রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

শীতকাল

আয়নাঘরগ্রুমিংজীবনযাত্রারূপ ও ফ্যাশন

শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন

করেছে Sabiha Zaman নভেম্বর ৭, ২০২১

হালকা ঠাণ্ডা যেন শীতের জানান দিচ্ছে। নিজের অবস্থান জানান দিতে শীত যেন বদ্ধ পরিকর। বেশ আরামদায় আবহ তৈরি হয় শীতের আগমনের শুরুতে। শীতের হিমহিম ছোঁয়া বেশ ভালো লাগলেও আমাদের ত্বকের জন্য বাড়তি চিন্তার বিষয়। আর শুষ্ক ত্বকে আবহাওয়ার পরিবর্তনে এ সময়ে ত্বকে কিছু সমস্যা তৈরি হয় অনেক বেশি। শীত যত বাড়তে থাকে, ত্বকের সমস্যা ততই বাড়বে। তাই শীতের শুরু থেকেই নিতে হবে ত্বকের যত্ন।  শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিয়ে লিখেছেন সাবিহা জামান_

শীতকালীন শুষ্ক ত্বকের যত্ন

  • শুষ্ক ত্বক যাতে আরো শুষ্ক না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী।
  • ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। মুখের যত্ন নিতে ভালো ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
  • সাধারণ সাবানে ক্ষার থাকে যা শুষ্ক ত্বক আরো নাজুক করে দেয়। এজন্য ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে হবে।
  • ঠাণ্ডার ভয়ে অনেকেই শীটে পানি কম খায়। যদি এ অভ্যাস থেকে তবে বাদ দাও এজ থেকেই। কারণ পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে শীতেও।  
  • অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত গরম পানি মুখের ত্বকের ফলিকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে, তাই অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না।  
  • হাতের তালু ও পায়ের তলার যত্ন নিতে এ সময় পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে হাতের তালু ও পায়ে এতে অনেকটা মসৃণ হয়ে যাবে ত্বক। 
  • ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট ফেটে যায়। কখনো  অনেকের অভ্যাস আছে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো, যেটি করা উচিত নয়। প্রতিদিন নিয়ম করে কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে ঠোঁটে ভাব দিতে হবে। তারপর ভেসলিন বা গ্লিসারিন নিতে হবে। 

ছবি: ইন্টারনেট

০ মন্তব্য করো
1 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইদেশফটো ফিচার

শতরূপে শীতের সকাল

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ১৪, ২০২০

ভোরবেলার চারিদিকের অন্ধকারাচ্ছন্ন মুখরতা, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের সাথে মেঘের লুকোচুরি খেলা; বিকালবেলার ম্লান আলোয় এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ, গোধুলিলগ্নে সূর্যের বাড়ি ফেরায় প্রকৃতির সেই লাজুক সন্ধ্যা; কিংবা কুয়াশার চাদরে জড়ানো সোডিয়ামের আলোয় রাতের নিস্তব্ধতা- সাধারণত সৌন্দর্যমুখর এই পরিবেশ সৃষ্টিকারী ঋতুকেই আমরা শীতকাল বলে সম্বোধন করে থাকি। শীতকালে প্রকৃতি যেন এক অপার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আধুনিক শহরের চৌহদ্দি পর্যন্ত। আকাশচুম্বী অট্টালিকার গায়ে কুয়াশা যেমন ঝুলে থাকে ঠিক তেমনি ছনের ঘরে ছাউনিকেও দৃষ্টিসীমার আড়াল করে রাখে। আবার, ক্ষেতের আল ধরে কৃষকের ছুটে চলা আমাদের যেমন ভাবনার খোরাক যোগায় তেমনি শহুরে ব্যস্ততার প্রস্তুতির নেয়া লোকটাকে দেখেও শীতের তীব্রতা টের পাওয়া যায়। আর যেহেতু, এই শীতে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের দ্বার উন্মোচন করে তাই ফটোগ্রাফাররাও উন্মুখ হয়ে থাকে এই রূপকে ফ্রেমবন্দি করতে। তেমনি এক ফটোগ্রাফারের শীতের সৌন্দর্য খোঁজার ফটোগুলো নিয়েই আজকের ফটো ফিচার পাঠকদের জন্যে।

কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে দিনের প্রথম সূর্য কিরণটা যখন নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

সূর্যও যখন কুয়াশার কাছে পরাস্ত হয় তখন এমন ঘোরলাগা ভোরের দেখা মেলে। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

শীত কেবল সৌন্দর্য যাপন নয় বরংচ জীবনযাপনের কঠিন এক চ্যালেঞ্জেরও নাম। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

সূর্য উঠুক আর নাইবা উঠুক জীবন চলে তার নিজস্ব গতিতেই। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

হোক কর্মক্ষেত্র হোক স্কুল দূর-দূরান্ত থেকে এভাবেই কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে এগিয়ে চলে আগামীর পথিক। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

সূর্যও যেন হার মানে পাহাড় আর সবুজের সাথে শীতের সৌন্দর্যের কাছে। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

পেছনের কুয়াশাকে মাড়িয়ে এভাবেই জীবনের তাগিদে এগিয়ে যেতে হয় গ্রাম্য মানুষজনদের। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

পাতার ফাঁক গলে সূর্যের আলো প্রকৃতিকে নিজের রূপেই সাজায়। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

কুয়াশার চাদরে ভোর না গোধুলি তা বোঝাই মুশকিল। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

শীতের সকালের সৌন্দর্যের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয় মানুষ । ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

 

দিন আনা দিন খাওয়া অতি সাধারণ মানুষ তাই হয়তো বলে, ‘শীত তুমি দূর হও!’

 

লেখা: রোদসী ডেস্ক

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়প্রধান রচনা

আমাদের এই শীতের শহরে

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ১৩, ২০২০

পুঁথিতে যতই বলা হোক পৌষ-মাঘ শীতকাল; প্রমাণ সত্য হলো, এত লম্বা শীত আর কেউ খুঁজে পায় না এই শহরে। গৈ-গেরামে এখনো গাছ আছে, পালা আছে, আছে ফাঁকা ভূমি। তাই শীত নেমে আসে আলগোছে। আর শহরে দু-এক দফায় শীত বেড়াতে আসে শৈত্যপ্রবাহের রথে চড়ে। ঠিক এ সময়টা কেমন বর্ণময় পোশাকের নগরী হয়ে ওঠে আমাদের ধুলো আর ট্রাফিক জ্যামের এই ঢাকা শহর!

শীতের জন্য সারাটা বছর ঠিক যেন হাপিত্যেশ করে বসে থাকা! ভোরে উঠে চোখ রগড়ে কুয়াশার ফাঁক দিয়ে সূর্যকে চোখ মারব বা লেপ-বালাপোশ নরম করে গায়ে টেনে নিয়ে আরও একটু বিছানার ওম নিচ্ছি। কর্তা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আজও বাজারে যেতে হবে?’ গিন্নির গলায় আদুরে মেজাজ, ‘আজ একটু ওলকপি এনো প্লিজ! ফ্রিজে অনেকটা চিংড়ি আছে, কড়াইশুঁটি দিয়ে রাঁধব।’ অথবা ‘খেজুরের গুড় ওঠেনি গো? দুটো নারকেল এনো তাহলে। বাবার জন্য একটু পাটিসাপটা বানিয়ে নিয়ে যাব।’ এই হলো শীতের ঢাকার আম-বাঙালি বাড়ির ভোর।

ভোরে উঠে চোখ রগড়ে কুয়াশার ফাঁক দিয়ে সূর্য দেখা

কুয়াশার পরত ছিঁড়ে ঘুম ভাঙে ঢাকার। হ্যালোজেন নিভে যায়। আমি কান পেতে রই। উসখুস প্রাণ। খবরের কাগজ ছিনিয়ে নিয়ে দেখা শীতের ঢাকায় কোথায় কী আছে! আজ সিনেপ্লেক্সে সিনেমা তো কাল শিল্পকলায় চিত্র প্রদর্শনী। একাডেমিতে নাটক কিংবা মিলনমেলায় টেরাকোটা-ডোকরার আমন্ত্রণ। আর কয়েক দিন পরেই তো শীতের ঢাকার বড় পার্বণ ‘বাণিজ্য মেলা’ ঠিক এটা শেষ হতে না হতেই আরও বড় উৎসব ‘বইমেলা’।

রোববার ভোরে ঘুম ভাঙে কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুর দমের গন্ধে অথবা সরু-চাকলির সঙ্গে স্রেফ পয়রা গুড়ের মাখামাখিতে। খবরের কাগজ হাতে তুলতেই কয়েক’শ পিকনিক স্পট। এখন আর যেমন কেউ চড়ুইভাতি বলে না, তেমনই বাড়ির মেয়েদেরও মাঠে-ঘাটে-জঙ্গলে গিয়ে রান্নাবান্নাও করতে হয় না। ক্যাটারিংয়ের ঘাড়েই সব দায়িত্ব। চাই শুধু একফালি সোনালি রোদের সকাল, নীল আকাশ আর একচিলতে সবুজ খোলা মাঠ। ঠান্ডায় লং ড্রাইভ পুরো জমে ক্ষীর। অমৃত কমলালেবুর সকাল। বেগুনি-মুড়ি অথবা মোয়া। শীতকাল হলো বাঙালির কফি অ্যান্ড কেক মাস। তাই ওই কম্বোতে শীত-বাঙালির ফ্যাশন ইন। শীতের ঢাকায় বাঙালি চা কম খায়। ঊর্ধ্বমুখী হয় কফির চাহিদা। তবে ব্ল্যাক কফি নয়। অপর্যাপ্ত দুধ-চিনির কফি ছাড়া রোচে না তাদের। সন্ধেয় চাই স্যুপ। এটা নাকি শীতকালীন পানীয়! পাড়ায় পাড়ায় চলে ব্যাডমিন্টন। কখনো বা রাস্তা আটকে বারোয়ারি ক্রিকেট।

ঢাকায় শীতের সকালে এক কাপ চা যেন অমৃতের স্বাদ দেয়

ছোটবেলায় মা দক্ষিণের বারান্দায় পিঠে ভেজা চুল রোদের দিকে মেলে উল বুনতেন। এক কাঁটা সোজা, পরের কাঁটা উল্টো। ঘর বন্ধ করা শিখেছিলাম উলকাঁটায়। এখন সেই ঘর খুলতেই ভুলে যাই। শীতের মিঠে রোদ পিঠা নিয়ে কমলালেবুর দুপুরগুলো খুব মনে পড়ে। আর মনে পড়ে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার কথা। ক্লাসে ওঠার ক্ষণও পড়ত ঠিক বড়দিনের প্রাক্কালে। শীতের ভালো-মন্দ, সার্কাস, মেলা, চিড়িয়াখানা কিংবা চড়ুইভাতি-সবই নির্ভর করত সেই মাহেন্দ্রক্ষণের ওপর।

দুটো মাস বই তো নয়, যেন সম্বত্সরের পরম প্রাপ্তির আবহাওয়া। প্রবাসের বন্ধুদের বলে ফেলি, ‘শীতকালে আসছিস তো তোরা?’ আমার গর্বের মহানগরের রাজমুকুট যেন বড্ড বেশি ঝলমলে হয়ে ওঠে এই শীতে। মাঘের শীত, পৌষের পিঠা, লেপের ওম- সব আমাদের। তোরা দেখে যা একটি বার, কী সুখেই আছি আমরা! বিদেশে ঝোলাগুড় পাবি? টাকির পাটালি পাবি? রুপোর মতো চকচকে দেশি পার্শে পাবি? বাজারের থলি ভর্তি করে ইলিশ আর বোয়াল আনব তোদের জন্য। ঢাকার মাছের মতো স্বাদ আর কোথায় পাবি! ভাইয়ের মায়ের স্নেহের চেয়েও বেশি শীতের টাটকা মাছ। নলেন গুড়ের সন্দেশ পাবি। আছে তোদের দেশে?

শীতের পিঠার সমাহার

ঢাকায় আছে। হাতিরঝিলে বসে কেক দিয়ে কফি খাওয়াব। ওয়াটার কার দেখাব। বুড়িগঙ্গায় স্টিমার চড়াব। শিল্পকলায়-চারুকলায় উৎসব দেখাব। হর্টিকালচারের ফুলের মেলায় নিয়ে যাব। চামড়াজাত জিনিসের মেলা লেক্সপোতেও নিয়ে যেতে পারি। বাণিজ্য মেলা-বইমেলা এসবেও ঘোরাব। সদরঘাটেরর গোলগাল ভুটিয়া খালার শীতপোশাকের অস্থায়ী দোকানে যাবি? খুব সস্তা। সস্তার ফুটপাতও আছে আমাদের।  আন্ডার এস্টিমেট করিস না মোটেই। আমরা নিপাট আতিথেয়তার ধুনি জ্বালিয়ে বসে আছি সারা বছর তোদের জন্য। অতিথি দেব ভব!

একটিবার দেখে যা তোরা! বিশ্বায়নের ঢেউয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা। আমাদেরও শপিং মল আছে। প্রচুর ফ্লাইওভার আছে। মেন্ট্রোও হচ্ছে। মাল্টিপ্লেক্সের রমরমা দেখে যা। থার্টিফার্স্ট আর বড়দিনের ঢাকার আলোর রোশনাই? ঢাকার টিন-রা এখন তন্ত্রমন্ত্রে দীক্ষিত। শীতে আরও রঙিন হয় শাহবাগ-গুলশান। রেস্তোরাঁয় ক্রিসমাস ডিনারে জায়গা মেলে না জানিস! এত ভিড় সেখানে। ওয়াইজ ঘাটে শীতের ওম নিয়ে, বুড়িগঙ্গার ভাসমান বয়াগুলোর মতো জেরিয়াট্রিক সব নাগরিক নিয়ে, জানু-ভানু-কৃশানু পথশিশুদের নিয়ে আমরা বেশ ভালো আছি। কফি হাউসের বাড়বাড়ন্ত দেখলে তোরা অবাক হবি। হরেক কিসিমের কফির ঠেক এখন শহরে।

শহুরে নির্জন শীতের রাত। ছবি কৃতজ্ঞতা: Nafiul Hasan Nasim

আমাদের বাপ-দাদারা অনেক ঠাটঠমক শিখেছিলেন সাহেবদের কাছ থেকে। সওদাগরি অফিসে কাজ করেছেন। এক-আধ পেগ হুইস্কি বা ভ্যাট সিক্সটি নাইন তারাও খেতে শিখেছিলেন সাহেবদের হাত ধরেই। স্যুট-বুট পরেছেন শীতকালে। সেই স্যুট বানানোর ট্রাডিশন টিকিয়ে রেখেছিল তাদের সন্তানসন্ততিরাও। শীত পড়লে দূরে কোথাও, বহু দূরে তারা যান হাওয়া বদলে। ব্যাগ গুছিয়ে পৌষ মেলা বা বকখালি।

সেই শহরের শীতের ঘ্রাণ

এই শহরে তাদের উচ্চকিত কণ্ঠস্বরে ভর করে আর শীত আসে না। শোনা যায় না সেই ডাক, ‘এই লেপ-তোশক ধুনাইবেন’। শীত আসে না মাঠাওয়ালার মিহি গলার আওয়াজে। কুয়াশামাখা সকালের গায়ে সাইকেল ঠেস দিয়ে রেখে হকার আর গল্প করে না চায়ের দোকানে। পাড়ার মোড়ে অলস রোদে বসে গল্প করে না যুবকের দল। সেলুনের দরজায় বসে কেউ মন দিয়ে বসে পড়ে না খবরের কাগজ। শীত আর সেই সব দৃশ্যের হাত ধরে আসে না এই শহরে। যেমন আসত অনেক বছর আগে।

শীতে চাই আগুন পোহানোর মজা। ছবি কৃতজ্ঞতা: Huzzatul Mursalin

অনেক বছর আগে প্রথম শীত টের পাওয়া যেত উলের আগমন দেখে। সব বাড়িতেই সন্ধ্যাবেলা দেখা যেত উলের কাঁটায় মা-খালাদের আঙুল ভীষণ ব্যস্ত ফোড় দিতে। যে সময়টার কথা বলছি তখন ঘরে হাতে বোনা সোয়েটার পরা একরকম ট্রাডিশন ছিল। শীত যে তার মৃদু পা ফেলে এসে দাঁড়িয়েছে দুয়ারে সেটা টের পাইয়ে দিত ধুনুরিরা। সকালবেলা দুজন মানুষ বড় তুলাধোনার যন্ত্র কাঁধে গলির মোড়ে এসে হাঁক দিত। আমাদের একতলা, দোতলা বাড়ির ছাদে অথবা উঠানে শীত আসি আসি দিনে সতর্ক মানুষেরা ধুনে নিত ঘরের পুরোনো লেপ, বালিশ আর তোশকের তুলা। তখন অক্টোবরের শেষে ঠান্ডা পড়ত। ছুটির দিনের সকালে বসে এই তুলাধোনা দেখাও ছিল প্রিয় একটা কাজ। কেমন গন্ধ উঠত পুরোনো তুলার ভেতর থেকে। তুলাধোনার যন্ত্রে মৃদু গুম গুম শব্দ তুলে তারা কাজ করে যেত একমনে।

শীতের সকালটা যেন শুভ্রতা ছড়িয়ে মনটাকে চাঙ্গা করে তোলে। ছবি কৃতজ্ঞতা: Dream Maze

শীতের আগমনে পুরোনো ক্যালেন্ডার খুঁজে বের করে রাখা ছিল তখন আমাদের বড় একটা কাজ। সেই ক্যালেন্ডারের পাতা দিয়ে নতুন ক্লাসের বইয়ের মলাট হতো। আমরা খুঁজতাম বিভিন্ন জাপানি কোম্পানির ক্যালেন্ডারের শক্ত পৃষ্ঠা মলাটের জন্য। খুঁজতাম সুন্দর ছবি। চেষ্টা করতাম নিজের বইয়ের মলাটের ছবিটা যাতে সবচেয়ে সুন্দর হয়। এখন আর বইয়ের মলাট দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সেই ছোটাছুটি দেখি না। নেই ক্যালেন্ডারের পাতা জোগাড়ের তাড়না।

শীতকাল এলে পাড়ায় আমরা পিকনিক করতাম। কারও বাড়ির ছাদ অথবা শূন্য বাড়ির উঠান হতো পিকনিক স্পট। এই চড়ুইভাতির আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দিত শীত এসে গেছে। জমত আড্ডা। এখন আর এই শহরের পাড়ায়, গলির অন্দরমহলে এ রকম গল্প জমে থাকে কি না জানা নেই। আমরা তখন শীতের নৈঃশব্দে, বন্ধুদের হাসি-গল্পের মধ্যে বসে শীতকে উপভোগ করতাম। তাকিয়ে থাকতাম চেনা শহরটার দিকে। শীত এখনো আসে প্রকৃতির নিয়ম মেনে। শুধু শহরটাই বদলে ফেলেছে তার রিংটোন।

শীত যেন শহুরে জীবন থেকে মুক্তি চায়। ছবি কৃতজ্ঞতা: AB Momin

শীতবন্দনা, শীতের উষ্ণতা

একদা, একসময় ঠিকঠাক ঋতু বেয়ে বেয়ে শীত নামত এই শহরে, সারা দেশে। বইয়ের পাতায় এখানো আছে প্রাচীন বয়ান, ‘পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল’। শীতে অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে, শীতের প্রকোপে রোগবালাইয়ে ধরছে অনেককে; এসব তো আর নতুন কিছু নয়। তবে এটা তো ঠিক যে এখন আর গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কষ্ট পায় না মানুষ। দিনে দিনে দেশ তো একটা জায়গায় অন্তত পৌঁছেছে! আর পুঁথিতে যতই বলা হোক পৌষ-মাঘ শীতকাল; প্রমাণ সত্য হলো, এত লম্বা শীত আর কেউ খুঁজে পায় না এই শহরে। গৈ-গেরামে এখনো গাছ আছে, পালা আছে, আছে ফাঁকা ভূমি। তাই শীত নেমে আসে আলগোছে। আর শহরে দু-এক দফায় শীত বেড়াতে আসে শৈত্যপ্রবাহের রথে চড়ে। ঠিক এ সময়টা কেমন বর্ণময় পোশাকের নগরী হয়ে ওঠে আমাদের ধুলো আর ট্রাফিক জ্যামের এই ঢাকা শহর!

শহরে হয়তো নয়, গ্রামে গ্রামে একটা কথা এখনো খুব চলে, ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’। গত কয়েক বছর মাঘের শীতে বাঘ তো দূরের কথা, মানুষও কাঁপেনি এই শহরে। রাতে একটু শীত, সকালে একটু শীতের হাওয়া আর সারা দিন চৈত্রমাসের মতো গরম ছিল ঢাকা শহরে। শীত যে নানা কারণে একটা মজার সময়, উপভোগের কাল, অনেক গল্প বলার, অনেক কাছাকাছি হওয়ার সময় এটা ভুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে কয়েক বছর ধরে।

শহুরে শীতের সকাল। ছবি কৃতজ্ঞতা: Mirza Zahidul Alam Shawon

শীত নিয়ে পৃথিবীময় এবং এ দেশেও অনেক অনেক গল্প আছে। আছে শীতকালের অনেক অনেক উৎসব। পৃথিবীর আরেক প্রান্ত আমেরিকা-কানাডায় এখন বরফ জমানো শীত নেমে এসেছে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত জমে তুষার। আবার অস্ট্রেলিয়ার বাতাস বইছে দাবদাহ নিয়ে। বাংলাদেশ সেই যে নাতিশীতোষ্ণ; না শীত না গরম।

তবে গতবার দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ৬৮ বছরের শীতের রেকর্ড ভেঙেছে। পৌষ মাসের ২৫ তারিখে সেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই রেকর্ড দেখে মার্কিন মুলুক, কানাডা বা ইউরোপের দেশে দেশে থাকা বাঙালিদের কেউ কেউ পাশফেরানো হাসি হাসতে পারে; কিন্তু দেশের উত্তরের মানুষের জন্য এটা একটা নিদানকালই, বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া অতি সাধারণ মানুষের জন্য। তারা বলতেই পারে, ‘শীত তুমি দূর হও’।

শীতের রাতের বুয়েটের রূপ। ছবি কৃতজ্ঞতা: Matiur Rahman Minar

তবে এই আমি ভীষণ করে ভক্ত শীতাকাঙ্ক্ষী বাংলা ভাষার অন্য রকম তেজের-মেজাজের কবি ভাস্কর চক্রবর্তী এর। তিনি শীত আকাঙ্ক্ষা করে (হয়তো) লিখেছেন, ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’। এখন শীতকাল এলেই এই কবি, তার কবিতার কথা আমাদের মনে পড়ে যায়। শীত নিয়ে অনেক বন্দনা হয় লেখায়-কবিতায়। শীত আসছে এই ভরসায় শহরের তাপমাত্রা একটু একটু করে কমতে থাকে। প্রাণহীন শহর শীতে ভর করে হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। আবার শীত এলে এই শহরের অনেক মানুষ পর্যটনে যায় দূর পাহাড়, সমুদ্র এবং কেউ কেউ পরদেশে। শীতের উষ্ণতা গায়ে মাখতে কেউ কেউ বরফনগরীও দেখতে যায়! আর শীতের বাতাসে এখনো ভেসে আসে পিঠার ঘ্রাণ, কুয়াশার সঙ্গে মিশে যায় পিঠার শরীর থেকে বের হওয়া ধোয়া।

শীত-রাত ঢের দূরে, অস্থি তবু কেঁপে ওঠে শীতে!

শাদা হাত দুটো শাদা হয়ে হাড় হয়ে মৃত্যুর খবর

একবার মনে আনে, চোখ বুজে তবু কি ভুলিতে

পারি এই দিনগুলো! আমাদের রক্তের ভিতর

বরফের মতো শীত, আগুনের মতো তবু জ্বর!

শীত-রাত বাড়ে আরও, নক্ষত্রেরা যেতেছে হারায়ে,

ছাইয়ে যে আগুন ছিল সেই সবও হয়ে যায় ছাই!

তবুও আরেকবার সব ভস্মে অন্তরের আগুন ধরাই!

কবি জীবনানন্দ দাশ, যিনি শিশিরের শব্দ এঁকেছেন কবিতায়, তিনি কবিতায় কবিতায় এমনি করে শীতের বন্দনা করেছেন। শীতের লাবণ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়ে উঠেছেন,

শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে।

পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।

আর ওই যে শীত সকালের রোদ! সুকান্ত ভট্টাচার্য শীত সকালের রোদকে বলেছিলেন সোনার চেয়েও দামি। তিনি শীতের সূর্যের কাছে আলো আর উত্তাপ প্রার্থনা করেছিলেন রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটার জন্য। বিশ্বযুদ্ধোত্তর কলকাতা শহরে তখন পথের ধারের মানুষ, উলঙ্গ ছেলের জন্য শীত আটকানো ছিল বড় যুদ্ধ। দিন পাল্টেছে। বদলে যাওয়া সময়ে শীতের রং-রূপ-ঘ্রাণও বদলে গেছে। তাই বদলে যাওয়া বাংলার শীতের কাছে আমরা নতুন করে উষ্ণতা খুঁজে ফিরি। শীতের সূর্যের কাছে চাই অন্য রকম আলো, ভিন্ন রকম উত্তাপ।

শীত যেন আস্ত শহরটাতেও কাঁপন ধরিয়ে দেয়। ছবি কৃতজ্ঞতা: Md. Raz

শীত আছে শীত নেই

এই মাঘে প্রকৃতির আচরণ বোঝা মুশকিল। কখনো দেখা যাচ্ছে বসন্তের মতো একটা গরম-গরম ভাব, আবার কখনো হি হি শীত। এই তো, মাত্র কদিন আগে ফেনীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। রাজধানী ঢাকায়ও সেদিন ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৌষ মাস শুরু হতে না-হতেই যেন চিরচেনা আচরণ করছে। বইতে শুরু করেছে শৈত্যপ্রবাহ। তবে পৌষ শীতের দাপট চললেও রাজধানী ঢাকায় এর একটা নেই।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, অবকাঠামোগত কারণ, বিপুলসংখ্যক যান চলাচল ও সুউচ্চ ভবনের কারণে ঢাকার বুকে এখন আর শীত জেঁকে বসতে পারছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করলে ঢাকা শহরে তাপমাত্রা কখনো কখনো ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেও নেমে যায়। গত বছর ৮ জানুয়ারি সারা দেশে হাড়কাঁপানো শীত পড়লে ঢাকার তাপমাত্রাও হয় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার এখনো শৈত্যপ্রবাহের পরশ পাননি ঢাকাবাসী। আর ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা না নামলে আবহাওয়াবিদেরা শৈত্যপ্রবাহ বলেন না।

শীতের ধোঁয়া উঠা আমেজ। ছবি কৃতজ্ঞতা: Mohhamad Moniruzzaman

শীত-সংগীতের শহর

ডিসেম্বর এসে গেছে; শীতও। শীতের সঙ্গে সংগীতের একটা প্রাচীন সখ্য আছে। শীত এলেই সংগীতশিল্পীরা চনমনে হয়ে ওঠেন। আয়োজকেরা ব্যস্ত হয়ে যান নানা মাত্রিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে। দেশজুড়ে শুরু হয় দেশীয় শিল্পী আর ব্যান্ডের অংশগ্রহণে তারুণ্যদীপ্ত অগুনতি কনসার্ট। যার বেশির ভাগই ঘটে মাঠের ওপর মুক্ত আকাশের নিচে প্রায় রাতভর। তবে শেষ ১০ বছরে শীতকেন্দ্রিক এই ঐতিহ্যবাহী সংগীত উৎসবে ভাটা পড়েছে ক্রমে। কারণ, নিরাপত্তা আর অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার অজুহাত; অনুমতি মিলছিল না মাঠের অথবা কনসার্টের। ফলে শিল্পীদের অংশগ্রহণে শীতকেন্দ্রিক বিরামহীন কনসার্টের উৎসব এই বাংলা থেকে অচেনা হয়ে গেছে প্রায়। এখন আর এক মঞ্চে পাওয়া যায় না নগরবাউল জেমস, মাইলস, ওয়ারফেজ, ফিডব্যাক, এলআরবি, অর্থহীন ও সুমন, শিরোনামহীন, ব্ল্যাক, নির্ঝর, আর্টসেল কিংবা কুমার বিশ্বজিৎ, আসিফ, মনির খান, হাবিব, হৃদয় খান, মেহরীন, তিশমা, মিলাদের।

শীতের সন্ধ্যায় টিএসসিতে এখনো বসে গানের আসর। ছবি কৃতজ্ঞতা: Mashrik Fayaz

চলতি প্রজন্মের সিংহভাগ শিল্পী তো দেশীয় সংগীতের শীতকেন্দ্রিক এই উৎসব চোখে-চেখে দেখারও তেমন সুযোগ পায়নি। তবে সংগীতময় শীতের দিন আবারও ফিরছে এই শহরে। শুধু ফেরাই নয়, যাকে বলে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। শীতেই এখন এই নগরে হচ্ছে বড় বড় সব কনসার্ট আর মিউজিক ফেস্ট।

লেখা : জয়িতা রহমান

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিল্প ও সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদের বিয়ের স্মৃতি

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ৮, ২০২০

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গুলতেকিন খানকে। ১৯৭৩ সালের ২৮ এপ্রিল তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন পার করে ২০০৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। ২০১২ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরলোকগমন করেন। এখন শীতকাল। চলছে বিয়ের মৌসুম। রোদসীর পাঠকদের জন্য থাকল হুমায়ূন আহমেদ এবং গুলতেকিন খানের বিয়ের সেই স্মৃতি।

গুলতেকিনের সঙ্গে বিয়ে হয় এমন ঝোঁকের মাথায় তখন আমি হতদরিদ্র। লেকচারার হিসেবে ইউনিভার্সিটি থেকে সব মিলিয়ে সাত/আটশো টাকা পাই। দুই ভাইবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবর রোডের এক বাসায় থাকি। সে বাসা সরকারি বাসা। এভিকেশন নোটিশ হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিজে এসে বলে গেছেন বাড়ি ছেড়ে দিতে। পনেরো দিনের নোটিশ। বাড়ি না ছাড়লে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হবে। টাকা পয়সার দিক দিয়ে একেবারে নিঃস্ব। মাসের শেষের দিকে বেশির ভাগ সময়ই বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে আসার পয়সাও থাকে না। হেঁটে হেঁটে আমি ক্লাসে যাই। ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত হয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি। নিতান্ত পাগল না হলে এমন অবস্থায় কেউ বিয়ের চিন্তা করে না।

আমার মনে হলো গুলতেকিন নামের এই বালিকাটিকে পাশে না পেলে আমার চলবে না। গুলতেকিনের মা-বাবা আমার কাছে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। বড় মেয়েরই বিয়ে হয়নি। ক্লাস টেনে পড়া মেয়ের বিয়ে হবে কি করে? কি করা যায় কিছুই ভেবে পাই না। একদিন গুলতেকিন ডিপার্টমেন্টে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

হুমায়ূন আহমেদ এবং গুলতেকিন খানের দুর্লভ ছবি।

আমি বললাম, ‘চল এক কাজ করি- আমরা কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।’

সে চোখ বড় বড় করে বলল, ‘কেন? কোর্টে গিয়ে বিয়ে করব কেন?’

‘খুব মজা হবে। নতুন ধরনের হবে। ব্যাপারটা খুব নাটকীয় না? তোমাকে ভাবার জন্য তিন মিনিট সময় দিলাম। তুমি ভেবে দেখ, তারপর বল।’

সে ভাবার জন্য তিন মিনিটের মতো দীর্ঘ সময় নিল না। এক মিনিট পরেই বলল, ‘চলুন যাই। কিন্তু আমি তো শাড়ি পরে আসিনি। সালোয়ার-কামিজ পরে কি বিয়ে করা যায়?’

কোর্টে শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল না। কনের বয়স চৌদ্দ। এই বয়সে বিয়ে হয় না। আমি কোন উপায় না দেখে তার ফুপু খালেদা হাবীবকে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখলাম। আমার সাহিত্যপ্রতিভার পুরোটাই ঢেলে দিলাম চিঠিতে। চিঠি পড়ে তিনি বিস্মিত এবং খুব সম্ভব মুগ্ধ। কারণ তিনি গুলতেকিনের পরিবারের সবাইকে ডেকে দৃঢ় গলায় বললেন, ‘এই ছেলের সঙ্গেই গুলতেকিনের বিয়ে দিতে হবে। অন্য কোথাও নয়। ভবিষ্যৎ-এ যা হওয়ার হবে।’ আর আমার চিঠির জবাবে তিনি লিখলেন, ‘আপনার অদ্ভুত চিঠি পেয়েছি। এত বানান ভুল কেন?’

তারা ক্লাস টেনে পড়া মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে বিয়ে হবে। এই খবরে আমার এবং মার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। হাতে একটা পয়সা নেই। যে কোন মুহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। এই অবস্থায় বিয়ে। কে জানে নতুন বউ নিয়ে বাসায় এসে দেখা যাবে পুলিশ দিয়ে সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নতুন বউ নিয়ে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে।

হুমায়ূন আহমেদের পুরো পরিবার।

মা তাঁর সর্বশেষ সম্বল বাবার দেয়া হাতের এক জোড়া বালা, যা তিনি চরম দুঃসময়েও যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছিলেন, বিক্রি করে বিয়ের বাজার করলেন। জিনিসপত্রগুলি খুব সস্তা ধরনের কিন্তু তাতে মিশে গেল আমার বাবা এবং মার ভালোবাসা। আমি জানতাম ভালোবাসার এই কল্যাণময় স্পর্শেই আমার অনিশ্চয়তা, হতাশা কেটে যাবে।

বউ নিয়ে বাসায় ফিরে বড় ধরনের চমক পেলাম। আমার শোবার ঘরটি অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে আমার ছোট বোন। আমাদের কোন ফ্যান ছিল না। কিন্তু আজ মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে। বিছানায় কি সুন্দর ভেলভেটের চাদর। খাটের পাশে সুন্দর দুটি বেতের চেয়ার। বেতের চেয়ারের পাশে ছোট্ট একটা টেবিলে একগাদা রক্ত গোলাপ। গোলাপের পাশে একটা চিঠিও পেলাম। মেজো বোন শিখুর লেখা চিঠি –

‘দাদা ভাই,

 

তুমি যে সব গান পছন্দ করতে তার সব ক’টি টেপ করা আছে। কথা বলতে বলতে তোমরা যদি ক্লান্ত হয়ে পড় তাহলে ইচ্ছা করলে গান শুনতে পার। দরজার কাছে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার রেখে দিয়েছি।’

ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করতেই সুচিত্রা মিত্রের কিন্নর কণ্ঠ ভেসে এল –

ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে এ ভালোবাসা?

গভীর আবেগে আমার চোখে জল এসে গেল। আমি সেই জল গোপন করবার জন্য জানালা দিয়ে তাকিয়ে বললাম, ‘কেমন লাগছে গুলতেকিন?’

সে নিচু গলায় বলল, ‘বুঝতে পারছি না। কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।’

‘ঘুম পাচ্ছে?’

‘না।’

সারা রাত আমরা গান শুনে কাটিয়ে দিলাম দু’জনের কেউই কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গান শোনা ছাড়া উপায় কি?  পরদিন ভোরবেলা খুব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটল। যাদের বাসা থেকে সিলিং ফ্যান ধার করে আনা হয়েছিল তারা ফ্যান খুলে নিয়ে গেল। গুলতেকিন বিস্মিত হয়ে বলল, ‘ওরা আমাদের ফ্যান খুলে নিচ্ছে কেন?’

আমি মাথা নিচু করে রইলাম। জবাব দিতে পারলাম না। বিছানার চমৎকার চাদর, বেতের চেয়ার, ক্যাসেট প্লেয়ার সবই তারা নিয়ে গেল। এমনকি টেবিলে রাখা সুন্দর ফুলদানিও অদৃশ্য। গুলতেকিন হতভম্ব। সে বলল, ‘এসব কি হচ্ছে বলুন তো? ওরা আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে কেন? আমরা বুঝি রাতে গান শুনব না?’

গুলতেকিনের প্রশ্নের জবাব দেবার মতো মানসিক অবস্থা তখন আমার নেই। আমার জন্য আরও বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে। বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে। এই কারণেই সবাই তড়িঘড়ি করে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।

মা পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে লজ্জায় কাঁপছি। আমার ছোট বোন এসে বলল, ‘দাদাভাই, তুমি ভাবিকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে চলে যাও। এই নোংরা ব্যাপারটা ভাবির সামনে না হওয়াই ভালো।’

হুমায়ূন আহমেদ, গুলতেকিন এবং তাদের পুত্র সন্তান নুহাশ।

আমি গুলতেকিনকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। বৈশাখ মাসের ঘন নীল আকাশ, পেঁজা তূলার স্তূপীকৃত মেঘ, চনমনে রোদ। আমরা রিকশা করে যাচ্ছি। হুড ফেলে দিয়েছি। আমার মনের গোপন ইচ্ছা – পৃথিবীর সবাই দেখুক, এই রূপবতী বালিকাটিকে আমি পাশে পেয়েছি। গভীর আনন্দে আমার হৃদয় পূর্ণ। বাসায় এখন কি হচ্ছে তা এখন আমার মাথায় নেই। ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়েও ভাবছি না।

বর্তমানটাই সত্যি। অতীত কিছু না। ভবিষ্যৎ তো দূরের ব্যাপার। আমরা বাস করি বর্তমানে – অতীতেও নয়, ভবিষ্যতেও নয়।

 

সূত্র: হুমায়ূন আহমেদের অনন্ত অম্বরে
ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • ওয়েডিং ডেস্টিনেশন

তুমিই রোদসী

  • স্বপ্ন দেখি নারী দিবসের দরকারই হবে না







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook