রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

সেক্স এডুকেশন

এই সংখ্যায়জীবনজীবনযাত্রাপ্যারেন্টিংসচেতনতা

কেন দরকার যৌনশিক্ষার

করেছে Sabiha Zaman নভেম্বর ২২, ২০২১

সুরাইয়া নাজনীন: শিশুকে যৌনশিক্ষা? ছি, ওর বয়স হয়েছে নাকি! আমাদের সমাজব্যবস্থায় অভিভাবকদের মুখে এসব কথা খুবই প্রচলিত। কিন্তু নিজের শিশুটিই যখন ঘর থেকে অ্যাবিউজিং হবে, তুমি ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না। কারণ, শিশুটিই জানে না অ্যাবিউজিং কী? তাই শারীরিক স্পর্শের সীমা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন প্রত্যেক শিশুর।

তুমি ভাবছ সন্তানের স্কুলে যাওয়ার বয়স যেহেতু হয়নি, তাই এত তাড়াতাড়ি শিশুকে যৌনশিক্ষা দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু গবেষকেরা এমনটা মনে করেন না। তাদের মতে, শিশুকে ডায়াপার পরার বয়স থেকেই যৌনশিক্ষা দেওয়া উচিত।

রুটগার্স ইউনিভার্সিটির যৌনশিক্ষাবিষয়ক সংস্থা আনসার-এর কার্যনির্বাহী পরিচালক ড্যান রাইস বলেন, ‘শিশু বয়স থেকেই যৌনশিক্ষার সূচনা হওয়া উচিত। বিকাশসাধনের শুরু থেকে শিশুরা সবকিছু বোঝার চেষ্টা করে এবং তাদের শরীর হলো এসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
শিশুকে যৌনশিক্ষা দেওয়ার মানে কেবল এটা নয় যে শারীরিক বিকাশসাধন ও বাচ্চা তৈরির প্রক্রিয়া বোঝাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শারীরিক স্পর্শের সীমা সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা। কারা স্পর্শ করতে পারবে এবং কারা পারবে না, তা সম্পর্কে জানাতে হবে।

যৌনশিক্ষা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তিকরণ খুবই জরুরি, যা আমাদের দেশে নেই। কথিত সমাজতান্ত্রিক মনোভাব পোষণ করে দোষ চাপাতে থাকি ধর্ষণের শিকার নারীর, কেন সে গেল? কেন সে করল? ইচ্ছা না থাকলে কেনই-বা যাবে? নানা অজুহাত, কারণের ডামাডোলে বিষয়টাকে ঠুনকো করে ফেলার চেষ্টা এবং আর একটি ধষর্ণের প্রশ্রয় দিয়ে থাকি আমরা নিজেরা। এমনটাই বললেন ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের সম্পাদক শারমিন শামস্।

তিনি আরও বলেন, যৌনশিক্ষা শুধু ধর্ষণই কমাবে না, বরং এটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য বড় গুরুত্বের বারতা নিয়ে আসবে। জন্মপ্রক্রিয়ায় যৌনতা কোনো খারাপ বিষয় নয়, হ্যাঁ খারাপ হতে পারে যখন অপরিণত বয়সে এর প্রভাব বিস্তার করা হয়। সুস্থ যৌনতা শেখা, বোঝার জন্যই যৌনশিক্ষার প্রয়োজন অনেক বেশি।


