রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

ভ্রমণ

এই সংখ্যায়ঘুরে বেড়াইদেশসম্ভাবনাসাফল্য

ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে

করেছে Sabiha Zaman সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১

জীবনে আনন্দের মানে একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে ভ্রমণে আনন্দ পান না, এমন মানুষ বিরল। অসুস্থ মানুষও ভ্রমণ করলে সুস্থ হয়ে যায়। এমন ধারণা থেকে ফেসবুকে কিছু আয়োজন রেখেছে ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা। তারা নানাভাবে ভ্রমণপ্রেমীদের আনন্দ দেয়। কথা হলো এমন কয়েকজনের সঙ্গে। লিখেছেন সুরাইয়া নাজনীন

বাউন্ডুলে ট্রাভেল ক্লাব
ফেসবুক গ্রুপ ‘বাউন্ডুলে ট্রাভেল ক্লাব’-এর অ্যাডমিন ইমরান হোসেন বাঁধন। কথা হলো তার সঙ্গে ট্যুরের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। কীভাবে যাত্রা শুরু?
বাউন্ডুলে ট্রাভেল ক্লাবের শুরুটা হয়েছিল ক্রিকেটের মাধ্যমে। আমি প্রতি মাসের অন্তত ১৫-২০ দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলায় দলবেঁধে খেলতে যেতাম। এতে আমার মনে হলো খেলার সঙ্গে ঘোরাঘুরির অভ্যাসও তৈরি হচ্ছে। এলাকার বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে অনেকেই ফোন দিয়ে বাসের ভাড়া, হোটেল খরচ, রুট প্ল্যান ইত্যাদি জানতে চাইত। আমি ফ্রিতেই এসব সার্ভিস দিয়েছি অনেক দিন। একসময় হোটেল ম্যানেজার, বাস কাউন্টারের লোক এদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল। এরা প্রায়ই আমাকে ফ্রিতে বাসের টিকেট দিত। হোটেলে একটা এক্সট্রা ডিসকাউন্ট আমার জন্য থাকত। এভাবেই হঠাৎ করে মনে হলো এই কাজটা সার্ভিস হিসেবে খেলার পাশাপাশি নেওয়া যায়। আর এভাবেই ‘বাউন্ডুলে ট্রাভেল ক্লাব’-এর জন্ম।

ইমরান হোসেন বাঁধন

আপনারা একসঙ্গে কতজন ট্যুরের আয়োজন করেন?
আমাদের প্রথম দিকে লিমিট ছিল। নতুন অবস্থায় আমরা ১০-১২ জনের বেশি নিয়ে যেতাম না। আস্তে আস্তে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাজের চাপ বাড়ে। এখন আমরা প্রতি ১৫ থেকে ২০ জনের জন্য একটা গাইড হিসাব করে ১০০-১৫০ জনের পর্যন্ত ট্যুর পরিচালনা করে থাকি।
কত দিনের জন্য হতে পারে অর্থাৎ সময়সীমার কোনো ব্যাপার আছে কি?
আমাদের নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই। আমরা কাস্টমার প্রায়োরিটির ওপর ভ্রমণ পরিকল্পনা করে থাকি। ডে ট্যুর থেকে শুরু করে বিদেশে আমরা ১৫-১৭ দিনের ট্রিপ নিয়েও কাজ করেছি। প্রথম দিকে গ্রুপ মেম্বার বা ক্লায়েন্ট ছিল বেশির ভাগই বন্ধুবান্ধব। আস্তে আস্তে এখন মেম্বার বা ক্লায়েন্ট যা-ই বলেন পরিচিত লোকের চেয়ে অপরিচিত লোকই বেশি। ভ্রমণের পর বাড়ি ফেরার পথে সবাই আবার বন্ধু বা ফ্যামিলি হয়ে যায়।


করোনা ট্যুরের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে, আপনার কী মনে হয়?
পর্যটনের একদম উঠতি বয়স যখন ছিল, ঠিক তখনই করোনার থাবা আসে। টানা দেড় বছর পর এখন একটু স্বাভাবিকতার মুখ দেখছি। এই ক্ষতি পোষাতে আরও সময় লাগবে।

নারীদের জন্য কি আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়?
আমাদের কাছে নারী-পুরুষ সবাই সম্মানী ব্যক্তি। আমরা চেষ্টা করি আপনি যেহেতু ফ্যামিলি রেখে বাইরে ঘুরতে এসেছেন, অতএব বাইরে এসে যাতে আপনাকে ফ্যামিলিকে মিস করতে না হয়। আমরা সেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি সব সময়।

রূপসী বাংলা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম
ফেসবুক গ্রুপ রূপসী বাংলা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের অ্যাডমিন মোহাম্মদ ফারুক। তিনিও কথা বলেন রোদসীর সঙ্গে

মোহাম্মদ ফারুক

যেভাবে তাদের যাত্রা শুরু
প্রথমে আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনে টুকটাক ঘোরাঘুরি করতাম। একটা সময় পরিচিত মুখের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে লাগল। তখন উপলব্ধি করলাম আমাদের দেশের পর্যটনটা আসলে অনেক সম্ভাবনাময়ী কিন্তু এই সেক্টর সম্পর্কে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো ঘোর অন্ধকারে রয়েছে। মানে তারা জানেই না যে আমাদের দেশে এমন এমন কিছু স্পট আছে, যেগুলো বাইরের কোনো দেশের থেকে কোনো অংশে কম সুন্দর নয়। বরং অনেক দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের থেকে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক বেশি সুন্দর এবং ঘোরার মতো। তখন একটা ইচ্ছা বা টার্গেট সেট করলাম যে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলোকে লোকচক্ষুর সামনে আনব। তাদের দেখাব যে আমাদের দেশও কম সুন্দর নয়। মূলত এই উদ্দেশ্যেই ২০১৬ সালের আমার গ্রুপ রূপসী বাংলার পথচলা শুরু। আমরা আমাদের ইভেন্টে ১০ জন, আবার কোনো ইভেন্টে ৩৬ জন। আবার করপোরেট ইভেন্টগুলোতে আরও বেশি হয়। মাঝেমধ্যে কমও হয়।

ট্রিপের সময়সীমা কেমন থাকে
কিছু কিছু ট্রিপ থাকে ডে টাইপ। দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসি। কিছু থাকে এক রাত বা দুই রাতের। যেহেতু আমাদের শুক্র-শনি সাপ্তাহিক বন্ধের দিন, সেহেতু এক রাত স্টে করার ইভেন্ট বেশি হয়। কারণ, এতে রোববার ঢাকায় ব্যাক করে ক্লায়েন্টরা অফিস করতে পারে। আবার সেন্ট মার্টিন বা বান্দরবান দুই রাতের ইভেন্ট বেশি হয়। সত্যি বলতে স্পট প্লাস ক্লায়েন্টের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে ট্যুরের স্থায়িত্বকাল।

ক্লায়েন্টরা কি আপনাদের পরিচিতই বেশি থাকে?
প্রথমেই বলেছি যে দিন দিন আমাদের কাছে পরিচিত মুখের সংখ্যা বাড়ছে। মানে আমাদের থেকে যে বা যারা সার্ভিস নিয়েছে বা নিচ্ছে, তারাই তাদের পরিচিতদের আমাদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে সাজেস্ট করে। তাই আমাদের মেম্বার পেতে অতটা কষ্ট হয় না। তা ছাড়া মোটামুটি এখন দেশের মানুষ তাদের দেশের পর্যটন সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত। একটু ছুটি বা ব্রেক পেলেই প্রকৃতির কাছে ছুটে যেতে চায়।
আমরা মূলত বাস, ট্রেন, লঞ্চ বা বিমান সব ধরনের ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে থাকি। ক্লায়েন্টের ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করে যাতায়াতব্যবস্থাটা। আমরা চেষ্টা করি ক্লায়েন্টকে খুশি রেখে পূর্ণ সার্ভিস প্রদান করতে। আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত সফলভাবে কোয়ালিটিফুল সার্ভিস প্রোভাইড করতে সক্ষম।
করোনা মহামারি এখন একটু স্বাভাবিক হওয়ার পরে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আমরা আমাদের কার্যক্রম আবারও শুরু করেছি। ইনশা আল্লাহ্ ক্লায়েন্টদের নিরাপত্তার দিক দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ইভেন্ট পরিচালনা করছি। অর্ধেক মেম্বার নিয়ে ইভেন্ট আয়োজন, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ হচ্ছে প্রত্যেক ইভেন্টে। নিজেদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু করা সম্ভব সবটুকু আমরা করছি।

আর নারীদের জন্য আমাদের আলাদা নারী হোস্ট থাকে। তাদের যাওয়া-আসার বাসে সিট থাকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী। খাবার থেকে শুরু করে থাকার জায়গা বা স্পট সুন্দরভাবে ঘোরানোর জন্য দক্ষ ফিমেল গাইড প্রদান করে থাকি। তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি।
আমাদের দেশের নারীরা আগে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারত না কিন্তু এখন দিন পরিবর্তন হয়েছে। আমরা নারীদের আমাদের সঙ্গে ভ্রমণের জন্য সাদরে আমন্ত্রণ জানাই।

ছবি: বাউন্ডুলে ট্রাভেল ক্লাব ও  রূপসী বাংলা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রাভ্রমণ ফাইলসচেতনতা

মানসিক বিকাশে শিশুর ভ্রমণ

করেছে Sabiha Zaman সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

কনিতা, রাবিতা ও বাসিতাহ্ সহোদর তিন বোন। পিতার মতো ওরাও ভ্রমণপিপাসু। মাঝেমধ্যেই শর্ট কিংবা লং ট্যুরে যেতেই হবে। বিশেষ করে রাবিতা কয়েক দিন যেতে না যেতেই ভ্রমণে যাওয়ার বায়না ধরে। আমিও তিন কন্যা বলতে অজ্ঞান। তা ছাড়া এমনিতেই আমি শিশুদের একটু বেশিই ভালোবাসি। তাই ওদের আবদার আমি উপেক্ষা করতে পারি না। বর্তমান নগরজীবনে ঢাকার আকাশ উঁচু উঁচু দালানে ঢেকে গেছে। চারপাশে ইট, কাঠ আর কংক্রিটের আস্তরণ, সবুজের দেখা মেলা ভার। বুকভরা নিঃশ্বাস, শিশুসুলভ দৌড়ঝাঁপ সে তো আজ কল্পনার রাজ্য। দু-চারটি পার্ক, উদ্যান যা-ও আছে, তা-ও আবার বিকৃত মানুষের পদভারে পূর্ণ। যতটুকু সম্বল বারান্দার গ্রিল, সেখানেও আবার বখাটেদের উৎপাত। তাই শিশুদের মানসিক বিকাশের স্বার্থে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে ছুটে যেতে হয় দূরে কিংবা বহুদূরে। যেখানে কোমল প্রকৃতি তার আপন গৌরবে উজ্জ্বল।


এবার ওদের বায়না ক্যাপ্টেন কক্স-এর বিস্ময়কর ভৌগোলিক প্রকৃতি কক্সবাজার। ইতিপূর্বে কনিতা, রাবিতা গিয়েছিল কিন্তু আড়াই বছরের বাসিতাহ্ এই প্রথম। তাই আর সবার চেয়ে ওর উচ্ছ্বাসের পরিমাণটাও একটু বেশি। এবারের ট্যুরে শিশু থাকায় তাই দুই দিনের বদলে চার দিনের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ বাস জার্নি শেষে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে গিয়ে পৌঁছালাম বক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড়ে। বাস থেকে নেমে সোজা হোটেলে। বিচে যাওয়ার জন্য শিশুদের যেন তর সহ্য হচ্ছিল না। দুপুরের লাঞ্চ শেষে একটু বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিশুদের উচ্ছ্বাসের কারণে তা আর হলো না। বের হয়ে গেলাম দরিয়া নগরের পানে। স্বল্প দূরত্বের দরিয়া নগর পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছে জনপ্রতি বিশ টাকার টিকিট কিনে প্রবেশ করলাম। ‘দে-ছুটের’ বন্ধুদের নিয়ে আমি এর আগেও এসেছিলাম। গাইড হলো কিশোরী মেয়ে বিউটি, লাইফ পার্টনার কুলসুম ও আমার মেয়েদের অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্রিফসহ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল। অন্ধকার গুহায় শিশুরা বেশ মজা পেল। তবে এবার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লক্ষ করা গেল, আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা দরিয়া নগর পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্যবর্ধনে আরও যত্নবান হবে। প্রকৃতির দানকে পুঁজি করে শুধু বাণিজ্যিক চিন্তাধারায় মগ্ন হলে সময়-সুযোগমতো প্রকৃতিও বৈরী আচরণ করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, এবার সোজা লাবণী বিচ পয়েন্টে। ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের সঙ্গে ওরা তিন বোনও লাফিয়ে উঠল। আমার তিন কন্যা যেন ঠিক এই মুহূর্তের জন্যই অধীর আগ্রহে ছিল। অনেকটা সময় মজা করে টুকিটাকি শপিং করে বার-বি-কিউ পর্ব শুরু হলো। পরের দিন সকালে সমুদ্রস্নান। কলাতলী বেলাভূমি তুলনামূলক নিরিবিলি, তাপমাত্রা সহ্যের মধ্যে। কনিতার বায়না, আব্বু তুমিও আমাদের সঙ্গে সমুদ্রে নামবে। ওদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে নেমে পড়লাম নোনা জলে। কনিষ্ঠ শিশু বাসিতাহ্র সেকি আনন্দ! বাসিতাহ্র খিলখিল হাসি ভ্রমণের সার্থকতা বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় হৈ-হুল্লোড় করে ফিরলাম হোটেল লবিতে। আশ্চর্য বিষয় যাদের জন্য চার দিনের সময় নিয়ে এলাম, তাদের মধ্যে মাশা আল্লাহ কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই। লাঞ্চের পর কানা রাজার গুহা আর ইনানী ঘুরব। সবাই ঝটপট রেডি, হাস্যোজ্জ্বল ড্রাইভার রতনের মাইক্রোও রেডি। ভদ্র ছেলে, তাই কক্স ভ্রমণে বরাবর ওকেই ডাকি। প্রথমেই পাটুয়ার টেকে কানা রাজার গুহার দিকে ছুটছি।

আমারও প্রথম দেখা হবে। হিমছড়িতে খানিকটা সময় ব্রেক, কুলসুমের বায়না খোসা জড়ানো তেঁতুল আর পাহাড়ি বরই নিতে হবে। তেঁতুলের স্বাদ নিতে নিতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাটুয়ার টেক এসে পৌঁছালাম। যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছি, তার চেয়ে বেশি বিমর্ষ হয়েছি প্রকৃতির দান কানা রাজার গুহা দেখে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গুহার মুখ পাহাড় ধসে আটকে গেছে। আফসোস, প্রকৃতির কৃপাকে সদ্ব্যবহার করতে জানি না। পাটুয়ার টেকের সারিবদ্ধ সুপারিগাছগুলো মনে অন্য রকম দোলা দেয়। গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা ইনানী বিচে। ততক্ষণে জোয়ার শুরু। যতখানি পাথর জেগে আছে, সেখানেই পর্যটকদের ফটোসেশন। ইতিমধ্যে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে রবিতার নীল জলে ডুব, সঙ্গে কনিতা ও বাসিতাহ্র শৈবালের সঙ্গে লুটোপুটি।

ভ্রমণে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়, মানসিক উৎকর্ষের পাশাপাশি শিশুকে দায়িত্বশীল হতে শেখায়। চার দেয়ালের বন্দিত্ব সোনামণির মনকে সংকীর্ণ করে তোলে। অবারিত সবুজ খোলা প্রান্তর শিশুকে প্রাণবন্ত করে তোলে। যত্রতত্র নগরায়ণের সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে আজ সবুজ, নদী, খাল, হাওর, বাঁওড়। যতটুকু টিকে আছে, তা-ও আবার বিষাক্ত। যেমন ঢাকার সৌন্দর্য বুড়িগঙ্গা নদী আজ প্রায় মৃত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যেন কারও কিছু করার নেই। সচেতনতার বড় অভাব। সবাই ছুটছি তো ছুটছি স্বীয় স্বার্থে। চারপাশে তাকানোর সুযোগ নেই। এমনকি কোমলমতি শিশুদের পাঠশালাও আজ বাণিজ্যিক। এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি। যতটুকু সময় আছে, তাতেই অনেক কিছু করা সম্ভব। প্রয়োজন একটু সুস্থ মানসিকতার। আসুন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে সচেতন হই। গড়ে তুলি আগামীর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যময় সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ। বাতাসে সিসামুক্ত বুকভরা নিঃশ্বাস নিয়ে যেন বলতে পারে ‘আমার সোনার বাংলাদেশ আমি তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশকে মায়ের মতো।’ অনেক পিতা-মাতাই আছে, তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুখের আশায় শুধু অর্থের পিছু ছুটছে। অথচ সন্তান একাকিত্বে ভোগে।

অভিভাবকদের যথেষ্ট পরিমাণ সঙ্গ, আদর, সোহাগের অভাবে তাদের মেজাজ-মর্জি বিগড়ে যাচ্ছে। বিষণ্নতা একসময় তাদের অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। ডুবে থাকে ভার্চ্যুয়াল জগতে, হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রিক। ছোট্ট সোনামণিদের প্রতি অবিচার করার ফলে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আয় করা অর্থই অনর্থ হয়ে দাঁড়ায়। আসুন আমরা মাঝেমধ্যেই বাড়ির ছোট্ট সোনামণিদের নিয়ে ছুটে যাই দূরে, বহুদূরে। যেথায় নয়নজুড়ানো প্রকৃতি তাদের আপন করে নেবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত হবে।
সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে যা-ই হোক, সবাই যেন থাকে স্নেহধন্য হয়ে।

ছবি: লেখক ও সংগৃহীত

 

 

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়ভ্রমণ ফাইল

ভ্রমণের উপযোগী পোশাক

করেছে Sabiha Zaman সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১

একঘেয়ে জীবনে বদল আনতে চাই ব্রেক। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একটু ছুটির দেখা মিললে বেরিয়ে আসা যায় দূরে কোথাও। ভ্রমণে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, সবার আগে প্রয়োজন ভ্রমণের প্রস্তুতি। এ জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে হবে। নয়তো তোমার ভ্রমণের আনন্দ পুরোটাই মাটি হয়ে যাবে। ভ্রমণের সময় তুমি কী ধরনের পোশাক পরছ, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কেমন হবে ভ্রমণের পোশাক, তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন শশী-

কাপড়ের ধরন
খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা কোথাও ভ্রমণের সময় আলমারির সবচেয়ে ভালো পোশাকগুলো বাছাই করি। কিন্তু সেই পোশাক ভ্রমণে আমাকে আরাম দেবে কি না, সেটা ভুলে যাই। ফলস্বরূপ অনেক সময় জমকালো আর ভারী পোশাক পরে ঠিকমতো ভ্রমণের আনন্দ নেওয়া হয় না। তাই ভ্রমণের পোশাক নির্বাচনের সময় মনে রাখবে, আরামের সঙ্গে আপস নয়। এমন পোশাক নির্বাচন করো, যা পরে আরামসে সহজ-সাবলীল থাকা যায়, সহজে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়।
ঘোরাঘুরির সময় একটু হইহুল্লোড়, ছোটাছুটি হবে না, তা কি হয়। তাই খেয়াল রাখো তোমার পোশাকটি যাতে শরীর থেকে ঘাম শোষণ করে নিতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় সঙ্গে সুতি, লিনেন ফেব্রিকসকে প্রাধান্য দিলে। ঘোরাঘুরির সময়ে একদম আঁটসাঁট পোশাক পরিহার না করাই ভালো। কারণ, এসব কাপড়ে হাঁটাচলায় কষ্ট হয়। তাই ভালো হয় ঢিলেঢালা হালকা পোশাক। তবে অতিরিক্ত ঢিলেঢালা নয়, মানানসই পোশাক পরতে হবে, যা তোমাকে দেবে আরাম আর স্বস্তি।

মানানসই পোশাক
আরামকে প্রাধান্য দিয়ে কোন ধরনের পোশাক নিতে হবে, আশা করছি সে ধারণা পেয়ে গেছো। এবার আসছি কোন জাতীয় পোশাক সঙ্গী করতে পারো সেটা নিয়ে। আগেই বলেছি আরামদায়ক পোশাক নিতে হবে। তুমি চাইলে যেকোনো পোশাক পরেই ঘুরতে পারো। তবে এমন কোনো পোশাক নির্বাচন করা উচিত নয়, যেটায় তোমার হাঁটাচলায় সমস্যা তৈরি করে। টি-শার্ট, ফতুয়া, কামিজ, কুর্তি, টপস, শার্ট পরতে পারো ভ্রমণের সময়ে। এসব পোশাক পরলে স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করতে পারবে। এসব পোশাক পরে পাহাড়ি বা দুর্গম এলাকায় বেড়াতে গেলেও কোনো সমস্যা হবে না চলাফেরায়।
বাঙালির ঐতিহ্য শাড়ি। দেশের বাইরে গেলে শাড়ি নিতে ভুলবে না। শাড়িতে ছবি তুললে অনেক ভালো ছবি আসে। এ জন্য শাড়ি নিতে পারো। তবে এটা ঠিক, শাড়ি পরে বেশিক্ষণ চলাফেরা করা অসুবিধা হয়। আর অনেকেই শাড়ি পরতে পারে না। তাই ভ্রমণের পোশাকের তালিকা থেকে শাড়ি বাদ দাও, যদি অভ্যাস না থাকে।

আবহাওয়া
ঘোরাঘুরি করার আগে বিবেচনা করে নাও যেখানে যাচ্ছ সেখানকার আবহাওয়া কেমন। আবহাওয়াভেদে নিয়ে নাও পোশাক। দেশের ভেতরেও কিন্তু আবহাওয়ার তারতম্য বিবেচনা করতে হবে। এই যেমন ঢাকায় সাধারণত যে তাপমাত্রা, সিলেটে কিন্তু তার চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রা। দেশের বাইরে যাওয়ার আগে নেট ঘেঁটে জেনে নাও যেখানে যাবে সেখাকার আবহাওয়া কেমন। ঠান্ডা থাকলে সঙ্গে রাখো গরম জামাকাপড়। ঠান্ডার তীব্রতা বেশি থাকলে একটু ভারী পোশাক নেওয়াই ভালো। আর গরমের সময় কোথাও গেলে ফ্যাশনেবল সুতি পোশাক রাখতে পারো।

পোশাকের রং
পোশাকের ধরনের পাশাপাশি রং নিয়েও ভাবতে হবে যখন বাক্স-পেটরা গোছাও। ভারী, রংচঙা, জবরজং কাপড় না নেওয়াই ভালো। বাদামি, কালো ও খাকি রঙের প্যান্ট, পালাজো, স্কার্ট সঙ্গে রাখতে ভুলো না। কারণ, এ রংগুলো অন্য প্রায় সব রঙের টি-শার্ট বা শার্টের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ওড়না বা স্কার্ফ পরলে সাদা, কালো, মেরুন অথবা নীল বেছে নিতে পারো। কারণ এ রঙের স্কার্ফগুলো খুব ভালোভাবে মানিয়ে যায় অন্য রঙের সঙ্গে। বেড়াতে গেলে ছবি তোলা হবেই। তাই কমলা, লাল, নীল, মেরুন ও সবুজ এ রঙের পোশাক সঙ্গে রাখতে পারো। এগুলোয় ছবি ভালো আসে।

ছবি : সংগৃহীত
তথ্য সুত্র: ওপরাহ ডেইলি

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইবিদেশভ্রমণ ফাইল

নীল সাগরের উপাখ্যান

করেছে Wazedur Rahman এপ্রিল ১২, ২০২০

মালদ্বীপ! আহা, নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্ফটিক স্বচ্ছ বিস্তীর্ণ নীলাভ জলরাশি আর তার বুকে জেগে থাকা শ্বেতশুভ্র বালুকা আর সমুদ্রের টানে হেলে পড়া নারিকেল বীথিকাপূর্ণ একেকটি ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ। এই নীল-সাদার অপূর্ব কাব্যে কার না হারায় মন?

দেশ পরিচিতি

শ্রীলঙ্কা থেকে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ১ হাজার ১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। যার মধ্যে ২০০টি বাসযোগ্য। পানি অত্যন্ত পরিষ্কার। নীল বর্ণের পানি। দেশটির আয়তন ২৯৮ বর্গকিলোমিটার। সর্বমোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ১৭ হাজার। মুদ্রার নাম হলো মালদিভিয়ান রুপিয়া। খুব ভালো মানের পরিবহনব্যবস্থা ও প্রশস্ত রাস্তা। যানজট একদম নেই। হাঁটার জন্য আলাদা ফুটপাত রয়েছে। মানুষের গায়ের রং বাংলাদেশের মানুষের মতোই।

অনেকাংশেই ছেলেদের চুল বড় বড় ও দাড়ি বড় বড়। সবাই ইংরেজি বুঝতে পারে ও বলতে পারে। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে হলে ফেরি ছাড়া উপায় নেই। আয়তন কম হওয়ায় তুমি একটি মাত্র হোটেলে থেকেই পুরো মালদ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবে। তুমি ডিসকভারি চ্যানেলে সামুদ্রিক যে সৌন্দর্য দেখেছ তা নিজ চোখে দেখতে চাইলে মালদ্বীপে তোমাকে স্বাগত।

ইতিহাস

মালদ্বীপের ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুবই প্রাচীন। সংস্কৃত শব্দ দ্বীপমালা শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কারও কারও মতে, মালদ্বীপ হচ্ছে দ্বীপরাজ্য। কারও কারও ভাষায় এটি মহলদ্বীপ। মহল অর্থ প্রাসাদ। দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপে মুসলিম শাসন। ১১৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে বতুতা মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন।

১১৫৩-১৯৫৩ অবধি (৮০০ বছর) ৯২ জন সুলতান নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসন করেন দ্বীপটি। বিভিন্ন সময়ে পর্তুগিজ ও ব্রিটিশরা পর্যটক হিসেবে, কখনো কখনো বাণিজ্য কুঠি স্থাপন, কখনো ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য এখানে আসে। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৮ সালে সালতানাতে মালদ্বীপ থেকে রিপাবলিক মালদ্বীপে পরিণত হয়।

যা যা লাগবে

  • পাসপোর্ট (ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)
  • বিমান টিকিট (অবশ্যই রিটার্ন টিকিটসহ)
  • হোটেল বুকিং (যে কয় দিন থাকবে সব দিনের জন্য, এক দিনের জন্য করলে জবাবদিহি করতে হয়)
  • পর্যাপ্ত ডলার (১০০০ ডলার বা তার বেশি)
  • চাকরি বা ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি)
  • ভিসা লাগে না। তুমি সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট আসার পর অন অ্যারাইভাল ভিসা পাবে।

এগুলোর একটিও যদি বাদ যায় তাহলে তোমাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরতও যেতে হতে পারে। তাই খুব যত্নসহকারে সব জিনিস সঙ্গে রাখবে। কাগজের ফটোকপি সঙ্গে রাখবে প্রমাণ হিসেবে।

খরচ কেমন

এটি বলা আসলেই মুশকিল। কারণ, একেকজন একেক টাইপের খরচ করে। তবে মনে রাখবে যে, একজন হলে খরচ বেশি পড়ে। দুজন হলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। যেমন হোটেল রুম ভাড়া দুজনের জন্যও, একজনের জন্যও সমান। তবে জেনে রাখা ভালো যে মালদ্বীপ তুমি এক রাতে লাখ টাকা সহজেই খরচ করতে পারবে। কারণ, অনেক অনেক আইল্যান্ড আর লাক্সারি সব রিসোর্ট, যা প্রতিদিন ২০০০ ডলার বা তারও বেশি আছে।

তোমাকে হিসাব করে করে বের করতে হবে কোনটা সাশ্রয়ী। তুমি যদি রিসোর্টে রাতে থাকতে চাও, তাহলে অহেতুক খরচ অনেক বেশি। একটা হোটেলে থাকবে ও রিসোর্টে শুধু ডে পাস প্যাকেজ নিয়ে যাবে, তাহলে খরচও কম হবে আর দেখতে পারবে সবকিছু।

বিমান টিকিট

জনপ্রতি শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিটার্ন ফ্লাইটসহ ৪০ হাজার টাকার মতো। কমবেশি হতে পারে।

হোটেল বুকিং

দুজনের থাকার জন্য প্রতি রাতের খরচ ৬৬ ডলার অন এভারেজ। ব্রেকফাস্টসহ। তো সব মিলিয়ে তুমি যদি জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা (বিমান ভাড়া) ও প্রতিদিনের জন্য ১০০ ডলার বাজেট রাখো তাহলে বেশ ভালোমতোই থাকতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে মনে রাখবে, যত বেশি রাইড ও রিসোর্ট নেবে ততই খরচ বাড়বে যার কোনো শেষ নেই। সেটা তোমার ওপর নির্ভর করে।

 

আরও একটা কথা বলে নেওয়া ভালো যে, এখানে এসে আসল সৌন্দর্য হলো রিসোর্ট ভ্রমণে, যা অনেক ব্যয়বহুল। যদি সর্বমোট জনপ্রতি দেড় লাখ ও কাপলদের জন্য দুই লাখ টাকার নিচে তোমার বাজেট থাকে, তাহলে অন্য দেশের কথা ভাবো। মালদ্বীপ একটি বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট হওয়ার খরচ অনেক বেশি। তবে অনেক সুন্দর একটি দেশ।

ডলার

নগদ ডলার তুমি এজেন্সি থেকে এনডোর্স করিয়ে নিতে পারবে বাংলাদেশে এয়ারপোর্ট থেকে। অথবা ক্রেডিট কার্ডও এনডোর্স করিয়ে নিতে পারবে ব্যাংক থেকে। তুমি চাইলে বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রাভেল কার্ড নিতে পারো। তবে মনে রাখবে, ক্যাশ এর প্রাধান্য বেশি দেয় ইমিগ্রেশনে। তাই ক্রেডিট কার্ড নিলেও অন্তত ৫০০ ডলার ক্যাশ নিতে ভুলবে না।

 

খাবারদাবার

তুমি যদি সি ফুড ও মাছ পছন্দ করো তাহলে তো তোমার জন্য স্বর্গতুল্য হবে। নানান রকম মাছ পাওয়া যায়। তা ছাড়া খাবারদাবারও বেশ ভালো। বাংলাদেশিদের কোনো সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দামও হাতের নাগালের মধ্যে। তবে বাংলাদেশ থেকে একটু বেশি।

হানিমুন হিসেবে মালদ্বীপ

এককথায় দারুণ। তুমি যদি হানিমুনে আসো তাহলে ইমিগ্রেশনে বেশ ছাড় পাবে। কারণ, সদ্য বিবাহিতরা তো আর এখানে থাকতে আসবে না। তারা ঘুরে আবার চলে যাবে। তাই এটি একটা প্লাস পয়েন্ট। আর তুমি যদি ভিসা ছাড়া কোনো দেশে ঘুরে ইউরোপের ফিল পেতে চাও, তাহলে মালদ্বীপ অত্যন্ত উপযুক্ত একটি জায়গা।

 

দেশটি ছোট হলেও উন্নত ব্যবস্থা তোমাকে মুগ্ধ করবে। তুমি যদি হুলেমাল নামক স্থানের বিচ প্যালেস নামক হোটেলে থাকো তাহলে বাংলাদেশি আতিথেয়তায় থাকতে পারবে। বউ নিয়ে সন্ধ্যাবেলা ফ্রিতে সাগরপারে আড্ডা দিতে পারবে। আহা কি যে অনুভূতি!

লেখা: রোদসী ডেস্ক

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইবিদেশভ্রমণ ফাইল

বাঙালির বিলেত পাড়ি

করেছে Wazedur Rahman মার্চ ৩১, ২০২০

পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। ভূপ্রকৃতিও কম আকর্ষণীয় নয়।

গত বছর গরমের ছুটির এক ভোরে পৌঁছে গেলাম বিমানবন্দরে। গন্তব্য, লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর। দুর্গাপুর থেকে লন্ডন। দীর্ঘ যাত্রাপথ। দুবাই হয়ে যখন গ্যাটউইকে নামলাম, তখন বৃষ্টি পড়ছে। ঠান্ডা আছে ভালোই। হোটেল নয়, থাকব লন্ডনে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে। লন্ডনে যখন পৌঁছলাম, ঘড়িতে সময় রাত সাড়ে দশটা। বিমানবন্দর থেকে যাওয়ার পথে ক্রয়ডন, থর্নটন, ব্রিক্সটন, নরবারির মতো ছোট ছোট জনপদ নজরে পড়ল। চোখ টানল গৃহশৈলী।

সকালে দরজা খুলে বাইরে দাঁড়ালাম। আমাদের তিন সপ্তাহের বাসস্থান ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ রোডে। এই ব্রিজ নিয়ে ওয়ার্ডসওয়ার্থের বিখ্যাত সনেট রয়েছে। সামনে বড় রাস্তা। সব সময় ব্যস্ত। সবকিছুই চলছে দ্রুতগতিতে। কিন্তু নিয়ম মেনে। টেমসের দক্ষিণ তীর ধরে ঘুরতে বেরোলাম। আমাদের ফ্ল্যাটের পেছনেই লোয়ার মার্শ। একটা সময় জলা জায়গা ছিল। দুদিকে ফুটপাতে নানা দেশের খাবারের দোকান। বাঁ দিকে ঘুরেই ওয়াটারলু স্টেশন। হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছলাম টেমসের দক্ষিণ তীরে রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে। এই হলের বাইরে নেলসন ম্যান্ডেলার আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। ভেতরে ছয়টি তলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত।

বাইরের ব্যালকনি থেকে নজর পড়ে টেমসের অসাধারণ সৌন্দর্য। নদীর বুকে রকমারি জলযান চলছে। প্রচুর পর্যটকের ভিড়। রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে আছে কবিতার বইয়ের লাইব্রেরি। রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থের পুরোনো সংস্করণ রয়েছে এখানে। ওখান থেকে বেরিয়ে আবার টেমসের দক্ষিণ পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিখ্যাত লন্ডন আইতে পৌঁছে গেলাম। এখান থেকে লন্ডন শহরকে অপূর্ব দেখায়। পাশেই সবুজ, সুন্দর ঘাসের বাগান, জুবিলি গার্ডেন্স। অনেকে বসে গল্প করছেন। আশপাশে পায়রা আর হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগোলাম সামনের দিকে। বাঁ দিকে লন্ডন ডাঞ্জন।

একটু এগিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ থেকে হেঁটে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। পাশে বিগবেন। এটা টেমসের উত্তর পাড়। পার্লামেন্টের পাশ দিয়ে এগোতেই বিস্তৃত সবুজ ঘাসের মাঝে রঁদার এক অপূর্ব ভাস্কর্য। পার্লামেন্টের ভেতরে ক্রমওয়েল, রিচার্ড দ্য গ্রেটের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। ডান দিকে, একটু এগোলেই বিগবেন, বাঁদিকে পার্লামেন্ট স্কোয়ার। সেখানে চার্চিল, গান্ধীজি, ম্যান্ডেলার পূর্ণাবয়ব মূর্তি রয়েছে। সেখান থেকে গেলাম বাকিংহাম প্যালেসের দিকে। চারদিকে রাজকীয় আভিজাত্যের প্রতীক। গোটা জায়গাটাই

ওয়েস্টমিনস্টার। চারদিকে পুরোনো সংস্কৃতির ছাপ। এরপর এগোলাম ট্রাফালগার স্কোয়ারের দিকে। সেখানেই আছে স্টেট আর্ট গ্যালারি। স্কোয়ারের ফোয়ারার পানিতে অনেকে গোসল করছেন। এসব দেখে ফিরে এলাম। বিকেলে আবার ভ্রমণ শুরু। গেলাম লন্ডনের উপকণ্ঠে ব্ল্যাকহিথে। নরম্যানদের বিজয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই অঞ্চলের ইতিহাস। আর্থার কোনান ডয়েল এখানে লিখেছিলেন ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য টুইস্টেড লিপ’। সামনেই এক মধ্যযুগীয় চার্চের ধ্বংসাবশেষ। সেখানে আছে এডমন্ড হ্যারির সমাধি।

পরদিন সকালে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে গিয়ে রোববারের প্রার্থনা দেখলাম। পৃথিবীর পুরোনো ঐতিহ্যময় চার্চগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে। পার্লামেন্ট স্কোয়ারের ঠিক পাশে অবস্থিত এই চার্চ গথিক স্থাপত্যের এক অনুপম নিদর্শন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের যাবতীয় কাজকর্ম এই প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চেই হয়। প্রার্থনাকক্ষ থেকে করিডর ধরে বাইরে বেরোনোর পথে দুদিকে চোখে পড়ল সন্তদের মূর্তি। স্যার আইজ্যাক নিউটনের সমাধি আছে এই চার্চেই।

পরের দিন আমাদের গন্তব্য ছিল শার্লক হোমস মিউজিয়াম ২২১বি, বেকার স্ট্রিটে। কোনান ডয়েলের বর্ণনা অনুযায়ী, হোমসের বাড়ি এটাই। প্রবেশমূল্য, মাথাপিছু ১৫ পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকা মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ষোলোশো টাকা। মিউজিয়ামের এক অংশে হোমসসংক্রান্ত অনেক স্মারক বিক্রি হচ্ছে। হোমসের শয়নকক্ষ সাজানো বিভিন্ন ছবি, টেবিল, বই, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, চেম্বার পট ইত্যাদি দিয়ে।

পাশেই বসার ঘর। সেখানে টেবিলের ওপরে চোখে পড়ল হোমসের একটা টুপি, আতশকাচ, পাইপ। দোতলা ও তিনতলার সমস্তটা জুড়ে রয়েছে হোমসের গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের ছবি, প্লাস্টার অব প্যারিসের মূর্তি, মার্বেল মূর্তি। ‘দ্য হাউন্ড অব দ্য বাস্কারভিলস’-এর হাউন্ডের মতো একটি ‘স্টাফড’ করা কুকুরের মুখও রয়েছে দেখলাম।

বেকার স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে একটু এগিয়ে লর্ডস। বিখ্যাত ক্রিকেট মাঠ। ডান দিকে যে রিজেন্ট পার্ক তা রাজপরিবারের সম্পত্তি। প্রায় সাড়ে ৩০০ একরজুড়ে এই পার্ক। অনেক পাখি, হাঁস, হরিণের নির্ভয় বিচরণভূমি। বিচ, ওক, ফারে চারদিক ভরে আছে। সন্ধ্যাবেলা বেরোলাম ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে। ঘড়ি বলছে এখন সন্ধ্যা। তবে বাইরে তীব্র রোদ। দূরত্ব প্রায় দুই শ মাইল। ম্যানচেস্টার পৌঁছাতে রাত ১১টা বেজে গেল। পরের দিন গেলাম চেশায়ারের ডান হাম ম্যাসিতে। মধ্যযুগীয় এক পার্ক, এখন জাতীয় সম্পত্তি। ওক, বিচ, রডোডেনড্রন, বার্চ, চেস্টনাট, নানা রকম পাইন ভরা এই পার্কে হরিণ ঘুরে বেড়ায়।

বেশ কয়েকটি জলাশয়ও রয়েছে। সেখানে নানা ধরনের হাঁস, সারস, হরিণের বাস। রয়েছে বিশাল বড় প্রাসাদ। পাশেই রয়েছে আস্তাবল। এর পরে আমাদের গন্তব্য ডার্বিশায়ারের অন্তর্গত পিক ডিস্ট্রিক্টের ব্লু-জন-ক্যাভার্ন। এখানে ব্লুু-জন নামের পাথর পাওয়া যায়। এগুলো গয়নায় ব্যবহৃত হয়। পিক ডিস্ট্রিক্ট পুরোটাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। অনুচ্চ পাহাড়। আর তার ঢাল। সবুজ ঘাস। ওক আর চেস্টনাটে ঢাকা। চরে বেড়াচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট অগুনতি ভেড়া আর পনি।

রয়েছে স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইটের অপূর্ব কারুকার্যে ভরা এক গুহা। এর পরের কয়েক দিন কাটল ম্যানচেস্টারের আশপাশেই। গেলাম হ্যালিফ্যাক্স রোড ধরে হলিংওয়ার্থ লেক দেখতে। কাছেই বিখ্যাত মুর। যার বর্ণনা রয়েছে এমিলি ব্রন্টির ‘উদারিং হাইটস’-এ। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির মিউজিয়াম যথেষ্ট সমৃদ্ধ। সেখানে মিসরের মমিও আছে।

এবার লন্ডনে ফেরা। একশ মাইল গিয়ে ডান দিকে ঘুরে পৌঁছালাম অ্যাভন নদীর ধারে স্ট্র্যাটফোর্ডে শেক্্সপিয়ারের বাড়িতে। প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১৭ পাউন্ড। ঢুকলাম, তীর্থযাত্রার মতো। অসাধারণ সব স্মৃতিচিহ্ন। শোবার ঘর, থাকার ঘর। সেখানে সাজানো আছে ৪০০ বছরের বেশি আগে যেসব খাবার পাওয়া যেত তার কিছু নিদর্শন। আছে আগুন জ্বেলে রাখার ব্যবস্থা। এক জায়গায় রয়েছে দর্শনার্থীদের স্বাক্ষর। যার মধ্যে আছেন ওয়াল্টার স্কট ও চার্লস ডিকেন্স। শেক্্সপিয়ার যে টেবিলে বসে লিখতেন তার পাশেই আছে এক দেরাজ। সেখানে বিখ্যাত নাটকগুলোর পাণ্ডুলিপি রাখতেন তিনি। বাইরের বাগানে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি।

পরের দিন আমাদের গন্তব্যস্থল ছিল গ্রেট রাসেল স্ট্রিটে ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ভারতীয় গ্যালারিটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে বলে বন্ধ। কিন্তু মিসরের গ্যালারিতে কয়েক হাজার বছর আগের ফারাওদের পাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন মমি রয়েছে। সাইপ্রাস, গ্রিস, রোমান গ্যালারিতে অসাধারণ সব নিদর্শনে ভরা। এক মোহাবিষ্ট পরিবেশ। বাড়ির সামনেই ল্যামবেথ নর্থে ইম্পিরিয়াল ওয়্যার মিউজিয়াম। সেখানে আছে নাৎসিদের হাতে ইহুদি নিধনের বর্ণনা, হলোকস্ট। একদিন গেলাম ব্রাইটনের সমুদ্রের ধারে। প্রখর রোদ। অথচ কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। মেরিন ড্রাইভ অনেকটাই ওপরে।

লন্ডন শহরের সঙ্গে পরিচিত হতে হলে হেঁটে ঘোরা ভালো। টেমসের দক্ষিণ তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে শেক্্সপিয়ারের গ্লোব থিয়েটার। একটু এগোতেই প্রায় হাজার বছরের পুরোনো সাউথওয়ার্ক ক্যাথিড্রাল। কাছেই লন্ডন ব্রিজ, একটু এগিয়ে লন্ডন মনুমেন্ট। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল দেখে ল্যামবেথ ব্রিজ, ওয়াটারলু ব্রিজ, ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ ধরে নিজের পছন্দসই জায়গাগুলো দেখে নেওয়া যায়। অক্সফোর্ড স্ট্রিটে কিছু কেনাকাটাও করতে পারো।

লিখেছেন:  আনোয়ার ইকবাল
ছবি: সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইবিদেশভ্রমণ ফাইল

স্কটল্যান্ড ভ্রমণ

করেছে Wazedur Rahman মার্চ ৩০, ২০২০

ধু ধু প্রান্তরজুড়ে চোখজুড়ানো সবুজ। নীল আকাশ মাথা নোয়ায় এখানে হ্রদের বুকে।

এ দেশে তো দেখি মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা বেশি! মাইলের পর মাইল সবুজ ঘাসের গালিচায় ঢাকা স্কটিশ হাইল্যান্ডের মধ্যে যেতে গিয়ে এই কথাটাই প্রথম মনে হলো। লন্ডনে অনেকেই বেড়াতে যায়। লন্ডন সফরের সঙ্গে যদি আরও কয়েকটা দিন যোগ করে নিতে পারো, তাহলে অবশ্যই স্কটল্যান্ড ঘুরে আসো। দেখবে, স্কুলের বইয়ে পড়া উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার লাইন চোখের সামনে ফুটে উঠছে। টিলার ওপরে একাকী মহিলা, আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। চারপাশে কেউ নেই। কোথাও আবার পথের ধারে মাথা নাড়ছে উজ্জ্বল সোনালি ড্যাফোডিল ফুল। বহুদিন ধরেই স্কটল্যান্ডের একটা বড় অংশ ‘স্বাধীনতা’র দাবি তুলছে।

এই নিয়ে ২০১৪ সালে এখানে একটি গণভোট হয়। ৪৪.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে যায় স্বাধীনতাকামীরা। ফলে এখনো ব্রিটেনেরই অংশ স্কটল্যান্ড। তাই যেতে হলে লাগবে ব্রিটিশ ভিসা। ঢাকা থেকে লন্ডন হয়ে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় পৌঁছাতে পারো। লন্ডন থেকে অনেক কম খরচেই ফ্লাইট আছে। পৌঁছে যাওয়া যায় এক-দেড় ঘণ্টায়। হাতে সময় থাকলে অবশ্য ট্রেনে যাওয়াই ভালো। সারা দিন ধরে লন্ডনের কিংস ক্রস স্টেশন থেকে অসংখ্য ট্রেন রয়েছে।

রাজধানী এডিনবরা দিয়ে সফর শুরু করতে পারো। তোমার কোনো আত্মীয়-বন্ধু যদি এ শহরে না থাকে, তাহলে একটা ট্যুর বাসে উঠে পড়ো। ওয়েভারলি ব্রিজের সামনে থেকে ছাড়ে এই ধরনের বাসগুলো। এক দিনের টিকিটে যতবার, যতক্ষণ খুশি ঘোরা যায়। এসব বাস তোমাকে শহরের প্রতিটি দ্রষ্টব্যস্থানে নিয়ে যাবে। যেখানে খুশি নেমে যাও, সেই জায়গাটা ঘুরে নিয়ে আবার পরের বাসে চড়ো। সাধারণত বিশ মিনিট অন্তর পাওয়া যায় এই বাস। খেয়াল রাখবে, টিকিটটা কোন সংস্থার। শুধু সেই কোম্পানির বাসেই কিন্তু চড়তে পারবে।

এডিনবরা শহরটির দুটি ভাগ। মধ্যযুগে বানানো ‘ওল্ড টাউন’ বা পুরোনো শহর এবং ১৮-১৯ শতকে গড়ে ওঠা ‘নিউ টাউন’ বা নতুন শহর। অবশ্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংগ্রহশালা, এডিনবরা ক্যাসল এবং হলিরুড প্যালেস। এডিনবরা ক্যাসল ও হলিরুড প্রাসাদের মাঝখানের রাস্তাটি ঠিক এক মাইল লম্বা এবং ‘রয়্যাল মাইল’ নামে প্রসিদ্ধ। পাথরের ইট বাঁধানো রাস্তার দুপাশে অসংখ্য দোকান আর ক্যাফে। শপিংপ্রীতি না থাকলেও নরম উলের একটা মাফলার অন্তত কিনে নিও। যেমন আরামদায়ক, তেমনই ফ্যাশনেবল।

শিল্পরসিক হলে চলে যাও ন্যাশনাল গ্যালারিজে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, রাফায়েল, মোনে, দেগা— বহু খ্যাতনামা শিল্পীর কীর্তি সযত্নে রক্ষিত এখানে। এডিনবরা থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘুরতে যেতে পারো ৫০ মাইল দূরের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্রিটেনের তৃতীয় প্রাচীনতম (অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের পরে) বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই রাজকুমার উইলিয়ামের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কেট মিডলটনের।

এডিনবরায় অবশ্যই দেখবে স্কট মনুমেন্ট। ওয়েভারলি রেলস্টেশনের খুব কাছেই প্রিন্সেস স্ট্রিট গার্ডেনস। সেখানেই রয়েছে স্কটিশ ঔপন্যাসিক, ‘আইভ্যান হো’র লেখক ওয়াল্টার স্কটের স্মৃতিতে বানানো এই বিশাল সৌধটি। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মৃতিসৌধ (প্রথমটি রয়েছে কিউবার হাভানায়, লাতিন আমেরিকার কবি হোসে মার্তির স্মৃতিতে)।

১৮৩২ সালে স্কট মারা যাওয়ার পরেই এই সৌধ বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০০ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু সৌধটির ২৮৮টি সিঁড়ি। বিভিন্ন উচ্চতায় রয়েছে নানা ‘ভিউইং প্ল্যাটফর্ম’, যেখান থেকে পুরো এডিনবরা শহরটিকে দেখা যায়। রাজা-রানি থেকে শুরু করে কবি-লেখক এবং স্কটের লেখা বিভিন্ন উপন্যাসের নানা চরিত্রের মোট ৯৬টি ছোট-বড় মূর্তি রয়েছে সৌধটিতে। তাদের মধ্যে রয়েছে স্কটের নিজের কুকুরসহ তিনটি পশুর মূর্তিও!

স্কটল্যান্ডে এসে ‘লখ’ দেখতেই হবে। স্কটিশ ভাষায় ‘লখ’ মানে হ্রদ। পরিসংখ্যান বলে, ৩১ হাজার ৪৬০টি হ্রদ রয়েছে স্কটল্যান্ডে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘লখ নেস’ এবং ‘লখ লমন্ড’। স্কটিশ উপকথায় ‘লখ নেস মনস্টার’-এর বাস এই নেস হ্রদে। সেই দৈত্যের খোঁজে এখনো লাখ লাখ পর্যটক ভিড় জমান হ্রদের ধারে। লখ নেসের মতোই বিখ্যাত এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় লখ লমন্ড। টিনটিন কমিকসে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের প্রিয় হুইস্কির কোম্পানি এই হ্রদের নামেই। ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় হ্রদ এটি। ৭১ বর্গকিলোমিটারজুড়ে হ্রদের চারপাশে ঢেউ খেলানো টিলা, যার কেতাবি নাম স্কটিশ হাইল্যান্ডস।

হাতে আর একটু সময় থাকলে যেতে পারো আর এক মনোরম জায়গা ‘আইল অব স্কাই’ বা স্কাই দ্বীপে। দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে পিকচার পোস্টকার্ডের মতো সুন্দর পর্টি গ্রামে। স্ট্যাফিন সৈকতে ডাইনোসরের পায়ের ছাপও থাকবে তোমার নট টু বি মিসডের তালিকায়। স্কাইয়ের মতো আরেকটি জনপ্রিয় দ্বীপ হ্যারিস। বিদেশি পর্যটক তো বটেই, স্কটল্যান্ডের মানুষও এই দ্বীপে এসে ক্যারাভানে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যায়। হাতে লম্বা ছুটি থাকলে গ্লাসগো এবং ইনভারনেস শহর দুটিও ঘুরে আসবে।

শহরের বাইরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানোর জন্য আদর্শ জায়গা স্কটল্যান্ড। এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে, সবাইকে ফ্রিডম টু রোম বা অবাধে ঘুরে বেড়ানোর ছাড়পত্র দেওয়া উচিত। তুমি তাই সহজেই ঢুকে পড়তে পারো কারও ফার্মে, কেউ তোমাকে কিচ্ছুটি জিজ্ঞেস করবে না! অবশ্য বাধা দেওয়ার জন্য কোনো লোকজনও দেখবে না। বরং সেখানে চরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য ভেড়া! কিছু গ্রামে মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা নাকি কয়েক গুণ বেশি।

সবশেষে বলি, স্কটল্যান্ডে শীতকালে ভীষণ ঠান্ডা পড়ে। বছরের অন্যান্য সময়ে স্কটল্যান্ডের আবহাওয়া মূলত তিন ধরনের- ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, মাঝারি বৃষ্টি আর কপাল ভালো থাকলে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। বেশির ভাগ সময়েই বৃষ্টির দোসর ঝোড়ো হাওয়া। ফলে ছাতা নয়, ব্যাগে অবশ্যই রাখবে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট।

রসিকদের জন্য

সরকারি নিয়ম মেনে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানানো স্কটিশ হুইস্কি বা স্কচের কদর পৃথিবীজুড়ে। পর্যটক হিসেবে এখানকার বিভিন্ন ডিস্টিলারিতে যাওয়াও যায়। কী বিশাল কর্মকাণ্ড, তা কিঞ্চিত মালুম হয় এসব ডিস্টিলারিতে গেলে। রসিকদের জন্য রয়েছে চেখে দেখার সুযোগও!

লেখা: সীমন্তিনী গুপ্ত 
ছবি: সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইবিদেশভ্রমণ ফাইল

সাউন্ড অব মিউজিকের শহরে!!

করেছে Wazedur Rahman মার্চ ২২, ২০২০

মোৎসার্টের শহর সালজবার্গে হাত ধরাধরি করে থাকে প্রকৃতি ও মিউজিক। সামনে একদম সোজা খাড়াই একটা রাস্তা। মাথা তুলে তাকালে ওপারে কিছু ঠাহর হয় না। দুরুদুরু বুকে বউয়ের দিকে তাকালাম। তার অবস্থাও তথৈবচ! উপরন্তু, গলায় ভারী ক্যামেরা। সাহায্যের ভাবনা ভুলে পা বাড়ালাম…দুর্গের প্রবেশপথে পৌঁছে এভারেস্ট জয়ের চেয়ে কম আনন্দ পাইনি, এটুকু বলতে পারি।

সালজবার্গের সবচেয়ে উঁচুতে এই হোয়েনসালজবার্গ ফোর্ট্রেস। ইউরোপের অন্যতম বড় ক্যাসলগুলোর মধ্যে একটি। এখান থেকে আল্পসের চূড়াও নাগালে মনে হয়। গোটা শহর দেখা যায়। শহরের আধুনিক আর প্রাচীন দুই মেজাজের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সালজ নদী। দুর্গের দুর্গমতা উপভোগ করে নিচে নামার সময়ে দেখা গেল, লিফটে করে সটান উপরে চলে আসার আলাদা রাস্তা রয়েছে। প্রচণ্ড আফসোস হতে হতেও মনে হলো, যে পথটা পেরিয়ে দুর্গদ্বারে পৌঁছেছি, সেটাও তো কম উপভোগ্য নয়।

হোয়েনসালজবার্গ ফোর্ট্রেস ইউরোপের অন্যতম বড় ক্যাসলগুলোর মধ্যে একটি।

অস্ট্রিয়া এমনিতেই রূপসী। তার মধ্যে সালজবার্গ সেরা। আল্পসের উত্তরের সীমানাঘেঁষা এই শহর বাঙালির কাছে ‘সাউন্ড অব মিউজিক’-এর নস্টালজিয়া বয়ে আনে। এখানে এলে বোঝা যাবে রবার্ট ওয়াইজ কেন তাঁর মিউজিক্যাল এখানে শুট করেছিলেন। ‘সাউন্ড অব মিউজিক’ ট্যুরও আছে। যেসব জায়গায় শুটিং হয়েছিল, সেই লোকেশন আর প্রপস দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

সালজবার্গের অন্যতম আকর্ষণ মোৎসার্ট। এখানেই শিল্পীর জন্মকর্ম। ওল্ড টাউন সেন্টারে মোৎসার্টের বাড়ি- মিউজিয়াম অবশ্য দ্রষ্টব্য। তবে শিল্পী শুধু স্ট্যাচু আর মিউজিয়ামেই আটকে নেই। বিপণন কোন জায়গায় যেতে পারে, তা মোৎসার্টের নামের বিভিন্ন মার্চেন্ডাইজ বিক্রির হিড়িক দেখলে বোঝা যাবে। মৃত্যুর তিন শ বছর পরেও তিনি প্রাসঙ্গিক এবং জীবন্ত।

মোৎজার্ট জাদুঘর।

বেড়াতে গিয়ে যদি আলসেমি করতে ইচ্ছে করে, তাহলে সালজবার্গ তার আদর্শ জায়গা। ওল্ড টাউনে থাকলে তো হয়েই গেল। বারান্দায় বসেই নিসর্গ উপভোগ করা যাবে। আমরা ছিলাম নিউ টাউনে। ছোট শহর যেহেতু, তাই ট্রান্সপোর্টের প্রয়োজন আমাদের পড়েনি। চাইলে তুমি সাইকেল ভাড়া করে নিতে পারো। নিউ টাউন থেকে বেরিয়ে নদীর ধার ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজ পেরিয়ে দিব্যি রোমানিয়ান-গথিক আর্কিটেকচারের রাজ্যে ঢুকে পড়া যায়।

কয়েক পা হাঁটলে সিটি স্কোয়্যার। চারধারে অসাধারণ স্থাপত্য নির্মাণ। তার মাঝখান দিয়ে সরু সরু রাস্তা। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অজস্র দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে। একটা জায়গা বেছে নিয়ে বসে পড়লেই হলো। দূরে আল্পসের ঝলক, পাহাড়ের ধাপে সালজ দুর্গ, স্কোয়্যারের মাঝে বা গলির মুখে কোনো মিউজিশিয়ান নিজ সৃষ্টিতে মগ্ন…নিসর্গ, সংগীত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে।

সিটি স্কোয়্যারের চারধারে অসাধারণ সব স্থাপত্য।

আমরা গিয়েছিলাম ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। তখন শহর তৈরি হচ্ছে ক্রিসমাসের জন্য। কপালজোরে চোখের সামনে ক্রিসমাস ট্রি লাগাতে দেখার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেল। ষাট-সত্তর ফুট উঁচু স্প্রুস গাছ নিয়ে এসে চত্বরের মাঝ বরাবর রাখা হচ্ছিল। এত বিশাল একটা গাছ এভাবে তুলে এনে আবার পুঁতে দেওয়ার দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস হতো না!

দোকানপাট দেখে মনে হচ্ছিল, ক্রিসমাসের আগে সুন্দরী তার মেকআপ শুরু করেছে। এমনিতে গেটরাইডগ্যাস শপিংয়ের স্বর্গ। দোকানগুলোর বৈশিষ্ট্য তার আয়রনের তৈরি সাইনবোর্ডে। সন্ধে হতেই জায়গা এত জমজমাট হয়ে যায় যেন মনে হবে, এখনই কার্নিভ্যাল শুরু হবে।

যেহেতু ট্যুরিস্ট প্রধান জায়গা এবং অস্ট্রিয়ায় ইউরোর মাধ্যমেই কেনাবেচা হয়, সুতরাং জিনিসপত্র একটু দামি ঠেকতে পারে। শপিং মলও আছে। কিন্তু গেটরাইডগ্যাসের পাথুরে রাস্তায় হাঁটলে ইতিহাসের যে গন্ধ পাওয়া যায়, তার আকর্ষণ ছাড়া মুশকিল। হাল ফ্যাশনের পোশাক তো পাবেই। চাইলে জুলি অ্যান্ড্রজের মতো এ দেশের ট্রাডিশনাল পোশাকও পরতে পারো। এখান থেকে উলের টুপি, মাফলার কিনতে পারো। তোমার বন্ধুরা ঈর্ষা করবেই।

স্যুভেনিরের জন্য টি-শার্ট, কফি মগ, বাড়ি সাজানোর টুকিটাকি, বেল কিনতে পারো। আর আছে মোৎসার্টের নামাঙ্কিত অজস্র স্যুভেনির। এখানকার স্টোনের গয়না যেমন ক্লাসি, তেমনই স্টাইলিশ।

সন্ধ্যায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে এই শহর।

শপিং মলগুলো প্রধানত শহরের আধুনিক অংশে। কিন্তু ওল্ড টাউন চত্বরে থাকলে ওই দিকে আর যেতে ইচ্ছে করবে না। এই এলাকাতেই সালজবার্গ ক্যাথিড্রাল, হোলি ট্রিনিটি চার্চ, সেন্ট পিটার্স অ্যাবে, মোৎসার্টের বাড়ি। ঘুরতে ঘুরতে সময়ের ঠিক থাকে না।

ডিসেম্বরের ঠান্ডায় আর কিছু না হোক জবরদস্ত খিদে পায়। এখানের সসেজ, হ্যাম না চাখলে পস্তাতে হবে। সব দোকানের বাইরে মেন্যু লেখা। অনেক জায়গায় লেখা ‘কেবাপ’। খোঁজ নিয়ে জানলাম, আমাদের কাবাবের অস্ট্রীয় ভার্সান কেবাপ। স্বাদ মোটামুটি একই। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যুর আসল মর্মার্থ এখানে এসেই বুঝেছি। ইউরোপে এসে সসেজ না খাওয়া অপরাধ। তাই একটা প্ল্যাটার অর্ডার করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত টেবিলে যে পদটা এসে পৌঁছাল সেটা আমার গোটা দিনের খাবার! আকারে-প্রকারে সসেজগুলো বৃহৎ বললে কম বলা হয়।

ছবির মতো সুন্দর সালজবার্গ।

সালজবার্গের ডেজার্ট মিস করবে না। এখানকার চকলেট, পেস্ট্রির স্বাদ অপূর্ব। চাইলে প্রিয়জনের জন্য হ্যান্ডমেড চকলেট কিনে নিয়ে যেতে পারো। বেশ মজাদার একটি জিনিস খেয়েছিলাম, গ্লুু ওয়াইন। গরম ওয়াইন। ধোঁয়া ওঠা ওয়াইন খাওয়ার অভিজ্ঞতা সেই প্রথম। আর একটি অভিজ্ঞতাও ভোলার নয়।

হোয়েনসালজবার্গ ফোর্ট্রেস যাওয়ার রাস্তায় একটি রেস্তোরাঁ পড়ে। খাড়াই রাস্তা চড়তে চড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দুদণ্ড জিরিয়ে নেওয়া যায়। পাহাড়ের খাঁজে অদ্ভুতভাবে তৈরি এই রেস্তোরাঁ। ভেতরের স্থাপত্যও নজর টানে। তবে রেলিংয়ের ধারে বসে চোখ মেললে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে সবুজ প্রান্তর, সেই প্রান্তর ছাড়িয়ে আবছায়া আল্পস…মুহূর্ত ওখানেই থমকে যায়!

অপরূপ সুন্দর রাতের সালজবার্গ।

একনজরে

ঢাকা থেকে ভিয়েনার ফ্লাইট রয়েছে। সেখান থেকে ট্রেন বা ফ্লাইটে সালজবার্গ যাওয়া সহজ। বছরের যেকোনো সময় যেতে পারো। সালজবার্গ থেকে ইনসব্রুক এক দিনের ট্যুরে ঘুরে আসতে পারো। মিউনিখের দূরত্বও বেশি নয়। চাইলে অস্ট্রিয়া-জার্মানি একসঙ্গে প্ল্যান করতে পারো। ভিয়েনায় কয়েকটা দিন থাকতে পারো। পকেট বুঝে হোটেল বাছবে। দামি হোটেলে থেকে লাভ নেই।

লেখা: আনোয়ার সোহেল 
ছবি: লেখক ও সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইদেশবিদেশভ্রমণ ফাইল

ফেরারি মন

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০২০

কথায় আছে, ‘ইটস দ্য জার্নি, নট দ্য ডেস্টিনেশন।’ একটু রিওয়াইন্ড করলেই বোঝা যায় কথার সারবত্তা। আগে কোথাও বেড়াতে গেলে তার মেজাজ তৈরি করে দিত ট্রেন জার্নি। ফোর-জি স্পিডের যুগে বদলে গেছে সেই জার্নির ছবি। জনপ্রিয় হয়েছে রোড ট্রিপ। বাইকে বা চার চাকায়। আসমুদ্রহিমাচল ঘোরা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ধরে। তবে ইচ্ছে হলেই হুট করে রোড ট্রিপে বেরিয়ে পড়া যাবে না। তার জন্য চাই ঠিক প্রস্তুতি এবং পর্যাপ্ত পরিকল্পনা।

প্রযুক্তি প্রথম

বাইকের টুলবক্স সঙ্গে রাখতে হবে। চার চাকায় গেলে পাম্প সঙ্গে রাখো। বাইক চালালে পরতে হবে নি-গার্ড, এলবো গার্ড, স্পাইন গার্ড। এই পুরো গিয়ার সেটআপ বিভিন্ন দামে বাজারে পেয়ে যাবে। প্রয়োজন বুঝে কিনতে পারো। ভাড়াও পাবে। কাজে লাগবে ফ্ল্যাশলাইটও। মোবাইলের ফ্ল্যাশে ভরসা না করে হাই পাওয়ারের ফ্ল্যাশলাইট ও নতুন ব্যাটারি কাছে রাখো। ফার্স্টএইড কিট জরুরি। গাড়ির সওয়ারিদের জন্য জরুরি ওষুধপথ্যও ভরে নিতে পারো তাতে।

জিপিএস ও নেভিগেশন ফোনেই পেয়ে যাবে। তবে ছোট শহর বা গ্রামের রাস্তায় অনেক সময়ে নেভিগেশন মেলে না। দুর্গম জায়গায় নেটওয়ার্কও থাকে না। সঙ্গে রাখো স্থানীয় ম্যাপ। রাস্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলো। পুরো রাস্তা ফোনে নেভিগেশন অন থাকলে চার্জ ফুরোবে তাড়াতাড়ি। তাই ড্যাশবোর্ড মাউন্ট ও কার চার্জার অথবা পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে নাও। জ্বালানি ক্যারি করতে হলে সাবধান। সিলড ক্যান নেওয়াই ভালো।

 

নথিপত্র

রোড ট্রিপে এক জেলার গাড়ি অন্য জেলার মধ্য দিয়ে গেলে তা চেক করার মাত্রা বেড়ে যায়। আউটসাইডার গাড়ি পুলিশ চেক করে। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকা জরুরি। ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন, কার ইনশিয়োরেন্স, পিইউসি (পলুশন আন্ডার কন্ট্রোল) সার্টিফিকেট…সঙ্গে রাখতে হবে। খুচরো টাকাও হাতের কাছে রাখো।

পথ

কোন রাস্তায় যাবে, তা বিবেচ্য। সমতলে কয়েকটি রোড ট্রিপ করে তবেই পাহাড়ি রাস্তায় রোড ট্রিপ শুরু করো। বাইকে গেলে অবশ্যই ফুল হেলমেট পরতে হবে। ফোর হুইলারে চেপে পাহাড়ি পথে গেলে কোথাও ছোট গাড়ি, কোথাও বড় গাড়ির দরকার পড়ে। তাই তোমার ট্রিপের রাস্তায় কোন গাড়ি চলে, তা জেনে নাও। গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান জরুরি। মৌসুম অনুযায়ী কিছু রাস্তা বন্ধ থাকে বা সমস্যা থাকে। তাই খোঁজখবর নিয়েই প্ল্যান করো।

সঙ্গী

রোড ট্রিপ কিন্তু সবাই উপভোগ করতে না-ও পারে। এই জার্নিতে অ্যাডভেঞ্চার যেমন আছে, রয়েছে কষ্টও। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা। বাথরুম সব জায়গায় মনের মতো না-ও পেতে পারো। তাই এমন সঙ্গী নাও, যে জার্নিটা উপভোগ করবে। আর সঙ্গী যদি বাইক বা গাড়ি চালাতে পারে, তাহলে তোমারই সুবিধা। দুজনে ভাগ করে ড্রাইভ করো। খুব ছোট বাচ্চা নিয়ে গেলে তার খাবার সঙ্গে রাখো। পর্যাপ্ত পানি নিয়ে বেরোও। গাড়িতে তার ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে ছোট বালিশ ও কম্বল সঙ্গে রাখো। সে ক্ষেত্রে একটু বড় গাড়ি নিলেই সুবিধে।

নাইট ড্রাইভিং

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছানোর চাপ তো থাকেই। কিছু ক্ষেত্রে সূর্যাস্তের পরেও ড্রাইভ করার প্রয়োজন হয়। তবে অজানা রাস্তায়, বিশেষত পাহাড়ে দিনের মধ্যেই হল্ট প্লেসে পৌঁছানোর চেষ্টা করো। রাতে অজানা রাস্তায় গাড়ি না চালানোই ভালো। একান্তই তা করতে হলে স্পিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। গাড়ি চালানোর সময়ে ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলে ব্রেক নাও।

ড্রাইভিং টাইম

পুরো ট্রিপ কমপ্লিট করতে কত ঘণ্টা লাগবে, আগে দেখে নাও। ধরো, প্রায় ১২০ ঘণ্টার ট্রিপ। প্রত্যেক দিন আট-দশ ঘণ্টা করে তা ভাগ করে নাও। যারা পরিকল্পনা করে ঘুরতে ভালোবাসো, তারা আগে থেকে হল্টের হোটেল বুক করে রাখতে পারো। চাইলে হল্টে পৌঁছেও থাকার জায়গা খুঁজে দেখতে পারো। রোজকার ড্রাইভিং টাইমের চেয়ে অতিরিক্ত সময় হাতে রাখো। ট্রাফিক, শরীর খারাপ, চেকপোস্টে…নানা কারণে দেরি হতে পারে।

রোডট্রিপ করার আগে প্রয়োজন মানসিক প্রস্তুতি ও শারীরিক ফিটনেস। শরীর যখন ক্লান্তির কথা জানান দেবে, তখন তা অবশ্যই শোনো। কারণ গন্তব্য নয়, রোড ট্রিপে জার্নিটাই আসল।

 

লেখা: রোদসী ডেস্ক 
ছবি: সংগ্রহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইদেশভ্রমণ ফাইল

ধুপপানির পথে

করেছে Wazedur Rahman ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২০

ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বাইরে তাকাতেই অদ্ভুত এক ভালো লাগায় মন ভরে গেল। ভোরের হালকা আলো, পাহাড়, মেঘ সব একসঙ্গে মিলেমিশে কী যে এক পরিবেশ! এটা শুধু চোখ দিয়ে দেখা আর মন দিয়ে অনুভব করার মতো ব্যাপার ছিল আমার কাছে।

প্রথমেই একটু ব্যাকগ্রাউন্ড কাহিনি বলে নিই। গত বছর অনেক ট্রাই করেও ঝরনা দেখার কোনো উপায় বের করতে পারিনি। যেসব ছোট ভাই নিজেরা গ্রুপ করে গেছে, ওরা বলেছে তুমি জীবনেও পারবা না, অনেক কঠিন, আর তার ওপর তুমি সিজারিয়ান মম। এরপর নভেম্বরে হঠাৎ দেখলাম এক সিনিয়র আপু একটা ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গে নাপিত্তাছড়া ইভেন্টে গোয়িং দিয়েছে, সবার কাছ থেকে পাওয়া বয়ান তাকেও দিলাম যে আপু পারবা না, সে জানাল গ্রুপ থেকে বলেছে মেয়েরা পারবে। আর হ্যাঁ, ওই আপু পুরা মুখ ঢেকে পর্দা করে, লম্বা বোরকাও পরে, তাই বেশ আশা নিয়ে তার ফেরার অপেক্ষা করলাম।

সে সুন্দরভাবে সব করে এসে জানাল, তখন থেকে সেই গ্রুপ মানে স্বপ্নযাত্রার গ্রুপে জয়েন করলাম আর ইভেন্টগুলা দেখতে থাকতাম। ToB এর কারণে নিজেরা পার্সোনাল গ্রুপ নিয়ে গেলে বা কোনো ট্রাভেল গ্রুপে ঢুকলে খরচ কেমন হয়, তা বেশ ভালোই জানা হয়ে গিয়েছিল। তাই দেখলাম স্বপ্নযাত্রার খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম। তাই এরপরের ঝরনা ট্যুর দেখতে পেয়েই তানিন (হাজব্যান্ড) আর ফ্রেন্ডদের ট্যাগ মারলেও শেষ পর্যন্ত যেতে পারলাম মাত্র তিনজন (আমি, তানিন, কায়েস ভাই)।

৫ জুলাই রাতে আমাদের বাস ছিল ফকিরাপুল থেকে। রাতের জার্নিতে ঘুম হয় না বলে আমি সাধারণত রাতের বাসে উঠি না। কিন্তু এ ধরনের ট্যুরে সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করতে হলে রাতের বাস ছাড়া উপায় নেই। তখন চলছিল ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা। বাসে বসে আশপাশের খেলার আলোচনা শুনতে শুনতে কোনোমতে ঝিমাতে থাকলাম। শেষরাতের দিকে ভালোই ঘুম চলে এসেছিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বাইরে তাকাতেই অদ্ভুত এক ভালো লাগায় মন ভরে গেল। ভোরের হালকা আলো, পাহাড়, মেঘ সব একসঙ্গে মিলেমিশে কী যে এক পরিবেশ! এটা শুধু চোখ দিয়ে দেখা আর মন দিয়ে অনুভব করার মতো ব্যাপার ছিল আমার কাছে। তাই কোনো ছবি তুলে সময় নষ্ট করিনি তখন। কিছুক্ষণ পরে হুট করে বাস নষ্ট হওয়ায় সবার ঘুম ভেঙে গেল। কেউ কেউ এই সুযোগে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেল, কেউ আবার চারপাশের ছবি তুলতে লাগল।

কাপ্তাই লেক

১৫-২০ মিনিট পর বাস ঠিক হলো। সোজা গিয়ে থামল কাপ্তাই বাসস্ট্যান্ডে। কাপ্তাই নামার পর সিএনজি ঠিক করা হলো ট্রলারঘাটে যাওয়ার জন্য। এক সিএনজিতে পাঁচজন করে উঠে পড়লাম আমরা। আর্মি এরিয়ার ভেতর দিয়ে সিএনজিতে যেতে যেতে বাতাসে বেশ ফ্রেশ লাগছিল। সিনজি থেকে নেমে ট্রলারে ওঠার জায়গাটার সৌন্দর্য দেখে ক্লান্তি সব এক নিমেষেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। মেঘ-পাহাড়-লেকের অপূর্ব এক মিশ্রণ! নিচে নেমে সবাই ট্রলারে উঠে গেল। প্রথমে সবাই নিচে বসলেও ট্রলার ছাড়ার কিছু পরে অনেকেই ছাউনির ওপরে উঠে গেল লেকের সৌন্দর্য দেখতে আর ছবি তুলতে।

ট্রলারের ছাউনিতে উঠতে একটু ভয় ভয় লাগছিল বলে নিচে বসে লেকের চারপাশ দেখতে থাকলাম। কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ির এই দুই ঘণ্টার পথ পুরোটাই অপার সৌন্দর্যের আধার। প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পরে একটা আর্মি ক্যাম্পে ট্রলার থামাতে হলো নিজেদের পরিচয় জানাতে। সবার সঙ্গে আইডি কার্ডের কপি থাকার পরও অজানা কারণে ৩০ মিনিটের মতো বসিয়ে রাখার পর গ্রুপ ছবি তুলে চলে যেত দিল আমাদের।

ন-কাটা ঝরনায় যাওয়ার পথে

আরও প্রায় আধা ঘণ্টা চলার পর পৌঁছালাম বিলাইছড়ি ঘাটে। ঘাট থেকে উঠতেই খাওয়ার হোটেল আর থাকার বোর্ডিং। গ্রুপ লিডার মামুন ভাইয়ের নির্দেশনায় যে যার রুম বুঝে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে নিলাম দ্রুত। আবার ট্রলারে উঠে পড়লাম সবাই। আজকের নির্ধারিত গন্তব্য হলো ন-কাটা এবং মুপ্পোছড়া ঝরনা। ট্রলারে ৩০-৪০ মিনিট যাওয়ার পর একটা পাড়ে নেমে পড়লাম আমরা। এখান থেকেই শুরু হবে আমাদের ট্রেক। মামুন ভাই সবাইকে ডেকে ব্রিফিং দিল হালকা করে কীভাবে যেতে হবে সেটা নিয়ে। তাতে শুনলাম ৪৫ মিনিট হাঁটলেই প্রথম ঝরনা মানে ন-কাটা ঝরনা পাওয়া যাবে।

এরপর শুরু হয় হাঁটার রাস্তা। গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম সবাই মিলে। ঝোপঝাড়, ছোট খাল, মেঠোপথ, কাদা পথ পাড়ি দিয়ে শুরু হয় ঝিরিপথ। ঝিরিপথের পানি প্রথমে পায়ের পাতায় থাকলেও পরে কিছু কিছু জায়গায় তা কোমর পর্যন্ত হয়ে গেল। বাঁশ নিয়ে হাঁটলে সুবিধা হবে বলে অনেকেই আশপাশে থেকে বাঁশ নিয়ে নিল। ট্রেইলের পথ কঠিন না হলেও নতুন বিধায় হাঁটতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। প্রথম দিকে যেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর স্যান্ডেল হালকা স্লিপ কাটছিল দেখে ভয় পেয়ে যাই কিছটা। আমার স্যান্ডেল যদিও গ্রিপ যুক্ত ছিল, তা-ও কেন জানি মাঝেমধ্যে একটু স্লিপ দিচ্ছিল সে জন্য বাকি পথ তানিনের হাত ধরে ওর স্টেপ ফলো করে যাচ্ছিলাম।

ন-কাটা ঝরনা

তানিন এক হাতে বাঁশ আর হাতে আমার হাত ধরে রেখেছিল বলে কোনোমতে চলতে পারছিলাম। ভরা বর্ষার মৌসুম আর আগের কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার ফলে ট্রেইল বেশ পানি পূর্ণ ছিল বলে অসাধারণ ভিউ ছিল পুরোটা পথজুড়েই। ১৫-২০ মিনিট টানা হাঁটার পর মামুন ভাই নিজেই ঝাঁপ মেরে ঝিরিতে গা ডুবিয়ে দিলেন। আমাদের আর কে পায়! সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝিরিতে। কেউ কেউ আবার শুয়েও পড়ল বহমান পানির ধারার মাঝে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম আর ফটোসেশনের পর আবার শুরু হলো হাঁটা।

আরও আনুমানিক ২০ মিনিটের মতো মানে টোটাল ঝিরিপথ ধরে ৪৫ মিনিট যাওয়ার পর ন-কাটা ঝরনার দেখা পাই। ঝরনা দেখে পুরো মুখ হা করে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ, এর সৌন্দর্য ছবি তুলে বা মুখে বলে কখনো বোঝানো যাবে না। ঝরনার সামনে পানির স্রোত বেশ ভালো ছিল বলে সামনে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। তবে অন্য সবাই যাচ্ছিল দেখে একটু পর আমিও নেমে পড়ি। ঝরনার নিচে দাঁড়ানোর পর নিজের খুশি আর আটকে রাখতে পারছিলাম না।

মুপ্পোছড়ায় যাওয়ার ঝিরিপথ

ঘণ্টাখানেক ঝরনায় দাপাদাপি করার পরে আমরা মুপ্পোছড়ার উদ্দেশে রওনা দিই। এবার রাস্তাটা কিছুটা কঠিন হওয়া শুরু হয়, আরও বেশি কঠিন হয়ে যায় যখন আমরা ভুল পথে প্রায় ঘণ্টাখানেক অন্য দিকে চলে যাই। তবে ভুল পথের সৌন্দর্য ছিল আরও অনেক বেশি। যদিও রাস্তাটা ছিল অনেক বেশি কঠিন আমার মতো নতুনদের জন্য। স্থানীয় দুজন ছেলেকে হঠাৎ পেয়ে যাওয়ায় তাদের সাহায্যে মুপ্পোছড়া ট্রেইলের রাস্তা পাওয়া যায়। মুপ্পোছড়ার দিকে যতই আগাচ্ছিলাম রাস্তাটা আরও বেশি কঠিন হচ্ছিল। প্রতিমুহূর্তে ভয় পাচ্ছিলাম পড়ে যাওয়ার। পিছলে পড়ে নিজের ক্ষতি থেকে বেশি টেনশন হচ্ছিল আমার জন্য অন্যদের ট্যুরের মজাটুকু মাটি না হয়ে যায়। অনেক উঁচু-নিচু, দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে যখন মুপ্পোছড়ার দেখা পেলাম তখন মনে হলো এই কষ্ট পুরাই সার্থক। মুপ্পোছড়ার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। বেশ চওড়া একটা ঝরনা, আর অনেক উঁচু থেকে পানির ধারা নিচে পড়ছিল কয়েকটা ধাপে। এখানেও সবাই মিলে আবার ভিজলাম এবং হালকা নাশতা খেয়ে নিলাম।

মুপ্পোছড়া থেকে ফেরার সময় বারবার মনে হচ্ছিল এমন ভয়ংকর রাস্তা দিয়ে কীভাবে গিয়েছিলাম! ফেরার পথটা আগের চেয়ে কম ছিল তাই ফিরতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। কোনো রকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই সবাই নির্বিঘ্নে ট্রলারে ফেরত আসি। ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে বেডে বসার পরে মনে হচ্ছিল এক ফোঁটা নড়ার আর কোনো ক্ষমতা নেই। যখন খাওয়ার জন্য সবাইকে ডাকল নামতে গিয়ে দেখলাম পা ডানে দিলে বাঁয়ে যায়, বাঁয়ে দিলে ডানে যায়! কোনোমতে নড়েচড়ে খেয়ে ফিরে এসে শুতে না শুতেই আবার মামুন ভাই এসে ডাক দিল ট্রলারে করে খোলা আকাশের নিচে কাপ্তাই লেকে ঘুরে বেডানোর প্রস্তাব নিয়ে।

মুপ্পোছড়া ঝরনা

ব্যথা ভুলে কোনোমতে আবার গিয়ে ট্রলারে উঠলাম। সবাই মিলে গান-আড্ডা বেশ ভালোই সময় কাটল ঘণ্টাখানেক। এই সুযোগে অনেকের নাম-পরিচয় জানতে পারলাম। পরদিন ভোর ৫টায় উঠতে হবে বলে তাড়াতাড়ি সবাই আবার ব্যাক করলাম যে যার রুমে। রাতে মুভ স্প্রে আর ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে পরদিন ঘুম থেকে উঠে নড়তে তেমন কষ্ট হয়নি।

মুপ্পোছড়া থেকে ফেরার পথে যখন শুনেছিলাম ধুপপানির রাস্তা আরও কঠিন তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি যাব না। রাতে যখন জানালাম, তখন আশপাশে অনেকেই বোঝাল কোনো ব্যাপার না, সবাই মিলে হয়ে যাবে কিন্তু আমি যাব না বলে অটল ছিলাম। ভোর পাঁচটায় মামুন ভাইয়ের ডাকে উঠে যখন শুনলাম রুম ছেড়ে দিতে হবে তখন ভালোই বিপদে পড়লাম। তানিন কে বললাম রুম আমার জন্য আবার বুক করতে। কিন্তু ও ফিরে এসে চাপা মেরে বলল যে রুম ফাঁকা নেই। নাশতা খেতে বসার সময় ট্যুরমেট আশিক ভাই নানাভাবে বোঝাল যে ধুপপানি এত কঠিন হবে না, আমি অবশ্যই পারব। ভাইয়ের আশ্বাসে আবার ট্রলারে উঠলাম।

পথিমধ্যে দুবার আর্মি চেকপোস্টে নিজেদের পরিচয় দিয়ে প্রায় ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে উলুছড়িতে পৌঁছাতে পারি। সবাই মিলে ট্রলার থেকে উলুছড়ি নামার পর আবার ছোট একটা নৌকা দিয়ে খালমতো জায়গা পার হলাম। এখান থেকে আমরা দুজন গাইডও নিয়ে নিই। এরপর শুরু হলো ভয়াবহ কাদার রাস্তা। কাদামাটি পার হয়ে যেতে যেতে শুরু হলো পাহাড়ি পথ। ৮০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠা বেশ কঠিন ছিল। ওপর দিকে তাকালে আরও আশাহত হয়ে যেতাম তাই খালি তানিনের ফুটস্টেপ ফলো করে ওর হাত আর লাঠি ধরে কোনোমতে উঠে চলছিলাম।

পাহাড়ের গহীনের সৌন্দর্য

ধুপপানি যাওয়ার রাস্তায় ঝিরিপথ খুব অল্প ছিল, পাহাড়ি পথ বেশি। পাহাড় বেয়ে চূড়ায় উঠে আবার নামা, এরপর আবার আরেকটা পাহাড় বাওয়া, এভাবেই চলছিল পথ। কখনো তানিনের আবার কখনো কায়েস ভাইয়ের হাতে হাত আর অন্য হাতে বাঁশ নিয়ে চলতে চলতে সহ্যের শেষ সীমায় চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু পথের সীমা শেষ হচ্ছিল না।

শেষ পাহাড়ের মাথায় যখন উঠলাম হাতের ডান দিকের পরিবেশ দেখে পুরা থমকে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য! এত সুন্দর, এত সুন্দর যা দেখে পুরো পথের কষ্টটা নিমেষেই দূর হয়ে গিয়েছিল! আমাদের কারও ক্যামেরাই সেই সৌন্দর্য ফ্রেমে আটকাতে পারেনি।

কিছুদূর যাওয়ার পর ধুপপানি পাড়ায় পৌঁছে আমরা সেখানের একটা আদিবাসী দোকানে হালকা নাশতা করার পরে আবার হাঁটা শুরু করি। কখনো উঁচু কখনো নিচু পাহাড়ি পথ ধরে কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে মানে প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টা পর অবশেষে দেখা মিলে ধুপপানি ঝরনার। ট্যুরে যাওয়ার আগে ছবি দেখে আমার কাছে ধুপপানি মোটামুটি সুন্দর মনে হয়েছিল, আহামরি কিছু মনে হয়নি, কিন্তু ঝরনাটা দেখার পর আবারও হতবাক হতভম্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই বলার ছিল না। এই ঝরনার উচ্চতা অনেক বেশি ছিল এবং পানি বেশ মোটা ধারায় পড়ছিল। ধুপপানি ঝরনার ভেতরে গুহামতো বসার জায়গা ছিল, যেখান থেকে ঝরনার সৌন্দর্য তো অন্য রকম দেখায়। গুহায় যাওয়ার আগে পানির গভীরতা বেশি ছিল, সাঁতার জানা ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই। আমি সাঁতার জানি না বলে বাইরে একটা উঁচু পাথরে বসে ছিলাম। সবাই গুহায় যাচ্ছে দেখে পরে তানিন এক হাতে আমাকে ধরে রাখে, আমি নিজেকে ভাসিয়ে রেখে ওর হাত ধরে এগিয়ে যাই।

ধুপপানি ঝরনা

সবাই মিলে সেখানে সুন্দর সময় কাটিয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার আমরা রওনা দিই। এবার ফেরার পথে শুকনো জায়গায় অকারণে আমি সত্যিকারের আছাড় খাই, উঠে দাঁড়াতে আবার এক পা দিতেই আবারও পিছলা খাই। আমি বুঝতেই পারছিলাম না শুকনা জায়গায় আমি কী করে পিছলা খেলাম! এরপর আবার দুই পা দিতে বেশ জোরে ধপাস করে পড়ে যায় এবং এইবার আমি ভালো রকমের ব্যথা পেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম এবার আমার কোমর শেষ কিন্তু দুই মিনিট রেস্ট নেওয়ার পরে আল্লাহর রহমতে আমি আবার উঠে দাঁড়াই এবং তেমন কোনো ব্যথা ছিল না। বাকি পথ খুব সাবধানে আস্তে আস্তে করে তানিনের হাত ধরে ধরে ফেরত আসি। প্রতি মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল আমি বুঝি আর ফিরতে পারব না। পাহাড়ি পথ শেষ হওয়ার পর কাদাপথে এসে কোনোমতে শাস্তির নিশ্বাস নিই যে অবশেষে আমি ফিরতে পেরেছি।

এরপর বিলাইছড়ি ব্যাক করে সেখান থেকে কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে আবার কাপ্তাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিই। সন্ধ্যার আগেই আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয় বলে তাড়াহুড়ো করতে হয় খুব। পথিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। লেকের মধ্যে বৃষ্টি দেখতে দেখতে সারা দিনের কষ্ট অনেকটাই ভুলে যাই, যদিও হাত-পা সব ব্যথায় টনটন করছিল। একটু পরেই বৃষ্টি থেমে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। কাপ্তাই লেকের সূর্যাস্ত যে কী অপরূপ, তা যে দেখেনি সে কখনোই বুঝবে না।
কাপ্তাইয়ে পৌঁছে আমরা বাসস্ট্যান্ডে চলে যাই। রাত আটটার বাসে উঠে পড়ি, ভোরে ঢাকায় এসে নামি।

ঘুরতে গিয়ে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবে না, দেশ তোমার, পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব তোমার। তানিন দুটি অতিরিক্ত পলিথিন নিয়ে তাতে পুরা ট্রেইলের যত অপচনশীল দ্রব্য পেয়েছে, সব নিয়ে এসে পাড়ায় জমা দিয়েছে। ওর এই পরিষ্কার করা দেখে আমাদের গ্রুপের কেউ কোনো অপচনশীল প্যাকেট যেখানে সেখানে তো ফেলেনিই, উল্টো যেখানে যা পেয়েছে, নিয়ে এসে সেই পলিথিনে জমা করে দিয়েছে।

গুহার ভেতর আমরা সবাই

কীভাবে যাবে

ঢাকা থেকে কাপ্তাইগামী যেকোনো বাসে করে যেতে হবে কাপ্তাই বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই জেটিঘাট থেকে ট্রলার নিতে হবে বিলাইছড়ি পর্যন্ত। রিজার্ভ নিলে ঝামেলা কম কিন্তু খরচ বেশি। মানুষ বেশি হলে রিজার্ভ নেওয়াই উত্তম, না হলে লোকাল ট্রলারও যায়।

কই থাকবে, কী খাবে

বিলাইছড়ি ঘাটের সঙ্গেই থাকা-খাওয়ার জন্য বোর্ডিং আর হোটেল আছে কয়েকটা, এ ছাড়া একটু সামনে এগোলে বাজারেও ব্যবস্থা আছে। এখানে থাকা-খাওয়া খুবই সাধারণ মানের। তুমি যদি বেড এবং ওয়াশরুম নিয়ে শুচিবাই প্রকৃতির হও, তবু এখানে এলে সেটুকু টের পাওয়ার সময়টুকু পাবে না। ওয়াশরুমে এত ভিড় থাকে যে জায়গাটা কেমন সেটা দেখার মতো কোনো সময় থাকে না, বেডে শুধু ঘুমানো ছাড়া অন্য কোনো সময় বসার দরকারও থাকে না। আর এতই ক্ষুধার্ত থাকবে যে কী খাচ্ছে, সেটা কোনো ফ্যাক্টরই না, তবে খাবারের কোয়ালিটি ভালো ছিল।

কী কী নেবে

যেকোনো ট্রেকিং ট্যুরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো একটা ভালো গ্রিপওয়ালা স্যান্ডেল। ব্যাগ যত সম্ভব হালকা করবে, ততই নিজের সুবিধা হবে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে। এই ট্রেইলে জোঁক ছিল, তাই জোঁকের জন্য নিতে পারো লবণ আর অ্যালকোহল প্যাড। এ ছাড়া টুকিটাকি ফার্স্টএইড সামগ্রী তো নেবেই। জিনসের প্যান্ট এবং শুকাতে সময় লাগে এমন ড্রেস অবশ্যই পরিহার করা উচিত। এ ছাড়া ট্রেইলে চলার সময় গামছা খুব উপকারী জিনিস।

 

লেখা: ফারিহা জাবিন 
ছবি: মানস বালা ও বিল্লাহ মামুন

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইবিদেশভ্রমণ ফাইল

মেঘের রাজ্যে আমরা

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ১৯, ২০২০

বাংলামোটরের জ্যামে বসে জীবনের কতটুকু মূল্যবান সময় এই জ্যামে নষ্ট হয়েছে তার হিসাব কষছিলাম আর ফেসবুক স্ক্রল করছিলাম। এমন সময় চোখ আটকে গেলো একটা ফেসবুক ইভেন্টে, ‘Spa Tour De Rainbow Season 3 স্পা ট্যুর দি রেইনবো সিজন ৩।’ স্পা ড্রিংকিং ওয়াটার আকিজ ফুডস এন্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেডের একটি পণ্য, তাদের আয়োজিত একটি ফটোগ্রাফি কম্পিটিশন। ১৫ জন বিজয়ী পাবে শিলং-চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসার সুযোগ। বেশ বড় আয়োজন, এই নিয়ে তৃতীয়বার তারা এই কম্পিটিশনের আয়োজন করছে এবং আগের দুইবারই দেশের অনেক বিখ্যাত ফটোগ্রাফাররা বিজয়ী হয়েছেন।

প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের পাশাপাশি শখের ফটোগ্রাফারদেরও জন্যেও বেশ ভালো একটা সুযোগ। তাই, কোনো উচ্চাশা না নিয়েই ছবি সাবমিট করে দিলাম। এর কয়েকদিন পর যখন নির্বাচিত ফটোগ্রাফারদের লিস্টে আমার নাম দেখে যতোটা না অবাক হয়েছিলাম, তার চেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন বিজয়ী পনের জনের ভেতর আমার নাম ঘোষণা করা হলো। বেশ খুশি খুশি লাগছিলো। পুরষ্কার হিসেবে দেশবরেণ্য ফটোগ্রাফারদের সাথে ঘুরে আসতে পারবো মেঘের রাজ্য মেঘালয়ে, আর কি চাই! নির্বাচিত বাকি ফটোগ্রাফারদের সাথে পরিচিত হলাম সেই সাথে চলতে থাকলো মেঘালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি।

অক্টোবরের ২৪ তারিখে আমাদের ট্যুর চুড়ান্ত করা হলো। এর ভেতরেই যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২৪ তারিখ রাতে বাসে উঠে ডাউকির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমরা মোট ১২ জন। উইনারের পাশাপাশি আছেন স্পা’র দুইজন কর্মকর্তা সাদিব ভাই এবং রেজা ভাই, ভিডিওগ্রাফার রুদ্র দা, সাংবাদিক তানজিদ ভাই এবং ফটোগ্রাফি মেন্টর হিসেবে যাচ্ছেন আসাফাদ্দৌলা ভাই এবং শ্রদ্ধেয় কিরণ স্যার। পরদিন সকালে ডাউকি বর্ডার অতিক্রম করে আমাদের গাইড বাবলু ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলাম। বাবলু ভাই বেশ মজার মানুষ, অল্পক্ষণেই সবার সাথে জমিয়ে ফেললেন। সবাই ঝটপট উঠে পড়লাম বাবলু ভাইয়ের মিনিবাসে। শুরু হলো আমাদের ট্যুর।

বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ। ছবি কৃতজ্ঞতা: এম.এস.প্রত্যয়

প্রথমেই আমরা গেলাম স্নোনেংপেডেং এ। উমগট নদী বয়ে চলেছে এখানে, শীতকালে একদম কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি দেখা যায়। এখানে নামার আগে রেজা ভাই একটা ছোটখাটো ব্রিফ দিলেন পুরো আয়োজনের ব্যাপারে আর রুদ্র দা এই ফাঁকে কিছু শট নিয়ে নিলেন। নেমেই প্রথমে আমরা বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে দেখলাম। উপর থেকে স্বচ্ছ নদী, নদীর তীরের ক্যাম্পিং এর দৃশ্য অসাধারণ লাগছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়ে গেলো টিপটিপ বৃষ্টি। বরহিলস ঝর্না দেখা শেষে এরপর আমাদের গন্তব্য মাউলিলং ভিলেজে। মাঝে রাস্তায় গাড়ী থামানো হলো জৈন্তা হিলস ভিউ পয়েন্টে।

এখান থেকে দূরে বাংলাদেশ দেখা যায়, আর নিচে তাকালে দেখা যায় ঘন নীল পানিতে রঙ বেরঙের নৌকা নিয়ে মাছ ধরছে জেলেরা। এ এক অসাধারণ দৃশ্য।

মাউলিলং ভিলেজকে স্থানীয়রা বলে ঈশ্বরের নিজের বাগান, কারণ এই গ্রামটি এশিয়ার সবচে পরিষ্কার গ্রাম।

গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে হোমস্টে’র ব্যবস্থা। এখানে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে বের হতে না হতেই আবার বৃষ্টি। রেস্টুরেন্টে বসে চা খেতে খেতে গল্প-গুজবে মেতে উঠলাম আমরা। আসাফ ভাই আর রেজা ভাইয়ের মজার মজার গল্প শুনতে শুনতে সময় কেটে গেলো ভালোভাবেই। বৃষ্টি থামলে আমরা চলে আসলাম লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে। রুট ব্রিজ দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো সাথে ঠান্ডা বৃষ্টি তো আছেই। এরপর রওনা হলাম শিলং-এর পথে। এখান থেকে শিলং প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে, পুরো পথের সময়টাতেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি হলো।

স্বচ্ছ পানিতে রঙ বেরঙের নৌকার সমাহার। ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক।

বাইরে বৃষ্টি আর গাড়ির ভেতরে সাদিব ভাই গান বাজিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখলেন। প্রায় চার ঘণ্টা পর আমরা শিলং-এর দেখা পেলাম। পাহাড় দিয়ে ঘেরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫২৫ মিটার উঁচু এই সুন্দর শহরকে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ডিনারে আসলাম সবাই নিচে। পেট ভরে খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম নাস্তার জন্য। সবাই বেশ হাসিখুশি, টানা ঘুম দিয়ে সেই সাথে শিলং-এর স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার ফলে উৎফুল্ল সবাই। হাসি ঠাট্টায় নাস্তা শেষ করে বাইরে গিয়ে দেখি শিলং-এর সেই বিখ্যাত টিপটিপ বৃষ্টি। বাবলু ভাই ইতোমধ্যে গাড়ি নিয়ে হাজির। প্রথমেই আমরা গেলাম ক্যাথেড্রাল অফ মেরী চার্চে। স্থাপত্যকলার সুন্দর এক উদাহরণ এই চার্চ। বৃষ্টি এবং কুয়াশার মতো হালকা মেঘে কেমন একটা গুরুগম্ভীর পরিবেশ। চার্চের পাশেই আবার বাচ্চাদের স্কুল, লাল ইউনিফর্ম পরে সবাই আসছে স্কুলে।

ঘন ঘন শাটার পড়ছে সবার, সুন্দর পরিবেশে ছবি তোলার এই তো সুযোগ। বেশ ভালো সময় এখানে কাটিয়ে আমরা গেলাম গ্লাস মসজিদ হিসেবে খ্যাত মদিনা মসজিদে। কিছু সময় কাটিয়ে এরপর সবাই গেলাম এলিফ্যান্ট ফলস দেখতে। এটা বিরাট বড় ঝর্না, বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে ভীষণ আকার ধারণ করেছে। পানির ছাঁটের জন্য ভালো করে দেখাই যাচ্ছে না কিছু। এখানে কিছু শ্যুট শেষে লাঞ্চের জন্য রওনা করলাম আমরা।

গাড়িতে আসাফ ভাই একটা জায়গার কথা বললেন যেখানে খুব ভালো ভিউ পাওয়া যায় শিলং-এর। কিন্তু কিছুতেই নাম মনে করতে পারছিলেন না। গাড়ি চলছে এমন সময় হঠাৎ চিৎকার করে বললেন, এইতো পাইছি! বামে তাকাতেই দেখি এক অপরুপ দৃশ্য, মেঘের কোল ঘেঁষে শুয়ে আছে শিলং শহর। লুমডেং ভিউ পয়েন্ট এটা, শিলং-এর আসল রুপ যেন দেখলাম এখানে। অনেকক্ষণ এখানে থেকে লাঞ্চ করে নিলাম শহরে গিয়ে। এরপর সাদিব ভাই বললেন আজকের মতো আমাদের ঘোরাঘুরি শেষ, সবাই কিছু কেনার থাকলে সেরে নাও কালকে সময় পাওয়া যাবে না। হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম পায়ে হেঁটে শহরের অলিগলি দেখতে সেই সাথে কিছু শপিং সেরে নিতে।

জলপ্রপাতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক।

শিলং-এ বেশ কিছু মজার স্ট্রিট ফুড আছে বিশেষ করে মোমো, ডাম্পলিং বেশ মজার। বাজারে ঘুরাঘুরির সাথে সাথে এসব খাবারও চেখে দেখলাম আমরা। সেদিন আবার ছিলো দিওয়ালির আগের দিন, কিছুক্ষণ পরপরই আকাশে আতশবাজি ফুটছিলো। লোকে লোকারণ্য বাজারে হেঁটে, এটা ওটা কিনে আর একেকজনের ভুলভাল হিন্দিতে দামাদামি দেখে হাসতে হাসতে কেটে গেলো সময়। হোটেলে ফিরে ডিনার সেরে আমরা আবার ক’জন বের হলার গভীর রাতের শহর দেখতে। কিছুক্ষণ আগের মানুষে ভর্তি বাজার এখন একদমই নিশ্চুপ। শীতের কুয়াশায় যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে গোটা শহর।

পরদিন খুব ভোরে উঠেই নাস্তা করে গাড়িতে উঠে পড়লাম আমরা, যাচ্ছি চেরাপুঞ্জিতে, পৃথিবীর সবচেয়ে আর্দ্রতাপূর্ণ জায়গায়। যদি রংধনুর দেখা মেলে! প্রথমেই নামলাম লাইটলুম উপত্যকায়। খাসিয়া পাহাড় শ্রেণির অপরূপ দৃশ্য দেখা যায় এখানে। ঘোরাঘুরি, ছবি তোলা শেষে আবার রওনা হলাম। এসবের ভেতরেই তানজিদ ভাই আমাদের সবার টুকটাক অনুভূতি জেনে নিচ্ছিলেন আর নোট নিচ্ছিলেন আর্টিকেলের জন্য। ওইদিকে রুদ্র দা আমাদের জার্নির ভিডিও করে যাচ্ছেন। শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পুরোটা রাস্তা যেনো এক টুকরো স্বর্গ। মন মাতানো দৃশ্য দিয়ে ভর্তি। বাইরে গুরুগম্ভীর পাহাড়ের হাতছানি আর গাড়ির ভেতর আসাফ ভাই, কিরণ স্যারের খুনসুটি। রেজা ভাই আর বাবলু ভাইয়ের গানের সাথে গলা মিলিয়ে গান গেয়ে সুন্দর সময় পার করছিলাম আমরা।

নোকালিকাই ফলস-এ এসে দেখি মেঘে কুয়াশায় একাকার। ভর দুপুরেও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো লাগছে। ঘন মেঘের জন্য ঝর্না দেখা যাচ্ছে না, আমাদের চারপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মেঘের পাল। অনেকক্ষণ এখানে কাটিয়ে ইকো পার্কে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু দূরেই গেলাম সেভেন সিস্টার্স ফলসে।

ছোট্ট এক গ্রামের পাশের গিরিখাতে এই ঝর্না বিস্ময়কর সুন্দর। অনেক উপর থেকে পানির ধারা ছিটকে পড়ছে গিরিখাতে। নিচে পাহারা দিয়ে আছে ঘন সাদা মেঘের দল। উপর থেকে অনেক নিচে ছবির মতো দু-তিন খানি গ্রাম দেখা যাচ্ছে, আর উপরে উড়ছে মেঘ। মেঘের দেশ যেনো একেই বলে।

ঝর্নার ঠিক পাশের একটি হোমস্টেতে আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো। আলো থাকা পর্যন্ত আমরা উপভোগ করছিলাম ঝর্নার দৃশ্য। সাদিব ভাই তাড়া দিলেন ফ্রেশ হয়ে নেয়ার জন্য রাতে বারবিকিউয়ের সাথে আছে নানা রকম মজার ইভেন্ট। আমাদের কেউ কেউ রুমে বসে গল্প করছিলো কেউ কেউ বাইরের সুন্দর পরিবেশে হাঁটছিলাম। সময় হতেই সাদিব ভাই ডাকলেন উপরে আসার জন্যে। গিয়ে দেখি উইনারদের জন্য নানা রকম মজার খেলা। সেই সাথে উপহারের ও ব্যবস্থা করে রেখেছেন তারা। ছাদের উপরে মেঘ ভেসে আসছে যেনো মেঘের ভেতর বসে আছি। এর ভেতরেই খেলাতে সবার মজার কর্মকাণ্ড দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ার অবস্থা।

শিলংয়ের সৌন্দর্য। ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক

পুরস্কার বিতরণ শেষে রেজা ভাই ছোট্ট একটা বক্তব্য দিলেন কিভাবে স্পা এবং আকিজ ফুডস ফটোগ্রাফির এই ইভেন্টকে সামনে এগিয়ে নিতে চান। সবশেষে বারবিকিউ ডিনার করে যে যার রুমে গেলাম। একটু পরেই আমাদের রুমে এলেন আসাফ ভাই। আমাদের সবার সাথে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিলেন, গল্পে হাসিতে পাশের রুমে কেউ ঘুমাতে পেরেছে কিনা সন্দেহ। পরদিন একদম ভোরে আমরা উঠেই ছাদে গেলাম সূর্যদয়ের সময় সেভেন সিস্টার্স ফলস দেখার জন্য। মেঘ না থাকায় নয়নাভিরাম ফলসটা দেখা যাচ্ছিলো পরিষ্কার। পাহাড়সাড়ি চলে গিয়েছে দূর থেকে দূরে। আশ মিটিয়ে এই অপরূপ দৃশ্য দেখে গ্রামটার আশেপাশেও ঘুরে দেখলাম ভোরের আলোয়। এরপর নাস্তা করে উঠে পড়লাম গাড়িতে।

এবার বিদায় জানাতে হবে মেঘের রাজ্যকে। এই তিনটা দিন স্পা’র কল্যাণে স্বপ্নের মতো কাটলো। খাবার দাবার। পেশাদারিত্ব। রেজা ভাই সাদিব ভাইয়ের বড় ভাই সুলভ আচরণ। আসাফ ভাই কিরণ স্যারের মতো শিক্ষকদের কাছে থেকে দেখা এবং শেখা। এছাড়াও নানা রকম  সুযোগ-সুবিধা সব মিলিয়ে অসাধারণ এক আয়োজনের স্বাক্ষী হয়ে রইলাম।

মেঘাদল ট্যুরে আমাদের দল। ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক।

ভবিষ্যতে এমন আয়োজন আরো হোক, যারা শখের বশে ছবি তোলো বা প্রফেশনাল তাদের জন্য স্পা’র এই ইভেন্টই হতে পারে তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ মূল্যায়ন। নিজেদের ভেতর একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়ে গেছে এই ট্যুরে সেটা ঢাকায় নেমে সবার থেকে বিদায় নেয়ার সময় টের পেলাম। স্বল্প পরিচিত হয়ে সবার সাথে ট্যুরে গিয়েছিলাম, ফিরে এসে পেলাম কিছু বন্ধু, কিছু বড় ভাই এবং কিছু শিক্ষককে।

এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ। আশা রাখি, সামনের সময়ে এই ইভেন্ট আরো বড় পরিসরে হবে। আরো বেশ কিছু ভাগ্যবান মানুষ সুযোগ পাক মেঘের রাজ্যে বা অন্য কোনো অপরূপ জায়গা হতে ঘুরে আসতে।

লেখা: আশিকুল ইসলাম
স্পা ট্যুর দি রেইনবো ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার বিজয়ী
ফিচার ইমেজ: রিও ট্রাভেলার্স

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
নতুন লেখা
আগের লেখা

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ওয়েডিং ডেস্টিনেশন

তুমিই রোদসী

  • স্বপ্ন দেখি নারী দিবসের দরকারই হবে না







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook