রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
ট্যাগ:

হানিমুন

ঘুরে বেড়াইরোমান্সরোমান্স রসায়ন

হানিমুনের সেরা দশ গন্তব্য

করেছে Sabiha Zaman ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২১

আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা অনেক। সাগর, পাহাড়, স্থাপত্য সব রকম পর্যটন আকর্ষণই আছে বাংলাদেশে। বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য হানিমুনে ঘুরে আসতে পারো এ রকমই জনপ্রিয় দশটি ভ্রমণ গন্তব্য তুলে ধরা হলো এখানে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। টেকনাফ থেকে ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এই দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ এ দ্বীপের আকর্ষণ সৈকতজুড়ে সারি সারি নারকেলগাছ, বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথর, দিগন্তজুড়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনমাতানো সৌন্দর্য। ছোট্ট এই দ্বীপে বৈচিত্র্যে ঠাসা। উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পূর্ব থেকে পশ্চিম, সব জায়গাতেই সৌন্দর্যের পসরা। যেমন উত্তরের সৈকতে জোয়ার-ভাটায় জেলেদের মাছ ধরা, পশ্চিমের সৈকতে সারি সারি নারকেলবাগান। পূর্ব আর দক্ষিণ পাশের সৈকতজুড়ে মৃত প্রবালের সঙ্গে নীলসমুদ্র। এত নীল পানির সমুদ্র বাংলাদেশের আর কোথাও নেই।

নারিকেল জিঞ্জিরা 
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে এ দ্বীপটির অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এ দ্বীপের বেলাভ‚মিতে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারকেলগাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি পর্যটক আকর্ষণের মূল উপাদান। সেন্ট মার্টিনের আরেক আকর্ষণ ছেঁড়া দ্বীপ। মূল দ্বীপের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত। একসময় মূল দ্বীপ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন প্রায় মিলে গেছে। তবে জোয়ারের সময় এখনো এর সংযোগস্থল ডুবে যায়। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালু আছে বেশ কিছু সমুদ্রগামী জাহাজ।

কক্সবাজার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভও। ভ্রমণে তাই কক্সবাজার এখন আরও বেশি উপভোগ্য। কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রসৈকত। শহর থেকে শুরু করে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ পর্যন্ত এখানে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর সৈকত আছে। কক্সবাজার শহরের লাবণী ও সুগন্ধা সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভে আছে হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর, হাজামপাড়া আর টেকনাফ। এর একেকটি সৈকত যেন বৈচিত্র্যের ভান্ডার।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানা রামুতে আছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। আর চকরিয়ার ডুলাহাজারায় আছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কুতুবদিয়া চ্যানেল
কুতুবদিয়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে এই কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল  ভূখণ্ড  বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটি। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে যেতে হলে চকরিয়ার মগনামা ঘাট থেকে পাড়ি দিতে হয় এই চ্যানেল। শীত মৌসুমে এ চ্যানেল বেশ শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। জায়গাটিতে ঘুরতে যাওয়ার আসল সময় তাই শীতকাল।

কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে আছে নানান পর্যটন আকর্ষণ। নির্জন সমুদ্রসৈকত, একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাচীন বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজারসহ দেখার মতো অনেক কিছুই আছে এ দ্বীপে। চকরিয়ার মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় দ্বীপে। এখানকার সমুদ্রসৈকত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বেশির ভাগ এলাকাই বেশ নির্জন। সৈকতের তীরে অনেক জায়গাতেই আছে ঝাউগাছের বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও কুতুবদিয়ায়। এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের আলী আকবরের ডেল এলাকায়।

আর দ্বীপের উত্তর প্রান্তে আছে কুতুবদিয়ার প্রাচীন বাতিঘর। সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। পুরোনো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনো কখনো জেগে উঠতে দেখা যায়।
দ্বীপের মাঝামাঝি ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরিফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবীর জন্মস্থান এটি। জনশ্রুতি আছে, দ্বীপটির নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই। বর্তমানে কুতুব শরিফ দরবারের দায়িত্বে আছেন তারই পুত্র শাহজাদা শেখ ফরিদ। এ ছাড়া কুতুবদিয়ার সর্বত্রই লবণ চাষ হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে।


বান্দরবান
তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান। এখানে রয়েছে বেড়ানোর মতো সুন্দর সব জায়গা। বান্দরবান শহরের এক পাশেই আছে বোমাং রাজার বাড়ি। বোমাং রাজার উত্তরসূরিরা এখন বসবাস করেন এ বাড়িতে। আর বান্দরবান শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান চন্দ্রঘোনা সড়কের পুল পাড়ায় জাদির পাহাড়ে আছে স্বর্ণমন্দির। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের এ মন্দিরের নাম বুদ্ধধাতু জাদি। শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। প্রকৃতির কোলে এখানে আছে ঝুলন্ত সেতু, চিড়িয়াখানা আর হ্রদ। শহরের কাছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম নীলাচল। শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় এ পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় এক হাজার ফুট। এখানে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহরসহ দূরদূরান্তের অনেক জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত। এখানে আছে একটি ঝরনা। শৈলপ্রপাতের পাশেই স্থানীয় আদিবাসীদের ভ্রাম্যমাণ বাজারটি দেখার মতো। তাদের তৈরি চাদর আর পাহাড়ি ফলমূল পাওয়া যায় এ বাজারে। এখানে আরও আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বম সম্প্রদায়ের একটি গ্রামও।

শৈলপ্রপাত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। এ পথে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে চারপাশের দৃশ্য ছবির মতো।

রাঙামাটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা রাঙামাটি। এখানকার জেলা শহরে আছে উপজাতীয় জাদুঘর। জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে এ জাদুঘরের জুড়ি নেই। এর কাছেই বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবনবিহার। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের নানান আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি।
রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীরে খুব ব্যস্ত দুটি জায়গা রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার। দুটি বাজারেই মূলত আদিবাসীদের আনাগোনা বেশি। তবলছড়ি ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ছাড়াও এর ভেতরে আছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু।
রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকায় চড়ে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। বাজারের আগেই বাঁ দিকের পাহাড়ে আছে শুভলং ঝরনা। তবে শীতে এ ঝরনায় পানি থাকে না। শুভলং যেতে পথে কাপ্তাই হ্রদের মাঝের ছোট দ্বীপজুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং। এখানকার রেস্তোরাঁয় মেলে হরেক পদের পাহাড়ি খাবার।

রাঙামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটি হলো সাজেক। জায়গাটির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও যাতায়াত সুবিধা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে। সেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণগন্তব্যগুলোর একটি সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গাটির অবস্থান। সাজেকের পাহাড়চ‚ড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দৃষ্টিগোচর হয় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে।

খাগড়াছড়ি
পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি জেলা খাগড়াছড়ি। এখানেও ভ্রমণের অনেক জায়গা রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এই জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ১২২ কিলোমিটার। চারদিকে পাহাড়ের মাঝে অনেকটা সমতলে এই শহর।
খাগড়াছড়ির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের জায়গা হলো আলুটিলা পাহাড়। জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে এই পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চ‚ড়ায় দাঁড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে দেখা যায়। আলুটিলা পাহাড়ের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো এর নিচের গুহাপথ। পাহাড়ের নিচে গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা।

আলুটিলা পাহাড় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রিসাং ঝরনাটিও বেশ সুন্দর। আর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নুনছড়ির পাহাড়চ‚ড়ায় দেবতার পুকুরও মনোরম জায়গা।


সুন্দরবন
প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারই বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বেঙ্গল টাইগারের বাস ছাড়াও এ বনে আছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুইসাপ, ভোঁদড়, ডলফিন, লোনাপানির কুমিরসহ আরও অনেক বন্য প্রাণী। সুন্দরবনের প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, হেঁতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।
মোংলার কাছাকাছি করমজল আর হারবাড়িয়া ছাড়াও সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, কোকিলমনি, মান্দারবাড়িয়া, পুটনি দ্বীপ ইত্যাদি। এর মধ্যে কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া এবং পুটনি দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবনে ভ্রমণে এখন অনেক পেশাদার ভ্রমণ সংস্থা এখন প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে।

শ্রীমঙ্গল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। আর এ জেলার শ্রীমঙ্গলেই সবচেয়ে বেশি চা-বাগান। জীববৈচিত্র্যে ভরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও শ্রীমঙ্গলের পাশেই। শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু সুন্দর চা-বাগান আছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় চারদিকে চোখে পড়বে শুধুই চা-বাগান আর চা-বাগান। পছন্দসই যেকোনো বাগানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারো। শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্টও। তাই চা-বাগান বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে আরও বেড়াতে পারো বাইক্কা বিল। এ বিল অতিথি পাখির অন্যতম অভয়াশ্রম। শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী থলই এলাকায় আছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। আর কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকও শ্রীমঙ্গল থেকে খুবই কাছের একটি দর্শনীয় স্থান।

 

 

 

বাগেরহাট

প্রাচীন মসজিদের একটি শহর বাগেরহাট। বেশ কিছু প্রাচীন মসজিদ এখানকার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহান আলীর এসব প্রাচীন স্থাপনা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। খানজাহান আলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি ষাটগম্বুজ মসজিদ। ঐতিহাসিকদের মতে, এই ষাটগম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দেরও কিছু আগে।
বাগেরহাট শহরের মাঝে হজরত খানজাহানের (র.) সমাধিসৌধ, মসজিদ আর প্রাচীন দিঘি। এ ছাড়া এই দিঘির তীরে জিন্দাপীর মসজিদ আর নয়গম্বুজ মসজিদ নামে আরও দুটি মসজিদ আছে। হজরত খানজাহান আলীর (র.) সমাধিসৌধ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ষাটগম্বুজ মসজিদ। এটি বাগেরহাটের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। বিশাল এই মসজিদ ইটের তৈরি। ষাটগম্বুজ নাম হলেও মসজিদটিতে ৮১টি গম্বুজ আছে। তবে মসজিদের ভেতরের ষাটটি স্তম্ভ থাকার কারণে এর নাম হতে পারে ষাটগম্বুজ। স্তম্ভগুলো কালো পাথরের তৈরি।
এ ছাড়া বাগেরহাটের অন্য প্রাচীন মসজিদগুলো হলো ষাটগম্বুজের পাশেই সিংড়া মসজিদ, রণবিজয়পুর গ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একগম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রণবিজয়পুর মসজিদ। চুনাখোলা গ্রামের চুনাখোলা মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

কুয়াকাটা
বাংলাদেশের দক্ষিণে কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগরকন্যা। একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়ার কারণে এ জায়গাটি বেশি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এখানকার সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে নারকেলগাছের বাগান। তবে এর অনেকটাই সাগরে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সমুদ্র তীরের এই নারকেল বাগান।
এ সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলেপল্লি। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। শীত মৌসুমে এ পল্লির জেলেরা ব্যস্ত থাকেন শুঁটকি তৈরির কাজে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। এর নাম ফাতরার বন। সুন্দরবনের অংশ হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্য  প্রাণী নেই সেখানে।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতীর খাল। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতীর জঙ্গল। এখান থেকে আরও সামনে গেলে ছোট্ট একটি দ্বীপে আছে লাখ লাখ লাল কাঁকড়া। দ্বীপটি ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত।

লেখা – রোদসী ডেস্ক

ছবি – সংগৃহীত

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
ঘুরে বেড়াইবিদেশভ্রমণ ফাইল

হৈ হুল্লা হানিমুন

করেছে Wazedur Rahman জানুয়ারী ২৭, ২০২০

দাম্পত্যজীবনের শুরুটাই হয় হানিমুনের মধ্য দিয়ে। তাই বিয়ের অন্যান্য আয়োজনের মতোই এটা নিয়ে হবু দম্পতির মধ্যে চলে নানা জল্পনাকল্পনা। আর তারা যদি হয় একটু ভ্রমণপিয়াসী, তাহলে তো কথাই নেই। ফ্যামিলি ট্যুর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসফরে অনেকেরই কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, সিলেট ঘোরাঘুরি সারা হয়ে যায় বলে হানিমুনের জায়গা নির্বাচনে বিপাকেই পড়তে হয়।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে এখন অনেকগুলো স্থলবন্দর স্থাপিত হওয়ায় অনেক নতুন নতুন জায়গা যেমন আমাদের হাতের নাগালে চলে এসেছে, তেমনি খরচটাও রয়েছে সাধ্যের মধ্যেই। এসব কিছু জায়গার খোঁজখবর নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

ছবির মতোই সুন্দর দার্জিলিং।

দার্জিলিং

দার্জিলিং যাওয়ার জন্য আমাদের রয়েছে বাংলাবান্ধা আর চেংড়াবান্ধা বর্ডার। বাংলাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি শহর খুব কাছে বলে এদিক দিয়ে গেলে সময় বাঁচবে অনেকটাই, তবে বর্ডার স্পিডমানি খসবে কিছুটা। শিলিগুড়ি থেকে যে কোনো দিকে যাওয়ার জন্য শেয়ারড বা প্রাইভেট জিপ পাওয়া যায় সহজেই। তুমি চাইলে মিরিক লেক ঘুরে লেপচাজগৎ দেখে চলে যেতে পারো দার্জিলিং। অথবা নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে দুজন দুজনার সঙ্গ উপভোগ করতে চাইলে থেকে যেতে পারো লেপচাগজগতে।

শিলিগুড়ি শহর থেকে বের হতে না হতেই দেখা মেলে উঁচু-নিচু পাহাড়, মেঘের ভেলা আর সবুজ পাইনের অপূর্ব এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় প্রকৃতির। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে বর্ণিল বাড়ি, টয়ট্রেনের সরু লাইন, সবুজ পাহাড়ের হাতছানি- এসব দেখতে দেখতে যত সামনে এগোবে, ততই মুগ্ধতা বাড়তে থাকবে। দার্জিলিং শহরের পাশে দেখার আছে অনেক কিছু।

দার্জিলিংয়ের ঐতিহাসিক টয় ট্রেন।

ভোরের প্রথম আলোর ছোঁয়ায় সোনালি কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলবে টাইগার হিল পয়েন্ট আর বাতাসিয়া লুপে। ঝরনার আগা থেকে গোড়ার ধাপে ধাপে ভিউ দেখার জন্য রয়েছে রক গার্ডেন। ক্যাবল কার দিয়ে ঘুরে দেখতে পারবে পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের ভিউ। মাউন্টেনিংয়ে আগ্রহ থাকলে চলে যেতে পারো হিমালয়া মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে।

এছাড়া রয়েছে প্রচুর মনেস্ট্রি, টেম্পল। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের থ্রিল আর স্রোতস্বিনী নদীর মনকাড়া দৃশ্য দেখতে চাইলে অবশ্যই যেতে হবে কালিম্পংয়ের দিকে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের জন্য এখানে রিভার রাফটিং ও প্যারাগ্লাইডিং করার সুযোগও আছে।

প্রকৃতির মাঝে এক টুকরো কৃত্রিমতাও যেন মানিয়ে নেয় নিজেকে।

 

যোগাযোগের সহজলভ্যতা আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের টানে দার্জিলিংয়ে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই যারা একটু নিরিবিলিতে প্রকৃতির দর্শন চাও, তারা দার্জিলিংয়ে একটা বা দুটো দিন কাটিয়ে চলে যেতে পারো লাভা-রিশপ-লোলেগাঁওয়ের দিকে।

শান্ত নীরব ভিড়ভাট্টাহীন পরিবেশে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ, গহিন পাইন বন, ঝরনার জন্য ট্রেকিং সবই পাওয়া যাবে এখানে।

দার্জিলিংয়ের রোপওয়ে বা ক্যাবল কার।

এ ছাড়া শুধু গহিন জঙ্গলে নিজেদের হারিয়ে ফেলার মতো পাগলাটে নেশা চাপলে চলে যাওয়া যায় ডুয়ার্সের জঙ্গলে। জঙ্গল হলেও থাকার জন্য আছে উন্নত রিসোর্ট, ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে হাতির সাফারি এবং জিপ সাফারি।

সিকিম

কম খরচ আর ঝামেলাহীনভাবে ইউরোপের বরফের স্বাদ দেশের কাছেই পাওয়ার জন্য যেতে হবে সিকিমে।

দার্জিলিংয়ের মতোই প্রথমে শিলিগুড়ি যেতে হবে। শিলিগুড়ির এসএনটি পয়েন্ট থেকে পাবে বাস, শেয়ার্ড বা রিজার্ভ জিপ। তবে সিকিম স্টেটটা ইন্ডিয়ার অন্যান্য স্টেটের চেয়ে একটু আলাদা বলে এখানে ঢোকার জন্য আলাদাভাবে পারমিশন লাগে। সেটা নেওয়া জটিল কিছু নয়। বাংলাদেশের ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টার, শিলিগুড়ির এসএনটি অথবা সিকিমে প্রবেশের চেকিং পোস্ট থেকেই নিতে পারবে এসব পারমিশন, সঙ্গে ছবি ও পাসপোর্টের ফটোকপি থাকা আবশ্যক।

সিকিমের প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রকৃতিপ্রেমীকে।

সিকিমের আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল, রোদ-মেঘ-তুষারপাতের লুকোচুরি খেলা চলে সারাক্ষণই। রাজধানীর গ্যাংটকেই প্রথমে ঢোকে সবাই। ওখানকার আশপাশে রয়েছে বেশ কিছু দেখার মতো স্পট। এগুলো দেখে নেওয়া যায় কোনো এজেন্সি ছাড়াই। বরফের মধ্যে গড়াগড়ি আর নিজের চোখে-মুখে গুঁড়ি গুঁড়ি তুষার পতনের অনুভূতি নিতে চাইলে চলে যেতে হবে নর্থ সিকিমের দিকে। এদিক যেতে চাইলে আগেই এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ।

প্যাকেজ পছন্দ করার পর তারাই গাইড এবং গাড়ি দিয়ে দেবে, যা নিয়ে চলে যেতে পারো নর্থের লাচুং, লাচেন, ইয়ামথাং ভ্যালি, জিরো পয়েন্ট। লাচুং যাওয়ার পথে পড়বে মনোমুগ্ধকর বড় বড় দুটো ঝরনা। প্যাকেজে থাকা-খাওয়া-গাড়ি সবই অন্তর্ভুক্ত থাকে। এখানে রাতে তাপমাত্রা মাইনাসের অনেক নিচে চলে যায়, তাই রাত কাটানোটা বেশ কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় অনেকের জন্য।

লেকের স্বচ্ছ পানিতে আকাশ আর প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে।

এ ছাড়া ইস্ট সিকিমের ছাঙ্গু লেকেও দেখা মিলবে বরফের। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে বলে সেখান থেকে ভিউটাও চমৎকার উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ঠান্ডার সিজনে পুরো লেকটাই জমে বরফ হয়ে থাকে। এখানে আবার ক্যাবল কারের সুবিধাও আছে। ক্যাবল কার থেকে পুরো শহরটা, পাহাড়ের খাদে খাদে বর্ণিল বাড়ি সবই ছোট করে ধরা পড়ে দৃষ্টির

ইয়ক রাইডের ইচ্ছা থাকলে সেটাও মেটানো যাবে এই লেকের পাড়ে থাকা ইয়কে চড়ে। নর্থ সিকিম বরফে মুড়ে থাকলেও সাউথ আবার পুরোই উল্টো। সেখানে রয়েছে সবুজের সমারোহ। তাই স্রোতস্বিনী নদী আর পাহাড়ের ঘোরপ্যাঁচ ভালো লাগলে চলে যেতে পারো সাউথ পেলিংয়ের দিকে। এদিকটায় যেতে কোনো এজেন্সি বা গাইডের প্রয়োজন নেই।

এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দার্জিলিং ছাড়া আর কোথায় পাওয়া যাবে না।

এক পাশে নদী আর অন্য পাশে আঁকাবাঁকা পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে খোঁজ মিলবে পেলিং শহরের। আপার পেলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সবচেয়ে কাছের ভিউ পাওয়া যায়।

এখানে রয়েছে সুপ্রাচীন অনেক মনেস্ট্রি, রাজবাড়ি, স্বচ্ছ গ্লাস ব্রিজসহ দেখার মতো অনেক কিছুই। এখনো পর্যটকদের ভিড় তেমন জমে ওঠেনি বলে আরামে নিরিবিলিতে নিজেদের মনমতো ঘুরে বেড়ানো যায় এখানে সহজেই।

সিকিমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

সিকিমে যাওয়ার আগে ঠান্ডার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ভালোমতো প্রস্তুতি না নিয়ে গেলে বিপাকেই পড়তে হবে ভয়ানকভাবে।

মেঘালয়া

মেঘালয়া যাওয়ার জন্য ভিসার সময় তোমাকে বেছে নিতে হবে তামাবিল-ডাউকি বর্ডার। বর্ডার পার হলেই পেয়ে যাবে ট্যাক্সির সন্ধান।

মেঘালয় বা মেঘের রাজ্য।

তবে এখানে সিন্ডিকেট হয়ে থাকে বলে একটু হেঁটে ডাউকি বাজারে গেলে কমের মধ্যে ট্যাক্সি পেয়ে যাবে। ডাউকি থেকে অনেক দিকে যাওয়ার সুযোগ আছে। মেঘালয়ার গারো হিল, খাসি হিল বা জৈন্তা হিল যেদিকেই যাও না কেন, প্রতিটি হিল এরিয়ার গ্রামই অপার সৌন্দর্যের আধার। রাস্তা দিয়ে যেদিকেই যাও না কেন দেখা মিলবে প্রচুর ঝরনার। বর্ষাকালে প্রতিটি ঝরনাই ফুলেফেঁপে তীব্র বেগে নেমে আসে, শীতে অবশ্য বেগ অনেকটাই কমে যায়।

মেঘালয়ার রাজধানী শিলং যাওয়ার পথে ডাউকির আশপাশের ঝরনাগুলো দেখা যায় সহজেই। এ ছাড়া এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাউলিলং দেখে নেওয়া যায়, যা পড়বে পথিমধ্যে।

মেঘালয়ের লেকগুলো এমনই স্বচ্ছ যেন আয়না।

শিলং যাওয়ার রাস্তায় দুপাশের প্রকৃতির মাধুর্যতায় মন হারিয়ে যায়।

শহরের আশপাশে রয়েছে বেশ কিছু ঝরনা, প্রাচীন মিউজিয়াম, লেক। ঝরনার জন্য বিখ্যাত শহর চেরাপুঞ্জিতে (প্রাচীন নাম সোহরা) যাওয়ার জন্য বাস, ট্যাক্সি দুধরনের সুবিধাই আছে। ঝরনার পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বেশ কিছু প্রাকৃতিক গুহা, সেগুলোতে পর্যটকদের প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে বেশ নিরাপদভাবেই।

চেরাপুঞ্জির নংরিয়াত গ্রামে রয়েছে জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়ে গড়া ডাবল ডেকার ব্রিজ, এটার অন্য রকম সৌন্দর্য মুগ্ধ করতে বাধ্য। তবে এই ব্রিজ দেখতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৩ হাজার ৫০০ সিঁড়ি।

জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়ে গড়া ডাবল ডেকার ব্রিজ।

এ ছাড়া সিঙ্গেল ব্রিজও আছে কয়েকটি। শুধু চেরাপুঞ্জিতেই সপ্তাহ কাটিয়ে দিলেও দেখার জায়গা শেষ হওয়ার নয়, এতটাই মুগ্ধতায় নেশায় আটকা পড়তে হয় যে বারবার ছুটে যেতে মন চাইবে এই পাহাড়-ঝরনার মেলবন্ধনে।

শিলং শহরের দিকের ভিড় এড়াতে চাইলে চলে যেতে পারো সোনাংপেডং নামের গ্রামে। স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির নদী উমগটের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এ গ্রাম। গ্রাম হলেও ট্যুরিস্টদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। এখানের নদীর ওপর এলোমেলো পাথরে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্বিঘ্নে। ইচ্ছা করলে নদীর পাড়ে তাঁবুতেও রাত কাটানো যায় ভিন্নতা আনতে। নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, স্নোরকেলিং, জিপলাইনিংসহ নানা রকম অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ আছে এখানে।

স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির নদী উমগট।

ডাউকি থেকে জোয়াই শহরের দিকে যেতে পথে দৃষ্টিগোচর হবে প্রচুর জানা-অজানা ঝরনা আর উঁচু-নিচু পাহাড়ি উপত্যকা। এখানকার অনেক ঝরনা কাছ থেকে দেখার জন্য এমনভাবে ব্যবস্থা করা আছে, যাতে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না হয়। কিছু ঝরনা আবার যেতে হয় দুর্গম ট্রেইল ধরে পিচ্ছিল পাথুরে বা কাদামাটির পথে ট্রেক করে। কিন্তু কষ্টের পরে যেসব ঝরনার দেখা মেলে তাতে কষ্ট পুরোটাই উশুল মনে হবে।

মেঘালয়া ঘুরতে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি লাগে না। ম্যাপ দেখে একটু ধারণা রাখলেই হয়। ওখানকার ড্রাইভাররাই দর্শনীয় সব স্থান চেনে। দরদাম করে ঠিক করার সময় কোথায় যেতে চাও বললেই তারা কী কী স্পট ঘুরে দেখাবে তা আগে থেকে জানিয়ে রাখে।

মেঘালয়ের সেভেন সিস্টার্স ফল।

সেগুলো ছাড়া তুমি অন্য কিছুর খোঁজ জানলে সেটাও যোগ করে নিতে পারবে। ড্রাইভাররা থাকা-খাওয়ার কোথায় কী সুবিধা সেটাও জানিয়ে দেয়, তবে ধান্দাবাজ ড্রাইভার থেকে সাবধান থাকতে হবে।

মেঘালয়ার মেঘ বৃষ্টি রোদের হুটোপুটি বোঝা খুবই দুষ্কর। এই কড়া রোদ তো এক মিনিটের মধ্যে মেঘে ঢেকে দেবে সব পাহাড়, আবার একটু পরেই সূর্য উঁকিঝুঁকি মারবে, নয়তো এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেবে।

তুরা জলপ্রপাত।

আবার কখনো চলতে থাকে টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবিরাম ধারায় বর্ষণ। তাই মেঘালয়া গেলে ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখা খুবই প্রয়োজন।

যাতায়াত

দার্জিলিং আর সিকিম যেতে হলে ঢাকা থেকে সরাসরি বাংলাবান্ধা, চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত বাস আছে। আর মেঘালয়ার জন্য সিলেট পর্যন্ত বাসে গিয়ে, সেখান থেকে লোকাল বাস, লেগুনা বা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় তামাবিল বর্ডারে। এরপর ইন্ডিয়ান বর্ডার পার হলেই রয়েছে শেয়ার্ড বা রিজার্ভ ট্যাক্সির সুবিধা।

হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রকৃতি।

ট্যুর প্ল্যান আগে থেকে সাজানো থাকলে পুরো ট্যুরের জন্য একবারে ট্যাক্সি রিজার্ভ করা যায়, অথবা আলাদাভাবে জায়গা বুঝেও ট্যাক্সি পাওয়া যায় সহজেই। ভাড়া নিয়ে দামাদামি করাটা খুব আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে ইদানীংকালে।

থাকা-খাওয়া

থাকার জন্য সব জায়গাতেই জীবনযাত্রার মান ও সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম দামের হোটেল রুম বা হোমস্টে পাওয়া যায়। শহর থেকে বাইরের দিকে এগিয়ে গেলে হোমস্টের খোঁজ বেশি দেখা যায়। এগুলোর ভাড়া হোটেলের চেয়ে তুলনামূলক কম। খাবারের সুবিধাও পাওয়া যায়, তবে সে জন্য আলাদাভাবে বিল গুনতে হবে।

এসব স্থানে মুসলিমদের সংখ্যা নগণ্য বলে হালাল খাবার পাওয়া যায় না বললেই চলে। দার্জিলিং এবং শিলং শহরে মুসলিম এরিয়ায় হালাল খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাকি জায়গাগুলোতে ভেজ থালি দিয়েই পার করতে হয় মুসলিমদের।

খাবারের স্বাদ যেমন অতুলনীয়, তেমনি দামটাও হাতের নাগালেই।

তবে শহরের বাইরের দিকে নুডলস আর ভেজ থালির চলটাই বেশি। এসব খাবারের স্বাদ যেমন অতুলনীয়, তেমনি দামটাও হাতের নাগালেই।

কোথাও ঘুরতে গিয়ে যেখানে সেখানে ব্যবহৃত আবর্জনা না ফেলে, নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেললে পরিবেশ যেমন পরিচ্ছন্ন থাকবে, তেমনি নিজের দেশের সুনামটাও অক্ষুণ্ন থাকবে আমাদের এসব দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই।

 

লেখা: ফারিহা জাবিন 
ছবিসূত্র: লেখক এবং সংগ্রহীত 

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail
রোমান্স রসায়ন

রোমান্টিক আবহ

করেছে Rodoshee জুলাই ২, ২০১৮

বিয়ের পর একান্তে কিছু সময় কাটাতে হানিমুনে তো সবাই যায়। কিন্তু হানিমুনের রেশটা ধরে রাখতে হলে তোমরাও সাজিয়ে নিতে পারো তোমার ঘরটিকে মনের মতো করে। রোমান্টিক মুহূর্ত কাটানোর জন্যে চাই রোমান্টিক সেটিং। যদিও প্রেমের জন্য আলাদা কোনো যায়গা নির্দিষ্ট থাকতে হবে এমনটা কথা নেই। প্রেম আছে হৃদয়ে। মন জুড়ে। প্রেম ছড়িয়ে ঘরের কোনে কোনে।

বিয়ের পর অথবা বিয়ের কিছুদিন পর যখনই সুযোগ হবে নিজেদের ঘরটি সাজিয়ে তোলো নিজেদের মনের মতো করে। মনের রঙে রাঙিয়ে নাও তোমার ঘর। দেয়ালে এখন বাহারি রঙ করার সুযোগ আছে। হোক না নিজেদের বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট। সাজিয়ে নাও এমনভাবে যেন মনে হয় ভালোবাসার ঘর। ভাড়া বাড়ি হলেও চাইলে সাজিয়ে নেয়া যাবে ঘর মনের মতো করে।

ঘরে রোমান্টিক আবহ তৈরি করতে কিন্তু খুব বেশি আয়োজন করতে হয় না। শুধু একটু সৃজনশীলতা ও দুজনের পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রাখলেই তৈরি করা যায় স্বপ্নের বাড়ি।

প্রথমেই আসি বেডরুমের কথায়। ঘরের রঙেই বদলে যেতে পারে ঘরের চরিত্র। লাল রং প্যাশনের প্রতীক। আবার হালকা নীলেও তৈরি হয় রোমান্টিক আবহ। ঘরে উজ্জল রঙ করলে একটা অন্য রকম আবহ তৈরি হবে। ঘরে গাঢ় রং না করতে চাইলে, বছে নাও কোমল কোনো রং। ঘরের পর্দা, বেডকভার হিসেবে স্যাটিন সিল্ক ব্যবহার করতে পারো। একটা অভিজাত ভাব আসবে এতে করে। বেডসাইড টেবলে একগোছা রজনীগন্ধা বা গোলাপের তোড়া রাখলেও ঘরে একটা সুন্দর আবহ সৃষ্টি হয়। অর্কিড বা লিলিও কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়। আর টিকবেও বেশ কিছুদিন।

বেডসাইড টেবিলে দুজনার ছবি তো রাখতেই পারো, তা ছাড়াও সাজিয়ে রাখতে পারো নানা রকম শোপিস অথবা বেড সাইড ল্যামপ।

ঘরের এক কোনে লবি চেয়ার আর টি টেবিল রেখে তৈরি করতে পারো তোমাদের একান্ত ব্যাক্তিগত কর্ণার। ছুটির দিনে বিকেলের চাটা না হয় ওখানে বসেই খেয়ো।

আসলে রোমান্টিক গৃহসজ্জার কোনও নিয়ম হয় না। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজালেই দেখবে, ঘর হয়ে উঠেছে রোমান্টিক। যেমন বসার ঘরে সুযোগ থাকলে একটু এক্সপেরিমেন্ট করতেই পারো। তথাকথিত গা ডোবানো সোফার চেয়ে ভিন্নধরনের সোফা বেছে নিতে পারো। হতে পারে কয়েক ধরনের সোফার সুন্দর সম্মেলন।

সাধারন কুশন কভারের বদলে একটু খুঁজে ভিন্ন ধরনের কুশন কভার ব্যাবহার করলে বসার ঘরের চেহারাটাই পাল্টে যাবে। দেয়াল জুড়ে থাকতে পারে বড় বড় ক্যানভাসে তুলির টানে তৈরি করা ম্যাজিক। মেঝের উপর কাঁচ কিংবা মাটির পাত্রে ফুল বা গোলাপের পাঁপড়ি সাজানো। টেবিলের উপর ফুলদানিতে তরতাজা ফুল আর ল্যমপশেডের মায়াবী নরম আলো। সত্যিই এনে দেবে অন্যরকমের এক মুগ্ধতা, অন্যরকম প্রশান্তি।

প্রতিদিনের ব্যাস্ততায় হাঁপিয়ে ওঠা শরীর মনের কাছে এই তো পৌঁছে দেয় উষ্ণতার আবেদন। প্রেম সহজে পাওয়া যায় না। যদি যায় তবে তাকে আগলে রাখতে হয়। মমতা দিয়ে, যত্ন করে। আর দাম্পত্যে প্রেমের ছোঁয়া টিকিয়ে রাখতে রোমান্টিক গৃহসাজ আনবে বৈচিত্র।

মাহমুদ হোসেন

০ মন্তব্য করো
0 FacebookTwitterPinterestEmail

পোর্টফোলিও

প্রকাশিত সংখ্যা

রোদসীর পছন্দ

  • বয়স সবে উনিশ-কুড়ি

তুমিই রোদসী

  • আলোয় ভুবন ভরা







rodoshee logo

© স্বত্ব রোদসী ২০১৪ - ২০২১
সম্পাদক ও প্রকাশক:   সাবিনা ইয়াসমীন
৯১/এ, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা, ব্লক-এফ, রোড-৩, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮০-২-৫৫০৪১০৪৬-৪৮, ই-মেইল: info@rodoshee.com

রোদসী

রোদসী

ক্যাটাগরি

আর্কাইভ

@2014-2018 -রোদসী. All Right Reserved.

রোদসী
  • হোম
  • লাইফস্টাইল
  • রূপ ও ফ্যাশন
  • রোমান্স
  • কালচার
  • নারী
    • সাফল্য
    • সম্ভাবনা
    • সংগ্রাম
    • সমস্যা
Facebook