পর্নো প্রবণতা ধর্ষককে কতটুকু প্রভাবিত করে। এই প্রশ্নে তিনি বলেন, পর্নো তো সবাই দেখে। ছেলে কি মেয়ে? কিন্তু বয়সটা বুঝতে হবে। অপরিণত বয়সে তুমি তোমার সন্তানকে পর্নো দেখার সুযোগ করে দিলে সে তো দেখবেই। এখন কথা হচ্ছে আমি প্যারেন্ট হয়ে সন্তানকে পর্নো দেখার সুযোগ কেন দেব? ঘাপলা এখানেই, তুমি বুঝতেই পারছ না সে আসক্ত। কারণ তার পারিপার্শি¦ক পরিবেশ আবদ্ধ। ডিভাইসকেন্দ্রিক। কর্মব্যস্ততার জন্য তুমি তাকে খেয়াল রাখার সময় সুযোগ পাচ্ছ না, যা তোমার সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য খুবই জরুরি। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও পর্নো একটি ক্ষতির কারণ, যখন সে আসক্ত হয়। তখন সেই মানুষটি পরিবার তথা সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এসব খারাপ প্রবণতা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের চারপাশটাকে ভালো বিনোদনের আওতাভুক্ত করতে হবে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ‘আনুশকা ধর্ষণ এবং হত্যা’ এই বিষয়টাকে অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তুমি কী বলবে? শারমিন শামস্ এ বিষয়ে বলেন, হ্যাঁ, সবাই ঘটনার কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে। এতে ধর্ষককে ইন্ধন দেওয়া হয়, ধর্ষকের অপরাধকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা করছে, তারাও সমান অপরাধী। এখন শোনা যাচ্ছে ধর্ষক নাকি আনুশকার ওপর বিকৃত যৌনতার পরীক্ষা চালিয়েছিল, যা তার টার্গেট অনেক আগে থেকেই। এটাই তার প্রথম অপরাধ নয়, এ ছাড়াও তাকে নিয়ে এলাকায় অনেক কুকর্মের অভিযোগ আছে বলে জানা যাচ্ছে।
সমাজ পাল্টাতে হলে কিসে বেশি জোর দিতে হবে? তিনি বলেন, আইন করা হয়েছে মাসিক চলাকালীন সময় বিয়ে পড়ানো যাবে না, তখন নাকি মেয়েটা অপবিত্র থাকে। এই বিষয়টা ঠিক আমার মাথায় ঢুকল না। সৃষ্টির শুরু কিংবা সন্তান জন্মদানে একজন নারীর মাসিক ছাড়া কীভাবে সম্ভব? কই তখন তো কোনো আইন হলো না, মাসিক চলাকালে নারী সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। এসব আজব ফতোয়ার দেশে কী আর আশা করা সম্ভব! তাই আমাদের গোড়ায় হাত দিতে হবে। পরিবারের সচেতনতা বাড়াতে হবে বহুগুণে। সন্তানকে সময় দিতে হবে। শেয়ারিংয়ে এগিয়ে আসতে হবে। একটু কৌশলে সন্তানের ভালো লাগা, খারাপ লাগা খুঁজে বের করতে হবে।

 


শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ ও প্যারেন্টিং এক্সপার্ট আঞ্জুমান পারভীন বলেন, যৌনশিক্ষা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি, তবে তা হতে হবে একদম ছোটবেলা থেকেই অর্থাৎ গ্রেড ওয়ান থেকে। শরীরের নানা অর্গান পড়ানোর সময় আমরা লজ্জার স্থানগুলোকে এড়িয়ে যাই, ওদের মনের মধ্যে একটি গোপনীয়তার জায়গা তৈরি করে দিই। যখন তারা বড় হতে থাকে, এসব বিষয়ের প্রতি আগ্রহও বাড়ে। ওখান থেকেই অপরাধগুলোর জন্ম হয়। সে জন্য বাবা-মায়ের শিক্ষাটাও বাড়াতে হবে। স্কুল থেকে যদি মাঝেমধ্যে খোলা আলোচনার সেমিনার করা হয় অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সমন্বয়ে তাহলে মানসিক সংকোচ, সংকট কাটানো সম্ভব। জাতিগতভাবে আমাদের ইগনোর করার প্রবণতা আছে যেগুলো বড় বড় বিপদ ডেকে আনে জীবনের নানা বাঁকে। শিশু হঠাৎ করেই কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু আমরা অভিভাবকরা এর মানেই বুঝতে পারছি না। এর ছোট ছোট লক্ষণ আগে থেকেই বোঝা যায় যেমন মিথ্যা বলা, শিক্ষকদের বুলিং করা, কাউকে কষ্ট দিয়ে মজা পাওয়া এগুলো সন্তানের মধ্য দেখলে ভাবতে হবে সে স্বাভাবিক অবস্থানে নেই। এগুলো ঠিক করতে বকাঝকা দেওয়া যাবে না, কৌশলে এগোতে হবে। সে জন্য বাবা-মায়ের প্যারেন্টিং শিক্ষাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে কি শিশুর পর্নো আসক্তির জন্য বাবা-মা দায়ী? তিনি বলেন, পরোক্ষভাবে অবশ্যই দায়ী। প্রথমত গোপনীয়তার বেড়াজাল ভাঙতে হবে। এসব বিষয়ে পরিচ্ছন্ন আলোচনার জায়গা তৈরি করতে হবে। পরিবার থেকে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সে যদি জানতে পারে যৌনতা কী, এটা জীবনেরই অংশ, তাহলে সে ঘরে দরজা বন্ধ করে পর্নো দেখবে না।
ইদানীং দেখা যাচ্ছে মাদক গ্রহণ ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে, এই বিষয়ে আপনি কী মনে করেন? আঞ্জুমান পারভীন বলেন, ‘মাদকেও আধুনিকতা চলে এসেছে, যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকারক। জানলে অবাক হবেন সম্প্রতি আমার এক ক্লায়েন্ট আমাকে এসে বললেন, ওনার স্কুলে পড়ুয়া সন্তান অনলাইন থেকে ব্রাউনি অর্ডার করেছে, দাম ১৫০০ টাকা। দাম শুনে তার মা একটু অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছে এবং ঘটনাটা খতিয়ে দেখে, ব্রাউনির সঙ্গে এসেছে ইয়াবা। তাহলে আমাদের সমাজব্যবস্থা, আধুনিকতা কোন জায়গায় পৌঁছে গেছে? বর্তমানে মায়েরা সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত থাকছেন আর বাবারা টাকার পেছনে ছুটছেন। এতে একেকটি পরিবার নীরবে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আগের দিনে সন্তানের খেলাধুলা করার সুযোগ ছিল, বাড়িতে বসেই ইনডোর গেমগুলো পরিচালিত হতো। সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে শিশু খারাপ জগতে ঢোকার সুযোগ পেত না।’
আমাদের দেশে সাধারণ মানুষেরই যৌনশিক্ষা পাওয়ার কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। বরং এটা এমন এক নিষিদ্ধ বিষয় যে এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক কাউকে প্রশ্ন করাই যেন এক অপরাধ। উচ্চমাধ্যমিকের জীববিজ্ঞান বইয়ে মানুষর জননাঙ্গ সম্পর্কে একটি অধ্যায় ছিল, সেখান থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসত বটে, তবে সেই অধ্যায় শিক্ষকেরা ক্লাসে বা প্রাইভেট টিউশনিতে পড়াতেন না। বলতেন নিজে নিজে শিখে নিতে।

 


আমাদের সমাজে কিশোর-কিশোরী বা যুবক-যুবতীদের যৌনতাবিষয়ক জ্ঞান পাওয়ার মূল উৎস পর্ণ। অবাস্তব, অস্বাভাবিক এসব ফিল্ম দেখে যৌনতাবিষয়ক যে জ্ঞান তাদের হয়, তাতে ধর্ষণ, সম্মতি, স্বাভাবিক যৌনজীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন বরং মনে হতে পারে, যৌনসঙ্গম হচ্ছে নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব খাটানো, যা পুরুষত্বের বহিঃপ্রকাশ।
যৌনশিক্ষা ধর্ষণ প্রতিরোধে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা রকম মন্তব্য রয়েছে। ধর্ষণ রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ আর নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি যৌনশিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। মানুষের যৌনাঙ্গ, যৌনতা, সম্মতি, সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষের প্রকৃত জ্ঞান জরুরি আর এসব জানলে অনেক ভ্রান্ত ধারণা এমনিতেই ঘুচে যাবে, কমবে নারী-পুরুষের মানসিক দূরত্ব।
একজন ছেলেমেয়ে কোথায় কোথায় সমস্যায় পড়তে পারে সেগুলো নিয়ে পুরো বিশ্বে কথা হচ্ছে কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো এ বিষয়গুলো লুকিয়ে রাখার মানসিকতা কাজ করে। যৌনশিক্ষাকে স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলক করা হলে সেটি সবচেয়ে ভালো দিক হতো, যেখানে শিক্ষার্থীরা কী করা যাবে বা যাবে না, কীভাবে করা যেতে পাওে, সেসব বিষয়ে শিক্ষকেরা তাদের মতো করে নানা উদাহরণের শিক্ষা দিতে পারেন। আশঙ্কাজনকভাবে দেশে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অশ্লীলতা ও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদক, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, আইনের ধীরগতি, শিশুরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও প্রতিরোধে অক্ষম এবং নানা হুমকি দিয়ে শিশুদের চুপ করিয়ে রাখা যায় বলেই শিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। একই সঙ্গে মাদক, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, আইনের ধীরগতি ও বৈষম্যমূলক প্রয়োগ এবং নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ষককে নানাভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।

ছবি: ইন্টারনেট

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনবিশেষ রচনা

ধর্ষণের প্রধান দরজা পর্নোগ্রাফি

করেছে Sabiha Zaman অক্টোবর ১৭, ২০২১

সুরাইয়া নাজনীন

সাময়িক আনন্দ খুঁজতে মানুষের হাতে হাতে মুঠোফোন। আচরণে লুকোছাপা ভাব, তবে চেহারায় কখনো কখনো অপরাধবোধ। কেউ কেউ মনে করে জীবনের নিখাদ আনন্দ বুঝি মুঠোফোনের এই স্ক্রিনে। এসব গুমোট আচরণের অন্ধকার অধ্যায় হলো পর্নোগ্রাফি। যা একটু একটু করে শেষ করছে মানুষের জীবন। বেড়ে চলেছে ধর্ষণ। ইন্টারনেটের অর্ধেকটাই শেষ হচ্ছে এসব ব্যবহারকারীর জন্য। ইতিমধ্যে সরকার ২২ হাজার পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ করেছে। তবে সাইট বন্ধ করেও পর্নো দেখা কি বন্ধ হচ্ছে? এ বিষয় নিয়ে রোদসীর সঙ্গে কথা বললেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার-

মানসিকতা কি বদলাচ্ছে?
প্রতিদিন বাড়ছে ধর্ষণের হার। তবে ‘পর্নোগ্রাফি’ এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। সে জন্য সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এরপরও কি ব্যবহারকারীরা থেমে আছে? এই প্রশ্নে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, যুগ যুগ ধরে ‘পর্নোগ্রাফি’ চলে আসছে। তবে হ্যাঁ, এখন তার ধরন বদলেছে। আমরা যেভাবে সম্ভব, যতটুকু সম্ভব উদ্যোগ নিয়েছি, সব সময় তৎপর এ বিষয়ে। কিন্তু মানুষের স্বভাব আর মানসিকতার পরিবর্তন না হলে যতই আমরা সচেতন হই, এটা কখনো থামানো যাবে না।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার

 

তাহলে বিকল্প পন্থা ভিপিএন বন্ধ করতে কেন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?
মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেখেন, কোনো অভিভাবক যদি তার সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করতে না পারে, তাহলে সরকারকে দোষ দিয়ে কী লাভ। রাষ্ট্র ততটুকুই করতে পারে, যতটুকু তার আয়ত্তে আছে। ভিপিএন বন্ধ করলে দেশের অর্থনীতির বারোটা বেজে যাবে। আমাদের তো সব বিষয় মাথায় নিয়ে চলতে হয়। তাই আমি বারবার বলি, বলতে চাই, আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিজে বদলালে দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

ধর্ষণ বাড়ার প্রধান কারণ পর্নোগ্রাফি
দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে পর্নোগ্রাফি বড় কারণ বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ দুনিয়ায় যেকোনো ক্ষেত্রে বিচরণ এখন অনেক সহজ হওয়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের কিশোর-তরুণেরা নানাভাবে পর্নো সাইট থেকে শুরু করে সব জায়গায় প্রবেশ করতে পারে। যদিও সরকার অনেকগুলো পর্নো সাইট বন্ধ করে রেখেছে, কিন্তু অন্য কোনো সাইটের মাধ্যমে সেগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। সেখানে অন্য বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম আছে, যা আমাদের দেশের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেগুলো আমাদের ছেলেমেয়েরা দেখে থাকে এবং সেগুলো দেখে তারা প্রভাবিত হয়।
তবে আইন কঠোর করলেই সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হবে না। আমি মনে করি, আইন কঠোর করে বা আইন প্রয়োগ করে এটি থেকে মুক্ত করা সহজ কাজ নয়। এটির জন্য আমাদের মনোজগতের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

পর্নোগ্রাফি যখন ট্রেন্ডি
যদি একটু পেছনে তাকাই, ২০১৯ সালে শুধু ফ্রি পর্নোগ্রাফি সাইটগুলোতেই মানুষ ভিজিট করেছে ৪২ বিলিয়ন বার বা ৪ হাজার ২০০ কোটি বার। এই সংখ্যা থেকেই ধারণা করা যায় যে পর্নোগ্রাফি আসক্তি কতটা বিস্তৃত। মানুষ পর্নোগ্রাফি দেখে আনন্দ লাভের আশায়, ভালোলাগার জন্য। কিন্তু এই আসক্তি, এই ভালোলাগার পেছনে যে কালো একটি দিক রয়েছে, সেটা সম্পর্কে কয়জন চিন্তা করি? পর্নোগ্রাফির খারাপ প্রভাব আমাদের জীবনে, আমাদের সমাজে কীভাবে পড়ছে, সে বিষয়ে বললেন সেক্স মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুষমা রেজা। তিনি বলেন, শুনলে হয়তো অনেকে অবাক হবেন, পর্নোগ্রাফি এখন রীতিমতো ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। কে কত আপডেট, এ নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। শুধু ছেলেরাই নয়, এ জগতে বিচরণ করছে মেয়েরাও। ৩০ শতাংশ মেয়ে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।

বাস্তব জীবনে যেমন প্রভাব
পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিরা বাস্তব জীবনে ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। তারা সব সময় ভাবে কিংবা ভাবতে শুরু করে তার পার্টনার ঠিক ওই রকমই হবে, যে রকমটা পর্নোগ্রাফিতে দেখায়। কিন্তু তারা বুঝতে চায় না ওইটা নিতান্তই অভিনয়, এমনটাই বললেন ডা. সুষমা রেজা। তখন সঙ্গীর প্রতি হতাশামূলক মনোভাব তৈরি হয়। সঙ্গীকে আর ভালো লাগে না। বিকল্প খুঁজতে থাকে। এর পরেই শুরু হয় পরিবারে ভাঙন। অজান্তেই নিজের প্রতি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। তখন ভয়াবহ অন্যায় করতেও সময় লাগে না। ধীরে ধীরে নিজের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।

বাস্তব চিত্র
আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে নিকি ব্রায়ান্ট এখন যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনের আশ্রয় নিয়েছেন। ‘সেক্স বা যৌন সম্পর্কের বিষয়ে আমার যেসব ধারণা ছিল, পর্নোগ্রাফির কারণে সেসব বিকৃত হয়ে গেছে।’ বলছিলেন ২৫ বছর বয়সী নিকি ব্রায়ান্ট। তিনি কার্ডিফে একটি জিমের ম্যানেজার। তিনি জানান, শিশু বয়সেই তার পর্নোগ্রাফি দেখা শুরু হয়েছিল। নিকি বলেছেন, পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে পরবর্তী জীবনে সেক্স সম্পর্কে তার মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নিজের শরীর সম্পর্কে তার যে অনুভূতি ছিল, সেটাও ‘ধ্বংস’ হয়ে গেছে। শুধু নিকি একা নন, তার মতো এ রকম আরও অনেকেই পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার পর তাদের জীবনের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাজ্যে শিশুদের নিয়ে কাজ করে এ রকম একটি দাতব্য সংস্থা প্ল্যান ইউকে এবং ইনস্টিটিউট অব সাইকোসেক্সুয়াল মেডিসিন শিশুদের ওপর পর্নোগ্রাফির এই প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে পওে কী ধরনের বিপদ হতে পারে, সে বিষয়ে স্কুলে পড়ানো উচিত। যুক্তরাজ্যে ওয়েলসের, নিকি ব্রায়ান্ট যে অঞ্চলের, সেখানকার স্থানীয় সরকার বলেছে, কীভাবে পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়কে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তারা এখন সেই উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

গুরুত্বের তালিকায় সেক্স এডুকেশন
দেশে এখনো সেক্স এডুকেশন নিয়ে ততটা আলোচনা নেই। তবে দেশের বাইরে এর গুরুত্ব খুব বেড়েছে। সারা ব্রিটেনে ২০১৯ সালে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী লোকজনের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ শতাংশ নারী বলেছে যে জরিপের আগের মাসে তারা পর্নোগ্রাফি দেখেছে। তবে তাদের বেশির ভাগই বলেছে, পর্নোগ্রাফিতে যে সেক্স দেখানো হয়, তার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সেক্সের কোনো সম্পর্ক নেই। ‘পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে প্রশ্ন করতে গিয়ে ভয় পাওয়া চলবে না। তারা কী দেখে, কতটুকু দেখে এবং কখন তারা দেখে এসব জানা দরকার। এ বিষয়ে আমাদের অনেক শিক্ষার প্রয়োজন। বিশেষ করে যৌনশিক্ষা এবং সেখানে পর্নোগ্রাফিকেও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। সম্পর্ক কিংবা নারী ও পুরুষের ক্ষমতায়নের ওপর এর কী ধরনের প্রভাব পড়ে, এসব বিষয়ে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ বলা হচ্ছে, ২০২২ সাল থেকে ওয়েলসের পাঠ্যসূচিতে এসব বিষয় অনেক গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ইউকের রোজ ক্যাল্ডওয়েল বলেছেন, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে পর্নোগ্রাফিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেটি হবে বড় ধরনের অগ্রগতি। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ যৌনতা ও সম্পর্কের জন্য এই শিক্ষা তাদের প্রস্তুত করবে। শিক্ষকদেরও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।’

ছবি: ইন্টারনেট

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
এই সংখ্যায়জীবনযাত্রাসম্পাদকীয়

এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘সেক্স এডুকেশন’

করেছে Rodoshee সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

বলছি আমাদের নানী-দাদীদের সময়কার কথা। আট-দশ বছর বয়সে বিয়ে, ১২-১৪বছর বয়সের মধ্যে কোলে সন্তান আর ত্রিশ না পেরুতেই নানী-দাদী! সে সময় নিয়ম করে ফি বছর গর্ভবতী হতেন তারা। অজানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আর ‘বংশের বাতি’ পৃথিবীতে আনার তাগিদের কারণে প্রত্যেক বছর সন্তান নেয়া ছিলো একরকম স্বাভাবিক ঘটনা।

এরপর সময় বদলালো। সরকার এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসায় সচেতন হলাম আমরা। এলো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিপুল সহামার। ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ এই শ্লোগান থেকে আমরা চলে এলাম ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’-এই বিশ্বাসে। যে কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি বোধহয় এখন আর আমাদের মূল চিন্তার জায়গা নয়। মূল বিষয় দাঁড়াচ্ছে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সেটি। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি।

বিশ্বায়নের এই কালে জন্মনিয়ন্ত্রণের পরীক্ষিত অনেক পদ্ধতি আজকাল বাজারে সয়লাভ। অথচ আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো নারী কেন্দ্রিক। অথচ পুরুষসঙ্গীটিও জন্মনিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর এসব পদ্ধতি নারীর প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে বেশি কার্যকর। এতে নানা রকম শারীরিক ঝুঁকি থেকে নারী রেহাই পেতে পারে। অথচ কেবল পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্ম অহমের কারণে অনেক পুরুষই সে পথে হাটেন না। আমরা মনে করি সময় এসেছে পরিবর্তিত হবার। সংসারের অন্যান্য কজের মতো জন্মনিয়ন্ত্রণেরও স্বামী-স্ত্রী রাখতে পারে সমান অংশগ্রহণ।
আজকাল প্রচার মিডিয়া থেকে শুরু করে মাঠে-ঘাটে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যলয়ের দুয়ারে দুয়ারে দেখি আইপিল নিয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপন। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় হয়তো নেই, কিন্তু যে প্রক্রিয়ার আইপিল ব্যবহার হচ্ছে সেটি নিয়ে সচেতন হবার দরকার অবশ্যই আছে। পরিসংখ্যান বলছে, অরক্ষিত সঙ্গমের পর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল এখন বেশ ভালো মাত্রায় ভোক্তাপ্রিয়তা পেয়েছে। সব থেকে বেশি ক্রেতা মেয়েরা, যাদের বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে। গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই এই পিল সমান জনপ্রিয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে যে কেউ এই পিল সংগ্রহ করতে পারে। অথচ এই ওষধ বহু ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও এই মেয়েদের সচেতন করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর গোটা বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ গর্ভপাত করানো হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ করানো হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রায় পুরোটাই হয় উন্নয়নশীল দেশে। এর ফলে অন্তত ৭৮ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং আরও বিপুলসংখ্যক নারী স্থায়ী কিছু না কিছু সমস্যা নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে বাধ্য হয়।

আমি বলব এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘সেক্স এডুকেশন’। জরুরি জন্মনিরোধক পিলের ওপর ভরসা করে অবাধ সঙ্গমের আনন্দে গা ভাসানোর আগে একটু ধৈর্য ধরে অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জেনে রাখা অবশ্যই দরকার, এই পিল গর্ভধারণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারবে। তবে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস সি-জাতীয় ভয়ংকর রোগগুলোর আশঙ্কার কথা মনে রাখতে হবে সচেতন ভাবে!
সবার জন্য শুভকামনা।

লেখা : সাবিনা ইয়াসমীন

আরও লেখা : 

প্রথম সেক্সের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট- ১

সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট-২

সেক্স কোনো প্রতিযোগিতা নয়! পার্ট-৩

রোদসী/আরএস

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook