেবী। রোমানদের কাছে আফ্রোদিতি ভেনাস নামে পরিচিত এবং সেখানে তিনি প্রেম ও সুন্দরের দেবী। গ্রিক মিথলজিতে সাইপ্রাসের রাজা পিগম্যালিয়ন নিজের হাতে গড়া নারী মূর্তির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে দেবী ভেনাসের মন্দিরে মূর্তিটিকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করলেন। প্রেমের দেবী ভেনাস মঞ্জুর করলেন তার প্রার্থনা। ভালোবাসার শক্তিতে পাথরে ফিরে এলো প্রাণ। এই নারী মূর্তির নাম দেওয়া হয়েছিল গ্যালাতিয়া।

গ্রিক পুরাণের হেক্টর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মনুষ্যত্বের প্রতি ভালোবাসার কারণে দাঁড়িয়ে ছিলেন দানবের মুখোমুখি। রাজা মেনেলাসের স্ত্রী অপূর্ব সুন্দরী হেলেনের প্রেমে পড়েছিলেন প্যারিস। হেলেন তখন রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। পরকীয়া প্রেমের শাস্তিস্বরূপ ধ্বংস হয়েছিল ট্রয় নগরী। প্রাচীন গ্রিকের অরফিয়াস প্রেমে পড়েন সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিণী উপদেবী ইউরিডাইসের। বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভূমি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর।

পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইউরিডাইস পালাতে গিয়ে সাপের বিষাক্ত ছোবলের শিকার হয়ে মৃত্যুর দেশে চলে যান। দেবতাদের বরে অরফিয়াসকে পাতালপুরি থেকে ইউরিডাইসকে নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। পাতালপুরিতে ইউরিডাইসকে নিয়ে আসার সময় শর্ত অবজ্ঞা করে পেছনে তাকাতেই তার জীবন থেকে চিরতরে বিদায় নেয় প্রিয়তমা ইউরিডাইস।

এ ভালোবাসার শহর

যুগে যুগে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে অনেক স্মৃতির ভাস্কর্য। ভালোবাসার ধূম্রজালে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দাঁড় করিয়েছে ভালোবাসার নানা সংজ্ঞা, সৌন্দর্য। সম্রাট শাহজাহান স্ত্রী মমতাজ মহলকে ভালোবেসে তৈরি করেছেন পৃথিবীর বিস্ময় তাজমহল। দেশ, কালের অতীত বিশ্বনন্দিত এই কীর্তির বিশালত্ব আর অসাধারণ সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় প্রেমিক হৃদয়। সত্যিই ‘এক বিন্দু নয়নের জল, কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল। এ তাজমহল।’

উইলিয়াম শেক্্সপিয়ারের বিখ্যাত রোমান্টিক উপন্যাস রোমিও-জুলিয়েটের স্মৃতিবিজড়িত ইতালির ভেরেনায় জুলিয়েটের বাড়িটি প্রেমিক যুগলের কাছে এক তীর্থস্থান। জুলিয়েটের বাড়িটির মূল ফটকের দেয়ালে পর্যটকেরা প্রেমের নানান সমস্যা, প্রিয় মানুষটিকে না পাওয়ার বেদনার কিংবা সম্পর্কের সুখ-শান্তি কামনা করে লিখে যান চিঠি-চিরকুট। প্যারিসের সিন নদীর ওপর শৈল্পিক ৩৭টি ব্রিজের রেলিংয়ে চোখে পড়ে ‘লাভ প্যাডলক’ নামে বিশেষ তালার। পৃথিবীজুড়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদের নামের অক্ষর খচিত করে এই তালাগুলো ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে চাবি ফেলে দেন সিন নদী।

নদীর কাছে আকুতি থাকে একটাই, এ বাঁধন যেন না ছিঁড়ে। ইউক্রেনের ক্লেভান শহরের কাছে অবস্থিত ‘টানেল অব লাভ’ প্রেমিক যুগলের কাছে আরেক তীর্থস্থান। সবুজ গাছপাতায় ঘেরা একটি ট্রেন টানেলের মাঝ দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেমিক যুগলেরা ও দম্পতিরা এই টানেলে বেড়াতে আসে। চুমু খেয়ে সম্পর্কের সুখ ও দীর্ঘস্থায়িতার প্রার্থনা করে তারা। প্রচলিত আছে, কোনো যুগল যদি এই পথটির ওপর দিয়ে হাত ধরে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যায় এবং তারা যদি কোনো ইচ্ছাপোষণ করে তাহলে তা বাস্তবে পরিণত হয়। মিথ কিংবা সত্যি, ভালোবাসায় বাঁধা পড়া হৃদয় চলে তার নিজ গতিতেই পথের সন্ধান করে, খুঁজে নেয় তার পথ।

ভালোবাসার ন্যায়-অন্যায়

প্রেমকে কখনো মানুষের কাছে শুদ্ধতা-পবিত্রতার প্রতীক আবার কখনো তার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে পাপাচার ও কলঙ্কের দাগ। পৃথিবীর প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। ঈশ্বরের নিষেধ উপেক্ষা করে সঙ্গিনীর প্রতি প্রেমে অন্ধ হয়ে গন্ধম খেয়েছেন আদি পিতা। এই প্রেমকে বলা হয় শাশ্বত প্রেম। হিন্দু পুরাণে শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতার প্রেমে পড়ে রাবণ তাকে অপহরণ করে সীতাকে দেহ-মনে পাওয়ার সব কলাকৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এই প্রেম কুটিল। কারণ, এটি একতরফা বলে। আবার দেবরাজ ইন্দ্র গৌতম মুনি সেজে মুনিপত্নী অহল্যার সঙ্গে সহবাস করেছেন। রাজা জনমেজয় সর্পযজ্ঞের পর যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে শুরু করেন, তখন ইন্দ্র কৌশলে রানি বোপস্টুমার ধর্ম নষ্ট করেছিলেন।

রাধা ছিলেন কৃষ্ণের মামি-মা। কিন্তু তারাও অমর হয়েছেন এই সুধা পান করে। কৃষ্ণ কেন রাধাকে বিয়ে করেননি এটি নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক। কৃষ্ণ বলেন, যেখানে আত্মা এক সেখানে বন্ধনের প্রশ্ন কোথায়? নিজকে কি বিয়ে করা যায়? কৃষ্ণের প্রতি গোপিনীদের ভালোবাসা ও রাধার আত্মত্যাগ আজও এক রহস্য। এ রহস্যের সন্ধান কেবল জানে প্রেমিক হৃদয়, যা না মানে জাত-পাত-ধর্ম কিংবা শুদ্ধ-নিষিদ্ধের বিধিবিধান।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশ সমকামী সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু শত শত বছর আগে পুরুষ হয়ে পুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট। যা ছিল পাপ, নিষিদ্ধ। কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে প্রেম এসেছিল বারবার। নার্গিস খানম, প্রমীলা দেবী, বেগম ফজিলাতুন্নেসা, রানি সোমসহ অনেকের প্রতি আসক্ত হয়েছিলেন তিনি। তারপরও প্রেমের বিরহে হয়েছেন বেদনাবিধুর। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে একা ঝরা ফুল কুড়িয়ে গিয়েছেন।

কবিগুরুর মতে ‘যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে হৃদয়ের সব পচা পুকুরে ডুবিয়ে-চুবিয়ে একাকার না করলে হয়তো ভালোবাসা পূর্ণ হয় না।’ রবিঠাকুরের জীবনে মৃণালিনী ও কাদম্বরী দেবীর দ্বন্দ্ব এক গোপন রহস্য। মৃণালিনী দেবীকে বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন কাদম্বরী দেবী। ‘জীবনস্মৃতি’তে কবি লিখেছিলেন, তার ‘চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’

প্রেম কবিকে হয়তো শান্তি দিতে পারেনি, তারই প্রকাশ পাওয়া যায় ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনাময়’ এ। কবির এই জিজ্ঞাসা মনে করিয়ে দেয় শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মাতাল হয়ে বিভ্রান্তের মতো ‘পারু পারু’ বলে ঘোরার দৃশ্যপট, যা কখনোই প্রেমিক হৃদয়ের প্রত্যাশিত জীবন হতে পারে না।  তারপরও ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা ছিল, ভালোবাসা থাকবে।

পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, ভালোবাসা নিত্যসহিষ্ণু, ভালোবাসা স্নেহ-কোমল, তার মধ্যে নেই কোনো ঈর্ষা। ভালোবাসা কখনো বড়াই করে না, উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না, সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজিও নয়। পরের অপরাধ সে ধরেই না। অধর্মে সে আনন্দ পায় না বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ।

সুতরাং ভালোবাসি বলো বারবার।

লেখা: লিহান লিমা 
ছবি: রোদসী  ও সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনারোমান্সরোমান্স রসায়ন

ভালোবাসা বিষয়টি ইউনিভার্সাল

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ৬, ২০২০

প্রচলিত আছে যে, ফ্রয়েড একবার এক হল থেকে বক্তৃতা দিয়ে বেরোচ্ছেন, তখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এরিক ফ্রম???। একটু হেসে বললেন, আপনি যেখানে শেষ করলেন, আমি সেখান থেকে শুরু করব।  ফ্রয়েডের যৌনতার বিরুদ্ধে এরিক ফ্রম ঘোষণা করলেন, The soul has no sex.

আমি এ পর্যন্ত যত অসাধারণ কথা শুনেছি, তার মধ্যে এটি একটি। আমরা ততদূর পর্যন্ত আমাদের মনকে বিকশিত করতে পারি, যতদূর পর্যন্ত আমরা জানি। আসলেই তো তাই। আত্মার তো কোনো লিঙ্গ নেই। আমরা মানুষকে শুধু যৌনতার মাপকাঠিতে ভালোবাসি না। যদিও ফ্রয়েডের তত্ত্ব বড় বেশি যৌনতানির্ভর। ফ্রয়েড এমনও বলেছেন, যার সঙ্গে মানুষের যৌন সম্পর্ক যত গভীর, তাকেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

তাহলে আমরা একটা পশুপাখি কিংবা গাছের পাতাকে কেন ভালোবাসি! দূর আকাশের একটি নক্ষত্রের জন্য কেন আমাদের মন হাহাকার করে ওঠে? কারণ আমরা জানি, যে পৃথিবীতে আমরা আছি, সেখানে আমরা একদিন থাকব না। মৃত্যুর বিপরীতে আমরা জীবনের একটা অর্থ দাঁড় করানোর জন্য আমরা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ভালোবাসি। ভালোবাসাই আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র অর্থ।

ভালোবাসা বিষয়টি কী? আসলেই কেন মানুষের মনে ভালোবাসা মতো পবিত্র একটি অনুভূতি জাগ্রত হয়? ভালোবাসার কী দরকার? ভালো না বাসলে কী হয় তা নিয়ে প্রচুর আধ্যাত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক, বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সখী, ভালোবাসা কারে কয়/ সে কি কেবলই যাতনাময়? সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুঃখের শ্বাস?

শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আসলেই কি এর কোনো উত্তর আছে? বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য বের করা সম্ভব, কিন্তু, প্রেম-ভালোবাসা যে কী জিনিস, তার রহস্য বের করা অসম্ভব! আসলেই কি তাই। ব্যাপারটা কিছুটা রহস্যময় হলেও মানুষ তার আদ্যোপান্ত-নাড়ি-নক্ষত্র খুঁজে বের করার জন্য পিছিয়ে নেই। আদিমকাল থেকেই মানুষ তার জীবনের একটা অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছে। মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করেছে, আমি কে? কোত্থেকে এলাম? এই পৃথিবীতে আমার কী কাজ? এই সমস্ত প্রকৃতি, বিশ্বচরাচরের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? এর সমস্ত উত্তর মানুষ খুঁজে পেয়েছে একমাত্র ভালোবাসার মধ্যে।

আদিমকাল থেকেই মানুষ তার জীবনের একটা অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছে।

ভালোবাসাই মানুষের একমাত্র আশ্রয়। অসীমের দিকে চোখ মেলে মানুষ খুঁজে পেয়েছে ঈশ্বরকে। ঈশ্বর হচ্ছেন সেই ধারণা, যার নামে সমস্ত মানুষ অনন্ত অসীমের সঙ্গে এক হয়। ঈশ্বর হচ্ছেন ভালোবাসার অপর নাম। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রাচীন ধর্ম-দর্শনের হাত ধরেই মানুষের মনে ভালোবাসার বোধ জাগ্রত হয়েছে। এটা শুধু শারীরিক কোনো ব্যাপার না। এর সঙ্গে যুক্ত আছে আত্মিক বিকাশ, বোধ ও মনন। পরবর্তীকালে বিবর্তনবাদী দার্শনিকেরা এসেও আবিষ্কার করেছেন কেন মানুষের মনে ভালোবাসা জেগে ওঠার প্রয়োজন হলো? এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা রয়েছে। মানুষ একটা কেমিক্যাল পদার্থ বটেই। তবে শুধু হরমোনগত কারণেই যে মানুষ ভালোবাসে, তা না।

ভালোবাসা সত্যিই বাস্তব বোধবুদ্ধিবহির্ভূত এক অনন্ত রহস্যময় অনুভূতির নাম। মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাকে তো আবার ঘৃণাও করে। মানুষ তো নিজেকেও ঘৃণা করে। অন্যকে ঘৃণা করে বলেই নিজেকে ঘৃণা করে, আবার নিজেকে ঘৃণা করে বলেই অন্যকে ঘৃণা করে। সাবজেক্ট ও অবজেক্টের এ এক অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব। প্লেটো তার সিম্পোজিয়ামে বলেছিলেন, মানুষ সুন্দরকে ভালোবাসে। মানুষ যেহেতু অন্য কোনো সুন্দরকে ভালোবাসে, তার মানে হচ্ছে সে নিজে সুন্দর নয়, কিংবা তার মধ্যে সুন্দরের কিছু অপূর্ণতা আছে বলেই সে অন্য কোনো সুন্দর কামনা করে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চায়।

কিন্তু নার্সিসাস তো নিজেকেই ভালোবেসেছিল, সে অধিক সুন্দর বলে। কিন্তু না, নার্সিসাসও আসলে ভালোবেসেছিল অন্যকেই। লেকের জলে নিজের ছায়া দেখে সে ভেবেছিল এ বোধ হয় অন্য কেউ। সেই অন্য কারও সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই সে লেকের পাশে বসে থাকতে থাকতে না খেয়ে শুকিয়ে মরল। গ্রিক মিথের গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যায়, নার্সিসাসের মৃত্যুতে।

কিন্তু পাওলো কোয়েলহো তার ‘অ্যালকেমিস্ট’ উপন্যাসে গল্পটির আরেকটু সংযোজন করেছেন। নার্সিসাসের মৃত্যুর পর একদিন জঙ্গলে আসেন দেবীরা, যারা নার্সিসাসের প্রণয়প্রার্থী ছিলেন। তারা লেকটি খুঁজে পান। দেখেন লেকের পাশে সুন্দর একটি ফুল ফুটে আছে। তারা লেকটিকে বলেন, আহা, তুমি কী ভাগ্যবান! তুমি একা নার্সিসাসের সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করছ! লেকটি বিস্মিত হয়ে বলে, নার্সিসাস কি দেখতে খুব সুন্দর ছিল!

দেবীরা বলেন, তোমার চেয়ে ভালো তা আর কে জানে! তোমার তীরে বসে থেকেই তো সে জীবন শেষ করে দিল। তুমি একাই তার সৌন্দর্য উপভোগ করেছ। লেকটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, নার্সিসাস সুন্দর ছিল কি না, সেটা আমার কখনো খেয়াল করা হয়নি। তার চোখে তো আমি কেবল আমার নিজের সৌন্দর্যই ঝকমক করতে দেখেছি!

আসলেই তো তাই। আমরা অপরকে ভালোবাসি তো কেবল নিজের সৌন্দর্যই অবলোকন করার জন্য। ভালোবাসা তো একটা জাদুর আয়না, যেখানে কেবল নিজেকেই দেখা যায়।

ভালোবাসা সত্যিই বাস্তব বোধবুদ্ধিবহির্ভূত এক অনন্ত রহস্যময় অনুভূতির নাম।

ভালোবাসা প্র্যাকটিসের বিষয়

ভালোবাসা সম্পর্কে সবাই দু-চার কথা বলতে পারে। অন্তত বয়ঃসন্ধিকাল যার অতিক্রম হয়েছে তার এই অভিজ্ঞতা মোটামুটি আছে যে ভালোবাসা কী, ভালোবাসার কী দরকার। সামাজিক, পারিবারিক কারণেই মানুষ তা পেয়ে যায়। তারা ভালোবাসানির্ভর অসংখ্য চলচ্চিত্র দেখছে। তারা প্রতিনিয়ত ভালোবাসা নিয়ে দুনিয়ার গান শুনছে। তারপরও ভালোবাসা যে শিখতে হয়, এটা নিয়ে খুব অল্প লোকই ভাবে।

বেশির ভাগ মানুষই শুধুু ভালোবাসা পেতে চায়, ভালোবাসতে চায় না। এর জন্য নিজেকে যতখানি আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। একজন নারী নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নিজের শরীরের দিকে মনোযোগ দেয়, হাল-জামানার বাজার চলতি ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি করতে থাকে, আর একজন পুরুষ সেই নারীটিকে জয় করার জন্য নিজেকে সেই নারীটির যোগ্য করে তোলার জন্য মনোযোগ দেয় অর্থ রোজগারের দিকে।

তারপর তারা যখন এক হয়, পরস্পরকে ভালোবাসে, সেটা একটা বাজারি ভালোবাসা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে প্রকৃত ভালোবাসা বলে কিছু থাকে না। কারণ, তারা কেউ কাউকে ভালোবাসে না, তারা শুধু ভালোবাসা কিনতে চায়। কিন্তু ভালোবাসা তো পণ্য নয়। ভালোবাসা একটা শিল্প। তাই অন্যান্য শিল্পের মতোই ভালোবাসা শিখতে হয়। নিরন্তর চর্চার মধ্য দিয়েই তা অর্জন করতে হয়।

এরিক ফর্ম???? তার ‘আর্ট অব লাভিং’ বইয়ে বলছেন, সংগীত, নাট্যকলা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র যে কোনো শিল্পেরই দুটো দিক : একটা হচ্ছে তাত্ত্বিক, আরেকটা হচ্ছে প্রায়োগিক। ভালোবাসার শিল্পকলাও সে রকম, প্রথমে জানতে হয় কীভাবে ভালোবাসতে হয়, তারপর সেটা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হয়, আমি কাকে কতটুকু ভালোবাসি সেটা প্রমাণ করতে হয়।

‘ভালোবাসা’ শুধু একটা শব্দমাত্র না, ভালোবাসা হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য। কোনো মা যদি তার সন্তানকে দুধ না খাওয়ায়, কোলে নিয়ে ঘুম না পাড়ায়, আদর-যত্ন না করে তাকে কি আমরা কোনো দিন মায়ের ভালোবাসা বলব? কেউ যদি বলে, ‘আমি ফুল ভালোবাসি’, কিন্তু, ফুলগাছের প্রতি সে কোনো যত্ন নিল না, তাকে আমরা ভালোবাসা বলতে পারি না। ঈশ্বর জোনাহ্কে বলছেন, যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে কিছু পরিশ্রমও আছে, যেখানে পরিশ্রম নেই, যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই।

‘ভালোবাসা’ শুধু একটা শব্দমাত্র না, ভালোবাসা হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য।

দায়িত্ব-কর্তব্যের সঙ্গে ভালোবাসার মধ্যে আরেকটা ব্যাপার যুক্ত আছে, সেটা হচ্ছে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা মানে হচ্ছে যে যে রকম তাকে সেভাবেই গ্রহণ করা, তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া, সেভাবেই ভালোবাসা। যখনই ভালোবাসার মানুষকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা চলে আসে, তখনই শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার আসে অধিকারবোধ থেকে। অধিকারবোধ আসে নিজের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে। অর্থাৎ তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, আমার প্রয়োজনে তোমাকে থাকতে হবে, আমার কথামতো চলতে হবে। তখনই ভালোবাসায় শর্ত আরোপ হয়ে যায়। তার মানে যখনই ভালোবাসায় শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দেয়, তখনই সেটা প্রকৃত নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকে না।

শিশুতোষ ভালোবাসা হচ্ছে এ রকম যে সে মনে করে, আমাকে সবাই ভালোবাসে বলেই আমি সবাইকে ভালোবাসি। কিন্তু প্রকৃত যথার্থ ভালোবাসা হচ্ছে আমি ভালোবাসি বলেই আমাকে সবাই ভালোবাসে। অবুঝরা বলবে, তোমাকে আমার প্রয়োজন বলেই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু যারা বুঝে তারা বলবে, না, তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই তোমাকে আমার প্রয়োজন।

একজন স্বার্থপর মানুষ শুধু নিজেকেই ভালোবাসে, সে শুধু নিজের সম্পর্কেই আগ্রহী, সে শুধু নিজের জন্যই সবকিছু চায়, অপরকে কিছু দেওয়ার মধ্যে তার কাছে কোনো আনন্দ নেই, তার সব আনন্দ নিজে পাওয়ার মধ্যে। প্রকৃত অর্থে, সে আসলে নিজেকেও ভালোবাসে না, আসলে সে নিজেকে ঘৃণা করে। কাউকে ভালোবাসাটা শুধু কোনো অনুভূতির ব্যাপার না, এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, বিচারের ব্যাপার, প্রতিজ্ঞার ব্যাপার। নানা রকম অনুভূতি আসতেও পারে, যেতেও পারে, কিন্তু বিচারবহির্ভূত সিদ্ধান্ত ছাড়া আমি কীভাবে জানব যে এই অনুভূতি সত্যিই চিরদিন থাকবে!

মা যখন তার সন্তানকে ভালোবাসে, তখন এই সিদ্ধান্তটা নেয় যে সন্তানের প্রতি তার কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে। সত্যি বলতে, সন্তান জন্মের আগেই মা এই দায়িত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়, তার কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। যখন দুজন নারী-পুরুষ একত্রিত হয়, বিয়ে করে, সংসার করে, তারাও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

পারিবারিক পছন্দের অনেক বিয়েতে স্বামী-স্ত্রী বিয়ের পর উভয়কে ভালোবাসতে শুরু করে, কারণ, তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু তাদের বিয়ে হয়েছে, বাকি জীবন একসঙ্গে পাশাপাশি থাকতে হবে সেহেতু পরস্পরকে ভালোবাসতে হবে। আমি রাস্তায় কাউকে দেখলাম আর বললাম, তার জন্য পাগল হয়ে গেছি, তাকে না পেলে মরে যাব…এর মধ্যে ভয়ংকর যৌনাভূতি থাকতে পারে, কোনো ভালোবাসা নেই।

কাউকে ভালোবাসাটা শুধু কোনো অনুভূতির ব্যাপার না, এটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার, বিচারের ব্যাপার, প্রতিজ্ঞার ব্যাপার।

ভালোবাসার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত

এই কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা নিউজ ভাইরাল হয়েছে, উঁচু বিল্ডিংয়ের জানালার কার্নিশ থেকে পড়ে যাওয়ারত এক শিশুকে জীবনবাজি রেখে বিল্ডিং বেয়ে উঠে বাঁচিয়েছে এক যুবক। তারপর গত বছর জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন এক ডুবুরি। শেষ পর্যন্ত সব শিশুকেই উদ্ধার করা গেছে। এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে পৃথিবীজুড়েই।

বিপদে পড়লে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবতার সেবায় মানুষের এগিয়ে আসার নজির আমরা দেখি। শীতে-বন্যায়-ভূমিকম্পে যখন একটি অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তখন অসংখ্য মানুষ এগিয়ে আসে মানবতার সেবায়। এসবই অনন্য ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ একদিনও টিকতে পারত না।

মানুষের গল্প তার ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসা ছাড়া তার কোনো গল্প নেই। মানুষের ইতিহাস তার ভালোবাসার ইতিহাস। কত বাধাবিপত্তি পার হয়ে, কত ঝড়-ঝঞ্ঝা, কত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষ আজকের পর্যায়ে এসেছে ভাবলে গা শিউরে ওঠে। ঝড়-তুফান-বৃষ্টি-খরা-ভূমিকম্প-বন্যা-মহামারি কত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন। তাদের অমানুষিক শ্রমের বিনিময়েই আজকে আমরা এই সভ্যতা পেয়েছি। আজ আমরা বেঁচে আছি এ জন্য যে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছিলেন।

পাথর ঠুকে ঠুকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আগুন জ্বেলেছিলেন বলেই আজ আমরা ম্যাচের কাঠির একটি ঠোকায় খুব সহজেই আগুন জ্বেলে ফেলতে পারি। আমাদের জীবনের সমস্ত সুবিধার জন্য আজ আমরা আমাদের পূর্বপূরুষদের কাছে ঋণী। এই ঋণ আমরা কী করে শোধ করব? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে দিয়ে। এটা আমাদের দায়। এবং এটাই হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে মানুষের ধারাবাহিক ভালোবাসা। যদি এই মানবসভ্যতার কোনো অর্থ থাকে তা একমাত্র এই ভালোবাসায়।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে মানুষের ধারাবাহিক ভালোবাসা। যদি এই মানবসভ্যতার কোনো অর্থ থাকে তা একমাত্র এই ভালোবাসায়।

পরিবারের প্রতি ভালোবাসা

পরিবার একটি প্রাচীন সংগঠন। মানুষের মায়া-মমতা-ভালোবাসার উৎস পরিবার থেকেই। পরিবারের বন্ধন আমাদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে। পরিবারই মানুষের প্রথম ও শেষ আশ্রয়। আমরা যখন বুঝতে শিখিনি, হাঁটতে-চলতে শিখিনি, তখনই মা-বাবা, বড় ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন আমাদের হাত ধরেন। তারা আমাদের হাত ধরে হাঁটতে শেখান। জীবনের চলার পথে পথ দেখান। মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে আসলে আর কিছুই তুল্য নয়। জগতে একমাত্র নিখাদ, নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত ভালোবাসা হচ্ছে মায়ের ভালোবাসা। জগতের সমস্ত ভালোবাসাই প্রথমে বিচ্ছিন্নতা থেকে এক হওয়ার চেষ্টা করে, একমাত্র মায়ের ভালোবাসাই প্রথমে এক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

জগতের প্রতিটি মানুষ তার মায়ের বিচ্ছিন্ন সত্তা। এই বিচ্ছিন্ন সত্তার শূন্যতা পূরণ করার জন্যই মানুষের আজন্ম সাধনা : ভালোবাসার মধ্যে আশ্রয় খোঁজা। আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন সত্তা, আমরা সবাই একা, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আমরা একাত্ম হতে চাই। ভালোবাসা হচ্ছে বিশ্বমায়ের একটা বিরাট কোল, সেখানে আমরা সবাই শিশুর মতো ঘুমিয়ে থাকি। বাবার ভালোবাসার মধ্যেও কিছুটা শর্ত থাকে। বাবা বলেন, তোমাকে আমার মতো হতে হবে, আমার সব স্বপ্ন তোমাকে পূরণ করতে হবে। কিন্তু মা তার সন্তানের ওপর কোনো শর্ত আরোপ করেন না। সন্তান যেমন, মা তাকে সেভাবেই গ্রহণ করেন।

পরিবারই প্রথম আমাদের এ শিক্ষাটা দেয় যে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো না। পরিবারে কিছু নিয়মশৃঙ্খলা আছে, কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে, তোমাকে অবশ্যই সেগুলো পালন করতে হবে। তুমি যখন অবুঝ ছিলে, তোমাকে পেলেপুুষে যেমন অন্যরা বড় করেছে, বড় হওয়ার পর তোমাকেও তেমন অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারই আমাদের সমজ-সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখে। আমরা একটি ব্যক্তির প্রতি যতটা না অনুরাগ প্রকাশ করি, তার চেয়ে অনেক বেশি অনুভূতি ধারণ করি পুরো একটা পরিবারের প্রতি। কোনো পরিবারের কোনো তরুণ সদস্য রোগে ভুগে বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমরা পুরো পরিবারটার জন্যই হাহাকার করে উঠি, আহা, পরিবারটার এখন কী হবে! পরিবার মানুষের সমস্ত অবলম্বন।

আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্ন পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আমরা চাই আমাদের নিজের পরিবারটি যেমন সুন্দর থাকুক, অন্যের পরিবারটিও তেমন সুন্দর হোক। পরিবার সুন্দর না হলে কোনো মানুষের জীবনই সুন্দর হতে পারে না। পরিবারের সৌন্দর্যই সভ্যতার কল্যাণে ভূমিকা রাখে। দিন শেষে আমরা যার যার ঘরে ফিরি। ঘর মানেই আপন কিছু মানুষজন। যার ঘর নেই, একমাত্র সেই জানে ঘর হারানোর যন্ত্রণা। বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্ট তাই বলছেন, হোম ইজ দ্য প্লেস হোয়ার/ হোয়েন ইউ হ্যাভ টু গো দেয়ার/ দে হ্যাভ টু টেক ইউ ইন।

বিচ্ছিন্ন সত্তার শূন্যতা পূরণ করার জন্যই মানুষের আজন্ম সাধনা : ভালোবাসার মধ্যে আশ্রয় খোঁজা।

বন্ধুমহলের প্রতি ভালোবাসা

পরিবারের পরেই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রাখে তারা বন্ধুবান্ধব। এমন অনেক কথা আছে, যা পরিবারে বলা যায় না। মানুষের একান্ত কিছু অনুভূতি আছে যা বন্ধু ছাড়া আর কারও কাছে শেয়ার করা যায় না। জীবনে এমন কিছু সমস্যা আসে, যখন পরিবারকেও পাশে পাওয়া যায় না। পরিবার যেমন নিখাদ ভালোবাসার একটি জায়গা, তেমনি কিছু স্বার্থেরও জায়গা। একমাত্র গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্কটি সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে। কিছু বন্ধুবান্ধব আমাদের থাকে, যারা পরিবারের সদস্যদের মতোই আপন।

পরিবার যদি হয় একটি ঘর, বন্ধুবান্ধব হচ্ছে সেই ঘরের একেকটি জানালা। যেসব জানালা দিয়ে আমরা সারা বিশ্বটাকে দেখি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও আমরা সেসব বন্ধুর দেখা পাই। পরিবার নিয়ে আমরা সারাক্ষণ চলতে পারি না। আমার প্রতিটি চলার পথে পরিবার সঙ্গী হয় না। কিন্তু জীবনের প্রতি পদে পদেই একজন বন্ধু দরকার। বন্ধুরা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সব দুঃখের সঙ্গী। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

বন্ধুবান্ধবের প্রতিও আমাদের অলিখিত কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে। সে আমার জন্য যা করেছে, আমিও যদি তার জন্য তা না করি তাহলে সে আমার জন্য থাকবে কেন! অলিখিত বলেই হয়তো বন্ধুত্বের সম্পর্কটি চিরন্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্কেও নানা ভুল-বোঝাবুঝি, কথা-কাটাকাটি হয়। এমন অনেক বন্ধু আছে, যার সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। কিন্তু একদিন রাস্তায় চকিতে দেখা হয়ে গেলে, সুমনের গানের মতো আমাদের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে, হঠাৎ রাস্তায় অফিস অঞ্চলে, হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে, বন্ধু, কী খবর বল?

বন্ধুরা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের সব দুঃখের সঙ্গী। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

লেখা: কামরুল আহসান 
ছবি: রোদসী 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়বিশেষ রচনারোমান্সরোমান্স রসায়ন

প্রেম তুমি কী বলো তো…

করেছে Wazedur Rahman মার্চ ১২, ২০২০

প্রেম যে ঠিক কী বস্তু, এই রহস্য কে বের করতে পেরেছে? বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, এই মহাবিশ্বের রহস্য বের করা সম্ভব, কিন্তু প্রেমের নয়!

রহস্য হলেও প্রেম কালে কালে যুগে যুগে মহামনীষী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, কবি-সাহিত্যিকদের ভাবিয়েছে, এই যে ভয়ংকর অসম্ভব সুন্দর একটা অনুভূতি হয় মনে, কখনো সুখের, কখনো বেদনার, জিনিসটা আসলে কী? কেন হয়! কেন কারও জন্য হৃদয় এমন করে পোড়ে? কেন, কিসের জন্য মন হায় হায় করে? কার জন্য ইচ্ছে করে সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে ছুটে যেতে? কার জন্য ইচ্ছে করে আগুনে ঝাঁপ দিতে?

প্রেমের জন্য। হায় প্রেম! প্রেমের জন্য সমাজ-সংসার মিছে সব, মিছে এই জীবনের কলরব। প্রেমের জন্য রাজ্য গেছে, জীবন গেছে, কেউ কেউ পাগল হয়ে গেছে, সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে গেছে, তবু প্রেমের গান চিরকাল সুমহান।

মীর তকি মীর স্রেফ পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হায় আমার উপদেষ্টা বন্ধু, তুমি কী করে বুঝবে আমার হৃদয়ের ব্যথা? তুমি তো এখনো কারও চুলের বেণিতে আটকা পড়োনি।

মির্জা গালিব বলছেন, মাত্র তো প্রেমের শুরু, কালে কালে আরও কত কিছু হবে। তুমি কি দেখোনি প্রেমে পড়ে মীরের কী দশাটা হলো!  বৃদ্ধ সফোক্লিসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বার্ধক্য আপনাকে কী দিয়েছে? বৃদ্ধ কবি হেসে উত্তর দিলেন, প্রেমের দেবতাদের হাত থেকে মুক্তি।

সত্যিই কি প্রেম এক অসহ্য দেবতা! যার আক্রমণে জীবন নাস্তানাবুদ হয়ে যায়? বার্ধক্য কি সত্যিই প্রেমের জ্বালাযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়? ফ্রয়েড বলেছেন, দেয়। প্রেম তো আসলে যৌনতারই এক প্রতিচ্ছবি। যৌনস্পৃহা চলে গেলে প্রেমও এক সময় মরে যায়। যৌবনের সেই কাতরতা বৃদ্ধকালে অতটা থাকে না। সত্যিই কি তাই? প্রেম কি শুধুই শারীরিক, মানসিক একটা ব্যাপার, আধ্যাত্মিক কোনো ব্যাপার নেই এর সঙ্গে? এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক লোকই পাওয়া যাবে। সুফি কবির তো বলেছেন, সব প্রেমই খোদার রাস্তা। সব প্রেমই খোদার কাছ থেকে আসে, আর খোদার কাছে চলে যায়।

বৈষ্ণব পদাবলি তো মূলত রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। রাধাকৃষ্ণ মানে দেবতা আর মানবেরই প্রেম। কৃষ্ণ তো দেবতা, তাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, তিনি থাকেন দ্বারকায়, আর মাটির মানবী রাধা থাকেন মথুরায়, বৃন্দাবনে বসে কৃষ্ণের ধ্যান করেন। পুরাণে এর মানে যা-ই মানে থাক, এর যে একটা আধ্যাত্মিক রূপ আছে, তা বোঝা যায় হাজার বছর ধরে এ প্রেমলীলা ভারতবাসীর ধর্ম-সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

প্রেম নিয়ে প্রথম ব্যাপক বিস্তৃত আলাপ করেন গ্রিক মহামনীষী প্লেটো। তার সিম্পোজিয়াম মূলত রাতভর প্রণয়-প্রশস্তি। অনিবার্যভাবে এ গল্পের নায়ক প্লেটোর গুরু সক্রেটিস। আগাথনের গৃহে বসেছে রাতভর পানোৎসব। সঙ্গে জমে উঠেছে প্রেমের আলাপ। সক্রেটিসকে প্রেম সম্পর্কে একেকটি প্রশ্ন করা হয়, আর তিনি প্রশ্নটিকে নানাভাবে কাটাছেঁড়া করেন, অন্যদের মতামত নেন, বিশ্লেষণ করেন, তারপর নিজেই একটি উত্তর দেন। সক্রেটিস বলছেন, মানুষের মধ্যে যত প্রকার ক্ষমতা আছে, তার মধ্যে প্রেমের ক্ষমতাই সবচেয়ে শ্রেয়। প্রেমই আমাদের সৃজনীকর্মে চালিত করে। প্রেম আমাদের সুন্দর করে।

এ ক্ষেত্রে সক্রেটিস একটা মজার কথা বলেছেন, প্রেম সব সময়ই সুন্দরকে কামনা করে, তার মানে সে নিজে সুন্দর নয়! প্রেম মানেই হচ্ছে আরও সুন্দর হয়ে ওঠার বাসনা। তাই যা আছে তাকে আমরা খুব বেশি ভালোবাসি না, ভালোবাসি আরও কিছু হয়ে ওঠার কামনাকে। প্রেম তাই অনন্ত কামনা। যে ব্যক্তি আত্মাকে না ভালোবেসে দেহটাকেই ভালোবাসে, এমন ব্যক্তির ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী। কারণ সে যা ভালোবাসে, তার স্থায়িত্ব নেই। কিন্তু মহৎ লোকের প্রেম আজীবন অক্ষুণ্ন থাকে, কারণ সে যাতে আসক্ত হয় সে জিনিসটি নিত্য।

এখানে এসেই প্রেম একটি আধ্যাত্মিক রূপ নেয়, দেহ-মন আর আত্মা যখন আলাদা হয়। আমরা আসলে কী দেখে কারও প্রেমে পড়ি? এ প্রশ্ন অনেককেই শুনতে হয়, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজন এবং পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে, ছেলেটি বা মেয়েটিকে পছন্দ না হলে মুখের ওপরই অনেকে বলে বস, এত সুন্দর মেয়েটা এ রকম একটা ছেলেকে কী দেখে পছন্দ করল? কিংবা, এ রকম একটা ছেলের সঙ্গে এ রকম একটা মেয়ে যায়! ছেলেটা কি পাগল নাকি? এই মেয়ের প্রেমে পড়ার কী আছে!

কী দেখে যে কে কার প্রেমে পড়ে এটা সাধারণ চোখে অবশ্য অনেকে বুঝবে না। লাইলির জন্য মজনুকে পাগল হয়ে যেতে দেখে রাজা খবর দিয়ে নিয়ে এলেন লাইলিকে। লাইলিকে দেখে তিনি বিরক্ত হয়ে মজনুকে বললেন, তুমি কী দেখে এর প্রেমে পড়লে? এ মেয়ে তো আমার বাঁদীদের চেয়েও দেখতে খারাপ। এর জন্য তুমি এমন পাগল হয়ে গেলে! মজনু হেসে বলল, আপনি তো আপনার চোখ দিয়ে লাইলিকে দেখেননি জাঁহাপনা!

প্রেমের ইতিহাসের লাইলি-মজনুর গল্প সর্বজনবিদিত। তাদের প্রেম জগতে অমর হয়ে আছে। প্রেমের জন্য এমন কান্না জগতে বিরল। লাইলি লাইলি বলে কাঁদতে কাঁদতে মজনুর যখন পাগলদশা তখন এক দুষ্ট লোক একটা কুকুর এনে দিয়ে বলল, এটা হচ্ছে লাইলির বাড়ির কুকুর। মজনুর মনে হলো আহা, তার লাইলির বাড়ির কুকুর, লাইলি এ কুকুরটাকে দেখেছে, আদর করেছে, এ কুকুরে লাইলির দৃষ্টি পড়েছে, স্পর্শ পড়েছে, এ তো স্বয়ং লাইলি! মজনু কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগল।

প্রেম মানে শুধু লাইলির বাড়ির কুকুরকে চুমু খাওয়া নয়, প্রেম মানে লাইলির পোষা কুকুর হয়ে যাওয়া। প্রেম মানে ইগোর বিসর্জন দেওয়া। প্রেম এ জন্যই আরাধ্য যে এর মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যাওয়া যায়। মানুষমাত্রই তার অস্তিত্বকে নিয়ে খুব বিপন্ন ও অস্বস্তি বোধ করে। কী করবে সে এ জীবন নিয়ে! এ জগতে তার কী করার আছে? নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে সে কোনো তল পায় না। তখন সে নিজের জীবন অন্যের হাতে তুলে দিতে চায়। অন্যই হয়ে ওঠে তার সারাক্ষণের ভাবনা। সে যে রকম অন্য কাউকে নিয়ে ভাবে, অবচেতন মনে সেও চায় তাকে নিয়ে অন্য কেউ ভাবুক। এই যে ভাবনার রূপান্তর, এর নামই হচ্ছে প্রেম। প্রেম মানে ওই ভাবনাটাই। ভাবনা ছাড়া প্রেম নেই।

রোমিও-জুলিয়েটের গল্প আমরা জানি। সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেমের গল্প। শুধু এ গল্পকে কেন্দ্র করে কত হাজার প্রেমের গল্প তৈরি হয়েছে বিশ্বসাহিত্যে তার কোনো হিসাব আছে? একদিক দিয়ে ধরতে গেলে শরৎচন্দ্রের দেবদাসকেও কিছুটা হলেও শেক্্সপিয়ারের রোমিও-জুলিয়েটের সঙ্গে মেলানো সম্ভব। প্রেমের গল্প মানেই যেন দুটো শ্রেণি, ধনি-গরিব, বর্ণবৈষম্য। প্রেমের গল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশ-জাতি-ধর্ম-ভাষা সংস্কৃতির বিরোধ। প্রেম কোনো বাধা মানে না, ভাষা মানে না। প্রেমের বিচরণ সীমাহীন অনন্ত অসীমের দিকে।

সেই রকম প্রেম অবশ্য আজকাল আর হয় না। সর্বোচ্চ নির্বোধও এখন ফ্রয়েডের যৌন থিওরি জানে। অনেকেই মনে করে প্রেম শুধুমাত্র একটা যৌনতার ব্যাপার, কাউকে ভালো লাগতেই পারে, সেটা ক্ষণিকের মোহ, একসময় সেই মোহ কেটেও যায়। প্রেমের নানা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। এটা শুধু একটা কেমিক্যাল ব্যাপার। ডোপামিন নামক একধরনের তরল পদার্থের নিঃসরণেই নাকি এটা হয়!

ঘটনা হয়তো সত্য, কিন্তু প্রেম শুধু শুধু বায়োলজিক্যাল ব্যাপার নয়, এর সঙ্গে অনেক সাংস্কৃতিক ব্যাপারও আছে। আমাদের দেশে প্রেম এসেছে মূলত মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে। অনেকেই বলবে, এর আগে কি প্রেম ছিল না? ছিল। সেটা অন্য আকারে, অন্যভাবে।

প্রেম বলতে একসময় এ অঞ্চলে বোঝানো হতো ব্যভিচার। ব্যভিচার কারণ প্রেম ছিল অবৈধ, অসামাজিক। অসামাজিক কারণ প্রেম বলতে তখনো বোঝানো হতো শুধু পরকীয়া। পরকীয়ার কারণ তখন মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত খুব অল্প বয়সে, মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার আগেই সে মা হয়ে যেত, আর স্বামীগুলো হয়ে যেত বুড়ো, অনেকের স্বামী মরে যেত অকালে, তখন বিধবা নারীদের বিয়ে হওয়ার রেওয়াজও ছিল না। বিশেষত হিন্দু নারীদের। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এসে প্রথম বিধবা নারীর বিয়ের আইন পাসের উদ্যোগ নেন। তো তখন ওই বিধবা বা অবলা নারীরা পাড়া-প্রতিবেশী বড় ভাই, দাদা বা নিকটাত্মীয় কারও সঙ্গে প্রণয়াস্ত হতেন। এতে সমাজে ছিঃ ছিঃ পড়ে যেত। এই জন্যই প্রেম আমাদের সমাজে এখনো কিছুটা লোকচক্ষু-অন্তরালের ব্যাপার।

মধুসূদন নীল নয়না এক বিদেশি নারীকে বিয়ে করে ধর্মচ্যুত হয়েছিলেন, তাতে তার পিতাও তাকে সমাজচ্যুত করেছিলেন। বঙ্গসমাজে এই হচ্ছে আধুনিক প্রেমের প্রথম নজির। তারপর রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে আধুনিক প্রেমে বিকাশ হয় নতুন আলোকে। রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য গান-কবিতা-গল্প-উপন্যাস মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির প্রেমের প্রেরণা জোগায়। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগ দেন ত্রিশের দশকের কবি-সাহিত্যিকেরা। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি প্রবেশ করে একটা নতুন যুগে, সম্পর্কের নেয় একটা নতুন রূপ। এখনকার শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আর শুধু বাবা-মা, পরিবারের সিদ্ধান্তেই বিয়ে করতে রাজি নয়, তারা নিজেদের পছন্দ নিজেরই করে নিতে চায়।

এভাবে সময় যেমন পাল্টেছে, পাল্টেছে প্রেমের ধরনধারনও। চিঠির যুগ শেষ হয়ে এখন এসেছে ফেসবুক যুগ। তিন দশক আগেও প্রেম বলতে যেখানে ছিল শুধু একটু চাহনি, একটু হাত ধরাধরি, এখন সেটা দিনদুপুরেই গলা জড়াজড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। আজকাল একজীবনে অসংখ্য প্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করেন অনেকে। সতেরোতম প্রেমটাকেও বলে, এটাই নাকি জীবনের আসল প্রেম!

এসব কথা থাক। বরং প্রেমের আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক। যদি আজকাল মানুষ গভীর কথা শুনতে পছন্দ করে না। প্রেম নিয়ে তো আরও না। বলে, ধুর, প্রেম করার করব, এ নিয়ে এত ভাবনাচিন্তার কী আছে! প্রেম করার জন্য কি এখন দর্শন-ইতিহাস-বিজ্ঞানমনস্তত্ত্ব পড়তে হবে নাকি!

আসলে প্রেম চর্চা করার বিষয়। এটা ঠিক আকাশ থেকে পড়ে না, এটাকে নিজের ভেতর থেকে হয়ে উঠতে দিতে হয়। প্রেম শুধু একটা শখের ব্যাপার নয় যে এটা শুধু আমার একটা নির্দিষ্ট সময়ের মুডের ওপর নির্ভর করে বা শুধু বই পড়ে, সিনেমা দেখে এর সম্পর্কে আমরা তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করতে পারি। বাস্তবজীবনের প্রতি মুহূর্তে এটা চর্চা করতে হয়। এবং তার জন্য প্রয়োজন : পরিপূর্ণ নিমামানুবর্তিতা, মনোযোগ, ধৈর্য এবং বিশ্বাস। প্রেমের মধ্যেই নিহিত সর্বোচ্চ নৈতিকতা। পরস্পরের বিশ্বাস ভঙ্গ করলে সেটা আর কোনোভাবেই প্রেম থাকে না। এটা দুজনের একটা অলিখিত চুক্তি, একটা বিশ্বাস, একটা আস্থা। সেখানে বিন্দুপরিমাণ সন্দেহ ঢুকলেই সব শেষ।

ভালোবাসা ও প্রেমের মধ্যে অবশ্য একটা পার্থক্য আছে। ভালো তো আমরা বাসি সবাইকেই, সবকিছুকেই, কিন্তু, প্রেম করি নির্দিষ্ট একটা মানুষের সঙ্গে। সেই মানুষটাই হয় জীবন-মরণ। প্রেমের মধ্যে কিছুটা দখলদারিবোধও থাকে। কিছু ঈর্ষা, লোভ-আকাক্সক্ষা-ঘৃণাও থাকে। প্রেমের উল্টো পিঠেই থাকে প্রবল ঘৃণা। এ জন্য দেখা যায় প্রেমের সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পর একজন আরেকজনের নামও শুনতে পারে না।

কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের জীবনে আসলে প্রেমের কী দরকার? প্রেম ছাড়া কি আমরা বাঁচতে পারি না। এমনও তো দেখা যায় সন্তান-সংসার নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দিব্যি আছে, কিন্তু প্রেম নেই, প্রেমের অভাবও আর অনুভব করে না। তাহলে প্রেম নিয়ে এত মাতামাতির দরকার কী?

উত্তরটা দিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত কথাসাহিত্যিক তলস্তয়, তার আন্না কারেনিনা উপন্যাসে। আন্নার সবই ছিল, স্বামী-পুত্র, সম্মান, সমাজে উচ্চ অবস্থান। ছিল না শুধু প্রেম। ভ্রেুানস্কিকে দেখার পর আন্না হঠাৎ করে অনুভব করে স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্কটা যেন নিতান্তই পানসে, সামাজিক কারণেই ওটা আছে, ওখানে নেই কোনো উত্তেজনা, জীবনের প্রণোদনা, কোথায় যেন সম্পর্কটা তলে তলে মরে গেছে। একমাত্র ভ্রোনস্কিকে দেখলেই সে প্রবলভাবে বেঁচে ওঠে। জীবনে যদি ওই প্রাণটুকুই না থাকল তাহলে আর বেঁচে থাকার মানে কী! বাঁচার আশায় স্বামীর ঘর ছেড়ে ভ্রোনস্কির হাত ধরে পালাল আন্না। কিন্তু বাঁচতে তো পারল না। শেষ পর্যন্ত রেলগাড়ির নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে প্রাণ দিতে হয়।

এই কি প্রেমের পরিণতি! প্রেমের জন্য অনেকেই এমন ঘর ছেড়েছে, প্রাণ দিয়েছে। সম্মুখে মরণ জেনেও আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। প্রেমকে তাই ব্যাখ্যা করা কঠিন। এ ব্যাখ্যা করতে যাওয়াটাই হাস্যকর। তবু মানুষ যুক্তি দিয়ে সব বিচার করতে চায়। প্রেম মানেই যেমন পাগলামি, সেখানে যৌক্তিকতাও যে নেই তাও তো নয়। প্রেমে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

তাই আইয়ুব বাচ্চু গেয়েছেন, প্রেম তুমি কী বলো তো…কখনো আমার, কখনো আবার অপরিচিত কেউ…

 

লেখা: কামরুল আহসান

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনামনের মত ঘররোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

ভালোবাসা আর ভালো বাসা দুটোই বেশ দুর্লভ!

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২০

ভালোবাসা আর ভালো বাসা দুটোই বেশ দুর্লভ! অন্তত আজকের এই দুনিয়ায় কথাটা একশ ভাগ খাঁটি। ভালোবাসা বলতে যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপের ইমোজিতে বন্দী এক সম্পর্কের নাম; ঠিক তেমনি অভিজাত এলাকার খুপরিঘরে কোনোমতে ঠাঁই নেওয়াটাই ভালো বাসার শিরোনাম। হ্যাঁ, আজকের যুগে ভালোবাসা আর ভালো বাসা তাই দুর্লভ একটা ব্যাপারই বটে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অজানা আতঙ্কে প্রাচীন যুগের মানুষ প্রথম গুহার অভ্যন্তরে নিজেদের আশ্রয়স্থল বানিয়েছিল। কিংবা হয়তো অন্ধকারে অশুভর উপদ্রব থেকে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে বাঁচাতে গড়েছিল গুহা বা জঙ্গলের মধ্যে বাসা। এরপর আগুন জ্বালানোর মধ্য দিয়ে সভ্যতার উন্নতি হয় ধীরে ধীরে। গুহা বা জঙ্গল ছেড়ে সুউচ্চ অট্টালিকা কিংবা দৃষ্টিনন্দন আর আভিজাত্যময় বাড়ি বানানোর পেছনে সময়, শ্রম আর অর্থ সবই ব্যয় করতে রাজি হয় মানুষ। এভাবেই কালের প্রেক্ষাপটে বদলে যায় বাসার সংজ্ঞা।

আবার ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও কিন্তু একইভাবে সময়ের আবর্তে বদলে গেছে। নবী ইউসুফ আর জুলেখা, শিরি-ফরহাদ, লাইলী-মজনু কিংবা আধুনিক কালের রোমিও-জুলিয়েটের উপাখ্যান যা-ই বলা হোক না কেন, বদলে গেছে অনেক রীতি আর কৌশল। সবচেয়ে বড় কথা, এখনকার সময়ে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে সামাজিকতা কিংবা পারিপার্শ্বিকতা। কিন্তু ইন্টারনেটের এই যুগে এসে যেখানে ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী নিজের বিস্তার লাভ করার কথা ছিল, সেখানে ইন্টারনেটের সংকোচনের মতোই যেন কুঞ্চিত হয়ে এল ভালোবাসারও পরিধি।

প্রিয়জনের সঙ্গে থাকা অবস্থায়ও এখন চোখ থাকে মোবাইল ফোনে। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়বদ্ধতায়ও মা-বাবার সঙ্গে অনেক সময় কথাবার্তার সুযোগ হয় না। এ ছাড়া বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সবার সঙ্গেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ সেরে নেওয়ায় কমছে বন্ধনের স্থায়িত্ব।

অথচ প্রবাদ আছে, মানুষ নাকি ভালোবাসার কাঙাল।

যদি এখন কেউ জিজ্ঞেস করো আমায় কেন বললাম এ কথা? তাহলে হয়তো আমার বিশাল পরিসরের উত্তর শোনার ধৈর্য তোমাকে রাখতে হবে। কেননা, ভালোবাসা মানেই যে প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এমনটা কিন্তু নয়; বরং পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানসন্ততির, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোও এখানে যুক্ত। আবার একইভাবে বৃহৎ পরিসরের একটা খোলামেলা বাসায়ই যে কেবল ভালো বাসার সংজ্ঞা, এমনটা ভাবাও নেহাত বোকামি।

ভালো বাসার মধ্যে ভালো পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিকতার একটা ব্যাপার থাকে; থাকে নির্ভরশীলতা আর আস্থার ব্যাপারগুলো। সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, সুসম্পর্ক থেকে শুরু করে সুনাগরিকতার ব্যাপারটা যুক্ত থাকে এই ভালো বাসা ব্যাপারটিতে। ভালোবাসা কিংবা ভালো বাসা দুর্লভ কেন, সেটা জানতে হলে বুঝতে হবে ভালোবাসা আর ভালো বাসার জন্য কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ আর আবশ্যক।

ভালো বাসার মধ্যে ভালো পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিকতার একটা ব্যাপার থাকে; থাকে নির্ভরশীলতা আর আস্থার ব্যাপারগুলো।

ভালোবাসা আর ভালো বাসা

ভালোবাসা মানেই যে শুধু মনের মানুষ তা কিন্তু নয়; প্রথমেই এই ধারণা থেকে মুক্তি দিতে হবে নিজের মস্তিষ্ককে। মনের মানুষ বলতে যে আমি প্রিয়জন কিংবা সঙ্গী বুঝিয়েছি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ভালোবাসার সংজ্ঞাটা এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব হলেও এর ব্যাপ্তি সম্পর্কে বিস্তারিত বলাটা একপ্রকারের অসম্ভবই বটে।

কেননা, ভালোবাসা হচ্ছে এমন একটা ব্যাপার, যা ঠিক যতটা মানবিক, ততটাই জাগতিক আর ঐশ্বরিক। ভালোবাসাটা অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতি যেমন হতে পারে, তেমনি প্রকৃতির প্রতিও হতে পারে; অবলা জীবদের প্রতিও হতে পারে। আবার একইভাবে বাড়িঘর নামক এক জড়বস্তুর ওপরও ভালোবাসাটা আটকে যেতে পারে।

তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা; আর ভালোবাসা থেকে মায়া। তবে শুধু ভালোবাসি বললেই যে ভালোবাসা হয়ে যায়, এমনটা কিন্তু নয়! এর জন্য চাই মনের গভীর অনুভূতি। তাহলে এটা স্পষ্ট যে ভালোবাসা কেবল দুটি মনের বন্ধনই নয়, বরং পরিবর্তিত দুটি মনের বাঁধন। যুক্তিতর্কের বিচারে অনেকেই ভালোবাসা নামক এই অবোধ্য শব্দটিকে বুঝতে না পেরে হেসে উড়িয়ে দেয়। তাদের জন্য আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, পাঁচ মিনিটের মতো সময় লাগে বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি আকৃষ্ট হতে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা ৪ মিনিট বা ৪ মিনিট ৩০-৪০ সেকেন্ড মধ্যেই ঘটে থাকে। এই আকৃষ্টতার ক্ষেত্রে মানবমস্তিষ্ক কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। অঙ্গভঙ্গি কিংবা বাহ্যিক রূপ ৫৫ শতাংশ, কণ্ঠস্বর থেকে শুরু করে মার্জিত কথা বলার ভঙ্গিমায় থাকে ৩৮ শতাংশ এবং এরপর মূল বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে শেষ ৭ শতাংশ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় ভালোবাসাবিষয়ক গবেষণার ফল হিসেবে জানিয়েছে, প্রেমের মূলত তিনটি স্তর আছে। প্রতিটি স্তরেই আলাদা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে মস্তিষ্কে এবং স্তরভেদে রাসায়নিক পদার্থ আর হরমোন নিঃসৃত হয়।

প্রথম স্তর ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা

বিপরীত লিঙ্গের কাউকে ভালো লাগলে সেই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষা তৈরি হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টেরন আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন নামক এক হরমোন নিঃসৃত হয়।

দ্বিতীয় স্তর আকর্ষণ

কারও সঙ্গে দীর্ঘদিন মেশার ফলে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে কাউকে ভালোবাসার ফলে তার প্রতি একধরনের আকর্ষণবোধ তৈরি হয়। এই স্তরে তিনটি নিউরোট্রান্সমিটার জড়িত : এড্রিনালিন, ডোপামিন এবং সেরোটানিন। নিউরোট্রান্সমিটার আসলে একধরনের এন্ড্রোজেন রাসায়নিক। এটি এক স্নায়ুকোষ থেকে অন্য স্নায়ুকোষে সংকেত পাঠায়।

তৃতীয় স্তর সংযুক্তি

এই স্তরে এসেও দুটি আলাদা হরমোনের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় : অক্সিটোসিন এবং ভ্যাসোপ্রেসিন। দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকার পর পরস্পরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। ফলে ঘর বাঁধতে রাজি হয় দুজনই।

শুধু ভালোবাসি বললেই যে ভালোবাসা হয়ে যায়, এমনটা কিন্তু নয়! এর জন্য চাই মনের গভীর অনুভূতি।

ওই আলোচনাটিকে শুধু মনের মানুষের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখাটা মোটেও সমীচীন হবে না। কেননা, মা-বাবার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কটা যেমন নাড়ির বা অস্তিত্বগত, ঠিক তেমনি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কটা আবার আত্মিক। এখন অনেক পরিবারই আছে, যাদের সব সদস্যই দিন শেষে রাতে এসে কিছু সময়ের জন্য মিলিত হয় জীবনযাপনের তাগিদে। নাহ্্, এটা শুধু যে দিন আনে দিন খায় মানুষের চিত্র; এমনটা কিন্তু নয়।

বরং নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারেও একই চিত্র বিরাজমান। এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তাদের ভালোবাসার বন্ধন কি ঠুনকো? নাহ্! মোটেই নয়! যদিনা তারা রাতের একটা নির্দিষ্ট প্রহর সবাই একসঙ্গে কাটায়। সারা দিনের ক্লান্তিও যেন হার মানে তাদের সেই ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে।

তবে এই যে পরিবারের সবার একত্র হওয়া, এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার পাশাপাশি ভালো বাসাটাও জরুরি। কেননা, একটু খোলামেলা পরিবেশ, একটু প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, যথেষ্ট আলো-বাতাসের উপস্থিতির সঙ্গে হাঁটাচলা কিংবা নড়াচড়ার জন্যও চাই পর্যাপ্ত জায়গা। শুধু কি তাই? এর পাশাপাশি দরকার ঘরের দেয়ালের রং থেকে শুরু করে বিছানার চাদর, জানালার পর্দা, বারান্দায় টবের গাছ ইত্যাদির কথাও চলে আসে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সারা দিনের ক্লান্তি শেষে সাজানো-গোছানো একটা ঘর মনে বইয়ে দিতে পারে প্রশান্তির বাতাস। আর একটা ঘিঞ্জি ঘর করতে পারে বিরক্তির উদ্রেক, মনের অশান্তি এবং সাংসারিক কলহের সূত্রপাত। আর সাংসারিক কলহ কিন্তু আবার ঘুরেফিরে সেই ভালোবাসার ওপরই আঘাত হানে।
তাহলে এখন কী বলবে? যে লাউ সেই কদু? হ্যাঁ, যেই ভালোবাসা সেই ভালো বাসাও বলা যায়। তাহলে চলো ভালো বাসা সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

তবে এই যে পরিবারের সবার একত্র হওয়া, এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার পাশাপাশি ভালো বাসাটাও জরুরি।

সকালের প্রথম সূর্য কিরণ আর স্নিগ্ধ পরিবেশ করতে পারে একটা শুভদিনের সূচনা। কেননা, ভোরের সেই কোমল আলোয় মন হয়ে ওঠে প্রশান্তিময়। আর একই কথা যদি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে যাই, তাহলে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের গবেষণার সাহায্য নিতে হয়। তাদের মতে, যাদের ঘরে দিনের আলো বেশি সময় ধরে স্থায়িত্ব হয়, তাদের শরীর আর মন দুটোই সুস্থ থাকে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকলে গুমোট পরিবেশে মনমেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ভালো বাসার এই প্রাদুর্ভাবটা ভালোবাসার সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।

চাই সাজানো-গোছানো ছিমছাম বাসা! বাংলায় একটা বাক্য আছে না, ‘সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ’। ঠিক তেমনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ীই ঘরটাকে সাজাও। লোকদেখানো ব্যাপারটাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে দেখা গেল তোমার ঘরের তুলনায় আসবাব বড় হয়ে গেছে কিংবা বেমানান লাগছে; তখন কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। তাই সাধ্যের পাশাপাশি নান্দনিকতার ব্যাপারটাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। দরকারে সময় নিয়ে ঘরের আসবাব বাছাই করো; কেননা ঘরের আসবাবের ওপরই অতিথিদের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করে। আবার, একই সঙ্গে এত নান্দনিক উপস্থাপনায় ঘর সাজিয়ে অগোছালো রেখে দিলে কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হবে না। যে তো সেই হয়ে যাবে ব্যাপারটা। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর গোছানো ভাবটা সদা কাম্য।

আচ্ছা বলো তো, প্রকৃতির রং সবুজ কেন? আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা চালিয়েছেন। আর তাতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে সতেজ সবুজ রং মানুষের অনুভূতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে উদ্যমী করে তোলে। যার জন্য শত স্ট্রেস কিংবা মন খারাপের সময়গুলোতেও সবুজ মাঠ অথবা প্রান্তরের দিকে তাকালে কিংবা সবুজের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর মনে একধরনের প্রশান্তি অনুভূত হয়।

সতেজ সবুজ রং মানুষের অনুভূতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আরেক গবেষণালব্ধ জ্ঞানে এ-ও জানা গেছে, সবুজের মাঝে গেলে ৯০ মিনিটের মধ্যেই মানুষের সব মানসিক চাপ কমে আসে ধীরে ধীরে।
তাহলে এবার চিন্তা করে দেখো তো, যদি সারা দিনের ক্লান্তি আর জ্যামের বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে একপশলা সবুজ দেখতে পাও, তাহলে কি তোমার মন খানিকটা হলেও শান্ত হবে না? অবশ্যই হবে। সে জন্য ঘরে প্রবেশের করিডরগুলো সবুজ রঙে সাজলে নিজের পাশাপাশি অতিথিদের কাছেও ব্যাপারটা ইতিবাচক বলেই গণ্য হবে। কিন্তু অনেকেই ভাড়া বাসায় থাকে। ফলে চাইলেও সবুজ রং করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না অনেক সময়ই।

তবে কি জানো তো, সবুজ মানেই প্রকৃতি। তাই চাইলেই একগাদা প্রকৃতি ঘরের দুয়ারে কিংবা অভ্যন্তরে রেখেও এই প্রক্রিয়া চালু রাখা সম্ভব। এতে করে সিমেন্টের জঞ্জালে থেকেও থাকা যাবে প্রকৃতির আরও কাছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভেসে আসবে ফুলের সুবাস। একই সঙ্গে বাড়বে ধৈর্য। আবার একই সঙ্গে বারান্দা কিংবা ছাদে গড়ে তোলা সম্ভব ছোটখাটো কৃষিবাগান। মনে রেখো, মানুষ যতই যান্ত্রিক হোক না কেন আদতে সে প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতির কাছেই ফিরতে হবে তাকে। তাই প্রকৃতির প্রতি সূক্ষ্ম টানটা মানুষের আদি আর উৎসের প্রবৃত্তি।

তবে ভালো অনুভূতি জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে সবুজের পরেই নীল আর হলুদ রঙের জুড়ি মেলা ভার। যদিও সাহিত্যের বিচারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের এটা জ্ঞাত যে নীল হচ্ছে বেদনার রং। তবে একই সঙ্গে কবি-সাহিত্যিকেরা কিন্তু এটাও বলে যে নীল হচ্ছে প্রশান্তির এক রং। নীল রং মনকে করে প্রশান্ত। যেমনটা সমুদ্রের বিশাল নীলের কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। তাই হালকা নীল বা আকাশি নীল রঙের বিছানার চাদর, পর্দা মনকে রাখতে পারে প্রফুল্ল। আর হ্যাঁ, সাদা হচ্ছে শুভ্রতা আর পবিত্রতার প্রতীক। তাই সাদা রং ব্যবহার করাটাও অনিবার্য। তবে কি, সাদায় দাগ পড়লে বিরক্তির মাত্রা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তাই সাদা রং ব্যবহারে চাই অতিরিক্ত সতর্কতা।

মানুষ যতই যান্ত্রিক হোক না কেন আদতে সে প্রকৃতিরই সন্তান।

আবার অনেকে হলুদ রঙের কথাও ভাবতে পারে তারুণ্যের প্রতীক ভেবে। কিন্তু হলুদ আদতে বাসাবাড়ির সবকিছুর জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন তোয়ালে, ফুলদানি, টব বা শোপিস হলে মানানসই বলা যায়। একই সঙ্গে লালকে ভালোবাসার রং বলা হলেও লাল রং বাড়িঘরের ক্ষেত্রে অনেক কটকটে লাগে। ঠিক যেমনটা কালো এবং অন্যান্য কটকটে রঙের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ওপরের আলোচনায় ব্যাপারগুলো আসলে ভালো বাসার জন্য জরুরি বা আবশ্যকই বলা চলে। পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম আর আলো ঝলমলে বাসা মনকে রাখে প্রফুল্ল আর সতেজ। বাসার আকৃতিটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না, যদি সুন্দর, নান্দনিক, ঝকঝকে, আরামদায়ক, গোছানো, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের উপস্থিতি থাকে। এমন মনোরম পরিবেশের ভালো বাসায় ভালোবাসার অভাব হওয়ার কথা নয়; হোক না সেটা স্বামী-স্ত্রী বা মা-বাবা অথবা ভাই-বোন কিংবা পরিবার-পরিজনের সম্পর্ক।

ভালোবাসায় ভালো বাসার প্রভাব কতটুকু?

ভালোবাসা মানেই একটা সম্পর্কের সূচনা। আর এই সম্পর্কের আদতে কোনো নাম নেই। যদিও প্রচলিত ভাষায় তা ভালোবাসা বলেই খ্যাত তবে এই শব্দটা নিজের শব্দের মাঝেই বিশাল আর পরিপূর্ণ। সম্পর্ক এমন একটা ব্যাপার যে এই নামের সঙ্গে যেটাই জুড়ে দেওয়া হোক না কেন, সেটাকেই সে পূর্ণতা দেবে। তবে যে কোনো ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রেই গভীরতা, আস্থা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান এবং একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

ধরো, তোমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই জব করো। তো সারা দিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি ফিরে যদি দেখো ঘরবাড়ি অগাছালো; তাহলে কি মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব? নাহ্্ একদমই নয়। আবার, ধরো দিন শেষে তোমার একটু একা সময় কাটাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু বাসাটা এতটা কনজাস্টেড যে এক মুহূর্তের জন্যও খানিকটা একা সময় কাটানোর ফুরসত নেই। তাতে করে এই বিরক্তিভাবটা মনকে প্রবোধ দিবে আর রাগের উৎপত্তিটাও এখান থেকেই ঘটবে।

ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রেই গভীরতা, আস্থা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান এবং একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

আবার এই অগোছালো বাসার কারণে সৃষ্ট বিরক্তির ভারটা গিয়ে পড়তে পারে সন্তানসন্ততির ওপর রাগে পরিণত হয়ে। হ্যাঁ, এটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। অথচ খোলামেলা, আলো ঝলমলে এক বাস্তুসংস্থান কিন্তু রাগান্বিত একটা মনকে মুহূর্তেই শীতল করে তুলতে পারে। আর এটা যে মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফল, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তাই ভালোবাসার সম্পর্ক অটুট রাখতে চাই ভালো বাসা।

আবার অনেকে বাসাবাড়িতেই পোষা প্রাণীর অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে চায়। জীবের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এমনটা করে থাকে অনেকে। এর মধ্যে বিড়াল, কুকুর, কবুতর, টিয়া পাখি, ময়না, খরগোশ বা অ্যাকুরিয়ামে হরেক প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে যে বাসায় পোষা প্রাণী থাকলে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থাকে কম। কেননা, তুমি যখনই একটু দুশ্চিন্তায় ডুবে যেতে শুরু করবে তখনই হয়তো তোমার পোষা প্রাণীটা উষ্ণতার খোঁজে তোমার কোলে আশ্রয় নেবে। এতে করে তোমার মস্তিষ্ক আর শরীর ব্যস্ত হয়ে পড়বে পোষা প্রাণীটিকে নিয়ে আর দুশ্চিন্তা নিমেষেই বিদায় নেবে। তবে পোষা প্রাণী যেটাই হোক না কেন, চাই বাড়তি যত্ন আর সতর্কতা। ভ্যাকসিন দেওয়া থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটাও তোমাকে করতেই হবে।

তুমি যখনই একটু দুশ্চিন্তায় ডুবে যেতে শুরু করবে তখনই হয়তো তোমার পোষা প্রাণীটা উষ্ণতার খোঁজে তোমার কোলে আশ্রয় নেবে।

আগের আলোচনা শেষে নিশ্চয়ই তুমি আমার সঙ্গে একমত পোষণ করবে যে ভালোবাসার পরিপূর্ণতায় ভালো বাসাটাও আবশ্যক। যে ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন, সম্পর্কে যেমন একে অপরকে বোঝার কিংবা বোঝানোর ক্ষমতা থাকা লাগে, তেমনি ভালো বাসার ক্ষেত্রেও ঘরের মাপজোখ বুঝে সে অনুযায়ী ঘরকে সাজিয়ে তোলার মানসিকতাও থাকা লাগবে। তাহলে হয়তো তোমাদের মধ্যে কেউ আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবে, ভালোবাসা আর ভালো বাসা এতটা দুর্লভ নয় বরং চাইলেই এটাকে সহজলভ্য করে তোলা সম্ভব।

 

লেখা: ওয়াজেদুর রহমান ওয়াজেদ 
ছবিসূত্র: ওমর ফারুক টিটু , রোদসী এবং সংগ্রহীত  

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
গ্রুমিংরোমান্সরোমান্স রসায়নসুস্থ মন

একতরফা প্রেম?

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০

‘আসান হ্যায় কেয়া, অ্যায়সি মহব্বত করনা, যিসকে বদলে মহব্বত না মিলে…’ নাহ্, এটা কিন্তু শুধু সিনেমার ডায়ালগ নয়, বাস্তবেও তো হয়েছে কতবার! এই তোমার-আমার সঙ্গেও! কিন্তু যদি ‘সে’ তোমার প্রেমে না পড়ে? যদি না মেনে নেয়? তাহলে কিন্তু বস কেস জন্ডিস। কিন্তু কী করবে তুমি এ রকমটা যদি হয়?

‘আসান হ্যায় কেয়া, অ্যায়সি মহব্বত করনা, যিসকে বদলে মহব্বত না মিলে…’ নাহ্, এটা কিন্তু শুধু সিনেমার ডায়ালগ নয়, বাস্তবেও তো হয়েছে কতবার! এই তোমার-আমার সঙ্গেও! এই যে ধরোই না, দিব্যি কলেজে ক্লাস করতে ছেলেটার পাশে বসে, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে খুনসুটি, হাসি, ঠাট্টা, লেগপুলিং- সবই হতো জমিয়ে…।

তারপর হঠাৎ কি জানি কি করে দুম করে প্রেমে পড়ে গেলে তার। আবিষ্কার করে বসলে, ও শুধু যেন আর বন্ধুই নয়, তার চেয়েও বেশি…কিন্তু সেটা বের হতেই তোমার মাথায় হাত! কিংবা অঙ্ক কোচিং ক্লাসের সেই মেয়েটা- রোজই ক্লাসে যেতে মন দিয়ে অঙ্ক করবে বলেই, কিন্তু তোমার আর দোষ কী বলো, আড়চোখে তাকাতে গিয়ে সেই যে চার চক্ষুর মিলন হয়ে যেত, তারপর আর ক্লাসে মনই বসত না।

তা প্রেমে তো পড়াই যায়, তাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথাও নয়, কিন্তু প্রেমে পড়ার পর? ধরো, যার প্রেমে তুমি পড়েছ, তাকে সাহস করে কথাটা বলতে গেলে। এবার সে-ও যদি তোমার প্রেমে হাবুডুবু খায়, তাহলে তো ঠিক আছে, নৌকো চলবে গড়গড় করে। কিন্তু যদি সে তোমার প্রেমে না পড়ে? যদি না মেনে নেয়? তাহলে কিন্তু বস কেস জন্ডিস। কিন্তু কী করবে তুমি এ রকমটা যদি হয়?  পাত্তাই দিল না!

এ রকমটা কিন্তু হতেই পারে। তুমি একজনকে মন দিয়ে বসে আছ, সে-ও যে তোমায় মন দিতে বাধ্য, এমন কিন্তু কোত্থাও লেখা নেই। তাই তোমার বন্ধুটিকে মনের কথা জানাতে গেলে এটা ধরে নিয়েই যাও। কাউকে জোর করে তোমার প্রেমে পড়াতে তো আর বাধ্য করা যায় না। সে ক্ষেত্রে সে যেটা বলবে, সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া কিন্তু কার্যত তোমার কোনো উপায়ই নেই। চেষ্টা করো তার দিক থেকে যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটাকে বোঝার। তোমার সেই বন্ধুটি, যার প্রেমে তুমি মজেছ, সে যদি তোমার খুব ভালো বন্ধু হয়, তাহলে তো ভালোই, সে-ও নিশ্চয়ই এমন আজব পরিস্থিতি থেকে তোমাকে বেরোতে সাহায্য করবে।

কিন্তু…ব্যাপারটা তো প্রেম, জানোই এখানে কোনো যুক্তি-বুদ্ধি খাটে না। তাই বুকে পাথর রেখে পারার চেষ্টাটা কিন্তু তোমাকে করে যেতেই হবে। আর একান্তই যদি না হয়? তাহলে চেষ্টা করো, সেই বন্ধুর সঙ্গে যত কম কথা বলা যায়, ততই তোমার মঙ্গল। সে রকম বুঝলে তার সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিতেও পারে। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও পরে অভ্যাস হয়ে যাবে। কারণ, একতরফা প্রেম আর বন্ধুত্ব- দুটো কিন্তু একসঙ্গে চালানো খুব কঠিন। ম্যানেজ করাও যায় না। কারণ, সে তোমার যত ভালো বন্ধুই হোক না কেন, একবার প্রেমে পড়েছ যার, অন্য কারও সঙ্গে তার সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠতা কিন্তু মেনে নেওয়া চাপের।

দর্দ-এ-দিল

হুঁ-হুঁ, বলা তো সহজ, কিন্তু জানি করাটা বেশ কঠিনই। প্রত্যাখ্যান নিতে সবাই পারে না, এটা তো মানছি। কিন্তু প্রত্যাখ্যানই যদি শেষমেশ তোমাকে মেনে নিতে হয়, তাহলে? মন ভাঙবে, সেটা অনিবার্য। কিন্তু মন ভাঙার পর মুড অফ করে বসে থাকার কিন্তু কোনো মানে হয় না! নিজের যেটা ভালো লাগে সেটাই করো, হতে পারে সেটা কোনো পাগলামি, কিন্তু কে কী ভাববে, সেটা না ভেবে করো।

যেসব বন্ধুর সঙ্গে থাকলে প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে পারো, তাদের সঙ্গে হ্যাংআউটে বেরোও, সিনেমা দেখার প্ল্যান করতে পারো। নাহ্, জোর করে ভাবনা মাথা থেকে তাড়াতে বলছি না, কিন্তু অন্য কাজ করতে করতে দেখবে প্রেম-প্রেম ভাব আর তার দুঃখটা খানিক হলেও কম চাগা দেবে।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রেম মানে কিন্তু আদতে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া। আর প্রেম জিনিসটা কিন্তু মোটেও সোজাসাপ্টা জিনিস নয়। এমনও হতে পারে, তুমি যাকে প্রেম বলে ভাবছ, সেটা আদতে প্রেমই নয়! নিছকই অবসেশন বা অন্য কিছু! তাই কারও প্রতি সে রকম কিছু মনে হলে আগে নিজেকেই নিজের মনে প্রশ্ন করো। মানছি প্রেম যুক্তি মানে না, কিন্তু তা-ও তোমাকে কিছু যুক্তি তো মানতেই হবে।

ব্যাপারটা তুমি তাকে জানানোর পর কী কী হতে পারে, সেটাও ভেবে নাও আগে থেকে। নিজের মনেই প্রশ্নের উত্তর সাজাতে সাজাতে হয়তো দেখলে যেটাকে প্রেম বলে ভাবছ, সেটা আদৌ প্রেম নয়! তাহলে ব্যাপারটা ওখানেই মিটে যাবে।
চাপবে, নাকি…

সবচেয়ে ভালো হয়, প্রেমে পড়ার পর যদি দেখো যার প্রেমে পড়েছ, তাকে তোমার মনের কথাটা বললে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে যাবে, তাহলে সেটা স্রেফ নিজের মধ্যে চেপে যাওয়াই শ্রেয়। কষ্ট হবে খুবই, কিন্তু জানিয়ে ব্যাপারটা খিচুড়ি পাকিয়ে ছড়ানোর থেকে একা একা ছড়ানো কিন্তু বেশি ভালো। তার সঙ্গে কথাবার্তাও চালিয়ে যাও, টুকটাক হিন্টস দিতে থাকো (যতক্ষণ না জিনিসটা বিপদের শেষ সীমা পার করে না যাচ্ছে)। কে বলতে পারে, সেও আস্তে আস্তে তোমার প্রেমে মজে গেল!

আর যদি তা না হয়? তাহলে তো জানোই কিং খানের বিখ্যাত সেই সংলাপ, ‘একতরফা পেয়ার কি তাকত হি কুছ অউর হোতি হ্যায়, অউর রিশতোঁ কি তরহা দো লোগো মে নেহি বটতি। র্সিফ মেরা হক হ্যায় ইসপে…’

 

লেখা: আশরাফুল ইসলাম 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়রোদসীর পছন্দরোমান্সরোমান্স রসায়ন

গুড মর্নিং কিস

করেছে Rodoshee Magazine আগস্ট ১৫, ২০১৮

সকাল শুরু হোক তোমার আলিঙ্গন ছুঁয়ে প্রিয়তমা। থাকুক ভালোবাসা।
ঠিক কবে তোমার পার্টনারকে মর্নিং কিস দিয়েছ, মনে পড়ে? অথচ ছোট্ট এই কাজটি তোমার সারাটা দিন করে দেবে একেবারে ভিন্ন। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে একঘেয়েমি চলে এসেছে? সকালবেলা একটা ছোট্ট কিস এনে দিতে পারে ভালোবাসার অন্য মাত্রা।
প্রিয়জনের কাঁধে মাথা, চওড়া হাসি আর একটি সুপ্রভাত কিস। ছোট একটি কিস তোমাকে যেসব অনুভূতি দিতে পারবে, জানলে অবাক হবে। সঙ্গীর গায়ের ঘ্রাণ, হাসিমুখ, ছোট্ট নাকঘষা, উষ্ণ ঠোঁট, মৃদু নিঃশ্বাস আর কিছু না বলে ভালোবাসি জানিয়ে দেওয়া।
গবেষকেরা একই সুরে কথা বলছেন। মর্নিং কিস প্রাণবন্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করে আমাদের শরীরে। মর্নিং কিস হতে পারে সারা দিনের প্রেরণা। এটি অক্সিটোকিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা অন্যথায় ‘প্রেম হরমোন’ হিসেবে পরিচিত। শুধু কি তাই? মর্নিং কিস সুন্দর করে সম্পর্ককে। জমে থাকা অনুযোগগুলো মুছে দেয়। প্রেমে শরীরী ভাষার প্রয়োজন। শরীরী ভাষা জানিয়ে দেয় মনের গোপন ভাষাকে।
বিজ্ঞান বলছে, নিয়মিতভাবে কিস করে যে দম্পতি, তারা অন্যদের তুলনায় পাঁচ বছর দীর্ঘায়ু হয়। একটি চুমু কিছু সময়ের জন্য একাত্ম করে দেয় দুটি আত্মাকে। মেজাজকে রাখে চনমনে। পাশাপাশি রক্তচাপ কমায়। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বলে, ‘সঙ্গীর হাসিখুশি মুখ রোমাঞ্চিত করে মুহূর্ত’। প্রতিটি সকালের এই অনুভূতি বদলে দেয় জীবনযাত্রা। কিছু অসাধারণ স্বাস্থ্যসুবিধা রয়েছে মর্নিং কিসের। আসো বেনিফিটগুলো জেনে নিই।
 চুম্বন মস্তিষ্কের অভিবাদন সিস্টেমকে সক্রিয় করে।
 আমাদের মেজাজ ভারসাম্যপূর্ণ রাখার জন্য এন্ডোজেনেসেড অপিওিড, ডোপামিন এবং অন্যান্য সহায়ক নিউরোহরমোনগুলোও মুক্তি দেয়।
 স্ট্রেস হরমোন কমানোর মাধ্যমে মস্তিষ্কের চাপ নিরাময় করে।
 চুম্বন অ্যাড্রেনিয়া এবং নরড্রালিনের মুক্তি দেয়, তোমার সেন্সকে করে সতর্ক।
 চুম্বন হলো স্নেহের শারীরিক বিনিময়, যেটা দৈহিক প্রভাবের বিরুদ্ধে ব্যক্তিকে বাফার করে।

সূত্র : গ্ল্যামার/ সিএনএন

রোদসী/ ডি আর।

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook